মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ড্রোনের নিশানায় আলফা (আই) শিবির, ফের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ছায়া মায়ানমারে! সর্বভারতীয় বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি, মায়ানমারের (Myanmar) অভ্যন্তরে ভারতীয় সেনা (Indian Army) ড্রোন হামলা চালিয়েছে আলফা (আই)-এর একাধিক ঘাঁটির উপর। শুধু আলফা (আই)-ই নয়, একই সঙ্গে নিশানায় ছিল ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ড (খাপলাং) বা NSCN (K)-এর একাধিক ঘাঁটিও। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ভারতীয় সেনার এই কৌশলগত হামলার ফলে NSCN (K)-এরও বেশ কয়েকজন জঙ্গি হতাহত হয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলির রিপোর্ট অনুযায়ী, ফ্রান্স ও ইজরায়েলের তৈরি উন্নত ড্রোন ব্যবহার করে এই অভিযান চালানো হয়।
হামলায় মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি আলফা (আই)-এর
এই হামলার কথা স্বীকার করেছে আলফা (আই)। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, শনিবার গভীর রাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের কয়েকটি শিবিরে একের পর এক আক্রমণ হয়। ভারতীয় সেনার এই হামলায় সংগঠনের নিম্ন পরিষদের সভাপতি নয়ন অসমের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। আহত হয়েছে আরও অন্তত ১৯ থেকে ২০ জন। হামলায় শুধু ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়নি, মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে বলে দাবি আলফা (আই)-এর। তবে এই ঘটনায় ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
মনে পড়ল অপারেশন সিঁদুরের কথা (Indian Army)
উল্লেখ্য, আলফা (আই) বহুবার ভারতের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগে উঠে এসেছে। তবে এ ধরনের সেনা অভিযান নিয়ে তারা এই প্রথম প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করল। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায় পাকিস্তানে চালানো ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কথা। পহেলগাঁও পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে ভারতীয় বাহিনী রাতের অন্ধকারে হামলা চালিয়েছিল (Indian Army)। সেবারও নিশানায় ছিল লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সংগঠন। ভারত স্পষ্ট করেছিল, লক্ষ্য শুধুই জঙ্গি ঘাঁটি, পাক সেনার কোনও ঘাঁটি নয়। এবার আবারও সেই পুরনো দৃশ্যপটের পুনরাবৃত্তি! আলফা (আই)-এর দাবি অনুযায়ী, ভারতের তরফে চালানো এই হামলা যেন ফিরিয়ে আনছে সেই ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর স্মৃতি।
মূল লক্ষ্য ছিল পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন আলফা (আই)-এর ৭৭৯ নম্বর বেস ক্যাম্প
গোপন সূত্রের ভিত্তিতে চালানো এই হামলায় মূল লক্ষ্য ছিল পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন আলফা (আই)-এর ৭৭৯ নম্বর বেস ক্যাম্প। সূত্রের খবর, ওই ঘাঁটিটির অবস্থান মায়ানমারের ওয়াক্তাম বস্তিতে। জানা গিয়েছে, হামলার সময় আলফা (আই)-এর অন্তত পাঁচজন ক্যাডার ওই ক্যাম্পে উপস্থিত ছিল। ভারতীয় সেনার ড্রোন হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভিযানের ফলেই মৃত্যু হয়েছে নয়নমেধি ওরফে নয়ন অসম-এর, যিনি আলফা (আই)-এর একজন সিনিয়র এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী কমান্ডার ছিলেন। নয়নমেধি শুধু সংগঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন না, বরং জঙ্গি প্রশিক্ষণের দিকটিও তিনিই দেখভাল করতেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। তাঁর মৃত্যু ভারতীয় সেনার কাছে বড় কৌশলগত সাফল্য বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
আলফা (আই)-এর ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টারেও হামলা
এই অভিযানের সময় ভারতীয় বাহিনী হামলা চালায় আরও এক গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি—হায়াত বস্তিতে অবস্থিত আলফা (আই)-এর ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টারেও। এখান থেকেও সংগঠনের নানা অপারেশন পরিচালিত হত বলে মনে করা হয়। মায়ানমারের সীমান্তবর্তী ঘন অরণ্যে ছড়িয়ে থাকা এই ক্যাম্পগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে। আলফা (আই) এবং NSCN (K)-এর বহু বেস ক্যাম্প এই অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এদেশের জিরো টলারেন্স নীতি
বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযানের মাধ্যমে ভারত স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এদেশের (Indian Army) একটাই নীতি। সেটা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি। উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা রক্ষাই সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। গোপন সূত্রের মাধ্যমে বহুদিন ধরেই এই শিবিরগুলির ওপর নজর রাখছিল ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই পরিকল্পিতভাবে এই অভিযান চালানো হয়। ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মায়ানমারে আলফা (আই) ও NSCN (k)-এর ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনার হামলা শুধু সামরিক পদক্ষেপ নয়, কূটনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই অভিযানের মাধ্যমে ভারত স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—উত্তর-পূর্ব ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিয়ে কোনও আপস করা হবে না।বিশেষজ্ঞদের মতে, চিন-সহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির উদ্দেশে এটি এক কড়া সতর্কবার্তা। উত্তরপূর্ব ভারতে শান্তি ভঙ্গকারীদের রেয়াত করা হবে না এই অপারেশন তারই প্রমাণ।