Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 495: “যার জ্ঞান হয়েছে, তার নিন্দার ভয় কি? কামারের নেয়াই, কত হাতুড়ির ঘা পড়েছে, কিছুতেই কিছু হয় না”

    Ramakrishna 495: “যার জ্ঞান হয়েছে, তার নিন্দার ভয় কি? কামারের নেয়াই, কত হাতুড়ির ঘা পড়েছে, কিছুতেই কিছু হয় না”

    ৪৮ শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেন, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে

      প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুন
    ঠাকুরের গলার অসুখের সূত্রপাত

    অবতার বা নরলীলার গুহ্য অর্থ—দ্বিজ ও পূর্বসংস্কার 

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি)—মনুষ্যলীলা কেন জান? এর ভিতর তাঁর কথা শুনতে পাওয়া যায়। এর ভিতর তাঁর বিলাস, এর ভিতর তিনি রসাস্বাদন করেন।

    “আর সব ভক্তদের ভিতর তাঁরই একটু একটু প্রকাশ! যেমন জিনিস অনেক চুষতে চুষতে একটু রস, ফুল চুষতে চুষতে একটু মধু। (মাস্টারের প্রতি) তুমি এটা বুঝেছ?”

    মাস্টার-আজ্ঞা হাঁ, বেশ বুঝেছি।

    ঠাকুর (Ramakrishna) দ্বিজর সহিত কথা কহিতেছেন। দ্বিজর বয়স ১৫।১৬, বাপ দ্বিতীয় পক্ষে বিবাহ করিয়াছেন। দ্বিজ প্রায় মাস্টারের সঙ্গে আসেন। ঠাকুর তাঁহাকে স্নেহ করেন। দ্বিজ বলিতেছিলেন, বাবা তাঁকে দক্ষিণেশ্বরে আসিতে দেন না।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (দ্বিজর প্রতি) — তোর ভাইরাও? আমাকে কি অবজ্ঞা করে?

    দ্বিজ চুপ করিয়া আছেন।

    মাস্টার—সংসারের আর দু-চার ঠোক্কর খেলে যাদের একটু-আধটু যা অবজ্ঞা আছে, চলে যাবে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—বিমাতা আছে, ঘা (blow) তো খাচ্ছে।

    সকলে একটু চুপ করিয়া আছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি)—একে (দ্বিজকে) পূর্ণর সঙ্গে দেখা করিয়ে দিও না।

    মাস্টার—যে আজ্ঞা। (দ্বিজর প্রতি)—পেনেটিতে যেও।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—হাঁ, তাই সব্বাইকে বলছি—একে পাঠিয়ে দিও; ওকে পাঠিয়ে দিও। (মাস্টারের প্রতি) তুমি যাবে না?

    ঠাকুর পেনেটির মহোৎসবে যাইবেন। তাই ভক্তদের সেখানে যাবার কথা বলিতেছেন।

    মাস্টার—আজ্ঞা, ইচ্ছা আছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Kathamrita)—বড় নৌকা হবে, টলটল করবে না। গিরিশ ঘোষ যাবে না?

    হাঁ’ ‘না’ “Everlasting Yea— Everlasting Nay”

    ঠাকুর দ্বিজকে একদৃষ্টে দেখিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—আচ্ছা এত ছোকরা আছে, এই বা আসে কেন? তুমি বল, অবশ্য আগেকার কিছু ছিল!

    মাস্টার—আজ্ঞা হাঁ।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—সংস্কার। আগের জন্মে কর্ম করা আছে। সরল হয়ে শেষ জন্মে। শেষ জন্মে খ্যাপাটে ভাব থাকে।

    “তবে কি জানো?—তাঁর ইচ্ছা। তঁর ‘হাঁ’তে জগতের সব হচ্চে; তঁর ‘না’তে হওয়া বন্ধ হচ্চে। মানুষের আশীর্বাদ করতে নাই কেন?

    “মানুষের ইচ্ছায় কিছু হয় না, তাঁরই ইচ্ছাতে হয়—যায়!

    “সেদিন কাপ্তেনের ওখানে গেলাম (Kathamrita)। রাস্তা দিয়ে ছোকরারা যাচ্ছে দেখলাম। তারা একরকমের। একটা ছোকরাকে দেখলাম, উনিশ-কুড়ি বছর বয়স, বাঁকা সিঁতে কাটা, শিস দিতে দিতে যাচ্ছে! কেউ যাচ্ছে বলতে বলতে, ‘নগেন্দ্র! ক্ষীরোদ!’

    “কেউ দেখি ঘোর তমো;—বাঁশী বাজাচ্ছে,—তাতেই একটু অহংকার হয়েছে। (দ্বিজর প্রতি) যার জ্ঞান হয়েছে, তার নিন্দার ভয় কি? তার কূটস্থ বুদ্ধি — কামারের নেয়াই, তার উপর কত হাতুড়ির ঘা পড়েছে, কিছুতেই কিছু হয় না।

    “আমি (অমুকের) বাপকে দেখলাম রাস্তা দিয়ে যাচ্চে।”

    মাস্টার—লোকটি বেশ সরল।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—কিন্তু চোখ রাঙা।

  • Ramakrishna 494: “‘সকলের খেলেই কি জ্ঞান হয়? কুকুর যা তা খায়, তাই বলে কি কুকুর জ্ঞানী?”

    Ramakrishna 494: “‘সকলের খেলেই কি জ্ঞান হয়? কুকুর যা তা খায়, তাই বলে কি কুকুর জ্ঞানী?”

