Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 276: “হাতির মাথায় অঙ্কুশ মারতে হয়, মাথায় নাকি ওদের কোষ থাকে”

    Ramakrishna 276: “হাতির মাথায় অঙ্কুশ মারতে হয়, মাথায় নাকি ওদের কোষ থাকে”

    শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে ও ভক্তগৃহে

    চর্তুদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ১৯শে সেপ্টেম্বর

    ছোকরা ভক্তদের সঙ্গে আনন্দ—মা-কালীর আরতিদর্শন ও চামর ব্যজন —
    মায়ে-পোয়ে কথা—“কেন বিচার করাও”

    বেলা পাঁচটা। ঠাকুর (Ramakrishna) পশ্চিমের গোল বারান্দায়। বাবুরাম, লাটু। মুখুজ্জে ভ্রাতৃদ্বয়, মাস্টার প্রভৃতি সঙ্গে সঙ্গে আসিয়াছেন (Kathamrita)।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টার প্রভৃতির প্রতি)—কেন একঘেয়ে হব? ওরা বৈষ্ণব আর গোঁড়া, মনে করে আমাদের মতই ঠিক, আর সব ভুল । যে কথা বলেছি, খুব লেগেছে। (সহাস্যে) হাতির মাথায় অঙ্কুশ মারতে হয়। মাথায় নাকি ওদের কোষ থাকে। (সকলের হাস্য)

    ঠাকুর এইবার ছোকরাদের সঙ্গে ফষ্টিনাষ্টি করতে লাগলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি)—আমি এদের (ছোকরাদের) কেবল নিরামিষ দিই না। মাঝে মাঝে আঁশ ধোয়া জল একটু একটু দিই। তা না হলে আসবে কেন।

    মুখুজ্জেরা বারান্দা হইতে চলিয়া গেলেন। বাগানে একটু বেড়াইবেন (Kathamrita)।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি)—আমি জপ… করতাম। সমাধি হয়ে যেত, কেমন এর ভাব?

    মাস্টার (গম্ভীরবাবে)—আজ্ঞা, বেশ!

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) সাধু! সাধু!—কিন্তু ওরা (মুখুজ্জেরা) কি মনে করবে?

    মাস্টার—কেন কাপ্তেন তো বলেছিলেন (Kathamrita), আপনার বালকের অবস্থা। ঈশ্বর-দর্শন করলে বালকের অবস্থা হয়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—আর বাল্য, পৌগণ্ড, যুবা। পৌগণ্ড অবস্থায় ফচকিমি করে, হয়তো খেউর মুখ দে বেরোয়। আর যুবা অবস্থায় সিংহের ন্যায় লোকশিক্ষা দেয়।

    “তুমি না হয় ওদের (মুখুজ্জেদের) বুঝিয়ে দিও।”

    মাস্টার—আজ্ঞা, আমার বোঝাতে হবে না। ওরা কি আর জানে না?

    শ্রীরামকৃষ্ণ ছোকরাদের সঙ্গে একটু আমোদ-আহ্লাদ করিয়া একজন ভক্তকে বলিতেছেন, “আজ অমাবস্যা, মার ঘরে যেও!”

    সন্ধ্যার পর আরতির শব্দ শুনা যাইতেছে। ঠাকুর বাবুরামকে বলিতেছেন, “চল রে চল। কালীঘরে!” ঠাকুর বাবুরামের সঙ্গে যাইতেছেন—মাস্টারও সঙ্গে আছেন। হরিশ বারান্দায় বসিয়া আছেন দেখিয়া ঠাকুর বলিতেছেন, “এর আবার বুঝি ভাব লাগলো। ম”

    উঠান দিয়া চলিতে চলিতে শ্রীশ্রীরাধাকান্তের আরতি একটু দেখিলেন। তৎপরেই মা-কালীর মন্দিরের অভিমুখে যাইতেছেন। যাইতে যাইতে হাত তুলিয়া জগন্মাতাকে ডাকিতেছেন—“ও মা! ও মা! ব্রহ্মময়ী!” মন্দিরের সম্মুখের চাতালে উপস্থিত হইয়া মাকে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিতেছেন। মার আরতি হইতেছে। ঠাকুর মন্দিরে প্রবেশ করিলেন ও চামর (Kathamrita) লইয়া ব্যজন করিতে লাগিলেন।

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Ramakrishna 275: “মন ধোপাঘরের কাপড়, লালে ছোপাও লাল—নীলে ছোপাও নীল, যে রঙে ছোপাবে সেই রঙ হয়ে যাবে”

    Ramakrishna 275: “মন ধোপাঘরের কাপড়, লালে ছোপাও লাল—নীলে ছোপাও নীল, যে রঙে ছোপাবে সেই রঙ হয়ে যাবে”

    শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে ও ভক্তগৃহে

    ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ১৯শে সেপ্টেম্বর

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীযুক্ত রাধিকা গোস্বামী

    পূর্বকথা—কেশব সেনের বাটীতে নিরাকারের ভাব—বিজয় গোস্বামীর সঙ্গে এঁড়েদর গদাধরের
    পাঠবাড়িদর্শন—বিজয়ের চরিত্র

    “মনেই বদ্ধ মুক্ত। দুই বন্ধু—একজন বেশ্যালয়ে গেল, একজন ভাগবত শুনছে। প্রথমটি ভাবছে —ধিক্‌ আমাকে—বন্ধু হরিকথা শুনছে আর আমি কোথা পড়ে রয়েছি। আর-একজন ভাবছে, ধিক্‌ আমাকে, বন্ধু কেমন আমোদ-আহ্লাদ করছে, আর আমি শালা কি বোকা! দেখো প্রথমটিকে বিষ্ণুদূতে নিয়ে গেল— বৈকুণ্ঠে (Kathamrita)। আর দ্বিতীয়টিকে যমদূতে নিয়ে গেল”।

    প্রিয়—মন যে আমার বশ নয়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—সে কি! অভ্যাস যোগ। অভ্যাস কর, দেখবে মনকে যেদিকে নিয়ে যাবে, সেইদিকেই যাবে।

    “মন ধোপাঘরের কাপড়। তারপর লালে ছোপাও লাল—নীলে ছোপাও নীল। যে রঙে ছোপাবে সেই রঙ হয়ে যাবে।

    (গোস্বামীর প্রতি)—“আপনাদের কিছু কথা আছে?”

