মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মাত্র ৯ বছরের ভারতীয় দাবাড়ুর (The Rising Indian Chess) কাছে প্রায় হেরেই যাচ্ছিলেন বিশ্বের এক নম্বর ম্যাগনাস কার্লসেন। কোনও মতে বাঁচলেন তিনি। দিল্লির খুদে দাবাড়ু আরিত কপিলের (Aarit Kapil vs Magnus Carlsen) বিরুদ্ধেই লজ্জার মুখে পড়েছিলেন কার্লসেন। ‘আর্লি টাইটেল্ড টিউসডে’ নামক একটি দাবা প্রতিযোগিতায় এমনটাই দেখা গেল। আসলে সরকারি সহায়তায় গত কয়েক বছরে ভারতে দাবার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। অন্য খেলার মতোই দাবার উন্নতিতেও সক্রিয় কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক। সম্প্রতি নতুন প্রজন্মের প্রতিভাবান দাবা খেলোয়াড়দের আর্থিক সহায়তা দিতে অল ইন্ডিয়া চেস ফেডারেশন (AICF) চালু করেছে ‘টপ ন্যাশনাল প্লেয়ার্স স্টাইপেন্ড স্কিমও (TNPSS)’।
ভারতীয় দাবাড়ুর কাছে বেকায়দায় কার্লসেন
জাতীয় পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-৯ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আরিত। কার্লসেনের বিরুদ্ধে খেলতে বসে বিশ্বের এক নম্বর দাবাড়ুকে চাপে ফেলে দিয়েছিল সে। খুদে দাবাড়ু পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে প্রায় হারিয়েই দিয়েছিল। কিন্তু সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় সুবিধাজনক জায়গায় থাকলেও কার্লসেনকে হারাতে পারেনি সে। হারের মুখ থেকে ম্যাচ ড্র করে স্বস্তি পান কার্লসেন। ‘আর্লি টাইটেল্ড টিউসডে’ প্রতিযোগিতাটি ছিল অনলাইনে। আরিত খেলছিলেন জর্জিয়ার একটি হোটেল থেকে। কিছু দিন আগে ভারতের গুকেশের বিরুদ্ধে হেরেছিলেন কার্লসেন। নরওয়ে ওপেনের ষষ্ঠ রাউন্ডে কার্লসেনের বিরুদ্ধে ম্যাচের বেশির ভাগ সময় পিছিয়ে ছিলেন গুকেশ। সেখান থেকে ফিরে আসেন ভারতীয় দাবাড়ু। তাঁর কাছে হার মানতে পারেননি কার্লসেন। রেগে টেবিলে ঘুষি মেরেছিলেন তিনি।
আরিত কে
রাজধানী দিল্লি থেকে উঠে আসা ৯ বছর বয়সি আরিত কপিল ইতিমধ্যেই দেশের এক উজ্জ্বল দাবা প্রতিভা হিসেবে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় অনূর্ধ্ব-৯ চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করার পর, বর্তমানে তিনি অংশ নিচ্ছেন অনূর্ধ্ব-১০ বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে, যা জর্জিয়াতেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অনূর্ধ্ব-১০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম দু’টি পর্বে জিতেছে আরিত। তৃতীয় পর্বের ম্যাচ খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। এটাই আরিতের প্রথম আন্তর্জাতিক সাফল্য নয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, ক্লাসিক্যাল দাবায় আমেরিকান গ্র্যান্ডমাস্টার রাসেত জিয়াতদিনোভকে পরাজিত করে আরিত। ভুবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত কিআইআইটি ইন্টারন্যাশনাল ওপেন টুর্নামেন্টে রাসেতকে হারিয়ে সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এক গ্র্যান্ডমাস্টারকে হারানোর নজির গড়ে আরিত। ভারতীয় দাবা দুনিয়ায় এই ক্ষুদে তারকার উত্থান নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতের জন্য এক বড় আশার বার্তা বহন করছে। তবে কার্লসেনের সঙ্গে ড্র করলেও ‘আর্লি টাইটেল্ড টিউসডে’ প্রতিযোগিতা জিততে পারেনি আরিত। ১০ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারতেরই দাবাড়ু ভি প্রণব। কার্লসেন পেয়েছেন ৯.৫ পয়েন্ট। একই পয়েন্ট পান হান্স মোকে নিয়েমানও। টাইব্রেকারে জিতে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেন তিনিই।
সরকারি সাহায্য ভারতে দাবার ক্রম উন্নতি
