Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 429: চৈতন্য না লাভ করলে চৈতন্যকে জানা যায় না

    Ramakrishna 429: চৈতন্য না লাভ করলে চৈতন্যকে জানা যায় না

    জীবজগৎ বিশিষ্ট ব্রহ্ম। সব জড়িয়ে একটি বেল—খোলা আলাদা, বিচি আলাদা আর শাঁস আলাদা। একজন করেছিল। বেলটি কতজনের জানবার দরকার হয়েছিল?

    এখন শুধু শাঁস ওজন করলে কি বেলের ওজন পাওয়া যায়? খোলা, বিচি সব একসঙ্গে ওজন করতে হবে। প্রথমে খোলা নয়, বিচি নয়—সার পদার্থ বলে বোধ হয়। তারপর বিচার করে দেখা যায় সেই বস্তুর। সেই বস্তুর খোলা, বিচি করে যেতে হয়। জীবনীতি, জগৎনীতি—এরও বিচার করতে হয়। বস্তু আর সব অবস্তু। তারপর অনুভব হয়, যার শাঁস তারই খোলা, বিচি। যা থেকে ব্রহ্ম বলছো, তাই থেকে জীবজগৎ। যারই নিত্য, তারই লীলা। তাই রামানুজ বলতেন— জীবজগৎ বিশিষ্ট ব্রহ্ম। এরই নাম বিশিষ্ট দ্বৈতবাদ।

    ঈশ্বর দর্শন, অবতার প্রত্যক্ষসিদ্ধ

    শ্রী রামকৃষ্ণ (গিরিশের প্রতি)- তাই দেখছি, সাক্ষাৎ। আর কী বিচার করব? আমি দেখছি, তিনি এইসব হয়েছেন। তিনি জীব ও জগৎ হয়েছেন। তবে চৈতন্য না লাভ করলে চৈতন্যকে জানা যায় না। বিচার কতক্ষণ? যতক্ষণ না তাঁকে লাভ করা যায়। শুধু মুখে বললে হবে না। এই আমি দেখছি, তিনিই সব হয়েছেন। তাঁর কৃপায় চৈতন্য লাভ করা চাই। চৈতন্য লাভ করলে সমাধি হয়, মাঝে মাঝে দেহ ভুলে যায়। কামিনী-কাঞ্চনের উপর আসক্তি থাকে না। ঈশ্বর ও তাঁর কথা ছাড়া কিছু ভালো লাগে না। বিষয়ের কথা শুনলে কষ্ট হয়।

    প্রত্যক্ষ নরেন্দ্রকে শিক্ষা কালীই ব্রহ্ম

    চৈতন্য লাভ করলে তবে চৈতন্যকে জানতে পারা যায়। বিচারান্তে ঠাকুর মাস্টারকে বলিতেছেন, “দেখেছি, বিচার করে একরকম জানা যায় তাঁকে, ধ্যান করে একরকম জানা যায়। আবার তিনি যখন দেখিয়ে দেবেন—এর নাম অবতার। তিনি যদি তাঁর মানব-লীলা দেখিয়ে দেন, তাহলে আর বিচার করতে হয় না, কাউকে বুঝিয়ে দিতে হয় না। কীরকম জানো? যেমন অন্ধকারের ভিতর দেশলাই ঘষতে ঘষতে দপ করে আলো হয়, সেইরকম দপ করে আলো যদি তিনি দেন, তাহলে সব সন্দেহ মিটে যায়। এরূপ বিচার করে কি তাঁকে জানা যায়?”

  • Ramakrishna 429: শংকর যা বুঝিয়েছেন তাও আছে, আবার রামানুজের বিশিষ্ট দ্বৈতবাদও আছে

    Ramakrishna 429: শংকর যা বুঝিয়েছেন তাও আছে, আবার রামানুজের বিশিষ্ট দ্বৈতবাদও আছে

    তারপর শুরু হলো ঘোর তর্ক। “ইনফিনিটি”-এর কী অংশ হয়? হ্যামিল্টন কী বলেন, হার্বার্ট স্পেনসার কী বলেন, টিন্ডেল, হাক্সলে, বাকিরা কী বলেছেন—এই সব নিয়ে আলোচনা চলতে লাগল।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি): দেখো, এগুলো আমার ভালো লাগছে না। আমি সব কিছু দেখছি, বিচার করছি—আর করব কী? দেখছি, তিনিই সব। তিনিই সব হয়েছেন।

