Tag: ramakrishna

ramakrishna

  • Ramakrishna 201: “প্রাণনাথ, হৃদয়বল্লভ তোরা কৃষ্ণ এনে দে…না হয় আমায় নিয়ে চল; তোদের চিরদাসী হব”

    Ramakrishna 201: “প্রাণনাথ, হৃদয়বল্লভ তোরা কৃষ্ণ এনে দে…না হয় আমায় নিয়ে চল; তোদের চিরদাসী হব”

    ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    অষ্টম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ২৭শে মে

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    জগন্মাতার পূজা ও আত্মপূজা—‘বিপদনাশিনী’ মন্ত্র ও নৃত্য 

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) ভক্তদের বলিতেছেন, সংসারীদের সম্মুখে কেবল দুঃখের কথা ভাল নয়। আনন্দ চাই। যাদের অন্নাভাব, তারা দুদিন বরং উপোস করতে পারে; আর যাদের খেতে একটু বেলা হলে অসুখ হয়, তাদের কাছে কেবল কান্নার কথা, দুঃখের কথা ভাল নয়।

    “বৈষ্ণবচরণ বলত, কেবল পাপ পাপ—এ-সব কি? আনন্দ কর।”

    ঠাকুর আহারান্তে একটু বিশ্রাম করিতে না করিতে মনোহরসাঁই গোস্বামী আসিয়া উপস্থিত।

    শ্রীরাধার ভাবে মহাভাবময় শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna)—ঠাকুর কি গৌরাঙ্গ! 

    গোস্বামী পূর্বরাগ কীর্তন গান করিতেছেন। একটু শুনিতে শুনিতেই ঠাকুর রাধার ভাবে ভাববিষ্ট।

    প্রথমেই গৌরচন্দ্রিকা কীর্তন। “করতলে হাত—চিন্তিত গোরা—আজ কেন চিন্তিত?—বুঝি রাধার ভাবে হয়েছে ভাবিত।”

    গোস্বামী আবার গান গাইতেছেন:

    ঘরের বাহিরে, দণ্ডে শতবার তিলে তিলে আসে যায়
    কিবা মন উচাটন, নিশ্বাস সঘন, কদম্ব কাননে চায়।
    (রাই, এমন কেন বা হল গো!)

    গানের এই লাইনটি শুনিয়া ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের মহাভাবের অবস্থা হইয়াছে। গায়ের জামা ছিঁড়িয়া ফেলিয়া দিলেন।

    কীর্তনিয়া যখন গাইতেছেন:

    শীতল তছু অঙ্গ।
    তনু পরশে, অমনি অবশ অঙ্গ!
    মহাভাবে ঠাকুরের কম্প হইতেছে!

    (কেদার দৃষ্টে) ঠাকুর কীর্তনের সুরে বলিতেছেন, “প্রাণনাথ, হৃদয়বল্লভ তোরা কৃষ্ণ এনে দে; সুহৃদের তো কাজ বটে; হয় এনে দে, না হয় আমায় নিয়ে চল; তোদের চিরদাসী হব।”

    গোস্বামী কীর্তনিয়া ঠাকুরের মহাভাবের অবস্থা দেখিয়া মুগ্ধ হইয়াছেন। তিনি করজোড়ে বলিতেছেন(Kathamrita), “আমার বিষয়বুদ্ধি ঘুচিয়ে দিন।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—“সাধু বাসা পাকড় লিয়া।” তুমি এত বড় রসিক; তোমার ভিতের থেকে এত মিষ্ট রস বেরুচ্ছে!

    গোস্বামী—প্রভু, আমি চিনির বলদ, চিনির আস্বাদন করতে কই পেলাম?

    আবার কীর্তন চলিতে লাগিল। কীর্তনিয়া শ্রীমতীর দশা বর্ণনা করিতেছেন (Kathamrita)—

    “কোকিল-কুলকুর্বতি কলনাদম্‌”

    কোকিলের কলনাদ শুনে শ্রীমতির বজ্রধ্বনি বলে মনে হচ্ছে। তাই জৈমিনির নাম কচ্ছেন। আর বলছেন, “সখি, কৃষ্ণ বিরহে এ প্রাণ থাকিবে না—রেখো দেহ তমালের ডালে।”

    গোস্বামী রাধাশ্যামের মিলন গান গাহিয়া (Kathamrita) কীর্তন সমাপ্ত করিলেন।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 200: “তুমি সন্ধ্যা তুমি গায়ত্রী, তুমি জগধাত্রী, গো মা, তুমি অকুলের ত্রাণকর্ত্রী, সদাশিবের মনোরমা”

    Ramakrishna 200: “তুমি সন্ধ্যা তুমি গায়ত্রী, তুমি জগধাত্রী, গো মা, তুমি অকুলের ত্রাণকর্ত্রী, সদাশিবের মনোরমা”

    ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    অষ্টম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ২৭শে মে

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    জগন্মাতার পূজা ও আত্মপূজা—‘বিপদনাশিনী’ মন্ত্র ও নৃত্য 

