Tag: ramakrishna kathamrita

  • Ramakrishna 465: গভীর ধ্যানে ইন্দ্রিয়ের সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়

    Ramakrishna 465: গভীর ধ্যানে ইন্দ্রিয়ের সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়

    “গভীর ধ্যানে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়। একজন ব্যাধ পাখি মারবার জন্য তাগ করছে। কাছ দিয়ে বর চলে যাচ্ছে, সমস্ত ব্যবসায়ীরা, কত কোলাহল, বাজার, গাড়ি, ঘোষা — কতক্ষণ ধরে কাছ নিয়ে চলে গেল। ব্যাধের কিন্তু লেশ নাই। সে জানিতে পারলো না যে কাছ দিয়ে বর চলে গেল।

    “একজন একলা একটি পুকুরের ধারে মাছ ধরছে। অনেকক্ষণ পরে ফাঁসাটা নড়তে লাগল, মাঝে মাঝে কাট হতে লাগল। সে তখন ছিপ হাতে করে টান মারবার উদ্যোগ করিতেছে। এমন সময় একজন পথিক কাছে এসে জিজ্ঞাসা করিতেছে, মহাশয়, অমুক বাঁড়ুজ্জেদের বাড়ি কোথায় বলতে পারেন? সে ব্যক্তি শ্ল্ধ নাই। তার হাত কাঁপিতেছে, কেবল ফাঁসার দিকে দৃষ্টি। তখন পথিক বিরক্ত হয়ে চলেগেল। সে অনেক দূরে চলে গিয়েছে, এমন সময় ফাঁসাটা ডুবে গেল, আর…

    ও ব্যক্তি টান মেরে মাছটাকে আড়ায় তুলল। তখন গাছটা দিয়ে মুখ পুঁতে, চিৎকার করে পাখিটাকে ডাকছে—ওহে—শোনা—শোনা! পাখি ফিরিতে চায় না, অনেক ডাকাডাকি পর ফিরিল। এসে বলছে, কেন মুখ্যধম, আবার ডাকছ কে? তখন সে বলল, তুমি আমায় কি বলছিলে? পাখি বললে, তখন অত্যন্ত করে জিজ্ঞাসা করলুম—আর এখন বলছ কি বললে! সে বলল, তখন যে ফানায় ডুবছিল, তাই আমি কিছুই শুনিতে পাই নাই।

    “ধ্যানে এইরূপ একাগ্রতা হয়, অন্য কিছু দেখা যায় না শোনাও যায় না। স্পর্শবোধ পর্যন্ত হয় না। সাপ গায়ের উপর দিয়ে চলে যায়, জানিতে পারে না। যে ধ্যান করে সেও বুঝিতে পারে না—সাপটাও জানিতে পারে না।

    “গভীর ধ্যানে ইন্দ্রিয়ের সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। মন বহির্মুখী থাকে না—যেন বার-বাড়িতে কপাট পড়ল। ইন্দ্রিয়ের পাঁচটি বিষয়: রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ—বাহিরে পড়ে থাকে।

    “ধ্যানের সময় প্রথম প্রথম ইন্দ্রিয়ের বিষয় সকল সামনে আসে—গভীর ধ্যানে সে সকল আর আসে না—বাহিরে পড়ে থাকে। ধ্যান করতে করতে আমাদের কত কি দর্শন হয়। প্রত্যক্ষ দেখলাম—সামনে টাকায় কাঠি, শাল, একখানা সুন্দর টালি—তাদের মধ্যে কি সুন্দর জ্যোৎস্নার আভা—সব বাহিরের বস্তু।

  • Ramakrishna 464: গভীর ধ্যানে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়

    Ramakrishna 464: গভীর ধ্যানে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়

    “আমি সর্বপ্রকার সাধন করেছিলাম। সাধনা তিন প্রকার—সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক। সাত্ত্বিক সাধনায় তাঁকে ব্যাকুল হয়ে ডাকে বা তাঁর নামটি শুনে নিয়ে থাকে। আর কোনো ফললাভ নেই। রাজসিক সাধনে নানারকম প্রক্রিয়া—এতবার পুষ্পচর্চন করতে হবে, এত তীর্থ করতে হবে, পঞ্চগব্য করতে হবে; যজ্ঞোপবীতধার পুজা করতে হবে ইত্যাদি। তামসিক সাধন—তোমাকে আঘাত করে সাধনা। জয় কালী! কি, তুই খাস নির্নিমেষ। এই গলায় ছুরি দে। যদি দিয়া না দিস্ এ সাধনায় ফললাভ নাই। —যেমন তন্ত্রের সাধনা।

