মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডের তদন্তে বিরাট চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে। শুধুমাত্র গাড়ি বা আত্মঘাতী হামলাই নয়, ভারতের বুকে রীতিমতো হামাসের ধাঁচে ড্রোন ও রকেট হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র ছিল জঙ্গিদের! যার মাত্রা এতটাই বড় ছিল যে তার সামনে লালকেল্লার বিস্ফোরণ নমুনা মাত্র! এমনটাই আভাস দিয়েছেন তদন্তকারীরা। সোমবার, জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ থেকে আত্মঘাতী জঙ্গি উমর-উল নবি ওরফে উমর মহম্মদের অন্যতম সহযোগী জাসির বিলাল ওয়ানি ওরফে দানিশকে গ্রেফতার করে এনআইএ। তার পর এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, কতটা ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা ছিল ‘হোয়াইট কলার মডিউল’-এর জঙ্গিদের। একেবারে হামাসের কায়দায় ভারতকে আকাশ থেকে ঝাঁঝরা করে দিতে চেয়েছিল তারা।
প্রযুক্তিগত সহায়তা দিত দানিশ
এনআইএ-এর (NIA) দাবি, দানিশ প্রযুক্তিগত সহায়তা দিত সন্ত্রাসী মডিউলকে। ড্রোনকে অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য পরিবর্তন করার পাশাপাশি, ছোট আকারের রকেট তৈরিরও চেষ্টা চালিয়েছিল সে। বড় ব্যাটারি বসিয়ে ভারী বিস্ফোরক বহন করতে সক্ষম ড্রোন তৈরি করাই ছিল তার প্রধান দায়িত্ব, বলে সূত্রের দাবি। তদন্তকারীদের দাবি, সন্ত্রাসী চক্রটির লক্ষ্য ছিল— ১১ নভেম্বরের হামলার আগে আরও বড় মাত্রার ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানো।
হামাসের ইজরায়েল আক্রমণের ধাঁচে হামলা!
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পরিকল্পনাটি অনেকটাই মেলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইজরায়েল আক্রমণের মডেলের সঙ্গে, যেখানে ড্রোনই ছিল মূল আঘাত হানার উপায়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই মডিউলের পরিকল্পনা ছিল জনবহুল এলাকায় অস্ত্রবহ ড্রোন উড়িয়ে সর্বোচ্চ ক্ষয়ক্ষতি ঘটানোর। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া সহ বহু অঞ্চলে এমন কৌশল ব্যবহার করেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি – যা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল এই মডিউলও।
ড্রোন তৈরিতে সিদ্ধহস্ত দানিশ!
তদন্তকারীদের এক সূত্রের দাবি, শুধুমাত্র উমেশের সঙ্গে মিলে দিল্লি বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্র করেননি উমেশ, তাঁকেও আত্মঘাতী হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল। কাশ্মীরের এক মসজিদে উমরের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল দানিশের। দিনে দিনে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সেই বন্ধুত্বের সুযোগে দানিশের মগজধোলাই করেছিলেন উমর!তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দানিশের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল ছোট অস্ত্রযুক্ত ড্রোন তৈরির কাজে, যা তাকে এই মডিউলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে পরিণত করেছিল।
দিল্লি হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রী দানিশ
এই দানিশ ওরফে বিলাল ওয়ানিকে চারদিন আগেই আটক করে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। তিনদিন ধরে জেরা করার পর, তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যেই, ছেলের কুকীর্তির কথা জেনে, অপমানে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আত্মঘাতী হন পেশায় ড্রাই ফ্রুট বিক্রেতা দানিশের বাবা। বর্তমানে দানিশকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করছে এনআইএ। দিল্লি হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রীও ছিল এই দানিশ। প্রসঙ্গত, রবিবারই উমরের সহযোগী তথা এই হামলার ষড়যন্ত্রকারী আমির রশিদ আলি নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই গোয়ান্দাদের জালে ধরা পড়ে দানিশ।
এনআইএ-র লক্ষ্য
দিল্লি বিস্ফোরণের তদন্তে দেশজুড়ে তল্লাশি চলছে। একাধিক রাজ্যে বিভিন্ন সূত্র ধরে তদন্ত চলার কারণে দিল্লি, জম্মু ও কাশ্মীর, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় রেখে চলেছে এনআইএ। তদন্তকারীদের এখন অগ্রাধিকার হল হামলার পেছনের নেটওয়ার্কটি খুঁজে বের করা। এনআইএ কর্মকর্তাদের বক্তব্য, এখন তাঁদের মূল লক্ষ্য পুরো নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলা। এনআইএ জানিয়েছে, ‘হোয়াইট-কলার’ সন্ত্রাসী মডিউলটি বহু দিক থেকে ছক কষছিল এবং সে সব সূত্র ধরে তদন্ত এগোচ্ছে। পাশাপাশি, কোথা টাকা এসেছিল, তা-ও খুঁজে বার করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। যে কেউ এই হামলার সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। কর্মকর্তাদের ধারণা, তদন্ত এগোলে আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হতে পারে।