    “তাও বটে… আবার তাও বটে।” এক অবস্থায় মন, বুদ্ধি—সব লীন হয়ে যায়, অখণ্ডে বিলীন হয়। নরেন্দ্রকে দেখে আমার মনও সেই অখণ্ডে লীন হয়ে যায়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (গিরিশের প্রতি) তাঁর কী করলে বল দেখি।
    গিরিশ ( হাসিতে হাসিতে) ওইটা ছাড়া প্রায় সব বুঝেছে কিনা, সকলের হাস্য।

    রামানুজ ও বিশিষ্ট দ্বৈতবাদ

    শ্রীরামকৃষ্ণ- আবার “দুই থাক না নামলে কথা কইতে পারি না”।
    বেদান্ত, শংকর যা বুঝিয়েছেন তাও আছে, আবার রামানুজের বিশিষ্ট দ্বৈতবাদও আছে।
    নরেন্দ্র—বিশিষ্ট দ্বৈতবাদ! কী, শ্রীরামকৃষ্ণ নরেন্দ্রর প্রতি বিশিষ্ট দ্বৈতবাদ দেখিয়েছেন? রামানুজের মতো?

    জীবজগৎ বিশিষ্ট ব্রহ্ম।
    সব জড়িয়ে একটি বেল—খোলা আলাদা, বিচি আলাদা আর শাঁস আলাদা।
    একজন করেছিল। বেলটি কতজনের জানবার দরকার হয়েছিল?

    এখন শুধু শাঁস ওজন করলে কি বেলের ওজন পাওয়া যায়?
    খোলা, বিচি সব একসঙ্গে ওজন করতে হবে।
    প্রথমে খোলা নয়, বিচি নয়—সার পদার্থ বলে বোধ হয়।
    তারপর বিচার করে দেখা যায় সেই বস্তুর।
    সেই বস্তুর খোলা, বিচি করে যেতে হয়।
    জীবনীতি, জগৎনীতি—এরও বিচার করতে হয়।
    বস্তু আর সব অবস্তু। তারপর অনুভব হয়,
    যার শাঁস তারই খোলা, বিচি।
    যা থেকে ব্রহ্ম বলছো, তাই থেকে জীবজগৎ।
    যারই নিত্য, তারই লীলা।
    তাই রামানুজ বলতেন—
    জীবজগৎ বিশিষ্ট ব্রহ্ম।
    এরই নাম বিশিষ্ট দ্বৈতবাদ।

  • Ramakrishna 428: তিনি শুদ্ধ বুদ্ধির গোচর, তিনি শুদ্ধ বুদ্ধির শুদ্ধ আত্মা

    Ramakrishna 428: তিনি শুদ্ধ বুদ্ধির গোচর, তিনি শুদ্ধ বুদ্ধির শুদ্ধ আত্মা

    শ্রীরামকৃষ্ণ (গিরিশের প্রতি), “একটু ইংরেজিতে দু’জনে বিচার করো, আমি দেখব।”

    বিচার আরম্ভ হল। ইংরেজিতে তেমন হল না, বাংলা ভাষাতেই আলোচনা চলল—মাঝে মাঝে দু’একটা ইংরেজি শব্দ। নরেন্দ্র বললেন, “ঈশ্বর অনন্ত। তাঁকে সম্পূর্ণরূপে ধারণ করা আমাদের সাধ্য নয়। তিনি সকলের মধ্যেই আছেন, কেবল একজনের মধ্যে নন।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ সস্নেহে বললেন, “ওর যা মত—আমারও তাই মত। তিনি সর্বত্রই আছেন। তবে একটা কথা আছে—শক্তির বিশেষ প্রকাশ। কোথাও অবিদ্যা-শক্তির প্রকাশ, কোথাও বিদ্যা-শক্তির। কোনও আঁধারে শক্তি বেশি, কোনও আঁধারে শক্তি কম। তাই সব মানুষ সমান নয়।”

    রাম- এসব মিছে তর্কে কী হবে?