    গোস্বামী (অতি বিনীতভাবে)—আজ্ঞে না,—দর্শন হল। আর কথা তো সব শুনছি।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—ঠাকুরদের দর্শন করুন।

    গোস্বামী (অতি বিনীতভাবে)—একটু মহাপ্রভুর গুণানুকীর্তন —

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) গোস্বামীকে গান শুনাইতেছেন:

    গান   —   আমার অঙ্গ কেন গৌর হলো!

    গান   —   গোরা চাহে বৃন্দাবনপানে, আর ধারা বহে দুনয়নে ॥
    ভাব হবে বইকি রে!) (ভাবনিধি শ্রীগৌরাঙ্গের)
    (যার অন্তঃ কৃষ্ণ বহিঃ গৌর) (ভাবে হাসে কাঁদে নাচে গায়)
    (বন দেখে বৃন্দাবন ভাবে) (সমুদ্র দেখে শ্রীযমুনা ভাবে)
    (গোরা আপনার পা আপনি ধরে)

    শ্রীযুক্ত রাধিকা গোস্বামীকে সর্বধর্ম-সমন্বয় উপদেশ

    গান সমাপ্ত হইল — ঠাকুর কথা (Kathamrita) কহিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (গোস্বামীর প্রতি)—এ তো আপনাদের (বৈষ্ণবদের) হল। আর যদি কেউ শাক্ত, কি ঘোষপাড়ার মত আসে, তখন কি বলব!

    “তাই এখানে সব ভাবই আছে—এখানে সবরকম লোক আসবে বলে; বৈষ্ণব, শাক্ত, কর্তাভজা, বেদান্তবাদী; আবার ইদানীং ব্রহ্মজ্ঞানী।

    “তাঁরই ইচ্ছায় নানা ধর্ম নানা মত (Kathamrita) হয়েছে।

    “তবে তিনি যার যা পেটে সয় তাকে সেইটি দিয়েছেন। মা সকলকে মাছের পোলোয়া দেয় না। সকলের পেটে সয় না। তাই কাউকে মাছের ঝোল করে দেন।

    “যার যা প্রকৃতি, যার যা ভাব, সে সেই ভাবটি নিয়ে থাকে।

    “বারোয়ারিতে নানা মূর্তি করে,—আর নানা মতের লোক যায়। রাধা-কৃষ্ণ, হর-পার্বতী, সীতা-রাম; ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন মূর্তি রয়েছে, আর প্রত্যেক মূর্তির কাছে লোকের ভিড় হয়েছে। যারা বৈষ্ণব তারা বেশি রাধা-কৃষ্ণের কাছে দাঁড়িয়ে দেখছে। যারা শাক্ত তারা হর-পার্বতীর কাছে। যারা রামভক্ত তারা সীতা-রাম মূর্তির (Ramakrishna) কাছে।

    “তবে যাদের কোন ঠাকুরের দিকে মন নাই তাদের আলাদা কথা। বেশ্যা উপপতিকে ঝাঁটা মারছে,—বারোয়ারিতে এমন মূর্তিও করে। ও-সব লোক সেইখানে দাঁড়িয়ে হাঁ করে দেখে, আর চিৎকার করে বন্ধুদের বলে, ‘আরে ও-সব কি দেখছিস, এদিকে আয়! এদিকে আয়!”

    সকলে হাসিতেছেন। গোস্বামী প্রণাম করিয়া বিদায় গ্রহণ করিলেন।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Rani Rashmoni: আজ রানি রাসমণির জন্মতিথি, অহল্যাবাঈয়ের সঙ্গে তাঁর মিল কোথায় জানেন?

    Rani Rashmoni: আজ রানি রাসমণির জন্মতিথি, অহল্যাবাঈয়ের সঙ্গে তাঁর মিল কোথায় জানেন?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আজ ১৯ ফেব্রুয়ারি, রানি রাসমণির (Rani Rashmoni) জন্মতিথি। হিন্দু ধর্ম সংরক্ষণ, সামাজিক সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করা এবং ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ (Ahilyabai Holkar) গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন তিনি। তিনিই বাংলার অহল্যাবাঈ হোলকর নামে পরিচিত। সনাতন ধর্মের প্রতি তাঁর অবিচল শ্রদ্ধা এবং সমাজ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর ছিল গভীর অন্তর্দৃষ্টি।

    অহল্যাবাঈ হোলকর (Rani Rashmoni)

    এ বছর অহল্যাবাঈ হোলকরের ত্রিশততম জন্মবার্ষিকী। তাঁর সঙ্গে বহু বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে রানি রাসমণির। এই দুই মহিয়সী নারীই হিন্দু ঐতিহ্যের রক্ষক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের পথিকৃৎ ও প্রাতিষ্ঠানিক দানশীলতার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৭৯৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার কোণা গ্রামে জন্ম রাসমণির। তিনি ছিলেন প্রভাবশালী জমিদার, দক্ষ উদ্যোক্তা ও দূরদর্শী সমাজ সংস্কারক। তিনি ছিলেন দেবী কালীর ভক্ত। ১৮৫৫ সালে দক্ষিণেশ্বরে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। হুগলি নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত এই মন্দির নিছকই একটি উপাসনাস্থল নয়, এটি ধীরে ধীরে পরিণত হয় আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধিক জাগরণের কেন্দ্রবিন্দুতে।

    রাসমণির প্রতিষ্ঠিত মন্দির

    রাসমণির প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের দেবীর নাম ভবতারিণী। এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ছিলেন শ্রী রামকৃষ্ণ। তাঁরই শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মূলত তাঁরই প্রচেষ্টায় গঠিত হয় রামকৃষ্ণ মিশন। এই রামকৃষ্ণ মিশনের গভীর প্রভাব আজও বিদ্যমান। এই মিশন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো ব্যক্তিত্বদের আজও অনুপ্রাণিত করে চলেছে। এ থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে রাসমণির উত্তরাধিকার আজও আলোচনা ক্ষেত্রে সমান প্রাসঙ্গিক। রাসমণির কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা কেবল ভগবৎ ভক্তির প্রকাশ ছিল না, ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রভাবের বিরুদ্ধে হিন্দু পরিচয়ের এক সুপরিকল্পিত ঘোষণা। এই মন্দির পরবর্তীকালে উদীয়মান জাতীয়তাবাদী চেতনার কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে। এখানে ধর্মীয় পরিচয় আত্মশাসনের চেতনার সঙ্গে যুক্ত হয়। এটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের আদর্শ পূর্বসূরি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