    ৪৮ শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেন, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুন
    ঠাকুরের গলার অসুখের সূত্রপাত

    “মার পাদপদ্মে ফুল দিয়ে যখন সব ত্যাগ করতে লাগলাম, তখন বলতে লাগলাম, ‘মা! এই লও তোমার শুচি, এই লও তোমার অশুচি; এই লও তোমার ধর্ম, এই লও তোমার অধর্ম; এই লও তোমার পাপ, এই লও তোমার পুণ্য; এই লও তোমার ভাল, এই লও তোমার মন্দ; আমায় শুদ্ধাভক্তি দাও।’ কিন্তু এই লও তোমার সত্য, এই লও তোমার মিথ্যা এ-কথা বলতে (Kathamrita) পারলাম না।”

    একজন ভক্ত বরফ আনিয়াছিলেন। ঠাকুর (Ramakrishna) পুনঃপুনঃ মাস্টারকে জিজ্ঞাসা করিতেছেন, “হাঁগা খাব কি?”

    মাস্টার বিনীতভাবে বলিতেছেন, “আজ্ঞা, তবে মার সঙ্গে পরামর্শ না করে খাবেন না।”

    ঠাকুর অবশেষে বরফ খাইলেন না।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—শুচি-অশুচি—এটি ভক্তি ভক্তের পক্ষে। জ্ঞানীর পক্ষে নয়। বিজয়ের শাশুড়ী বললে, ‘কই আমার কি হয়েছে? এখনও সকলের খেতে পারি না!’ আমি বললাম, ‘সকলের খেলেই কি জ্ঞান হয়? কুকুর যা তা খায়, তাই বলে কি কুকুর জ্ঞানী?’

    (মাস্টারের প্রতি)—“আমি পাঁচ ব্যান্নন দিয়ে খাই কেন? পাছে একঘেয়ে হলে এদের (ভক্তদের) ছেড়ে দিতে হয়।

    “কেশব সেনকে বললাম, আরও এগিয়ে কথা বললে তোমার দলটল থাকে না!

    “জ্ঞানীর অবস্থায় দলটল মিথ্যা—স্বপ্নবৎ।…

    “মাছ ছেড়ে দিলাম। প্রথম প্রথম কষ্ট হত, পরে তত কষ্ট হত না। পাখির বাসা যদি কেউ পুড়িয়ে দেয়, সে উড়ে উড়ে বেড়ায় (Kathamrita); আকাশ আশ্রয় করে। দেহ, জগৎ—যদি ঠিক মিথ্যা বোধ হয়, তাহলে আত্মা সমাধিস্থ হয়।

    “আগে ওই জ্ঞানীর অবস্থা ছিল। লোক ভাল লাগত না। হাটখোলায় অমুক একটি জ্ঞানী আছে, কি একটি ভক্ত আছে, এই শুনলাম; আবার কিছুদিন পরে শুনলাম, ওই সে মরে গেছে! তাই আর লোক ভাল লাগত না। তারপর তিনি (মা) মনকে নামালেন, ভক্তি-ভক্ততে মন রাখিয়ে দিলেন।”

    মাস্টার অবাক্‌, ঠাকুরের (Ramakrishna) অবস্থা পরিবর্তনের বিষয় শুনিতেছেন। এইবার ঈশ্বর মানুষ হয়ে কেন অবতার হন, তাই ঠাকুর বলিতেছেন।

  • Jagaddhatri Puja 2025: কীভাবে শুরু হয়েছিল চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো? জানুন সেই অজানা ইতিহাস

    Jagaddhatri Puja 2025: কীভাবে শুরু হয়েছিল চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো? জানুন সেই অজানা ইতিহাস

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জগৎকে ধারণ করেন মা দেবী শক্তি, তাই তাঁর নাম দেবী জগদ্ধাত্রী (Jagadhatri Puja 2025)। তাঁর বিশাল রূপ, টানা চোখ, অপরূপ সুন্দর ত্রিনয়ন, চার হাতে শোভা পাচ্ছে অসুর সংহারের জন্য অস্ত্র। দেবী দুর্গার আরেক রূপ মা জগদ্ধাত্রী। তিনিও সিংহবাহিনী। এই রূপেই পূজিত হন দেবী জগদ্ধাত্রী। সারা বাংলা জুড়েই বিশাল বিশাল মাতৃ মূর্তি নির্মাণ করে আরাধনা করা হয়। কৃষ্ণনগরেই জন্ম জগদ্ধাত্রী পুজোর (Jagaddhatri Puja 2025)। তবুও চন্দননগরের পুজোই বিখ্যাত হয়েছে। এর পিছনে রয়েছে এক অজানা ইতিহাস। উল্লেখ্য চন্দননগরের পুজোর আলোকসজ্জা, সুবিশাল প্রতিমা দর্শনার্থীদের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। আশেপাশের জেলা, রাজ্য এমনকী বিদেশ থেকেও দর্শনার্থীরা পুজো দেখতে আসেন। অথচ এই পুজো শুরুর পিছনে রয়েছে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বিশেষ প্রভাব এবং অবদান। কীভাবে প্রচলিত হল চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagaddhatri Puja Chandannagar)? আসুন জেনে নিই এই অজানা কাহিনি।