    শ্রীরামকৃষ্ণ- না না, ওর একটা মানে আছে।

    গিরিশ (নরেন্দ্রর প্রতি): তুমি কেমন করে জানলে, তিনি (ঈশ্বর) দেহ ধারণ করে আসেন না?

    শ্রীরামকৃষ্ণ: না, তিনি শুদ্ধ বুদ্ধির গোচর। তিনি শুদ্ধ বুদ্ধির শুদ্ধ আত্মা। যাঁরা শুদ্ধ আত্মা, তাঁরা তাঁকেই সাক্ষাৎ করেন।

    গিরিশ: কিন্তু মানুষের অবতার না হলে কে মানুষকে বুঝিয়ে দেবে? মানুষকে জ্ঞান, ভক্তি দেবার জন্যই তো তিনি দেহ ধারণ করেন। না হলে কে শিক্ষা দেবে?

    নরেন্দ্র- হ্যাঁ, তিনি অন্তর থেকে বুঝিয়ে দেবেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ- হ্যাঁ হ্যাঁ, অন্তর্যামী রূপে তিনি বুঝিয়ে দেন।

    তারপর শুরু হলো ঘোর তর্ক। “ইনফিনিটি”-এর কী অংশ হয়? হ্যামিল্টন কী বলেন, হার্বার্ট স্পেনসার কী বলেন, টিন্ডেল, হাক্সলে, বাকিরা কী বলেছেন—এই সব নিয়ে আলোচনা চলতে লাগল।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি): দেখো, এগুলো আমার ভালো লাগছে না। আমি সব কিছু দেখছি, বিচার করছি—আর করব কী? দেখছি, তিনিই সব। তিনিই সব হয়েছেন।

    “তাও বটে… আবার তাও বটে।”
    এক অবস্থায় মন, বুদ্ধি—সব লীন হয়ে যায়, অখণ্ডে বিলীন হয়।
    নরেন্দ্রকে দেখে আমার মনও সেই অখণ্ডে লীন হয়ে যায়।

  • Ramakrishna 427: শ্রীরামকৃষ্ণ (গিরিশের প্রতি), “একটু ইংরেজিতে দু’জনে বিচার করো, আমি দেখব”

    Ramakrishna 427: শ্রীরামকৃষ্ণ (গিরিশের প্রতি), “একটু ইংরেজিতে দু’জনে বিচার করো, আমি দেখব”

    নিত্য বললেন, “লোক ভালো লাগে না। অনেক কথা বলে — ভয় লাগে। আবার কখনো সাহস হয়।”

    ঠাকুর বললেন, “তা হবে বৈকি। তোদের সঙ্গে কে থাকে?”

    নিত্য বললেন, “তারক — সে সব সময় সঙ্গে থাকে। তবে সেও ভালো সময় কাটাতে পারছে না।”

     সপ্তম পরিচ্ছেদ
    ১৮৮৫ সালের ১১ই মার্চ – পার্ষদদের সঙ্গে অবতার সম্বন্ধে বিচার

    শ্রীরামকৃষ্ণ – “নেংটা বলত—তাদের মধ্যে একজন সিদ্ধপুরুষ ছিলেন, তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে হেঁটে চলে যেতেন। গণেশজির সঙ্গে যেতেন। বড় দুঃখ—তিনি অধৈর্য হয়ে গিয়েছিলেন।”

    বলতে বলতে শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবান্তর হল। তিনি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে রইলেন, পরে বললেন, “তুই এসেছিস, আমিও এসেছি।”

    এ কথা কে বুঝবে?—এ যেন দেবভাষা!

