Tag: US President Donald Trump

  • PM Modi in Croatia: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা, প্রধানমন্ত্রী মোদির ঐতিহাসিক ক্রোয়েশিয়া সফরে চার-চুক্তি

    PM Modi in Croatia: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা, প্রধানমন্ত্রী মোদির ঐতিহাসিক ক্রোয়েশিয়া সফরে চার-চুক্তি

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ইউরোপ হোক বা এশিয়া— সংঘর্ষের সমাধান যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমেই হওয়া উচিত। ক্রোয়েশিয়ায় (PM Modi in Croatia) ফের একবার শান্তির পক্ষে সওয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একইসঙ্গে দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি ভারতের অবিচল অবস্থানের কথাও তুলে ধরেন তিনি। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সাইপ্রাস, কানাডার পর ক্রোয়েশিয়া সফরে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের এই গুরুত্বপূর্ণ দেশে মোদির সফর ছিল কর্মব্যস্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ, যা ভারত-ক্রোয়েশিয়া সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।

    মোদিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা

    বুধবার ক্রোয়েশিয়ার জাগরেবে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। এই দেশে মোদি (PM Modi in Croatia) প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পা রাখলেন। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। বিমানবন্দরে মোদিকে স্বাগত জানান ক্রোয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ প্লেনকোভিচ (Andrej Plenkovic)। অপারেশন সিঁদুরের পর এই প্রথম ত্রিদেশীয় সফর করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ক্রোয়েশিয়া সফর তাঁর তালিকায় আগে থেকেই ছিল। এই সফরে দুই দেশ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে সই করেছে।

    ক্রোয়েশিয়ায় প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ

    ক্রোয়েশিয়ার প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গেও দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি (PM Modi in Croatia)। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে পৌঁছানোর পর, সেখানকার ভারতীয়রা “বন্দে মাতরম” এবং “ভারত মাতা কি জয়” ধ্বনি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় নৃত্যও পরিবেশন করা হয়। এদিন সাদা পোশাক পরা ক্রোয়েশিয়ান নাগরিকদের একটি দল ‘গায়ত্রী মন্ত্র’ এবং অন্যান্য সংস্কৃত শ্লোক উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে স্বাগত জানান। এই অনুষ্ঠান ভারত ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক বন্ধন তুলে ধরে। এই মুহূর্তের ভিডিওটি প্রধানমন্ত্রীর অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা হয়েছে। পোস্টে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, “সংস্কৃতির বন্ধন দৃঢ় এবং প্রাণবন্ত! জাগরেবে স্বাগত জানানোর একটি অংশ এখানে দিলাম। ক্রোয়েশিয়ায় ভারতীয় সংস্কৃতির এত শ্রদ্ধা দেখে খুশি হলাম।” আরেকটি পোস্টে, প্রধানমন্ত্রী মোদি জাগরেবে তাঁর উষ্ণ অভ্যর্থনার একটি সুন্দর দুই মিনিটের ভিডিও শেয়ার করেছেন। এর মধ্যে প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও রয়েছে। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “জাগরেবে স্মরণীয় স্বাগত, উষ্ণতা এবং স্নেহে পরিপূর্ণ!”

    প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ প্লেনকোভিচের সঙ্গে বৈঠক

    প্রধানমন্ত্রী মোদি (PM Modi in Croatia) জাগরেবে ক্রোয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রে প্লেনকোভিচের সঙ্গে প্রতিনিধি-স্তরের বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে এক যৌথ প্রেস বিবৃতিতে উভয় নেতা বিশ্ব শান্তি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সরবরাহ শৃঙ্খল শক্তিশালী করার পাশাপাশি, ওষুধ শিল্প, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিচ্ছন্ন ও ডিজিটাল প্রযুক্তি, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জাহাজ নির্মাণ, সাইবার নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান মোদি। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, যার আওতায় যৌথ প্রশিক্ষণ, সামরিক বিনিময় এবং শিল্প পর্যায়ের অংশীদারিত্ব থাকবে।

    সফরকালে দুই দেশের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে:

    কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সহযোগিতা

    ২০২৬-২০৩০ সালের সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি

    ২০২৫-২০২৯ সালের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক কর্মসূচি

    জাগরেব বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দি চেয়ার স্থাপন

    রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ

    আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে, প্রধানমন্ত্রী মোদি (PM Modi in Croatia) ক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোরান মিলানোভিচের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি প্রতিশ্রুতির কথা পুনরুল্লেখ করেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক ফোরামগুলিতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি ক্রোয়েশিয়ায় যোগব্যায়ামের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার প্রশংসা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে ২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস যথাযোগ্য উৎসাহে পালিত হবে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়ে মোদি বলেন, সন্ত্রাসবাদ মানবতার শত্রু। তিনি এপ্রিল ২২ তারিখে ভারতের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর ক্রোয়েশিয়ার জনগণ ও সরকারের সহানুভূতির জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

    ভারত-ক্রোয়েশিয়া সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা

    প্রধানমন্ত্রী প্লেনকোভিচ জাগরেবে প্রধানমন্ত্রী মোদির (PM Modi in Croatia) সম্মানে এক নৈশভোজের আয়োজন করেন। যা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এক নতুন মাত্রা দেয়। বিদায় বেলায় প্রধানমন্ত্রী মোদি ক্রোয়েশিয়ার সরকার ও জনগণের উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁর কথায়, এই সফর ভারত-ক্রোয়েশিয়া সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে যা শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির অভিন্ন লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত। এই ঐতিহাসিক সফরের মাধ্যমে ভারত ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও সুদৃঢ় হয়েছে, বলে মনে করছে কৃটনৈতিক মহল।

  • F-35 Stealth Fighter: ট্রাম্পের এফ-৩৫ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা উচিত ভারতের, কেন? রইল ১০ কারণ

    F-35 Stealth Fighter: ট্রাম্পের এফ-৩৫ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা উচিত ভারতের, কেন? রইল ১০ কারণ

    সুশান্ত দাস: ‘‘আমেরিকার শত্রু হওয়া বিপজ্জনক হতে পারে, কিন্তু বন্ধু হওয়া সর্বনাশা।’’ কথাটা অন্য কেউ নয়, বলেছিলেন প্রয়াত মার্কিন বিদেশসচিব তথা সেদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ সামলানো হেনরি কিসিঞ্জার, যিনি রিচার্ড নিক্সন এবং জেরাল্ড ফোর্ডের মতো প্রেসিডেন্টের অধীনে কাজ করেছেন। ফলে, আমেরিকার মতো দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব দেশের বুঝতে হবে ঠিক কী করণীয়। কিন্তু, সমস্যা একটা জায়গায়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের (US President Donald Trump) মতো ব্যক্তিত্ব মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে থাকলে, এটা বোঝা দায় যে, কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল। ফলে, সম্পর্ক ঠিক রাখতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে এমন ভুল হয়ে যেতে পারে যে, তার মাশুল দীর্ঘদিন ধরে চোকাতে হতে পারে। তাই, সব বিষয় যাচাই করে, পরখ করে এগনোই শ্রেয়।

    বিশ্ববাসীর চোখ কপালে…

    গত মাসে হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ভারতকে তাদের ‘নয়নের মণি’ পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান (F-35 Stealth Fighter) দেওয়ার প্রস্তাব আচমকাই পেড়ে দেন ট্রাম্প। বলা বাহুল্য, এই প্রস্তাবের খবরে সারা বিশ্ববাসীর চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা হয়। কারণ, এই বিমান এতটাই আধুনিক ও উন্নত যে, নেটো-গোষ্ঠীভুক্ত দেশ বা জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ঘনিষ্ঠ সহযোগী অথবা ইজরায়েলের মতো সব ঋতুর বন্ধু ছাড়া অন্য কোনও দেশকে তা বেচেনি ওয়াশিংটন। প্রযুক্তিগতভাবে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও আধুনিক যুদ্ধবিমান। এই যুদ্ধবিমান ভালো কিনা তা প্রশ্ন অবান্তর। কিন্তু, যে প্রশ্নটা করা উচিত, তা হল— ভারতের জন্য এই বিমান কি আদৌ প্রয়োজন? মার্কিন প্রস্তাব অনুযায়ী, এই বিমানকে (F-35 Sale Offer) সরাসরি কিনতে হবে। সেখানে রাশিয়া জানিয়েছে, ভারতকে তারা এদেশেই তাদের পঞ্চম প্রজন্মের সু-৫৭ যুদ্ধবিমান (Sukhoi Su-57) উৎপাদন করার প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও অনুমতি দিতে রাজি।

