Author: suman-das

  • Ramakrishna 359: “গৌর নিতাই তোমরা দুভাই, পরম দয়াল হে প্রভু! আমি তাই শুনে এসেছি হে নাথ”

    Ramakrishna 359: “গৌর নিতাই তোমরা দুভাই, পরম দয়াল হে প্রভু! আমি তাই শুনে এসেছি হে নাথ”

    দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মমহোৎসব ১৮৮৫ খ্রীঃ

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ২২শে ফেব্রুয়ারি
    নরেন্দ্রাদি ভক্তসঙ্গে কীর্তনানন্দে

    নরেন্দ্র যাই গাইলেন, ‘সমাধিমন্দিরে মা কে তুমি গো একা বসি!’ অমনি ঠাকুর বাহ্যশূন্য, সমাধিস্থ। অনেকক্ষণ পরে সমাধিভঙ্গের পর ভক্তেরা ঠাকুরকে (Ramakrishna)  আহারের জন্য আসনে বসাইলেন (Kathamrita)। এখনও ভাবের আবেশ রহিয়াছে। ভাত খাইতেছেন কিন্তু দুই হাতে। ভবনাথকে বলিতেছেন, “তুই দে খাইয়ে।” ভাবের আবেশ রহিয়াছে তাই নিজে খাইতে পারিতেছেন না। ভবনাথ তাঁহাকে খাওয়াইয়া দিতেছেন।

    ঠাকুর (Ramakrishna) সামান্য আহার করিলেন। আহারান্তে রাম বলিতেছেন, ‘নিত্যগোপাল পাতে খাবে।’

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) —পাতে? পাতে কেন?

    রাম—তা আর আপনি বলছেন! আপনার পাতে খাবে না?

    নিত্যগোপালকে ভাবাবিষ্ট দেখিয়া ঠাকুর তাহাকে দু-একগ্রাস খাওয়াইয়া (Kathamrita) দিলেন।

    কোন্নগরের ভক্তগণ নৌকা করিয়া এইবার আসিয়াছেন। তাঁহারা কীর্তন করিতে করিতে ঠাকুরের ঘরে প্রবেশ করিলেন। কীর্তনান্তে তাঁহারা জলযোগ করিতে বাহিরে গেলেন। নরোত্তম কীর্তনিয়া ঠাকুরের ঘরে বসিয়া আছেন। ঠাকুর (Ramakrishna) নরোত্তম প্রভৃতিকে বলিতেছেন(Kathamrita), “এদের যেন ডোঙ্গা-ঠেলা গান। এমন গান হবে যে সকলে নাচবে!

    “এই সব গান গাইতে হয়:

    নদে টলমল টলমল করে,
    গৌর প্রেমের হিল্লোলে রে।

    (নরোত্তমের প্রতি)—“ওর সঙ্গে এইটা বলতে হয়—

    যাদের হরি বলতে নয়ন ঝরে, তারা, দুভাই এসেছে রে ৷
    যারা মার খেয়ে প্রেম যাচে, তারা, দুভাই এসেছে রে ৷
    যারা আপনি কেঁদে জগৎ কাঁদায়, তারা, দুভাই এসেছে রে ॥
    যারা আপনি মেতে জগৎ মাতায়, তারা, দুভাই এসেছে রে ৷
    যারা আচণ্ডালে কোল দেয়, তারা দুভাই এসেছে রে ॥

    “আর এটাও গাইতে হয়:

    গৌর নিতাই তোমরা দুভাই, পরম দয়াল হে প্রভু!
    আমি তাই শুনে এসেছি হে নাথ;
    তোমরা নাকি আচণ্ডালে দাও কোল,
    কোল দিয়ে বল হরিবোল।”

  • Murshidabad violence: হিংসার নেপথ্যে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব, দর্শক ছিল পুলিশ! হাইকোর্টের রিপোর্ট নিয়ে মমতাকে তুলোধনা সুকান্তর

    Murshidabad violence: হিংসার নেপথ্যে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব, দর্শক ছিল পুলিশ! হাইকোর্টের রিপোর্ট নিয়ে মমতাকে তুলোধনা সুকান্তর

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ওয়াকফের নামে মুর্শিদাবাদ হিংসা (Murshidabad violence) নিয়ে হাইকোর্ট গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এবার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, শুধুমাত্র বেতবোনাতেই ১১৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অসহায় মানুষ অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে নদী পেরিয়ে মালদায় আশ্রয় নিলে, আক্রান্তদেরই জোর করে আবার ফেরানো হয় হিংসা কবলিত এলাকায়। রিপোর্টে আরও বলা হয়, পুলিশ নিপীড়িত মানুষকে চূড়ান্ত অসহযোগিতা করেছে। এমনকী হিংসা হচ্ছে দেখেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল বলে জানানো হয়েছে ওই রিপোর্টে। ঘটনায় প্রত্যক্ষ মদত দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মেহবুব আলম। হিন্দু নির্যাতনে দায়ী শাসক শিবিরের স্থানীয় নেতৃত্বই। হিংসার নেতৃত্বে ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar)। তিনি বলেন, “নিজের দলের স্থানীয় তৃণমূল নেতারদের বাঁচাতে বহিরাগত তত্ত্বের কথা বলেছেন। নত মস্তকে ক্ষমা চাওয়া উচিত তাঁর।”

    তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল কোর্ট (Murshidabad violence)