    ভক্তেরা অনেকে উপস্থিত—শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে বসে আছেন নরেন্দ্র, গিরিশ, রাম, হরিপদ, চুনি, বলরাম, মাস্টার এবং আরও অনেকে। আলোচনা হচ্ছে—মানুষদেহ নিয়ে ঈশ্বর অবতার হন কি না। এদিকে গিরিশের দৃঢ় বিশ্বাস—তিনি যুগে যুগে অবতার হন এবং মানবদেহ ধারণ করে মর্ত্যে আসেন। ঠাকুরের ইচ্ছা—এই বিষয়ে দু’জনের মধ্যে বিচার হোক।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (গিরিশের প্রতি), “একটু ইংরেজিতে দু’জনে বিচার করো, আমি দেখব।”

    বিচার আরম্ভ হল। ইংরেজিতে তেমন হল না, বাংলা ভাষাতেই আলোচনা চলল—মাঝে মাঝে দু’একটা ইংরেজি শব্দ।
    নরেন্দ্র বললেন, “ঈশ্বর অনন্ত। তাঁকে সম্পূর্ণরূপে ধারণ করা আমাদের সাধ্য নয়। তিনি সকলের মধ্যেই আছেন, কেবল একজনের মধ্যে নন।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ সস্নেহে বললেন,
    “ওর যা মত—আমারও তাই মত। তিনি সর্বত্রই আছেন। তবে একটা কথা আছে—শক্তির বিশেষ প্রকাশ। কোথাও অবিদ্যা-শক্তির প্রকাশ, কোথাও বিদ্যা-শক্তির। কোনও আঁধারে শক্তি বেশি, কোনও আঁধারে শক্তি কম। তাই সব মানুষ সমান নয়।”

  • Ramakrishna 426: নিত্য বললেন, “হ্যাঁ, দক্ষিণেশ্বরে যেতে চাই, তবে শরীর ভালো নয়

    Ramakrishna 426: নিত্য বললেন, “হ্যাঁ, দক্ষিণেশ্বরে যেতে চাই, তবে শরীর ভালো নয়

    তাঁর কণ্ঠে করুণাভরা প্রতিটি শব্দ।

    হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লেন — নরেনের দিকে চেয়ে বললেন:

    জীব, জগৎ, ঈশ্বর — এসব কি তিনি দেখছিলেন? কে জানে!
    দু-একটি কথা উচ্চারিত হলো — যেন বেদবাক্য, যেন দৈববাণী।
    অথবা যেন অনন্ত সমুদ্রতীরে দাঁড়িয়ে আছি — আর অনন্ত তরঙ্গের শব্দ শুনছি।
    অনাহত ধ্বনির এক-দুটি সুর যেন কর্ণকুহরে প্রবেশ করল।
    ১১ মার্চ ১৮৮৫ — গিরিশ ঠাকুরের বাড়িতে শ্রী রামকৃষ্ণ

    সন্ধ্যার পর গিরিশ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে গৃহে নিয়ে এলেন।
    ঠাকুর ভক্তদের সঙ্গে গিরিশের বাড়ির নিকট পৌঁছাতেই,
    গিরিশ দণ্ডবৎ হয়ে পড়লেন — ঠাকুরের পদস্পর্শ করলেন।
    তাঁকে নিয়ে উঠলেন দ্বিতীয় তলার বৈঠকখানায়।

    ভক্তরা দ্রুত আসন গ্রহণ করলেন — সবার ইচ্ছা ঠাকুরের কাছে বসে তাঁর মধুর বচন শ্রবণ করা।
    ঠাকুর আসনে বসতে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ দেখলেন একখানা খবরের কাগজ পড়ে আছে।
    খবরের কাগজে বিশ্বজিতের কথা, বিষয়-আলোচনা, পরনিন্দা — অপবিত্র সবকিছু।
    ঠাকুর ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন — যেন তা সরিয়ে ফেলা হয়।

    খবরের কাগজ সরানোর পর তিনি আসনে বসলেন।
    নিত্যগোপাল প্রণাম করলেন।
    শ্রীরামকৃষ্ণ বললেন,
    “ওখানে?”

    নিত্য বললেন, “হ্যাঁ, দক্ষিণেশ্বরে যেতে চাই। তবে শরীর ভালো নয় — মাথাব্যথা।”
    ঠাকুর বললেন,
    “কেমন আছিস?”

    নিত্য বললেন,
    “ভালো নয়।”

    ঠাকুর বললেন,
    “দুই-একদিন নিচে থাকিস।”

    নিত্য বললেন,
    “লোক ভালো লাগে না। অনেক কথা বলে — ভয় লাগে। আবার কখনো সাহস হয়।”

    ঠাকুর বললেন,
    “তা হবে বৈকি। তোদের সঙ্গে কে থাকে?”

