৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
১৮৮৫, ১৪ই জুলাই
বলরামের রথযাত্রা—নরেন্দ্রাদি ভক্তসঙ্গে সংকীর্তনানন্দে
বেলা ১টা হইয়াছে। ঠাকুর আহারান্তে আবার বৈঠকখানা গরে আসিয়া ভক্তসঙ্গে বসিয়া আছেন। একটি ভক্ত পূর্ণকে ডাকিয়া আনিয়াছেন। ঠাকুর মহানন্দে মাস্টারকে বলিতেছেন, “এই গো! পূর্ণ এসেছে।” নরেন্দ্র, ছোট নরেন, নারাণ, হরিপদ ও অন্যান্য ভক্তেরা কাছে বসিয়া আছেন ও ঠাকুরের (Ramakrishna) সহিত কথা কহিতেছেন (Kathamrita)।
স্বাধীন ইচ্ছা (ফ্রি উইল) ও ছোট নরেন—নরেন্দ্রের গান
ছোট নরেন — আচ্ছা, আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা (ফ্রি উইল) আছে কি না?
শ্রীরামকৃষ্ণ—আমি কে খোঁজ দেখি। আমি খুঁজতে খুঁজতে তিনি বেরিয়ে পড়েন! ‘আমি যন্ত্র তুমি যন্ত্রী’। চীনের পুতুল দোকানে চিঠি হাতে করে যায় শুনেছ! ঈশ্বরই কর্তা! আপনাকে অকর্তা জেনে কর্তার ন্যায় কাজ করো।
“যতক্ষণ উপাধি, ততক্ষণ অজ্ঞান; আমি পণ্ডিত, আমি জ্ঞানী, আমি ধনী, আমি মানী; আমি কর্তা বাবা গুরু—এ-সব অজ্ঞান থেকে হয়। ‘আমি যন্ত্র, তুমি যন্ত্রী’—এই জ্ঞান। অন্য সব উপাধি চলে গেল। কাঠ পোড়া শেষ হলে আর শব্দ থাকে না—উত্তাপও থাকে না। সব ঠাণ্ডা! — শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ!
(নরেন্দ্রকে)— “একটু গা না।”
নরেন্দ্র—ঘরে যাই—অনেক কাজ আছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) —তা বাছা, আমাদের কথা শুনবে কেন? ‘যার আছে কানে সোনা, তার কথা আনা আনা। যার আছে পোঁদে ট্যানা তার কথা কেউ শোনে না!’ (সকলের হাস্য)
তুমি গুহদের বাগান যেতে পারো। প্রায় শুনি, আজ কোথায়, না গুহদের বাগানে! — এ কথা বলতুম না, তুই কেঁড়েলি করলি —”
নরেন্দ্র কিয়ৎক্ষণ চুপ করিয়া আছেন। বলছেন, “যন্ত্র নাই শুধু গান —”
শ্রীরামকৃষ্ণ—আমাদের বাছা (Kathamrita) যেমন অবস্থা—এইতে পার তো গাও। তাতে বলরামের বন্দোবস্ত!
“বলরাম বলে, ‘আপনি নৌকা করে আসবেন, একান্ত না হয় গাড়ি করে আসবেন’, — (সকলের হাস্য) খ্যাঁট দিয়েছে। আজ তাই বৈকালে নাচিয়ে নেবে (হাস্য)। একান থেকে একদিন গাড়ি করে দিছলো— বারো আনা ভাড়া;—আমি বললাম, বার আনায় দক্ষিণেশ্বরে যাবে? তা বলে, ‘ও অমন হয়।’ গাড়ি রাস্তায় যেতে যেতে একধার ভেঙে পড়ে গেল— (সকলের উচ্চ হাস্য)। আবার ঘোড়া মাঝে মাঝে একেবারে থেমে যায়। কোন মতে চলে না; গাড়োয়ান এক-একবার খুব মারে, আর এক-একবার দৌড়ায়! (উচ্চ হাস্য) তারপর রাম খোল বাজাবে — আর আমরা নাচব— রামের তালবোধ নাই। (সকলের হাস্য) বলরামের (Ramakrishna) ভাব, আপনারা গাও, নাচো, আনন্দ করো। (সকলের হাস্য)
ভক্তেরা বাটী হইতে আহারাদি করিয়া ক্রমে ক্রমে আসিতেছেন।