    ওয়াকফের নামে রাজ্যে গত ৮ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের (Murshidabad violence) ধুলিয়ান, সাজুরমোড়, জাফরাবাদ, জঙ্গিপুর, সুতি, সামশেরগঞ্জে হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, দোকান ভাঙচুর, লুটপাট, খুন-হত্যা, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশ নিরাপত্তা দিতে না পারায় বিএসএফ নামানো হয়েছিল। অসহায় হিন্দুরা গঙ্গা পার হয়ে মালদার বৈষ্ণবনগরে পারলালপুর হাইস্কুলের শিবিরে আশ্রয় নেয়। পরে মামলার তদন্তের জন্য কলকাতা হাইকোর্ট তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। মুর্শিদাবাদ হিংসার তদন্তে ৩ সদস্যের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল গঠন করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কমিটিতে রয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রেজিস্ট্রার যোগিন্দর সিং। রাজ্য জুডিশিয়ার সার্ভিসেসের সচিব অর্ণব ঘোষাল ও রাজ্য জুডিশিয়াল সার্ভিসেসের রেজিস্ট্রার সৌগত চক্রবর্তী। এরপর কমিটির সদস্যরা মুর্শিদাবাদে গিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেন। রিপোর্টে মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক হিংসাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তৃণমূল কাউন্সিলের নাম, স্থানীয় তৃণমূল নেতা এবং আশেপাশের মুসলমান দুষ্কৃতীদের কথা বলা হয়। এরপর থেকেই শাসকদলের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে বিজেপি।

    গামছা-কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে এসেছিল!

    মুর্শিদাবাদের হিংসা কবলিত এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী তথা রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar)। মুর্শিদাবাদের স্পর্শকাতর এলাকায় স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প করার পক্ষে সওয়াল তুলেছিলেন। সে সময়েই তিনি দাবি করেছিলেন, কারা আদতে হিংসা চালিয়েছে, সে তথ্য দ্রুত সামনে আসবে। এবার হাইকোর্টের রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই রাজ্য সরকারকে বিঁধলেন তিনি। এদিন সুকান্ত বলেন, “এই রিপোর্ট পরিষ্কার বলছে, মাসেরগড় (Murshidabad violence), হিজলতলা, শিউলিতলা, ডিগড়ি- সেখান থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা এসেছিল, তারাই বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। দুষ্কৃতীরা গামছা-কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে এসেছিল। যারা হামলায় অভিযুক্ত ছিল তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন মমতা।” আবার রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “যা নির্দেশ ছিল তা করে দেখিয়েছে মেহেবুবের মতো দুষ্কৃতীরা। এটা বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। ঘটনার আগে পরের অবস্থা বিচার করে রিপোর্ট দেওয়া উচিত।”

  • Nambala keshav Rao Encounter: মাথার দাম ছিল ১ কোটি! ছত্তিশগড়ে খতম শীর্ষ মাও-কমান্ডার কেশব রাও, নিহত আরও ৩০

    Nambala keshav Rao Encounter: মাথার দাম ছিল ১ কোটি! ছত্তিশগড়ে খতম শীর্ষ মাও-কমান্ডার কেশব রাও, নিহত আরও ৩০

    মাধ্যম ডেস্কঃ ছত্তিশগড়ে গুলির লড়াইতে নিকেশ মাওবাদী নেতা কেশব রাও (Nambala keshav Rao Encounter)। জানা গিয়েছে তাঁর মাথার দাম ছিল ১ কোটি টাকা। গোপন সূত্রে গোয়েন্দাদের তথ্যে খবর পেয়ে আবুঝমাড়ের জঙ্গলে অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর সেনাবাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। গুলি-পাল্টাগুলির বিনিময়ে ওই কুখ্যাত মাওবাদী নেতার মৃত্যু হয়েছে। ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) পুলিশ প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ উদ্যোগের এই সাফল্যে বিরাট খুশি প্রকাশ করেছে ওয়াকিবহাল মহল।

    ৩০ জন মাওবাদী খতম (Nambala keshav Rao Encounter)!

    বুধবার সকালে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইতে কুখ্যাত মাওবাদী নেতার মৃত্যু (Nambala keshav Rao Encounter) হয়েছে। এই নাম্বালা কেশব রাওকে বাসবরাজের বলেও ডাকা হতো। ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মারা পড়েছেন। তাঁর উপর ছিল সংগঠনের গুরু দায়িত্ব। একই ভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের গুলির লড়াইতে মারা পড়ে আরও ৩০ জন মাওবাদীকে। প্রাথমিক ভাবে খবর পেয়ে আবুঝমাড়ের জঙ্গলে অভিযান চালায় বাহিনী। যদিও সরকারি (Chhattisgarh) ভাবে এখনও এই মাও নেতার মৃত্যুর খবর স্বীকার করা হয়নি।

    ১৯৭০ সালে যুক্ত হন কেশব

    নাম্বালা কেশব রাও (Nambala keshav Rao Encounter) ওরফে বাসরাজ ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদি)-র জেনারেল সেক্রেটারি। ১৯৭০ সালের নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। এরপর থেকেই পুলিশ তাঁর নাম হিটলিস্টে রাখে। অবশেষে ছত্তিশগড়ের জেলা রিজার্ভ গার্ডের হাতে নিহত হতে হয় তাঁকে। নানা সন্ত্রাস এবং ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। প্রশাসনের এই সাফল্যে উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় শর্মা (Chhattisgarh) বলেন, “মোট ২৬ জনের বেশি মাওবাদী এনকাউন্টারে মারা পড়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে পুলিশ রীতিমতো তাল্লাশি চালাচ্ছিল। অভিযানের সময় একজন পুলিশ এবং এক সেনা-জওয়ান গুলিতে আহত হয়েছেন।”