    নিত্য বললেন, “তারক — সে সব সময় সঙ্গে থাকে। তবে সেও ভালো সময় কাটাতে পারছে না।”

  • Ramakrishna 425: সন্ধ্যার পর গিরিশ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে গৃহে নিয়ে এলেন

    Ramakrishna 425: সন্ধ্যার পর গিরিশ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে গৃহে নিয়ে এলেন

    সেই পুরুষ বাক্য-মন-এর অতীত নন — তিনি শুদ্ধ মনের, শুদ্ধ বুদ্ধির, শুদ্ধ আত্মার গোচর।”
    তবে কি তিনি সেই পুরুষের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন? এই কি সেই দর্শন?

    এমন সময় নরেন আসছেন — ঠাকুর বলতে লাগলেন,
    “নরেন্দ্র, নরেন্দ্র…”
    পাগলের মতো আচরণ।
    নরেন আসতেই ঠাকুর কথা বললেন না।
    লোকে বলছে — এটাই ‘ভাব’। এই রূপ শ্রীগৌরাঙ্গের ক্ষেত্রেও হয়েছে।
    এ ভাব কে বুঝবে?

    গিরিশের বাড়ির গলির সামনে ঠাকুর এসে উপস্থিত হলেন।
    সঙ্গে ভক্তগণ। এবার ঠাকুর নরেনকে সম্ভাষণ করলেন।
    নরেন্দ্র বললেন,
    “ভালো আছেন?”

    তাঁর কণ্ঠে করুণাভরা প্রতিটি শব্দ।
    তখনও মনে হচ্ছে যেন ‘তারও দেশে’ তিনি পৌঁছাননি।
    হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লেন — নরেনের দিকে চেয়ে বললেন:

    জীব, জগৎ, ঈশ্বর — এসব কি তিনি দেখছিলেন? কে জানে!
    দু-একটি কথা উচ্চারিত হলো — যেন বেদবাক্য, যেন দৈববাণী।
    অথবা যেন অনন্ত সমুদ্রতীরে দাঁড়িয়ে আছি — আর অনন্ত তরঙ্গের শব্দ শুনছি।
    অনাহত ধ্বনির এক-দুটি সুর যেন কর্ণকুহরে প্রবেশ করল।
    ১১ মার্চ ১৮৮৫ — গিরিশ ঠাকুরের বাড়িতে শ্রী রামকৃষ্ণ

    সন্ধ্যার পর গিরিশ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে গৃহে নিয়ে এলেন।
    ঠাকুর ভক্তদের সঙ্গে গিরিশের বাড়ির নিকট পৌঁছাতেই,
    গিরিশ দণ্ডবৎ হয়ে পড়লেন — ঠাকুরের পদস্পর্শ করলেন।
    তাঁকে নিয়ে উঠলেন দ্বিতীয় তলার বৈঠকখানায়।

    ভক্তরা দ্রুত আসন গ্রহণ করলেন — সবার ইচ্ছা ঠাকুরের কাছে বসে তাঁর মধুর বচন শ্রবণ করা।
    ঠাকুর আসনে বসতে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ দেখলেন একখানা খবরের কাগজ পড়ে আছে।
    খবরের কাগজে বিশ্বজিতের কথা, বিষয়-আলোচনা, পরনিন্দা — অপবিত্র সবকিছু।
    ঠাকুর ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন — যেন তা সরিয়ে ফেলা হয়।

  • Ramakrishna 424: নরেন আসতেই ঠাকুর কথা বললেন না, লোকে বলছে — এটাই ‘ভাব’

    Ramakrishna 424: নরেন আসতেই ঠাকুর কথা বললেন না, লোকে বলছে — এটাই ‘ভাব’

    গিরিশের নিমন্ত্রণে রাত্রেই যেতে হবে। এখন রাত নটা — ঠাকুর রাত্রির আহার গ্রহণ করবেন বলে প্রস্তুতি চলছে।
    পাছে বলরাম মনে কষ্ট পান, ঠাকুর গিরিশের বাড়ি যাইবার সময় তাকে বুঝিয়ে বলছেন,
    “বলরাম, তুমিও খাবার পাঠিয়ে দিও।”

