Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 502: “চুল কি সোজা হয়? যেমন বাঁকা, তেমনি রহিল! অহংকারও এই যায়, আবার আসে”

    Ramakrishna 502: “চুল কি সোজা হয়? যেমন বাঁকা, তেমনি রহিল! অহংকারও এই যায়, আবার আসে”

    ৪৮ শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেন, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে

    চতুর্থ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুন

    অহংকারই বিনাশের কারণ ও ঈশ্বরলাভের বিঘ্ন

    সকলে বসিয়া আছেন। কাপ্তেন ও ভক্তদের সহিত ঠাকুর কথা কহিতেছেন। এমন সময় ব্রাহ্মসমাজের জয়গোপাল সেন ও ত্রৈলোক্য আসিয়া প্রণাম করিয়া আসন গ্রহণ করিলেন। ঠাকুর সহাস্যে ত্রৈলোক্যের দিকে তাকাইয়া কথা কহিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) — অহংকার আছে বলে ঈশ্বরদর্শন হয় না। ঈশ্বরের বাড়ির দরজার সামনে এই অহংকাররূপ গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে। এই গুঁড়ি উল্লঙ্ঘন না করলে তাঁর ঘরে প্রবেশ করা যায় না।

    “একজন ভূতসিদ্ধ হয়েছিল। সিদ্ধ হয়ে যাই ডেকেছে, অমনি ভূতটি এসেছে। এসে বললে, ‘কি কাজ করতে হবে বল। কাজ যাই দিতে পারবে না, অমনি তোমার ঘাড় ভাঙব।’ সে ব্যক্তি যত কাজ দরকার ছিল, সব ক্রমে ক্রমে করিয়ে নিল। তারপর আর কাজ পায় না। ভূতটি বললে, ‘এইবার তোমার ঘাড় ভাঙি?’ সে বললে (Kathamrita), ‘একটু দাঁড়াও, আমি আসছি’। এই বলে গুরুদেবের কাছে গিয়ে বললে, ‘মহাশয়! ভারী বিপদে পড়েছি, এই এই বিবরণ, এখন কি করি?’ গুরু তখন বললেন, তুই এক কর্ম কর, তাকে এই চুলগাছটি সোজা করতে বল। ভূতটি দিনরাত ওই করতে লাগল। চুল কি সোজা হয়? যেমন বাঁকা, তেমনি রহিল! অহংকারও এই যায়, আবার আসে।

    “অহংকার ত্যাগ না করলে ঈশ্বরের কৃপা হয় না।

    “কর্মের বাড়িতে যদি একজনকে ভাঁড়ারী করা যায়, যতক্ষণ ভাঁড়ারে সে থাকে ততক্ষণ কর্তা আসে না। যখন সে নিজে ইচ্ছা করে ভাঁড়ার ছেড়ে চলে যায়, তখনই কর্তা ঘরে চাবি দেয় ও নিজে ভাঁড়ারের বন্দোবস্ত করে।

    “নাবালকেরই অছি। ছেলেমানুষ নিজে বিষয় রক্ষা করতে পারে না, রাজা ভার লন। অহংকার ত্যাগ না করলে ঈশ্বর (Ramakrishna) ভার লন না।

    বৈকুণ্ঠে লক্ষ্মীনারায়ণ বসে আছেন, হঠাৎ নারায়ণ উঠে দাঁড়ালেন। লক্ষ্মী পদসেবা করছিলেন; বললেন, ‘ঠাকুর কোথা যাও?’ নারায়ণ বললেন, ‘আমার একটি ভক্ত বড় বিপদে পড়েছে তাই তাকে রক্ষা করতে যাচ্ছি!’ এই বলে নারায়ণ বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু তৎক্ষণাৎ আবার ফিরলেন। লক্ষ্মী বললেন, ‘ঠাকুর এত শীঘ্র ফিরলে যে?’ নারায়ণ হেসে বললেন, ‘ভক্তটি প্রেমে বিহ্বল হয়ে পথে চলে যাচ্ছিল, ধোপারা কাপড় শুকাতে দিছল, ভক্তটি মাড়িয়ে যাচ্ছিল। দেখে ধোপারা লাঠি লয়ে তাকে মারতে যাচ্ছিল। তাই আমি তাকে রক্ষা করতে গিয়েছিলাম’। লক্ষ্মী আবার বললেন, ‘ফিরে এলেন কেন?’ নারায়ণ হাসতে হাসতে বললেন, ‘সে ভক্তটি নিজে ধোপাদের মারবার জন্য ইট তুলেছে দেখলাম (Kathamrita)। (সকলের হাস্য) তাই আর আমি গেলাম না’।”

  • Vande Mataram: বঙ্কিমের ‘বন্দে মাতরম’ কীভাবে হয়ে উঠল ভারত স্বাধীনতার মহামন্ত্র, ফিরে দেখা ইতিহাস

    Vande Mataram: বঙ্কিমের ‘বন্দে মাতরম’ কীভাবে হয়ে উঠল ভারত স্বাধীনতার মহামন্ত্র, ফিরে দেখা ইতিহাস

    ড. সুমন চন্দ্র দাস

    পরাধীন ভারতে বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা ‘বন্দে মাতরম’ গান এক মহামন্ত্র হয়ে উঠেছিল। আজ তার সার্ধশতবর্ষে পদার্পণ যাত্রা। দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে ভারত মায়ের বন্দনাগীত। এই গানেই ব্রিটিশদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল বাঙ্গালি বিপ্লবীরা। ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে ভবানন্দ অশ্রুসিক্ত নয়নে মায়ের পরিচয় দিয়েছেন এই মা হলেন দেশমাতৃকা দুর্গা মাতা। মায়ের স্বরূপ খুব স্পষ্ট-জগদ্ধাত্রী রূপে ‘মা যা ছিলেন’, কঙ্কাল মালিনী কালিকারূপিণী ‘মা যা হইয়াছেন’ আর দশভুজা ত্রম্বকে গৌরী নারায়ণী রূপে ‘মা যা হইবেন’। অষ্টমীর দুর্গা মাই হলেই বঙ্গজননী দেশমাতৃকা।

    বুকে রক্তে নাচন আনবে

    তখন শরৎ কাল, মা দুর্গা মর্তে আসবেন। আকাশে বাতাসে আগমনীর সুর। নৈহাটির কাঁঠাল পাড়ার বাড়িতে বসে বঙ্কিম চন্দ্র আব্লুস কাঠের টেবিলে বসে লিখেছিলেন এই কালজয়ী গান। পরে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর গানটি বঙ্গদর্শনে প্রকাশ হয়েছিল। এই গান উপন্যাস আনন্দমঠে প্রকাশিত হয় ১৮৮২ সালে। তবে গানের ভাষা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন অনেকেই। নবীন সেন বলেছিলেন, “আধা সংস্কৃত এবং আধা বাংলায় জগাখিচুড়ি। যাত্রাগানের মতো।” স্বভাবত বঙ্কিম খুব ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন সে কথায়। বঙ্কিম বলেছিলেন, “আচ্ছা ভাই ভাল না লাগলে পড়ো না।” ১৮৯৪ সালে মৃত্যু শোকে শায়িত হয়ে বঙ্কিম নিজের কন্যাকে বলেছিলেন, “একদিন তোরা দেখে নিস আজ থেকে বিশ ত্রিশ বছর পর এই বন্দে মাতরম সারা দেশের মানুষের বুকে রক্তে নাচন আনবে।” আর ঠিক তাই হয়েছিল।

    নতুন ধর্মমত

    ১৮৮৩ সালে ব্রিটিশ ভারতের বাংলায় ইলবার্ট বিল নিয়ে বাংলার ছাত্র সামজ আন্দোলন করেছিল। সেই সময় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনও ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি শোনা যায়নি। ১৮৮৬ সালে কলকাতায় কংগ্রেস অধিবেশন বসে। সেখানে ‘বন্দে মাতরম’-কে সঙ্গীত হিসবে গাওয়া হয়। এই গান একই ভাবে স্বদেশ মাতৃকা মূর্তি এবং মহামন্ত্র হিসেবে প্রকাশ পায়। ঋষি অরবিন্দ এই গানকে বলেছিলেন, “বন্দে মাতরম কেবল মাত্র গান নয়, এটা হল জাতির প্রাণবায়ু দিয়ে গড়া তার জাগরণী মন্ত্র। এই মন্ত্র কেবল ভারতের নয়, পরন্তু সমগ্র এশিয়ার স্বাধীনতার উদ্বোধনী মন্ত্র। নতুন ধর্মমত।  The Religion of Partriotism.”

    লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীদের মিছিল

    ১৯০৫ সালের ৭ অগাস্ট সারা বঙ্গ জুড়ে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। ব্রিটিশর নিজেদের শাসনকে আরও সুদূর প্রসারী করতে এই কুচক্র করে। প্রতিবাদে কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে টাউন হল পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীদের মিছিল হয়। দৃপ্তে কণ্ঠে গাওয়া হয় ‘বন্দে মাতরম’। রাতারাতি এই ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি সারা ভারত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অরবিন্দ দিয়েছিলেন গানের দেশাত্মবোধক ব্যাখ্যা। তাঁর ‘বন্দে মাতরম’ পত্রিকায় বিস্তারিত আলোচনা করেন। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং গানের স্বরলিপি লিখে দেন। দেশ রাগে গান গান। কলকাতার এপিসি রোডের সাধনা সরকার উদ্যানে প্রথম ত্রিবর্ণ বন্দে মাতরম ও পদ্ম চিহ্ন পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরের বছর জার্মানিতে একই পতাকা উত্তোলন করেন ভিকাজি রুস্তম কামা।

    দেশমাতৃকা মুক্তির জয় গান

    ১৯০৬ সালে ১৪ এপ্রিল বরিশালে কংগ্রেসের অধিবেশন বসে। নেতার লঞ্চে করে নদীর পারে পৌঁছালে স্থানীয় কর্মীরা ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানান। ধীরে ধীরে দেশমাতৃকা মুক্তির জয় গানে পরিণত হয় এই গান। তবে পাল্টা ব্রিটিশ সরকারও এই স্বদেশ মাতার মন্ত্রকে নস্যাৎ করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বঙ্গ প্রদেশে আইন করে ওয়ার ক্রাই ঘোষণা করে। বহুবলধারিণী মন্ত্রে উদ্ভাসিত হয় গোটা দেশের মানুষ। ব্রিটিশ পুলিশ ছোট চিত্তরঞ্জনকে ব্যাপক ভাবে লাঠির আঘাত করেছিল। চিত্তরঞ্জন যত বার আঘাত পান ততবার ‘বন্দে মাতরম’ বলে ওঠেন। এই গানের প্রভাবে দক্ষিণ ভারতের তামিল কবি সুব্রাহ্মন্যভারতী ‘বন্দে মাতরম’কে তামিল ভাষায় সঙ্গীত রচনা করেন। তিনি বঙ্কিমের এই কালজয়ী গানকে বলেছিলেন, “The Great song which has become the national anthem of United India.”

    হৃদয় মাতানো আত্মোদ্দীপক গান

    ১৯০৬ সাল, ১২ সেপ্টেম্বর ড জি এ গিয়াসর্ন টাইম্‌স্‌ পত্রিকায় ‘বন্দে মাতরম’ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “হিন্দুদের কালী নামে ভয়ঙ্করী দেবতা আছে, ধ্বংস ও সংহার রূপিণী, এই কালী ‘বন্দে মাতরম’।” একই পত্রিকায় ১৩ সেপ্টেম্বর স্যার হেনরি গানের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “ ‘বন্দে মাতরম’ মাতৃভূমির বন্দনা। ইংরেজ নিধন প্রধান নয়।” আবার সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর সম্পাদিত ‘ডন’ পত্রিকায় বলেছেন, “কোন বাঙ্গালির হৃদয় এই দুটি যাদুময় শব্দে দ্রুতবেগে স্পন্দিত হয় না?… হৃদয় মাতানো আত্মোদ্দীপক গান।”

    কাশীতে গান গান সরলা দেবী

    ১৯০৬ সালে কাশীতে কংগ্রেসের অধিবেশন হয়। সেখানে সভাপতিত্ব করেন গোখলে। নিবেদিতা তাঁর ভাষণ লিখে দিয়েছিলেন। চরমপন্থী এবং নরমপন্থীদের মধ্যে সমন্বয় করান। বাংলায় ‘বন্দে মাতরম’ নিষিদ্ধ হলেও কাশীতে ছিল না। গানের প্রথম দুটি স্তবক গাইলেন সরলা দেবী। কিন্তু গানের আগুনে লালায়িত হয়ে ওঠে গোটা ভারত। পরে সম্পূর্ণ গান গাইতে হয় সরলাদেবীকে। পিয়ানো বাজিয়েছিলেন জ্যোতি দাদা। রাজনৈতিক কর্মসূচি হোক বা সভা-সমিতি এই ‘বন্দে মাতরম’ ধীরে ধীরে মহামমন্ত্রে রূপ নিয়েছে। ব্রিটিশ পুলিশের লাঠির আঘাতে, বেয়নেটের মুখে, রাইফেলের গুলিতে নিরস্ত্র ভারতীরা ধ্বনি তুলেছে ‘বন্দে মাতরম’। আন্দামানের সেলুলার জেল, বার্মার মান্দালয়, হিজলি, বক্সারে বহুবলধারিণীর মন্ত্র ফুটে উঠেছে।

    জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা

    ১৯৩৭ সালের ২৮ অক্টোবর কলকাতায় কংগ্রেস অধিবেশনের ওয়ার্কিং কমিটিতে জাতীয় সঙ্গীত হিসেব প্রস্তাব গৃহীত হয় বঙ্কিমের গান। যে কমিটি ‘বন্দে মাতরম’-কে গ্রহণ করেছিল তাঁর মধ্যে ছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। এই ‘বন্দে মাতরম’ গেয়েই ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকি, মাস্টারদা সূর্য সেন, মাতঙ্গিনী হাজরা সহ প্রমুখ বিপ্লবীরা নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য। ‘বন্দে মাতরম’ যে মহামন্ত্র আমাদের মধ্যে দিয়ে গেছেন বঙ্কিম তা আজ দেশের শিরায় শিরায় প্রবাহিত হচ্ছে। তাই সার্ধশতবর্ষে আগামী প্রজন্মের কাছে এই মন্ত্রের গুরুত্ব তুলে ধরা একান্ত প্রয়োজন।

  • Ramakrishna 501: “পূর্ণ ও অংশ,—যেমন অগ্নি ও তার স্ফুলিঙ্গ, অবতার ভক্তের জন্য,—জ্ঞানীর জন্য নয়”

    Ramakrishna 501: “পূর্ণ ও অংশ,—যেমন অগ্নি ও তার স্ফুলিঙ্গ, অবতার ভক্তের জন্য,—জ্ঞানীর জন্য নয়”

    ৪৮ শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেন, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুন

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)  ভাবে বিভোর হইতেছেন। ‘গোবিন্দ!’ ‘গোবিন্দ!’ ‘গোবিন্দ!’ এই কথা বলিতে বলিতে আবিষ্ট হইতেছেন! প্রায় বাহ্যশূন্য। কাপ্তেন সবিসময়ে বলিতেছেন, ‘ধন্য!’ ‘ধন্য!’