    “সে অবস্থায় (সাধনার অবস্থায়) অদ্ভুত সব দর্শন হত, আমার রমন প্রত্যক্ষ দেখলাম। আমার মতো রূপ একরকম আমার শরীরের ভিতর প্রবেশ করল। আর মড়কসম প্রতাপে পদ্মের মতো রমন করতে লাগল। ঘটল হৃদয়ে হয়েছিল—ঠাকুর বলতেন রমন কথার আর একটি পদ প্রবর্তিত হয়—আর উদ্বোধিত হয় রমন। এইরূপ মূর্তিমান, স্থাণু, অচঞ্চল, অনাহত, বিভক্ত, অখণ্ড, সহজাত সকল প্রত্যক্ষ ফুটে উঠত। আর নিচে মূর্ছা ছিল উদ্বোধক হল, প্রত্যক্ষ দেখলাম।”

    [ধ্যানযোগ সাধনা — ‘নিবৃত নিস্পন্দমিরপ্রদীপস্ফূর’]

    “সাধনার সময় আমি ধ্যান করতে করতে আবেশ করতাম প্রভূপদের শিখা—
    যখন হওয়া নাই, একটুও নড়ে না — তার আবেশ করতাম।

    “গভীর ধ্যানে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়। একজন ব্যাধ পাখি মারবার জন্য তাগ করছে। কাছ দিয়ে বর চলে যাচ্ছে, সমস্ত ব্যবসায়ীরা, কত কোলাহল, বাজার, গাড়ি, ঘোষা — কতক্ষণ ধরে কাছ নিয়ে চলে গেল। ব্যাধের কিন্তু লেশ নাই। সে জানিতে পারলো না যে কাছ দিয়ে বর চলে গেল।

    “একজন একলা একটি পুকুরের ধারে মাছ ধরছে। অনেকক্ষণ পরে ফাঁসাটা নড়তে লাগল, মাঝে মাঝে কাট হতে লাগল। সে তখন ছিপ হাতে করে টান মারবার উদ্যোগ করিতেছে। এমন সময় একজন পথিক কাছে এসে জিজ্ঞাসা করিতেছে, মহাশয়, অমুক বাঁড়ুজ্জেদের বাড়ি কোথায় বলতে পারেন? সে ব্যক্তি শ্ল্ধ নাই। তার হাত কাঁপিতেছে, কেবল ফাঁসার দিকে দৃষ্টি। তখন পথিক বিরক্ত হয়ে চলেগেল। সে অনেক দূরে চলে গিয়েছে, এমন সময় ফাঁসাটা ডুবে গেল, আর…

  • Ramakrishna 463: সাধনা তিন প্রকার—সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক

    Ramakrishna 463: সাধনা তিন প্রকার—সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক

    রামলালকে নিয়ে সর্বদা বেড়াতাম, কখনো খাওয়াইতাম, আবার কখনো রাধা-কৃষ্ণের ভাবনায় থাকতাম। ঐরূপে সর্বদা দর্শন হতো। আবার কখনো গৌরাঙ্গের ভাবনায় থাকতাম। দুই ভাবের মিলন এবং প্রকৃতিভাবের মিলন—ঐরূপে সর্বদা দর্শন হতো।

    কখনো অবস্থা বদলে গিয়েছিল। সবকিছু একে একে অনুভব করতে লাগলাম। ঈশ্বরদী ও রূপ ভালো লাগল না, বললাম, “কিন্তু তোমাদের বিচার আছে।” তখন তাদের তলায় রাখলাম। ঘরে যত ঈশ্বরী বা পট বা ছবি ছিল, সব খুলে ফেললাম। কেউ বলছিল, “অখণ্ড সত্যিটা আনন্দ” আমি সেই আদি পুরুষকে চিন্তা করতে লাগলাম।

