মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মানবতাবিরোধী অপরাধে বাংলাদেশের (Bangladesh) পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে (Sheikh Hasina) ফাঁসির সাজা দিয়েছে সে দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। হিংসায় উসকানি দেওয়া, হত্যার নির্দেশ এবং দমনপীড়ন আটকানোর ক্ষেত্রে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা – এই তিন অভিযোগে হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ট্রাইব্যুনাল। বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে ভারতেই রয়েছেন আওয়ামি লিগ সুপ্রিমো। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, হাসিনাকে দেশে ফেরাতে চেয়ে ভারতের কাছে ফের চিঠি দেবেন তাঁরা। তবে ভারত তাঁকে আদৌ বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে কি না, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি (Sheikh Hasina)
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি। সেই চুক্তি মোতাবেক, আদালতের রায়ে প্রত্যর্পণ করানোর মতো অপরাধ করে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এক দেশ অন্য দেশের হাতে তুলে দেবে। ২০১৩ সালে ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কেন্দ্রে তখন মনমোহন সিংয়ের নেতৃ্ত্বাধীন ইউপিএ সরকার, ঢাকার মসনদে হাসিনা স্বয়ং। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছিল, যে অপরাধের ভিত্তিতে প্রত্যর্পণ করা হবে, তা দুই দেশেই শাস্তিযোগ্য হতে হবে। প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া সহজতর করতে চুক্তি সংশোধন করা হয় ২০১৬ সালে। সংশোধিত চুক্তিতে বলা হয়, কারও নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেই তাঁকে প্রত্যর্পণ করা যাবে। সংশোধিত এই চুক্তি অনুসারেই হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করার আর্জি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
চুক্তির সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক
ওই চুক্তিতে স্পষ্টভাবে (Bangladesh) বলা হয়েছে, অপরাধটির যদি রাজনৈতিক চরিত্র থাকে, তাহলে প্রত্যর্পণ করা হবে না। খুন, গুম করা ও অত্যাচার রাজনৈতিক অপরাধের তালিকায় রাখা হবে না বলেও চুক্তিতে বলা হয়েছে। ওই চুক্তির সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হল, সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বিচারের নেপথ্যে যদি সৎ কোনও উদ্দেশ্য না থাকে, তাহলে ভারত বা বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ করবে না। হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করার জন্য এই যুক্তিগুলি খাড়া করতে পারে ভারত। হাসিনা নিজেও বারংবার তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগ তুলেছেন বিচারের নামে প্রহসনেরও।
ভারতকে চিঠি ইউনূসের
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হন হাসিনা। ওই বছরেরই ডিসেম্বর মাসে পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে (Sheikh Hasina) ফেরত চেয়ে নয়াদিল্লিকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। মহম্মদ ইউনূস সরকারের ওই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকারও করেছিল ভারত। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছিলেন, হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে বাংলাদেশের একটি চিঠি পেয়েছেন তাঁরা (Bangladesh)। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য এখনই করা যাবে না বলে জানিয়েছিলেন তিনি। বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছিল, আগে ওই চিঠির বৈধতা যাচাই করতে চায় নয়াদিল্লি। কোনও দেশের অন্তর্বর্তী সরকার, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, অন্য রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারের কাছে কোনও রাজনৈতিক নেতার প্রত্যর্পণ চাইলে, আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকটি শর্তের জন্যই ভারত হাসিনাকে ফেরাতে বাধ্য নয় বলেও জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক অনিন্দ্যজ্যোতি মজুমদার বলেন, “ভারত হাসিনাকে ফেরাতে বাধ্য নয়। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত চুক্তি থাকলেও, সেখানে এমন কিছু শর্ত রয়েছে, যার জন্য নয়াদিল্লি সেটি মানতে বাধ্য নয়।” প্রত্যর্পণ চুক্তির ওই শর্তের জেরে হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণে ভারত বাধ্য নয় বলেই জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়িও। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে চুক্তি রয়েছে ঠিকই (Sheikh Hasina)। তবে সোমবারের ওই রায়ের পর বাংলাদেশে প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা রয়েছে হাসিনার। তাই ওই চুক্তিতে থাকা নিয়ম অনুসারেই ভারত হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করতে বাধ্য নয় (Bangladesh)।”
কী বলছেন আইনজীবী
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অরিন্দম দাস বলেন, “হাসিনা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। কিন্তু দেশে না থাকার জন্য হাসিনাকে যদি তা করতে বাধা দেওয়া হয়, তবে তা হবে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।” ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রতিলিপি পাঠানো হলেও, ভারত তা মানতে বাধ্য নয় বলেও জানান তিনি। বলেন, “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী যদি কোনও দেশে কারও জীবনের ঝুঁকি থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়া দেশ তাঁকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য নয়। হাসিনার ক্ষেত্রেও এই আইনের কথা তুলে ধরতে পারে ভারত (Sheikh Hasina)।”
