Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ujjain Mahakal: উজ্জ্বয়িনীর মহাকালেশ্বর মন্দিরের গুরুত্ব জানেন? 

    Ujjain Mahakal: উজ্জ্বয়িনীর মহাকালেশ্বর মন্দিরের গুরুত্ব জানেন? 

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মধ্য প্রদেশের উজ্জ্বয়িনীতে রয়েছে মহাকালেশ্বর (Ujjain Mahakal) মন্দির (Temple)। এটি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের একটি। মঙ্গলবার বিকেলে এই মন্দিরের লোক করিডরের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এজন্য খরচ হয়েছে ৮৫০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে এই করিডর তৈরি করা হয়েছে। এই করিডরের ফলে মধ্যপ্রদেশের পর্যটন শিল্প আরও সমৃদ্ধ হবে বলেও জানান মোদি। এদিন লাল সুতোয় মোড়া ছিল পবিত্র জ্যোতির্লিঙ্গ। বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে বাজানো হয় শঙ্খ-ঘণ্টা। এর পর রীতি মেনে মন্দিরে পুজো করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে এদিন ছিলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানও।

    নশো মিটার দীর্ঘ এই করিডরের উদ্বোধন করে মোদি বলেন, ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মহাকাল লোক করিডরের ফলে পুণ্যার্থীদের মন্দিরে আসতে আরও সুবিধা হবে। এই করিডরেই বিশ্বমানের নানা আধুনিক পরিষেবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাও নিতে পারবেন পুণ্যার্থীরা। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, সে লিঙ্গ তৈরি করা হয় না, স্বয়ম্ভু, নিজে থেকে মাটি ফুঁড়ে বের হয় তাকে  জ্যোতির্লিঙ্গ বলে। ভারতে মোট বারটি জ্যোতির্লিঙ্গ রয়েছে। তারই একটি হল মহাকালেশ্বর। ভগবান শিবের আর এক নাম মহাকাল। কাল শব্দের দুটি অর্থ। এক, সময়, দুই মৃত্যু। যেহেতু ভগবান শিব একই সঙ্গে সময় এবং মৃত্যুর দেবতা, তাই তিনি মহাকাল। উজ্জ্বয়িনীর মহাকালেশ্বর (Ujjain Mahakal) ছাড়াও আরও যে এগারোটি জ্যোর্তিলিঙ্গ রয়েছে, সেগুলি হল, গুজরাটের সোমনাথ ও নাগেশ্বর, অন্ধ্রপ্রদেশের মল্লিকার্জুন, মধ্য প্রদেশের ওঁকারেশ্বর, উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ, ভীমশঙ্কর, ত্র্যম্বকেশ্বর, মহারাষ্ট্রের গৃশ্নেশ্বর, বারাণসীর বিশ্বনাথ, দেওঘরের বৈদ্যনাথ এবং তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম।

    আরও পড়ুন : ভোল বদলে ঢোকার চেষ্টা করছে শহুরে নকশালরা, গুজরাটবাসীকে সতর্ক করলেন মোদি

    উজ্জ্বয়িনীর মহাকালেশ্বর (Ujjain Mahakal) মহাদেবের মন্দিরটি রয়েছে শিপ্রা নদীর পাড়ে। হিন্দুদের একাংশের মতে, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে মহাকালেশ্বরই সব চেয়ে পবিত্র। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ভগবান মহাকালেশ্বরের নির্দেশেই চালিত হয় এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা। কালিদাসের ‘মেঘদূতে’ও উল্লেখ রয়েছে মহাকালেশ্বরের জ্যোতির্লিঙ্গের।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।

  • Guhyakalika Temple: বীরভূমের নলহাটিতে পূজিতা হন দেবী গুহ্যকালী, জানুন ভীষণ দর্শনা এই দেবী সম্পর্কে

    Guhyakalika Temple: বীরভূমের নলহাটিতে পূজিতা হন দেবী গুহ্যকালী, জানুন ভীষণ দর্শনা এই দেবী সম্পর্কে

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান হলো বীরভূম জেলা। এই জেলার তারাপীঠ, ফুল্লরা তলা সমেত সর্বত্র মাতৃসাধনার রীতি রয়েছে। এমনই এক মাতৃ আরাধনা সম্পন্ন হয় নলহাটি শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আকালীপুরে। ভীষণ দর্শনা এই দেবী গুহ্য কালিকা ( গোপন কালী) নামে পরিচিত। আকালীপুরের মন্দিরে (Guhyakalika Temple) গুহ্য কালী হলেন অধিষ্ঠাত্রী দেবী। যে মন্দির ৩০০ বছরের অধিক প্রাচীন বলেই মনে করা হয়। মহারাজা নন্দকুমার এই মন্দির স্থাপন করেছিলেন বলেই জানা যায়। গুহ্যকালী, দেবী কালীর একটি বিশেষ রূপ। দেবীভাগবত পুরাণ মতে, তিনি দেবী শতাক্ষীর শরীর থেকে উৎপন্না অন্যতমা মহাশক্তি। কোনও কোনও সাধক বা তান্ত্রিক এই রূপে কালীর আরাধনা করে থাকেন, তবে গৃহস্থের নিকট এই রূপ “অপ্রকাশ্য”। গুহ্যকালী দ্বিভুজা, সর্পভূষিতা ও খড়্গহস্তা। তাকে সূর্যকালী নামেও অভিহিত করা হয়। যে কোন কালী মূর্তির সাথে আমরা শায়িত অবস্থায় দেবাদিদেব মহাদেব কে দেখতে পাই‌। কিন্তু গুহ্য কালীর মূর্তির সাথে শিব শায়িত অবস্থায় থাকে না‌।

    দেবী গুহ্যকালীর ধ্যানমন্ত্র অনুযায়ী দেবীর গাত্রবর্ণ গাঢ় মেঘের ন্যায়; তিনি লোলজিহ্বা ও দ্বিভুজা; গলায় পঞ্চাশটি নরমুণ্ডের মালা; কটিতে ক্ষুদ্র কৃষ্ণবস্ত্র; স্কন্ধে নাগযজ্ঞোপবীত; মস্তকে জটা ও অর্ধচন্দ্র; কর্ণে শবদেহরূপী অলংকার; হাস্যযুক্তা, চতুর্দিকে নাগফণা দ্বারা বেষ্টিতা ও নাগাসনে উপবিষ্টা; বামকঙ্কণে তক্ষক সর্পরাজ ও দক্ষিণকঙ্কণে অনন্ত নাগরাজ; বামে বৎসরূপী শিব; তিনি নবরত্নভূষিতা; নারদাদিঋষিগণ শিবমোহিনী গুহ্যকালীর সেবা করেন; তিনি অট্টহাস্যকারিণী, মহাভীমা ও সাধকের অভিষ্ট ফলপ্রদায়িনী। গুহ্যকালী নিয়মিত শবমাংস ভক্ষণে অভ্যস্তা। প্রতিবছর কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন গুহ্য কালীর পুজোকে কেন্দ্র করে উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয় আকালীপুরে। সাধারণত  কালীপুজো রাত্রিতে হলেও গুহ্য কালী পুজো রাত্রে হয় না। ভক্তদের বিশ্বাস রয়েছে গুহ্য কালীমাতা রাত্রিতে লীলা করতে বের হন। তাই রাত্রিতে মন্দিরের দরজা বন্ধ রাখার রীতি দেখা যায়। কালী পুজোতেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়না‌‌। 

    আরও পড়ুন: কথিত আছে, দেবী নীল সরস্বতীর আশীর্বাদে জন্ম তারাশঙ্করের, কথাসাহিত্যিক-এর পৈতৃক ভিটের পুজোর কথা জানুন