    “আমি সর্বপ্রকার সাধন করেছিলাম। সাধনা তিন প্রকার—সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক। সাত্ত্বিক সাধনায় তাঁকে ব্যাকুল হয়ে ডাকে বা তাঁর নামটি শুনে নিয়ে থাকে। আর কোনো ফললাভ নেই। রাজসিক সাধনে নানারকম প্রক্রিয়া—এতবার পুষ্পচর্চন করতে হবে, এত তীর্থ করতে হবে, পঞ্চগব্য করতে হবে; যজ্ঞোপবীতধার পুজা করতে হবে ইত্যাদি। তামসিক সাধন—তোমাকে আঘাত করে সাধনা। জয় কালী! কি, তুই খাস নির্নিমেষ। এই গলায় ছুরি দে। যদি দিয়া না দিস্ এ সাধনায় ফললাভ নাই। —যেমন তন্ত্রের সাধনা।

    “সে অবস্থায় (সাধনার অবস্থায়) অদ্ভুত সব দর্শন হত, আমার রমন প্রত্যক্ষ দেখলাম। আমার মতো রূপ একরকম আমার শরীরের ভিতর প্রবেশ করল। আর মড়কসম প্রতাপে পদ্মের মতো রমন করতে লাগল। ঘটল হৃদয়ে হয়েছিল—ঠাকুর বলতেন রমন কথার আর একটি পদ প্রবর্তিত হয়—আর উদ্বোধিত হয় রমন। এইরূপ মূর্তিমান, স্থাণু, অচঞ্চল, অনাহত, বিভক্ত, অখণ্ড, সহজাত সকল প্রত্যক্ষ ফুটে উঠত। আর নিচে মূর্ছা ছিল উদ্বোধক হল, প্রত্যক্ষ দেখলাম।”

    [ধ্যানযোগ সাধনা — নির্বাণ নিল্লিপ্তসিদ্ধিপ্রদীপ]

    “সাধনার সময় আমি রামণ করতে করতে আবার কৃতজ্ঞ হৃদয়ে পিয়া—”

  • Ramakrishna 462: কেউ বলছিল, “অখণ্ড সত্যিটা আনন্দ” আমি সেই আদি পুরুষকে চিন্তা করতে লাগলাম

    Ramakrishna 462: কেউ বলছিল, “অখণ্ড সত্যিটা আনন্দ” আমি সেই আদি পুরুষকে চিন্তা করতে লাগলাম

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি) সে সময়ে ধ্যানে দেখতে পেতাম সত্যি সত্যি—একজনের কাছে ফুল হাতে বসে আছি, ভয় দেখাচ্ছে, যদি ঈশ্বরের পাদপথে মন না রাখি, চুল পর্যন্ত আমার বাড়ি মারবে। ঠিক মন না হলে বুকেও আঘাত হবে।

    নিত্য, লীলা, যোগ, পুরুষ, প্রকৃতি, বিবেক—এই সব ভাবনা চলত।

    কখনো মা এমন অবস্থা দেখাতেন যে নিত্য থেকে মন নেমে নেমে নীলায় চলে যেত, আবার কখনো লীলার মাধ্যমে নিত্যর মন উঠত। যখন লীলায় মন নেমে আসত, তখন কখনো সীতারামকে রাতদিন চিন্তা করতাম, আর সীতারামের রূপ দর্শন হতো। রামলালকে নিয়ে সর্বদা বেড়াতাম, কখনো খাওয়াইতাম, আবার কখনো রাধা-কৃষ্ণের ভাবনায় থাকতাম। ঐরূপে সর্বদা দর্শন হতো। আবার কখনো গৌরাঙ্গের ভাবনায় থাকতাম। দুই ভাবের মিলন এবং প্রকৃতিভাবের মিলন—ঐরূপে সর্বদা দর্শন হতো।

    কখনো অবস্থা বদলে গিয়েছিল। সবকিছু একে একে অনুভব করতে লাগলাম। ঈশ্বরদী ও রূপ ভালো লাগল না, বললাম, “কিন্তু তোমাদের বিচার আছে।” তখন তাদের তলায় রাখলাম। ঘরে যত ঈশ্বরী বা পট বা ছবি ছিল, সব খুলে ফেললাম।