    মার্কিন যুদ্ধবিমান অপরিচিত…

    ভারতের সঙ্গে রুশ যুদ্ধবিমানের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান স্তম্ভ রুশ-নির্মিত সু-৩০। এর পাশাপাশি রয়েছে মিগ-২৯/২৯কে ও মিগ-২১ বাইসন। এছাড়া, ভারতীয় বায়ুসেনা দীর্ঘদিন ধরে ফ্রান্সের একাধিক যুদ্ধবিমানও ব্যবহার করে আসছে। সেই তালিকায় রয়েছে— জাগুয়ার, মিরাজ ও রাফাল। আজ পর্যন্ত ভারত কোনও মার্কিন ফাইটার জেট ব্যবহার করেনি। ফলে, এখন আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান (F-35 Stealth Fighter) ভারতীয় বায়ুসেনার বর্তমান ইকোসিস্টেমের জন্য আদৌ যুক্তিসঙ্গত কিনা, সেই প্রশ্ন উঠতে পারে।

    সামরিক বিশেষজ্ঞদের দাবি…

    এমতাবস্থায়, একাধিক সামরিক বিশেষজ্ঞের মতে, মার্কিন (বলা ভালো ট্রাম্পের) প্রস্তাব সুকৌশলে প্রত্যাখ্যান করা উচিত ভারতের। তবে, সরাসরি ‘না’ না বলে বরং বদলে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম বা সামরাস্ত্র কেনা যেতে পারে। তাতে সাপও মরবে, আবার লাঠিও ভাঙবে না। সামরিক বিশেষজ্ঞরা নিজেদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে এটা দাবি করেছেন যে, এফ-৩৫ কেনা (F-35 Sale Offer) ভারতের পক্ষে একেবারেই লাভজনক হবে না। উল্টে ক্ষতিই বেশি। কারণ হিসেবে তাঁদের দাবি, এই বিমানের সুবিধা যেমন, অসুবিধাও নেহাত কম নয়, বাস্তবে প্রচুর! তাঁরা জানিয়েছেন, এফ-৩৫ কিনবে কি না, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মোদি সরকার এবং সামরিক শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু, এই বিমানে ব্যবহারে একাধিক প্রতিবন্ধকতা খালি চোখেই ধরা পড়েছে। অসুবিধাগুলি এতটাই স্পষ্ট যে সেগুলিকে কোনও ভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে মত ওই বিশেষজ্ঞদের।

    সবদিক খতিয়ে দেখে আমেরিকার এফ-৩৫ না কেনার ১০টি কারণ তুলে ধরেছেন ওই বিশেষজ্ঞরা—

    কারণ এক…

    এফ-৩৫ (F-35 Stealth Fighter) মূলত একটি ‘উড়ন্ত কম্পিউটার’, যেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। যুদ্ধবিমানের নির্মাতা লকহিড-মার্টিন (Lockheed Martin) কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখে। নিজেদের ‘নয়নের মণি’ বিমানের প্রযুক্তি এবং যন্ত্রাংশ— উভয়ের উপরই কঠোর নিয়ন্ত্রণ রাখে পেন্টাগন। এর অর্থ হল, যে কোনও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ভারতের হাতে ছাড়া হবে না। তার জন্য ভারতে একাধিক মার্কিন কর্মীকে মোতায়েন করতে হবে। আমেরিকার সব ঋতুর বন্ধু ইজরায়েলের মতো মিত্র দেশও এটি করতে পারে না। এতে একদিকে যেমন ভারতে মার্কিন গুপ্তচরবৃত্তির ঝুঁকি বাড়বে, তেমনই ভারতীয় প্রতিরক্ষা ক্রয়ের বিষয়ে মার্কিন হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কঠোর এন্ড-ইউজার মনিটরিং ক্লজ চাপাতে পারে, যাতে ভারত সায় দেবে না।

    কারণ দুই…

    কৌশলগত দিক থেকেও এফ-৩৫ ভারতীয় সামরিক কৌশলের সঙ্গে কতটা খাপ খাবে, সেটিও বড় প্রশ্ন। প্রতিটি এফ-৩৫ বিমান মার্কিন অটোমেটিক লজিস্টিক্স ইনফরমেশন সিস্টেম (এএলআইএস)-এর সঙ্গে যুক্ত। এই প্রযুক্তি দিয়ে বিমানের ওপর প্রতিনিয়ত নজরদারি চালাতে পারে পেন্টাগন (Pentagon)। এমনকি, প্রয়োজনে যে কোনও সময়ে যদি আমেরিকা চায়, তাহলে এটি কার্যত ‘বন্ধ’ করে দিতে পারবে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র চাইলে বিমানের কার্যকারিতা সীমিত করতে পারে। আমেরিকা চাইলে ভারতকে কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে (যেমন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে) এটি ব্যবহার করতে দিতেও আপত্তি জানাতে পারে। একইভাবে, আপত্তি জানাতে পারে নির্দিষ্ট দেশের (যেমন রাশিয়া) সঙ্গে এই বিমান নিয়ে ভারতের যুদ্ধ-মহড়ায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও।