    ২০২৬ সালের মধ্যেই ভারত হবে মাওবাদী মুক্ত

    উল্লেখ্য, গত দুসপ্তাহ আগে তেলঙ্গানা সীমান্তবর্তী কারেগুট্টা পাহাড়ের কাছে বিজাপুর জেলার (Chhattisgarh) জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১৫ জন নকশাল নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। ১৯ মে থেকেই মাওবাদী দমন অভিযানে জোরকদমে অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সরকার গঠনের পর থেকেই মাওবাদীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে রাজ্যের বিষ্ণুদেও সাইয়ের সরকার। লাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিমধ্যে বড় ঘোষণা করেছেন। তিনি বার্তা দিয়েছিলেন, “২০২৬ সালের মধ্যে ভারতকে মাওবাদী মুক্ত করা হবে। লাল সন্ত্রাস সর্বাত্মক ভাবে শেষ করা হবে।”

  • Ramakrishna 358: “শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধনগিরি ধারণ করেছিলেন, আর নন্দের কাছে দেখাচ্ছেন, পিঁড়ে বয়ে নিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে!”

    Ramakrishna 358: “শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধনগিরি ধারণ করেছিলেন, আর নন্দের কাছে দেখাচ্ছেন, পিঁড়ে বয়ে নিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে!”

    দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মমহোৎসব ১৮৮৫ খ্রীঃ

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ২২শে ফেব্রুয়ারি
    নরেন্দ্রাদি ভক্তসঙ্গে কীর্তনানন্দে

    গিরিশের বিশ্বাস যে, ঈশ্বর শ্রীরামকৃষ্ণরূপে (Ramakrishna) অবতীর্ণ হইয়াছেন।

    গিরিশ (শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি)—আপনার সব কার্য শ্রীকৃষ্ণের মতো। শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধনগিরি ধারণ করেছিলেন, আর নন্দের কাছে দেখাচ্ছেন, পিঁড়ে বয়ে নিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে!

    গিরিশ—বুঝেছি (Kathamrita), আপনাকে এখন বুঝেছি।

    জন্মোৎসবে নববস্ত্র পরিধান, ভক্তগণকর্তৃক সেবা ও সমাধি

    ঠাকুর ছোট খাটটিতে বসিয়া আছেন। বেলা ১১টা হইবে। রাম প্রভৃতি ভক্তেরা ঠাকুরকে নববস্ত্র পরাইবেন। ঠাকুর বলিতেছেন—“না, না।” একজন ইংরেজী পড়া লোককে দেখাইয়া বলিতেছেন, “উনি কি বলবেন!” ভক্তেরা অনেক জিদ করাতে ঠাকুর বলিলেন—“তোমরা বলছ পরি (Ramakrishna)।”

    ভক্তেরা ওই ঘরেতেই ঠাকুরের অন্নাদি আহারের আয়োজন করিতেছেন।

    ঠাকুর নরেন্দ্রকে একটু গান গাইতে বলিতেছেন। নরেন্দ্র গাহিতেছেন:

    নিবিড় আঁধারে মা তোর চমকে ও রূপরাশি ৷
    তাই যোগী ধ্যান ধরে হয়ে গিরিগুহাবাসী ॥
    অনন্ত আঁধার কোলে, মহার্নিবাণ হিল্লোলে ৷
    চিরশান্তি পরিমল, অবিরল যায় ভাসি ॥
    মহাকাল রূপ ধরি, আঁধার বসন পরি ৷
    সমাধিমন্দিরে মা কে তুমি গো একা বসি ॥
    অভয়-পদ-কমলে প্রেমের বিজলী জ্বলে ৷
    চিন্ময় মুখমণ্ডলে শোভে অট্ট অট্ট হাসি ॥

    নরেন্দ্র যাই গাইলেন, ‘সমাধিমন্দিরে মা কে তুমি গো একা বসি!’ অমনি ঠাকুর বাহ্যশূন্য, সমাধিস্থ। অনেকক্ষণ পরে সমাধিভঙ্গের পর ভক্তেরা ঠাকুরকে (Ramakrishna)  আহারের জন্য আসনে বসাইলেন (Kathamrita)। এখনও ভাবের আবেশ রহিয়াছে। ভাত খাইতেছেন কিন্তু দুই হাতে। ভবনাথকে বলিতেছেন, “তুই দে খাইয়ে।” ভাবের আবেশ রহিয়াছে তাই নিজে খাইতে পারিতেছেন না। ভবনাথ তাঁহাকে খাওয়াইয়া দিতেছেন।

    ঠাকুর (Ramakrishna) সামান্য আহার করিলেন। আহারান্তে রাম বলিতেছেন, ‘নিত্যগোপাল পাতে খাবে।’

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) —পাতে? পাতে কেন?

    রাম—তা আর আপনি বলছেন! আপনার পাতে খাবে না?

    নিত্যগোপালকে ভাবাবিষ্ট দেখিয়া ঠাকুর তাহাকে দু-একগ্রাস খাওয়াইয়া (Kathamrita) দিলেন।

    কোন্নগরের ভক্তগণ নৌকা করিয়া এইবার আসিয়াছেন। তাঁহারা কীর্তন করিতে করিতে ঠাকুরের ঘরে প্রবেশ করিলেন। কীর্তনান্তে তাঁহারা জলযোগ করিতে বাহিরে গেলেন। নরোত্তম কীর্তনিয়া ঠাকুরের ঘরে বসিয়া আছেন।

  • Ramakrishna 357: “ঠাকুর প্রকৃতিস্থ হইয়া বসিলেন, ঠাকুর কি নরেন্দ্রের ভিতর সাক্ষাৎ নারায়ণদর্শন করিতেছিলেন!”