    কেউ বলছিল, “অখণ্ড সত্যিটা আনন্দ” আমি সেই আদি পুরুষকে চিন্তা করতে লাগলাম।

     

  • Ramakrishna 461: ঠাকুর আনন্দে গাড়িতে যাচ্ছেন

    Ramakrishna 461: ঠাকুর আনন্দে গাড়িতে যাচ্ছেন

    মেয়েভক্তগণ অনেকেই আসিয়াছেন। তাহারা চিত্রের আড়ালে বসিয়া ঠাকুরের দর্শন করিতেছেন।
    মোহিনীর পরিবারও আসিয়াছেন — পূর্বশ্রেষ্ঠ উৎপাদনে ব্যয় — তিনি ও তাহার নাম্য সঙ্গিনী অনেকেই আসিয়াছেন, এই বিশ্বাস যে ঠাকুরের কাছে নিঃসন্দেহে শান্তিলাভ হইবে।

    আজ ১লা বৈশাখ, চৈত্র কৃষ্ণ একাদশী, ১২ই এপ্রিল, ১৮৮৫, শুক্রবার, বেলা ৩টা হইবে।

    মাস্টার আসিয়া দেখিলেন, ঠাকুর ভক্তের মজলিস করিয়া বসিয়া আছেন ও নিজের সাম্প্রতিক বিবরণ ও নানাবিধ আধ্যাত্মিক অবস্থার বর্ণনা করিতেছেন।
    মাস্টার আসিয়া ঠাকুরকে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন ও তাহার কাছে আসিয়া বসিলেন।

    ঠাকুর আনন্দে গাড়িতে যাচ্ছেন।

    ১। শ্রীউপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ঠাকুরের ভক্ত ও “বসুমতী’র” সম্পাদক।

    ২। শ্রীঅমরকুমার সেন, ঠাকুরের ভক্ত ও কবি। ইনি “শ্রীরামকৃষ্ণ পদ্য” লিখিয়া চিরস্মরণীয় হইয়াছেন। বাঁকুড়া জেলার অন্তঃপাড়া ময়নাপুর গ্রাম ইহার জন্মভূমি।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি) সে সময়ে ধ্যানে দেখতে পেতাম সত্যি সত্যি—একজনের কাছে ফুল হাতে বসে আছি, ভয় দেখাচ্ছে, যদি ঈশ্বরের পাদপথে মন না রাখি, চুল পর্যন্ত আমার বাড়ি মারবে। ঠিক মন না হলে বুকেও আঘাত হবে।

    নিত্য, লীলা, যোগ, পুরুষ, প্রকৃতি, বিবেক—এই সব ভাবনা চলত।

    কখনো মা এমন অবস্থা দেখাতেন যে নিত্য থেকে মন নেমে নেমে নীলায় চলে যেত, আবার কখনো লীলার মাধ্যমে নিত্যর মন উঠত। যখন লীলায় মন নেমে আসত, তখন কখনো সীতারামকে রাতদিন চিন্তা করতাম, আর সীতারামের রূপ দর্শন হতো। রামলালকে নিয়ে সর্বদা বেড়াতাম, কখনো খাওয়াইতাম, আবার কখনো রাধা-কৃষ্ণের ভাবনায় থাকতাম। ঐরূপে সর্বদা দর্শন হতো। আবার কখনো গৌরাঙ্গের ভাবনায় থাকতাম। দুই ভাবের মিলন এবং প্রকৃতিভাবের মিলন—ঐরূপে সর্বদা দর্শন হতো।

     

     

  • Ramakrishna 460: ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলকাতায় শ্রীযুক্ত বলরামের বৈঠকখানায় ভক্তসমাবেশে বসিয়া আছেন

    Ramakrishna 460: ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলকাতায় শ্রীযুক্ত বলরামের বৈঠকখানায় ভক্তসমাবেশে বসিয়া আছেন