    দেবী রাজাকে স্বপ্নাদেশ দেন

    সময়টা তখন ব্রিটিশ শাসনের অধীন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে দমন করতে ব্রিটিশদের সহযোগী হয়ে বাংলার রাজাদের বন্দি করেন মির কাশিম। এই বন্দিদের তালিকায় ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং তাঁর ছেলে। কিন্তু যখন রাজা বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান সেই সময় দেখেন দুর্গাপুজো শেষ হয়ে গিয়েছে। পুজোর আনন্দ থেকে রাজা বঞ্চিত হন এবং এরপর মনমরা হয়ে পড়েন। কথিত আছে রাজা এরপরেই দেবীর কাছে স্বপ্নাদেশ পান। কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে মায়ের চতুর্ভূজা রূপের আরাধনা করার আদেশ পান রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। দেবী রাজাকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন, “জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagaddhatri Puja 2025) করতে হবে। জনসেবা এবং বিশ্বকে সব রকম অশুভ শক্তি থেকে মুক্ত করতে দেবী পুজো আবশ্যক।” সেই থেকে শুরু হয় কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো। পরবর্তীতে রাজবাড়ির রাজপ্রাসাদের গণ্ডি টপকে ছড়িয়ে পড়ে নগরের অলিগলিতে। এরপর থেকেই এই পুজো ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে গোটা কৃষ্ণনগরে। মোটামুটি জানা গিয়েছে, ১৭৬৩-৬৪ সালে হৈমন্তিকার আরাধনা শুরু হয় জলঙ্গি নদীর পাড়ে। তবে, সঠিক সময় নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

    কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের নবমী পুজো

    তবে বাংলার জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagaddhatri Puja 2025) নিয়ে পৌরাণিক মত খুব একটা স্পষ্ট করে পাওয়া যায় না। একটি মতে বলা হয়, ত্রেতা যুগের শুরুতে করীন্দ্রাসুর নামে এক হস্তীরূপী অসুরকে বধ করার জন্য দুর্গার মতো ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের শক্তি থেকে সিংহবাহিনী, চতুর্ভুজা এই দেবীর জন্ম হয়। জগদ্ধাত্রী দেবী চার হাতে থাকে চক্র, শঙ্খ, ধনুক এবং পঞ্চবান। আবার অপর আরেক মতে, কোনও অসুর বধ নয়, মহিষাসুরের বধের পর অগ্নি, পবন, বরুণ এবং চন্দ্র দেবতা আত্ম অহংকারে ভুগতে শুরু করেন।দেবতাদের দর্পচূর্ণ করতে দেবী জগদ্ধাত্রীর আর্বিভাব। সেখানে হস্তীকে অহংকারের স্বরূপ ধরা হয়। তাঁকেই বধ করেন দেবী। শাস্ত্রমতে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagaddhatri Puja Chandannagar)।

    সুবিশাল মণ্ডপ, প্রতিমা ভক্তদের আকর্ষণ করে চন্দননগর

    কৃষ্ণনগরের পাশাপাশি চন্দননগরেও পুজো শুরু হয়েছিল। জলঙ্গির পাড় থেকে গঙ্গার পাড়ে কীভাবে পৌঁছাল পুজো? জানা যায়, জমিদার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন ফরাসিদের দেওয়ান জনৈক ইন্দ্রনারায়ণ রায়। তিনি নিজের বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagaddhatri Puja 2025) শুরু করেছিলেন। ইন্দ্রনারায়ণ ছিলেন চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জের চাউলপট্টির বাসিন্দা। সেখানেই চাউলপট্টির নিচুপাটিতে ইন্দ্রনারায়ণ প্রথম শুরু করেন জগদ্ধাত্রী পুজো। আবার আরেকটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারামের বিধবা কন্যা থাকতেন ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলায়। সেখানে রাজার অনুমতি নিয়ে পুজো শুরু হয়েছিল। এই পুজোর অনুদান দিতেন স্বয়ং রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। ক্রমে ক্রমে এই পারিবারিক পুজো এবং সর্বজনীন পুজোতে পরিণত হয়েছে। তবে সময়ের ব্যবধানে জাঁকজমক, আলোর খেলায় চন্দননগরের (Jagaddhatri Puja Chandannagar) জনপ্রিয়তা অনেক বড় জায়গা করে নিয়েছে। এখানকার সুবিশাল মণ্ডপ, প্রতিমা ভক্ত, দর্শকদের ব্যাপক ভাবে আকর্ষণ করে। দেশ-বিদেশেও বাঙালির বড় পুজোর মধ্যে এই জগদ্ধাত্রী পুজো বড় জায়গা করে নিয়েছে।

  • Ramakrishna 493: “বড় গরম পড়াতে মাস্টারেরও শরীর অসুস্থ, মাকে বলেছি, মা! ভাল করে দাও, আর কুলপি খাব না”

    Ramakrishna 493: “বড় গরম পড়াতে মাস্টারেরও শরীর অসুস্থ, মাকে বলেছি, মা! ভাল করে দাও, আর কুলপি খাব না”

    ৪৮ শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেন, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে

     প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুন
    ঠাকুরের গলার অসুখের সূত্রপাত

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) দক্ষিণেশ্বরে কালীমন্দিরে সেই পূর্বপরিচিত ঘরে বিশ্রাম করিতেছেন। আজ শনিবার, ১৩ই জুন, ১৮৮৫, (৩২শে জৈষ্ঠ, ১২৯২) জৈষ্ঠ শুক্লা প্রতিপদ, জ্যৈষ্ঠ মাসের সংক্রান্তি। বেলা তিনটা। ঠাকুর খাওয়া-দাওয়ার পর ছোট খাটটিতে একটু বিশ্রাম করিতেছেন।

    পণ্ডিতজী মেঝের উপর মাদুরে বসিয়া আছেন। একটি শোকাতুরা ব্রাহ্মণী ঘরের উত্তরের দরজার পাশে দাঁড়াইয়া আছেন। কিশোরীও আছেন। মাস্টার আসিয়া প্রণাম করিলেন। সঙ্গে দ্বিজ ইত্যাদি। অখিলবাবুর প্রতিবেশীও বসিয়া আছেন। তাঁহার সঙ্গে একটি আসামী ছোকরা।

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ একটু অসুস্থ আছেন। গলায় বিচি হইয়া সর্দির ভাব। গলার অসুখের এই প্রথম সূত্রপাত।

    বড় গরম পড়াতে মাস্টারেরও শরীর অসুস্থ। ঠাকুরকে সর্বদা দর্শন করিতে (Kathamrita) দক্ষিণেশ্বরে আসিতে পারেন নাই।

    শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna)—এই যে তুমি এসেছ। বেশ বেলটি। তুমি কেমন আছ?