    Ramakrishna 357: “ঠাকুর প্রকৃতিস্থ হইয়া বসিলেন, ঠাকুর কি নরেন্দ্রের ভিতর সাক্ষাৎ নারায়ণদর্শন করিতেছিলেন!”

    দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মমহোৎসব ১৮৮৫ খ্রীঃ

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ২২শে ফেব্রুয়ারি
    নরেন্দ্রাদি ভক্তসঙ্গে কীর্তনানন্দে

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে উত্তর-পূর্ব লম্বা বারান্দায় গোপীগোষ্ঠ ও সুবল-মিলন কীর্তন শুনিতেছেন। নরোত্তম কীর্তন করিতেছেন। আজ রবিবার, ২২শে ফেব্রুয়ারি ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দ, ১২ই ফাল্গুন, ১২৯১, শুক্লাষ্টমী। ভক্তেরা তাঁহার জন্মমহোৎসব করিতেছেন। গত সোমবার ফাল্গুন শুক্লা দ্বিতীয়া তাঁহার জন্মতিথি গিয়াছে। নরেন্দ্র, রাখাল, বাবুরাম, ভবনাথ, সুরেন্দ্র, গিরীন্দ্র, বিনোদ, হাজরা, রামলাল, রাম, নিত্যগোপাল, মণি মল্লিক, গিরিশ, সিঁথির মহেন্দ্র কবিরাজ প্রভৃতি অনেক ভক্তের সমাগম হইয়াছে। কীর্তন প্রাতঃকাল হইতেই হইতেছে, এখন বেলা ৮টা হইবে। মাস্টার আসিয়া প্রণাম করিলেন(Kathamrita)। ঠাকুর ইঙ্গিত করিয়া কাছে বসিতে বলিলেন।

    কীর্তন শুনিতে শুনিতে ঠাকুর ভাবাবিষ্ট হইয়াছেন। শ্রীকৃষ্ণের গোচারণে আসিতে দেরি হইতেছে। কোন রাখাল বলিতেছেন, মা যশোদা আসিতে দিতেছেন না। বলাই রোখ করিয়া বলিতেছে, আমি শিঙ্গা বাজিয়ে কানাইকে আনিব। বলাই-এর অগাধ প্রেম।

    কীর্তনিয়া আবার গাহিতেছেন। শ্রীকৃষ্ণ (Ramakrishna) বংশীধ্বনি করিতেছেন। গোপীরা, রাখালেরা, বংশীরব শুনিতেছেন, তাহদের নানাভাব উদয় হইতেছে।

    ঠাকুর বসিয়া ভক্তসঙ্গে কীর্তন শুনিতেছেন। হঠাৎ নরেন্দ্রের দিকে তাঁহার দৃষ্টিপাত হইল। নরেন্দ্র কাছেই বসিয়াছিলেন, ঠাকুর দাঁড়াইয়া সমাধিস্থ। নরেন্দ্রের জানু এক পা দিয়া স্পর্শ করিয়া দাঁড়াইয়াছেন।

    ঠাকুর প্রকৃতিস্থ হইয়া আবার বসিলেন। নরেন্দ্র সভা হইতে উঠিয়া গেলেন। কীর্তন চলিতেছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ বাবুরামকে আস্তে আস্তে বলিলেন (Kathamrita), ঘরে ক্ষীর আছে নরেন্দ্রকে দিগে যা।

    ঠাকুর (Ramakrishna) কি নরেন্দ্রের ভিতর সাক্ষাৎ নারায়ণদর্শন করিতেছিলেন!

    কীর্তনান্তে শ্রীরামকৃষ্ণ নিজের ঘরে আসিয়াছেন ও নরেন্দ্রকে আদর করিয়া মিঠাই খাওয়াইতেছেন।

    গিরিশের বিশ্বাস যে, ঈশ্বর শ্রীরামকৃষ্ণরূপে (Ramakrishna) অবতীর্ণ হইয়াছেন।

    গিরিশ (শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি)—আপনার সব কার্য শ্রীকৃষ্ণের মতো। শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধনগিরি ধারণ করেছিলেন, আর নন্দের কাছে দেখাচ্ছেন, পিঁড়ে বয়ে নিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে!

    গিরিশ—বুঝেছি (Kathamrita), আপনাকে এখন বুঝেছি।

    জন্মোৎসবে নববস্ত্র পরিধান, ভক্তগণকর্তৃক সেবা ও সমাধি

    ঠাকুর ছোট খাটটিতে বসিয়া আছেন। বেলা ১১টা হইবে। রাম প্রভৃতি ভক্তেরা ঠাকুরকে নববস্ত্র পরাইবেন। ঠাকুর বলিতেছেন—“না, না।” একজন ইংরেজী পড়া লোককে দেখাইয়া বলিতেছেন, “উনি কি বলবেন!” ভক্তেরা অনেক জিদ করাতে ঠাকুর বলিলেন—“তোমরা বলছ পরি (Ramakrishna)।”

  • Ramakrishna 356: “তোমার দুইভাব—স্ব-স্বরূপকে চিন্তা করাও বটে, আবার সেব্য-সেবকেরও ভাব বটে”