    মহারাজা নন্দকুমার মন্দির স্থাপন করলেও এই বিচিত্র কালীমূর্তিটি তাঁর দ্বারা নির্মিত হয়নি বলেই কথিত আছে। জনপ্রিয় জনশ্রুতি হলো, মগধরাজ জরাসন্ধ এই মূর্তিটি নির্মাণ করেছিলেন। কালক্রমে বিভিন্ন রাজার হাতে পূজিত হওয়ার পর কাশীরাজ চৈত সিংহের রাজ্যের এক কৃষক তার জমিতে মূর্তিটি খুঁজে পান। সংবাদ পেয়ে চৈত সিংহ মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেবী গুহ্যকালিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান। এদিকে ওয়ারেন হেস্টিংসও এই মূর্তির সন্ধান পেয়ে এটিকে লন্ডনের জাদুঘরে প্রেরণে উদ্যোগী হন। মূর্তিটি হেস্টিংসের হাত থেকে রক্ষা করতে, চৈত সিংহ সেটিকে গঙ্গাবক্ষে লুকিয়ে রাখেন। মহারাজা নন্দকুমার স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেটিকে কাশী থেকে নিজ জন্মস্থান বীরভূমের ভদ্রপুর গ্রামে নিয়ে আসেন। নন্দকুমার নিজে ছিলেন পরম শাক্ত ও দেবী মহাকালীর ভক্ত। ১৭৭৫ সালের গোড়ায় তিনি মুর্শিদাবাদ-বীরভূমের সীমান্তবর্তী আকালীপুর গ্রামে দেবী গুহ্যকালীর মন্দির নির্মাণ শুরু করেন। কিন্তু ওই বছর জুন মাসে তিনি ইংরেজের হাতে বন্দী হলে, মন্দির নির্মাণে ছেদ পড়ে। ফাঁসির পূর্বে তিনি পুত্র গুরুদাসকে তান্ত্রিক মতে দেবী গুহ্যকালীর প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়ে যান। লোকশ্রুতি, ওই বছর ১৫ জুলাই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন হয়েছিল।

    মন্দিরের দক্ষিণে “পঞ্চমুণ্ডী” নামে পরিচিত একটি সিদ্ধাসন রয়েছে। আকালীপুরের দেবী গুহ্যকালীকে ভক্তেরা অতিশয় “জাগ্রত” দেবী মনে করেন। দূর-দূরান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা এই মন্দিরে “মানসিক” করে পূজা দেন।

  • Valmiki Jayanti 2022: আজ বাল্মীকি জয়ন্তী, রামায়ণের রচয়িতার জীবন কথা জানুন

    Valmiki Jayanti 2022: আজ বাল্মীকি জয়ন্তী, রামায়ণের রচয়িতার জীবন কথা জানুন

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মহাকাব্য রামায়ণের রচয়িতা তিনি। মর্যাদা পুরুষোত্তম রামচন্দ্রের বীরত্ব গাথা, তাঁর উন্নত নৈতিক চরিত্র কে সংস্কৃত শব্দের দ্বারা ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি। এরপর বহু ভাষায়, বহু অঞ্চলে তাঁর রচনাকে প্রামাণ্য ধরে রামায়ণের অনুবাদ চলেছে। আজ মহর্ষি বাল্মীকির জন্মতিথি বা জন্মজয়ন্তী (Valmiki Jayanti 2022)। শারদীয়া দুর্গাপূজার পরের পূর্ণিমায় সারাদেশ ব্যাপী মহাসমারোহে পালিত হয় বাল্মীকি জয়ন্তী। কোথাও মহর্ষি বাল্মীকির প্রতিকৃতি কে পুজো করা হয় কোথাও আবার সুসজ্জিত শোভাযাত্রার মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।

    কৃত্তিবাসী রামায়ণের সূচনায় মহর্ষি বাল্মীকির প্রথম জীবনের কাহিনী উল্লেখ রয়েছে। যা কমবেশি আমরা সকলেই শুনেছি। প্রথম জীবনে মহর্ষি বাল্মীকি ছিলেন একজন দস্যু। তাঁর পিতার নাম ছিল প্রচেতা। প্রথম জীবনে বাল্মীকির নাম ছিল রত্নাকর। তিনি দস্যুবৃত্তির দ্বারা পরিবারের ভরণ পোষণ করতেন। একদিন দেবর্ষি নারদ রাজপথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লুণ্ঠনের উদ্দেশ্যে বাল্মীকি নারদের সন্নিকটে উপস্থিত হলে, দেবর্ষি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, দস্যুবৃত্তি করে তিনি যে পাপ করছেন তাঁর এই পাপের ভাগী তাঁর পরিবার হবে কি? নারদের কথায় তিনি তার পরিবারের সদস্যদের এই প্রশ্ন করলে সকলেই জানান যে তাঁর পাপের ভাগী তাঁরা হতে চান না। এরপর দস্যুজীবনের পরম সত্য উপলব্ধি করে তিনি দেবর্ষি নারদের নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করেন। নারদ তাঁকে রাম নাম জপ করতে শেখান এবং বলেন এই নামের দ্বারাই তাঁর পূর্বের পাপ ক্ষয় হবে‌।

    কথিত আছে, দস্যু সাধনায় বসেন এবং ব্রহ্মের বরে কবিত্বশক্তি পান। সাধনাকালে তাঁর দেহ বল্মীকের (সংস্কৃত তে যাকে পিঁপড়ের ঢিবি বলে) স্তুপে ঢেকে গিয়েছিল বলে তাঁর নামকরণ করা হয় বাল্মীকি (Valmiki Jayanti 2022)। এরপর অনেকেই তাঁর কাছ থেকে দীক্ষা নেন ও শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁকে সংস্কৃত ভাষার আদি কবিও বলা হয়। প্রথম সংস্কৃত শ্লোকের রচয়িতা হিসেবে তাঁকেই মানা হয়‌। এই প্রসঙ্গে একটি কাহিনী রয়েছে। মহর্ষি বাল্মীকি একবার তাঁর শিষ্য ভরদ্বাজকে সাথে নিয়ে তমসা-তীর্থে স্নান করতে যাত্রা পথে প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গিক শোভা দেখছিলেন। এমন সময় এক ব্যাধ বাল্মীকির সামনে এক ক্রৌঞ্চযুগলের মধ্যে পুরুষ ক্রৌঞ্চকে তীরবিদ্ধ করে। স্ত্রী ক্রৌঞ্চটি করুণ সুরে বিলাপ করতে থাকে। এই দৃশ্য দেখে ক্রদ্ধ বাল্মীকির মুখ থেকে অভিশাপ বাণীর আকারে উচ্চারিত হয় সৃষ্টির প্রথম শ্লোক :

    মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।
    যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্।।

    – নিষাদ, তুই চিরকাল প্রতিষ্ঠা লাভ করবি না, কারণ তুই কামমোহিত ক্রৌঞ্চমিথুনের একটিকে বধ করেছিস। কথিত আছে এরপর বাল্মিকী ব্রহ্মাকে ব্যাধ এর কথা বলে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। ব্রহ্মা তখন বলেছিলেন, “শোকের সময় এটি তোমার মুখ হতে নিঃসৃত হয়েছে। অতএব, এটি শ্লোক নামে অভিহিত হোক। তুমি এরূপ শ্লোকে রামচরিত্রের আখ্যান রামায়ণ গ্রন্থ রচনা কর।” সেই অনুসারে মুনিবর বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেন। শোক থেকে উৎপন্ন এই শ্লোক সংস্কৃত সাহিত্যের প্রথম শ্লোক হিসেবে গণ্য হয়। পরবর্তীকালে এই শ্লোকের ছন্দেই বাল্মীকি সমগ্র রামায়ণ রচনা করেন। বাল্মীকি রচিত মূল রামায়ণে ২৪,০০০ শ্লোক ছিল। এই রামায়ণ ছয়টি (মতান্তরে সাতটি) কাণ্ড বা খণ্ডে বিভক্ত ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ থেকে ১০০ অব্দের মধ্যে কোনো এক সময়ে এই মহাকাব্য রচিত হয় বলেই ঐতিহাসিকদের ধারণা। মহর্ষি বাল্মীকি রামায়ণ ব্যতীত যোগবশিষ্ঠ নামক অপর এক হিন্দু ধর্মগ্রন্থের রচয়িতা বলেও মনে করা হয়। অশ্বঘোষের বুদ্ধচরিত কাব্যে এই কবির ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে।  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাল্মীকি কর্তৃক রামায়ণ রচনার নেপথ্য-আখ্যান অবলম্বনে বাল্মীকি-প্রতিভা গীতিনাট্যটি রচনা করেছিলেন।