    কাপ্তেন ও সমবেত ভক্তগণ ঠাকুরের এই অদ্ভুত প্রেমাবস্থা দেখিতেছেন। যতক্ষণ না তিনি প্রকৃতিস্থ হন, ততক্ষণ তাঁহারা চুপ করিয়া একদৃষ্টে দেখিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—তারপর?

    কাপ্তেন—তিনি যোগীদিগের অগম্য—‘যোগিভিরগম্যম্‌’—আপনার ন্যায় যোগীদের অগম্য; কিন্তু গোপীদিগের গম্য। যোগীরা কত বৎসর যোগ করে যাঁকে পায় নাই; কিন্তু গোপীরা অনায়াসে তাঁকে পেয়েছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—গোপীদের কাছে খাওয়া, খেলা, কাঁদা, আব্দার করা, এ-সব হয়েছে।

    শ্রীযুক্ত বঙ্কিম ও শ্রীকৃষ্ণ-চরিত্র—অবতারবাদ 

    একজন ভক্ত বলিলেন, ‘শ্রীযুক্ত বঙ্কিম কৃষ্ণ-চরিত্র লিখেছেন।’

    শ্রীরামকৃষ্ণ—বঙ্কিম শ্রীকৃষ্ণ মানে, শ্রীমতী মানে না।

    কাপ্তেন—বুঝি লীলা মানেন না?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—আবার বলে নাকি কামাদি—এ-সব দরকার।

    দমদম মাস্টার—নবজীবনে বঙ্কিম লিখেছেন ধর্মের প্রয়োজন এই যে, শারীরিক, মনাসিক, আধ্যাত্মিক প্রভৃতি সব বৃত্তির স্ফূর্তি হয়।

    কাপ্তেন—‘কামাদি দরকার’, তবে লীলা মানেন না। ঈশ্বর মানুষ হয়ে বৃন্দাবনে এসেছিলেন, রাধাকৃষ্ণলীলা (Ramakrishna), তা মানেন না?

    পূর্ণব্রহ্মের অবতার—শুধু পাণ্ডিত্য ও প্রত্যক্ষের প্রভেদ—
    Mere booklearning and Realisation

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—ও-সব কথা যে খবরের কাগজে নাই (Kathamrita), কেমন করে মানা যায়!

    “একজন তার বন্ধুকে এসে বললে, ‘ওহে! কাল ও-পাড়া দিয়ে যাচ্ছি, এমন সময় দেখলাম, সে-বাড়িটা হুড়মুড় করে পড়ে গেল।’ বন্ধু বললে, দাঁড়াও হে, একবার খবরের কাগজখানা দেখি। এখন বাড়ি হুড়মুড় করে পড়ার কথা খবরের কাগজে কিছুই নাই। তখন সে ব্যক্তি বললে, ‘কই খবরের কাগজে তো কিছুই নাই।— ও-সব কাজের কথা নয়।’ সে লোকটা বললে, ‘আমি যে দেখে এলাম।’ ও বললে, ‘তা হোক্‌ যেকালে খবরের কাগজে নাই, সেকালে ও-কথা বিশ্বাস করলুম না।’ ঈশ্বর মানুষ হয়ে লীলা করেন, এ-কথা কেমন করে বিশ্বাস করবে? এ-কথা যে ওদের ইংরাজী লেখাপড়ার ভিতর নাই! পূর্ণ অবতার বোঝানো বড় শক্ত, কি বল? চৌদ্দ পোয়ার ভিতর অনন্ত আসা!”

    কাপ্তেন—‘কৃষ্ণ ভগবান্‌ স্বয়ম্‌।’ বলবার সময় পূর্ণ ও অংশ বলতে হয়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—পূর্ণ ও অংশ,—যেমন অগ্নি ও তার স্ফুলিঙ্গ। অবতার ভক্তের জন্য,—জ্ঞানীর জন্য নয়। অধ্যাত্মরামায়ণে আছে — হে রাম! তুমিই ব্যাপ্য, তুমিই ব্যাপক, ‘বাচ্যবাচকভেদেন ত্বমেব পরমেশ্বর।’

    কাপ্তেন—‘বাচ্যবাচক’ অর্থাৎ ব্যাপ্য-ব্যাপক (Kathamrita)।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—‘ব্যাপক’ অর্থাৎ যেমন ছোট একটি রূপ, যেমন অবতার মানুষরূপ হয়েছেন।

  • Ramakrishna 500: “তিনি যোগীদিগের অগম্য—‘যোগিভিরগম্যম্‌’—আপনার ন্যায় যোগীদের অগম্য; কিন্তু গোপীদিগের গম্য”

    Ramakrishna 500: “তিনি যোগীদিগের অগম্য—‘যোগিভিরগম্যম্‌’—আপনার ন্যায় যোগীদের অগম্য; কিন্তু গোপীদিগের গম্য”

    ৪৮ শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেন, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুন

    কাপ্তেন ছেলেদের সঙ্গে করিয়া আসিয়াছেন

    ঠাকুর কিশোরীকে বলিলেন, “এদের সব দেখিয়ে এস তো,—ঠাকুরবাড়ি!”

    ঠাকুর কাপ্তেনের সহিত কথা কহিতেছেন।

    মাস্টার, দ্বিজ ইত্যাদি ভক্তেরা মেঝেতে বসিয়া আছেন। দমদমার মাস্টারও আসিয়াছেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ছোট খাটটিতে উত্তরাস্য হইয়া বসিয়া আছেন। তিনি কাপ্তেনকে ছোট খাটটির এক পার্শ্বে তাঁহার সম্মুখে বসিতে বলিলেন।

    পাকা-আমি বা দাস-আমি 

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তোমার কথা এদের বলছিলাম,—কত ভক্ত, কত পূজা, কত রকম আরতি!

    কাপ্তেন (সলজ্জভাবে)—আমি কি পূজা আরতি করব? আমি কি?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—যে ‘আমি’ কামিনী-কাঞ্চনে আসক্ত, সেই আমিতেই দোষ। আমি ঈশ্বরের দাস, এ আমিতে দোষ নাই। আর বালকের আমি,—বালক কোনও গুণের বশ নয়। এই ঝগড়া করছে, আবার ভাব! এই খেলাঘর করলে কত যত্ন করে, আবার তৎক্ষণাৎ ভেঙে ফেললে! দাস আমি —বালকের আমি, এতে কোনও দোষ নাই। এ আমি আমির মধ্যে নয়, যেমন মিছরি মিষ্টের মধ্যে নয়। অন্য মিষ্টতে অসুখ করে, কিন্তু মিছরিতে বরং অমলনাশ হয়। আর যেমন ওঁকার শব্দের মধ্যে নয়।

    “এই অহং দিয়ে সচ্চিদানন্দকে ভালবাসা যায়। অহং তো যাবে না — তাই ‘দাস আমি’, ‘ভক্তের আমি’। তা না হলে মানুষ কি লয়ে থাকে। গোপীদের কি ভালবাসা! (কাপ্তেনের প্রতি) তুমি গোপীদের কথা কিছু বল। তুমি অত ভাগবত পড়।”

    কাপ্তেন—যখন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে আছেন, কোন ঐশ্বর্য নাই, তখনও গোপীরা তাঁকে প্রাণাপেক্ষা ভালবেসেছিলেন। তাই কৃষ্ণ বলেছিলেন, আমি তাদের ঋণ কেমন করে শুধবো? যে গোপীরা আমার প্রতি সব সমর্পণ করেছে,—দেহ,—মন,—চিত্ত।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)  ভাবে বিভোর হইতেছেন। ‘গোবিন্দ!’ ‘গোবিন্দ!’ ‘গোবিন্দ!’ এই কথা বলিতে বলিতে আবিষ্ট হইতেছেন! প্রায় বাহ্যশূন্য। কাপ্তেন সবিসময়ে বলিতেছেন, ‘ধন্য!’ ‘ধন্য!’