    Ramakrishna 356: “তোমার দুইভাব—স্ব-স্বরূপকে চিন্তা করাও বটে, আবার সেব্য-সেবকেরও ভাব বটে”

    দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও ‘দেবী চৌধুরাণী’ পাঠ

    চর্তুথ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৭শে ডিসেম্বর

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) সহাস্যে—না গো, সব একটু একটু চাই। যদি মুদীর দোকান কেউ করে, সবরকম রাখতে হয়—কিছু মুসুর ডালও চাই, হলো খানিকটা তেঁতুল,—এ-সব রাখতে হয়।

    “বাজনার যে ওস্তাদ, সব বাজনা সে কিছু কিছু বাজাতে পারে।”

    ঠাকুর ঝাউতলায় বাহ্যে গেলেন (Kathamrita)—একটি ভক্ত গাড়ু লইয়া সেইখানে রাখিয়া আসিলেন।

    ভক্তেরা এদিক-ওদিক বেড়াইতেছেন—কেহ বা ঠাকুরের ঘরের দিকে গমন করিলেন, কেহ কেহ পঞ্চবটীতে ফিরিয়া আসিতেছেন। ঠাকুর সেখানে আসিয়া বলিলেন—“দু-তিনবার বাহ্যে গেলুম। মল্লিকের বাড়ি খাওয়া;—ঘোর বিষয়ী। পেট গরম হয়েছে।”

    সমাধিস্থ পুরুষের (শ্রীরামকৃষ্ণের) পানের ডিবে স্মরণ

    ঠাকুরের পানের ডিবে পঞ্চবটীর চাতালে এখনও পড়িয়া রহিয়াছে। আরও দু-একটি জিনিস।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) মাস্টারকে বললেন, “ওই ডিবে আর কি কি আছে, ঘরে আন।” এই বলিয়া ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ নিজের ঘরের দিকে দক্ষিণাস্য হইয়া আসিতে লাগিলেন। ভক্তেরা সঙ্গে সঙ্গে পশ্চাতে আসিতেছেন। কাহারও হাতে পানের ডিবে, কাহারও হাতে গাড়ু ইত্যাদি।

    ঠাকুর মধ্যাহ্নের পর একটু বিশ্রাম করিয়াছেন। দুই-চারিটি ভক্ত আসিয়া বসিলেন। ঠাকুর ছোট খাটটিতে একটি ছোট তাকিয়া হেলান দিয়া বসিয়া আছেন। একজন ভক্ত জিজ্ঞাসা করিলেন —

    জ্ঞানী ও ভক্তের ভাব একাধারে কি হয়? সাধনা চাই

    “মহাশয়, জ্ঞানে কি ঈশ্বরের Attributes —গুণ— জানা যায়?

    ঠাকুর বলিলেন (Kathamrita), “সে এ-জ্ঞানে নয়। অমনি কি তাঁকে জানা যায়? সাধন করতে হয়। আর, একটা কোন ভাব আশ্রয় করতে হয়। দাসভাব। ঋষীদের শান্তভাব ছিল! জ্ঞানীদের কি ভাব জানো? স্ব-স্বরূপকে চিন্তা করা। (একজন ভক্তের প্রতি, সহাস্যে)—তোমার কি?”

    ভক্তটি চুপ করিয়া রহিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—তোমার দুইভাব—স্ব-স্বরূপকে চিন্তা করাও বটে, আবার সেব্য-সেবকেরও ভাব বটে। কেমন ঠিক কি না?

    ভক্ত (সহাস্যে ও কুণ্ঠিতভাবে)—আজ্ঞা, হাঁ।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তাই হাজরা বলে, তুমি মনের কথা সব বুঝতে পার। ও-ভাব খুব এগিয়ে গেলে হয়। প্রহ্লাদের হয়েছিল।

    “কিন্তু ও ভাব সাধন করতে গেলে কর্ম চাই।

    “একজন কুলগাছের কাঁটা টিপে ধরে আছে—হাত দিয়ে রক্ত দরদর করে পড়ছে, কিন্তু বলে, আমার কিছু হয় নাই, লাগে নাই! জিজ্ঞাসা করলে বলে,—‘বেশ বেশ’। এ-কথা শুধু মুখে বললে কি হবে? ভাব সাধন করতে হয়।”

    ভক্তেরা ঠাকুরের কথামৃত পান করিতেছেন (Kathamrita)।

  • Ramakrishna 355: “ছেলে যদি বাপের হাত ধরে, তাহলে খানায় পড়লেও পড়তে পারে, কিন্তু বাপ যার হাত ধরে থাকে, তার ভয় কি!”

    Ramakrishna 355: “ছেলে যদি বাপের হাত ধরে, তাহলে খানায় পড়লেও পড়তে পারে, কিন্তু বাপ যার হাত ধরে থাকে, তার ভয় কি!”

    দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও ‘দেবী চৌধুরাণী’ পাঠ

    চর্তুথ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৭শে ডিসেম্বর

    পঞ্চবটীমূলে শ্রীরামকৃষ্ণ—অবতারের ‘অপরাধ’ নাই

    নিত্যগোপাল সামনে উপবিষ্ট। সর্বদা ভাবস্থ, মুখে কথা নাই।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—গোপাল! তুই কেবল চুপ করে থাকিস!

    নিত্য (বালকের ন্যায়)—আমি—জানি—না।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—বুঝেছি কিছু বলিস না কেন। অপরাধ?