    রাসমণির অবদান

    রাসমণির অবদানগুলির (Rani Rashmoni) সঙ্গে মালবার মহিমান্বিত রানি পুণ্যশ্লোক অহল্যাবাঈ হোলকরের চেষ্টার বিষয়ে একটি সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। অহল্যাবাঈয়ের স্থাপত্য পৃষ্ঠপোষকতার ফলে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণ, চার ধাম, জ্যোতির্লিঙ্গ ও শক্তিপীঠগুলোর সংস্কার এবং অসংখ্য মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়েছিল। একইভাবে, রানি রাসমণি গঙ্গার তীরে বাবুঘাট, আহিরীটোলা ঘাট ও নিমতলা ঘাট নির্মাণে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি মেদিনীপুর থেকে পুরী পর্যন্ত এক বিস্তৃত তীর্থযাত্রার পথ নির্মাণে অর্থায়ন করেছিলেন (Ahilyabai Holkar)।

    দৃঢ়চেতা নারী

    এই দুই দৃঢ়চেতা নারীই বহিরাগত শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অসাধারণ ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিলেন। রানি রাসমণি সাহসিকতার সঙ্গে ব্রিটিশ শাসনের বাণিজ্যিক কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি করেন। ফলে ব্রিটিশ প্রশাসন বাধ্য হয় জেলেদের ওপর ধার্য করা কর প্রত্যাহার করতে। ব্রিটিশরা হিন্দুদের ধর্মীয় শোভাযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন রাসমণি। তার জেরে ব্রিটিশরা বাধ্য হয়েছিল হিন্দু ধর্মীয় শোভাযাত্রার অনুমতি দিতে। প্রায় একই ভূমিকা পালন করেছিলেন অহল্যাবাঈও। তিনিও অনুরূপ প্রতিরোধমূলক ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি তাঁর শাসনব্যবস্থায় স্বদেশি শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে অর্থায়নের মাধ্যমে হিন্দু সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিলেন। তা সত্ত্বেও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে আপোস করেননি তিনি।

    অহল্যাবাঈয়ের স্থাপত্য

    অহল্যাবাঈয়ের স্থাপত্য পৃষ্ঠপোষকতার ফলে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের পুনর্নির্মাণ হয়েছিল। চার ধাম, জ্যোতির্লিঙ্গ এবং শক্তিপীঠের সংস্কারও করেছিলেন তিনি। দুই নারীই অসম সাহসী। ব্রিটিশদের আরোপিত শাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তাঁরা। অহল্যাবাঈ তাঁর প্রশাসনে আদিবাসী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। হিন্দু সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে জোট বাঁধার পরিবর্তে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছিলেন তাঁরা।

    ধর্মীয় অবদান

    ধর্মীয় অবদানের পাশাপাশি (Rani Rashmoni) রাসমণি প্রগতিশীল সমাজ সংস্কারের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তবে তার শিকড় ছিল গভীরভাবে প্রথাগত মূল্যবোধের মধ্যে প্রোথিত। তিনি বিধবা বিবাহ প্রচারের জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেছিলেন। বহুবিবাহ প্রথার বিরোধিতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে একটি আবেদনপত্রও পাঠিয়েছিলেন। তাঁর দানশীলতা শিক্ষা ও জনকল্যাণ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরি (বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থাগার) এবং হিন্দু কলেজ (Ahilyabai Holkar) (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়)-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। এই দুই প্রতিষ্ঠানই বাংলার বুদ্ধিবৃত্তিক নবজাগরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তাঁর অর্থনৈতিক দক্ষতা, তাঁর বিশাল জমিদারি পরিচালনার ক্ষমতার মাধ্যমেও প্রতিফলিত হয়েছিল। তিনি ঔপনিবেশিক প্রশাসনের দ্বারা সৃষ্ট আইনি ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করেছিলেন দক্ষতার সঙ্গে। এসবই তিনি করেছিলেন যাতে তাঁর সম্পদ জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনার জন্য জমি দান করে, তিনি সূক্ষ্মভাবে ব্রিটিশদের বাংলার হিন্দু ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।

    রাসমণির প্রভাব

    রানি রাসমণির প্রভাব তাঁর জীবদ্দশার অনেক পরে পর্যন্তও স্থায়ী ছিল। জানবাজারে তাঁর বার্ষিক দুর্গাপূজা উদযাপন ঐতিহ্যবাহী উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। এটিও পরোক্ষে ঔপনিবেশিক প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। সেখানে হিন্দু সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা হয়েছিল। তিনি সচেতনভাবে দেশীয় বিনোদনের রূপ, যেমন যাত্রা মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তিনি তৎকালীন অনেক জমিদারের মতো পাশ্চাত্যধর্মী উৎসবকে উৎসাহিত করেননি। এই সাংস্কৃতিক সার্বভৌমত্বের দাবি তাঁকে ঔপনিবেশিক বাংলার হিন্দু ঐতিহ্যের অন্যতম প্রধান রক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

    রাসমণির উত্তরাধিকার

    রাসমণির উত্তরাধিকারের প্রতিধ্বনি সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায় ১৯৯৪ সালে। যখন ভারত সরকার তাঁর সম্মানে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। তবে এই ধরনের প্রতীকী স্বীকৃতির পরেও, গত কয়েক দশকে বাংলার বৃহত্তর ধর্মীয় পরিচয় গভীর সংকটের মুখে পড়েছে। যে অঞ্চল একসময় শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ পরমহংস এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো মহাপুরুষদের লালন করেছিল, সেখানেই (Rani Rashmoni) ধীরে ধীরে তার আধ্যাত্মিক ও জাতীয়তাবাদী চেতনার ক্ষয় পরিলক্ষিত হয়।

