মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ক্ষমতার চিটে গুড়ে পা আটকে গিয়েছে বাংলাদেশের (India Bangladesh Relation) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূসের (Md Yunus)। আন্দোলনের জেরে গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন আওয়ামি লিগ নেত্রী শেখ হাসিনা। তারপর ক্ষমতার রাশ যায় ইউনূসের হাতে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, ইউনূসের মূল দায়িত্ব হল বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা, যাতে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসতে পারে। কিন্তু নির্বাচন করাতে ইউনূসের কোনও হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। তাই স্বয়ং সেনাপ্রধান ইউনূসকে আল্টিমেটাম দিয়ে দিয়েছেন।
তুরুপের তাস ইউনূসই! (India Bangladesh Relation)
তবে ইউনূসের বক্তব্য থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার, সেটা হল ২০২৬ সালের কোনও এক সময় সাধারণ নির্বাচন হতে পারে বাংলাদেশে। এই যে লম্বা সময়, সেটাকে তিনি পাকিস্তান ও চিনের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার কাজে লাগাতে চাইছেন। ভারতকে চাপে রাখতে চিন এবং পাকিস্তানও বাংলাদেশের সঙ্গে স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী। হাসিনা জমানায় বিশেষ পাত্তা পায়নি চিন ও পাকিস্তান। তারাই এখন ইউনূসের কট্টর সমর্থক। এর প্রধান কারণ এই দুই দেশই গণতান্ত্রিক পরিচয়ের জন্য বিশ্বে পরিচিত নয়। ইউনূসকে সমর্থনের নেপথ্যে রয়েছে তাদের কৌশলগত ও আদর্শগত দুই প্রকার কারণই। এই দুই দেশই চায়, বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকুন ইউনূস। কারণ বিশ্বমঞ্চে নরেন্দ্র মোদির ভারতের উত্থান ঠেকাতে, স্বৈরচারীশাসনকে উৎসাহিত করতে এবং বাংলাদেশে ইসালামপন্থী শক্তিগুলিকে শক্তিশালী করতে ইউনূসই হতে পারেন তাঁদের তুরুপের তাস।
চিনের উদ্দেশ্য
চিনের কাছে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। ইতিমধ্যেই শি জিনপিংয়ের দেশ বাংলাদেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশে কোনও নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে এই সব প্রকল্প নিয়ে ফের আলোচনার পথে যেতে পারে। ইউনূস ক্ষমতায় থাকলে সে প্রশ্নই নেই। তাছাড়া চিনের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত প্রকল্পে ইউনূস কোনও প্রতিরোধও গড়ে তুলবেন না। তাই চিনা বিনিয়োগ যে আপাতত জলে যাবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিন্তে ড্রাগনের দেশের কমিউনিস্ট সরকার। চিন বরাবরই তার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গণতান্ত্রিক সক্রিয়তা বিস্তারের বিরোধিতা করে এসেছে। সেদিক থেকেও ইউনূস তাঁদের কাছে ঢের বেশি নিরাপদ বাংলাদেশের অন্যান্য নেতা-নেত্রীর চেয়ে।
পাকিস্তানের লক্ষ্য
চিন যেমন লগ্নি বাঁচাতে সমর্থন করছে ইউনূসকে (Md Yunus), পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। তাদের মূল উদ্দেশ্য ভারতের বিরুদ্ধে মৌলবাদী শক্তিকে লালন-পালনের কৌশলগত গভীরতা অর্জন। হাসিনা জমানায় বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিতে পারেনি ইসলামপন্থীরা। জঙ্গিদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিয়েছিল তাঁর সরকার। নিয়ন্ত্রণ করেছিল পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কার্যকলাপও। ইউনূসের আমলে এসব কিছুই নেই। তাই তারা চাইছে, ভারতের সঙ্গে দূরত্ব রচনা করুক বাংলাদেশ, ঘনিষ্ঠ হোক শাহবাজ শরিফের দেশের সঙ্গে। পাকিস্তান চায় বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকুক ইউনূসের মতো এমন একজন নেতা, যিনি একই সঙ্গে নমনীয় এবং ভারত-বান্ধব নন। গত ২২ এপ্রিল দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হামলার পর পাকিস্তানে জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করতে অপারেশন সিঁদুর চালায় ভারত। নয়াদিল্লির এই গুঁতোয় সিঁদুরে মেঘ দেখছে ইসলামাবাদ। ভারত ঘোষণা করে দিয়েছে পাকিস্তান কিংবা তার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত যে কোনও জঙ্গি হামলাকে যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এবং সেক্ষেত্রে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। মোদি সরকারের এহেন ঘোষণায় অশনি সঙ্কেত দেখছে শাহবাজ শরিফের দেশ (India Bangladesh Relation)। তাই তারাও চাইছে, এই ঘোর বিপদের দিনে ইউনূসের মতো কাউকে একজনকে পাশে পেতে। সেই কারণেই বাংলাদেশে নির্বাচন হোক, চাইছে না পাকিস্তানও।
