মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শুক্রবার ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস (Tricolour) পালন করল দেশ। আর এবারই প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) ২৯টি নকশাল কবলিত এলাকার বাসিন্দারা। অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতা পেয়েছিলেন এই সব এলাকার বাসিন্দারাও। কিন্তু মাওবাদীদের (স্থানীয় ভাষায় বনপার্টি) রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জাতীয় পতাকা তোলার সাহস তাঁদের ছিল না। তাই গত ৭৮ বছর এই জঙ্গলরাজ্যে তিরঙ্গা ঝাণ্ডা ওড়েনি। মোদি-শাহের জমানায় বদলেছে জঙ্গলমহলের ছবিটা। তার জেরেই এবার প্রথম ‘স্বাধীনতা’র মুখ দেখলেন এই সব এলাকার বাসিন্দারা।
মাওবাদীদের দাপট (Chhattisgarh)
বস্তার ডিভিশন, যার মধ্যে রয়েছে ৭টি জেলা, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে দাপিয়ে বেড়াত বনপার্টি। স্থানীয়দের তারা বোঝাতে ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’। কোনও কোনও এলাকায় তো আবার এদিন উত্তোলন করা হয় কালো পতাকা। তৃতীয়বার দেশের কুর্সিতে বসেই প্রথমে নকশাল দমনে জোর দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দেশকে মাওবাদীমুক্ত করতে বেঁধে দেন ডেডলাইন, ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ। তার পরেই কোমর বেঁধে মাও দমনে নেমে পড়েন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী। ফল মেলে হাতে হাতে। একদিকে যেমন এনকাউন্টারে খতম হয় মাওবাদীদের বড় বড় চাঁইরা, তেমনি অন্য দিকে, রাজ্যের বিজেপি সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করে সমাজের মূলস্রোতে ফেরেন বহু মাওবাদী। জঙ্গলের ওই সব অঞ্চলে বইয়ে দেওয়া হয় উন্নয়নের জোয়ার। এই ত্র্যহস্পর্শে খেলা ঘুরে যায়। মাও-মুক্ত হয় ছত্তিশগড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। তার পর এটাই ছিল এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে প্রথম স্বাধীনতা দিবস। তাই দিনটিকে যথেষ্ঠ মর্যাদার সঙ্গে পালন করলেন ওই গ্রামগুলির কয়েক হাজার বাসিন্দা। তবে সরল গ্রামবাসীদের এমনতর ‘পরবে’ যাতে মাওবাদীরা ‘কাল’ হয়ে না দাঁড়ায়, তাই বিভিন্ন জেলায় ছিল কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা।গ্রামগুলির প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ব্যবস্থা করা হয়েছিল পুলিশ ক্যাম্প, ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড, বস্তার ফাইটার্স, স্পেশাল টাস্ক ফোর্স এবং সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্সের।
স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এদিন স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহের অন্ত ছিল না (Chhattisgarh)। নারায়ণপুর জেলায় হোরাড়ি, গারপা, কচ্ছপাল, কোডলিয়ার, কুতুল, বড়েমাকোটি, পদ্মাকোট, কান্দুলনার, নেলাঙ্গুর, পানগুর ও রায়নারে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সুকমা জেলায় রায়গুডেম, তুমালপাদ, গোলাকুন্ডা, গোমগুডা, মেট্টাগুডা, উস্কাভায়া ও মূলকাথং গ্রামে প্রথমবারের মতো তিরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করা হয়। অন্যদিকে বিজাপুর জেলায় কন্ডাপল্লি, জিডাপল্লি, ভাটেবাগু, কার্রেগুটা, পিডিয়া, গুঞ্জেপার্তি, পূজারি, কানকার, ভীমারাম, কোরচোলি ও কোটপল্লি গ্রামেও স্বাধীনতা দিবসের আনন্দঘন উৎসবে সবাই অংশ নেন (Tricolour)।
পুলিশের বক্তব্য
সুকমার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট কিরণ চৌহান জানান, প্রান্তিক এলাকাগুলিতে ধারাবাহিকভাবে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে এবং নেল্লানার প্রকল্পের অধীনে রাস্তা, বিদ্যুৎ এবং মোবাইল টাওয়ারের মতো মৌলিক পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য বিজাপুর, সুকমা, কাঁকড়, দান্তেওয়াড়া ও নারায়ণপুরের মতো জেলাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা, যাতে নাগরিকদের সঙ্গে সরকারের কল্যাণমূলক সেবার সংযোগ বাড়ে এবং এর মাধ্যমে মাওবাদীদের প্রভাব দুর্বল হয় (Chhattisgarh)। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত শুধু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতীকী বিজয়ই নয়, বরং ভারতের অন্যতম হিংসাপীড়িত অঞ্চলে সমন্বয়, উন্নয়ন ও স্থায়ী শান্তির নতুন আশারও প্রতীক।
গ্রামে এল বিজলি, আত্মহারা শিশু থেকে বৃদ্ধ
এদিকে, চলতি বছরের মে মাসে ছত্তিশগড়ের মোহলা-মানপুর-আম্বাগড় চৌকি জেলায় প্রায় ৫৪০ পরিবার প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ গ্রিডের সংযোগ পেয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মজরাটোলা বিদ্যুতায়ন যোজনার অধীনে, যার জন্য ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি টাকা। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, দুর্গম ভূখণ্ড ও নকশালদের ক্রমাগত হুমকির কারণে এই কাজটি ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং, ফলে বিদ্যুৎ গ্রিডের সংযোগ পাওয়া ছিল একপ্রকার মিশন সম্পন্ন করার মতোই (Chhattisgarh)। আগে গ্রামবাসীরা সৌরশক্তির ওপর নির্ভর করতেন বাল্ব জ্বালানোর জন্য। কিন্তু বারবার প্যানেল চুরি এবং দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের (Tricolour) কারণে শিশুদের কেরোসিনের আলোয় পড়াশোনা করতে হত। এখন কাটুলঝোরা, কাট্টাপার, বোদ্রা, বুকমার্কা, সাম্বলপুর, গাট্টেগাহান, পুগদা, আমাকোদো, পেটেমেতা, টাটেকাসা, কুন্দালকাল, রাইমানহোরা, নাইনগুদা, মেতাতোদকে, কোকাটোলা, এদাসমেতা এবং কুঞ্জাকানহারে আনন্দের বন্যা বইছে, কারণ তাদের ঘরে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ পৌঁছেছে স্বাধীনতা দিবসের দিন। এক আধিকারিক বলেন, “কিছু গ্রামে শিশুরা নাচছিল, আবার অন্য কিছু গ্রামে প্রবীণরা আনন্দে পটকা ফাটাচ্ছিলেন—এটি ছিল সেই মুহূর্ত, যার জন্য তাঁরা দশকের পর দশক ধরে অপেক্ষা করেছিলেন (Chhattisgarh)।”