    “বটে বটে। জয় বিজয় নারায়ণের দ্বারী, সনক সনাতনাদি ঋষিদের, ভিতরে যেতে বারণ করেছিল। সেই অপরাধে তিনবার এই সংসারে জন্মাতে হয়েছিল।

    “শ্রীদাম গোলোকে বিরজার দ্বারী ছিলেন। শ্রীমতী কৃষ্ণকে (Ramakrishna) বিরজার মন্দিরে ধরবার জন্য তাঁর দ্বারে গিছলেন, আর ভিতরে ঢুকতে চেয়েছিলেন—শ্রীদাম (Kathamrita) ঢুকতে দেয় নাই। তাই শ্রীমতী শাপ দিলেন, তুই মর্ত্যে অসুর হয়ে জন্মাগে যা। শ্রীদামও শাপ দিছলো! (সকলের ঈষৎ হাস্য)

    “কিন্তু একটি কথা আছে, ছেলে যদি বাপের হাত ধরে, তাহলে খানায় পড়লেও পড়তে পারে, কিন্তু বাপ যার হাত ধরে থাকে, তার ভয় কি!

    “শ্রীদামের কথা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে।”

    কেদার (চাটুজ্যে) এখন ঢাকায় থাকেন, তিনি সরকারি কর্ম করেন। আগে কর্মস্থল কলিকাতায় ছিল, এখন ঢাকায়। তিনি ঠাকুরের পরমভক্ত। ঢাকায় অনেকগুলি ভক্তের সঙ্গ হইয়াছে। সেই সকল ভক্তেরা তাঁর কাছে সর্বদা আসেন ও উপদেশ গ্রহণ করেন। শুধু হাতে ভক্তদর্শনে আসতে নাই। অনেকে মিষ্টান্নাদি আনেন ও কেদারকে নিবেদন করেন।

    সবরকম লোকের জন্য শ্রীরামকৃষ্ণের নানারকম “ভাব ও অবস্থা”

    কেদার (অতি বিনীতভাবে)—তাদের জিনিস কি খাব?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—যদি ঈশ্বরে ভক্তি করে দেয়, তাহলে দোষ নাই। কামনা করে দিলে সে জিনিস ভাল নয়।

    কেদার—আমি তাদের বলেছি, আমি নিশ্চিন্ত। আমি বলেছি (Kathamrita), যিনি আমায় কৃপা করেছেন, তিনি সব জানেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—তা তো সত্য। এখানে সবরকম লোক আসে, তাই সবরকম ভাব দেখতে পায়।

    কেদার—আমার নানা বিষয় জানা দরকার নাই।

  • Ramakrishna 354: ““চাতক কেবল মেঘের জল খায়, গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, সব নদী জলে পরিপূর্ণ, সমুদ্র ভরপুর, তবু সে জল খাবে না”

    Ramakrishna 354: ““চাতক কেবল মেঘের জল খায়, গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, সব নদী জলে পরিপূর্ণ, সমুদ্র ভরপুর, তবু সে জল খাবে না”

    দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও ‘দেবী চৌধুরাণী’ পাঠ

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৭শে ডিসেম্বর
    ঈশ্বরদর্শনের উপায়—শ্রীমুখ-কথিত চরিতামৃত

    পূর্বকথা—ঠাকুরের ব্রহ্মজ্ঞানের অবস্থা ও সর্বভূতে ঈশ্বরদর্শন 

    ঈশ্বরদর্শনের উপায়—তীব্র বৈরাগ্য ও তিনি আপনার ‘বাপ’ এই বোধ 

    “এই দর্শন (Ramakrishna) হওয়া চাই। এখন তাঁর সাক্ষাৎকার কেমন করে হয়? তীব্র বৈরাগ্য। এমন হওয়া চাই যে, বলবে, জ্ঞকি! জগৎপিতা? আমি কি জগৎ ছাড়া? আমায় তুমি দয়া করবে না? শালা!’

    “যে যাকে চিন্তা করে, সে তার সত্তা পায়। শিবপূজা করে শিবের সত্তা পায়। একজন রামের ভক্ত, রাতদিন হনুমানের চিন্তা করত! মনে করত, আমি হনুমান হয়েছি। শেষে তার ধ্রুব বিশ্বাস হল যে, তার একটু ল্যাজও হয়েছে!

    “শিব অংশে জ্ঞান হয়, বিষ্ণু অংশে ভক্তি হয়। যাদের শিব অংশ তাদের জ্ঞানীর স্বভাব, যাদের বিষ্ণু অংশ, তাদের ভক্তের স্বভাব (Ramakrishna)।”

    চৈতন্যদেব অবতার—সামান্য জীব দুর্বল

    মাস্টার—চৈতন্যদেব? তাঁর তো আপনি বলেছিলেন, জ্ঞান ও ভক্তি দুই ছিল।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (বিরক্ত হইয়া)—তাঁর আলাদা কথা। তিনি ঈশ্বরের অবতার। তাঁর সঙ্গে জীবের অনেক তফাত। তাঁর এমন বৈরাগ্য যে, সার্বভৌম যখন জিহ্বায় চিনি ঢেলে দিলে, চিনি হাওয়াতে ফরফর করে উড়ে গেল, ভিজলো না। সর্বদাই সমাধিস্থ! কত বড় কামজয়ী! জীবের সহিত তাঁর তুলনা! সিংহ বার বছরে একবার রমণ করে, কিন্তু মাংস খায়; চড়ুই কাঁকর খায়, কিন্তু রাতদিনই রমণ করে। তেমনি অবতার আর জীব। জীব কাম ত্যাগ করে, আবার একদিন হয়তো রমণ হয়ে গেল; সামলাতে পারে না। (মাস্টারের প্রতি) লজ্জা কেন? যার হয় সে লোক পোক দেখে! ‘লজ্জা ঘৃণা ভয়, তিন থাকতে নয়।’ এ-সব পাশ। ‘অষ্ট পাশ’ আছে না?