    মাস্টার—আজ্ঞা, আগেকার চেয়ে একটু ভাল আছি।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—বড় গরম পড়েছে। একটু একটু বরফ খেও। আমারও বাপু বড় গরম পড়ে কষ্ট হয়েছে। গরমেতে কুলপি বরফ—এই সব বেশি খাওয়া হয়েছিল। তাই গলায় বিচি হয়েছে। গয়ারে এমন বিশ্রী গন্ধ দেখি নাই।

    “মাকে বলেছি, মা! ভাল করে দাও, আর কুলপি খাব না।

    “তারপর আবার বলেছি, বরফও খাব না।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ও সত্যকথা—তাঁহার জ্ঞানী ও ভক্তের অবস্থা

    “মাকে যেকালে বলছি ‘খাব না’ আর খাওয়া হবে না। তবে এমন হঠাৎ ভুল হয়ে যায়। বলেছিলাম (Ramakrishna), রবিবারে মাছ খাব না। এখন একদিন ভুলে খেয়ে ফেলেছি।

    “কিন্তু জেনে-শুনে হবার জো নাই। সেদিন গাড়ু নিয়ে একজনকে ঝাউতলার দিকে আসতে বললুম। এখন সে বাহ্যে গিছল, তাই আর-একজন নিয়ে এসেছিল। আমি বাহ্যে করে এসে দেখি যে, আর-একজন গাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে গাড়ুর জল নিতে পারলুম না। কি করি? মাটি দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলুম—যতক্ষণ না সে এসে জল দিলে(Kathamrita)।

  • Ramakrishna 492: “কি আশ্চর্য, মহাপুরুষ, ইনিও প্রাকৃত লোকের ন্যায় নিদ্রায় অভিভুত হইয়া শুইয়া আছেন”

    Ramakrishna 492: “কি আশ্চর্য, মহাপুরুষ, ইনিও প্রাকৃত লোকের ন্যায় নিদ্রায় অভিভুত হইয়া শুইয়া আছেন”

    ৪৫ শ্রীরামকৃষ্ণের কলিকাতায় ভক্তমন্দিরে আগমন —
    শ্রীযুক্ত গিরিশ ঘোষের বাটীতে উৎসব

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ২৪শে এপ্রিল
    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরামের বাটীতে অন্তরঙ্গসঙ্গে

    নরেন্দ্র, মাস্টার, যোগীন, বাবুরাম, রাম, ভবনাথ, বলরাম, চুনি 

    শুক্রবার (১২ই বৈশাখ, ১২৯২) বৈশাখের শুক্লা দশমী, ২৪শে এপ্রিল, ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দ। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) আজ কলিকাতায় আসিয়াছেন। মাস্টার আন্দাজ বেলা একটার সময় বলরামের বৈঠকখানায় গিয়া দেখেন, ঠাকুর নিদ্রিত। দু-একটি ভক্ত কাছে বিশ্রাম করিতেছেন।

    মাস্টার একপার্শ্বে বসিয়া সেই সুপ্ত বালক-মূর্তি দেখিতেছেন। ভাবিতেছেন, কি আশ্চর্য, এই মহাপুরুষ, ইনিও প্রাকৃত লোকের ন্যায় নিদ্রায় অভিভুত হইয়া শুইয়া আছেন। ইনিও জীবের ধর্ম স্বীকার করিয়াছেন।

    মাস্টার আস্তে আস্তে একখানি পাখা লইয়া হাওয়া করিতেছেন। কিছুক্ষণ পরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের নিদ্রাভঙ্গ হইল। এলোথেলো হইয়া তিনি উঠিয়া বসিলেন। মাস্টার ভূমিষ্ঠ হইয়া তাঁহাকে প্রণাম ও তাঁহার পদধূলি গ্রহণ করিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণের প্রথম অসুখের সঞ্চার—এপ্রিল ১৮৮৫

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি সস্নেহে)—ভাল আছ? কে জানে বাপু! আমার গলায় বিচি হয়েছে। শেষ রাত্রে বড় কষ্ট হয়। কিসে ভাল হয় বাপু? (চিন্তিত হইয়া)—আমের অম্বল করেছিল, সব একটু একটু খেলুম। (মাস্টারের প্রতি)—তোমার পরিবার কেমন আছে? সেদিন কাহিল দেখলুম; ঠাণ্ডা একটু একটু দেবে।

    মাস্টার—আজ্ঞা, ডাব-টাব?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—হাঁ, মিছরির সরবৎ খাওয়া ভাল।

    মাস্টার—আমি রবিবার বাড়ি গিয়েছি।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—বেশ করেছ। বাড়িতে থাকা তোমার সুবিধে। বাপ-টাপ সকলে আছে, তোমায় সংসার তত দেখতে হবে না।

    কথা কহিতে কহিতে ঠাকুরের মুখ শুকাইতে লাগিল। তখন বালকের ন্যায় জিজ্ঞাসা করিতেছেন, (মাস্টারের প্রতি)—আমার মুখ শুকুচ্চে। সবাই-এর কি মুখ শুকুচ্চে?