    দোতলা থেকে নামতে নামতেই ঠাকুর ভগবদভাব-বিভোর। যেন মাতাল — সঙ্গে নারায়ণ, মাস্টার, রাম, চুনী প্রমুখ ভক্তগণ।
    একজন ভক্ত বললেন, “সঙ্গে কে যাবে?”
    ঠাকুর বললেন, “একজন থাকলেই হবে।”

    নামতে নামতেই বিভোর অবস্থায় নারায়ণ হাত ধরতে গিয়েছিল, সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যায়।
    ঠাকুর কিছুটা বিরক্ত হন, পরে সস্নেহে নারায়ণকে বললেন,
    “হাত ধরিস না, লোকে ভাববে আমি মাতাল।”
    এরপর তিনি চললেন বৌসপাড়া তেমাথার দিকে।

    ভক্তরা পশ্চাতে পড়ে যাচ্ছেন। কে জানে তাঁর হৃদয়ের মধ্যে তখন কেমন এক অদ্ভুত দেবভাব প্রবাহিত হচ্ছিল।
    যাকে বেদে “বাক্য, মন ও চিন্তার অতীত” বলেছে — সেই রূপেই কি তিনি অনুভব করছেন তাঁকে?
    ঠাকুর যেন পাগলের মতো পদক্ষেপ করছেন। একটু আগে বলরামের বাড়িতে বলেছিলেন:

    “সেই পুরুষ বাক্য-মন-এর অতীত নন — তিনি শুদ্ধ মনের, শুদ্ধ বুদ্ধির, শুদ্ধ আত্মার গোচর।”
    তবে কি তিনি সেই পুরুষের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন? এই কি সেই দর্শন?

    এমন সময় নরেন আসছেন — ঠাকুর বলতে লাগলেন,
    “নরেন্দ্র, নরেন্দ্র…”
    পাগলের মতো আচরণ।
    নরেন আসতেই ঠাকুর কথা বললেন না।
    লোকে বলছে — এটাই ‘ভাব’। এই রূপ শ্রীগৌরাঙ্গের ক্ষেত্রেও হয়েছে।
    এ ভাব কে বুঝবে?

    গিরিশের বাড়ির গলির সামনে ঠাকুর এসে উপস্থিত হলেন।
    সঙ্গে ভক্তগণ। এবার ঠাকুর নরেনকে সম্ভাষণ করলেন।
    নরেন্দ্র বললেন,
    “ভালো আছেন?”

  • Ramakrishna 423: গিরিশ ঠাকুরকে নিমন্ত্রণ করলেন, সেই রাতেই যেতে হবে

    Ramakrishna 423: গিরিশ ঠাকুরকে নিমন্ত্রণ করলেন, সেই রাতেই যেতে হবে

    বলিলেন— “মা, আমি আমার আমি তোমার। শরণাগত। চাই না মা লোকমান্যতা, চাই না অষ্টসিদ্ধি। কেবল এই করো—যেন তোমার শ্রীপাদপদে শুদ্ধভক্তি হয়; নিষ্কাম, অমলা। হইতেও কি ভক্তি হয়? আর যেন মা, তোমার ভুবনমোহিনী মায়ায় মুগ্ধ না হই। তোমার মায়ার সংসারে কামিনী-কাঞ্চনের উপর ভালোবাসা যেন কখনও না হয়। মা, তোমার বই আমার আর কেউ নাই। আমি ভজনহীন, সাধনহীন, জ্ঞানহীন, ভক্তিহীন। কৃপা করিয়া, শ্রীপাদপদে আমায় ভক্তি দাও।”

    যিনি তাঁর নাম করিতেছেন, যাঁর শ্রীমুখে অভিনীত নামগুণ গঙ্গার মতো তৈলধারার ন্যায় নিরবিচারে প্রবাহিত হইতেছিল, তিনি নীরব ছিলেন না। তাঁর আবার সন্ধ্যা কি মনে পড়ে? তখনই বোঝা যায়, লোকশিক্ষার জন্য ঠাকুর মানবদেহ ধারণ করিয়াছেন।