    কাপ্তেন ও সমবেত ভক্তগণ ঠাকুরের এই অদ্ভুত প্রেমাবস্থা দেখিতেছেন। যতক্ষণ না তিনি প্রকৃতিস্থ হন, ততক্ষণ তাঁহারা চুপ করিয়া একদৃষ্টে দেখিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—তারপর?

    কাপ্তেন—তিনি যোগীদিগের অগম্য—‘যোগিভিরগম্যম্‌’—আপনার ন্যায় যোগীদের অগম্য; কিন্তু গোপীদিগের গম্য। যোগীরা কত বৎসর যোগ করে যাঁকে পায় নাই; কিন্তু গোপীরা অনায়াসে তাঁকে পেয়েছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—গোপীদের কাছে খাওয়া, খেলা, কাঁদা, আব্দার করা, এ-সব হয়েছে।

  • Guru Nanak Jayanti 2025: “চারটি বেদই সত্য, সেগুলিকে সঠিকভাবে বোঝা ও অনুশীলন করাই প্রকৃত জ্ঞান” , বলেছিলেন গুরু নানক

    Guru Nanak Jayanti 2025: “চারটি বেদই সত্য, সেগুলিকে সঠিকভাবে বোঝা ও অনুশীলন করাই প্রকৃত জ্ঞান” , বলেছিলেন গুরু নানক

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম ধর্মগুরু গুরু নানক দেব ১৪৬৯ সালে কার্তিক পূর্ণিমার দিনে জন্মগ্রহণ করেন। তাই প্রতি বছর কার্তিক পূর্ণিমায় গুরু নানক জয়ন্তী (Guru Nanak Jayanti 2025) পালিত হয়। চলতি বছর ৫ নভেম্বর নানক জয়ন্তী পালিত হবে। শিখ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এই তিথিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রকাশ উৎসব ও গুরু পর্ব বলা হয়ে থাকে। শিখ ধর্মাবলম্বীরা পূর্ণিমার দুদিন আগে থেকে উৎসবে মেতে ওঠেন। গুরু নানক দেব জি ভারতীয় সমাজে এক নতুন আলোর দিশা দেখিয়েছিলেন—সত্য, করুণা ও প্রজ্ঞার মিশ্রণে গড়ে ওঠা মানবতার পথ। তাঁর উপদেশ ও জীবনদর্শন আজও সমাজ সংস্কারের প্রেরণাস্বরূপ। গুরু নানক জয়ন্তী উপলক্ষে সমগ্র দেশজুড়ে তাঁর শিক্ষার তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

    প্রকাশ উৎসবের মাহাত্ম্য

    সারা বছরের পবিত্র পূর্ণিমার মধ্যে অন্যতম হল কার্তিক পূর্ণিমা। এদিন যা দান-পুণ্য করা হয় তা বিশেষ ফলদায়ী। এ দিন দীপদানেরও বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। কার্তিক পূর্ণিমার দুদিন আগে থেকে প্রকাশ উৎসবের অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথম দিন অখণ্ড পাঠ করা হয়। এ সময় গুরুদ্বারা ফুল ও আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। প্রধান দিন অমৃত বেলায় এই উৎসব শুরু হবে। সকালে ভজন করার পর কাহিনি পাঠ এবং কীর্তন করা হয়ে থাকে। প্রার্থনার পর লঙ্গর বা ভান্ডারা করা হয়। লঙ্গরের পর কথা ও কীর্তনের পাঠ জারী রাখা হয়। রাতে গুরবাণী গায়নের পর উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। গুরু নানক জয়ন্তীর শুভ দিনে শিখ সম্প্রদায়ভুক্তরা নানান স্থানে লঙ্গরের আয়োজন করেন। এখানে শুদ্ধ ও নিরামিষ খাবার যেমন কড়ি, চাল, লুচি, আলু, ডাল রুটি এবং পায়েস খাওয়ানো হয়।

    গুরু নানকের পথ

    গুরু নানক দেব জি (Guru Nanak Jayanti 2025) সেই সময়ের ভারতীয় সমাজে ছড়িয়ে পড়া কুসংস্কার, ধর্মীয় ভণ্ডামি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। তবে তিনি কখনওই প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান বা বেদ-বেদান্তের বিরোধিতা করেননি। বরং, তিনি বলেন—“চারে বেদ হো এ সচি আর, পড়হ গুনা তনহ চার বি চার।” অর্থাৎ, চারটি বেদই সত্য, কিন্তু সেগুলিকে সঠিকভাবে বোঝা ও অনুশীলন করাই প্রকৃত জ্ঞান। মাত্র নয় বছর বয়সে, তাঁর ‘জানেও’ (পবিত্র সুতো) অনুষ্ঠানে অংশ নিতে অস্বীকার করেন তিনি। সমাজে তখন অনেকেই এই ধর্মীয় রীতি পালন করলেও মননে ও আচরণে বৈষম্য ও অন্যায় চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গুরু নানক জি বলেন— “দইয়া কাপাহ সন্তোখু সূত্রু, জতু গণ্ডী সত্যু ভাটু।” অর্থাৎ, করুণা হবে সুতোর তুলো, সন্তোষ হবে সুতো, আর সত্য হবে তার পাক। এই উপমার মাধ্যমে তিনি প্রকৃত ধার্মিকতার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

    মানবতার পতাকা তুলে ধরেন

    গুরু নানকের সময়ে সমাজ ছিল অস্থির—দেশে বিদেশি আক্রমণ, বিশ্ববিদ্যালয় ও গুরুকুলগুলির ধ্বংস, এবং সমাজের পথপ্রদর্শকদের বিভ্রান্তি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। এই কঠিন সময়েই গুরু নানক দেব জি মানবতার পতাকা উঁচিয়ে ধরেন। ভ্রান্তাচারীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা জ্ঞানী বা সন্ন্যাসীর বেশে সমাজবিমুখ হয়েছে, তারা আসলে কোনো উপকার করছে না। বিখ্যাত ভক্ত ভাই গুরদাস জি গুরু নানক দেব জির আবির্ভাব নিয়ে লিখেছিলেন— “সতগুরু নানক প্রগটিয়া, মিটি ধুন্ধ জগ চানন হোয়া।” অর্থাৎ, অন্ধকারে মোড়া সমাজে সত্যগুরু নানকের আবির্ভাবে আলো ছড়িয়ে পড়েছিল।

    নানকের উপদেশ প্রচার

    গুরু নানক (Guru Nanak Jayanti 2025) তাঁর নিজের উপদেশ প্রচারের জন্য তিনি কার্তারপুরে একটি নতুন নগর স্থাপন করেন এবং সেখানে ‘লঙ্গর’ প্রথার সূচনা করেন—যেখানে সব ধর্ম, বর্ণ, জাতির মানুষ একসঙ্গে বসে আহার করেন। এটি ছিল সমতার এক অনন্য প্রতীক। আচল বাতালায় যোগীদের সঙ্গে বিতর্কে তিনি গার্হস্থ্য জীবনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গার্হস্থ্য জীবন ত্যাগ নয়, বরং সেবার ও ন্যায়ের মাধ্যমে ঈশ্বরসাধনা সম্ভব। ‘জপজি সাহিব’-এ গুরু নানক দেব জি কর্মফল তত্ত্বের সহজ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন—
    “চঙ্গাইয়াইয়া বুরাইয়াইয়া ভিতর ধরম হদুর, করমি আপো আপণী কে নেডে কে দূর।” অর্থাৎ, মানুষ নিজের কর্মফলের দ্বারাই ঈশ্বরের নিকট বা দূরে হয়।