    অহল্যাবাঈ হোলকর ও রানি রাসমণি

    অহল্যাবাঈ হোলকর ও রানি রাসমণির ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলি ধর্মীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতিফলন ঘটায়। তাঁদের দৃঢ়তা, ভক্তি এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আধুনিক সমাজে প্রচলিত সেই ভুল ধারণাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করে, যা হিন্দু রানি ও নারী নেতৃবৃন্দের প্রভাবকে উপেক্ষা করে। আধুনিকতার স্রোতে আমরা এগিয়ে চললেও, এমন অনন্য ব্যক্তিত্বদের জীবন থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করা আমাদের প্রয়োজন (Ahilyabai Holkar)। কারণ এঁরাই আধ্যাত্মিকতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং শাসনব্যবস্থাকে দক্ষতার সঙ্গে একীভূত করেছিলেন।

    অহল্যাবাঈ হোলকরের ত্রিশততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন রানি রাসমণির স্থায়ী উত্তরাধিকার পুনর্মূল্যায়নের এক উপযুক্ত সুযোগ এনে দেয়। পশ্চিমবঙ্গের ধর্মীয় গৌরব পুনরুদ্ধারের প্রতি আমাদের সচেতন করে তোলে। সাংস্কৃতিক গর্ব পুনরুদ্ধার, ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং এই অঞ্চলের হিন্দু ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। রানি রাসমণির অবিচল (Ahilyabai Holkar) মনোবল আমাদের পথ দেখায়। তাঁর দেখানো পথে হাঁটলে বাংলা আবার তার ধর্মীয় শিকড়ে ফিরে গিয়ে আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধিক দুর্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে বলেও ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের মতে (Rani Rashmoni)।

  • Shivaji Jayanti 2025: শত্রুরা ডাকত ‘পার্বত্য মুষিক’, শিবাজি জয়ন্তীতে জানুন ছত্রপতির অজানা গল্প

    Shivaji Jayanti 2025: শত্রুরা ডাকত ‘পার্বত্য মুষিক’, শিবাজি জয়ন্তীতে জানুন ছত্রপতির অজানা গল্প

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চলতি বছর শিবাজি জয়ন্তী (Shivaji Jayanti 2025) পালিত হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। এই অনুষ্ঠানটি ছত্রপতি (Chhatrapati) শিবাজি মহারাজ উৎসব নামেও পরিচিত। এদিন মহারাষ্ট্রে সরকারি ছুটির দিন। শিবাজি জয়ন্তীর আগে আসুন জেনে নেওয়া যাক ছত্রপতি মহারাজের অজানা কয়েকটি কাহিনি।

    মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা (Shivaji Jayanti 2025)

    শিবাজি মহারাজকে মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ভারতের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। সপ্তদশ শতকে তাঁর অসাধারণ সাহস, বীরত্ব, অতুলনীয় নেতৃত্ব এবং সামরিক দক্ষতার জন্য তিনি আজও সম্মানিত হন। তাঁর শাসনকাল ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কারণ এটি মুঘল সাম্রাজ্যের যুগে একটি স্বাধীন রাজ্য গঠনে তাঁর অবদানের কথা মনে করায়।

    শিবাজি সুপণ্ডিত

    শিবাজি সুশিক্ষিত শাসক, সংস্কৃত, হিন্দু ধর্মগ্রন্থ এবং সামরিক কৌশল ও রণনীতিতে সুপণ্ডিত ছিলেন। তিনি তাঁর মা জিজাবাই এবং অভিভাবক দাদোজি কোন্ড দেবোর তত্ত্বাবধানে বড় হয়েছেন। দাদোজি তাঁর মধ্যে অনেক দক্ষতা গড়ে তুলেছিলেন। এর মধ্যে ছিল ঘোড়সওয়ারী, পাট্টা, তিরন্দাজি এবং যুদ্ধকৌশল। তিনি ধর্মীয় শিক্ষায় গভীর আগ্রহী ছিলেন, বিশেষ করে হিন্দু ও সুফি সাধুদের শিক্ষায়।

    ছত্রপতি শিবাজিকে (Shivaji Jayanti 2025) ভারতীয় নৌবাহিনীর জনক বলা হয়। তিনি নৌযুদ্ধ ও সামরিক কৌশলে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। তিনি মারাঠা নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি সুরক্ষিত নৌঘাঁটি নির্মাণ করেছিলেন। যুদ্ধে চমৎকার নৌকৌশল প্রয়োগ করেছিলেন। শিবাজি ছিলেন নারীর অধিকারের দৃঢ় সমর্থক। তাঁর শাসনকালে নারীদের অসম্মান বা অবমাননার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান ছিল। নারীদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করেছিলেন তিনি।

    শিবাজি সামরিক কৌশলের ক্ষেত্রে প্রতিভাবান ছিলেন। তাঁকে যথার্থই ভারতের ইতিহাসের অন্যতম মহান যোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর সাহস ও নেতৃত্ব তাঁকে তাঁর প্রজাদের কাছ থেকে গভীর শ্রদ্ধা ও প্রশংসা অর্জন করতে সহায়তা করেছিল। শিবাজি ছিলেন গেরিলা যুদ্ধের অগ্রদূত। এই যুদ্ধে আচমকা আক্রমণ, হিট-অ্যান্ড-রান কৌশল, ওত পেতে হামলা এবং আকস্মিক অভিযান অন্তর্ভুক্ত। শিবাজির প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাঁকে পার্বত্য মুষিক নামে ডাকত। শিবাজি অনেক দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এর মধ্যে (Chhatrapati) লোহগড় কেল্লা, সিন্ধুগড় কেল্লা, রায়গড় কেল্লা উল্লেখযোগ্য (Shivaji Jayanti 2025)।

  • Ramakrishna 274: “তুমি সাকারবাদীদের সঙ্গে মেশো!—তুমি পৌত্তলিক, সরল না কলে ঈশ্বরের কৃপা হয় না”

    Ramakrishna 274: “তুমি সাকারবাদীদের সঙ্গে মেশো!—তুমি পৌত্তলিক, সরল না কলে ঈশ্বরের কৃপা হয় না”

    শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে ও ভক্তগৃহে

    ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ১৯শে সেপ্টেম্বর

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীযুক্ত রাধিকা গোস্বামী

    পূর্বকথা—কেশব সেনের বাটীতে নিরাকারের ভাব—বিজয় গোস্বামীর সঙ্গে এঁড়েদর গদাধরের
    পাঠবাড়িদর্শন—বিজয়ের চরিত্র

    “আবার কেশব সেনের বাড়ি গিয়ে আর এক ভাব হল। ওরা নিরাকার নিরাকার করে;—তাই ভাবে বললুম, ‘মা এখানে আনিসনি, এরা তোর রূপ-টুপ মানে না’।”

    সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এই সকল কথা শুনিয়া গোস্বামী (Ramakrishna) চুপ করিয়া আছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—বিজয় এখন বেশ হয়েছে।

    “হরি হরি বলতে বলতে মাটিতে পড়ে যায়!