    দেবেন্দ্র এবার ঠাকুরকে বাড়ির ভিতর লইয়া যাইতেছেন। সেখানে ঠাকুরকে জল খাওয়াইবার ইচ্ছা। ঠাকুর ভিতরে গেলেন। ঠাকুর সহসাইদলের বাড়ির ভিতর হইতে ফিরিয়া আসিলেন ও আবার বৈঠকখানায় উপস্থিত হইলেন। ভক্তরা কাছে বসিয়া আছেন। উপেন্দ্র ও অক্ষয় ঠাকুরের দুই পাশে বসিয়া পদসেবা করিতেছেন। ঠাকুর দেশের বাড়ির মেয়েদের কথা বলিতেছেন — “বেশ মেয়েরা, পাদরগেয়ে মেয়ে কি না! খুব ভক্তি।”

    ঠাকুর আছাড়ায়? নিজে আনন্দে গান গাহিতেছেন! কি ভাবে গান গাহিতেছেন? নিজের অবস্থা স্মরণ করিয়া তাহার কি ভাবাবেশ হইল? তাই কি গান গাহি গাহিতেছেন?

    গান – সহজ মানুষ না হলে সহজকে না যায় চেনা।

    গান – দরবেশা দাড়ারে, সাধের কড়ওয়া কিস্তুধারী দাড়ারে, ও তোর ভাব (রূপ) নেহারি।।

    গান – এসেছেন এক ভাবে ফকিরা। (ও সে) হিন্দুর ঠাকুর, মুসলমানের পীর।।

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলকাতায় শ্রীযুক্ত বলরামের বৈঠকখানায় ভক্তসমবেশে বসিয়া আছেন। গিরিশ, মাস্টার, বলরাম — ক্ৰমে ছোট নবেন, পুণ্য, নিত্য, পূর্ণ, মল্লিক, মুকুন্দ ইত্যাদি — অনেক ভক্ত উপস্থিত আছেন। ক্ৰমে ব্রাহ্মসমাজের শ্রীযুক্ত শ্রীলোকনাথ সান্যাল, জয়গোপাল সেন প্রভৃতি অনেকেই ভক্ত আসিলেন। মেয়েভক্তগণ অনেকেই আসিয়াছেন। তাহারা চিত্রের আড়ালে বসিয়া ঠাকুরের দর্শন করিতেছেন। মোহিনীর পরিবারও আসিয়াছেন — পূর্বশ্রেষ্ঠ উৎপাদনে ব্যয় — তিনি ও তাহার নাম্য সঙ্গিনী অনেকেই আসিয়াছেন, এই বিশ্বাস যে ঠাকুরের কাছে নিঃসন্দেহে শান্তিলাভ হইবে।

    আজ ১লা বৈশাখ, চৈত্র কৃষ্ণ একাদশী, ১২ই এপ্রিল, ১৮৮৫, শুক্রবার, বেলা ৩টা হইবে।

    মাস্টার আসিয়া দেখিলেন, ঠাকুর ভক্তের মজলিস করিয়া বসিয়া আছেন ও নিজের সাম্প্রতিক বিবরণ ও নানাবিধ আধ্যাত্মিক অবস্থার বর্ণনা করিতেছেন। মাস্টার আসিয়া ঠাকুরকে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন ও তাহার কাছে আসিয়া বসিলেন।

  • Ramakrishna 459: ভক্তরা কাছে বসিয়া আছেন, উপেন্দ্র ও অক্ষয় ঠাকুরের দুই পাশে বসিয়া পদসেবা করিতেছেন

    Ramakrishna 459: ভক্তরা কাছে বসিয়া আছেন, উপেন্দ্র ও অক্ষয় ঠাকুরের দুই পাশে বসিয়া পদসেবা করিতেছেন

    শ্রীরামকৃষ্ণ — “বেশ কীর্ত্তন হল! গোপীদের অবস্থা বেশ বললে — ‘হে মাধব, আমার মাধব দাও।’ গোপীদের প্রেমান্দদের অবস্থা। কী আশ্চর্য! কৃষ্ণের জন্য পাগল!”

    একজন ভক্ত আর একজনকে দেখাইয়া বলিতেছেন — **“এরই সঙ্গীতভাব — গোপীবাবা।”

    রাম বলিতেছেন — “এর ভিতর দুইই আছে। মধুরভাব আর জ্ঞানের কঠোর ভাবও আছে।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ — “কি গা?”