    ঠাকুর (Ramakrishna) গঙ্গাস্নান করিয়া কালীঘরে গিয়াছেন। সঙ্গে মাস্টার। ঠাকুর পূজার আসনে উপবিষ্ট হইয়া, মার পাদপদ্মে ফুল দিতেছেন, মাঝে মাঝে নিজের মাথায়ও দিতেছেন ও ধ্যান করিতেছেন।

    অনেকক্ষণ পরে ঠাকুর আসন হইতে উঠিলেন। ভাবে বিভোর, নৃত্য করিতেছেন। আর মুখে মার নাম করিতেছেন। বলিতেছেন, “মা বিপদনাশিনী গো, বিপদনাশিনী!” দেহধারণ করলেই দুঃখ বিপদ, তাই বুঝি জীবকে শিখাইতেছেন তাঁহাকে ‘বিপদনাশিনী’ এই মহামন্ত্র উচ্চারণ (Kathamrita) করিয়া কাতর হইয়া ডাকিতে।

    পূর্বকথা—শ্রীরামকৃষ্ণ ও ঝামাপুকুরের নকুড় বাবাজী 

    এইবার ঠাকুর (Ramakrishna) নিজের ঘরের পশ্চিম বারান্দায় আসিয়া উপবিষ্ট হইয়াছেন। এখনও ভাবাবেশ রহিয়াছে। কাছে রাখাল, মাস্টার, নকুড়, বৈষ্ণব প্রভৃতি। নকুড় বৈষ্ণবকে ঠাকুর ২৮/২৯ বৎসর ধরিয়া জানেন। যখন তিনি প্রথম কলিকাতায় আসিয়া ঝামাপুকুরে ছিলেন ও বাড়ি বাড়ি পূজা করিয়া বেড়াইতেন, তখন নকুড় বৈষ্ণবের দোকানে আসিয়া মাঝে মাঝে বসিতেন ও আনন্দ (Kathamrita) করিতেন। পেনেটীতে রাঘব পণ্ডিতের মহোৎসবে উপলক্ষে নকুড় বাবাজী ইদানীং ঠাকুরকে প্রায় বর্ষে বর্ষে দর্শন করিতেন। নকুড় ভক্ত বৈষ্ণব, মাঝে মাঝে তিনিও মহোৎসব দিতেন। নকুড় মাস্টারের প্রতিবেশী। ঠাকুর ঝামাপুকুরে যখন ছিলেন, গোবিন্দ চাটুজ্যের বাড়িতে থাকিতেন। সেই পুরাতন বাটী নকুড় মাস্টারকে দেখাইয়াছিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ জগন্মাতার নামকীর্তনানন্দে 

    ঠাকুর ভাবাবেশে গান গাইতেছেন:

    কীর্তন

    (১)।        সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনোমোহিনী ৷
    তুমি আপন সুখে আপনি নাচ, আপনি দাও মা করতালি ৷৷
    আদিভূতা সনাতনী, শূন্যরূপা শশিভালি ৷
    ব্রহ্মাণ্ড ছিল না যখন (তুই) মুণ্ডমালা কোথায় পেলি ৷৷
    সবে মাত্র তুমি যন্ত্রী, আমরা তোমার তন্ত্রে চলি ৷
    যেমন করাও তেমনি করি মা, যেমন বলাও তেমনি বলি ৷৷
    নির্গুণে কমলাকান্ত দিয়ে বলে মা গালাগালি ৷
    সর্বনাশী ধরে অসি ধর্মাধর্ম দুটো খেলি ৷৷

    (২)।       আমার মা ত্বং হি তারা
    তুমি ত্রিগুণধরা পরাৎপরা।
    আমি জানি মা ও দীন-দয়াময়ী, তুমি দুর্গমেতে দুখহরা ৷
    তুমি সন্ধ্যা তুমি গায়ত্রী, তুমি জগধাত্রী, গো মা
    তুমি অকুলের ত্রাণকর্ত্রী, সদাশিবের মনোরমা ৷
    তুমি জলে, তুমি স্থলে, তুমি আদ্যমূলে গো মা
    আছ সর্বঘটে অর্ঘ্যপুটে সাকার আকার নিরাকারা।

    (৩)।       গোলমালে মাল রয়েছে, গোল ছেড়ে মাল বেছে নাও।

    (৪)।       মন চল যাই, আর কাজ নাই, তারাও ও তালুকে রে!

    (৫)।       পড়িয়ে ভবসাগরে, ডোবে মা তনুর তরী;
    মায়া-ঝড় মোহ-তুফান ক্রমে বাড়ে গো শঙ্করী।

    (৬)।       মায়ে পোয়ে দুটো দুখের কথা কি।
    কারুর হাতির উপর ছি, কারু চিঁড়ের উপর খাসা দই ৷

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 199: “গোপীদের এমনি নিষ্ঠা বৃন্দাবনের মোহনচূড়া, পীতধড়াপরা রাখালকৃষ্ণ ছাড়া আর কিছু ভালবাসবে না”

    Ramakrishna 199: “গোপীদের এমনি নিষ্ঠা বৃন্দাবনের মোহনচূড়া, পীতধড়াপরা রাখালকৃষ্ণ ছাড়া আর কিছু ভালবাসবে না”

    ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    অষ্টম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ২৭শে মে

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    ঠাকুর (Ramakrishna) শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে নিজের ঘরে দাঁড়াইয়া আছেন ও ভক্তসঙ্গে কথা কহিতেছেন (Kathamrita)। আজ রবিবার, ১৪ই জ্যৈষ্ঠ, কৃষ্ণা পঞ্চমী; ২৭শে মে, ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দ। বেলা ৯টা হইবে। ভক্তেরা ক্রমে ক্রমে আসিয়া জুটিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টার প্রভৃতি ভক্তদের প্রতি)—বিদ্বেষভাব ভাল নয়, শাক্ত, বৈষ্ণব, বৈদান্তিক এরা ঝগড়া করে, সেটা ভাল নয়। পদ্মলোচন বর্ধমানের সভাপণ্ডিত ছিল; সভায় বিচার হচ্ছিল,—শিব বড় না ব্রহ্মা বড়। পদ্মলোচন বেশ বলেছিল—আমি জানি না, আমার সঙ্গে শিবেরও আলাপ নেই, ব্রহ্মারও আলাপ নেই। (সকলের হাস্য)

    “ব্যাকুলতা থাকলে সব পথ দিয়েই তাঁকে পাওয়া যায়। তবে নিষ্ঠা থাকা ভাল। নিষ্ঠাভক্তির আর-একটি নাম অব্যভিচারিণী ভক্তি। যেমন এক ডেলে গাছ, সোজা উঠেছে। ব্যভিচারিণী ভক্তি যেমন পাঁচ ডেলে গাছ। গোপীদের এমনি নিষ্ঠা যে, বৃন্দাবনের মোহনচূড়া, পীতধড়াপরা রাখালকৃষ্ণ ছাড়া আর কিছু ভালবাসবে না। মথুরায় যখন রাজবেশ, পাগড়ি মাথায় কৃষ্ণকে (Ramakrishna) দর্শন করলে তখন তারা ঘোমটা দিলে। আর বললে, ইনি আবার কে? এঁর সঙ্গে আলাপ করে আমরা কি দ্বিচারিণী হব?

    “স্ত্রী যে স্বামীর সেবা করে সেও নিষ্ঠাভক্তি, দেবর ভাসুরকে খাওয়ায়, পা ধোয়ার জল দেয়, কিন্তু স্বামীর সঙ্গে অন্য সম্বন্ধ। সেইরূপ নিজের ধর্মতেও নিষ্ঠা হতে পারে। তা বলে অন্য ধর্মকে ঘৃণা (Kathamrita) করবে না। বরং তাদের সঙ্গে মিষ্ট ব্যবহার করবে।”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 198: “সখি, এ প্রাণ তো থাকিবে না—রেখো দেহ তমালের ডালে, আর আবার গায়ে কৃষ্ণনাম লিখে দিও”

    Ramakrishna 198: “সখি, এ প্রাণ তো থাকিবে না—রেখো দেহ তমালের ডালে, আর আবার গায়ে কৃষ্ণনাম লিখে দিও”

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

    ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    সপ্তম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ১৩ই মে

    শ্রীরামকৃষ্ণ হরিকীর্তনানন্দে — হরিভক্তি-প্রদায়িনী সভায় ও রামচন্দ্রের বাটীতে শ্রীরামকৃষ্ণ

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) কলিকাতায় কাঁসারীপাড়া হরিভক্তি-প্রদায়িনী সভায় শুভাগমন করিয়াছেন; রবিবার (৩১শে) বৈশাখ, শুক্লা সপ্তমী, ১৩ই মে, ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দ। আজ সভার বার্ষিক উৎসব হইতেছে। মনোহরসাঁই-এর কীর্তন হইতেছে।

    ‘মান’ এই পালা গান হইতেছে। সখীরা শ্রীমতীকে বলছেন (Kathamrita), “মান কেন করলি, তবে তুই বুঝি কৃষ্ণের সুখ চাস না।” শ্রীমতী বলছেন, “চন্দ্রাবলীর কুঞ্জে, যাবার জন্য নয়। সেখানে যাওয়া কেন? সে যে সেবা জানে না!”)

    পরের রবিবার (২০-৫-৮৩) রামচন্দ্রের বাটীতে আবার কীর্তন হইতেছে, মাথুর গান। ঠাকুর আসিয়াছেন। বৈশাখ, শুক্লা চতুর্দশী; ৭ই জ্যৈষ্ঠ। মাথুর গান হইতেছে, শ্রীমতী কৃষ্ণের বিরহে অনেক কথা বলিতেছেন, ”বালিকা অবস্থা থেকেই শ্যামকে দেখতে ভালবাসতাম। সখি, নখের ছনদ দিন গুণিতে ক্ষয় হয়ে গেছে। দেখ, তিনি যে মালা দিয়েছেন, সে মালা শুকায়ে গিয়েছে, তবু ফেলি নাই। কৃষ্ণচন্দ্রের উদয় কোথা হল? সে চন্দ্র, মান রাহুর ভয়ে বুঝি চলে গেল! হায়, সেই কৃষ্ণ মেঘকে আবার কবে দর্শন হবে; আর কি দেখা হবে! বঁধু, প্রাণ ভরে তোমায় কখনও দেখিতে পাই নাই; একে দুটি চোখ তাতে নিমিখ্‌, তাতে বারিধারা। তাঁর শিরে ময়ূর পাখা যেন স্থির বিজলী। ময়ূরগণ সেই মেঘ দেখে পাখা তুলে নৃত্য করত।