  • Durga Puja: আজ বিদায়ের পালা! জেনে নিন বিজয়া দশমীর অর্থ 

    Durga Puja: আজ বিদায়ের পালা! জেনে নিন বিজয়া দশমীর অর্থ 

    শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: দশমী’ মানেই দুর্গা পুজোর শেষ। বন্ধুদের সাথে রেষ্টুরেন্টে খাওয়া, রাত পর্যন্ত মন্ডপের চেয়ারে বসে আড্ডা, অষ্টমীর সন্ধিক্ষণের উপবাস, মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা দর্শন, নবমীর পুষ্পাঞ্জলি সব কিছুতে ইতি টানে দশমী তিথি‌।  অপেক্ষায় থাকতে হয় আরও একটা বছর। বেশীরভাগ দুর্গাপুজো শেষ হয় দশমীতেই। এই দিনেই মা দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়, কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকে , যেমন বিজয়া দশমী বৃহস্পতিবারে হলে সাধারণত প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় না। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে পিতৃগৃহ মানে সোজা কথায় বাপের বাড়ি ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে পাড়ি দেন দেবী উমা। সেই কারণেই এই তিথিকে ‘বিজয়া দশমী’ বলা হয়। মা উমা সকলকে কাঁদিয়ে নিজের চার সন্তানকে সঙ্গে করে কৈলাসে ফিরে যান।

    দশমী প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের একটি কাহিনী উল্লেখযোগ্য। রানী রাসমণীর জামাতা মথুরবাবু একসময় আবেগপ্রবন হয়ে দশমীর দিনেও মা দুর্গাকে বিসর্জন দেবেন না বলে জেদ ধরে বসেন। তখন রামকৃষ্ণদেব তাঁকে বোঝান, বিজয়ার অর্থ দেবীমা ও সন্তানের বিচ্ছেদ নয়। তিনি আরও বলেন যে, মা কখনও তার সন্তানের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেন না। এতদিন মা দালানে বসে পুজো নিয়েছেন এরপর মা মনের মন্দিরে বসে পুজো নেবেন। এরপরেই মথুর শান্ত হন এবং বিসর্জন দেওয়া হয় মা দুর্গার প্রতিমা।

    আরও পড়ুন: চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পেলেন সুইডেনের বিজ্ঞানী সভান্তে পাবো

    দশমী ঘিরে একটি পৌরাণিক কাহিনীও রয়েছে। পুরাণ অনুযায়ী, মা দুর্গা ন’দিন ন’ রাত্রি ব্যাপী প্রবল যুদ্ধ করেন মহিষাসুরের বিরুদ্ধে। অবশেষে দশমী তিথিতে মায়ের হাতে বধ হয় রম্ভা পুত্র মহিষাসুর। মহিষাসুরমর্দিনী হয়ে ওঠেন মা দুর্গা। ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে এই মহিষাসুর বধের জন্যই ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের তেজ থেকে সৃষ্ট হয়েছিল এক নারী মূর্তি। মহিষাসুরের ওপর ব্রহ্মার বরদান ছিল যে কোন পুরুষ তাকে বধ করতে পারবে না। এই কাহিনী আমরা সকলেই শুনেছি। সমস্ত আসুরিক শক্তির ওপর বিজয় প্রাপ্তি হয়েছিল অত্যাচারী মহিষাসুর বধের মধ্যে দিয়ে। সমস্ত দেবতা কূল বিজয় উৎসবে মেতেছিল। তাই এই একে বিজয়া দশমী বলা হয়।

    অন্য একটি কাহিনী অনুযায়ী, দেবী দুর্গার দক্ষকন্যা সতী হয়ে জন্মগ্রহণ এবং স্বামী নিন্দা সইতে না পেরে মৃত্যুবরণের গল্প আমাদের সকলেরই জানা। এরপর  ৫১টি অংশে সতীর মৃত দেহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার পর শিব যখন তাণ্ডব থামালেন, তখন বিষ্ণু তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন দক্ষরাজকে ক্ষমা করে দিতে। শিব সেই অনুরোধ ফেলতে পারেননি। উপরন্তু সন্তানহারা বাবার দুঃখ ঘোচানোর জন্য তিনি বলেন, এর পরের জন্মে সতী জন্ম নেবেন হিমালয়রাজ হিমাবত কন্যা পার্বতী রূপে। তখন প্রতি বছর বিজয়া দশমীর দিন পার্বতী আসবেন দক্ষপুরীতে। সতীর বাবা-মায়ের সঙ্গে একটি দিনের জন্য দেখা করতে! তাই আজ পার্বতীর ঘরে ফেরার দিনও বটে বলে পৌরাণিক মত রয়েছে‌। এছাড়াও আজকের তিথিতেই রাক্ষসরাজ রাবণের উপর ভগবান রামচন্দ্র বিজয় প্রাপ্ত করেছিলেনবলে মনে করা হয়। তাই এটা বিজয়া দশমী। এদিন ছোটরা বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে, মিষ্টি মুখ করানো হয় মা উমার। মহিলা দের মধ্যে সিঁদুর খেলার রীতি দেখা যায়।

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ। 

  • Durga Puja: মহানবমীর মাহাত্ম্য! জানুন মাতা সিদ্ধিদাত্রীর পৌরাণিক আখ্যান

    Durga Puja: মহানবমীর মাহাত্ম্য! জানুন মাতা সিদ্ধিদাত্রীর পৌরাণিক আখ্যান

    শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: নবরাত্রির শেষ দিনে পূজিতা হন মাতা সিদ্ধিদাত্রী। এই দেবী মা দুর্গার নবম রূপ বলে পরিগণিত হন। ভক্তদের বিশ্বাস মতে , মাতা সিদ্ধিদাত্রী  দেবাদিদেব মহাদেবের শরীরের অংশ। তাই তিনি অর্ধনারীশ্বর নামেও প্রসিদ্ধ। ভক্তদের বিশ্বাস, এই মহাবিশ্ব যখন তৈরী হয়নি, চারিদিকে যখন ঘন অন্ধকার ছিল, প্রাণের চিহ্ন যখন কোথাও ছিল না তখন একটি দৈব আলোকরশ্মি নারী মূর্তির আকার ধারণ করতে থাকে। ইনিই দেবী মহামায়া, মহাশক্তি। এই আদিদেবীর থেকেই জন্ম হয়েছিল ত্রি শক্তির ব্রহ্মা, বিষ্ণু ,
    এবং মহেশ্বর। বিশ্ব বা জগত সংসার পরিচালনার জন্য এই আদিমাতা ত্রিদেব কে দায়িত্ব দেন। এরপরে মহাসাগরের তীরে বসে বহু বছর ধরে  মহামায়ার তপস্যায় রত ছিলেন ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর। তপস্যায় প্রসন্না হয়ে দেবী  তাঁদের সামনে ‘সিদ্ধিদাত্রী’ রূপে প্রকট হন।