    সৎজনের সেবা ও ঈশ্বর স্মরণ

    গুরু নানক জি (Guru Nanak Jayanti 2025) চার পুরুষার্থ—ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ—সম্পর্কেও বলেছেন যে, সৎজনের সেবা ও ঈশ্বরস্মরণই এদের অর্জনের পথ। গুরু নানক দেব জি সত্যিই ভারতীয় জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার সহজ ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন, এমনকি আরব দেশ পর্যন্ত তাঁর বার্তা পৌঁছে গিয়েছিল। তাঁর শিক্ষায় আজও সমাজে সত্য, করুণা ও মানবতার আলো জ্বলছে। উন্নত সমাজ গঠনে, গুরু নানক দেবের মূল্যবোধ ও আদর্শ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করে। গুরু নানক জি’র, সত্য,ন্যায় বিচার এবং সহানুভূতির বার্তা সমাজকে সাফল্যের শিক্ষা দেয়। একই সঙ্গে গুরু নানক জি সততার সঙ্গে জীবন যাপন ও সম্পদের সমবন্টন নীতির প্রচারক ছিলেন। শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনে তাঁর পথ গুরুত্বপূর্ণ।

     

     

     

     

     

  • Rash Purnima 2025: আজ কার্তিক পূর্ণিমা, দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে রাস উৎসব ও দেব দীপাবলি

    Rash Purnima 2025: আজ কার্তিক পূর্ণিমা, দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে রাস উৎসব ও দেব দীপাবলি

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাসযাত্রা (Rash Purnima 2025) মূলত বৈষ্ণবদের উৎসব। জয়দেবের ‘গীতগবিন্দম্‌, চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’, মালাধর বসুর ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যে রাসের কথা বলা হয়েছে। বৃন্দাবন রাস, বসন্ত রাস খুব উল্লেখযোগ্য। এই বৈষ্ণব ভাবনায় শ্রীকৃষ্ণপ্রেম এবং প্রকৃতিস্বরূপ রাধা (Radha-Krishna) সাধনাই হল রাস। এই উৎসবের কথা বিভিন্ন পুরাণেও রয়েছে। শারদ রাস এবং বসন্ত রাস-দুটিই বৈষ্ণবদের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

    আজ, বুধবার, বাংলা তথা দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে রাসযাত্রা। একইসঙ্গে, এ বছর রাস পূর্ণিমা বা কার্তিক পূর্ণিমার সঙ্গে একইদিনে পড়ছে গুরু নানকের জন্মতিথির (Guru Nanak Birthday) দিন। রাস পূর্ণিমা বাংলার আপামার বাঙালির কাছে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলায় শ্রীচৈতন্যদেবের রাস উৎসব পালনের কথা জানা যায়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সময়ের পরবর্তী সময়ে রাস পূর্ণিমা আরও জাঁকজমক ভাবে পালন করা হয়। কার্তিক পূর্ণিমার তিথিতে অন্যদিকে দেশজুড়ে ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে দেব দীপাবলি (Dev Deepavali)। দেবতাদের দীপাবলি উৎসবে সেজে উঠেছে বারাণসী (Varanasi)। সন্ধ্য়ায় কাশীর অর্ধচন্দ্রাকৃতি গঙ্গারঘাটগুলিকে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করতে ৫ নভেম্বর ১০ লক্ষের বেশি প্রদীপ দিয়ে সাজিয়ে তোলা হবে। কাশীধাম জুড়ে রাতভর পালিত হবে দেব দীপাবলি।

    পঞ্জিকা মতে রাস পূর্ণিমার তিথি কখন?

    বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুসারে, পূর্ণিমা লেগেছে ৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে, বাংলা ১৮ কার্তিক এবং পূর্ণিমা তিথি শেষ হচ্ছে ৫ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিটে। আবার গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে, পূর্ণিমা শুরু হয়েছে ৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার রাত রাত ৯টা ২২ মিনিটে। তিথি শেষ হচ্ছে বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে। উভয় পঞ্জিকা অনুযায়ী, উদয়া তিথি ধরে আজ, বুধবার, ৫ নভেম্বর, বাংলায় ১৮ কার্তিক শ্রীরাধা-শ্রীকৃষ্ণের প্রেম উৎসব রাসযাত্রা (Rash Purnima 2025) পালিত হবে।

    রাসের তাৎপর্য কী (Rash Purnima 2025)?

    প্রেমভাব বৈষ্ণব ভাবনার একটি প্রধান ভাব। রাস শব্দ এসেছে রস থেকে। রসের বিরাট ব্যাপ্তি। আনন্দ আস্বাদনই মূল কথা রাসের। বৈষ্ণব রসশাস্ত্রে পঞ্চম রস, শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য মধুর রস সম্পর্কে বিস্তৃত ভাবে বলা হয়েছে। বৃন্দাবনদাসের ‘শ্রীশ্রীচৈতন্যভাগবত’ এবং কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত’-কাব্যে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে রস বা লীলা সম্পর্কে। রাস মানেই মিলন (Rash Purnima 2025)। কৃষ্ণ প্রেমের ক্ষুদ্র আত্মা পরমাত্মায় মিলনের বাসনাই রাসের মূল ভরকেন্দ্র। পূর্ণ অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহাভাবের একমাত্র অধিকারিণী শ্রীরাধারানি। কৃষ্ণ হলেন জগতের আসল পুরুষ, বাকি মানবসামজ প্রকৃতিতুল্য। তাই সকল গোপিনী এবং নরনারী রাধাভাব বা মঞ্জরী ভাবনায় ভাবিত হন। এই পরম জ্ঞানের কথা জানানোর জন্যই কৃষ্ণের বৃহৎ লীলা বা রাসের প্রকাশ।

    মুক্তির পথ দেখান কৃষ্ণস্বরূপ জ্ঞান

    কৃষ্ণপ্রেমে মুগ্ধ হয়ে গোপিনীরা সংসার ত্যাগ করে বৃন্দাবনে চলে যান। সেখানে গিয়ে সকলে কৃষ্ণপ্রেমে সমবেত হন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের সংসারে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু গোপিনীরা মানতে অস্বীকার করেন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের এই ভাবনায় মনে অহংকার ভাব এলে রাধাকে নিয়ে চলে যান। পরে গোপিনীরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। অহংকার ভুলে গিয়ে কৃষ্ণপ্রেমে স্তব পাঠ শুরু করেন। এদিকে তাঁদের স্তবে কৃষ্ণ সন্তুষ্ট হলে কৃষ্ণ ফিরে আসেন। এরপর গোপিনীদের জীবন সম্পর্কে গভীর তত্ত্বকথার উপদেশ দেন। প্রত্যক গোপিনীর মনোবাঞ্ছা পূরণ করে জাগতিক দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তির পথ দর্শান। এই কৃষ্ণ (Rash Purnima 2025) হলেন প্রকৃত জ্ঞানের আধার। আর জগতস্বরূপ জ্ঞান হলেন স্বয়ং রাধা। সকল গোপিনীরা হলেন রাধা শক্তির প্রকাশ মাত্র।