    “যে নিত্যসিদ্ধ তার আবার সঘসারে ভয় কি? ছকবাঁধা খেলা; আবার ফেললে কি হয়, চকবাঁধা খেলাতে এ-ভয় থাকে না।

    “যে নিত্যসিদ্ধ, সে মনে করলে সগসারেও থাকতে পারে। কেউ কেউ দুই তলোয়ার নিয়ে খেলতে পারে। এমন খেলোয়াড় যে, ঢিল পড়লে তলোয়ারে লেগে ঠিকরে যায়!”

    দর্শনের উপায় যোগ—যোগীর লক্ষণ

    ভক্ত—মহাশয়, কি অবস্থায় ঈশ্বরের দর্শন পাওয়া যায়?

    শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna) —মন সব কুড়িয়ে না আনলে কি হয়। ভগবতে শুকদেবের কথা আছে—পথে যাচ্ছে যেন সঙ্গীন চড়ান। কোনদিকে দৃষ্টি নাই। এক লক্ষ্য—কেবল ভগবানের দিকে দৃষ্টি। এর নাম যোগ (Kathamrita) ।

    “চাতক কেবল মেঘের জল খায়। গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, আর সব নদী জলে পরিপূর্ণ, সাত সমুদ্র ভরপুর, তবু সে জল খাবে না। মেঘের জল পড়বে তবে খাবে।

    “যার এরূপ যোগ হয়েছে, তার ঈশ্বরের দর্শন হতে পারে। থিয়েটারে গেলে যতক্ষণ না পর্দা ওঠে ততক্ষণ লোকে বসে বসে নানারকম গল্প করে—বাড়ির কথা, আফিসের কথা, ইস্কুলের কথা এই সব। যাই পর্দা উঠে, অমনি কথাবার্তা সব বন্ধ। যা নাটক হচ্ছে, একদৃষ্টে তাই দেখতে থাকে। অনেকক্ষণ পরে যদি এক-আধটা কথা কয় সে ওই নাটকেরই কথা।

    “মাতাল মদ খাওয়ার পর কেবল আনন্দের (Kathamrita) কথাই কয়।”

  • Ramakrishna 353: “গোপীরা সর্বভূতে শ্রীকৃষ্ণ দর্শন করেছিল, তৃণ দেখে বলে, শ্রীকৃষ্ণকে স্পর্শ করে পৃথিবীর রোমাঞ্চ হয়েছে”

    Ramakrishna 353: “গোপীরা সর্বভূতে শ্রীকৃষ্ণ দর্শন করেছিল, তৃণ দেখে বলে, শ্রীকৃষ্ণকে স্পর্শ করে পৃথিবীর রোমাঞ্চ হয়েছে”

    দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও ‘দেবী চৌধুরাণী’ পাঠ

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৭শে ডিসেম্বর
    ঈশ্বরদর্শনের উপায়—শ্রীমুখ-কথিত চরিতামৃত

    পূর্বকথা—ঠাকুরের ব্রহ্মজ্ঞানের অবস্থা ও সর্বভূতে ঈশ্বরদর্শন 

    “তাঁকে সর্বভূতে দর্শন (Ramakrishna) করতে লাগলুম। পূজা উঠে গেল! এই বেলগাছ! বেলপাতা তুলতে আসতুম! একদিন পাতা ছিঁড়তে গিয়ে আঁশ খানিকটা উঠে এল। দেখলাম গাছ চৈতন্যময়! মনে কষ্ট হল। দূর্বা তুলতে গিয়ে দেখি, আর-সেরকম করে তুলতে পারিনি। তখন রোখ করে তুলতে গেলুম।

    “আমি লেবু কাটতে পারি না। সেদিন অনেক কষ্টে, ‘জয় কালী’ বলে তাঁর সম্মুখে বলির মতো করে তবে কাটতে পেরেছিলুম। একদিন ফুল তুলতে গিয়ে দেখিয়ে দিলে,—গাছে ফুল ফুটে আছে, যেন সম্মুখে বিরাট—পূজা হয়ে গেছে—বিরাটের মাথায় ফুলের তোড়া! আর ফুল তোলা হল না (Kathamrita)!

    “তিনি মানুষ হয়েও লীলা করছেন। আমি দেখি, সাক্ষাৎ নারায়ণ। কাঠ ঘষতে ঘষতে আগুন বেরোয়, ভক্তির জোর থাকলে মানুষেতেই ঈশ্বর দর্শন (Ramakrishna) হয়। তেমন টোপ হলে বড় রুই কাতলা কপ্‌ করে খায়।

    প্রেমোন্মাদ হলে সর্বভূতে সাক্ষাৎকার হয়। গোপীরা সর্বভূতে শ্রীকৃষ্ণ দর্শন করেছিল। কৃষ্ণময় দেখেছিল। বলেছিল, আমি কৃষ্ণ! তখন উন্মাদ অবস্থা! গাছ দেখে বলে, এরা তপস্বী, শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান করছে। তৃণ দেখে বলে, শ্রীকৃষ্ণকে স্পর্শ করে ওই দেখ পৃথিবীর রোমাঞ্চ হয়েছে।

    “পতিব্রতাধর্ম; স্বামী দেবতা। তা হবে না কেন? প্রতিমায় পূজা হয়, আর জীয়ন্ত মানুষে কি হয় না?”

