Tag: Madvi Hidma

  • Madvi Hidma: ২৬-এর বেশি নাশকতার মাস্টারমাইন্ড, এনকাউন্টারে নিহত মাও শীর্ষ নেতা হিডমা

    Madvi Hidma: ২৬-এর বেশি নাশকতার মাস্টারমাইন্ড, এনকাউন্টারে নিহত মাও শীর্ষ নেতা হিডমা

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দেশে মাও-সন্ত্রাস দমনে ফের বড় সাফল্য পেল নিরাপত্তাবাহিনী (Security Forces)। এনকাউন্টারে নিহত মাওবাদীদের শীর্ষনেতা মাড়বী হিডমা। অন্ধ্রপ্রদেশের আলুরি সীতারামরাজু জেলায় জঙ্গলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী কমান্ডার হিডমার (Madvi Hidma Killed)। জঙ্গল থেকে ছ’জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে, যার মধ্যে হিডমার দেহ শনাক্ত করা গিয়েছে। এখনও এনকাউন্টার চলছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ বাহিনী। সূত্রের খবর, মৃতদের মধ্যে হিডমার স্ত্রী রাজে ওরফে রাজাক্কাও রয়েছেন।

    সকাল থেকেই মাওবাদী দমনে অভিযান

    অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও ওড়িশা, এই তিনরাজ্যের সংযোগস্থলের কাছে, মারেডুমিলী জঙ্গলে মঙ্গলবার সকালে মাওবাদী বিরোধী অভিযানে নামে পুলিশ। সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে দু’পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় চলাকালীনই হিডমা মারা যায় বলে জানা যাচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, হিডমা ওরফে সন্তোষ, তার স্ত্রী এবং আরও চার মাওবাদী ছত্তিশগড় থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু জঙ্গল ঘিরে ফেলে পুলিশ। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অন্ধ্রপ্রদেশ গোয়েন্দা বিভাগের কাছে মাওবাদীদের গতিবিধি নিয়ে খবর আসছিল। অন্ধ্রপ্রদেশ-ছত্তিশগড় এবং ওড়িশা সীমানার দিকে তারা এগোচ্ছে বলে জানা যায়। সেই মতো অভিযানে নেমে সাফল্য পেলাম আমরা।”

    কে ছিল হিডমা

    মাওবাদীদের সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য হওয়ার পাশাপাশি, দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটির নেতা ছিল হিডমা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পিপল্‌স লিবারেশন গেরিলা আর্মির ১ নম্বর ব্যাটেলিয়নের প্রধান এই হিডমা। তার বয়স ৪০ বছর মতো। ছত্তিশগড়ের সুকমা জেলার জনজাতি অধ্যুষিত পুবর্তী গ্রামের বাসিন্দা তিনি। নব্বইয়ের দশকে যোগ দেন মাওবাদীদের সঙ্গে। মাওবাদী ব্যাটেলিয়নের প্রধান হিসেবে মহিলা-সহ প্রায় ১৮০ থেকে ২৫০ জনের দলকে নেতৃত্ব দিতেন তিনি। কমপক্ষে ২৬টি সশস্ত্র হামলায় নেতৃত্ব দেয় সে, যাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য থেকে সাধারণ মানুষের প্রাণ যায়। সম্প্রতি মাল্লোজুলা বেমুগোপাল রাও ওরফে সোনু আত্মসমর্পণ করার পর থেকে হিডমার উপর নজর ছিল পুলিশের। ৫১ বছর বয়সি হিডমা নকশালপন্থীদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার হিসেবে গণ্য হতো। ১৯৮১ সালে ছত্তিশগড়ের সুকমায় জন্ম হিডমার। পরবর্তীতে মধ্যপ্রদেশে চলে যায় সে। ব্যাটেলিয়ন অফ দ্য পিপল’স লিবারেশন গেরিলা আর্মি-কে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি, সেন্ট্রাল কমিটির কনিষ্ঠতম সদস্য হিসেবে উঠে আসে। এই কমিটি সিপিআই মাওবাদী-র সিদ্ধান্তগ্রহণের সর্বোচ্চ সংগঠন। সেন্ট্রাল কমিটিতে বাস্তার অঞ্চলের একমাত্র উপজাতি প্রতিনিধিও ছিল হিডমা। তার মাথার দাম রাখা হয়েছিল ৫০ লক্ষ টাকা।