    “সখি, এ প্রাণ তো থাকিবে (Kathamrita) না—রেখো দেহ তমালের ডালে, আর আবার গায়ে কৃষ্ণনাম লিখে দিও!”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) বলিতেছেন (Kathamrita), “তিনি আর তাঁর নাম অভেদ; তাই শ্রীমতী এইরূপ বলছেন। যেই রাম সেই নাম।” ঠাকুর ভাবাবিষ্ট হইয়া এই মাথুর কীর্তন গান শুনিতেছেন। গোস্বামী কীর্তনিয়া এই সকল গান গাইতেছেন। আগামী রবিবারে আবার দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ওই গান হইবে। তাহার পরের শনিবারে আবার অধরের বাড়িতে ওই কীর্তন হইবে।

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 197: “তুমি আমাদের পিতা, আমাদের সদ্বুদ্ধি দাও—তোমাকে নমস্কার, আমাদিগকে বিনাশ করিও না”

    Ramakrishna 197: “তুমি আমাদের পিতা, আমাদের সদ্বুদ্ধি দাও—তোমাকে নমস্কার, আমাদিগকে বিনাশ করিও না”

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ২রা মে

    নন্দনবাগান ব্রাহ্মসমাজে রাখাল, মাস্টার প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে

    শ্রীমন্দিরদর্শন ও উদ্দীপন—শ্রীরাধার প্রেমোন্মাদ

    ব্রাহ্মোপাসনা ও শ্রীরামকৃষ্ণ 

    এইবার উপাসনা আরম্ভ হবে। উপাসনার বৃহৎ প্রকোষ্ঠ ব্রাহ্মভক্তে পরিপূর্ণ হইল। কয়েকটি ব্রাহ্মিকা ঘরের উত্তরদিকে চেয়ারে আসিয়া বসিলেন—হাতে সঙ্গীতপুস্তক।

    পিয়ানো ও হারমোনিয়াম সংযোগে ব্রহ্মসঙ্গীত গীত হইতে জাগিল। সঙ্গীত শুনিয়া ঠাকুরের (Ramakrishna) আনন্দের সীমা রহিল না। ক্রমে উদ্বোধন—প্রার্থনা—উপাসনা। বেদীতে উপবিষ্ট আচার্যগণ বেদ হইতে মন্ত্রপাঠ করিতে লাগিলেন:

    ‘ওঁ পিতা নোঽসি পিতা নোবোধি। নমস্তেস্তু মা মা হিংসীঃ।

    ‘তুমি আমাদের পিতা, আমাদের সদ্বুদ্ধি দাও—তোমাকে নমস্কার। আমাদিগকে বিনাশ করিও না।’

    ব্রাহ্মভক্তেরা সমস্বরে আচার্যের সহিত বলিতেছেন:

    ওঁ সত্যং জ্ঞানমনন্তং ব্রহ্ম। আনন্দরূপমমৃতংযদ্বিভাতি।
    শান্তং শিবমদ্বৈতম্‌ শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্‌।

    এইবার আচার্যগণ স্তব করিতেছেন:

    ওঁ নমস্তে সতে তে জগৎকারণায়
    নমস্তে চিতে সর্বলোকাশ্রয়ায়। ইত্যাদি।

    স্তোত্রপাঠের পর আচার্যেরা প্রার্থনা করিতেছেন:

    অসতো মা সদ্‌গময়। তমসো মা জ্যোতির্গময়।
    মৃত্যোর্মাঽমৃতং গময়। …আবিরাবীর্ম এধি।
    …রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্‌।

    স্ত্রোত্রাদি পাঠ শুনিয়া ঠাকুর (Ramakrishna) ভাবাবিষ্ট হইতেছেন। এইবার আচার্য প্রবন্ধ পাঠ করিতেছেন।

    অক্রোধ পরমানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণ—অহেতুক কৃপাসিন্ধু 

    উপাসনা হইয়া গেল। ভক্তদের লুচি, মিষ্টান্ন আদি খাওয়াইবার উদ্যোগ হইতেছে। ব্রাহ্মভক্তেরা অধিকাংশই নিচের প্রাঙ্গণে ও বারান্দায় বায়ুসেবন করিতেছেন।

    রাত নয়টা হইল। ঠাকুরের দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ফিরিয়া যাইতে হইবে। গৃহস্বামীরা আহূত সংসারীভক্তদের লইয়া খাতির করিতে করিতে এত ব্যতিব্যস্ত হইয়াছেন যে, ঠাকুরের আর কোন সংবাদ (Kathamrita) লইতে পারিতেছেন না।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (রাখাল প্রভৃতির প্রতি)—কিরে কেউ ডাকে না যে রে!

