মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: যে কোনও আইনের অধীনে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে তার গ্রেফতারের কারণ লিখিত আকারে অবশ্যই জানাতে হবে। শুধু তাই নয় সেই কারণটি এমন ভাষায় জানাতে হবে যা অভিযুক্ত ব্যক্তি বুঝতে পারেন। ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সাংবিধানিক নিশ্চয়তা আরও দৃঢ় করে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত বৃহস্পতিবার এমনই এক ঐতিহাসিক রায়ে ঘোষণা করেছে। মুম্বইয়ের একটি ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলার জেরে বৃহস্পতিবার বিচারপতি বিআর গাভাই ও বিচারপতি এজি মাসিহের বেঞ্চ এই রায় দেয়।
কেন এই রায়
কোনও মামলায় কোনও ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলেও বহু ক্ষেত্রে পুলিশ গ্রেফতারির কারণ জানায় না ধৃতকে— এমন অভিযোগ ওঠে। এই নিয়ে বহু মামলা হয়েছে বিভিন্ন আদালতে। এবার তেমনই একটি মামলায় পুলিশকে কঠোর নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি বিআর গভাই ও বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসিহ–র বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, এখন থেকে গ্রেফতারির দু’ঘণ্টার মধ্যে ধৃতকে তিনি যে ভাষা বুঝতে পারেন, সেই ভাষায় লিখিত ভাবে গ্রেফতারির কারণ জানাতে হবে। একইসঙ্গে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, কোনও ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পরে আদালতের কাছে হাজির করার কমপক্ষে দু’ঘণ্টা আগে কারণ জানাতে হবে। না হলে সেই গ্রেফতারি বেআইনি বলে চিহ্নিত হবে।
কী বলল শীর্ষ আদালত
শুধু পিএমএলএ বা ইউএপিএ ধারায় নয়, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (পূর্বতন ভারতীয় দণ্ডবিধি) যে কোনও ধারায় গ্রেফতারির ক্ষেত্রেও একই নির্দেশ প্রযোজ্য। কেন এই নির্দেশ সেই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের ব্যাখ্যা, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হলে তার কারণ যদি ধৃতকে না–জানানো হয়, তা হলে তা তাঁর মৌলিক অধিকার হরণের সামিল। এই নির্দেশ দিতে গিয়ে আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, গ্রেফতারির কারণ ধৃতের ভাষায় জানানো বাধ্যতামূলক। যদি কোনও ক্ষেত্রে গ্রেফতারকারী অফিসার গ্রেফতারির মুহূর্তে লিখিত কারণ জানানোর অবস্থায় না–থাকেন, তা হলে ধৃতকে ওই সময়েই মৌখিক ভাবে কারণ জানাতে হবে। তারপরে যত দ্রুত সম্ভব, তাঁকে আদালতে পেশ করার অন্তত দু’ঘণ্টা আগে লিখিত ভাবে সেই তথ্য জানাতেই হবে পুলিশকে। আর যদি আদালতে পেশের অন্তত দু’ঘণ্টা আগে লিখিত ভাবে কারণ না–জানানো হয়, তা হলে সেই গ্রেফতারি বেআইনি এবং তাঁকে মুক্তি দিতে হবে।
সবাইকে মানতে হবে এই রায়
মামলাটি শুরু হয় মিহির রাজেশ শাহের পক্ষ থেকে, যিনি অভিযোগ করেন যে তাকে গ্রেফতারের সময় লিখিতভাবে কারণ জানানো হয়নি। বোম্বে হাইকোর্ট বিষয়টি স্বীকার করলেও অপরাধের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে গ্রেফতারকে বৈধ ঘোষণা করে। তবে সুপ্রিম কোর্ট একে বৃহত্তর সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে স্পষ্ট জানায় যে, অপরাধের গুরুত্ব কখনও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকারের ক্ষতি করতে পারে না। সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) তার রায়ের কপি সব হাইকোর্টে রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে এবং সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য সচিবদের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে, যাতে সারা দেশে অভিন্নভাবে এই রায় কার্যকর করা হয়। বিচারপতিরা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন—কোনও তদন্ত সংস্থা, যেমন পুলিশ, ইডি, সিবিআই বা অন্য কোনও সংস্থা, এই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত নয়।