    “হরি, তুমি এসে যোগীর বেশে নামসংকীর্তন করলে।”
    গিরিশ ঠাকুরকে নিমন্ত্রণ করলেন, সেই রাতেই যেতে হবে।
    শ্রীরামকৃষ্ণ বললেন, “রাত হবে না।”
    গিরিশ বললেন, “না, যখন ইচ্ছা আপনি যাবেন। আমাকে আজ থিয়েটারে যেতে হবে — ওদের ঝগড়া মেটাতে হবে।”
    ১৮৮৫ সালের ১১ মার্চ — রাজপথে শ্রী রামকৃষ্ণের ঈশ্বর-আবেশ

    গিরিশের নিমন্ত্রণে রাত্রেই যেতে হবে। এখন রাত নটা — ঠাকুর রাত্রির আহার গ্রহণ করবেন বলে প্রস্তুতি চলছে।
    পাছে বলরাম মনে কষ্ট পান, ঠাকুর গিরিশের বাড়ি যাইবার সময় তাকে বুঝিয়ে বলছেন,
    “বলরাম, তুমিও খাবার পাঠিয়ে দিও।”

    দোতলা থেকে নামতে নামতেই ঠাকুর ভগবদভাব-বিভোর। যেন মাতাল — সঙ্গে নারায়ণ, মাস্টার, রাম, চুনী প্রমুখ ভক্তগণ।
    একজন ভক্ত বললেন, “সঙ্গে কে যাবে?”
    ঠাকুর বললেন, “একজন থাকলেই হবে।”

  • Ramakrishna 422: লোকশিক্ষার জন্য ঠাকুর মানবদেহ ধারণ করিয়াছেন

    Ramakrishna 422: লোকশিক্ষার জন্য ঠাকুর মানবদেহ ধারণ করিয়াছেন

    দয়াময় গুরুদেব যে “গরুর বাট”-এর কথা বলিলেন, এই গৃহমধ্যেই কি তাহা আমরা দেখিতেছি?

    সকলের অশান্ত মন কিসের শান্তি লাভ করিল? আনন্দ ধরা কিসে? কিসে ভক্তরা আনন্দে ভাসিলেন?

    দেখিতেছি—ভক্তরা শান্ত, আর আনন্দময়।

    এই প্রেমিক সন্ন্যাসী—কি সুন্দর রূপধারী! যেন অনন্ত ঈশ্বর! এইখানেই কি দুগ্ধপান-পিপাসুর পিপাসা শান্ত হইবে?

    অবতার হোন, আর না হোন—ইহারই চরণপ্রান্তে মন বিকাশের, চিত্ত নিবেশের, আর কিছুর প্রয়োজন নাই।

    ভক্তেরা কেহ কেহ ওইরূপ চিন্তা করিতেছেন যে, ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের শ্রীমুখে বিগলিত হরিনাম ও মায়ের নাম শ্রবণ করিয়া কৃতকৃতার্থবোধ করিতেছেন। নামগুণকীর্তন আনিতে ঠাকুর প্রার্থনা করিতেছেন, যেন সাক্ষাৎ ভগবান প্রেমের দেহ ধারণ করিয়া জীবকে শিক্ষা দিতেছেন—কিরূপে প্রার্থনা করিতে হয়।

    বলিলেন—
    “মা, আমি আমার আমি তোমার। শরণাগত। চাই না মা লোকমান্যতা, চাই না অষ্টসিদ্ধি। কেবল এই করো—যেন তোমার শ্রীপাদপদে শুদ্ধভক্তি হয়; নিষ্কাম, অমলা। হইতেও কি ভক্তি হয়? আর যেন মা, তোমার ভুবনমোহিনী মায়ায় মুগ্ধ না হই। তোমার মায়ার সংসারে কামিনী-কাঞ্চনের উপর ভালোবাসা যেন কখনও না হয়। মা, তোমার বই আমার আর কেউ নাই। আমি ভজনহীন, সাধনহীন, জ্ঞানহীন, ভক্তিহীন। কৃপা করিয়া, শ্রীপাদপদে আমায় ভক্তি দাও।”

    যিনি তাঁর নাম করিতেছেন, যাঁর শ্রীমুখে অভিনীত নামগুণ গঙ্গার মতো তৈলধারার ন্যায় নিরবিচারে প্রবাহিত হইতেছিল, তিনি নীরব ছিলেন না। তাঁর আবার সন্ধ্যা কি মনে পড়ে? তখনই বোঝা যায়, লোকশিক্ষার জন্য ঠাকুর মানবদেহ ধারণ করিয়াছেন।

