তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
পায়েস হোক কিংবা পুলি-পিঠে, শীতের আমেজ জমিয়ে দেয় বাঙালির রান্নাঘরের এই মরশুমের বিশেষ রান্না! হিমেল হাওয়া আর কুয়াশা যেমন শীতের জানান দেয়, তেমনি বাঙালির রান্না ঘরে নতুন গুড়ের গন্ধ ম-ম করলেই শীতের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। পিঠে-পুলি-পায়েসের মতো নানান রকমের পদে গুড়ের ব্যবহার হয়। কিন্তু বাঙালির এই চিরকালীন প্রিয় নলেন গুড় (Date Palm Jaggery) কি শুধুই গন্ধে আর স্বাদে এগিয়ে থাকে! একেবারেই নয়! স্বাদের পাশপাশি স্বাস্থ্যের জন্যও নলেন গুড় (Nolen Gur Health Benefits) এগিয়ে থাকবে। এমনটাই জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, শীতের গুড় শরীরের পক্ষে খুবই উপকারি।
গুড় খেলে শরীরে কী প্রভাব পড়ে?
রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে!
পুষ্টিবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, গুড়ে রয়েছে একাধিক খনিজ পদার্থ। গুড় আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো উপাদানে ভরপুর। তাই গুড় খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ে। তাই যেকোনও সংক্রামক রোগ রুখতে শরীর বাড়তি শক্তি পায়। ভোগান্তি কম হয়।
আয়রনের ঘাটতি কমায়!
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, পূর্ব ভারতের মহিলাদের মধ্যে আয়রনের অভাব যথেষ্ট উদ্বেগজনক। বিশেষত বয়ঃসন্ধিকালে থাকা মেয়েদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে। এর ফলে রক্তাল্পতার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি নানান অসুখের ঝুঁকিও বাড়ছে। গুড় খেলে শরীরে আয়রনের জোগান হয়। তাই রক্তাল্পতা রুখতেও সাহায্য করে।
হাড়ের ক্ষয় রুখতে সাহায্য করে!
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হাড়ের ক্ষয় রোগ বাড়ছে। বয়স তিরিশের চৌকাঠ পেরনোর আগেই আর্থ্রাইটিস সহ একাধিক রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। হাড় দূর্বল হওয়ার জেরেই এই ধরনের নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গুড়ে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। তাই গুড় খেলে হাড় মজবুত হয়।
হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে!
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শীতে হজমের সমস্যা বাড়ে। নানান কারণে এর ফলে লিভারেও চাপ পড়ে। গুড় হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাঁরা জানাচ্ছেন, গুড়ে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে। যা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। লিভার সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়!
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গুড়ে ভিটামিন বি ৬ উপাদান থাকে। এই উপাদান মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আবার এই উপাদান মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও বাড়ায়। তাই গুড় খেলে মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
সর্দি-কাশি রুখতে বিশেষ সাহায্য করে!
গুড় রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। পুষ্টিবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, গুড় খেলে সর্দি-কাশি কম হয়। গুড়ে থাকা নানান খনিজ পদার্থ ফুসফুসের সংক্রমণ রুখতেও বিশেষ সাহায্য করে।
গুড় কি চিনির বিকল্প হতে পারে?
পুষ্টিবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, চিনির বিকল্প হিসেবে গুড় ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে গুড় খাওয়ার ক্ষেত্রেও পরিমাণের দিকে নজরদারি প্রয়োজন। গুড়ে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে। ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে গুড় খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাবে। এর ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। আবার ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য নানান জটিলতা তৈরি হতে পারে। তবে রান্নায় চিনির পরিবর্তে গুড় ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার সকালে আদার সঙ্গে অল্প পরিমাণ গুড় মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশি মোকাবিলা আরো সহজ হবে।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
