Tag: bangladesh anti india slogan

  • Bangladesh Burning: হাতিয়ার হাদি-হত্যা! ভারত-বিরোধী বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ নাকি ভোটের আগে মৌলবাদকে ইন্ধন? নেপথ্যে কারা?

    Bangladesh Burning: হাতিয়ার হাদি-হত্যা! ভারত-বিরোধী বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ নাকি ভোটের আগে মৌলবাদকে ইন্ধন? নেপথ্যে কারা?

    সুশান্ত দাস

     

    ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে ফের অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। এবার কট্টরপন্থী তরুণ নেতার মৃত্যুকে ঘিরে ভোটের মুখে ফের ভারতের বিরুদ্ধে উস্কানির আগুন জ্বালিয়ে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে পদ্মাপারের দেশে। গত ১২ তারিখ খুব কাছ থেকে ভারত-বিরোধী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে ঢাকায় গুলি করে পালায় দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার, সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান হাদি। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত উত্তাল হয়ে ওঠে।

    বৃহস্পতিবার রাতভর সে দেশের একাধিক জায়গায় ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ঢাকার কারওয়ান বাজারে দুই প্রথম সারির সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ ও ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর দফতরে হামলা চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। ধানমণ্ডিতে ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের ধ্বংসস্তূপেই ফের চালানো হয় হামলা, ধরানো হয় আগুন। পরে ধানমন্ডিতেই প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী সন্‌জীদা খাতুন প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘ছায়ানট’-এ ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। সেখান থেকে হারমোনিয়ান সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র চুরি করে নিয়ে যায় বিক্ষোভকারীরা। রাজশাহীতে আওয়ামি লিগের পার্টি অফিসে বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে ফেলার ঘটনাও সামনে এসেছে।

    এরই মধ্যে, কট্টরপন্থীরা এই হত্যার ঘটনার নেপথ্যে শেখ হাসিনা ও ভারতের হাত রয়েছে বলে দাবি করে পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ করে তোলে। বাংলাদেশি কট্টরপন্থীদের দাবি, হাদিকে গুলি করা ফয়সল করিম নাকি ভারতে পালিয়ে গিয়েছে। যদিও এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনও প্রমাণ নেই। তবে এই সুযোগে ভারত বিদ্বেষের ঝড় উঠেছে সেই দেশে। ফলে, প্রশ্ন উঠছে, ভোটের আগে ভারত-বিরোধী হাওয়া তোলার জন্যই কি হাদিকে হত্যা করা হল? হাদি যে ভারত ও হাসিনা-বিরোধী ছিলেন, তা সর্বজনবিদিত। ফলে, তাঁকে হত্যা করে গোটা দায় শেখ হাসিনা-আওয়ামি লিগ ও ভারতের ওপর চাপিয়ে দিলে কার সবথেকে বেশি লাভবান হবে? তাহলে, হাদির হত্যা কি একটা বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ মাত্র? নাকি ভোটে প্রভাব ফেলতে এটা সুপরিকল্পিত জামাতি-কৌশল?

    ভারত-বিরোধী চক্রান্তের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার হাতে গরম প্রমাণ মিলেছে বৃহস্পতিবার রাতেই। জুলাই মাসের মতোই, ফের ভারতকে টার্গেট করার অপচেষ্টায় ফের সক্রিয় কট্টরপন্থী আন্দোলনকারীরা। আর তাদের কথায় রাস্তায় নেমে পড়েছে এক শ্রেণি দিকভ্রান্ত, উন্মত্ত বাংলাদেশি জনতা। বিভিন্ন শহরে ভারতীয় উপ দূতাবাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন থেকে শুরু করে ইট-পাটকেল ছোড়া হচ্ছে। কোথাও ভারতকে নিশানা করে উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়ে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। রাজশাহীতে ভারতীয় উপ দূতাবাসের অফিসে হামলার চেষ্টা করে ইসলামি কট্টরপন্থীরা। বিক্ষোভকারীরা ভারতীয় উপ দূতাবাসকে লক্ষ্য করে অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করে। হামলা চালানোর চেষ্টা করে। এমনকী প্রয়োজনে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেয়। বলে, ‘‘প্রয়োজনে আমরা রক্ত গঙ্গা বইয়ে দেব।’’ চট্টগ্রামেও ভারতীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনারের বাসভবনের দিকে মিছিল করে যায় কট্টরপন্থীরা। সেখানেও হামলার চেষ্টাও করে তারা।