    মাতা সিদ্ধিদাত্রী ভগবান ব্রহ্মাকে বিশ্বস্রষ্টার স্রষ্টা, ভগবান বিষ্ণু কে সৃষ্টি ও জগৎ রক্ষার ভূমিকা এবং দেবাদিদেব মহাদেব কে প্রয়োজন হলে জগৎ ধ্বংস করার ভূমিকা প্রদান করেন। ভক্তদের আরো বিশ্বাস , দেবী সিদ্ধিদাত্রী পরবর্তীতে সরস্বতী,লক্ষী, এবং মাতা পার্বতী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। সিদ্ধিদাত্রী মাতা সর্বদাই ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের সাথে শক্তি হিসেবে আছেন , এটা বোঝাতেই তিনি এই ত্রিদেবের পত্নী রূপে অবস্থান করেন‌। পৌরাণিক আখ্যান অনুযায়ী , দেবী সিদ্ধিদাত্রী জগৎ পরিচালনা, পালন এবং সংহারের জন্য অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন এই ত্রিদেবকে। অতিপ্রাকৃত এই আটটি শক্তিকে মার্কণ্ডেয় পুরাণে অষ্টসিদ্ধি  বলা হয়েছে যা দেবী সিদ্ধিদাত্রী দেন।

    সিদ্ধি আট প্রকারের- 

    অণিমা : এই শক্তির দ্বারা দেহ কে আকারে ছোট করা যায়। 

    মহিমা: এই শক্তির দ্বারা দেহকে অসীম প্রসারিত করা যায় ।

    গরিমা : এই শক্তির দ্বারা দেহকে অকল্পনীয় ভারী করা যায়।

    লঘিমা: এই শক্তির দ্বারা দেহ ভারহীন হয়ে যায়।

    প্রাপ্তি: এই শক্তির দ্বারা সর্বভূতে বিরাজ করা যায়।

    প্রাকাম্য: এই শক্তির দ্বারা সমস্ত মনের কামনা পূর্ণ করা যায়।

    ঈশিত্ব : এই শক্তির দ্বারা প্রভুত্ব স্থাপন করা যায়।

    বশিত্ব: এই শক্তির দ্বারা সকলকে পরাধীন রাখা যায়।

    ভক্তদের বিশ্বাস, মার্কন্ডেয় পুরাণ অনুসারে যে ৮ প্রকার সিদ্ধি ,মাতা সিদ্ধিদাত্রী ব্রহ্মা-বিষ্ণু মহেশ্বর কে প্রদান করেছিলেন,মহানবমীর দিন মাতা সিদ্ধিদাত্রীর আরাধনা করলে ভক্তদের মধ্যে এই সকল শক্তির প্রবেশ ঘটে।

    অন্য একটি পৌরাণিক আখ্যান অনুযায়ী, শিব মাতা অম্বিকার সাধনা করেছিলেন এবং মাতা তখন সিদ্ধিদাত্রী হয়ে দেবাদিদেব মহাদেব কে বরপ্রদান করেছিলেন। সর্ব সিদ্ধির অধীশ্বর হওয়ার বর, দেবাদিদেব মহাদেব পেয়েছিলেন, মাতা অম্বিকার কাছ থেকে । তাই ভগবান শিবকে সিদ্ধিনাথ বা সিদ্ধেশ্বর বলা হয়।

    অষ্টমীর সন্ধিপূজার সময়ই  দুর্গা মাতা মহিষাসুরকে  বধ করেছিলেন বলে অনেক পন্ডিতের মত রয়েছে।  আবার সন্ধিপুজোর সময়ই দেবী দুর্গার অন্য রূপ চামুন্ডা মাতা চন্ড ও মুন্ড কে বধ করেছিলেন বলে অনেক ভক্তের ধারণা রয়েছে।  অসুরবধের আনন্দে নবমী তিথিতে কাত্যায়ন ঋষির আশ্রমে দেবীর বন্দনায় মেতে উঠেছিলেন দেবতারা। এখানেই নবমী পুজোর মাহাত্ম্য বা গুরুত্ব বলে পন্ডিত দের ধারণা রয়েছে। হিন্দু শাস্ত্র মতে, এদিন তাই দেবীর সম্পূর্ণ পুজো সম্পন্ন হয়। এই তিথিতেই  বলি, হোম, কুমারী পূজা এবং ষোড়শ উপাচারের বিধান আছে। দেবীকে প্রসন্ন করতে নৈবেদ্য তে তিল নিবেদন করার রীতি দেখা যায় । ভক্তদের বিশ্বাস ,মাতা সিদ্ধিদাত্রীর কৃপায় জীবনের সমস্ত কুপ্রভাব বিনষ্ট হয় এবং সফলতা আসে জীবনে‌।

  • Durga Puja 2022: মহাসপ্তমীর মাহাত্ম্য: জানুন মাতা কালরাত্রির অসুর বধের পৌরাণিক কথা

    Durga Puja 2022: মহাসপ্তমীর মাহাত্ম্য: জানুন মাতা কালরাত্রির অসুর বধের পৌরাণিক কথা

    শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: নবরাত্রির সপ্তম দিনে আরাধিত হন মাতা কালরাত্রি (Devi Kalratri)। বাংলাতে প্রচলিত দুর্গাপুজোর মহাসপ্তমীর (Maha Saptami) দেবী তিনি। মাতা কালরাত্রি ভীষণ দর্শনা। এলোকেশী। তাঁর চারটি হাত। ওপরের ডান হাতে আশীর্বাদ, নীচের ডান হাতে অভয় মুদ্রা। বাঁ দিকে ওপরের হাতে খড়গ এবং নীচের বাম হাতে রয়েছে লোহার কাঁটা। দেবী ত্রিনয়নী এবং তাঁর চোখগুলি গোলাকার। দেবীর গলায় রয়েছে বজ্রের মালা। এই দেবীর বাহন গাধা এবং তাঁর নিশ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে ভয়ংকর অগ্নিশিখা নির্গত হয় বলে কথিত আছে। দেবী কালরাত্রি সম্পর্কে অজস্র পৌরাণিক আখ্যান রয়েছে, তিনি চন্ড মুন্ড নামের দুই অসুর কে বধ করেছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর অপর নাম তাই “চামুণ্ডা”। দেবী মাহাত্ম্য তে উল্লেখ রয়েছে – শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামক দুই দানব ছিল। তারা প্রজাপতি ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করলেন । খুশি হয়ে প্রজাপতি ব্রহ্মা বর দিতে আবির্ভূত হলেন । দুই দানব বর চাইলো যে , কোন পুরুষ যেনো তাদের বধ করতে না পারে । ব্রহ্মা তাদের কাঙ্ক্ষিত বর প্রদান করলেন। দুই অসুর চরম অত্যাচার শুরু করলো দেবতাদের উপর। এই দুজনের সাথে যোগ দিল চন্ড মুন্ড নামের আরও দুই অসুর। তাঁদের সাথে এলো রক্তবীজ। যার প্রতিটি রক্তবিন্দু মাটিতে পড়লে দ্বিতীয় রক্তবীজ তৈরী হবে। এমনটাই বরদান ছিল তার উপর প্রজাপতি ব্রহ্মার । এইসমস্ত অসুরদের অত্যাচারে দেবতারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন। অসুরদের উপর ব্রহ্মার বরদান সম্পর্কেও দেবতারা অবগত ছিলেন। মুনি ঋষি দের যজ্ঞ পন্ড করা, ঋষি কন্যাদের নানা ভাবে লাঞ্ছিত করা এসব কাজ তো চলছিলই। অসুরদের এমন আক্রমণে দেবতারা অবশেষে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হলো। নিজেদের স্বর্গরাজ্য থেকে তারা বিতাড়িত হলো। দেবতারা হিমালয়ের কোলে শুরু করলেন দেবীর স্তব। দেবী মাহাত্ম্য তে এই স্তব সম্পূর্ণ ভাবে উল্লেখ রয়েছে‌ । কিছুটা অংশ সংযোজিত করা  হলো , কমবেশি এই স্তব সকলেই আমরা জানি।

    যা দেবী সর্বভূতেষু বিষ্ণুমাযেতি শব্দিতা 
    নমস্তস্যৈ
    নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ

    যা দেবী সর্বভূতেষু চেতনেত্যভিধীযতে
    নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ

    যা দেবী সর্বভূতেষু বুদ্ধিরূপেণ সংস্থিতা
    নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ

    যা দেবী সর্বভূতেষু নিদ্রারূপেণ সংস্থিতা 
    নমস্তস্যৈনমস্তস্যৈ  নমস্তস্যৈ নমো নমঃ

    যা দেবী সর্বভূতেষু ক্ষুধারূপেণ সংস্থিতা .
    নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ 

    পুরাণে কথিত রয়েছে –  এমন সময় সেখান দিয়ে শিব জায়া দেবী পার্বতী গঙ্গা স্নানের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন । দেবী তাদের স্তব শুনে বললেন – “ হে দেব বৃন্দ , আপনারা এখানে কার স্তব করছেন ? ”

    সেই সময় ভগবতী পার্বতীর শরীর থেকে একই রকম দেখতে আর এক জন দেবী বেরিয়ে এলেন । আবির্ভূত হয়ে নব দেবী জানালেন – “ দেবতারা আমার স্তব করছেন ।” এই দেবীই আদ্যাশক্তি জগত মাতা অম্বিকা মহামায়া । তিনি দেবী পার্বতীর কোষ থেকে সৃষ্টি হয়েছেন বলে তার এক নাম কৌষিকী । কথিত আছে এর পর নাকি দেবী পার্বতী কৃষ্ণবর্ণা হয়ে যান ।যাঁকে আমরা কালরাত্রি বলি। ইনি মাতা কালিকা নামেও পরিচিত। পুরাণে আরো  উল্লেখিত আছে, দেবী একদিন হিমালয়ে সিংহ পৃষ্ঠে বসে মধু পান করছিলেন,  এমন সময় চণ্ড আর মুণ্ড নামক দুই দানব দেবীকে দেখতে পেলেন । চন্ড মুন্ড একথা গিয়ে শুম্ভ নিশুম্ভ কে জানাল । শুম্ভ , নিশুম্ভ সেই দেবীর রুপ বর্ণনা শুনে দেবীকে লাভ করার জন্য আকুল হল । সুগ্রীব নামক এক অসুর  দেবীর কাছে গেল শুম্ভ নিশুম্ভের দূত হিসেবে। সুগ্রীব হিমালয়ে সেই পর্বত চূড়ায় গিয়ে দেবীকে শুম্ভ নিশুম্ভের পরাক্রম , ঐশ্বর্য এর কথা বলে বিবাহের প্রস্তাব দিল । দেবী একথা শুনে হেসে বললেন – “ আমার প্রতিজ্ঞাটি শোন – যিনি আমাকে যুদ্ধে জয় করবেন , তিনিই আমার স্বামী হবেন”। এরপর শুম্ভ নিশুম্ভের সেনাপতি ধুম্রলোচন ষাট হাজার সেনা নিয়ে গেলেন দেবীকে পরাজিত করতে। দেবীর তেজে ধুম্রলোচন ভস্মীভূত হলো। দেবীর সিংহ বাহিনী অসুর সেনাকে ধ্বংস করে দিল।শুম্ভ নিশুম্ভ এরপর  চণ্ড ও মুন্ড কে পাঠালো । চন্ড ও মুণ্ড বহু সেনা , অশ্ব , রথ , হাতি নিয়ে যুদ্ধে এলো‌ তারা হিমালয়ের চূড়ায় হাস্যরত দেবী অম্বিকা কে দেখতে পেল । দেবী চন্ডিকা তাদের দেখে ভীষণ ক্রুদ্ধা হলেন । ক্রোধে তাঁর মুখ মণ্ডল কৃষ্ণবর্ণা হল ।তখন দেবীর কপাল থেকে এক ভীষণ দর্শনা দেবী প্রকট হলেন । সেই দেবী কালিকা বা কালরাত্রি । অতি ভীষনা, ভয়ঙ্করী , কোটর গতা , আরক্ত চক্ষু বিশিষ্টা। সেই ভয়ংকরা দেবী ভীষণ হুঙ্কার দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন । কত গুলি অসুরকে দেবী তার চরণ ভারে পিষে বধ করলেন । কোন কোন অসুর দেবীর খড়গের আঘাতে মারা গেল । যুদ্ধক্ষেত্রে এই ভাবে দেবী অসুর দের ধ্বংস করে ফেললেন । এরপর দেবী তার খড়গ তুলে ‘হং’ শব্দ করে চন্ডের দিকে ধেয়ে গেল । দেবী চন্ডের চুলের মুঠি ধরে খড়গ দ্বারা এক কোপে চণ্ডের শিরোচ্ছেদ করে ফেললেন । চন্ড অসুর বধ হল। চন্ড নিহত হয়েছে দেখে ক্রোধে মুন্ড দেবীর দিকে ধেয়ে গেলো । দেবী তার রক্তাক্ত খড়গ দিয়ে আর এক কোপে মুন্ড এর শিরোচ্ছেদ করলেন । এভাবে মুণ্ড বধ হল। চন্ড মুন্ড বধ হতে দেখেই  দেবতারা আনন্দে দেবীর জয়ধ্বনি দিতে থাকলেন‌। দেবী মাহাত্ম্য অনুযায়ী, চন্ড আর মুণ্ড এর ছিন্ন মস্তক নিয়ে দেবী, মহামায়ার কাছে এসে বিকট  হেসে বললেন – “ এই যুদ্ধরূপ যজ্ঞে আমি আপনাকে চন্ড ও মুন্ড নামে দুই মহাপশুর মস্তক উপহার দিলাম । এখন আপনি নিজেই শুম্ভ ও নিশুম্ভ কে বধ করবেন ।”দেবী অম্বিকা তখন বললেন – “ হে দেবী , যেহেতু তুমি চন্ড ও মুণ্ডের বধ করে মাথা দুটি আমার নিকট নিয়ে এসেছো , সেজন্য আজ থেকে তুমি জগতে ‘চামুন্ডা’ নামে বিখ্যাত হবে ।” পন্ডিত মহলের মতে মাতা কালরাত্রির অপর নাম তাই “চামুণ্ডা”।

    মাতা কালরাত্রি শুভফলের দেবী বলেও অনেকে মনে করেন। তাই মাতার  আরেক নাম হলো “শুভঙ্করী”। মাতা কালরাত্রির আশীর্বাদে জীবনের সমস্ত কুপ্রভাব বিনষ্ট হয় বলে ভক্তদের ধারণা। মাতার নৈবেদ্য তে গুড় নিবেদন করলে তিনি প্রসন্না হন বলে ভক্তদের ধারণা‌।

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।

     
     
  • Navratri 2022: মহা পঞ্চমীর মাহাত্ম্য: জানুন তারকাসুর বধ ও স্কন্দমাতার আখ্যান

    Navratri 2022: মহা পঞ্চমীর মাহাত্ম্য: জানুন তারকাসুর বধ ও স্কন্দমাতার আখ্যান

    শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: পুরাণ অনুযায়ী, দেবাদিদেব মহাদেবের পুত্র হলেন দেব সেনাপতি কার্তিক। তাঁর অপর নাম স্কন্দ। স্কন্দমাতা মানে হলো কার্তিকের মাতা। দেবী পার্বতীর এই রূপেরই পূজা করা নবরাত্রির পঞ্চমীর দিন। কার্তিকের জন্মবৃত্তান্ত এবং মাতা পার্বতীর স্কন্দমাতা হয়ে ওঠার কাহিনী জানতে হলে আমাদের অপর একটি পৌরাণিক কাহিনী শুনতে হবে।