    ঠাকুর এবার সুরেন্দ্রর কথা বলিতেছেন।

    রাম — আমি খবর দিছিলাম, কই এলেন না। শ্রীরামকৃষ্ণ — কর্ম থেকে এসে আর পারা যায় না।

    একজন ভক্ত — রামবাবু আপনার কথা লিখেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্য) — কি লিখেছে? ভক্ত — পরমহংসের ভুক্তি — এই বলে একটি বিষয় লিখেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ — তবে আর কি, রামের খুব নাম হবে। গিরিশ (সহাস্য) — সে আপনার চেলা বলে। শ্রীরামকৃষ্ণ — আমার চেলা-টেলা নাই। আমি রামের দাসানুদাস।

    পাড়ার লোকেরা কেহ কেহ আসিয়াছিলেন। কিন্তু তাহাদের দেখিয়া ঠাকুরের আনন্দ হয় নাই। ঠাকুর একবার বলিলেন, “এ কি পাড়া! এখানে দেখছি কেউ নাই।”

    দেবেন্দ্র এবার ঠাকুরকে বাড়ির ভিতর লইয়া যাইতেছেন। সেখানে ঠাকুরকে জল খাওয়াইবার ইচ্ছা। ঠাকুর ভিতরে গেলেন। ঠাকুর সহসাইদলের বাড়ির ভিতর হইতে ফিরিয়া আসিলেন ও আবার বৈঠকখানায় উপস্থিত হইলেন। ভক্তরা কাছে বসিয়া আছেন। উপেন্দ্র ও অক্ষয় ঠাকুরের দুই পাশে বসিয়া পদসেবা করিতেছেন। ঠাকুর দেশের বাড়ির মেয়েদের কথা বলিতেছেন — “বেশ মেয়েরা, পাদরগেয়ে মেয়ে কি না! খুব ভক্তি।”

    ঠাকুর আছাড়ায়? নিজে আনন্দে গান গাহিতেছেন! কি ভাবে গান গাহিতেছেন? নিজের অবস্থা স্মরণ করিয়া তাহার কি ভাবাবেশ হইল? তাই কি গান গাহি গাহিতেছেন?

    গান – সহজ মানুষ না হলে সহজকে না যায় চেনা।

    গান – দরবেশা দাড়ারে, সাধের কড়ওয়া কিস্তুধারী
    দাড়ারে, ও তোর ভাব (রূপ) নেহারি।।

    গান – এসেছেন এক ভাবে ফকিরা।
    (ও সে) হিন্দুর ঠাকুর, মুসলমানের পীর।।

  • Ramakrishna 458: শ্রীরামকৃষ্ণ বলিলেন, আমার চেলা-টেলা নাই, আমি রামের দাসানুদাস

    Ramakrishna 458: শ্রীরামকৃষ্ণ বলিলেন, আমার চেলা-টেলা নাই, আমি রামের দাসানুদাস

    যেন একটি ছোট ছেলে দূর হইতে মার ডাক শুনিয়া উত্তর দিতেছে! ঠাকুর আবার নিঃস্পন্দ দেখ, সমাধিস্থ বসিয়া আছেন। ভক্তেরা অনিমেষনয়নে নিঃশব্দে দেখিতেছেন।

    ঠাকুর ভাবে আবার বলছেন, “আমি লুচি আর খাব না।”

    পাড়া হইতে দুই-একটি গোস্বামী আসিয়াছিলেন — তাহারা উঠিয়া গেলেন।

    পরবর্তী পরিচ্ছেদ

    চতুর্দশ পরিচ্ছেদ ১৮৮৫, ৬ এপ্রিল ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবেন্দ্রের বাটীতে ভক্তসম্ভাষণে

    ঠাকুর ভক্তসম্ভাষে আনন্দে কথাবার্তা কহিতেছেন। চৈত্র মাস, বড় গরম! দেবেন্দ্র কুলপি বরফ তৈয়ার করিয়াছেন। ঠাকুরকে ও ভক্তদের খাওয়াইতেছেন। ভক্তগণও কুলপি খাইয়া আনন্দ করিতেছেন। মণি বলিতেছেন, “এনেকোর! এনেকোর!” (অর্থাৎ আরও কুলফি দাও) ও সকলে হাসিতেছেন। কুলফি খাইয়া ঠাকুরের ঠিক বালকের ন্যায় আনন্দ হইতেছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ — “বেশ কীর্ত্তন হল! গোপীদের অবস্থা বেশ বললে — ‘হে মাধব, আমার মাধব দাও।’ গোপীদের প্রেমান্দদের অবস্থা। কী আশ্চর্য! কৃষ্ণের জন্য পাগল!”