    শুধু এই নয়। গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী একটা প্রচার চালানো হচ্ছে। উস্কানিমূলক মন্তব্য করা হচ্ছে। ফের, ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় দূতাবাস ও উপ-দূতাবাসে হামলা চালানোর ডাক দেওয়া হচ্ছে। সব রাগ যেন গিয়ে পড়েছে ভারতের উপরেই। গত বুধবারই ঢাকার গুলশনে ভারতীয় হাই কমিশনের উদ্দেশে মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা। এই বিক্ষোভের ঠিক আগে ভারতীয় কূটনীতিবিদদের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে দিল্লিতে তলব করে ভারত। দিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করেছিল বিদেশমন্ত্রক। সেখানে ভারত-বিরোধী উস্কানিমূলক মন্তব্য নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে ভারত। ইতিমধ্যেই ঢাকা, খুলনা, রাজশাহীতে যে কারণে ভারতীয় ভিসা সেন্টারগুলি (আইভিএসি) বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে পাঁচটি আইভিএসি সেন্টার রয়েছে। ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ছাড়াও রয়েছে চট্টগ্রাম এবং উত্তর-পূর্ব সিলেটে অবস্থিত। এদের মধ্যে ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত আইভিএসি হল সমস্ত ভারতীয় ভিসা পরিষেবা পাওয়ার প্রধান কেন্দ্র।

    অর্থাৎ, ইঙ্গিত পরিষ্কার। ভারতের ক্ষতিসাধন। ভারতকে বদনাম। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, এই গোটা ঘটনায় কারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে? ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অবশ্যই পাকিস্তানের নাম এই তালিকার সবার ওপরে থাকবে। বিশেষ করে, হাসিনার পতনের পর, সেদেশে পাক সেনা ও আইএসআই-এর প্রভাব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের কট্টরপন্থী, মৌলবাদী ও সন্ত্রাসীরাও বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, কট্টরপন্থী বাংলাদেশিদের আরও উস্কে দিয়ে, তাদের মনে ভারত-বিদ্বেষের বিষ ভরে দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া। এর জন্য, যদি এক-দুটো প্রাণের বলি চড়াতে হয়, তাতেও আপত্তি নেই। বিশ্লেষকদের মতে, ৭১-এর হার কখনই মেনে নিতে পারেনি পাকিস্তান। বিশেষ করে বাংলাদেশের আলাদা হওয়াটা। তারা দীর্ঘদিন ধরেই এই রাগ পুষে রেখেছে। হাসিনা-পতনের পর, তাদের কাছে নতুন সুযোগ এসেছে অচিরে বাংলাদেশকে পুনরায় পূর্ব-পাকিস্তানে পরিণত করার (যাতে তারা অনেকটাই সফল)। হতে পারে হাদি-হত্যা এই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। তালিকায় পিছিয়ে নেই চিন-আমেরিকাও। তাদের উদ্দেশ্য ভারতের উন্নতি রোখা। ভারতের বিরুদ্ধে ‘ডিপ-স্টেট’ কার্যকলাপ করা। এক কথায় বাংলাদেশকে গাজায় পরিণত করে, ভারতকে এই দিকে আটকে রাখা, যাতে ভারত অর্থনৈতিকভাব সুপারপাওয়ার হওয়ার দিকে মনোনিবেশ না করতে পারে।

    এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য তীব্র মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশির দশক থেকেই বলে আসছি, বিনা যুদ্ধে ভারত দখলের চক্রান্ত চলছে। মৌলবাদ ও চরমপন্থা মানবসভ্যতার জন্য ক্যান্সারের মতো। এই ক্ষত থেকে মুক্তি পেতেই হবে। বাংলাদেশে শুধু মুক্তমনা মানুষ নয়, যাঁরা ধর্মীয় আগ্রাসনে বিশ্বাস করেন না, কাউকে ‘কাফের’ বলে ডাকেন না, তাঁরাও আজ আক্রান্ত। এই ধর্মীয় বিভাজন আরও বাড়বে। ইউরোপেও তা বাড়ছে, কানাডার দিকেই তাকান। এই ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে ভারতবাসী রুখে দাঁড়াবে।”

    তবে, বিশ্লেষকদের আর একটি অংশের মতে, হাদি হত্যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপট বদলের চেষ্টাও হতে পারে। তাঁদের মতে, সামনে নির্বাচন। তাই দেশে মৌলবাদ-ঝড় তুলতে হাদিকে মারার ছক করা হতে পারে। এক্ষেত্রে, সবচেয়ে লাভবান হওয়ার কথা কট্টরপন্থী জামায়তে ইসলামির (বাংলাদেশে যারা জামাত বলেই পরিচিত)। এই বিশ্লেষকদের মতে, এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। একদিকে, হাদি-হত্যাকে হাতিয়ার করে ভারত-বিরোধী আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া দেশে। আর সেই আগুনের আঁচে আসন্ন ভোটে পদ্মাপারের দেশকে নিজেদের কায়েমে আনা যাবে। ফলে, জামাতের পক্ষে সব সম্ভব, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

LinkedIn
Share