কী বলছেন পর্যবেক্ষকরা?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ নীতির মূল কথাই হল, হাজারো ক্ষতের মাধ্যমে রক্তাক্ত করো ভারতকে। বাংলাদেশে মৌলবাদ মাথাচাড়া দেওয়ায় সেই কাজটিই আরও অনায়াস হয়েছে পাক জঙ্গিদের কাছে। বাংলাদেশের পর্যবেক্ষকদের মতে, ইউনূস সরকারের আমলে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হল ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলি বিশেষ করে জামাত-ই-ইসলামির (জেইআই) রাজনীতিতে ফিরে আসা। হাসিনার আমলে জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তারপরেই (Md Yunus) রমরমা জামাতের। এটি একটি বিপজ্জনক আদর্শগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত। হাসিনার অনুপস্থিতির সুযোগে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন যেমন হিজবুত তাহরির ফের প্রকাশ্যে কাজকর্ম শুরু করেছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (আল-কায়দা দ্বারা প্রাণিত একটি সংগঠন)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত চরমপন্থী আলেম মুফতি জসিমউদ্দিন রহমানিকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে ইউনূস জমানায়। এসব ঘটনা থেকেই প্রমাণ হয় যে, ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার হয় এই উগ্র শক্তিগুলিকে দমন করতে অনিচ্ছুক, নয়তো সম্পূর্ণভাবে অক্ষম (India Bangladesh Relation)।
জামাতের প্রভাব
জামাতের প্রভাব কেবল রাস্তার উগ্রপন্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, ইউনূস প্রশাসনের অধীনে এটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরেও ঢুকে পড়েছে। ফার্স্টপোস্টের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যে, জামাতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবির (আইসিএস) হাসিনার অপসারণের নেপথ্যে ছাত্র আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়তেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায়ও তারা জড়িত ছিল বলে অভিযোগ। জেইআইয়ের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাবকে অনেকেই বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র ভেঙে একটি ইসলামি ধর্মতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে একটি ধাপ হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউনূসের অধীনে প্রস্তাবিত সংবিধান সংশোধন এই লক্ষ্যেই পরিচালিত হতে পারে। নির্বাচিত জনমতের কোনও ভিত্তি ছাড়াই ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের আইন ও শাসন কাঠামো পুনর্লিখনের জন্য বিভিন্ন কমিটি গঠন করেছে। সমালোচকদের মতে, এটি ধর্মীয় রক্ষণশীলতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ (India Bangladesh Relation)।
সিঁদুরে মেঘ
ইউনূস সরকার ক্রমশ জঙ্গি সংগঠনগুলির হাতের পুতুলে পরিণত হওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও। বিএনপির প্রবীণ নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির বলেন, “একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সমন্বিত চক্রান্ত জাতীয় নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে নাগরিকদের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।” তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের জন্য অসংখ্য ছাত্র ও সাধারণ মানুষ যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক পরিবেশ অশনি সংকেতপূর্ণ ও অনিশ্চিত (Md Yunus)।”
গণতান্ত্রিক গতি-প্রবাহকে দমন করা!
মনে রাখতে হবে, বেজিং এবং ইসলামাবাদ উভয়েই গণতান্ত্রিক কার্যকলাপ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। সংস্কার এবং জাতীয় ঐকমত্যের অজুহাতে ইউনূসের নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশলটি ক্ষমতা সংহত করার লক্ষ্যে অন্যান্য স্বৈরাচারী শাসকদের ব্যবহৃত পদ্ধতির অনুরূপ। চিন ও পাকিস্তানের ইউনূসকে ক্ষমতায় দেখতে চাওয়ার কারণ হয়তো এক নয়। কিন্তু একটি বিষয়ে দুই দেশই একমত, সেটি হল এই অঞ্চলে গণতান্ত্রিক গতি-প্রবাহকে দমন করা যেখানে ভারতের গণতান্ত্রিক মডেলের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে বিশ্বের দরবারে (India Bangladesh Relation)।
ভারত হল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী, দীর্ঘদিনের মিত্রও। তবে নির্বাচিত সরকার উৎখাত হওয়ার পর ভারত অপেক্ষায় রয়েছে সে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার আসার। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, যদি পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে বাংলাদেশ, তাহলে এটি দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত ভারসাম্য বদলে দিতে পারে। বাংলাদেশ পরিণত হতে পারে ভারতের বিরুদ্ধে কার্যকলাপ (Md Yunus) চালানোর একটি ঘাঁটিতে। বঙ্গোপসাগরে চিনের প্রভাব বিস্তার করার একটি করিডর হিসেবেও কাজ করতে পারে ইউনূসের দেশ (India Bangladesh Relation)।