    মাওবাদীদের কাছে জোর ধাক্কা

    একাধিক মাওবাদী হামলায় হিডমার নাম সামনে আসে। তবে তার সাম্প্রতিক কালের কোনও ছবিই নাকি পাওয়া যায় না। ভীম মাণ্ডবী খুনের মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। ২০১০ সালে দান্তেওয়াড়ায় যে হামলা হয়, যাতে ৭৬ জন সিআরপিএফ জওয়ান প্রাণ হারান তার পরিকল্পনাতেও হিডমা যুক্ত ছিল। ২০১৩ সালে ঝিরগ্রাম ঘাটিতে মাওবাদী হামলায় কংগ্রেস নেতা-সহ ২৭ জন মারা যান, তাতেও নাম উঠে আসে হিডমার। ২০২১ সালে সুকমা-বিজাপুরে মাওবাদী হামলায় ২২ জন সৈনিক প্রাণ হারান, যার চক্রীও ছিল হিডমা। এমনিতেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছে মাওবাদীদের। লোকজন দলে দলে আত্মসমর্পণের রাস্তাও বেছে নিচ্ছে। এই আবহে হিডমার মৃত্যু মাওবাদীদের কাছে জোর ধাক্কা খেল বলে মনে করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের দাবি, সিপিআই (মাওবাদী) দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সব থেকে তরুণ সদস্য এই হিডমা।

    মাওবাদী মুক্ত ভারত

    উল্লেখ্য, ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদকে পুরোপুরি নির্মূল করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই লক্ষ্যে জোরকদমে শুরু হয়েছে কাজ। গত কয়েক মাসে ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র-সহ একাধিক রাজ্যে আত্মসমর্পণ করেন কয়েকশো মাওবাদী। স্পষ্ট ভাষায় শাহ জানিয়েছেন, “যারা হিংসাত্যাগ করে মূল স্রোতে ফিরছেন তাঁদের স্বাগত জানাই। কিন্তু যারা এখনও বন্দুক চালিয়ে যাবে তাঁদের নিরাপত্তা বাহিনীর মারণ শক্তির মুখোমুখি হতে হবে।” সম্প্রতি একাধিক মাওবাদী নেতা আত্মসমর্পণ করেছে, সেই তালিকায় রয়েছে মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাও। নিজের অনুগামীদের অস্ত্র ফেলে মূলস্রোতে ফেরার ডাক দিয়েছে সে-ও। তার বার্তা ছিল, “সক্রিয় মাওবাদীদের হিংসার রাস্তা ছেড়ে আত্মসমর্পণ করা উচিত। মূলস্রোতে ফিরে মানুষের কাজ করতে হবে।” আর তার পরই এনকাউন্টারে মৃত্যু হল হিডমার।

    সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় সাফল্য

    হিডমার শেষ ঠিকানা পূর্ব গোদাবরীর ঘন ছায়াজঙ্গল। অন্ধ্র পুলিশের ডিজিপি হরিশ কুমার গুপ্তা নিশ্চিত করেছেন, বিশাল এলাকায় এখন চলছে সার্চ অ্যান্ড ক্লিয়ারেন্স অভিযান। বস্তার রেঞ্জ আইজি পি. সুন্দররাজও জানান ১৮ নভেম্বরের এই এনকাউন্টার নকশাল নেটওয়ার্কের জন্য বড় ধাক্কা। উদ্ধার হয়েছে একাধিক একে ৪৭ রাইফেল, বিপুল গোলাবারুদ। এই এনকাউন্টার নকশাল নেটওয়ার্কে বড় ধাক্কা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। হিডমার মৃত্যু শুধু এক কমান্ডারের মৃত্যু নয় বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। বস্তার ও আশপাশের এলাকায় মাওবাদী কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ভেঙে পড়ল এই এনকাউন্টারের ফলে। অভিযান সফল হওয়ায় গ্রেহাউন্ড ও অন্ধ্র পুলিশের ভূমিকা প্রশংসিত হচ্ছে সর্বত্র। দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে এটি সাম্প্রতিক বছরগুলির সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

LinkedIn
Share