    পুরাকালে বজ্রাঙ্গ নামে এক অসুর রাজা ছিলেন। তিনি ছিলেন দিতির পুত্র। দেবতাদের রাজা ইন্দ্রকে বজ্রাঙ্গ সিংহাসনচ্যুত করে, বন্দি করেন। দেবতাদের প্রতি বজ্রাঙ্গের এই রোষ আসলে ছিল তাঁর প্রতিশোধ। কারণ ইতিপূর্বে দিতির অসংখ্য পুত্রকে মানে বজ্রাঙ্গের নিজ ভাইদের দেবতারা হত্যা করেছিল। বজ্রাঙ্গের হাতে বন্দি ইন্দ্রকে মুক্ত করতে আসেন ব্রহ্মা এবং কাশ্যপ মুনি। কাশ্যপ মুনি ছিলেন বজ্রাঙ্গের পিতা, অর্থাৎ দিতির স্বামী। ব্রহ্মা এবং কাশ্যপ মুনির অনুরোধে বজ্রাঙ্গ তখনকার মতো ইন্দ্রকে মুক্ত করেন। 

    দৈত্য হয়েও এমন দয়ার ভাব বজ্রাঙ্গের মধ্যে দেখতে পেয়ে ব্রহ্মা তাঁকে বরদান করতে ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন। বজ্রাঙ্গ তখন তপস্বী হওয়ার বর প্রার্থনা করলেন এবং বাকি জীবন যেন তিনি ধর্ম পথে চলতে পারেন সেই আশীর্বাদ ব্রহ্মার কাছে চাইলেন। ব্রহ্মা তাঁর মানস কন্যা বরাঙ্গীর সঙ্গে বজ্রাঙ্গের বিবাহ দিলেন। বজ্রাঙ্গ এবং বরাঙ্গী বনের মধ্যে কুটির বানিয়ে ধর্ম কর্ম করতে লাগলেন। বজ্রাঙ্গ তপস্যায় রত থাকতেন এবং বরাঙ্গী গৃহস্থের কর্ম সম্পাদন করতেন। ‌

    আরও পড়ুন: জানুন মাতা কুষ্মান্ডার কাহিনী, মহাচতুর্থীর দিন আরাধিতা হন দেবী

    একদিন দেবরাজ ইন্দ্র ওই কুটিরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বরাঙ্গীকে দেখতে পেয়ে পুরনো অপমানের বদলা নিতে চাইলেন। কখনও বানর সেজে, কখনও ভেড়া বা কখনও সাপ হয়ে কুটির লন্ডভন্ড করতে লাগলেন। ক্রন্দনরত অবস্থায় বরাঙ্গী তাঁর স্বামী বজ্রাঙ্গকে এসব বিষয়ে বললে, বজ্রাঙ্গ ব্রহ্মাকে স্মরণ করলেন। ব্রহ্মা প্রকট হয়ে বর দিতে চাইলে বজ্রাঙ্গ বললেন, “আমাকে এমন পুত্র দিন, যে দেবতাদের উপর অত্যাচার করতে সমর্থ হবে।”‌ ব্রহ্মা বজ্রাঙ্গের মনোমত বরদান করলেন। বরাঙ্গীর গর্ভে জন্ম হলো তারক নামের অসুরের‌। 

    পরবর্তীতে তারকাসুরের উপর ব্রহ্মার বরদান ছিল যে- “একমাত্র শিবের বালক পুত্র ছাড়া, কারও হাতে তিনি হত হবেন না।” ব্রহ্মার বরদানে অজেয়, অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন তারকাসুর। কারণ তিনি জানতেন শিব কখনও বিবাহ করবেন না এবং ত্রিভুবনে ব্রহ্মার বরদানে তাঁকে হত্যা করতে পারে এমন ক্ষমতা কোনও দেবতা, মানুষ বা জীবজন্তুর নেই। তারকাসুর দেবলোক নিজের দখলে আনেন। দেবরাজ ইন্দ্র সিংহাসনচ্যুত হলেন। বিতাড়িত দেবতারা বুঝতে পারলেন শিবের বিয়ে দিতে পারলে তবে তাঁর পুত্রই তারকাসুর কে বধ করতে পারবেন। 

    আরও পড়ুন: নবরাত্রির তৃতীয় দিনে পূজিতা হন মাতা চন্দ্রঘন্টা, জানুন তাঁর পৌরাণিক কাহিনী

    আয়োজন শুরু হলো শিব-পার্বতীর বিবাহের। সেখানেও তারকাসুরের আক্রমণ হলো। পার্বতী দেবী, মাতা চন্দ্রঘন্টা রূপধারণ করে অসুরদের বিতাড়িত করলেন। এরপর সুসম্পন্ন হলো শিব-পার্বতীর বিবাহ। জন্ম হলো কার্তিকের। মাতা পার্বতী তখন হলেন স্কন্দমাতা অর্থাৎ কার্তিক জননী। দৈববাণী পেয়ে দেবরাজ ইন্দ্র কার্তিককে সেনাপতি নিযুক্ত করলেন। এক প্রবল যুদ্ধে কার্তিকের হাতে তারকাসুর হত হলেন। দেবতারা তাঁদের হৃত স্বর্গরাজ্য পুনরায় নিজেদের দখলে আনলেন। এমনটাই লেখা রয়েছে “স্কন্দ পুরাণে”।

    স্কন্দমাতার অপর নাম কার্তিকেয়। ত্রিনয়নী মাতার কোলে তাঁর শিশু পুত্রকে দেখতে পাই আমরা। এই শিশু পুত্রই হলেন স্কন্দ বা কার্তিক। স্কন্দমাতা স্নেহ, মায়া, সন্তান বাৎসল্য এর প্রতীক। মাতার ভক্তরা মনে করেন দেবীর পুজো করলে সমস্ত মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়, জীবনের সকল বাধাবিঘ্ন দূর হয়, অশুভ শক্তি বিনষ্ট হয়, সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, সমৃদ্ধি তে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে জীবন। দেবী পদ্মাসনা। তাঁর বাহন সিংহ। তাঁর দুই হাতে দুটি পদ্ম। একহাতে কার্তিককে ধরে থাকেন। অপর হাত বর-মুদ্রার ভঙ্গিতে থাকে। যার দ্বারা ভক্তদের উদ্দেশে সর্বদাই আশীর্বাদ বর্ষিত হয়। 

    স্কন্দমাতার ধ্যানমন্ত্র হলো –

    “সিংহাসনগতা নিত্যং
    পদ্মাশ্রিত করদ্বয়া।
    শুভাদাস্তু সদা দেবী
    স্কন্দমাতা যশস্বিনী”।।

    স্কন্দমাতার পুজো করলে শত্রু বিনাশ হয়, শক্তি বৃদ্ধি হয় এমনটাই মনে করেন ভক্তরা। স্কন্দমাতার পুজোতে সাদা রঙের পোশাক পরলে মাতা প্রসন্ন হন এমনটাই প্রচলিত ধারণা রয়েছে। দেবীর আশীর্বাদ পেতে ভক্তরা নৈবেদ্যতে কলা বা কদলী ভোগ দেন।

  • Durga Puja 2022: অষ্টমীপুজোর দিন পুজো হয় অসুরের, কেন জানেন?

