মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম মালিকাধীন দোকানগুলি থেকে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ তৈরি করছে বলে অভিযোগ (Digha Jagannath Temple)। এ নিয়ে সামনে এসেছে রাজ্য সরকারের একটি নির্দেশিকা, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে মমতা সরকার রেশন ডিলারদেরকে এই নির্দেশ দিচ্ছে। মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি ১ নম্বর ব্লকের একটি লিস্ট সামনে এসেছে, যেখানে চারটি দোকানদারকে গজা এবং প্যারা তৈরি করতে দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ভগবান জগন্নাথের চিরাচরিত প্রসাদ হল এই গজা এবং প্যারা। এই চারটি দোকানের মধ্যে তিনজনের মালিক মুসলমান। এভাবেই মমতা সরকারের এই সিদ্ধান্তে সরব হয়েছে অনেক মহল। অনেকেই সমালোচনার সুরে বলছেন—সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ধরা পড়ছে সংখ্যালঘু তোষণ এবং সরকার এই সংখ্যালঘু তোষণটাও করছে হিন্দুদের বিশ্বাসে আঘাত দিয়ে।
কী বললেন অমিত মালব্য (Digha Jagannath Temple)?
ভারতীয় জনতা পার্টির আইটিসেলের প্রধান অমিত মালব্য এ নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) মাধ্যমে। সেখানে অমিত মালব্য লিখছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দু ভাবাবেগকে আঘাত দিয়ে মিষ্টির দোকান এবং রেশন ডিলারদেরকে গজা ও প্যারা প্রসাদ আকারে প্রস্তুত করে বিতরণ করতে বলছেন যাদের বেশিরভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের। এভাবেই তোষণের রাজনীতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করছেন বলে অভিযোগ আনেন অমিত মালব্য। তিনি পুরীর জগন্নাথ ধামের সঙ্গে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের তুলনাও টানেন। বিজেপি নেতা বলেন, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে অ-হিন্দুদের প্রবেশ নিষেধ, যা একটি পুরনো প্রথা। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে সেই প্রথা ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এখানে হিন্দু প্রথা মানা হচ্ছে না, হিন্দু রীতি মানা হচ্ছে না (Digha Jagannath Temple)। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের শুধুমাত্র ধর্মনিরপেক্ষতার কারণে পর্দার আড়ালে রাখা হচ্ছে।
কী বলছেন শুভেন্দু অধিকারী?
অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ঘটনা আসলে তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু তোষণ। বিরোধী দলনেতা বলেন, প্রথমত বেআইনিভাবে ওবিসি তালিকা তৈরি করে মুসলিম ভোট নিজের দিকে আনতে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর দেখা যাচ্ছে, হিন্দুদের পবিত্র রীতিতে আঘাত হানছেন তিনি। এটা কোনও বৈচিত্র্য নয় এটা হচ্ছে হিন্দুদের বিশ্বাসে আঘাত। শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে স্থানীয় হিন্দু দোকানদার আছেন যাঁরা চিরাচরিতভাবে মন্দিরের প্রসাদ তৈরি করেন, তাঁদের বাদ দিয়ে মুসলিমদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিজের ইমেজ তৈরির চেষ্টা করছেন মমতা। এটা হচ্ছে তোষণের দ্বিতীয় পর্যায়, যেখানে শতাব্দী প্রাচীন হিন্দু রীতিকে (Digha Jagannath Temple) ভেঙেছেন তিনি শুধুমাত্র ভোটের জন্য।
প্রসাদ তৈরি হয় শ্রদ্ধা ও ভক্তির মাধ্যমে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকারের এমন সিদ্ধান্তের ফলে মুর্শিদাবাদ থেকে দীঘা পর্যন্ত হিন্দু ধর্মের নেতারা এবং ভক্তরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দীঘার এক স্থানীয় পণ্ডিত বলেন, এটা শুধুমাত্র খাদ্যের বিষয় নয়। নৈবেদ্য, যা ভগবানের উদ্দেশ্যে অর্পণ করা হয়, তা শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঙ্গে তৈরি করা হয়। যাঁরা এটি তৈরি করেন ভক্তির সঙ্গে করেন। প্রসাদ একটি আধ্যাত্মিক বিষয়। কিন্তু যাঁরা তৈরি করছেন, তাঁরা যদি পবিত্র রীতিতে বিশ্বাস না রাখেন, তাহলে সেই প্রসাদের পবিত্রতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে (Digha Jagannath Temple)।
কী বলছেন ভক্তরা (Digha Jagannath Temple)
এই অঞ্চলের ভক্তরা মনে করছেন এইভাবেই পবিত্র ধর্মীয় রীতিনীতি এবং ধর্ম পালনকে রাজনৈতিক প্রভাবে প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। মুর্শিদাবাদ জেলার রানি নগরের একজন স্থানীয় বাসিন্দা এই ঘটনায় অবাক হয়ে বলেন, যেখানে একটি মন্দির তৈরি হচ্ছে বৈষ্ণব প্রথা মেনে, সেখানকার প্রসাদ কিভাবে এভাবে তৈরি হতে পারে?
আরেকজন বলেন, হিন্দুরা কি কোনও মসজিদের রীতিনীতি ঠিক করে? তাহলে কেন হিন্দুদের প্রসাদে সরকার হস্তক্ষেপ করছে এবং তার বাণিজ্যিকীকরণ করছে এভাবে? বিজেপি এই ঘটনার প্রতিবাদে মমতা সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছে। গেরুয়া শিবিরের তরফে বলা হয়েছে— দুর্গা মূর্তি বিসর্জন বাধা পায় পশ্চিমবঙ্গে, রামনবমী শোভাযাত্রায় হামলা চালানো হয় অথচ ইফতার করা হয় সরকারি সহযোগিতায়, মাদ্রাসাগুলিকে ফান্ডিং করা হয়।
গত এপ্রিলেই উদ্বোধন করেন মমতা
জানা যাচ্ছে, শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই পশ্চিমবঙ্গে ৩০টি এমন ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে হিন্দু ধর্মের শোভাযাত্রার অনুমতি দেওয়া হয়নি, রুট বদল করা হয়েছে, অথবা তা করতে হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায়। অন্যদিকে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটেনি, বরং তারা রাজ্য সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসেই দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সেই সময় জগন্নাথ মন্দিরকে (Jagannath Temple) একটি ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেন। কিন্তু বর্তমানে সেই কেন্দ্রকেই ঘিরে দেখা যাচ্ছে সংখ্যালঘুতোষণের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।