মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ২ অক্টোবর, বিজয়া দশমীর দিন শতবর্ষ উদযাপন করতে চলেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়মসেবক সংঘ। এই উপলক্ষে বুধবার দিল্লিতে সংঘের বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরএসএস-এর জাতি গঠনে অবদানের স্মরণে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট ও স্মারক মুদ্রা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশে ভাষণ দেন।
কী বললেন প্রধানমন্ত্রী?
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আরএসএসের গৌরবময় ১০০ বছরের যাত্রা ত্যাগ, নিঃস্বার্থ সেবা, জাতি গঠন এবং শৃঙ্খলার এক অসাধারণ উদাহরণ। ১০০ বছর আগে দশেরার দিন আরএসএস প্রতিষ্ঠা কেবল একটি কাকতালীয় ঘটনা ছিল না। এটি ছিল হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যের পুনরুত্থান। আমাদের ‘স্বয়ংসেবকদের’ প্রজন্ম সংঘের শতবর্ষ পূর্তির সাক্ষী হতে পেরে সৌভাগ্যবান।’’ মোদি আরও বলেন, ‘‘আরএসএস সমাজের বিভিন্ন স্তরে কাজ করে, কিন্তু তাদের মধ্যে কখনও দ্বন্দ্ব থাকে না কারণ তারা জাতি-প্রথমে নীতিতে কাজ করে। আরএসএস ‘এক ভারত, মহান ভারত’-এ বিশ্বাস করে, তবুও স্বাধীনতার পর থেকে জাতীয় মূলধারায় তাদের যোগদান রোধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল।’’
স্মারক মুদ্রা-ডাকটিকিট প্রকাশ…
এদিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ ১০০ টাকার স্মারক মুদ্রা ও স্মারক ডাকটিকিটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ১০০ টাকার মুদ্রার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মুদ্রার একদিকে জাতীয় প্রতীক রয়েছে, অন্যদিকে ভারত মাতাকে ‘বরদ মুদ্রা’ ভঙ্গিতে সিংহের উপর বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে, যেখানে স্বয়ংসেবকরা তাঁর সামনে উৎসর্গের সাথে মাথা নত করছেন।’’ মোদি উল্লেখ করেন যে, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এটিই প্রথমবারের মতো ভারতীয় মুদ্রায় ভারত মাতার ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। একইসঙ্গে, তিনি ১৯৬৩ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে আরএসএস স্বয়ংসেবকদের ঐতিহাসিক অংশগ্রহণকে স্মরণ করে এই অনুষ্ঠানের সময় চালু করা বিশেষ ডাকটিকিট-এর গুরুত্বের উপরও জোর দেন। বলেন, ‘‘এই ডাকটিকিটটিতে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের একটি চিত্র রয়েছে।’’
এর আগে রবিবার, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) এক ‘অভূতপূর্ব এবং অনুপ্রেরণামূলক’ যাত্রার প্রশংসা করেন নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘এই বিজয়া দশমী আরও একটি কারণে খুব বিশেষ। এই দিনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই এক শতাব্দীর যাত্রা যেমন আশ্চর্যজনক, তেমনই অভূতপূর্ব এবং অনুপ্রেরণামূলক।’’
দেশ গঠনে আরএসএসের ভূমিকা
ডঃ কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার ১৯২৫ সালে বিজয়া দশমীর দিনে নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আরএসএসের লক্ষ্য, নাগরিকদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সচেতনতা, শৃঙ্খলা, সেবার মানসিকতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলা। দেশপ্রেম ও জাতীয় চরিত্র গঠনের মাধ্যমে ভারতের সার্বিক উন্নয়নই এ সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য। এই অনুষ্ঠান থেকে গোটা দেশে ঐক্য, দেশপ্রেম ও সেবার বার্তা আরও সুদৃঢ়ভাবে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত ১০০ বছরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক কল্যাণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তা প্রদানের মতো ক্ষেত্রে আরএসএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বন্যা, ভূমিকম্প কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের সময় সংঘের স্বয়ংসেবকরা সক্রিয়ভাবে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে অংশ নেন। তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো যুবক, নারী ও কৃষকদের ক্ষমতায়ন, সমাজের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং স্থানীয় সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করতে কাজ করে চলেছে।
বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে গনআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আরএসএস-এর উদ্ভব হয়েছিল। ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে সামনে রেখে সংগঠনটি জাতীয় চেতনাকে দৃঢ় করেছে। শতবর্ষ উদযাপন কেবল সংগঠনের ঐতিহাসিক সাফল্যের স্মারক নয়, বরং ভারতের সাংস্কৃতিক যাত্রা ও জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও তা এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে।