মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: তিন বছর হতে চলল। এখনও অবসান হয়নি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। এহেন আবহে চড়া দরে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধের আকাশে ধ্বনিত হচ্ছে পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারিও। এই যখন অবস্থা, তখন শেষমেশ রাশিয়ার সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসতে চলেছেন বিশ্বের দুই শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রধানরা। আগামী ১৫ অগাস্ট আলাস্কায় (Alaska Meet) বৈঠকে বসতে চলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়া এবং আমেরিকার দুই ‘হুজুরে’র এই বৈঠককে স্বাগত জানাল ভারত (India)। সম্প্রতি বিদেশমন্ত্রকের তরফে এ নিয়ে বিবৃতি জারি করেন মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। তাতে তিনি আশা প্রকাশ করেন, এবার যুদ্ধ বন্ধের পথ খুঁজবে রাশিয়া-ইউক্রেন। এর আগে অনেকবারই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রুশ প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, “এটা যুদ্ধের সময় নয়।” এদিন ফের জারি করা এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর এই বাক্যবন্ধেরও উল্লেখ ছিল। ভারত যে সব সময় ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’য়ের পক্ষে, তাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে কি যোগ দেবে ইউক্রেন (Alaska Meet)
প্রশ্ন হল, ট্রাম্প ও পুতিনের এই আলাস্কা বৈঠকে কি যোগ দেবে ইউক্রেন? ইউরোপীয় নেতাদের বক্তব্য, ইউক্রেনে শান্তির পথ কিয়েভকে (ইউক্রেনের রাজধানী) বাদ দিয়ে করা সম্ভব নয়। আলোচনাগুলি হতে পারে নিছকই যুদ্ধবিরতি বা শত্রুতা হ্রাসের প্রেক্ষাপটে। আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। জানিয়ে দিয়েছে, এই বৈঠক ইউক্রেনের এই সংঘাতের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতিও বহন করে।
ইউক্রেনকে ক্রিমিয়া ছেড়ে দিতে হবে
এদিকে, এনবিসি নিউজ শনিবার জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আলাস্কায় আমন্ত্রণ জানানোর কথা বিবেচনা করছেন। এর আগে, ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে উভয় পক্ষের নিয়ন্ত্রিত কিছু এলাকা বিনিময় হতে পারে (India)। সেই পরিকল্পনার মধ্যে থাকতে পারে পুতিনের একটি দাবি, ইউক্রেনকে ক্রিমিয়া ছেড়ে দিতে হবে, যা ২০১৪ সালে ক্রেমলিন বাহিনী অবৈধভাবে দখল করেছিল, এবং পুরো পূর্ব দোনবাস অঞ্চলও। এমন একটি অবস্থায় জেলেনস্কিকে লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চলের সেই অংশ থেকেও সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। এই ()Alaska Meet অঞ্চলটি এখনও কিয়েভের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
বিদেশমন্ত্রকের জারি করা বিবৃতি
শনিবার বিদেশমন্ত্রকের তরফে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে আলাস্কায় ১৫ আগস্ট ২০২৫-এ বৈঠকের জন্য যে সমঝোতা হয়েছে, ভারত তাকে স্বাগত জানায়।” মন্ত্রক এও বলেছে, “এই বৈঠক ইউক্রেনে চলমান সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে শান্তির সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিকবার বলেছেন—‘এটি যুদ্ধের সময় নয়।’” এদিকে, এনবিসি নিউজ শীর্ষ আধিকারিকদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আলাস্কায় আমন্ত্রণ জানানোর কথা বিবেচনা করছে, যেখানে ১৫ আগস্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে ট্রাম্পের। ইউক্রেন ওই বৈঠকে যোগ দেবে কিনা, সে প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলেনস্কির কোনও সফর এখনও চূড়ান্ত হয়নি এবং শেষ পর্যন্ত তিনি আলাস্কায় বৈঠকে যোগ দেবেন কি না, তাও স্পষ্ট নয়, যদিও বিষয়টি এখনও সম্ভাবনার স্তরেই রয়েছে (Alaska Meet)।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সাফ কথা
যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে নেওয়া যে কোনও সিদ্ধান্তই শান্তির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত হবে। এগুলি অর্থহীন। কোনও লাভ হবে না।” তবে তিনি বলেন, ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে নেওয়া যে কোনও সিদ্ধান্তই একই সঙ্গে শান্তির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত হবে। এতে কোনও লাভ হবে না।” তিনি এও বলেন, “ইউক্রেনের আঞ্চলিক প্রশ্নের উত্তর ইউক্রেনের সংবিধানের মধ্যেই রয়েছে। কেউই এর থেকে বিচ্যুত হবে না এবং হতে পারবেও না (India ।”
ইউক্রেন ভাগের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা মেনে নেব না
৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু ভূখণ্ড বিনিময় হবে এহেন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই বলে সতর্ক করেন যে ইউক্রেন দেশটিকে ভাগ করার দ্বিতীয় প্রচেষ্টা মেনে নেবে না। তিনি বলেন, “ইউক্রেনীয়রা তাদের জমি দখলদারকে উপহার দেবে না।” তিনি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার জন্য কোনও ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং পরে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, শান্তি আসতে হবে ন্যায়সঙ্গতভাবে যুদ্ধের অবসানের মাধ্যমে, রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছেড়ে দিয়ে নয় (Alaska Meet)।
ইউরোপীয় দেশগুলির বক্তব্য
এদিকে, শনিবার ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ইউক্রেনে শান্তির পথ কিয়েভকে বাদ দিয়ে নির্ধারণ করা যাবে না, পরিবর্তন করা যাবে না আন্তর্জাতিক সীমান্ত বলপ্রয়োগের মাধ্যমেও। এদিকে, ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স শনিবার ব্রিটেনে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা। সেখানে ট্রাম্পের ইউক্রেন শান্তি উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হবে। এদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার বৈঠকের আগে জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে মতবিনিময়ও করেছেন বলে সূত্রের খবর। ভারতের প্রাক্তন উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পঙ্কজ সারণ বলেন, “আগামী সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া শীর্ষ (India) সম্মেলনের দিকে কড়া নজর রাখতে হবে, কারণ যে কোনও কিছুই ঘটতে পারে। এবং নিশ্চিতভাবেই ভারতের ওপর এর প্রভাব পড়বে (Alaska Meet)।” প্রসঙ্গত, ট্রাম্প এবং পুতিন শেষবার এক সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ২০১৯ সালে, জাপানে অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তাঁরা একাধিকবার টেলিফোনে কথাও বলেছেন।
আগেও বৈঠক হয়েছে ট্রাম্প-পুতিনের
পুতিন এর আগে ২০১৮ সালে হেলসিঙ্কিতে ট্রাম্পের সঙ্গে একটি শীর্ষ বৈঠকও করেছিলেন। সেই সময় ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার এই সিদ্ধান্তের চেয়ে পুতিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বলে মনে হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, রাশিয়া নিউ ইয়র্কের এই ধনকুবেরকে সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছিল। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুতিন শেষবার কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেছিলেন ২০১৫ সালে, যখন তিনি রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় বৈঠকে বারাক ওবামার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন (Alaska Meet)। এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউক্রেন প্রেডিসেন্ট বলেন, “ইউক্রেন রাশিয়াকে জমি ছেড়ে দেবে না। ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে আলোচনায় বসাও অর্থহীন। আমরা সবাই শান্তি চাই। কিন্তু ইউক্রেনকে ছাড়া এই যুদ্ধ বন্ধ সম্ভব নয় (India)।”
ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়ায় পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি নিজেই প্রকাশ্যে এনেছেন ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, “অবশেষে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও আমার বৈঠকটি হতে চলেছে। ১৫ অগাস্ট শুক্রবার আলাস্কায় আমাদের সাক্ষাৎ হবে। পরে টেলিগ্রামে রাশিয়ার তরফে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি চুক্তির বিষয়টি নিশ্চত করতে প্রেসিডেন্টরা নিঃসন্দেহে ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করবেন (Alaska Meet)।”