Tag: mission urja

  • Pune: প্রখর গ্রীষ্মে পুনের আদিবাসী গ্রামে আজও নেই ফ্যান, মিশন উর্জার আওতায় সৌর পাখা চালুর পরিকল্পনা

    Pune: প্রখর গ্রীষ্মে পুনের আদিবাসী গ্রামে আজও নেই ফ্যান, মিশন উর্জার আওতায় সৌর পাখা চালুর পরিকল্পনা

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তানভীর ইনাম্দার। ২৮ বছর বয়সি এই ইঞ্জিনিয়ার ২০২০ সালে পৌঁছে যান পুনের (Pune) ভালানি নামের গ্রামে। এই গ্রাম একেবারে আদিবাসী সম্প্রদায় অধ্যুষিত। সেখানেই তিনি একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যান মিশন উর্জার আওতায়। গ্রামবাসীদেরকে বলেন, আমি তোমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ আনতে চাই। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে স্বাধীনতার এতদিন পরেও পুনে শহরের কেন্দ্র থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামে তখনও পৌঁছায়নি বিদ্যুতের আলো। এই গ্রামটি সভ্যতার আলো থেকে অনেকটাই দূরে ছিল। ছিল না কোনও সুযোগ সুবিধা। আদিবাসী সমাজ সমস্ত কিছু আশা ছেড়ে দিয়েছিল যে তাদের ক্ষেত্রে হয়তো এভাবেই আগামী দিনগুলো কাটতে হবে। কিন্তু মিশন উর্জাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে পৌঁছান ওই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। সেটা ছিল মে মাস। মহারাষ্ট্রে চলছিল তাপপ্রবাহ। ওই গ্রামের বাড়িগুলি কাঠ এবং কাদা দিয়ে নির্মাণ করা হয়। বাড়িগুলোতে গ্রীষ্মের তাপ ব্যাপক পরিমাণে প্রবেশ করে। ঘরের ভিতরে যত মানুষের ভিড় বাড়ে তত বেশি গরম বাড়ে। ঘাম তত তীব্র হয়। মিশন উর্জার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তানভীর এবং তার দল অস্বস্তিতে পড়ে যায়। তানভীর আদিবাসী পরিবারগুলোকে জিজ্ঞেস করেন যে একটু পাখা করে সাহায্য করবে কিনা। তখন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন এদিক ওদিক তাকাতে থাকেন এবং তাঁরা বলতে থাকেন পাখা (Tribal Villages) আবার কি!

    গ্রামের যুবক অক্ষয়ের স্বপ্ন সে তার মাকে পাখা কিনে দেবে (Pune)

    এরপরেই তাঁরা চলে যান স্থানীয় অক্ষয় যাদবের বাড়িতে। অক্ষয়ের বয়স কুড়ির কোঠায়। কিন্তু তার চোখে মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। খুব একটা ভালো নেই তার মায়েরও অবস্থা। ঘরে গ্যাস নেই। স্বাভাবিকভাবে উনোনের সাহায্যে রান্না করতে হয়। ইট এবং মাটি দিয়ে তৈরি উনুন। রান্না হয় ঘুঁটে দিয়ে। অক্ষয়ের মা এভাবেই প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা ধরে রান্না করেন। প্রতিদিন রান্নার সময় ঘর ধোঁয়ায় ভরে যায়। বায়ু দূষণ হয়। এর ফলে ফুসফুসে নানা রোগও দেখা যায়। বাড়িতে পাখা না থাকা সত্ত্বেও সেই ধোঁয়া বের হওয়ার কোন রাস্তাও নেই। অক্ষয়ের মনে সংকল্প রয়েছে যে সে তার মাকে একদিন পাখা কিনে দিতে পারবে। আদিবাসী সমাজের মানুষগুলো (Pune) এই গ্রামে এভাবেই থাকেন।

    গ্রামের পরিবারগুলির আয় ১৮০০ টাকা

    ওই গ্রামে গিয়ে তানভীর জানতে পারেন যে এই গ্রীষ্মের কারণে যে পাখা (Pune) তিনি চেয়েছেন তা এখানকার মানুষজনের আর্থিক সামর্থ্যের একেবারে বাইরে। এই গ্রামের পরিবারের মানুষজনের মাসে আয় মাত্র ১,৮০০ টাকা। একথা সত্যিই ভাবা যায় না ২০২৫ সালে এসে পরিবারের আয় ১,৮০০ টাকা। তবে আদিবাসী পরিবারগুলো বলছেন, এতেই তাদের জীবিকা নির্বাহ চলে যায়। এই গ্রামের মানুষ গ্রীষ্মের হাত থেকে বাঁচতে বাড়ির বাইরে বাড়ির বাইরে বসে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু সেখানেও অনেক সমস্যা। কারণ গ্রামটিতে বিছে, সাপ, পোকামাকড় অনেক কিছুই ভর্তি। এভাবেই গ্রামের একজন মানুষ সোনু যাদব জানিয়েছিলেন যে তার প্রতিবেশীকে একবার একটি সাপে কামড়ে ছিল। যার ফলে পুরো গ্রাম নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। তাপপ্রবাহের কারণে পুনের পারদ চড়তেই থাকে। মে মাসে যেন রাস্তায় বের হওয়া যায় না। এমন আবহাওয়াতে স্বস্তির প্রয়োজন। তাই ওই গ্রাম বর্তমানে অপেক্ষা করছে সৌর পাখার জন্য।

