মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বন্যা বিধ্বস্ত নাগরাকাটায় (Nagrakata Incident) বিজেপি সাংসদ ও বিধায়কের উপর হামলার পর শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) পোস্টে ফিরল কোচবিহার স্মৃতি। ছবি দিয়ে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে বিরোধী দলনেতা দাবি করলেন, একই দুষ্কৃতীদের বারবার বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয় বিজেপি বিধায়কদের উপর হামলা করার জন্য। পাশাপাশি এর সঙ্গে জুড়লেন তৃণমূলের সন্ত্রাসবাদ মডেল-এর তত্ত্বও। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি সহ বন্যাবিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় যাবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেইসঙ্গে সোমবার নাগরাকাটায় আক্রান্ত বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে দেখা করবেন তিনি।
শুভেন্দুর নিশানায় কারা
ফেসবুক পোস্টে চার জনের ছবি দিয়ে নাম উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তাঁর দাবি…এই চারজন হলেন সইফুল হক, আইনুল আনসারি, রমজান আলি এবং পিঙ্কি খাতুন। এরপর ফেসবুক পোস্টে শুভেন্দু অধিকারী আরও লিখেছেন, ঠিক যেই সব দুর্বৃত্তদের এনেছিল কোচবিহারের খাগড়াবাড়িতে আমার ওপর আক্রমণ করতে, সেই ভাবেই এখানেও একই ভাবে সেই ‘বিশেষ সম্প্রদায়ের’ কিছু উচ্ছৃঙ্খল আইন অমান্যকারীদের পরিকল্পিত ভাবে জড়ো করা হয় এই ঘৃণ্য অপরাধ-অরাজকতা ঘটাতে। এরপর তিনি আরও লেখেন, এরা নিজেরাই আতঙ্কিত যে মমতা সরকার চলে গেলে এদের বেআইনি কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে যাবে, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আতঙ্কিত যে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে এদের খোলা ছাড় দিতে হবে, নয় তো এরাই কোনও দিন ঘটী উল্টে দেবে। এরা একে অপরের পরিপূরক তাই রাজ্যে আইনের শাসন বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
হাইকোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর
নাক-মুখ থেকে গলগল করে রক্ত ঝরছে। রুমাল, গামছা কোনও কিছু দিয়েই রক্ত বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সোমবার এই ভয়াবহ ছবি দেখা গিয়েছে নাগরাকাটায় (Nagrakata Incident)। গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে হামলার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। আক্রান্ত হয়েছেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষও। এই ঘটনা মোটেই সাধারণ নয়। ফলত বেলা যত গড়িয়েছে ততই চড়েছে রাজনৈতিক পারদ। কিন্তু গ্রেফতারি থেকেছে শূন্য। ইতিমধ্য়েই এই ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারির জন্য পুলিশকে ‘সময় বেঁধে’ দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিন উত্তরবঙ্গ যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। ভিডিয়োতে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, কারা এই ঘটনাটা ঘটিয়েছে। পুলিশ আজ বিকালের মধ্য়ে কোনও ব্যবস্থা না নিলে আগামিকাল আমরা কলকাতা হাইকোর্টের ভ্য়াকেশন বেঞ্চে দ্বারস্থ হব।’
সন্ত্রাসবাদ মডেল
সোমবার বিকেলে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ একটি পোস্টে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) লেখেন, ‘তৃণমূলের সেই এক ‘সন্ত্রাসবাদ মডেল’, দেখুন কাদের ব্যবহার করা হয় আজকের নাগরাকাটায় সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষদের ওপর এই নির্মম প্রাণঘাতী আক্রমণ ঘটাতে।’ এর পরেই তিনি ছবিতে গোল দাগ দিয়ে বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করে তাদের নামও লিখে দেন সেখানে। তাঁর দাবি, এঁরাই কোচবিহারে তাঁর কনভয়ে হামলা চালিয়েছিল। আর কিছুটা সময় পেরলেই পূর্ণ হবে ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু বিজেপি সাংসদকে ঘিরে মারের ঘটনায় অভিযুক্তদের কি পাকড়াও করা যাবে? রাজ্য পুলিশের দিকে সেই প্রশ্নই তুলে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি সূত্রে খবর, গতকালের ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে তাদের মধ্য়ে কাউকেই পাকড়াও করতে পারেনি পুলিশ। বিজেপির দুই জনপ্রতিনিধির উপর হামলার ঘটনায় তৃণমূলের দিকেই দায় ঠেলেছে গেরুয়া শিবির। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও সরব হতে দেখা গিয়েছে এই নিয়ে। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন তিনি।
আজ উত্তরবঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
একনাগাড়ে ভারী বৃষ্টি আর ভূমিধসে কার্যত লণ্ডভণ্ড উত্তরবঙ্গ (North Bengal Flood)। ধীরে ধীরে আবহাওয়ার উন্নতি হতে শুরু করেছে উত্তরবঙ্গে। তবে আজও হালকা বৃষ্টিতে ভিজতে পারে উত্তরের জেলাগুলি। এখনও চারপাশ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে প্রকৃতির ধ্বংসলীলার নমুনা। বৃষ্টি আর ধসে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে মিরিক, দার্জিলিংয়ের। জলের তোড়ে ভেঙে যায় দার্জিলিঙের মিরিক ব্লকের দুধিয়া সেতু। দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ২৬ জন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার মিরিকে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুও। দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তাও থাকবেন তাঁর সঙ্গে। বিজেপির কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতাদের উত্তরবঙ্গ সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ইতিমধ্যেই সোমবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছিলেন। এদিকে উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।