    Durga Puja 2022: অষ্টমীপুজোর দিন পুজো হয় অসুরের, কেন জানেন?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মহাষ্টমী (Mahastomi)। ষষ্ঠ্যাদি কল্পে যাঁদের পরিবারে দুর্গাপুজো (Durgapujo) হয়, তাঁদের পুজোর তৃতীয় দিন। এদিন দেবতার সঙ্গে সঙ্গে পুজো হয় দানবেরও। আজ্ঞে, হ্যাঁ। এদিন প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয় অসুরের। তার পরেই পুজো হয় সেই দৈত্যের, যিনি চেয়েছিলেন স্বয়ং মহামায়াকে (Mahamaya) বধ করতে।

    দুর্গাপুজোর একাধিক কল্প রয়েছে। কোনও কোনও পরিবারে প্রতিপদ্যাদি কল্পে পুজো হয়। এই সব পরিবারে পুজোর বাদ্যি বাজে মহালয়ার পরের দিন, প্রতিপদে। রয়েছে আরও অনেক কল্প। তবে যে কল্পে সচরাচর পুজো হয়, সেটি হল ষষ্ঠ্যাদি কল্প। যেসব পরিবারে এই কল্পে পুজো হয়, তাঁদের পুজো শুরু ষষ্ঠীর দিন। কোনও কোনও বাড়িতে নবম্যাদি কল্পেও পুজো হয়। এই পরিবারে পুজো হয় কেবল নবমীর।  

    সে যাই হোক, আমরা আলোচনা করব নবম্যাদি কল্প বাদে বাকি সব কল্প নিয়ে। এই সব কল্পে অষ্টমী পুজো বাধ্যতামূলক। এই অষ্টমীতেই প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় মহিষাসুরের। হয় পুজোও। দেবী দুর্গার বাহন সিংহেরও প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় এদিন। হয় অস্ত্রপুজোও। প্রশ্ন হল, অসুর তো দেবী দুর্গাকে বধ করতে চেয়েছিলেন, তাহলে তাঁর পুজো হয় কেন? কেন অষ্টমীতে দেব এবং দানবের পুজো হয় একই সঙ্গে?

    শাস্ত্রকারদের মতে, দেবী দুর্গা যেদিন মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন, সেদিন ছিল অষ্টমী তিথি। মহিষাসুর বধের সময় হয় অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণ। সপ্তমীতে দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়ে যায়। লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ এবং নবপত্রিকার প্রাণ প্রতিষ্ঠাও হয় এদিনই। বাকি অসুরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় অষ্টমীতে। কারণ মহিষাসুরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা না হলে দেবী কাকে বধ করবেন? এই কারণেই অষ্টমীপুজোর দিন পুরোহিতের অন্যতম প্রধান কাজ হল অসুরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা। এদিন অস্ত্রপুজোও হয় এই কারণেই। দেবী অস্ত্র দিয়েই অসুর বধ করবেন। তাই পুজো হবে অস্ত্রেরও। দেবীর বাহন সিংহের প্রাণ প্রতিষ্ঠাও হবে এই দিনেই। অন্যান্য দেবীর বাহনের পুজোও হবে এদিন। অষ্টমীর শেষ চব্বিশ মিনিট ও নবমীর প্রথম চব্বিশ মিনিট এই মোট আটচল্লিশ মিনিটে হবে সন্ধিপুজো। বধ হবেন মহিষাসুর। দেবী হাসবেন বিজয়ীর হাসি।

    দেশের খবরদশের খবরসব খবরসবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।

         

     

  • Durga Puja: আজ দশেরায় মেতেছে দেশবাসী! জানেন দশমী তিথিতে কেন পালিত হয় দশেরা উৎসব?

    Durga Puja: আজ দশেরায় মেতেছে দেশবাসী! জানেন দশমী তিথিতে কেন পালিত হয় দশেরা উৎসব?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দশমীতে বাংলার ঘরের মেয়ে উমা বাপের বাড়ি থেকে স্বামী গৃহে রওনা দেন, মন আমাদের ভারাক্রান্ত হয়, ঠিক তখনই দেশের অন্যান্য প্রান্তে ধুমধাম করে পালিত হয় দশেরা উৎসব। দশটি মাথার বড় প্রতীকী অসুরকে অগ্নিসংযোগের দ্বারা জ্বালানোর নামই দশেরা। পোশাকি একটা নাম অবশ্য রয়েছে রামলীলা। দিল্লির রামলীলা ময়দান তো আমাদের অতি পরিচিত। দেশের প্রধানমন্ত্রীকেও রামলীলা ময়দানে দশেরা উৎসব পালন করতে দেখা যায়। তিনিই তীর নিক্ষেপ করে দশ মাথার প্রতীকী অসুরকে অগ্নিসংযোগ দ্বারা দহন করেন। দশমাথার অসুর বললে নিশ্চিত ভাবে আমাদের আর বুঝতে অসুবিধা হয় না যে সেটি দশানন রাবণ। রাবণকে বধ করতেই আশ্বিন মাসে মা দুর্গার অকাল বোধন করেছিলেন রামচন্দ্র। বিল্ববৃক্ষ তলায় মা দুর্গার পুজো করেছিলেন, তারপরেই রাবণ বধ করেছিলেন দশমী তিথিতে। অন্য একটি বিশ্বাস মতে, ন’দিন ন’ রাত্রি ব্যাপী যুদ্ধের পর মহিষাসুরকে দশমী তিথিতে বধ করেন দেবী দুর্গা। মহিষাসুর এবং রাবণ দুই অসুর-ই অত্যাচার, অধর্ম,পাপ, অশুভ শক্তির প্রতীক। দশমী তিথি তাই পবিত্র, পুণ্য এক তিথি যেদিন আসুরিক শক্তির বিনাশ হয়েছিল। অশুভ শক্তি পরাস্ত হয়েছিল শুভ শক্তির কাছে। দেবতারা সেদিন পুষ্প বৃষ্টি করেছিল মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার উপর এবং রাবণ বধের জন্য ভগবান রামচন্দ্রের উপর।

    আরও পড়ুন: মন্ডপ হোক বা বাড়ি দশমীতে সিঁদুর খেলাই রীতি! জানেন এদিন কেন সিঁদুর খেলা হয়?

    অন্য একটি পৌরাণিক মত অনুযায়ী দশেরার সাথে পান্ডবরাও সম্পর্কিত। দশেরার দিন দেশের নানা প্রান্তে অস্ত্র পূজন দেখতে পাই আমরা। দশমী তিথির এই অস্ত্র পূজন পান্ডবদের সাথেই সম্পর্কিত বলে অনেকে মনে করেন। পৌরাণিক আখ্যানটি জেনে নেওয়া যাক। পাশাখেলায় পরাজিত হয়ে পাণ্ডবরা ১২ বছর বনবাস ও এক বছরের অজ্ঞাতবাসে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। বনবাসের পর অজ্ঞাতবাস শুরু করার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে তাঁরা বিরাট রাজ্যে প্রবেশ করার আগে একটি শমীবৃক্ষের কোটরে তাঁদের সঙ্গে থাকা সমস্ত অস্ত্র লুকিয়ে রেখে যান। আবার ঠিক একবছর পরে এই বিজয়া দশমীর দিনটিতে ওই কোটর থেকে অস্ত্র বের করে নিজেদের আসল পরিচয় দিয়েছিলেন তাঁরা। তাই তারপর থেকে দেশের সমস্ত  প্রান্তে দশমীর  দিনটিতে অস্ত্রের পুজো প্রচলিত আছে। এদিন অনেক জায়গায় পরস্পরকে শমীবৃক্ষের পাতা দিয়ে দুষ্টের উপর বিজয়ের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার চলও রয়েছে।