    কারণ তিন…

    সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হল এফ-৩৫ বিমানের দাম, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল খরচের ভার। এক-একটি এফ-৩৫ ফাইটার জেটের (F-35 Stealth Fighter) আনুমানিক দাম ৮ থেকে ১১ কোটি মার্কিন ডলার। ঘণ্টা-প্রতি ওড়ানোর খরচ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ডলার। তার ওপর, যুদ্ধের সময় এফ-৩৫ বিমানের গোটা ফ্লিট উপলব্ধ নাও হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও বর্তমানে এফ-৩৫ ফ্লিটের (F-35 Sale Offer) মাত্র ৫১ শতাংশই উপলব্ধ। ভারতের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ আরও কম হবে। অর্থাৎ, ভারত যদি ৩৬টি বিমান কেনে (রাফালের মতো), তাহলে যে কোনও সময় মাত্র ১৮টি কিংবা তারও কম সংখ্যক বিমান উপলব্ধ থাকবে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এটি সম্পূর্ণ অবাস্তব। এই খরচের জেরে, খোদ মার্কিন বাহিনীই এই বিমান নিয়ে নাকানি-চোবানি খাচ্ছে। সহজ কথায় বলতে গেলে,  এফ-৩৫ একটি সাদা হাতি হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে, খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্প এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের উচ্চ দামের সমালোচনা করে তাকে ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ বলে দাগিয়েছিলেন। আজ তিনিই ভারতকে এই বিমান বেচতে উদ্যোগী। প্রশ্ন উঠছে, কেন?

    কারণ চার…

    নেটো গোষ্ঠীভুক্ত দেশ না হওয়ায় পরবর্তীকালে, এফ-৩৫ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হতে পারে ভারতকে। কারণ, ভারতের কাছে যে কোনও বিক্রি মার্কিন কংগ্রেসের মাধ্যমে পাস করা কঠিন হবে এবং লকহিড থেকে খুচরা যন্ত্রাংশ এবং আপগ্রেড পেতে ভারতের সম্ভবত মার্কিন আইনসভার নিয়মিত অনুমোদনের প্রয়োজন হতে পারে। ট্রাম্প একবার চিত্রের বাইরে চলে গেলে অথবা তার চার বছরের মেয়াদের দ্বিতীয়ার্ধে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়লে, প্রতিহিংসাপরায়ণ ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেস এফ-৩৫ প্রোগ্রামের (F-35 Sale Offer) কী ক্ষতি করতে পারে তা অনুমান করাই যায়।

    কারণ পাঁচ…

    এফ-৩৫ (F-35 Stealth Fighter) একটি এক ইঞ্জিন-বিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। ভারতীয় বায়ুসেনা সাধারণত দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট যুদ্ধবিমান পছন্দ করে, কারণ এটি নিরাপত্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের মতো দেশে, যেখানে প্রচুর গরম ও ধুলোবালি ও আর্দ্রতা থাকে এবং যেখানে বার্ড হিটের (পাখির ধাক্কা) ঝুঁকি অনেক বেশি, এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট যুদ্ধবিমান একটি বড় ঝুঁকি হতে পারে। একটি ইঞ্জিন বিকল হলে, দ্বিতীয় ইঞ্জিনের সহায়তায় পাইলট নিরাপদে অবতরণ করতে পারে। কিন্তু এক ইঞ্জিন থাকলে, বিমান হারানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর সেই বিমান যদি এফ-৩৫ এর মতো ব্যয়বহুল হয়, তাহলে তো বড় ক্ষতি।