    একজন ভক্ত আর একজনকে দেখাইয়া বলিতেছেন — **“এরই সঙ্গীতভাব — গোপীবাবা।”

    রাম বলিতেছেন — “এর ভিতর দুইই আছে। মধুরভাব আর জ্ঞানের কঠোর ভাবও আছে।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ — “কি গা?”

    ঠাকুর এবার সুরেন্দ্রর কথা বলিতেছেন।

    রাম — আমি খবর দিছিলাম, কই এলেন না।
    শ্রীরামকৃষ্ণ — কর্ম থেকে এসে আর পারা যায় না।

    একজন ভক্ত — রামবাবু আপনার কথা লিখেছেন।
    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্য) — কি লিখেছে?
    ভক্ত — পরমহংসের ভুক্তি — এই বলে একটি বিষয় লিখেছেন।
    শ্রীরামকৃষ্ণ — তবে আর কি, রামের খুব নাম হবে।
    গিরিশ (সহাস্য) — সে আপনার চেলা বলে।
    শ্রীরামকৃষ্ণ — আমার চেলা-টেলা নাই। আমি রামের দাসানুদাস।

    পাড়ার লোকেরা কেহ কেহ আসিয়াছিলেন। কিন্তু তাহাদের দেখিয়া ঠাকুরের আনন্দ হয় নাই। ঠাকুর একবার বলিলেন, “এ কি পাড়া! এখানে দেখছি কেউ নাই।”

  • Ramakrishna 457: গোপীদের প্রেমান্দদের অবস্থা, কী আশ্চর্য! কৃষ্ণের জন্য পাগল!”

    Ramakrishna 457: গোপীদের প্রেমান্দদের অবস্থা, কী আশ্চর্য! কৃষ্ণের জন্য পাগল!”

    ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের ভাব আবার ঘনীভূত হইতেছে। আবার মার সঙ্গে কথা কহিতেছেন, “মা! যে ভাল আছে তাকে ভাল করতে যাওয়া কি বাহাদুরি? মা! মরারকে বাঁচাইতে হইবে? যে খাদ্য হয়ে রয়েছে তাকে খাওলে তবে তো তোমার মহিমা!” ঠাকুর কিন্তু স্থির হইয়া ঠাঁই একটুখানি উচ্চঃস্বরে বলিতেছেন — “আমি দক্ষিণেশ্বর থেকে এসেছি। যাচ্ছি গো মা!!”

    যেন একটি ছোট ছেলে দূর হইতে মার ডাক শুনিয়া উত্তর দিতেছে! ঠাকুর আবার নিঃস্পন্দ দেখ, সমাধিস্থ বসিয়া আছেন। ভক্তেরা অনিমেষনয়নে নিঃশব্দে দেখিতেছেন।

    ঠাকুর ভাবে আবার বলছেন, “আমি লুচি আর খাব না।”

    পাড়া হইতে দুই-একটি গোস্বামী আসিয়াছিলেন — তাহারা উঠিয়া গেলেন।

    পরবর্তী পরিচ্ছেদ

    চতুর্দশ পরিচ্ছেদ
    ১৮৮৫, ৬ এপ্রিল
    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবেন্দ্রের বাটীতে ভক্তসম্ভাষণে

    ঠাকুর ভক্তসম্ভাষে আনন্দে কথাবার্তা কহিতেছেন। চৈত্র মাস, বড় গরম! দেবেন্দ্র কুলপি বরফ তৈয়ার করিয়াছেন। ঠাকুরকে ও ভক্তদের খাওয়াইতেছেন।
    ভক্তগণও কুলপি খাইয়া আনন্দ করিতেছেন। মণি বলিতেছেন,

    “এনেকোর! এনেকোর!”
    (অর্থাৎ আরও কুলফি দাও) ও সকলে হাসিতেছেন। কুলফি খাইয়া ঠাকুরের ঠিক বালকের ন্যায় আনন্দ হইতেছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ —
    “বেশ কীর্ত্তন হল! গোপীদের অবস্থা বেশ বললে — ‘হে মাধব, আমার মাধব দাও।’ গোপীদের প্রেমান্দদের অবস্থা। কী আশ্চর্য! কৃষ্ণের জন্য পাগল!”