    ৫ বছরে অনেকটাই উন্নতি করেছে এই গ্রাম

    নগর জীবনের আধুনিকতা থেকে অনেক দূরে থাকা এই মুলসি গ্রাম গত পাঁচ বছরে তবে অনেকটাই উন্নতি করেছে। এ গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনও সুযোগই ছিল না। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তানভীর ব্যাখ্যা করছেন যে আমরা গ্রামের অনেক বাড়িতেই সৌর ব্যবস্থা স্থাপন করতে পেরেছি এবং এর পুরোটাই হয়েছে মিশন উর্জার অধীনে। জানা যাচ্ছে বিদ্যুৎ যখন প্রাথমিক পর্যায়ে তখন থেকেই তানভীর ভালানি এবং অন্যান্য গ্রামের বাড়ির ছাদ পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেন। তাঁদের সঙ্গে মেলামেশা বাড়াতে থাকেন। অনেকের বাড়িতে তিনি টেলিভিশনও চালু করেন।

    কী বলছেন তানভীর?

    এ নিয়ে তানভীরের মত হল, ১৯৫০ সালের দিকে ভারতবর্ষে টেলিভিশন এসেছিল কিন্তু এই গ্রামগুলি কখনও টিভি চোখে দেখেনি। আমরা যে টিভিগুলিকে চালু করেছি সেগুলো এলইডি টিভি নয়। বরং ভারতীয় বাড়িতে এক সময়ে যে জনপ্রিয় পুরনো টিভিগুলি দেখা হতো সেগুলি। তানভীর আরও বলেন, ৯০ দশকে যেমন পাড়ার পরিবার একটি ব্যক্তির বাড়িতে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে একত্রিত হত। বর্তমানে মুলশি গ্রামেও একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। যে বাড়িতে টিভি আছে আশেপাশের লোকজন সেখানে জমায়েত করছে। জানা গিয়েছে, মিশন উর্জার (Pune) মাধ্যমে ভারতের ২৮০ গ্রামের পরিবারকে বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তবে এখানকার জীবন সম্পূর্ণ আলাদা। তা বাকি ভারতবর্ষের অন্যান্য শহর অঞ্চলের জীবনের সঙ্গে একেবারেই মিলছে না। এটা তানভীর ভালো করেই লক্ষ্য করেছেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে আদিবাসীরা প্রখর গ্রীষ্মের কারণে চর্মরোগ দেখেও বিভ্রান্ত হন না। তাঁরা বলেন, এটা গরমের কারণে হচ্ছে। প্রচুর ঘাম ঝরছে এবং তার কারণেই হচ্ছে। গ্রীষ্মকালে তাঁরা ডিহাইড্রেশনে ভোগেন। তাঁদের মাথা ঘুরতে থাকে। তাঁদের বমি বমি ভাব পায় এবং এবং এটি তাদের জীবনকে অনেকভাবে কষ্ট দেয়। সৌর পাখার মাধ্যমে পুনের ওই গ্রামগুলিতে গরম অনেকটাই কমাতে চান তানভীর এবং তাদের জীবনটাকে নতুন মাত্রায় আনতে চান।

    ৫০০ পরিবারের হাতে সৌর পাখা বিতরণ করা হবে (Pune)

    কাশি, মালে, ভালানি প্রভৃতি গ্রামের ৫০০ পরিবারের হাতে সৌর পাখা বিতরণ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। এই গ্রামগুলি পাহাড়ি পরিবেশে গড়ে উঠেছে। এই জায়গাগুলিতে খুব বেশি পরিমাণে হাওয়া বাতাস ও খেলে না। তাই গ্রীষ্মকাল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। পরিবারগুলিকে যে সৌর পাখা দেওয়া হবে সেগুলো পরীক্ষা করা হবে এবং এই পাখাগুলিতে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হবে না বলে জানিয়েছেন তানভীর। তা ধাতু দিয়ে তৈরি করা হবে। পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টিও থাকবে। মুলসির মানুষ এখন আনন্দে রয়েছেন এটা ভেবে তাদের গ্রামে আসছে পাখা।

LinkedIn
Share