    রাখাল (সক্রোধে)—মহাশয়, চলে আসুন—দক্ষিণেশ্বরে যাই।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্য)—আরে রোস্‌—গাড়িভাড়া তিন টাকা দুআনা কে দেবে!—রোখ করলেই হয় না। পয়সা নাই আবার ফাঁকা রোখ! আর এত রাত্রে খাই (Kathamrita) কোথা!

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 196: “সংসারী লোকদের ঈশ্বরে অনুরাগ ক্ষণিক—যেমন তপ্ত লৌহে জলের ছিটে দিলে, জল তাতে যতক্ষণ থাকে”

    Ramakrishna 196: “সংসারী লোকদের ঈশ্বরে অনুরাগ ক্ষণিক—যেমন তপ্ত লৌহে জলের ছিটে দিলে, জল তাতে যতক্ষণ থাকে”

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ২রা মে

    নন্দনবাগান ব্রাহ্মসমাজে রাখাল, মাস্টার প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে

    শ্রীমন্দিরদর্শন ও উদ্দীপন—শ্রীরাধার প্রেমোন্মাদ

    “মন্দির দেখলে তাঁকেই মনে পড়ে—উদ্দীপন হয়। যেখানে তাঁর কথা হয় সেইখানে তাঁর আবির্ভাব হয়,—আর সকল তীর্থ উপস্থিত হয়। এ-সব জায়গা দেখলে ভগবানকেই মনে পড়ে।

    “একজন ভক্ত বাবলাগাছ দেখে ভাবাবিষ্ট হয়েছিল!—এই মনে করে যে, এই কাঠে ঠাকুর (Ramakrishna) রাধাকান্তের বাগানের জন্য কুড়ুলের বাঁট হয়।

    “একজন ভক্তের এরূপ গুরুভক্তি যে, গুরুর পাড়ার লোককে দেখে ভাবে বিভোর হয়ে গেল!

    “মেঘ দেখে—নীলবসন দেখে—চিত্রপট দেখে—শ্রীমতীর কৃষ্ণের উদ্দীপন হত। তিনি এই সব দেখে উন্মত্তের ন্যায় ‘কোথায় কৃষ্ণ!’ বলে (Kathamrita) ব্যাকুল হতেন।”

    ঘোষাল—উন্মাদ তো ভাল নয়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—সে কি গো? একি বিষয়চিন্তা করে উন্মাদ, যে অচৈতন্য হবে? এ অবস্থা যে ভগবানচিন্তা করে হয়! প্রেমোন্মাদ, জ্ঞানোন্মাদ—কি শুন নাই?

    উপায়—ঈশ্বরকে ভালবাসা ও ছয় রিপুকে মোড় ফিরানো 

    একজন ব্রাহ্মভক্ত—কি উপায়ে তাঁকে পাওয়া যায়?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—তাঁর উপর ভালবাসা।—আর এই সদাসর্বদা বিচার—ঈশ্বরই সত্য, জগৎ অনিত্য।

    “অশ্বত্থই সত্য—ফল দুদিনের জন্য।”

    ব্রাহ্মভক্ত—কাম, ক্রোধ, রিপু রয়েছে, কি করা যায়?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ছয় রিপুকে ঈশ্বরের দিকে মোড় ফিরিয়ে দাও।

    “আত্মার সহিত রমণ করা, এই কামনা।

    “যারা ঈশ্বরের পথে বাধা দেয় তাদের উপর ক্রোধ। তাঁকে পাবার লোভ। ‘আমার আমার’ যদি করতে হয়, তবে তাঁক লয়ে। যেমন—আমার কৃষ্ণ, আমার রাম। যদি অহংকার করতে হয় তো বিভীষণের মতো!—আমি রামকে প্রণাম করেছি—এ-মাথা আর কারু কাছে অবনত করব না।”

    ব্রাহ্মভক্ত—তিনিই যদি সব করাচ্ছেন, তাহলে আমি পাপের জন্য দায়ী নই?

    Free Will, Responsibility (পাপের দায়িত্ব

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—দুর্যোধন ওই কথা বলেছিল (Kathamrita),

    “ত্বয়া হৃষিকেশ হৃদিস্থিতেন, যথা নিযুক্তোঽস্মি তথা করোমি।

    “যার ঠিক বিশ্বাস—‘ঈশ্বরই কর্তা আর আমি অকর্তা’—তার পাপ কার্য হয় না। যে নাচতে ঠিক শিখেছে তার বেতালে পা পড়ে না।

    “অন্তর শুদ্ধ না হলে ঈশ্বর আছেন বলে বিশ্বাসই হয় না!”

    ঠাকুর উপাসনাগৃহে সমবেত লোকগুলিকে দেখিতেছেন ও বলিতেছেন—“মাঝে মাঝে এরূপ একসঙ্গে ঈশ্বরচিন্তা ও তাঁর নামগুণকীর্তন করা খুব ভাল।

    “তবে সংসারী লোকদের ঈশ্বরে অনুরাগ ক্ষণিক—যেমন তপ্ত লৌহে জলের ছিটে দিলে, জল তাতে যতক্ষণ থাকে!”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 195: “নরেন্দ্র আমায় বলেছিল, সমাজমন্দির প্রণাম করে কি হয়?”