    কারণ ছয়…

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফাইটার নিলে সমস্যাটা মূলত হবে গ্রাউন্ড ক্রু-দের। যাঁরা এই ফাইটারের ডেটা লিঙ্কের উপরে কাজ করবেন। কারণ, ভারত তাঁর আকাশসীমা রক্ষায় ব্যবহার করে রুশ এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম। সমস্যা হল, এস-৪০০ সিস্টেমের সঙ্গে এফ-৩৫ কখনই কাজ করতে পারবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই দুয়ের মধ্যে ডেটা-লিঙ্কের অনুমতি দেবে না। কারণ, তারা কখনই চাইবে না যে, এস-৪০০ আকাশে এফ-৩৫কে চিহ্নিত করতে পারুক। ফলে, আইডেন্টফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো বা আইএফএফ সিস্টেমে আপডেট করে ফ্রেন্ডলি-ফায়ার থেকে এফ-৩৫ বিমানকে রক্ষা করার কাজটা প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জিং হবে। অর্থাৎ, নিজেদের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে কমিউনিকেট না হলে, যুদ্ধের সময় আকাশে ভারতের এফ-৩৫ বিমানকেই ধ্বংস করার জন্য উড়ে যাবে ভারতেরই এস-৪০০।

    কারণ সাত…

    এফ-৩৫ (F-35 Stealth Fighter) কিনলে ভারতকে মার্কিন প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত নিয়ন্ত্রণের আওতায় চলে যেতে হবে। কারণ, সফটওয়্যারের অ্যাক্সেস না পাওয়ার কারণে ভারত এই ধরনের ফাইটারের নিজের অস্ত্র মিসাইলের মত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে পারবে না। অর্থাৎ এই ফাইটার নিলে ভারতকে আলাদাভাবে আমেরিকার অস্ত্র কিনতে হবে ব্যবহারের জন্য। আমেরিকা চাইবে, নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র গছাতে (F-35 Sale Offer)। তাতে, তাদের ব্যবসা বাড়বে। অন্যদিকে, আখেরে ভারতের ক্ষতি হবে। কারণ, ভারতের নিজের দেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের গবেষণা, উৎপাদন ও ব্যবহার মার খাবে। এতে, প্রতিরক্ষা অর্থনীতির ক্ষতি। ইতিমধ্যেই, ভারতকে এফ-৩৫ বিমানের সঙ্গে তাদের এক গুচ্ছ সামরাস্ত্রর তালিকাও দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। বলা হয়েছে, এফ-৩৫ কিনলে এগুলো ওর সঙ্গে পেতে পারো (মোদ্দা কথা, কিনতে হবে)।

    কারণ আট…

    শুধু ক্ষেপণাস্ত্র-সমস্যাই সব নয়। ভারত যদি এফ-৩৫ কেনে (F-35 Sale Offer), তাহলে মিড-এয়ার রিফুয়েলিং বা মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরার ক্ষেত্রে একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, ভারতের (আবার রুশ-নির্মিত) আইএল-৭৮ ট্যাঙ্কারগুলো প্রোব-অ্যান্ড-ড্রোগ পদ্ধতি ব্যবহার করে। কিন্তু এফ-৩৫ ফ্লাইং বুম পদ্ধতির জন্য ডিজাইন করা। আবার, ভারত যদি এফ-৩৫ বিমানে প্রোব সিস্টেম ইন্টিগ্রেট করতে চায়, তাহলে তাতে রাজি হবে না আমেরিকা। ফলে, এফ-৩৫ বিমানে তেল ভরার জন্য আলাদা করে বোয়িং কেসি পেগাসাস বা এ৩৩০ এমআরটিটি-র মতো ফ্লাইং বুম বৈশিষ্ট থাকা ট্যাঙ্কার কিনতে হবে, যা ভারতের খরচ বাড়াবে।

    কারণ নয়…

    এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের (F-35 Stealth Fighter) অন্যতম প্রধান বিক্রয়-বৈশিষ্ট্য হল এর স্টেলথ প্রযুক্তি, যা শত্রুর রেডার এড়াতে সক্ষম। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী রেডার ও ইনফ্রারেড ট্র্যাকিং সিস্টেমের প্রভুত উন্নতির ফলে স্টেলথ ফাইটারগুলোর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আজ না হলেও, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এফ-৩৫-কে ট্র্যাক করতে সক্ষম রেডার বানিয়ে ফেলবে আমেরিকার প্রতিপক্ষ দেশগুলি। সেই সময়, নিজের অ্যাডভান্টেজ বা কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলবে এফ-৩৫। এমনিতেই, বলা হচ্ছে যে, রুশ এস-৫০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম উন্নত ইনফ্রারেড সার্চ অ্যান্ড ট্র্যাক (IRST) সেন্সর প্রযুক্তির সাহায্যে স্টেলথ বিমানের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারে।