    একজন ভক্ত আর একজনকে দেখাইয়া বলিতেছেন —
    **“এরই সঙ্গীতভাব — গোপীবাবা।”

    রাম বলিতেছেন —
    “এর ভিতর দুইই আছে। মধুরভাব আর জ্ঞানের কঠোর ভাবও আছে।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ —
    “কি গা?”

    ঠাকুর এবার সুরেন্দ্রর কথা বলিতেছেন।

    রাম —
    “আমি খবর দিছিলাম, কই এলো না।”

  • Ramakrishna 458: ঠাকুর ভাবে আবার বলছেন, “আমি লুচি আর খাব না”

    Ramakrishna 458: ঠাকুর ভাবে আবার বলছেন, “আমি লুচি আর খাব না”

    শ্রী রামকৃষ্ণ (ভাবস্থ) — মা! তাকে টেনে নিও, আমি আর ভাবতে পারি না!! (মাস্টারের দিকে) তোমার সম্পত্তি — তার দিকে একটু মন আছে।

    (গিরিশের প্রতি) — “তুমি মালামাল, খাবার কথা, অনেক বল; তা হউক, ওসব বেরিয়ে যাওয়া‌ই ভালো। বদরোগ কাকের কাকর আছে। যত বেরিয়ে যায় ততই ভালো। “উচ্চারিত নামের সময়ই শব্দ হয়। কাঁঠ পোড়াবার সময় চড়চড় শব্দ করে। সব পুড়ে গেলে আর শব্দ থাকে না। “তুমি দিন দিন শুভ হবে। তোমার দিন দিন খুব উন্নতি হবে। লোকে দেখে অবাক হবে। আমি বেশি আসতে পারব না, — তা হউক, তোমার এমনি হবে।” ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের ভাব আবার ঘনীভূত হইতেছে। আবার মার সঙ্গে কথা কহিতেছেন, “মা! যে ভাল আছে তাকে ভাল করতে যাওয়া কি বাহাদুরি? মা! মরারকে বাঁচাইতে হইবে? যে খাদ্য হয়ে রয়েছে তাকে খাওলে তবে তো তোমার মহিমা!” ঠাকুর কিন্তু স্থির হইয়া ঠাঁই একটুখানি উচ্চঃস্বরে বলিতেছেন — “আমি দক্ষিণেশ্বর থেকে এসেছি। যাচ্ছি গো মা!!”

    যেন একটি ছোট ছেলে দূর হইতে মার ডাক শুনিয়া উত্তর দিতেছে! ঠাকুর আবার নিঃস্পন্দ দেখ, সমাধিস্থ বসিয়া আছেন। ভক্তেরা অনিমেষনয়নে নিঃশব্দে দেখিতেছেন।

    ঠাকুর ভাবে আবার বলছেন, “আমি লুচি আর খাব না।”

    পাড়া হইতে দুই-একটি গোস্বামী আসিয়াছিলেন — তাহারা উঠিয়া গেলেন।

    পরবর্তী পরিচ্ছেদ

    চতুর্দশ পরিচ্ছেদ
    ১৮৮৫, ৬ এপ্রিল
    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবেন্দ্রের বাটীতে ভক্তসম্ভাষণে

    ঠাকুর ভক্তসম্ভাষে আনন্দে কথাবার্তা কহিতেছেন। চৈত্র মাস, বড় গরম! দেবেন্দ্র কুলপি বরফ তৈয়ার করিয়াছেন। ঠাকুরকে ও ভক্তদের খাওয়াইতেছেন।
    ভক্তগণও কুলপি খাইয়া আনন্দ করিতেছেন।

LinkedIn
Share