    “চারটে রাত পর্যন্ত কীর্তন, ধ্যান এই সব নিয়ে থাকে। এখন গেরুয়া পরে আছে। ঠাকুর-বিগ্রহ দেখলে একেবারে সাষ্টাঙ্গ!

    “চৈতন্যদেবের পটের সম্মুখে আবার সাষ্টাঙ্গ!”

    গোস্বামী (Kathamrita)—রাধাকৃষ্ণ মূর্তির সম্মুখে?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—সাষ্টাঙ্গ! আর আচারী খুব।

    গোস্বামী—এখন সমাজে নিতে পারা যায়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—সে লোকে কি বলবে, তা অত চায় না।

    গোস্বামী—না, সমাজ তাহলে কৃতার্থ হয়—অমন লোককে পেলে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—আমায় খুব মানে।

    “তাকে পাওয়াই ভার। আজ ঢাকায় ডাক, কাল আর এক জায়গায় ডাক। সর্বদাই ব্যস্ত।

    “তাদের সমাজে (সাধারণ ব্রাহ্মসমাজে) বড় গোল উঠেছে।”

    গোস্বামী—আজ্ঞা, কেন?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—তাকে বলছে, ‘তুমি সাকারবাদীদের সঙ্গে মেশো!—তুমি পৌত্তলিক।’

    “আর অতি উদার সরল। সরল না কলে ঈশ্বরের কৃপা হয় না।”

    মুখুজ্জেদিগকে শিক্ষা—গৃহস্থ, “এগিয়ে পড়”—অভ্যাসযোগ 

    এইবার ঠাকুর (Kathamrita) মুখুজ্জেদের সঙ্গে কথা কহিতেছেন। জ্যেষ্ঠ মহেন্দ্র ব্যবসা করেন কাহারও চাকরি করেন না। কনিষ্ঠ প্রিয়নাথ ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। এখন কিছু সংস্থান করিয়াছেন। আর চাকরি করেন না। জ্যেষ্ঠের বয়স ৩৫/৩৬ হইবে। তাঁহাদের বাড়ি কেদেটি গ্রামে। কলিকাতা বাগবাজারের তাঁহাদের বসতবাটী আছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—একটু উদ্দীপন হচ্চে বলে চুপ করে থেকো না। এগিয়ে পড়। চন্দন কাঠের পর আরও আছে—রূপার খনি, সোনার খনি!

    প্রিয় (সহাস্যে)—আজ্ঞা, পায়ে বন্ধন—এগুতে দেয় না।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—পায়ে বন্ধন থাকলে কি হবে?—মন নিয়ে কথা।

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Ramakrishna 273: “রঙের গামলার আশ্চর্য গুণ যে, যে রঙে কাপড় ছোপাতে চাইবে তার কাপড় সেই রঙেই ছুপে যেত”

    Ramakrishna 273: “রঙের গামলার আশ্চর্য গুণ যে, যে রঙে কাপড় ছোপাতে চাইবে তার কাপড় সেই রঙেই ছুপে যেত”

    শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে ও ভক্তগৃহে

    ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ১৯শে সেপ্টেম্বর

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীযুক্ত রাধিকা গোস্বামী

    “তা ছাড়া ভেকের আদর করতে হয়। ভেক দেখলে সত্য বস্তুর উদ্দীপন হয়। চৈতন্যদেব গাধাকে ভেক পরিয়ে সাষ্টাঙ্গ হয়েছিলেন।

    “শঙ্খচিলকে দেখলে (Kathamrita) প্রণাম করে কেন? কংস মারতে যাওয়াতে ভগবতী শঙ্খচিল হয়ে উড়ে গিয়েছিলেন। তা এখনও শঙ্খচিল দেখলে সকলে প্রণাম করে।”

    পূর্বকথা—চানকে কোয়ার সিং কর্তৃক ঠাকুরের পূজা—ঠাকুরের রাজভক্তি Loyality

    “চানকের পল্টনের ভিতর ইংরাজকে আসতে দেখে সেপাইরা সেলাম করলে। কোয়ার সিং আমাকে বুঝিয়ে দিলে, ‘ইংরাজের রাজ্য তাই ইংরাজকে সেলাম করতে হয়’।”

    গোস্বামীর কছে সাম্প্রদায়িকতার নিন্দা—শাক্ত ও বৈষ্ণব 

    “শাক্তের তন্ত্র মত বৈষ্ণবের পুরাণ মত। বৈষ্ণব যা সাধন করে তা প্রকাশে দোষ নাই। তান্ত্রিকের সব গোপন। তাই তান্ত্রিককে সব বোঝা যায় না।

    (গোস্বামীর প্রতি)—“আপনারা বেশ—কত জপ করেন, কত হরিনাম করেন (Kathamrita) ।”

    গোস্বামী (বিনীতভাবে)—আজ্ঞা, আমরা আর কি করছি! আমি কত অধম।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—দীনতা; আচ্ছা ও তো আছে। আর এক আছে, ‘আমি হরিনাম কচ্ছি, আমার আবার পাপ! যে রাতদিন ‘আমি পাপী’ ‘আমি পাপী’ ‘আমি অধম’ ‘আমি অধম’ করে, সে তাই হয়ে যায়। কি অবিশ্বাস! তাঁর নাম এত করেছে আবার বলে, ‘পাপ, পাপ!’

