মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ২০২১ সালের ২ মে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হতেই দেখা যায় সরকার গঠন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস, বিরোধী দল হয় বিজেপি। এরপরে ভয়ংকর সন্ত্রাস নেমে আসে বিরোধী বিজেপি (BJP) কর্মীদের উপরে। ঐদিনই খুন করা হয় কাঁকুরগাছির বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারকে। বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিল অরুণ দে। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে পলাতক অরুণকে অবশেষে গ্রেফতার করল সিবিআই (CBI)।
মাথার দাম ছিল ৫০ হাজার (CBI)
প্রসঙ্গত, অরুণকে ধরতে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। সিবিআই সূত্রে খবর, নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের খুনের সময় ঘটনাস্থলে হাজির ছিল অরুণ দে। তাকে সেখানে দেখা গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন সাক্ষীরা। অভিজিৎ সরকারের খুনের ঘটনায় যে এফআইআর দায়ের করা হয়, সেখানে সবথেকে উপরে নাম ছিল অরুণ দে-র। ২ মে-এর পর থেকেই ফেরার হয়ে যায় অরুণ দে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই বিভিন্ন সূত্রের মারফত খবর পায় যে অরুণকে দেখা গিয়েছে। এই খবরের ভিত্তিতেই বুধবার একটি নির্দিষ্ট ঠিকানায় হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় অরুণ দে-কে। ধৃতকে আজ বৃহস্পতিবার কলকাতার বিশেষ সিবিআই আদালতে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
কে বা কারা এতদিন অরুণকে আশ্রয় দিয়েছে, খতিয়ে দেখছে সিবিআই
বিগত চার বছর ধরে অরুণ দে কোথায় কোথায় ছিল এবং কে বা কারা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন, সে বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অভিজিৎ সরকার খুনের মামলায় ধৃত অরুণের বাড়ি নারকেলডাঙ্গার গিরিশ বিদ্যাবর্তন লেনে। অরুণকে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, ভোট পরবর্তী হিংসায় খুন হওয়া হয় অভিজিৎ সরকারকে। খুনের ঘটনায় অভিযোগ ওঠে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। পরবর্তীকালে ভোট-পরবর্তী হিংসায় অভিজিৎ খুনের মামলাটি যায় সিবিআই-এর হাতে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নামে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে। রাজ্য পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার নেয় সিবিআই।
পলাতক আরও ৪
অভিজিৎ সরকারের খুনের মামলা চলছে শিয়ালদহ এসি জেএম আদালতে। ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর এই খুনের ঘটনায় পাঁচজনকে অপরাধী ও পলাতক বলে ঘোষণা করে কোর্ট। এরপরেই ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। অভিযুক্তদের ধরতে সাহায্য করলে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। প্রত্যেকের মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয় সিবিআই তরফ থেকে। জানানো হয়, পলাতকদের ধরতে সাহায্য করলে তথ্য দিয়ে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার, পাঁচজন অপরাধীর মধ্যে শুধুমাত্র অরুণ দে ধরা পড়েছে। এখনও চারজন অধরা এবং তারা পলাতক হিসেবেই নাম রয়েছে। এই চারজন হল: সুখদেব পোদ্দার ওরফে সুখা, গোপাল দাস ওরফে বিশাল, বিশ্বজিৎ দাস ওরফে বোম্পা এবং অমিত নামের একজন। জানা গিয়েছে, এই চার অভিযুক্তের বাড়ি নারকেলডাঙ্গা থানা এলাকাতেই পড়ে। সিবিআই-এর তরফ থেকে সাফ ঘোষণা করা হয়েছে যে, এই চারজনকে ধরিয়ে দিতে যে কোনও রকমের তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
অরুণ দেকে ধরার জন্য একাধিকবার ফাঁদ পাতা হয়
সিবিআই সূত্রে খবর, অরুণ দেকে ধরার জন্য একাধিকবার ফাঁদ পাতা হয়, কিন্তু প্রতিবার চোখে ধুলো দিয়ে সে পালিয়ে যেতে থাকে। খুনের ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন প্রান্তে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল অরুণ দে। কিন্তু তাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। অবশেষে গ্রেফতার করা গেল অরুণ দেকে। কাঁকুরগাছিতে বিজেপি (BJP) কর্মী অভিজিৎ সরকারের খুনের ঘটনায় তদন্ত নিয়ে অবশ্য নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা বারবার জানিয়েছে নিহতের পরিবার। এর আগেও একাধিকবার তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা গিয়েছে অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ সরকারকে। এই আবহে অরুণ দেকে ধরতে সমর্থ হল সিবিআই। বিগত চার বছর ধরে এই মামলায় তদন্তে নেমে একাধিকবার নিহত অভিজিৎ সরকারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে সিবিআই। এর পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
বাড়ির সামনেই পিটিয়ে খুন করা হয় অভিজিতকে
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের মে মাসের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন কাঁকুরগাছি শীতলাতলা লেনের বাড়িতেই ছিলেন নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার। তাঁর বাড়ি কাঁকুরগাছি শীতলাতলা লেনে। অভিজিৎ সরকার ভারতীয় মজদুর সংঘের নেতা (BJP) ছিলেন বলে জানা যায়। ফল প্রকাশের দিন অভিজিতকে বাড়ির সামনে পিটিয়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা। শুধু তাই নয়, অভিজিতের পোষা কুকুরটিকেও পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় নাম জড়ায় ফুলবাগান এলাকার তৃণমূলের নেতা পরেশ পালের। ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ২০ জনের বিরুদ্ধে আদালতের চার্জ গঠন করা হয়।