    মাস্টার — যোগীনবাবু, তোমার কি মুখ শুকুচ্চে?

    যোগীনদ্র — না; বোধ হয়, ওঁর গরম হয়েছে।

    এঁড়েদার যোগীন ঠাকুরের অন্তরঙ্গ; একজন ত্যাগী ভক্ত।

    ঠাকুর এলোথেলো হয়ে বসে আছেন। ভক্তেরা কেহ কেহ হাসিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—যেন মাই দিতে বসেছি। (সকরের হাস্য) আচ্ছা, মুখ শুকুচ্চে, তা ন্যাশপাতি খাব? কি জামরুল?

    বাবুরাম—তাই বরং আনি গে—জামরুল।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—তোর আর রৌদ্রে গিয়ে কাজ নাই।

    মাস্টার পাখা করিতেছিলেন (Kathamrita)।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—থাক, তুমি অনেকক্ষণ—

    মাস্টার—আজ্ঞা, কষ্ট হচ্চে না।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সস্নেহে)—হচ্চে না?

    মাস্টার নিকটবর্তী একটি স্কুলে অধ্যাপনা কার্য করেন। তিনি একটার সময় পড়ান হইতে কিঞ্চিৎ অবসর পাইয়া আসিয়াছিলেন। এইবার স্কুলে আবার যাইবার জন্য গাত্রোত্থান করিলেন ও ঠাকুরের পাদবন্দনা করিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি)—এক্ষণই যাবে?

    একজন ভক্ত—স্কুলে এখনও ছুটি হয় নাই। উনি মাঝে একবার এসেছিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (হাসিতে হাসিতে)—যেমন গিন্নি—সাত-আটটি ছেলে বিয়েন—সংসারে রাতদিন কাজ—আবার ওর মধ্যে এক-একবার এসে স্বামীর সেবা (Kathamrita) করে যায়। (সকলের হাস্য)

  • Ramakrishna 491: “কামিনী-কাঞ্চন ছাদ! ছাদ তুলে না ফেললে কি সূর্যকে দেখা যায়! সংসারী লোক  ঘরের ভিতর বন্দী!”

    Ramakrishna 491: “কামিনী-কাঞ্চন ছাদ! ছাদ তুলে না ফেললে কি সূর্যকে দেখা যায়! সংসারী লোক ঘরের ভিতর বন্দী!”

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    সপ্তম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও অবতারতত্ত্ব

    “তা হোক। ওদের দোষ নাই। সকলে কি সেই অখণ্ড সচ্চিদানন্দকে ধরতে পারে? রামচন্দ্রকে বারজন ঋষি কেবল জানতে পেরেছিল। সকলে ধরতে পারে না। কেউ সাধারণ মানুষ ভাবে; —কেউ সাধু ভাবে; দু-চারজন অবতার বলে ধরতে পারে।

    “যার যেমন পুঁজি—জিনিসের সেইরকম দর দেয়। একজন বাবু তার চাকরকে বললে, তুই এই হীরেটি বাজারে নিয়ে যা। আমায় বলবি, কে কি-রকম দর দেয়। আগে বেগুনওয়ালার কাছে নিয়ে যা। চাকরটি প্রথমে বেগুনওয়ালার কাছে গেল। সে নেড়ে চেড়ে দেখে বললে — ভাই, নয় সের বেগুন আমি দিতে পারি! চাকরটি বললে, ভাই আর একটু ওঠ, না হয় দশ শের দাও। সে বললে, আমি বাজার দরের চেয়ে বেশি বলে ফেলেছি; এতে তোমায় পোষায় তো দিয়ে যাও। চাকর তখন হাসতে হাসতে হীরেটি ফিরিয়ে নিয়ে বাবুর কাছে বললে, মহাশয়, (Ramakrishna) বেগুনওয়ালা নয় সের বেগুনের বেশি একটিও দেবে না। সে বললে, আমি বাজার দরের চেয়ে বেশি বলে ফেলেছি।

    বাবু হেসে বললে, আচ্ছা এবার কাপড়ওয়ালার কাছে নিয়ে যা। ও বেগুন নিয়ে থাকে, ও আর কতদূর বুঝবে! কাপড়ওয়ালার পুঁজি একটু বেশি, — দেখি ও কি বলে। চাকরটি কাপড়ওয়ালার কাছে বললে, ওহে এটি নেবে? কত দর দিতে পার? কাপড়ওয়ালা বললে, হাঁ জিনিসটা ভাল, এতে বেশ গয়না হতে পারে;—তা ভাই আমি নয়শো টাকা দিতে পারি। চাকরটি বললে, ভাই আর-একটু ওঠ, তাহলে ছেড়ে দিয়ে যাই; না হয় হাজার টাকাই দাও। কাপড়ওয়ালা বললে, ভাই, আর কিছু বলো না; আমি বাজার দরের চেয়ে বেশি বলে ফেলেছি; নয়শো টাকার বেশি একটি টাকাও আমি দিতে পারব না। চাকর ফিরিয়ে নিয়ে মনিবের কাছে হাসতে হাসতে ফিরে গেল আর বললে যে, কাপড়ওয়ালা বলেছে (Kathamrita) যে নশো টাকার বেশি একটি টাকাও সে দিতে পারবে না! আরও সে বলেছে, আমি বাজার দরের চেয়ে বেশি বলে ফেলেছি। তখন তার মনিব হাসতে হাসতে বললে, এইবার জহুরীর কাছে যাও—সে কি বলে দেখা যাক। চাকরটি জহুরীর কাছে এল। জহুরী একটু দেখেই একবারে বললে, একলাখ টাকা দেব।”

    ঈশ্বরকোটি ও জীবকোটি

    “সংসারে ধর্ম ধর্ম এরা করছে। যেমন একজন ঘরে আছে,—সব বন্ধ,—ছাদের ফুটো দিয়ে একটু আলো আসছে। মাতার উপর ছাদ থাকলে কি সূর্যকে দেখা যায়? একটু আলো এলে কি হবে? কামিনী-কাঞ্চন ছাদ! ছাদ তুলে না ফেললে কি সূর্যকে দেখা যায়! সংসারী লোক যেন ঘরের ভিতর বন্দী হয়ে আছে!