    গোস্বামী (Ramakrishna) এই কথা অবাক্‌ হইয়া শুনিতেছেন।

    পূর্বকথা—বৃন্দাবনে বৈষ্ণবের ভেক গ্রহণ ১৮৬৮ খ্রী: 

    শ্রীরামকৃষ্ণ—আমিও বৃন্দাবনে ভেক নিয়েছিলাম;—পনর দিন রেখেছিলাম। (ভক্তদের প্রতি) সব ভাবই কিছুদিন করতাম, তবে শান্তি হতো।

    (সহাস্যে) “আমি সবরকম করেছি—সব পথই মানি। শাক্তদেরও মানি, বৈষ্ণবদেরও মানি, আবার বেদান্তবাদীদেরও মানি। এখানে তাই সব মতের লোক আসে। আর সকলেই মনে করে, ইনি আমাদেরই মতের লোক। আজকালকার ব্রহ্মজ্ঞানীদেরও মানি।

    “একজনের (Ramakrishna) একটি রঙের গামলা ছিল। গামলার আশ্চর্য গুণ যে, যে রঙে কাপড় ছোপাতে চাইবে তার কাপড় সেই রঙেই ছুপে যেত।

    “কিন্তু একজন চালাক লোক বলেছিল, ‘তুমি যে-রঙে রঙেছো, আমায় সেই রঙটি দিতে হবে।’ (ঠাকুর ও সকলের হাস্য)

    “কেন একঘেয়ে হব? ‘অমুক মতের লোক তাহলে আসবে না।’ এ ভয় আমার নাই। কেউ আসুক আর না আসুক তাতে আমার বয়ে গেছে;—লোক কিসে হাতে থাকবে, এমন কিছু আমার মনে নাই। অধর সেন বড় কর্মের জন্য মাকে বলতে বলেছিল—তা ওর সে কর্ম হল না। ও তাতে যদি কিছু মনে করে, আমার (Ramakrishna) বয়ে গেছে!”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Masan Holi: বারাণসীতে পালিত হয় মশান হোলি, এই উৎসব সম্পর্কে জানেন?

    Masan Holi: বারাণসীতে পালিত হয় মশান হোলি, এই উৎসব সম্পর্কে জানেন?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এটাও হোলি। তবে রংয়ের উৎসব নয়। এদিন ভক্তদের সঙ্গে হোলি খেলেন দেবাদিদেব মহাদেব। হোলি খেলা হয় শ্মশানে, ভূতপ্রেত এবং তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনের সঙ্গে (Masan Holi)। উত্তরপ্রদেশের এই হোলি মশান হোলি নামে পরিচিত। এ বছর এই মশান হোলি পালিত হবে ১১ মার্চ। এতে অংশ নেন নাগা সন্ন্যাসীরাও (Naga Sadhus)। আরাধ্য দেবতার সঙ্গে তাঁরা ভস্ম নিয়ে খেলেন হোলি।

    হোলি খেলা হবে মণিকর্ণিকা ঘাটে (Masan Holi)

    তামাম ভারতের মধ্যে কেবল বারাণসীতেই পালিত হয় এই উৎসব। ভস্মের পাশাপাশি এদিন রং খেলাও হয়। তবে বারাণসীর মণিকর্ণিকা ঘাটে ফি বছর যে হোলি খেলা হয়, সেখানে সাধু ও অঘোরীরা শিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাই দিয়েই হোলি খেলেন। এবার অনেক বেশি নাগা সন্ন্যাসীর ভিড় হবে বারাণসীতে। কারণ প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে চলছে মহাকুম্ভ। সেখানে স্নান সেরে নাগা সন্ন্যাসীরা আসবেন মহাদেবের সঙ্গে এই হোলি খেলায় অংশ নিতে।

    মশান হোলি

    নাগা সন্ন্যাসী রঘুনন্দন (Masan Holi) গিরি বলেন, “আমরা মশান হোলি পর্যন্ত বারাণসীতেই থাকব। তারপর রওনা দেব কেদারনাথের উদ্দেশে।” তিনি বলেন, “মশান হোলি বাবা বিশ্বনাথের একটি মহা আশীর্বাদ। আমরা এই প্রথা বজায় রাখব।” তিনি জানান, এটা কেবল বারাণসীতেই হয়, নাসিক, উজ্জ্বয়িনী কিংবা হরিদ্বারে হয় না।

    প্রতিবারের মতো এবারও মশান হোলির প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের প্রাক্তন মহন্তের আশ্রম থেকে সূচনা হবে এই উৎসবের। ২৬ ফেব্রুয়ারি শিবরাত্রি। এদিন হবে শিব-পার্বতীর বিয়ে। ৮ মার্চ হবে শগুন। পরের দিনই পালিত হবে গৌনা। ১০ মার্চ বিশাল পালকি যাত্রা রওনা দেবে বিশ্বনাথ মন্দিরের উদ্দেশে। এদিন পালিত হবে রংভরি একাদশী। তার পরের দিনই মণিকর্ণিকা ঘাটে অনুষ্ঠিত হবে মশান হোলি (Masan Holi)। এদিন শিবের রৌপ্য নির্মিত মূর্তিতে তেল-হলুদও মাখানো হয়।

    বালক গিরি নেপালি। তিনিও নাগা সন্ন্যাসী। মশান হোলিতে যোগ দেবেন তিনিও। বলেন, “আমি কুম্ভস্নান সেরে বেনারস থেকে প্রয়াগরাজে এসেছি। এবারও আমি শিবরাত্রি এবং হোলি খেলব বিশ্বনাথের সঙ্গে। প্রতি বছরই আমরা (Naga Sadhus) ভোলেনাথের সঙ্গে হোলি খেলি (Masan Holi)।”

  • Maa Jayanti Mandir: মেঘালয়ের মা জয়ন্তী মন্দির, একান্ন শক্তিপীঠের অন্যতম, জানুন ইতিহাস

    Maa Jayanti Mandir: মেঘালয়ের মা জয়ন্তী মন্দির, একান্ন শক্তিপীঠের অন্যতম, জানুন ইতিহাস

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মেঘালয়ের (Meghalaya) পশ্চিম জয়ন্তিয়া পাহাড় জেলায় রয়েছে বিখ্যাত একটি পুরোনো মন্দির (Maa Jayanti Mandir)। এর নাম নার্তিয়াং দুর্গা মন্দির। এই মন্দিরের বয়স ৬০০ বছরেরও বেশি বলে মনে করা হয়। ৫১ শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম এই মন্দিরটি হিন্দু শাক্ত ভক্তদের কাছে অন্যতম পবিত্র স্থান। মেঘালয়ের জয়ন্তিয়া পাহাড়ের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই মন্দিরটিই দেবী দুর্গার স্থায়ী আবাসস্থল। দুর্গাপুজো উপলক্ষে সারা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক তীর্থযাত্রী এই মন্দিরে এসে ভিড় জমান। এছাড়া সারাবছর ধরেই প্রচুর ভক্ত আসেন এই মন্দিরে। প্রসঙ্গত, নার্তিয়াং দেবী মন্দিরের আরাধ্যা দেবী শক্তি জয়ন্তী এবং ভৈরব কামাদিশ্বর।

    মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পৌরাণিক আখ্যান (Maa Jayanti Mandir)

    পৌরাণিক আখ্যান অনুসারে, রাজা দক্ষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মহাদেবকে বিয়ে করেছিলেন তাঁর কন্যা সতী। মহাদেবের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দক্ষ রাজা বৃহস্পতি নামে এক যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। যজ্ঞে সতী কিংবা মহাদেব কাউকেই আমন্ত্রণ জানাননি দক্ষ। মহাদেবের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সতী বাবার আয়োজিত যজ্ঞানুষ্ঠানে যান। সেখানে দক্ষ মহাদেবকে অপমান করেন। স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সতী দেহত্যাগ করেন। শোকাহত মহাদেব দক্ষর যজ্ঞ পণ্ড করেন এবং দেবী সতীর শবদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। তাঁর তাণ্ডব বন্ধ করতে অন্যান্য দেবতাদের অনুরোধে বিষ্ণুদেব তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহচ্ছেদ করেন। সতীর দেহের ৫১ খণ্ড ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে এবং পবিত্র পীঠস্থান শক্তিপীঠ বা সতীপীঠ (Maa Jayanti Mandir) নামে পরিচিতি। নার্তিয়াং সেই শক্তিপীঠের অন্যতম।

    কোচবিহারে বিয়ে করেন জয়ন্তিয়া রাজা জাসো মানিক

    হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, জয়ন্তিয়া পাহাড়ের নর্তিয়াংয়ে দেবীর বাম উরু পড়েছিল (Maa Jayanti Mandir)। তাই এখানে দেবী জয়ন্তেশ্বরী নামে খ্যাত। জয়ন্তিয়া রাজা জাসো মানিক (রাজত্বকাল ১৬০৬-১৬৪১) কোচবিহারের হিন্দু রাজা নর নারায়ণের কন্যাকে বিয়ে করেন। এর পরেই রাজ্যে হিন্দুধর্মের প্রভাব বিস্তার লাভ করে বলে জানা যায়। আজ থেকে প্রায় ৬০০ বছর আগে রাজা ধন মানিক জয়ন্তিয়া রাজ্যের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে নর্তিয়াংকে ঘোষণা করেছিলেন। জানা যায়, একদিন রাত্রে দেবী তাঁকে স্বপ্নে দেখা দেন এবং তাঁকে স্থানটির তাৎপর্য জানান এবং তাঁর সম্মানে একটি মন্দির তৈরি করতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় নর্তিয়াংয়ে জয়ন্তেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।

    আলাদা রীতিতে পুজো করা হয় (Maa Jayanti Mandir)

    এই পাহাড়ি মন্দিরের আচার অনুষ্ঠান অন্যান্য জায়গার পুজোর থেকে বেশ খানিকটা আলাদা। এখানে অন্য রীতিতে দেবীর পুজো হয়। হিন্দু এবং প্রাচীন খাসি ঐতিহ্যের মিশ্রণে দেবীর পুজো হয়। স্থানীয় যিনি সর্দার থাকেন তাঁকে মন্দিরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মন্দিরে রয়েছে বলি প্রথা। আজও দুর্গাপুজোর সময় সাইয়েম ছাগল বলি দেন। দুর্গাপুজো এই মন্দিরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব বলে মনে করা হয়। দুর্গাপুজোর সময়, একটি কলা গাছকে দেবী (Maa Jayanti Mandir) হিসেবে পুজো করা হয়। ধুমধাম করে দুর্গাপুজোর শেষে গাছটিকে স্থানীয় মিন্টডু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিদায়কালে শূন্যে বন্দুকের গুলি ছুড়ে দেবীকে সম্মান জানানো হয়।

    বাংলার সংস্কৃতি এবং খাসি-জয়ন্তিয়া পাহাড়ের সংমিশ্রণে এখানে দুর্গাপুজো করা হয়

    বর্তমানে মেঘালয়ের হিন্দু সমাজের তরফ থেকে সরকারি এক প্রতিনিধি থাকেন। তিনিই কেন্দ্রীয় পুজো কমিটি মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক। মন্দিরের অর্থনৈতিক হিসাব নিকাশ, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদির দায়িত্বে রয়েছে এই কমিটি। প্রাচীন এই মন্দিরে দুর্গা পুজো অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলার সংস্কৃতি এবং খাসি-জয়ন্তিয়া পাহাড়ের সংমিশ্রণে এখানে দুর্গাপুজো করা হয়। তবে দেবীর মূর্তি এখানে থাকে না। দেবী মূর্তির (Maa Jayanti Mandir) পরিবর্তে খাসি প্রথা মেনে গাঁদা ফুল দিয়ে সজ্জিত একটি কলার কাণ্ডে মা দুর্গার চিত্র তৈরি হয়। সেটিই আরাধ্যা দেবী। এই মন্দিরের একেবারে কাছেই রয়েছে একটি শিব মন্দির। সেখানে রয়েছে একটি প্রাচীন কামানের ভগ্নাবশেষ। বর্তমানে এই মন্দিরের পাশে একটি হিন্দু মন্দির রয়েছে। সেখানে জয়ন্তিয়াপুর থেকে আগত আদি পুরোহিতদের সরাসরি বংশধররা পুজোর অনুষ্ঠান করেন।

    কীভাবে যাবেন এই মন্দিরে

    বিমানপথে যদি কোনও তীর্থযাত্রী যেতে চান তাহলে তাঁকে প্রথমে যেতে হবে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে উমরোই বিমানবন্দরে। নার্তিয়াং দুর্গা মন্দির থেকে উমরোই বিমানবন্দরের দূরত্ব প্রায় ৬৭ কিলোমিটার। সড়কপথে এই শক্তিপীঠে যেতে গেলে নার্তিয়াং যেতে হবে। সেখান থেকে মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। শিলং বাসস্ট্যান্ড থেকে মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৬১ কিলোমিটার। গুয়াহাটি রেলস্টেশন থেকে এই মন্দির থেকে এই মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ১৫৩ কিলোমিটার।

  • Ramakrishna 271: “‘নারকেলের বেল্লো আপনা-আপনি খসে গেছে, জ্ঞান হলে উপাধি আপনি খসে পড়ে”

    Ramakrishna 271: “‘নারকেলের বেল্লো আপনা-আপনি খসে গেছে, জ্ঞান হলে উপাধি আপনি খসে পড়ে”

    শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে ও ভক্তগৃহে

    দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ১৯শে সেপ্টেম্বর

    “ও-দেশে যখন হৃদের বাড়িতে (কামারপুকুরের নিকট, সিওড়ে) ছিলাম। তখন শ্যামবাজারে নিয়ে গেল। বুঝলাম (Kathamrita) গৌরাঙ্গভক্ত। গাঁয়ে ঢোকবার আগে দেখিয়ে দিলে। দেখলাম গৌরাঙ্গ! এমনি আকর্ষণ—সাতদিন সাতরাত লোকের ভিড়! কেবল কীর্তন আর নৃত্য। পাঁচিলে লোক! গাছে লোক!