    Ramakrishna 195: “নরেন্দ্র আমায় বলেছিল, সমাজমন্দির প্রণাম করে কি হয়?”

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ২রা মে

    নন্দনবাগান ব্রাহ্মসমাজে রাখাল, মাস্টার প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে

    শ্রীমন্দিরদর্শন ও উদ্দীপন—শ্রীরাধার প্রেমোন্মাদ

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) নন্দনবাগান ব্রাহ্মসমাজ-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে বসিয়া আছেন। ব্রাহ্মভক্তদের সহিত কথা (Kathamrita) কহিতেছেন। সঙ্গে রাখাল, মাস্টার প্রভৃতি আছেন। বেলা পাঁচটা হইবে।

    ৺কাশীশ্বর মিত্রের বাগান বড়ি নন্দনবাগানে। তিনি পূর্বে সদরওয়ালা ছিলেন। আদি ব্রাহ্মসমাজভুক্ত ব্রহ্মজ্ঞানী। তিনি নিজের বাড়িতেই দ্বিতলায় বৃহৎ প্রকোষ্ঠমধ্যে ঈশ্বরের উপাসনা করিতেন, আর ভক্তদের নিমন্ত্রণ করিয়া মাঝে মাঝে উৎসব করিতেন। তাঁহার স্বর্গরোহণের পর শ্রীনাথ, যজ্ঞনাথ প্রভৃতি তাঁহার পুত্রগণ কিছুদিন ওইরূপ উৎসব করিয়াছিলেন। তাঁহারাই ঠাকুরকে অতি যত্ন করিয়া নিমন্ত্রণ করিয়া আনিয়াছেন।

    ঠাকুর প্রথমে আসিয়া নিচে একটি বৈঠকখানাঘরে আসন গ্রহণ করিয়াছিলেন। সে ঘরে ব্রাহ্মভক্তগণ ক্রমে ক্রমে আসিয়া একত্রিত হইয়াছিলেন। শ্রীযুক্ত রবীন্দ্র (ঠাকুর) প্রভৃতি ঠাকুরবংশের ভক্তগণ এই উৎসবক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন।

    আহূত হইয়া ঠাকুর ভক্তসঙ্গে দ্বিতলায় উপাসনামন্দিরে গিয়া উপবেশন করিলেন। উপাসনার গৃহের পূর্বধারে বেদী রচনা হইয়াছে। দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটি ইংরেজী বাদ্যযন্ত্র (Piano) রহিয়াছে। ঘরের উত্তরাংশে কয়েকখানি চেয়ার পাতা আছে। তাহারই পূর্বধারে দ্বার আছে—অন্তঃপুরে যাওয়া যায়।

    সন্ধ্যার সময় উৎসবের উপাসনা আরম্ভ হইবে। আদি ব্রাহ্মসমাজের শ্রীযুক্ত ভৈরব বন্দ্যোপাধ্যায় দু-একটি ভক্তসঙ্গে বেদীতে বসিয়া উপাসনাকার্য সম্পন্ন করিবেন।

    গ্রীষ্মকাল—আজ বুধবার (২০শে বৈশাখ), চৈত্র কৃষ্ণা দশমী তিথি। ২রা মে, ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দ। ব্রাহ্মভক্তেরা অনেকে নিচের বৃহৎ প্রাঙ্গণে বা বারান্দায় বেড়াইতেছেন। শ্রীযুক্ত জানকী ঘোষাল প্রভৃতি কেহ কেহ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের (Ramakrishna) কাছে উপাসনাগৃহে আসিয়া আসন গ্রহণ করিয়াছেন। তাঁহার মুখে ঈশ্বরীয় কথা শুনিবেন। ঘরে প্রবেশ করিবামাত্র বেদীর সম্মুখে ঠাকুর প্রণাম করিলেন। আসন গ্রহণ করিয়া রাখাল, মাস্টার প্রভৃতিকে কহিতেছেন—

    নরেন্দ্র আমায় বলেছিল(Kathamrita), ‘সমাজমন্দির প্রণাম করে কি হয়?’

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 194: “সত্ত্বগুণ যেন সিঁড়ির শেষ ধাপ, তারপরেই ছাদ, মানুষের স্বধাম হচ্ছে পরব্রহ্ম”

    Ramakrishna 194: “সত্ত্বগুণ যেন সিঁড়ির শেষ ধাপ, তারপরেই ছাদ, মানুষের স্বধাম হচ্ছে পরব্রহ্ম”

    ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ২২শে এপ্রিল

    শ্রীরামকৃষ্ণ ও আচার্য শ্রীবেচারাম — বেদান্ত ও ব্রহ্মতত্ত্ব প্রসঙ্গে

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—যখন তিনি সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় করেন তখন তাঁকে সগুণ ব্রহ্ম, আদ্যাশক্তি বলি। যখন তিনি তিন গুণের অতীত তখন তাঁকে নির্গুণ ব্রহ্ম, বাক্য-মনের অতীত বলা যায়; পরব্রহ্ম।

