মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মহাবিশ্ব, মহাকাশে ভাসছেন ভারতীয় নভশ্চর শুভাংশ শুক্লা (Shubhanshu Shukla)৷ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে চারটেয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পৌঁছবে তাঁদের মহাকাশযান ক্যাপসুল ‘গ্রেস’। ইতিমধ্যে মহাকাশে প্রায় ২৪ ঘণ্টা কাটিয়ে ফেলেছেন চার নভশ্চর। সেখান থেকেই পৃথিবীর উদ্দেশে আরও এক বার বার্তা দিলেন শুভাংশু। শোনালেন মহাকাশে একটা গোটা দিন কাটিয়ে ফেলার অভিজ্ঞতা! মহাশূন্য থেকে দেশবাসীকে ‘নমস্কার’ জানান শুভাংশু। বলেছেন, মহাশূন্যে অভিকর্ষের ব্যাপক পার্থক্যের কারণে আবার এখন শিশুর মতো হাঁটতে শিখছেন ৷
মহাকাশে কেমন লাগছে শুভাংশুর ?
এই মিশনে দারুণ উত্তেজিত অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনের পাইলট শুভাংশু শুক্লা ৷ তাঁর সহ-নভশ্চরদের সঙ্গে এই যাত্রায় সঙ্গী হতে পেরে তিনি কৃতজ্ঞ ৷ আমেরিকার স্পেসএক্স সংস্থার মহাকাশ স্টেশনের লঞ্চপ্যাড থেকে তাঁদের রকেট উৎক্ষেপণের সময়ে একটা বিশাল ধাক্কা অনুভব করেছেন শুভাংশু-সহ অন্যরা ৷ এরপর একটা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাকাশের পথে যাত্রা শুরু করে রকেট ৷ তখনও অস্বস্তি হচ্ছিল শুভাংশুর ৷ এরপর সময় যত গড়িয়েছে ততই প্রবল হয়েছে মহাশূন্যের নিস্তব্ধতা ৷ আর সঙ্গে মহাকাশের ভারশূন্য অবস্থা ৷ ভারতীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালে মহাকাশ থেকে সরাসরি পৃথিবীর সঙ্গে কথোপকথন করেছেন চার নভশ্চর। অ্যাক্সিয়ম স্পেসের এক্স হ্যান্ডলেও সেই ভিডিয়োর সরাসরি সম্প্রচার হয়েছে। সেখানেই শুভাংশু বলেন, ‘‘যখন যাত্রা শুরু হল, তখন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। খুব ভাল সফর ছিল। মহাকাশে পৌঁছোতেই অস্বস্তি শুরু হয়। শুনলাম, গত কাল নাকি আমি পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছি!’’
শিশুর মতো শিখছেন
শুভাংশু (Shubhanshu Shukla) ছাড়াও নাসার এই অভিযানে রয়েছেন পেগি হুইটসন, স্লায়োস উজ়নানস্কি-উইসনিউস্কি এবং টিবর কাপু। মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণ-শূন্য পরিবেশে হাঁটাচলা থেকে শুরু করে সব কিছুই নতুন করে শিখতে হচ্ছে তাঁদের। দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টার যাত্রাপথে কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন নিজেকে? এর উত্তরে শুভাংশ জানান, তিনি এখন কিছুটা ভালো বোধ করছেন ৷ ভালো করে ঘুমোচ্ছেন এবং নতুন এক বিশ্বে এক কৌতূহলী শিশুর মতো ক্রমাগত শিখে চলেছেন ৷ শুভাংশু বলেন, ‘‘শিশুর মতো হাঁটতে শিখছি! শিখছি কী ভাবে হাঁটতে হয়, কী ভাবে খেতে হয়!’’ মহাকাশের পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন শুভাংশুরা ৷ ক্যাপসুলে বন্দি থেকে প্রতি মুহূর্তে মহাশূন্যের নতুন নতুন দৃশ্য উপভোগ করছেন এবং সহ-নভশ্চরদের সঙ্গে ভুলত্রুটিগুলিও সংশোধন করছেন ৷
ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির সূচনা
ইতিহাস গড়েছে ভারত। রাকেশ শর্মার পর চার দশক ডিঙিয়ে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছেন ৩৯ বছরের ভারতীয় নভোচর শুভাংশু শুক্লা (Shubhanshu Shukla)। বুধবার দুপুরে আমেরিকার ফ্লরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ফ্যালকন ৯ রকেটে চেপে মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে পাড়ি দেন তিনি। মহাকাশ থেকে প্রথম বার্তায় আগেই শুভাংশু জানিয়েছিলেন ‘বর্ণনাতীত’ অভিজ্ঞতা। অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনের (Axiom-4 mission) সফল উৎক্ষেপণের পর গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা পৃথিবীতে পাঠানো প্রথম বার্তায় জানান, কাঁধে করে তেরঙা নিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ চার দশক পর এক অনন্য ইতিহাসের পাতায় লিখতে চলেছেন তাঁর দেশ ভারতের নাম। মিশনের কন্ট্রোল রুমে পাঠানো প্রথম বার্তায় শুক্লা বলেন, এই অভিযান শুধু আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা নয়, ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির সূচনা।
শুভাংশুকে প্রধানমন্ত্রী মোদির শুভেচ্ছা
শুভাংশু (Shubhanshu Shukla) বলেন, , ‘‘নমস্কার, আমার প্রিয় দেশের মানুষ। কী মজার যাত্রা! ৪১ বছর পর আমরা আবার মহাকাশে পাড়ি দিলাম। দারুণ লাগছে! এখন আমরা পৃথিবীকে প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে ৭ কিমি গতিতে প্রদক্ষিণ করছি। তেরঙা আমার কাঁধে রয়েছে। যা আমাকে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, আমি আপনাদের সকলের সঙ্গে আছি। আমি চাই আপনারাও সকলে আমার এই যাত্রার সঙ্গী হন। আপনাদের বুক নিশ্চই গর্বে ফুলে উঠবে। মহাকাশে ভারতের মানুষ পাঠানোর স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। জয় হিন্দ! জয় ভারত!’’ শুভাংশুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ‘‘শুভাংশু শুক্লাই প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারী যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রাখবেন। তিনি নিজের কাঁধে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের ইচ্ছা, আশা, আকাঙ্ক্ষার ভার বহন করছেন।’’