    “অবতারাদি ঈশ্বরকোটি। তারা ফাঁকা জায়গায় বেড়াচ্চে। তারা কখনও সংসারে বদ্ধ হয় না,— বন্দী হয় না। তাদের ‘আমি’ মোটা ‘আমি’ নয়—সংসারী লোকদের মতো। সংসারী লোকদের অহংকার, সংসারী লোকদের ‘আমি’—যেন চতুর্দিকে পাঁচিল, মাথার উপর ছাদ; — বাহিরে কোন জিনিস দেখা যায় না। অবতারাদির ‘আমি’ পাতলা ‘আমি’ (Ramakrishna)। এ ‘আমি’র ভিতর দিয়ে ঈশ্বরকে সর্বদা দেখা যায়। যেমন একজন লোক পাঁচিলের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে,—পাঁচিলের দুদিকেই অনন্ত মাঠ। সেই পাঁচিলের গায়ে যদি ফোকর থাকে পাঁচিলের ওধারে সব দেখা যায়। বড় ফোকর জলে আনাগোনাও হয়। অবতারাদির ‘আমি’ ওই ফোকরওয়ালা পাঁচিল। পাঁচিলের এধারে থাকলেও অনন্ত মাঠ দেখা যায়;—এর মানে, দেহধারণ করলেও তারা সর্বদা যোগেতেই থাকে! আবার ইচ্ছে হলে বড় ফোকরের ওধারে গিয়ে সমাধিস্থ হয়। আবার বড় ফোকর হলে আনাগোনা করতে পারে; সমাধিস্থ হলেও আবার নেমে আসতে পারে।”

    ভক্তেরা অবাক্‌ হইয়া অবতারতত্ত্ব শুনিতে লাগিলেন।

  • Ramakrishna 490: “যতক্ষণ ‘আমি’ টুকু থাকে ততক্ষণ ভেদবুদ্ধি, ‘আমি’ গেলে কি রইল তা কেউ জানতে পারে না”

    Ramakrishna 490: “যতক্ষণ ‘আমি’ টুকু থাকে ততক্ষণ ভেদবুদ্ধি, ‘আমি’ গেলে কি রইল তা কেউ জানতে পারে না”

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    সপ্তম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও অবতারতত্ত্ব

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ত্রৈলোক্যের প্রতি)—অনন্ত ঢুকুতে চাও কেন? তোমাকে ছুঁলে কি তোমার সব শরীরটা ছুঁতে হবে? যদি গঙ্গাস্নান করি তা হলে হরিদ্বার থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত কি ছুঁয়ে যেতে হবে? ‘আমি গেলে ঘুচিবে জঞ্জাল’। যতক্ষণ ‘আমি’ টুকু থাকে ততক্ষণ ভেদবুদ্ধি। ‘আমি’ গেলে কি রইল তা কেউ জানতে পারে না,— মুখে বলতে (Kathamrita) পারে না। যা আছে তাই আছে! তখন খানিকটা এঁতে প্রকাশ হয়েছে আর বাদবাকিটা ওখানে প্রকাশ হয়েছে,—এ-সব মুখে বলা যায় না। সচ্চিদানন্দ সাগর!—তার ভিতর ‘আমি’ ঘট। যতক্ষণ ঘট ততক্ষণ যেন দুভাগ জল,—ঘটের ভিতরে একভাগ, বাহিরে এক ভাগ। ঘট ভেঙে গেলে—এক জল—তাও বলবার জো নাই!—কে বলবে?

    বিচারান্তে ঠাকুর ত্রৈলোক্যের সঙ্গে মিষ্টালাপ করিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তুমি তো আনন্দে আছ?

    ত্রৈলোক্য—কই এখান থেকে উঠলেই আবার যেমন তেমনি হয়ে যাবে। এখন বেশ ঈশ্বরের উদ্দীপনা হচ্ছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—জুতো পরে থাকলে, কাঁটা বনে আর তার ভয় নাই। ‘ঈশ্বর সত্য আর সব অনিত্য’ এই বোধ ধাকলে কামিনী-কাঞ্চনে আর ভয় নাই।

    ত্রৈলোক্যকে মিষ্টমুখ করাইতে বলরাম কক্ষান্তরে লইয়া গেলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ ত্রৈলোক্যের ও তাঁহার মতালম্বী লোকদিগের ভক্তদের নিকট বর্ণনা করিতেছেন। রাত নয়টা হইল।

    অবতারকে কি সকলে চিনিতে পারে?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) গিরিশ, মণি ও অন্যান্য ভক্তদের প্রতি)—এর আকি জানো! একটা পাতকুয়ার ব্যাঙ কখনও পৃথিবী দেখে নাই; পাতকুয়াটি জানে; তাই বিশ্বাস করবে না যে, একটা পৃথিবী আছে। ভগবানের আনন্দের সন্ধান পায় নাই, তাই ‘সংসার, সংসার’ করছে।

