তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
বয়ঃসন্ধিকালে (Adolescence) বদলে যায় শরীরের গঠন। শরীরে সক্রিয় হয় একাধিক হরমোন। আর তার ফলেই নানান পরিবর্তন হয়। শরীর এবং মনের বদলের প্রভাব হয় সুদূরপ্রসারী। প্রাকৃতিক নিয়মেই বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েরা ঋতুমতী (Menstrual Cycle) হয়। পরবর্তী জীবনে মা হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ। তবে, সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ভারতীয় মেয়েরা ‘সময়ের আগেই’ ঋতুমতী হচ্ছে। যা নিয়ে বাড়তি সতর্কতা জরুরি। সুস্থ জীবন যাপনের জন্য তাই বাড়তি যত্নও জরুরি (Menstrual Health Hygiene) বলে জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
‘সময়ের আগে’ ঋতুমতী (Early Age Periods) কী?
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, বয়স বারো কিংবা তেরো হলে শরীরে নানান হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। আর তার জেরেই মেয়েদের ঋতুস্রাব হয়। ঋতুচক্র (Menstrual Cycle) শুরু হয়। কিন্তু গত এক দশকে দেখা গিয়েছে, মেয়েদের আট থেকে ন’বছর বয়সের মধ্যেই ঋতুচক্র শুরু হয়ে যাচ্ছে। বয়স দশ বছর পার হওয়ার আগেই মেয়েদের প্রথম ঋতুস্রাব হচ্ছে। এর ফলে, শরীর ও মনের পরিবর্তন ও শুরু হয়ে যাচ্ছে। একেই সময়ের আগে ঋতুমতী হওয়া বোঝানো হচ্ছে।
কেন সময়ের আগে ঋতুমতী হচ্ছে?
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, পরিবেশের পরিবর্তনের জেরেই এমন বদল হচ্ছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, বয়ঃসন্ধিকাল আগেই শুরু হচ্ছে। খাদ্যাভাস, জীবন যাপনে বদল এবং পরিবেশ দূষণের জেরেই নানান পরিবর্তন ঘটছে। পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে নানান বদল ঘটছে। বয়ঃসন্ধিকাল এগিয়ে আসাও তার অন্যতম কারণ বলেই তাঁরা জানাচ্ছেন।
কেন বাড়তি যত্নের প্রয়োজন?
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, খুব কম বয়সে ঋতুমতী (Early Age Periods) হলে বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। তাঁরা জানাচ্ছেন, আট থেকে দশ বছরের মেয়ে ঋতুমতী হলে, তাকে ছয় থেকে সাত বছর বয়সেই এই বিষয়ে সচেতন (Menstrual Awareness) করা জরুরি। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই পরিবার, শিশুকন্যাকে এই বিষয়ে বোঝানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। তার আগেই শিশু কন্যা ঋতুমতী হচ্ছে। এর ফলে তার কাছে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। তাই দশ-বারো বছরের মেয়েদের মতো নয়। পরিবারের সদস্যদের ছয় থেকে সাত বছরের শিশুকে ঋতুস্রাব (Menstrual Cycle) সম্পর্কে বোঝানোর প্রশিক্ষণ জরুরি। এমনি পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। হরমোনের পরিবর্তনের জেরেই এই ঘটনা। ঋতুস্রাব কোনও অসুখ নয়। পাশপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের উপায় সম্পর্কেও সাত বছরের পরেই মেয়েদের বোঝানো জরুরি।
তার পাশপাশি, শিশুর বাড়তি যত্ন জরুরি। অর্থাৎ দ্রুত ঋতুস্রাব হলে, শরীরে আয়রনের বাড়তি জোগান জরুরি। তাই কন্যা শিশুকে নিয়মিত কলা, আপেল, বেদানা, মাছ খাওয়ানো জরুরি। তাতে শরীরে আয়রনের জোগান ঠিকমতো থাকবে। শরীর দূর্বল হবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরেকটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, অধিকাংশ স্কুলে শৌচালয়ের স্বাস্থ্যবিধি (Menstrual Health Hygiene) মেনে চলা হয় না। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শৌচালয়ের পরিচ্ছন্নতা জরুরি। বিশেষত ঋতুস্রাব চলাকালীন শৌচালয়ের বাড়তি পরিচ্ছন্নতা জরুরি। সে ব্যাপারেও শিশুকে সচেতন করা দরকার। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, শিশুর ছয় কিংবা সাত বছর বয়স হলেই সে বিষয়ে জানানো দরকার। সতর্ক করাও দরকার। যাতে ঋতুস্রাব হলে শৌচালয় সংক্রান্ত সংক্রমণ এড়ানো যায়। সে সম্পর্কেও সচেতন করা জরুরি।
কোন খাবার নিয়মিত দেওয়া দরকার?
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, সময়ের আগে ঋতুমতী (Early Age Menstruation) হওয়ার জেরে মেয়েদের বাড়তি যত্ন জরুরি। যাতে দীর্ঘমেয়াদি কোনও সমস্যা বা সংক্রমণ না ঘটে। তাই নিয়মিত কিছু খাবার খাওয়ায় পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদদের একাংশ।
পুষ্টিবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, খাবারে নিয়মিত হলুদের ব্যবহার জরুরি (Menstrual Health Hygiene)। তাঁরা জানাচ্ছেন, যেকোনও ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ রুখতে হলুদ বিশেষ সাহায্য করে। তাই নিয়মিত হলুদ শরীরে পৌঁছলে মেয়েদের নানান সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, সময়ের আগে ঋতুস্রাব (Menstrual Cycle) হলে শরীরে বাড়তি এনার্জির প্রয়োজন। তাই শিশুদের নিয়মিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া দরকার। যাতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে ওঠে। তাই লেবু, কিউই, ডিম জাতীয় খাবার নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
এর পাশপাশি আয়রন ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার মেয়েদের ছোটো থেকেই নিয়মিত খাওয়া দরকার। তাই পুষ্টিবিদদের একাংশের পরামর্শ, মাছ, বেদানা, আপেল, মোচা খাওয়ার পাশপাশি নিয়মিত দুধ কিংবা টক দই খাওয়া দরকার (Menstrual Health Hygiene)। এতে হাড় মজবুত থাকে। শরীরে আয়রনের চাহিদা সহজেই পূরণ হয়।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।