    প্রতিমায় আবির্ভাব—মানুষে ঈশ্বরদর্শন (Ramakrishna) কখন? নিত্যসিদ্ধি ও সংসার

    “প্রতিমায় আবির্ভাব হতে গেলে তিনটি জিনিসের দরকার,—প্রথম পূজারীর ভক্তি, দ্বিতীয় প্রতিমা সুন্দর হওয়া চাই, তৃতীয় গৃহস্বামীর ভক্তি। বৈষ্ণবচরণ বলেছিল, শেষে নরলীলাতেই মনটি কুড়িয়ে আসে।

    “তবে একটি কথা একটি আছে(Kathamrita),—তাঁকে সাক্ষাৎকার না করলে এরূপ লীলাদর্শন হয় না। সাক্ষাৎকারের লক্ষণ কি জান? বালকস্বভাব হয়। কেন বালকস্বভাব হয়? ঈশ্বর নিজে বালকস্বভাব কি না! তাই যে তাঁকে দর্শন করে, তারও বালকস্বভাব হয়ে যায়।”

  • Ramakrishna 352: “তুমি আমার দেবতা, আমি অন্য দেবতার অর্চনা করিতে শিখিতেছিলাম, দেবতার স্থান অধিকার করিয়াছ”

    Ramakrishna 352: “তুমি আমার দেবতা, আমি অন্য দেবতার অর্চনা করিতে শিখিতেছিলাম, দেবতার স্থান অধিকার করিয়াছ”

    দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও ‘দেবী চৌধুরাণী’ পাঠ

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৭শে ডিসেম্বর
    ঈশ্বরদর্শনের উপায়—শ্রীমুখ-কথিত চরিতামৃত

    পাঠ চলিতে লাগিল। এইবার ঈশ্বরদর্শনের কথা। প্রফুল্ল এবার দেবী চৌধুরাণী হইয়াছেন। বৈশাখী শুক্লা সপ্তমী তিথী। দেবী বজরার উপর বসিয়া দিবার সহিত কথা কহিতেছেন। চাঁদ উঠিয়াছে। গঙ্গাবক্ষে বজরা নঙ্গর করিয়া আছে। বজরার ছাদে দেবী ও সখীদ্বয়। ঈশ্বর কি প্রত্যক্ষ হন, এই কথা হইতেছে। দেবী বললেন, যেমন ফুলের গন্ধ ঘ্রাণের প্রত্যক্ষ সেইরূপ ঈশ্বর মনের প্রত্যক্ষ হন। “ঈশ্বর মানস প্রত্যক্ষের বিষয় (Kathamrita)।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—মনের প্রত্যক্ষ। সে এ-মনের নয়। সে শুদ্ধমনের। এ-মন থাকে না। বিষয়াসক্তি একটুও থাকলে হয় না। মন যখন শুদ্ধ হয়, শুদ্ধমনও বলতে পার, শুদ্ধ আত্মাও বলতে পার।

    যোগ দূরবীন—পাতিব্রত্যধর্ম ও শ্রীরামকৃষ্ণ

    মাস্টার—মনের দ্বারা প্রত্যক্ষ যে সহজে হয় না, এ-কথা একটু পরে আছে। বলেছে প্রত্যক্ষ করতে দূরবীন চাই। ওই দূরবীনের নাম যোগ। তারপর যেমন গীতায় আছে, বলেছে, যোগ তিনরকম—জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ, কর্মযোগ। এই যোগ-দূরবীন দিয়ে ঈশ্বরকে দেখা যায়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—এ খুব ভাল কথা। গীতার কথা।

    মাস্টার—শেষে দেবী চৌধুরানীর স্বামীর সঙ্গে দেখা হল। স্বামীর উপর খুব ভক্তি। স্বামীকে বললে, “তুমি আমার দেবতা। আমি অন্য দেবতার অর্চনা করিতে শিখিতেছিলাম, শিখিতে পারি নাই। তুমি সব দেবতার স্থান অধিকার করিয়াছ।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) সহাস্যে—“শিখিতে পারি নাই!” এর নাম পতিব্রতার ধর্ম। এও আছে।

    পাঠ সমাপ্ত হইল। ঠাকুর (Kathamrita) হাসিতেছেন। ভক্তেরা চাহিয়া আছেন, ঠাকুর আবার কি বলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে, কেদার ও অন্যান্য ভক্তদের প্রতি)—এ একরকম মন্দ নয়। পতিব্রতাধর্ম। প্রতিমায় ঈশ্বরের পূজা হয় আর জীয়ন্ত মানুষে কি হয় না? তিনিই মানুষ হয়ে লীলা করছেন।

    “কি অবস্থা গেছে। হরগৌরীভাবে কতদিন ছিলুম। আবার কতদিন রাধাকৃষ্ণভাবে! কখন সীতারামের ভাবে! রাধার ভাবে কৃষ্ণ কৃষ্ণ করতুম, সীতার ভাবে রাম রাম করতুম!

    “তবে লীলাই শেষ নয়। এই সব ভাবের পর বললুম, মা এ-সব বিচ্ছেদ আছে। যার বিচ্ছেদ নাই, এমন অবস্থা করে দাও। তাই কতদিন অখণ্ড সচ্চিদানন্দ এই ভাবে রইলুম। ঠাকুরদের ছবি ঘর থেকে বার করে দিলুম।

LinkedIn
Share