মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কালী কলকাত্তাওয়ালি। এ কথা মাথায় রেখেই দুর্গাপুরের নেহরু স্টেডিয়ামের বিশাল জনসভায় ‘জয় মা কালী’ বলে বক্তৃতা শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২১ জুলাই ধর্মতলায় সভা রয়েছে তৃণমূলের। তার আগে প্রধানমন্ত্রীকে (PM Modi) দিয়ে সভা করিয়ে ঘাসফুল শিবিরকে মাত দিল বিজেপি।
বিকশিত বাংলা (PM Modi)
এদিন বক্তৃতার শুরুতেই বিকশিত বাংলার প্রসঙ্গ (TMC) টানেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “বিজেপি বিকশিত বাংলা চায়। বাংলার এই মাটি প্রেরণায় পূর্ণ। এই মাটি দেশের প্রথম শিল্পমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মাটি। দেশের প্রথম শিল্পনীতি দিয়েছিলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ বিধানচন্দ্র রায়ের মত দূরদর্শী নেতার মাটি। যিনি দুর্গাপুরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই মাটি রবি ঠাকুরের মাটি। এরকম মহান ব্যক্তিত্বরা পশ্চিমবঙ্গকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর তাই পশ্চিমবঙ্গ ভারতের বিকাশের কেন্দ্র ছিল।” তিনি বলেন, “এক সময় বাংলা সমৃদ্ধই ছিল। বিকাশের কেন্দ্রে ছিল। কিন্তু এখন আর তা নেই। আমরা এই অবস্থাই বদলাতে চাইছি। বিজেপি সমৃদ্ধ পশ্চিমবঙ্গ তৈরি করতে চায়। এখন এখানে কাজের জন্য বাইরে যেতে হয় বাংলার মানুষকে। বাংলাকে এই অবস্থা থেকে বের করতে হবে। বাংলা পরিবর্তন চায়, বাংলা উন্নয়ন চায়।”
বিজেপি ক্ষমতায় এলে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিজেপি ক্ষমতায় এলেই বাংলা দেশের অন্যতম শিল্পসমৃদ্ধ রাজ্য হয়ে উঠবে। এটা আমার বিশ্বাস। তৃণমূল বাংলাকে শিল্পোন্নত হতে দিচ্ছে না। তাই তৃণমূলকে বাংলা থেকে সরাতে হবে। পশ্চিমবঙ্গকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে এখানে নতুন বিনিয়োগ আসে। কর্মসংস্থান তৈরি হয়। কিন্তু যতদিন তৃণমূল থাকবে, ততদিন এসব হবে না।” তিনি বলেন, “তৃণমূল সরকার বাংলার বিকাশের পথে অন্তরায়। যেদিন তৃণমূল সরকারের পতন হবে সেদিন থেকে বাংলা নতুন গতিতে দৌড়বে। তৃণমূল সরকার গেলে তবেই আসল পরিবর্তন হবে।”
আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে প্রত্যাশিতভাবেই উঠে আসে মুর্শিদাবাদের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদের মতো ঘটনা ঘটলে পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করে। আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। তৃণমূলের গুন্ডাগিরির জন্যই এখানে উদ্যোগপতিরা আসেন না। তাই তৃণমূলকে সরাতেই হবে। বিনিয়োগকারীরা সিন্ডিকেটরাজ দেখেই পালিয়ে যান। তৃণমূলের জমানায় রসাতলে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা – সব।” প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে উঠে আসে আরজিকর এবং কসবাকাণ্ডও। তিনি বলেন, “বাংলার হাসপাতালও (TMC) মেয়েদের জন্য সুরক্ষিত নয়। তখনও দেখা গিয়েছে, কীভাবে অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। এর পর কলেজেও একটা মেয়ের ওপর কীভাবে অত্যাচার চালানো হল, সেখানে সেখানে