    “মানুষ তাঁর মায়াতে পড়ে স্ব-স্বরূপকে ভুলে যায়। সে যে বাপের অনন্ত ঐশ্বর্যের অধিকারী তা ভুলে যায়। তাঁর মায়া ত্রিগুণময়ী। এই তিনগুণই ডাকাত, সর্বস্ব হরণ করে; স্ব-স্বরূপকে ভুলিয়ে দেয়। সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ—তিন গুণ। এদের মধ্যে সত্ত্বগুণই ঈশ্বরের পথ দেখিয়ে দেয়। কিন্তু ঈশ্বরের কাছে সত্ত্বগুণও নিয়ে যেতে পারে না।

    “একজন ধনী বনপথ দিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় তিনজন ডাকাত এসে তাকে ঘিরে ফেলল ও তার সর্বস্ব হরণ করলে। সব কেড়ে-কুড়ে নিয়ে একজন ডাকাত বললে, ‘আর একে রেখে কি হবে? একে মেরে ফেল’—এই বলে তাকে কাটতে এল। দ্বিতীয় ডাকাত বললে, ‘মেরে ফেলে কাজ নেই, একে আষ্টে-পিষ্টে বেঁধে এইখানেই ফেলে রেখে যাওয়া যাক। তাহলে পুলিসকে খবর দিতে পারবে না।’ এই বলে ওকে বেঁধে রেখে ডাকাতরা চলে গেল। খানিকক্ষণ পরে তৃতীয় ডাকাতটি ফিরে এল। এসে বললে, ‘আহা তোমার বড় লেগেছে, না? আমি তোমার বন্ধন খুলে দিচ্ছি।’ বন্ধন খুলবার পর লোকটিকে সঙ্গে করে নিয়ে ডাকাত পথ দেখিয়ে দেখিয়ে চলতে লাগল। সরকারী রাস্তার কাছে এসে বললে, ‘এই পথ ধরে যাও, এখন তুমি অনায়াসে নিজের বাড়িতে যেতে পারবে।’ লোকটি বললে, ‘সে কি মহাশয়, আপনিও চলুন; আপনি আমার কত উপকার করলেন। আমাদের বাড়িতে গেলে আমরা কত আনন্দিত হব।’ ডাকাতটি বললে, ‘না, আমার ওখানে যাবার জো নাই, পুলিশে ধরবে।’ এই বলে সে পথ দেখিয়ে দিয়ে চলে গেল।

    “প্রথম ডাকাতটি তমোগুণ, যে বলেছিল, ‘একে রেখে আর কি হবে, মেরে ফেল।’ তমোগুণে বিনাশ হয়। দ্বিতীয় ডাকাতটি রজোগুণ; রজোগুণে মানুষ সংসারে বদ্ধ হয়, নানা কাজ জড়ায়। রজোগুণ ঈশ্বরকে ভুলিয়ে দেয়। সত্ত্বগুণ যেন সিঁড়ির শেষ ধাপ। তারপরেই ছাদ। মানুষের স্বধাম হচ্ছে পরব্রহ্ম। ত্রিগুনাতীত না হলে ব্রহ্মজ্ঞান হয় না।”

    আচার্য—বেশ সব কথা হল।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—(সহাস্যে)—ভক্তের স্বভাব কি জানো? আমি বলি তুমি শুন, তুমি বল আমি শুনি! তোমরা আচার্য, কত লোককে শিক্ষা দিচ্ছ। তোমরা জাহাজ, আমরা জেলেডিঙি। (সকলের হাস্য)

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 193: “তাঁকে দর্শন হলে মানুষ আনন্দে বিহ্বল হয়ে যায়, চুপ হয়ে যায়। খবর কে দেবে? বুঝাবে কে?”

    Ramakrishna 193: “তাঁকে দর্শন হলে মানুষ আনন্দে বিহ্বল হয়ে যায়, চুপ হয়ে যায়। খবর কে দেবে? বুঝাবে কে?”

    ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ২২শে এপ্রিল

    শ্রীরামকৃষ্ণ ও আচার্য শ্রীবেচারাম — বেদান্ত ও ব্রহ্মতত্ত্ব প্রসঙ্গে

    আচার্য—আজ্ঞা হাঁ, বেদান্তে ওইরূপ কথাই (Kathamrita) আছে।

    নির্গুণ ব্রহ্ম ‘অবাঙ্মনসোগোচরম্‌’—ত্রিগুণাতীতম্‌ 

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—লবণপুত্তলিকা সাগর মাপতে গিছিল, ফিরে এসে আর খবর দিলে না। এক মতে আছে শুকদেবাদি দর্শন-স্পর্শন করেছিল, ডুব দেয় নাই।

    “আমি বিদ্যাসগরকে বলেছিলাম, সব জিনিস এঁটো হয়ে গেছে, কিন্তু ব্রহ্ম উচ্ছিষ্ট হয় নাই। অর্থাৎ ব্রহ্ম কি, কেউ মুখে বলতে পারে নাই। মুখে বললেই জিনিসটা এঁটো হয়। বিদ্যাসাগর পণ্ডিত, শুনে ভারী খুশি।

    “কেদারের ওদিকে শুনেছি বরফে ঢাকা পাহাড় আছে। বেশি উচ্চে উঠলে আর ফিরতে হয় না। যারা বেশি উচ্চেতে কি আছে, গেলে কিরূপ অবস্থা হয়—এ-সব জানতে গিয়েছে, তারা ফিরে এসে, আর খবর দেয় নাই।

    “তাঁকে দর্শন হলে মানুষ আনন্দে বিহ্বল হয়ে যায়, চুপ হয়ে যায়। খবর কে দেবে? বুঝাবে কে?