গত কয়েক বছর ধরে দাবায় এগোচ্ছে ভারত। রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ, ডি গুকেশ, অর্জুন এরিগাইসিরা বিশ্ব দাবায় ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন। সেই তালিকায় প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। নতুন প্রজন্মের প্রতিভাবান দাবা খেলোয়াড়দের আর্থিক সহায়তা দিতেই অল ইন্ডিয়া চেস ফেডারেশন (AICF) চালু করেছে ‘টপ ন্যাশনাল প্লেয়ার্স স্টাইপেন্ড স্কিম (TNPSS)’। এই প্রকল্পের আওতায় ২০২৫ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে মোট ৪২ জন জাতীয় পর্যায়ে শীর্ষ স্থান অধিকারকারী দাবাড়ুকে মোট ৪২,৩০,০০০ টাকার বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। প্রতি খেলোয়াড় পেয়েছেন ৬০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত। এই ৪২ জন দাবাড়ু বাছাই করা হয়েছে গত বছরের জাতীয় প্রতিযোগিতায় অসাধারণ পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। বৃত্তিপ্রাপ্ত খেলোয়াড়রা অনূর্ধ্ব-৭ থেকে অনূর্ধ্ব ১৯ বিভাগ পর্যন্ত খেলে। ছেলে ও মেয়ে উভয়কেই এই টাকা দেওয়া হবে।
কত টাকার বাজেট
টপ ন্যাশনাল প্লেয়ার্স স্টাইপেন্ড প্রকল্পের জন্য মোট বাজেট বরাদ্দ ৬.১৫ কোটি টাকা। এই তহবিল খেলোয়াড়দের কোচিং, ভ্রমণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ব্যয় বহনে সহায়তা করবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির “খেলো ইন্ডিয়া” ও “গ্রাসরুট অ্যাথলিটস”-এর উন্নয়নের আহ্বানে অনুপ্রাণিত হয়ে, অল ইন্ডিয়া চেস ফেডারেশন (AICF) এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এআইসিএফ-এর সভাপতি নিতিন নারাং বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা আমাদের অনেক প্রতিভাবান দাবা খেলোয়াড়ের স্বপ্নকে থামিয়ে দিয়েছে। ‘টপ ন্যাশনাল প্লেয়ার্স স্টাইপেন্ড স্কিম (TNPSS)’ এই সমস্যার বিরুদ্ধে আমাদের জবাব। খেলোয়াড়-কেন্দ্রিক নীতির মাধ্যমে আমরা চেসে প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ-তরুণীদের পাশে দাঁড়াতে চাই। এই প্রথমবার, আমরা আমাদের ‘স্বর্ণ কন্যা ও পুত্রদের’ ভবিষ্যতের জন্য সরাসরি বিনিয়োগ করছি। এটি কেবল এককালীন সহায়তা নয়, বরং তাদের স্বপ্ন পূরণে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।” এই প্রকল্প দেশের দাবা পরিকাঠামোকে মজবুত করার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছে দাবা মহল। এর ফলে ভবিষ্যতে ভারতের দাবা বিশ্বমঞ্চে আরও উচ্চতায় পৌঁছবে, এই আশাই করছেন সবাই।
বৃত্তিপ্রাপ্ত দাবা খেলোয়াড়দের পূর্ণ তালিকা:
অনূর্ধ্ব-৭ (U7)
ছেলে: দেবনারায়ণ কল্লিয়াথ, প্রয়াঙ্ক গাঁওকর, আরাধ্য গুইন
মেয়ে: আরন্যা আর, অর্পিতাংশী ভট্টাচার্য, সাইআস্তা সিংপেন
অনূর্ধ্ব-৯ (U9)
ছেলে: নিধিশ শ্যামল, আরিত কপিল, দিবিথ রেড্ডি আদুল্লা
মেয়ে: কিয়ান্না পরিহার, দিবি বিজেশ, বংশিকা রাওয়াত
অনূর্ধ্ব-১১ (U11)
ছেলে: মাধবেন্দ্র প্রতাপ শর্মা, অদ্বিক অমিত আগরওয়াল, আরাভ এ
মেয়ে: প্রতিতি বরদলৈ, আদ্যা গৌড়া, দিবি বিজেশ
অনূর্ধ্ব-১৩ (U13)
ছেলে: রেয়ান মোঃ, শেরলা প্রতমেশ, প্রণব সাই রাম আর এস
মেয়ে: সারণ্য দেবী নারাহারী, নিবেদিতা ভি সি, নিহিরা কৌল
অনূর্ধ্ব-১৫ (U15)
ছেলে: ইলামপারথি এ আর, ভাজ ইথান, শেরলা প্রতমেশ
মেয়ে: প্রিশিতা গুপ্ত, জৈন আশিতা, সপর্যা ঘোষ
অনূর্ধ্ব-১৭ (U17)
ছেলে: শ্রীরাম আদর্শ উপ্পালা, অর্পিথ এস বিজয়, জয়বীর মহেন্দ্রু
মেয়ে: তেজস্বিনী জি, কীর্তিকা বি, অনুপম এম শ্রীকুমার
অনূর্ধ্ব-১৯ (U19)
ছেলে: আদিরেড্ডি অর্জুন, সৌরথ বিশ্বাস, জয়বীর মহেন্দ্রু
মেয়ে: মৃত্তিকা মল্লিক, ভেলপুলা সারায়ু, স্নেহা হালদার