  • Ramakrishna 421: ভক্তরা নিস্তব্ধ হইয়া গান শুনিতেছেন, তাঁহারা একদৃষ্টে ঠাকুরের অদ্ভুত, আত্মহারা, মাতোয়ারা ভাব দেখিতেছেন

    Ramakrishna 421: ভক্তরা নিস্তব্ধ হইয়া গান শুনিতেছেন, তাঁহারা একদৃষ্টে ঠাকুরের অদ্ভুত, আত্মহারা, মাতোয়ারা ভাব দেখিতেছেন

    ভক্তেরা নিস্তব্ধ হইয়া গান শুনিতেছেন। তাহারা একদৃষ্টে ঠাকুরের অদ্ভুত, আত্মহারা, মাতোয়ারা ভাব দেখিতেছেন। গান সমাপ্ত হইলে কিয়ৎকাল পরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলিতে লাগিলেন,
    “আমার আজ গান ভালো হলো না—সর্দি হয়েছে।”

    ১৮৮৫, ১১ই মার্চ।

    সন্ধ্যার সমাগমে ক্রমে সন্ধ্যা হইল। সিন্ধু-বক্ষে যেখানে অনন্তের নীল ছায়া পড়িয়াছে, নিবিড় অরণ্যের মধ্যে অম্বরস্পর্শী পর্বতশীর্ষে বায়ু দুলিতেছে। নদীর তীরে, দিগন্তব্যাপী প্রান্তরের মধ্যে, এক ক্ষুদ্র মানবের মনে সহজেই ভাবান্তর হইল।

    এই সূর্য—এই যে সূর্য চরাচরকে আলোকিত করিতেছিল, তিনি কোথায় গেলেন?

    এক বালক ভাবিতেছে। আবার ভাবিতেছে—বালক-স্বভাবাপন্ন মহাপুরুষ। সন্ধ্যা হইল, কি আশ্চর্য! পাখিরা শাখায় আশ্রয় করিয়া রব করিতেছে। মানুষের মধ্যে যেন চৈতন্য এসেছে। তারা সেই আদি কবির, কারণের কারণ, পুরুষোত্তমের নাম পড়িতেছে।

    কথা কহিতে কহিতে সন্ধ্যা হইল। ভক্তেরা যে যে আসনে বসিয়া ছিলেন, তিনি সেই আসনেই বসিয়া রহিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ মধুর নাম করিতেছেন, সকলে উদ্‌গ্রীব হইয়া সেই নাম শুনিতেছেন।

    অমন মিষ্টি নাম—তারা যেন কখনও শোনেন নাই! যেন সুধাবর্ষণ হইতেছে! এমন প্রেম মাখা বালকের মা,মা বলে ডাকা—তারা যেন কখনও শুনেন নাই, দেখেন নাই। আকাশ, পর্বত, মহাসাগর, প্রান্তর—তাদের পরেও আর কিছু দেখিবার প্রয়োজন কী? গরুর শৃঙ্গ, পদাদি ও শরীরের অন্যান্য অংশ—আর কিছু দেখিবার প্রয়োজন আছে কি?

    দয়াময় গুরুদেব যে “গরুর বাট”-এর কথা বলিলেন, এই গৃহমধ্যেই কি তাহা আমরা দেখিতেছি?

    সকলের অশান্ত মন কিসের শান্তি লাভ করিল? আনন্দ ধরা কিসে? কিসে ভক্তরা আনন্দে ভাসিলেন?

    দেখিতেছি—ভক্তরা শান্ত, আর আনন্দময়।

    এই প্রেমিক সন্ন্যাসী—কি সুন্দর রূপধারী! যেন অনন্ত ঈশ্বর! এইখানেই কি দুগ্ধপান-পিপাসুর পিপাসা শান্ত হইবে?

    অবতার হোন, আর না হোন—ইহারই চরণপ্রান্তে মন বিকাশের, চিত্ত নিবেশের, আর কিছুর প্রয়োজন নাই।

LinkedIn
Share