    বাংলাজুড়ে রাস-উৎসব

    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাস (Rash Purnima 2025) বাংলা, মথুরা, বৃন্দাবন, ওড়িশা, অসম, মণিপুর, পূর্ববঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় ব্যাপক ভাবে দেখা যায়। তবে মূল আরাধ্য রাধাকৃষ্ণ হলেও অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন দেবদেবীর পুজো করতে দেখা যায়। যেমন-কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে রাস হয় এবং এক মাস মেলা বসে এখানে। এই মেলা বিরাট বিখ্যাত। এখানে রাসে দুর্গাপুজো, কালীপুজোও করতে দেখা যায়। আবার নবদ্বীপ, শান্তিপুর, ফুলিয়া, বর্ধমানের বেশ কিছু বৈষ্ণবপাট বাড়ি, সমাজবাড়ি এবং আখড়ায় মাটির মূর্তিতে রাধাকৃষ্ণের পুজো হয়। গৌর-নিতাই, পঞ্চতত্ত্বের নামে চলে নাম-সংকীর্তন এবং নগর পরিক্রমা। শ্রীচৈতন্যের স্মৃতি বিজড়িত জায়াগায় পালন হয় বিশেষ পুজো। কীর্তন, পদাবলী, পালাগান এবং রাসের সখীদের অষ্টকলা প্রদর্শন মূল আকর্ষণ থাকে। পিছিয়ে নেই পশ্চিমের জেলা পুরুলিয়া। পুরুলিয়ার রাসমেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব এবং এটি রাস পূর্ণিমার পাঁচ দিন পর থেকে শুরু হয়।

    কার্তিক পূর্ণিমা, দেব দীপাবলি ও ত্রিপুরী পূর্ণিমা

    রাস পূর্ণিমাকে (Rash Purnima 2025) অনেকে কার্তিক পূর্ণিমা বলে থাকেন। কার্তিক পুজো ঘিরে কাটোয়া ও তার সংলগ্ন নানান এলাকা খ্যাত। কাটোয়া এবং হুগলি জেলার চুঁচুড়া-বাঁশবেড়িয়া অঞ্চলে কার্তিক পুজো খুব বিখ্যাত। এই পুজো ঘিরে বহু মানুষের ভিড় হয় এলাকায়। কার্তিক পুজো পালিত হয় কার্তিক পূর্ণিমায়। এই সময়ে সূর্য ওঠার আগে স্নান করলে শুভকর্ম ফল হয়। অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান পুণ্যলাভ হয়। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে দেবলোকে দীপাবলি (Dev Deepavali) পালন করা হয় বলে প্রচলিত বিশ্বাস। দেবতাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে মর্ত্যেও এ দিন প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা রয়েছে। বিশেষ করে এ দিন বেনারস ও হরিদ্বারের গঙ্গার ঘাট আলোর মালায় সাজিয়ে তোলা হয়। হাজার হাজার মানুষ গঙ্গার ঘাটের শোভা দেখতে বেনারস ও হরিদ্বারে ভিড় করেন। অন্য পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এই রাস পূর্ণিমায় ভগবান শিব ত্রিপুরাসুর নামে এক রাক্ষসকে বধ করেছিলেন। তাই এই পূর্ণিমা ত্রিপুরী বা ত্রিপুরারি পূর্ণিমা নামেও অনেক জায়গায় পরিচিত। ভগবান শ্রীবিষ্ণু (Radha-Krishna) এই দিনে মৎস্য অবতার ধারণ করেছিলেন।

  • Ramakrishna 499: “কি জানো, ঈশ্বরই সত্য আর সব অনিত্য! জীব, জগৎ, বাড়ি-ঘর-দ্বার, ছেলেপিলে, এ-সব বাজিকরের ভেলকি”

    Ramakrishna 499: “কি জানো, ঈশ্বরই সত্য আর সব অনিত্য! জীব, জগৎ, বাড়ি-ঘর-দ্বার, ছেলেপিলে, এ-সব বাজিকরের ভেলকি”

    শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেন, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুন
    শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীরাধিকাতত্ত্ব—জন্মমৃত্যুতত্ত্ব

    পুত্র-কন্যা বিয়োগ জন্য শোক ও শ্রীরামকৃষ্ণ–পূর্বকথা 

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) ব্রাহ্মণী ও ভক্তদের প্রতি— একজন এসেছিল। খানিকক্ষণ বসে বলছে, ‘যাই একবার ছেলের চাঁদমুখটি দেখিগে।’

    “আমি আর থাকতে পারলাম না। বললাম (Kathamrita), তবে রে শালা! ওঠ্‌ এখান থেকে। ঈশ্বরের চাঁদমুখের চেয়ে ছেলের চাঁদমুখ?”

    জন্মমৃত্যুতত্ত্ব—বাজিকরের ভেলকি

    (মাস্টারের প্রতি)—“কি জানো, ঈশ্বরই সত্য আর সব অনিত্য! জীব, জগৎ, বাড়ি-ঘর-দ্বার, ছেলেপিলে, এ-সব বাজিকরের ভেলকি! বাজিকর কাঠি দিয়ে বাজনা বাজাচ্ছে, আর বলছে, লাগ লাগ লাগ! ঢাকা খুলে দেখ, কতকগুলি পাখি আকাশে উড়ে গেল। কিন্তু বাজিকরই সত্য, আর সব অনিত্য! এই আছে, এই নাই!

    “কৈলাসে শিব বসে আছেন, নন্দী কাছে আছেন। এমন সময় একটা ভারী শব্দ হল। নন্দী জিজ্ঞাসা করলে, ঠাকুর! এ কিসের শব্দ হল? শিব বললেন, ‘রাবণ জন্মগ্রহণ করলে, তাই শব্দ।’ খানিক পরে আবার একটি ভয়ানক শব্দ হল। নন্দী জিজ্ঞাসা করলে—‘এবার কিসের শব্দ?’ শিব হেসে বললেন, ‘এবার রাবণ বধ হল!’ জন্মমৃত্যু—এ-সব ভেলকির মতো! এই আছে এই নাই! ঈশ্বরই সত্য আর সব অনিত্য। জলই সত্য, জলের ভুড়ভুড়ি, এই আছে, এই নাই; ভুড়ভুড়ি জলে মিশে যায়,—যে জলে উৎপত্তি সেই জলেই লয়।

    “ঈশ্বর যেন মহাসমুদ্র, জীবেরা যেন ভুড়ভুড়ি; তাঁতেই জন্ম, তাঁতেই লয়।

    “ছেলেমেয়ে,—যেমন একটা বড় ভুড়ভুড়ির সঙ্গে পাঁচটা ছটা ছোট ভুড়ভুড়ি।

    “ঈশ্বরই সত্য। তাঁর উপরে কিরূপে ভক্তি হয়, তাঁকে কেমন করে লাভ করা যায়, এখন এই চেষ্টা করো। শোক করে কি হবে?”