    “নটবর (Ramakrishna) গোস্বামির বাড়িতে ছিলাম। সেখানে রাতদিন ভিড়। আমি আবার পালিয়ে গিয়ে এক তাঁতীর ঘরে সকালে গিয়ে বসতাম। সেখানে আবার দেখি, খানিক পরে সব গিয়েছে। সব খোল-করতাল নিয়ে গেছে!—আবার ‘তাকুটী! তাকুটী!’ করছে। খাওয়া দাওয়া বেলা তিনটার সময় হতো!

    “রব উঠে গেল—সাতবার মরে, সাতবার বাঁচে, এমন এক লোক এসেছে! পাছে আমার সর্দিগর্মি হয়, হৃদে মাঠে টেনে নিয়ে যেতো;—সেখানে আবার পিঁপড়ের সার! আবার খোল-করতাল।—তাকুটী! তাকুটী! হৃদে বকলে, আর বললে, ‘আমরা কি কখনও কীর্তন শুনি নাই?’

    “সেখানকার গোঁসাইরা ঝগড়া করতে এসেছিল। মনে করেছিল, আমরা বুঝি তাদের পাওনাগণ্ডা নিতে এসেছি। দেখলে, আমি একখানা কাপড় কি একগাছা সুতাও লই নাই। কে বলেছিল ‘ব্রহ্মজ্ঞানী’। তাই গোঁসাইরা বিড়তে এসেছিল। একজন জিজ্ঞাসা (Kathamrita) করলে, ‘এঁর মালা তিলক, নাই কেন?’ তারাই একজন বললে, ‘নারকেলের বেল্লো আপনা-আপনি খসে গেছে’। ‘নারকেলের বেল্লো’ ও কথাটি ওইখানেই শিখেছি। জ্ঞান হলে উপাধি আপনি খসে পড়ে যায়।

    “দূর গাঁ থেকে লোক এসে জমা হতো (Kathamrita)। তারা রাত্রে থাকত। যে বাড়িতে ছিলাম, তার উঠানে রাত্রে মাগীরা অনেক সব শুয়ে আছে। হৃদে প্রস্রাব করতে রাতে বাহিরে যাচ্ছিল, তা বলে, ‘এইখানেই (উঠানে) করো।’

    “আকর্ষণ কাকে বলে, ওইখানেই (শ্যামবাজারে) বুঝলাম। হরিলীলায় (Ramakrishna)  যোগমায়ার সাহায্যে আকর্ষণ হয়, যেন ভেলকি লেগে যায়!”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Ramakrishna 272: “‘নেকো আমের গাছে নেকো আমই হয়, খারাপ আম হয় না, মাটির গুণে একটু ছোট বড় হয়”

    Ramakrishna 272: “‘নেকো আমের গাছে নেকো আমই হয়, খারাপ আম হয় না, মাটির গুণে একটু ছোট বড় হয়”

    শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে ও ভক্তগৃহে

    ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ১৯শে সেপ্টেম্বর

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীযুক্ত রাধিকা গোস্বামী

    মুখুজ্জে ভ্রাতৃদ্বয় প্রভৃতি ভক্তগণের সহিত কথা কহিতে কহিতে বেলা প্রায় তিনটা বাজিয়াছে। শ্রীযুক্ত রাধিকা গোস্বামী আসিয়া প্রণাম করিলেন। তিনি ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে এই প্রথম দর্শন করলেন। বয়স আন্দাজ ত্রিশের মধ্যে। গোস্বামী আসন গ্রহণ করিলেন (Kathamrita)।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—আপনারা কি অদ্বৈতবংশ?

    গোস্বামী—আজ্ঞা, হাঁ।

    ঠাকুর অদ্বৈতবংশ শুনিয়া গোস্বামীকে হাতজোড় করিয়া প্রণাম করিতেছেন।

    গোস্বামী বংশ ও ব্রাহ্মণ পূজনীয়—মহাপুরুষের বংশে জন্ম

    শ্রীরামকৃষ্ণ—অদ্বৈতগোস্বামী বংশ,—আকরের গুণ আছেই!

    “নেকো আমের গাছে নেকো আমই হয়। (ভক্তদের হাস্য) খারাপ আম হয় না। তবে মাটির গুণে একটু ছোট বড় হয়। আপনি কি বলেন (Kathamrita)?”

    গোস্বামী (বিনীতভাবে)—আজ্ঞে, আমি কি জানি।

    শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna)—তুমি যাই বল,—অন্য লোকে ছাড়বে কেন?

    “ব্রাহ্মণ, হাজার দোষ থাকুক—তবু ভরদ্বাজ গোত্র, শাণ্ডিল্য গোত্র বলে সকলের পূজনীয়। (মাস্টারের প্রতি) শঙ্খচিলের কথাটি বল তো!”

    মাস্টার চুপ করিয়া আছেন দেখিয়া ঠাকুর আবার কথা কহিতেছেন—

    শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna)—বংশে মহাপুরুষ যদি জন্মে থাকেন তিনিই টেনে নেবেন—হাজার দোষ থাকুক। যখন গন্ধর্ব কৌরবদের বন্দী করলে যুধিষ্ঠির গিয়ে তাদের মুক্ত করলেন। যে দুর্যোধন এত শত্রুতা করেছে, যার জন্য যুধিষ্ঠিরের বনবাস হয়েছে তাকেই গিয়ে মুক্ত করলেন(Kathamrita)!

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

LinkedIn
Share