    (গিরিশের প্রতি)—“ওদের সঙ্গে বকচো কেন? দুইই নিয়ে অছে। ভগবানের আনন্দের আস্বাদ না পেলে, সে আনন্দের কথা বুঝতে পারে না। পাঁচবছরের বালককে কি রমণসুখ বোঝানো যায়? বিষয়ীরা যে ঈশ্বর ঈশ্বর করে, সে শোনা কথা। যেমন খুড়ী জেঠিরা কোঁদল করে, তাদের কাছ থেকে বালকেরা শুনে শেখে আর বলে(Kathamrita), ‘আমার ঈশ্বর আছেন’, ‘তোর ঈশ্বরের দিব্য।

  • Ramakrishna 489: “প্রেমই ঈশ্বরের সারাংশ— যে মানুষ দিয়ে ঈশ্বরের প্রেম আসে তাকেই আমাদের দরকার”

    Ramakrishna 489: “প্রেমই ঈশ্বরের সারাংশ— যে মানুষ দিয়ে ঈশ্বরের প্রেম আসে তাকেই আমাদের দরকার”

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    সপ্তম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও অবতারতত্ত্ব

    একজন ভক্ত (ত্রৈলোক্যের প্রতি)—আপনার বইয়েতে দেখলাম আপনি অবতার মানেন না। চৈতন্যদেবের কথায় দেখলাম।

    ত্রৈললোক্য—তিনি নিজেই প্রতিবাদ করেছেন,—পুরীতে যখন অদ্বৈত ও অন্যান্য ভক্তেরা ‘তিনিই ভগবান’ (Ramakrishna) এই বলে গান করেছিলেন, গান শুনে চৈতন্যদেব ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ঈশ্বরের অনন্ত ঐশ্বর্য। ইনি যেমন বলেন ভক্ত ঈশ্বরের বৈঠকখানা। তা বৈঠকখানা খুব সাজান বলে কি আর কিছু ঐশ্বর্য নাই?

    গিরিশ—ইনি বলেন, প্রেমই ঈশ্বরের সারাংশ—যে মানুষ দিয়ে ঈশ্বরের প্রেম আসে তাকেই আমাদের দরকার। ইনি বলেন, গরুর দুধ বাঁট দিয়ে আসে, আমাদের বাঁটের দরকার। গরুর শরীরে অন্য কিছু দরকার নাই; হাত, পা কি শিং।

    ত্রৈলোক্য—তাঁর প্রেমদুগ্ধ অনন্ত প্রণালী দিয়ে পড়ছে! তিনি যে অনন্তশক্তি!

    গিরিশ—ওই প্রেমের কাছে আর কোন শক্তি দাঁড়ায়?

    ত্রৈলোক্য—যাঁর শক্তি তিনি মনে (Kathamrita) করলে হয়! সবই ঈশ্বরের শক্তি।

    গিরিশ—আর সব তাঁর শক্তি বটে,—কিন্তু অবিদ্যা শক্তি।

    ত্রৈলোক্য—অবিদ্যা কি জিনিস! অবিদ্যা বলে একটা জিনিস আছে না কি? অবিদ্যা একটি অভাব। যেমন অন্ধকার আলোর অভাব। তাঁর প্রেম আমাদের পক্ষে খুব বটে। তাঁর বিন্দুতে আমাদের সিন্ধু! কিন্তু ওইটি যে শেষ, একথা বললে তাঁর সীমা করা হল।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ত্রৈলোক্য ও অন্যানা ভক্তদের প্রতি)—হাঁ হাঁ, তা বটে। কিন্তু একটু মদ খেলেই আমাদের নেশা হয়। শুঁড়ির দোকানে কত মদ আছে সে হিসাবে আমাদের কাজ কি! অনন্ত শক্তির খপরে আমাদের কাজ কি?

    গিরিশ (ত্রৈলোক্যের প্রতি)—আপনি অবতার মানেন?

    ত্রৈলোক্য—ভক্ততেই ভগবান (Ramakrishna) অবতীর্ণ। অনন্ত শক্তির manifestation হয় না,—হতে পারে না!—কোন মানুষেই হতে পারে না।

    গিরিশ—ছেলেদের ‘ব্রহ্মগোপাল’ বলে সেবা (Kathamrita) করতে পারেন, মহাপুরুষকে ঈশ্বর বলে কি পূজা করতে পারা যায় না?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ত্রৈলোক্যের প্রতি)—অনন্ত ঢুকুতে চাও কেন? তোমাকে ছুঁলে কি তোমার সব শরীরটা ছুঁতে হবে? যদি গঙ্গাস্নান করি তা হলে হরিদ্বার থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত কি ছুঁয়ে যেতে হবে? ‘আমি গেলে ঘুচিবে জঞ্জাল’।

  • Ramakrishna 488: “‘কলঙ্ক সাগরে ভাসে, তবু কলঙ্ক না লাগে গায়, তখন পাঁকাল মাছের মতো থাকতে পারে”

    Ramakrishna 488: “‘কলঙ্ক সাগরে ভাসে, তবু কলঙ্ক না লাগে গায়, তখন পাঁকাল মাছের মতো থাকতে পারে”

    ৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
    শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিদ্যার সংসার—ঈশ্বরলাভের পর সংসা

    “চাতক তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে,—সাত সমুদ্র যত নদী পুষ্করিণী সব ভরপুর! তবু সে জল খাবে না! ছাতি ফেটে যাচ্ছে তবু খাবে না! স্বাতী নক্ষত্রের বৃষ্টির জলের জন্য হাঁ করে আছে! ‘বিনা স্বাতীকি জল সব ধূর!”

    দুআনা মদ ও দুদিক রাখা

    “বলে দুদিক রাখব। দুআনা মদ খেলে মানুষ দুদিক রাখতে চায়, আর খুব মদ খেলে কি আর দুদিক রাখা যায়!