    সকলে চুপ করিয়া আছেন। ব্রাহ্মণী বলিলেন(Kathamrita), ‘তবে আমি আসি।’

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) ব্রাহ্মণীর প্রতি সস্নেহে—তুমি এখন যাবে? বড় ধুপ!—কেন, এদের সঙ্গে গাড়ি করে যাবে।

    আজ জৈষ্ঠ মাসের সংক্রান্তি, বেলা প্রায় তিনটা-চারটা। ভারী গ্রীষ্ম। একটি ভক্ত ঠাকুরকে একখানি নূতন চন্দনের পাখা আনিয়া দিলেন। ঠাকুর পাখা পাইয়া আনন্দিত হইলেন ও বলিলেন, “বা! বা!” “ওঁ তৎসৎ! কালী!” এই বলিয়া প্রথমেই ঠাকুরদের হাওয়া করিতেছেন। তাহার পরে মাস্টারকে বলিতেছেন, “দেখ, দেখ, কেমন হাওয়া।” মাস্টারও আনন্দিত হইয়া দেখিতেছেন।

  • Ramakrishna 498: “মেয়েটির স্বামী রাজা উপাধিধারী, কলিকাতানিবাসী, জমিদার–মায়ের বুক যেন দশ হাত হইত”

    Ramakrishna 498: “মেয়েটির স্বামী রাজা উপাধিধারী, কলিকাতানিবাসী, জমিদার–মায়ের বুক যেন দশ হাত হইত”

    শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেন, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুন

    শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীরাধিকাতত্ত্ব—জন্মমৃত্যুতত্ত্ব

    পুত্র-কন্যা বিয়োগ জন্য শোক ও শ্রীরামকৃষ্ণ–পূর্বকথা 

    “দেশে শ্রীরাম মল্লিককে অত ভালবাসতাম, কিন্তু এখানে যখন এলো তখন ছুঁতে পারলাম না।

    “শ্রীরামের (Ramakrishna) সঙ্গে ছেলেবেলায় খুব প্রণয় ছিল। রাতদিন একসঙ্গে থাকতাম। একসঙ্গে শুয়ে থাকতাম। তখন ষোল-সতের বৎসর বয়স। লোকে বলত, এদের ভিতর একজন মেয়েমানুষ হলে দুজনের বিয়ে হত। তাদের বাড়িতে দুজনে খেলা করতাম, তখনকার সব কথা মনে পড়ছে। তাদের কুটুম্বেরা পালকি চড়ে আসত, বেয়ারগুলো ‘হিঞ্জোড়া হিঞ্জোড়া’ বলতে থাকত।

    “শ্রীরামকে দেখব বলে (Kathamrita) কতবার লোক পাঠিয়েছি; এখন চানকে দোকান করেছে! সেদিন এসেছিল, দুদিন এখানে ছিল।

    “শ্রীরাম বললে, ছেলেপিলে হয় নাই। ভাইপোটিকে মানুষ করেছিলাম। সেটি মরে গেছে। বলতে বলতে শ্রীরাম দীর্ঘনিশ্বাস ফেললে, চক্ষে জল এল, ভাইপোর জন্য খুব শোক হয়েছে।

    “আবার বললে, ছেলে হয় নাই বলে স্ত্রীর যত স্নেহ ওই ভাইপোর উপর পড়েছিল; এখন সে শোকে অধীর হয়েছে। আমি তাকে বলি, ক্ষেপী! আর শোক করলে কি হবে? তুই কাশী যাবি?

    “বলে ‘ক্ষেপী’—একেবারে ডাইলিউট (dilute) হয়ে গেছে! তাকে ছুঁতে পারলাম না। দেখলাম তাতে আর কিছু নাই।”

    ঠাকুর শোক সম্বন্ধে এই সকল কথা বলিতেছেন, এদিকে ঘরের উত্তরের দরজার কাছে সেই শোকাতুরা ব্রাহ্মণিটি দাঁড়াইয়া আছেন। ব্রাহ্মণী বিধবা। তার একমাত্র কন্যার খুব বড় ঘরে বিবাহ হইয়াছিল। মেয়েটির স্বামী রাজা উপাধিধারী,—কলিকাতানিবাসী,—জমিদার। মেয়েটি যখন বাপের বাড়ি আসিতেন, তখন সঙ্গে সেপাই-শান্ত্রী আসিত,—মায়ের বুক যেন দশ হাত হইত। সেই একমাত্র কন্যা কয়দিন হইল ইহলোক ত্যাগ করিয়া গিয়াছে!

    ব্রাহ্মণী দাঁড়াইয়া ভাইপোর বিয়োগ জন্য শ্রীরাম মল্লিকের শোকের কথা শুনিলেন। তিনি কয়দিন ধরিয়া বাগবাজার হইতে পাগলের ন্যায় ছুটে ছুটে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে (Ramakrishna) দর্শন করিতে আসিতেছেন, যদি কোনও উপায় হয়; যদি তিনি এই দুর্জয় শোক নিবারণের কোনও ব্যবস্থা করিতে পারেন। ঠাকুর আবার কথা কহিতেছেন-

  • Ramakrishna 497: “সচ্চিদানন্দ নিজে রসাস্বাদন করতে রাধিকার সৃষ্টি করেছেন, সচ্চিদানন্দকৃষ্ণের অঙ্গ থেকে রাধা”

    Ramakrishna 497: “সচ্চিদানন্দ নিজে রসাস্বাদন করতে রাধিকার সৃষ্টি করেছেন, সচ্চিদানন্দকৃষ্ণের অঙ্গ থেকে রাধা”

    শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেন, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুন

    শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীরাধিকাতত্ত্ব—জন্মমৃত্যুতত্ত্ব

    পণ্ডিতজী বসিয়া আছেন, তিনি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লোক।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে, মাস্টারের প্রতি) — খুব ভাগবতের পণ্ডিত।

    মাস্টার ও ভক্তেরা পণ্ডিতজীকে একদৃষ্টে দেখিতেছেন (Kathamrita)।

    শ্রীরামকৃষ্ণ Ramakrishna (পণ্ডিতের প্রতি)—আচ্ছা জী! যোগমায়া কি?

    পণ্ডিতজী যোগমায়ার একরকম ব্যাখ্যা করিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—রাধিকাকে কেন যোগমায়া বলে না?

    পণ্ডিতজী এই প্রশণের উত্তর একরকম দিলেন। তখন ঠাকুর নিজেই বলিতেছেন, রাধিকা বিশুদ্ধসত্ত্ব, প্রেমময়ী! যোগমায়ার ভিতরে তিনগুণই আছে—সত্ত্ব রজঃ তমঃ। শ্রীমতীর ভিতর বিশুদ্ধসত্ত্ব বই আর কিছুই নাই। (মাস্টারের প্রতি) নরেন্দ্র এখন শ্রীমতীকে খুব মানে, সে বলে, সচ্চিদানন্দকে যদি ভালবাসতে শিখতে হয় তো রাধিকার কাছে শেখা যায়।

    “সচ্চিদানন্দ নিজে রসাস্বাদন করতে রাধিকার সৃষ্টি করেছেন। সচ্চিদানন্দকৃষ্ণের অঙ্গ থেকে রাধা বেরিয়েছেন। সচ্চিদানন্দকৃষ্ণই ‘আধার’ আর নিজেই শ্রীমতীরূপে ‘আধেয়’,—নিজের রস আস্বাদন করতে—অর্থাৎ সচ্চিদানন্দকে ভালবেসে আনন্দ সম্ভোগ করতে।

    “তাই বৈষ্ণবদের গ্রন্থে আছে, রাধা জন্মগ্রহণ করে চোখ খুলেন নাই; অর্থাৎ এই ভাব যে—এ-চক্ষে আর কাকে দেখব? রাধিকাকে দেখতে যশোদা যখন কৃষ্ণকে কোলে করে গেলেন, তখন কৃষ্ণকে দেখবার জন্য রাধা চোখ খুললেন। কৃষ্ণ খেলার ছলে রাধার চক্ষে হাত দিছলেন। (আসামী বালকের প্রতি) একি দেখেছ, ছোট ছেলে চোখে হাত দেয়?”