    আবার অন্য একটি পৌরাণিক মত অনুযায়ী, রামের জন্মের বহু আগে থেকেই নাকি রঘু বংশে পালিত হয় দশেরা। রামের পূর্বপুরুষ রাজা রঘুর আমলের একটি ঘটনা এক্ষেত্রে প্রচলিত রয়েছে। রঘুর রাজ্যে ছিলেন দেবদত্ত নামে এক ঋষি, যাঁর পুত্র কৌৎস শিক্ষালাভ গিয়েছিলেন ঋষি বরতনুর কাছে। শিক্ষা শেষে ১৪টি বিষয়ে সুশিক্ষিত কৌৎস যখন গুরুকে জিজ্ঞেস করেন যে, গুরুদক্ষিণা হিসেবে কী চান তিনি, বরতনু তখন উত্তর দেন, তাঁর কিছুই চাই না, ছাত্রের সুশিক্ষাই তাঁর কাছে গুরুদক্ষিণার সমান! কিন্তু কৌৎস গুরুদক্ষিণা না দিয়ে যাবে না। বাধ্য হয়ে একটি অসম্ভব ইচ্ছে প্রকাশ করেন বরতনু। তিনি বলেন, ১৪টি বিষয়ে শিক্ষার দক্ষিণা হিসেবে তিনি ১৪০ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা চান। গুরুর ইচ্ছে পূর্ণ করতে কৌৎস যান অযোধ্যার রাজা রঘুর কাছে। কিন্তু সেদিনই ব্রাহ্মণদের দানে সব সোনা দিয়ে দেওয়ার কারণে রঘু কৌৎসর কাছে তিন দিন সময় চান। কৌৎস সেই কথা শুনে বিদায় নেওয়ার পর রঘু চলে যান দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে। ইন্দ্র সব শুনে ডেকে পাঠান ধনের দেবতা কুবেরকে। ইন্দ্রের কথামতো কুবের অযোধ্যা রাজ্যে সেদিন ধনবৃষ্টি শুরু করেন। শোনু এবং আপতি গাছের পাতাগুলি থেকে ঝরতে থাকে সোনার মোহর! সেই মোহর একত্রিত করে কৌৎসকে দেন রাজা রঘু। ছাত্রের কাছ থেকে শুধু ১৪০ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা চেয়েছিলেন বরতনু, বাকিটা তিনি ফিরিয়ে দেন কৌৎসকে। কৌৎস তা আবার ফিরিয়ে দেন রঘুকে। দানবীর রঘু তা বিলিয়ে দেন তাঁর প্রজাদের মধ্যে। সেই দিনটি ছিল বিজয়া দশমীর দিন। অর্থাৎ দেবী মাহাত্ম্য, রামায়ণ, মহাভারত সহ সমস্ত পৌরাণিক আখ্যানে পাওয়া যায় দশেরার মাহাত্ম্য, বাংলায় দশমীর মাহাত্ম্য।

  • Durga Puja: কুমারী পুজো কেন হয় জানেন? 

    Durga Puja: কুমারী পুজো কেন হয় জানেন? 

    শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: দেখতে দেখতে পুজো নবমীতে চলে এলো। মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখছেন- “যেয়ো না রজনী আজি লয়ে, তারাদলে ” এ যেন প্রতিটি হিন্দু বাঙালির অন্তরের শব্দ ধ্বনি। নবমী নিশি গত হলেই যে বিসর্জন! মহানবমীর গুরুত্ব তাই অনেক খানি‌। উৎসবমুখর বাঙালির আনন্দের দিক থেকে তো বটেই আবার এই বিশেষ তিথিতে সম্পূর্ণ ভাবে মা দুর্গার পুজো সম্পন্ন হয়। পৌরাণিক মতে , অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে চন্ড ও মুন্ডকে বধ করেছিলেন মাতা চামুণ্ডা আবার অন্য একটি মতে, মহিষাসুরের বধ হয়েছিল সন্ধিক্ষণে। তাই সমস্ত দেবতারা মহর্ষি কাত্যায়ন এর আশ্রমে সমবেত হয়ে নবমী তিথিতে মাতৃ আরাধনা বা বন্দনা শুরু করেছিলেন।  এই দিন সকাল থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় অঞ্জলি দেওয়ার জন্য। এই দিনেই সম্পন্ন হয় হোম এবং কুমারী পুজো। এই পুজো নিয়ে বহু মানুষের মনের নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খায়।

    কুমারী পুজোকে ঘিরে আগ্রহের শেষ নেই। কেন করা হয় কুমারী পুজো? জানেন কি? সেই ১৯০১ সাল থেকে প্রতিবছর বেলুড় মঠে মহা ধুমধাম করে এই পুজোর নিয়ম রয়েছে, শুরু করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। এছাড়াও বহু বাড়ির পুজোয়, মন্দির কিংবা বারোয়ারী ক্লাবগুলিতে কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয়। কুমারী পুজোর জন্য বেছে নেওয়া হয় ১ থেকে ১৬ বছর বয়সী কন্যাদের। বয়স অনুযায়ী প্রত্যেক কুমারীর নাম আলাদা হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী কুমারী পূজায় কোন জাতি, ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই। দেবীজ্ঞানে যে-কোন কুমারীই পূজনীয় ।

     এক্ষেত্রে এক থেকে ষোলো বছর বয়সী যে কোনো কুমারী মেয়ের পূজা করা যায়। বয়স অনুসারে কুমারীদের নাম গুলি হলো –
    এক বছরের কন্যা: সন্ধ্যা
    দুই বছরের কন্যা: সরস্বতী
    তিন বছরের কন্যা : ত্রিধামূর্তি
    চার বছরের কন্যা : কালীকা
    পাঁচ বছরের কন্যা : সুভগা
    ছয় বছরের কন্যা :উমা
    সাত বছরের কন্যা : মালিনী
    আট বছরের কন্যা : কুব্জিকা
    নয় বছরের কন্যা:কালসন্দর্ভা
    দশ বছরের কন্যা: অপরাজিতা
    এগারো বছরের কন্যা:রূদ্রাণী
    বারো বছরের কন্যা:ভৈরবী
    তেরো বছরের কন্যা:মহালক্ষ্মী
    চৌদ্দ বছরের কন্যা:পীঠনায়িকা
    পনেরো বছরের কন্যা:ক্ষেত্রজ্ঞা
    ষোলো বছরের কন্যা:অন্নদা বা অম্বিকা

     হিন্দু ধর্মে নারীদের প্রকৃতির সমান মানা হয়। কুমারী পুজোর মধ্য দিয়ে প্রকৃতিকে আরাধনা বা পুজো করা হয়। ভারতীয় সভ্যতায় প্রকৃতি পূজার রীতি প্রথম থেকেই রয়েছে। এদেশে মনে করা হয়  দেবতাদের বাস রয়েছে মানবের মধ্যেই এবং দেবত্বের বিকাশের দ্বারাই মানুষ দেবতা হয়।  তাই কুমারীদের দেবী রূপে আরাধনা করা হয়। ফুলের মালা, মুকুট, পায়ে আলতা, নতুন বস্ত্র, তিলক দিয়ে সাজানো হয় কুমারীদের।

    বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কুমারী পুজোর জন্য নির্বাচিত করা হয় ৫ থেকে ৭ বছর বয়সী কুমারীদের। বিভিন্ন পুরাণে এই পুজোর উল্লেখ রয়েছে। শাস্ত্র অনুযায়ী ১ থেকে ১৬ বছর বয়সী যে বালিকারা ঋতুমতী হবে না, তাদের কুমারী রূপে পুজো করা যাবে।  শুধুমাত্র দুর্গাপুজো নয়, অন্নপূর্ণা পুজো, কালীপুজো এমনকি জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষেও বহু জায়গায় কুমারী পুজো আমরা দেখতে পাই।

    কুমারী পুজোর নেপথ্যে যে পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে সেটি জেনে নেওয়া যাক। একসময় কোলাসুর নামের এক অসুর রাজা স্বর্গ এবং মর্ত্য দখল করে নিয়েছিল। অত্যাচারী এই অসুরের কারনে মুনি ঋষিরা তপস্যা করতে পারতো না, দেবতারা স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত ছিল। যার কারণে দেবতাগণ অসহায় হয়ে শরণাপন্ন হন মা কালীর। দেবতাদের উদ্ধারে দেবী কুমারী রূপে কোলাসুরকে বধ করেছিলেন। তারপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পুজোর প্রচলন শুরু হয়। অন্য একটি পৌরাণিক কথা অনুযায়ী, বাণাসুর কে মাতা কালি, কুমারী রূপে বধ করেছিলেন । সেই থেকেই কুমারী পুজোর রীতি বলে শোনা যায়।  শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নিজের স্ত্রীকে কুমারী জ্ঞানে পুজো করেছিলেন বলেও জানা যায়।

LinkedIn
Share