এইবার নরেন্দ্র গান গাহিতেছেন:
“সব দুঃখ দূর করিলে দর্শন দিয়ে প্রাণ সপ্তলোক ভুলে শখ তোমারে পাইয়ে কোথায় আমি প্রতিদিন হীন।”
গান শুনিতে শুনিতে শ্রী রামকৃষ্ণের বহির্জগৎ ভুল হইয়া আসিতেছে। আবার নিমীলিত নেত্র, স্পন্দনহীন দেহ — সমাধিস্থ।
সমাধি ভঙ্গের পর বলিতেছেন, “আমাকে কে লইয়া যাবে? বালক যেমন সঙ্গী না দেখিলে অন্ধকার দেখে, সেই রূপ। অনেক রাত হইয়াছে। ফাল্গুন কৃষ্ণ দশমী, অন্ধকার রাত্রি। ঠাকুর দক্ষিণেশ্বরে কালীবাড়ি যাইবেন। গাড়িতে উঠিবেন। ভক্তেরা গাড়ির কাছে দাঁড়াইয়া। তিনি উঠিতেছেন, অনেক সন্তর্পণে তাহাকে উঠানো হইতেছে। এখনো গরগর মাতোয়ারা। গাড়ি চলিয়া গেল। ভক্তেরা যে যার বাড়ি যাইতেছেন।”
মস্তকের উপর তারকা-মণ্ডিত নৈশ গগন, হৃদয়পটে অদ্ভুত শ্রীরামকৃষ্ণের ছবি।
স্মৃতিমধ্যে ভক্তের মজলিস, সুখস্বপ্নের ন্যায় নয়নপথে সেই প্রেমের হাট।
কলিকাতার রাজপথে অভিমুখে ভক্তেরা যাইতেছেন,
কেহ সরস বসন্তে নীল সেবন করিতে করিতে, সেই গানটি আবার গাইতে গাইতে যাচ্ছেন —
“সব দুঃখ দূর করিলে দর্শন দিয়ে, মহিলা প্রাণমণি” ভাবতে ভাবতে যাচ্ছেন।
সত্যই কি ঈশ্বর মানুষদেহ ধারণ করে আসেন?
অনন্তকে শান্ত হয়?
বিচার তো অনেক হলো — কি বুঝলাম?
বিচারের দ্বারা কিছুই বুঝলাম না।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ অতিব স্পষ্ট বললেন —
“যতক্ষণ বিচার, ততক্ষণ বস্তু লাভ হয় নাই, ততক্ষণ ঈশ্বরকে পাওয়া যায় নাই।”
তাও বটে।
এই তো এক ছটাক বুদ্ধি — এর দ্বারা আর কী বুঝবো ঈশ্বরের কথা?
তবে আবদার, বিশ্বাস কিরূপে হয়?
ঠাকুর বললেন —
“ঈশ্বর যদি দেখিয়ে দেন দপ করে, তাহলে একদণ্ডেই বোঝা যায়।”