    সংসারী ব্যক্তি ও শুদ্ধাত্মা ছোকরার প্রভেদ

    পণ্ডিতজী ঠাকুরের কাছে বিদায় লইতেছেন।

    পণ্ডিত—আমি বাড়ি যাচ্ছি।

    শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna) সস্নেহে—কিছু হাতে হয়েছে।

    পণ্ডিত—বাজার বড় মন্দা হ্যায়। রোজগার নেহি! —

    পণ্ডিতজী কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুরকে প্রণাম করিয়া বিদায় লইলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) দেখো,—বিষয়ী আর ছোকরাদের কত তফাত। এই পণ্ডিত রাতদিন টাকা টাকা করছে! কলকাতায় এসেছে, পেটের জন্য,—তা না হলে বাড়ির সেগুলির পেট চলে না। তাই এর দ্বারে ওর দ্বারে যেতে হয়! মন একাগ্র করে ঈশ্বরচিন্তা করবে কখন? কিন্তু ছোকরাদের ভিতর কামিনী-কাঞ্চন নাই। ইচ্ছা করলেই ঈশ্বরেতে মন দিতে পারে।

    “ছোকরারা বিষয়ীর সঙ্গ ভালবাসবে (Kathamrita) না। রাখাল মাঝে মাঝে বলত, বিষয়ী লোক আসতে দেখলে ভয় হয়।

    “আমার যখন প্রথম এই অবস্থা হল, তখন বিষয়ী লোক আসতে দেখলে ঘরের দরজা বন্ধ করতাম।”

  • Ramakrishna 496: “মৌমাছি ভনভন কতক্ষণ করে? যতক্ষণ না ফুলে বসে, মধুপানের সময় ভনভনানি চলে যায়”

    ৪৮ শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেন, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুন
    ঠাকুরের গলার অসুখের সূত্রপাত

    অবতার বা নরলীলার গুহ্য অর্থ—দ্বিজ ও পূর্বসংস্কার 

    কাপ্তেনের চরিত্র ও শ্রীরামকৃষ্ণ—পুরুষ-প্রকৃতি যোগ 

    কাপ্তেন ও পাণ্ডিত্য — কাপ্তেন ও ঠাকুরের অবস্থা 

    “আমি কাপ্তেনকে বকতে লাগলাম; বললাম, তুমি পড়েই সব খারাপ করেছ। আর পোড়ো না!

    “আমার অবস্থা কাপ্তেন বললে, উড্ডীয়মান ভাব। জীবাত্মা আর পরমাত্মা; জীবাত্মা যেন একটা পাখি, আর পরমাত্মা যেন আকাশ—চিদাকাশ। কাপ্তেন বললে, ‘তোমার জীবাত্মা চিদাকাশে উড়ে যায়—তাই সমাধি’; (সহাস্যে) কাপ্তেন বাঙালীদের নিন্দা করলে। বললে, বাঙালীরা নির্বোধ! কাছে মাণিক রয়েছে চিনলে না!”

    গৃহস্থভক্ত ও ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ — কর্ম কত দিন 

    “কাপ্তেনের বাপ খুব ভক্ত ছিল। ইংরেজের ফৌজে সুবাদারের কাজ করত। যুদ্ধক্ষেত্রে পূজার সময়ে পূজা করত,—একহাতে শিবপূজা, একহাতে তরবার-বন্দুক!

    (মাস্টারের প্রতি) “তবে কি জানো, রাতদিন বিষয়কর্ম! মাগছেলে ঘিরে রয়েছে, যখনই যাই দেখি! আবার লোকজন হিসাবের খাতা মাঝে মাঝে আনে। এক-একবার ঈশ্বরেও মন যায়। যেমন বিকারের রোগী; বিকারের ঘোর লেগেই আছে, এক-একবার চটকা ভাঙে! তখন ‘জল খাব’ ‘জল খাব’ বলে চেঁচিয়ে উঠে; আবার জল দিতে দিতে অজ্ঞান হয়ে খায়, — কোন হুঁশ থাকে না! আমি তাই ওকে বললাম,—তুমি কর্মী। কাপ্তেন বললে, ‘আজ্ঞা, আমার পূজা এই সব করতে আনন্দ হয়—জীবের কর্ম বই আর উপায় নাই।

    “আমি বললাম (Kathamrita), কিন্তু কর্ম কি চিরকাল করতে হবে? মৌমাছি ভনভন কতক্ষণ করে? যতক্ষণ না ফুলে বসে। মধুপানের সময় ভনভনানি চলে যায়। কাপ্তেন বললে, ‘আপনার মতো আমরা কি পূজা আর আর কর্ম ত্যাগ করতে পারি?’ তার কিন্তু কথার ঠিক নাই, — কখনও বলে, ‘এ-সব জড়।’ কখনও বলে, ‘এ-সব চৈতন্য (Ramakrishna)।’ আমি বলি, জড় আবার কি? সবই চৈতন্য!”

    পূর্ণ ও মাস্টার—জোর করে বিবাহ ও শ্রীরামকৃষ্ণ 

    পূর্ণর কথা ঠাকুর মাস্টারকে জিজ্ঞাসা করিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—পূর্ণকে আর-একবার দেখলে আমার ব্যাকুলতা একটু কম পড়বে!—কি চতুর!-আমার উপর খুব টান; সে বলে, আমারও বুক কেমন করে আপনাকে দেখবার জন্য। (মাস্টারের প্রতি) তোমার স্কুল থেকে ওকে ছাড়িয়ে নিয়েছে, তাতে তোমার কি কিছু ক্ষতি হবে?

    মাস্টার — যদি তাঁরা (বিদ্যাসাগর)—বলেন, তোমার জন্য ওকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিলে,— তাহলে আমার জবাব দিবার পথ আছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna)—কি বলবে?

    মাস্টার—এই কথা বলব, সাধুসঙ্গে ঈশ্বরচিন্তা হয়, সে আর মন্দ কাজ নয়; আর আপনারা যে বই পড়াতে দিয়েছেন, তাতেই আছে—ঈশ্বরকে প্রাণের সহিত ভালবাসবে।

    ঠাকুর হাসিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—কাপ্তেনের বাড়িতে ছোট নরেনকে ডাকলুম। বললাম, তোর বাড়িটা কোথায়? চল যাই।—সে বললে, ‘আসুন’। কিন্তু ভয়ে ভয়ে চলতে লাগল সঙ্গে—পাছে বাপ জানতে পারে! (সকলের হাস্য)

    (অখিলবাবুর প্রতিবেশীকে)—“হ্যাঁগা, তুমি অনেক কাল আস নাই। সাত-আট মাস হবে।”

    প্রতিবেশী—আজ্ঞা, একবৎসর হবে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—তোমার সঙ্গে আর-একটি আসতেন।

    প্রতিবেশী—আজ্ঞা হাঁ, নীলমণিবাবু।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Kathamrita)—তিনি কেন আসেন না?—একবার তাঁকে আসতে বলো, তাঁর সঙ্গে দেখা করিয়ে দিও। (প্রতিবেশীর সঙ্গী বালক দৃষ্টে)—এ-ছেলেটি কে?

    প্রতিবেশী—এ-ছেলেটির বাড়ি আসামে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna)—আসাম কোথা? কোন্‌ দিকে?

    দ্বিজ আশুর কথা বলিতেছেন। আশুর বাবা তার বিবাহ দিবেন। আশুর ইচ্ছা নাই।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—দেখ দেখ, তার ইচ্ছা নাই, জোর করে বিবাহ দিচ্ছে।

    ঠাকুর একটি ভক্তকে জ্যেষ্ঠভ্রাতাকে ভক্তি করিতে বলিতেছেন,—“জ্যেষ্ঠ-ভাই, পিতা সম, খুব মানবি।”

LinkedIn
Share