দেখা গেল তৃণমূলের লোকেরা জড়িত (PM Modi)।” তিনি বলেন, “যে দল মা, মাটি, মানুষ-এর আদর্শ নিয়ে কথা বলে, তাদের দ্বারা নারীদের প্রতি এমন দুর্ব্যবহার আমাকে গভীরভাবে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করে তোলে। ভারতের প্রথম পাশ্চাত্য-শিক্ষিত মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের এই পবিত্র ভূমিতে এমন ঘটনা ঘটতে দেখা অত্যন্ত দুঃখজনক। পশ্চিমবঙ্গে নারীদের ওপর ঘটে চলা নৃশংসতা আমাদের কষ্ট দেয়, রাগে ভরিয়ে তোলে।”
অনুপ্রবেশকারী প্রসঙ্গ
অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনুপ্রবেশকারীদের হয়ে সরাসরি মাঠে নেমে পড়েছে তৃণমূল। কান খুলে শুনে রাখুন, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সংবিধান অনুযায়ীই পদক্ষেপ করা হবে।” প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার এক্স হ্যান্ডেলে করা একটি পোস্টে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, “তৃণমূলের (TMC) দুঃশাসনের কারণে ভুগছে পশ্চিমবঙ্গ। মানুষ বিজেপির দিকে আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। তারা বিশ্বাস করে, উন্নয়ন শুধু এনে দিতে পারে বিজেপিই। আগামিকাল দুর্গাপুরে বিজেপির এক জনসভায় অংশ নেব। সবাই যোগ দিন।”
তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির কারণে বেকার শিক্ষকরা
এদিনের সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হাজার হাজার শিক্ষক তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির কারণে বেকার। আদালতও বলেছে, এটি একটি পদ্ধতিগত প্রতারণা।” মমতা সরকারকে নিশানা করে তিনি বলেন, “এই সরকার মিথ্যে, আইনশৃঙ্খলাহীন এবং লুটেরাদের সরকার।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিজেপির পক্ষ থেকে আমি আপনাদের অনুরোধ করছি বিজেপিকে একবার সুযোগ দিন। একটি পরিশ্রমী, সৎ ও শক্তিশালী সরকার বেছে নিন (PM Modi)।”
কী বললেন মিঠুন
প্রধানমন্ত্রীর আগে ভাষণ দেন অভিনেতা কাম বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “এবার আমাদের জীবন-মরণের লড়াই। আমাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আশীর্বাদ রয়েছে। আমি থাকব। আপনারা থাকবেন। সকলে মিলে লড়ব। যেভাবেই হোক এই ইলেকশন (ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচন) আমাদের জিততেই হবে। এছাড়া আর কী নিয়ে কথা বলব?” তিনি বলেন, “দুর্নীতি? দুর্নীতি তো ভরে রয়েছে রাজ্যটায় (TMC)। একটা ফাঁকও নেই। মা-বোনদের ইজ্জত নিয়ে কথা বলব? সেখানেও কথা বলার উপায় নেই। আমি পশ্চিমবঙ্গের ছেলে। এ রাজ্যের মা-বোন আমার মা-বোন।” মিঠুন বলেন, “আমি রাজনীতি করি না। মানুষ-নীতি করি। সেই জন্যই বারবার আমি পশ্চিমবঙ্গে ছুটে আসি।” এই অভিনেতা-রাজনীতিক বলেন, “এবার মাঠে নেমেছি একেবারে তৈরি হয়ে। ২৩-২৪ তারিখ থেকে পুরো মাঠে নামব। আপনাদের সঙ্গে থাকব। আপনাদের প্রবলেম জানব। মাঠে নেমে এক সঙ্গে লড়াই করব। এই লড়াই বহুদিন মনে রাখবে পশ্চিমবঙ্গ।” তিনি বলেন, “বিজেপি হেরে যাওয়ার পাত্র নয়। শুধু পুলিশকে একটু নিরপেক্ষ হওয়ার কথা বলুন। তারপর দেখুন, বিজেপি কী করতে পারে (PM Modi)।”