    এও দাবি যে, সু-৫৭ ও ইউরোপীয় টাইফুনের মতো বিমানে ব্যবহৃত এই অত্যাধুনিক ইনফ্রারেড সেন্সর আমেরিকার দুই পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ বিমান এফ-২২ ও এফ-৩৫ ফাইটারগুলোকেও (F-35 Stealth Fighter) ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূর থেকে সনাক্ত করতে সক্ষম। পাশাপাশি, যুদ্ধক্ষেত্রে কখনই এক ধরনের রেডার ব্যবহৃত হয় না। বরং একাধিক রেডারের নেটওয়ার্ক শত্রু বিমান চিহ্নিত করে। স্টেলথ বিমান একটি নির্দিষ্ট কোণ থেকে রেডার এড়াতে সক্ষম হলেও, একাধিক কোণ থেকে রেডারের তরঙ্গ প্রতিফলিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা স্টেলথ প্রযুক্তিকে সীমিত করে ফেলে।

    কারণ দশ…

    ভারত যদি এফ-৩৫ কেনে (F-35 Sale Offer), তাহলে নিজস্ব দেশীয় পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান অ্যামকা তৈরির কাজ বড় ধাক্কা খাবে। অ্যামকার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। ইতিহাস বলছে, যখনই কোনও দেশ আমেরিকার যুদ্ধবিমান কেনে, তখন তাদের নিজস্ব পঞ্চম-প্রজন্মের ফাইটার প্রোগ্রাম পিছিয়ে যায়। ভারতের ক্ষেত্রেও তা হতে পারে। তাই ভারতের উচিত আত্মনির্ভরতা বজায় রেখে অ্যামকা প্রকল্পে মনোযোগ দেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে আমেরিকা নয়, ভারতই অন্যদের পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার সরবরাহ করতে পারে।

  • PM Modi: ‘‘মোদি ভালো বন্ধু, দরকষাকষিতে আমার থেকেও টাফ’’, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে মত ট্রাম্পের

    PM Modi: ‘‘মোদি ভালো বন্ধু, দরকষাকষিতে আমার থেকেও টাফ’’, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে মত ট্রাম্পের

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মার্কিন সফরে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক সম্পন্ন হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Modi)। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূয়সী প্রশংসা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মোদির সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, ‘‘আলোচনার টেবিলে দরকষাকষির ক্ষেত্রে আমার থেকেও ‘টাফ’ হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। দরকষাকষির ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে টেক্কা দিতে পারেন না। কারণ এক ইঞ্চিও জমি ছাড়েন না মোদি।’’ এদিন মোদিকে নিজের বই ‘আওয়ার জার্নি টুগেদার’-ও উপহার দেন ট্রাম্প (Donald Trump)। এই বইতে রয়েছে ‘হাউডি মোদি’ (আমেরিকায় মোদি ও ট্রাম্পের সভা) এবং ‘নমস্তে ট্রাম্প’-র (ভারতে মোদি ও ট্রাম্পের সভা) ছবি ও বর্ণনা। একইসঙ্গে ২০২০ সালে ভারত সফরে তাজমহলে যাওয়ার ছবিও মোদিকে (PM Modi) উপহার দিয়েছেন ট্রাম্প।

    ‘মোদি খুব ভালো বন্ধু’, বললেন ট্রাম্প

    একইসঙ্গে ট্রাম্প দাবি করেন, ‘‘জো বাইডেনের প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না।’’ কিন্তু তাঁর আমলে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের কথায়, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি (PM Modi) আমেরিকায় এসেছেন এটা দুর্দান্ত ব্যাপার। দীর্ঘদিন ধরেই উনি আমার খুব ভালো বন্ধু। আমাদের দারুণ সম্পর্ক ছিল। ওই চার বছরে (আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম শাসনকাল – ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল) আমরা সেই দারুণ সম্পর্কটা বজায় রেখেছিলাম। আর আমরা ফের সেটা শুরু করেছি।’’

    কী বললেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)

    প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে দুই দেশ। মোদির (PM Modi) কথায়, ‘‘আমেরিকার মানুষ তো খুব ভালোভাবেই MAGA-র কথা জানেন – মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন (ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের স্লোগান)। আর ভারতীয়রা বিকশিত ভারত ২০৪৭ (মিশনের) দিকে এগিয়ে চলেছেন। আমেরিকার ভাষায় সেটা হল – মেক ইন্ডিয়া গ্রেট এগেন (MIGA)। যখন আমেরিকা এবং ভারত একইসঙ্গে কাজ করে, তখন এই MAGA এবং MIGA জুড়ে হয়ে যায় সমৃদ্ধির জন্য মেগা জোট।’’

LinkedIn
Share