    “সাত দেউড়ির পর রাজা। প্রত্যেক দেউড়িতে এক-একজন মহা ঐশ্বর্যবান পুরুষ (Ramakrishna) বসে আছেন। প্রত্যেক দেউড়িতেই শিষ্য জিজ্ঞাসা করছে, এই কি রাজা? গুরুও বলছেন, না; নেতি নেতি। সপ্তম দেউড়িতে গিয়ে যা দেখলে, একেবারে অবাক! আনন্দে বিহ্বল। আর জিজ্ঞাসা করতে হল না ‘এই কি রাজা?’ দেখেই সব সংশয় চলে গেল।”

    আচার্য—আজ্ঞে হাঁ, বেদান্তে (Kathamrita) এইরূপই সব আছে।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 192: “দেখ ঈশ্বরকে কতভাবে সম্ভোগ  করে! শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য, মধুর—নানাভাবে”

    Ramakrishna 192: “দেখ ঈশ্বরকে কতভাবে সম্ভোগ  করে! শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য, মধুর—নানাভাবে”

    ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ২২শে এপ্রিল

    শ্রীরামকৃষ্ণ ও আচার্য শ্রীবেচারাম — বেদান্ত ও ব্রহ্মতত্ত্ব প্রসঙ্গে

    সন্ধ্যার পর আদিসমাজের আচার্য শ্রীযুক্ত বেচারাম বেদীতে বসিয়া উপাসনা করিলেন। মাঝেমাঝে ব্রহ্মসঙ্গীত ও উপনিষদ্‌ হইতে পাঠ হইতে লাগিল। উপাসনান্তে শ্রীরামকৃষ্ণের (Ramakrishna) সঙ্গে বসিয়া আচার্য অনেক আলাপ করিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—আচ্ছা, নিরাকারও সত্য আর সাকারও সত্য; আপনি কি বল?

    সাকার-নিরাকার চিন্ময়রূপ ও ভক্ত 

    আচার্য—আজ্ঞা, নিরাকার যেমন Electric Current (তড়িৎ-প্রবাহ) চক্ষে দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—হাঁ, দুই সত্য। শুধু নিরাকার বলা কিরূপ জানো (Kathamrita)? যেমন রোশনচৌকির একজন পোঁ ধরে থাকে—তার বাঁশির সাত ফোকর সত্ত্বেও। কিন্তু আর-একজন দেখ কত রাগ-রাগিণী বাজায়! সেরূপ সাকারবাদীরা দেখ ঈশ্বরকে কতভাবে সম্ভোগ  করে! শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য, মধুর—নানাভাবে।

    “কি জানো, অমৃতকুণ্ডে কোনও রকমে পড়া। তা স্তব করেই হোক অথবা কেউ ধাক্কা মেরেছে আর তুমি কুণ্ডে পড়ে গেছ, একই ফল। দুই জনেই অমর হবে!

    “ব্রাহ্মদের পক্ষে জল বরফ উপমা ঠিক। সচ্চিদানন্দ যেন অনন্ত জলরাশি। মহাসাগরের জল, ঠান্ডা দেশে স্থানে স্থানে যেমন বরফের আকার ধারণ করে, সেইরূপ ভক্তি হিমে সেই সচ্চিদানন্দ (সগুণ ব্রহ্ম) ভক্তের জন্য সাকার রূপ ধারণ করেন। ঋষিরা সেই অতীন্দ্রিয় চিন্ময় রূপ দর্শন করেছিলেন, আবার তাঁর সঙ্গে কথা কয়েছিলেন। ভক্তের প্রেমের শরীর, ‘ভাগবতীতনু’ দ্বারা সেই চিন্ময় রূপ দর্শন হয়।

    আবার আছে, ব্রহ্ম (Ramakrishna) অবাঙ্মনসোগোচর। জ্ঞানসূর্যের তাপে সাকার বরফ গলে যায়। ব্রহ্মজ্ঞানের পর, নির্বিকল্পসমাধির পর, আবার সেই অনন্ত, বাক্যমনের অতীত, অরূপ নিরাকার ব্রহ্ম!

    “ব্রহ্মের স্বরূপ মুখে বলা (Kathamrita) যায় না, চুপ হয়ে যায়। অনন্তকে কে মুখে বোঝাবে! পাখি যত উপরে উঠে, তার উপর আরও আছে, আপনি কি বল?”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

LinkedIn
Share