    “ঈশ্বরের (Ramakrishna) আনন্দ পেলে আর কিছু ভাল লাগে না। তখন কামিনী-কাঞ্চনের কথা যেন বুকে বাজে। (ঠাকুর কীর্তনের সুরে বলিতেছেন) ‘আন্‌ লোকের আন্‌ কথা, কিছু ভাল তো লাগে না!’ তখন ঈশ্বরের জন্য পাগল হয়, টাকা-ফাকা কিছুই ভাল লাগে না!”

    ত্রৈলোক্য—সংসারে থাকতে গেলে টাকাও তো চাই, সঞ্চয়ও চাই (Kathamrita)। পাঁচটা দান-ধ্যান—

    শ্রীরামকৃষ্ণ—কি, আগে টাকা সঞ্চয় করে তবে ঈশ্বর! আর দান-ধ্যান-দয়া কত! নিজের মেয়ের বিয়েতে হাজার হাজার টাকা খরচ—আর পাশের বাড়িতে খেতে পাচ্ছে না। তাদের দুটি চাল দিতে কষ্ট হয়—অনেক হিসেব করে দিতে হয়। খেতে পাচ্ছে না লোকে,—তা আর কি হবে, ও শালারা মরুক বাঁচুক,—আমি আর আমার বাড়ির সকলে ভাল থাকলেই হল। মুখে বলে সর্বজীবে দয়া!

    ত্রৈলোক্য—সংসারে তো ভাল লোক আছে,—পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি, চৈতন্যদেবের ভক্ত। তিনি তো সংসারে ছিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তার গলা পর্যন্ত মদ খাওয়া ছিল, যদি আর একটু খেত তা হলে আর সংসার করতে পারত না।

    ত্রৈলোক্য চুপ করিয়া রইলেন। মাস্টার গিরিশকে জনান্তিকে বলিতেছেন (Kathamrita), ‘তাহলে উনি যা লিখেছেন ঠিক নয়।’

    গিরিশ—তা হলে আপনি যা লিখেছেন ও-কথা ঠিক না?

    ত্রৈলোক্য—কেন, সংসারে ধর্ম হয় উনি কি মানেন না?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—হয়,—কিন্তু জ্ঞানলাভ করে থাকতে হয়, ভগবানকে লাভ করে থাকতে হয়। তখন ‘কলঙ্ক সাগরে ভাসে, তবু কলঙ্ক না লাগে গায়।’ তখন পাঁকাল মাছের মতো থাকতে পারে। ঈশ্বরলাভের পর যে সংসার সে বিদ্যার সংসার। কামিনী-কাঞ্চন তাতে নাই, কেবল ভক্তি, ভক্ত আর ভগবান। আমারও মাগ আছে,—ঘরে ঘটিবাটিও আছে,—হরে প্যালাদের খাইয়ে দিই, আবার যখন হাবীর মা এরা আসে এদের জন্যও ভাবি।

  • Bhai Phonta 2025: শুধু যম-যমুনার আখ্যান নয়, ভাইফোঁটা ঘিরে রয়েছে আরও পৌরাণিক কাহিনি, জানেন কি?

    Bhai Phonta 2025: শুধু যম-যমুনার আখ্যান নয়, ভাইফোঁটা ঘিরে রয়েছে আরও পৌরাণিক কাহিনি, জানেন কি?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভাইফোঁটা (Bhai Phonta 2025) বাঙালিদের চিরকালীন সম্প্রীতির উত্‍সব। বাঙালির ঘরে ঘরে ভাই-বোনদের ভিতর এই মিষ্টি-মধুর মঙ্গলময় উৎসব, যার নাম ভাইফোঁটা, সেটিকেই মহারাষ্ট্র, গুজরাটের মতো পশ্চিম ভারতে বলা হয় ‘ভাই দুজ’। আবার কর্নাটক, গোয়ায় ভাইফোঁটাকে বলে ‘ভাই বিজ’। উত্তরবঙ্গেই ভাইফোঁটাকে বলে ‘ভাই টিকা’। হিন্দুদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই উত্‍সব ঘিরে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনী (Mythological Stories)।

    যম-যমুনার গল্প (Yama-Yamuna)

    কথিত, সূর্য ও তাঁর স্ত্রী সংজ্ঞার ছিল যমুনা নামে এক কন্যা ও যম নামে এক পুত্র। পুত্র ও কন্যা সন্তানের জন্মদানের পর সূর্যের উত্তাপ স্ত্রী সহ্য করতে না পেরে প্রতিলিপি ছায়ার কাছে রেখে চলে যান। সংজ্ঞার প্রতিরূপ হওয়ায় কেউ ছায়াকে চিনতে পারে না। ছায়ার কাছে ওই দুই সন্তান কখনও মায়ের মমতা, ভালবাসা পায়নি। দিনের পর দিন ধরে অত্যাচার করতে থাকে। অন্য দিকে, সংজ্ঞার প্রতিলিপি ছায়াকে বুঝতে না পেরে সূর্যদেবও কোনও দিন কিছু বলেননি। ছায়ার ছলে স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত হন যমুনা। এক সময় যমুনার বিয়েও হয়। বিয়ে হয়ে যমের থেকে অনেক দূরে সংসার করতেন যমুনা। দীর্ঘ কাল ধরে দিদিকে দেখতে না পেয়ে মন কাঁদে যমের। মন শান্ত করতে এক দিন দিদির বাড়ি চলে যান যমরাজ। প্রিয় ভাইয়ের আগমনে হাসি ফোটে দিদির মুখেও। দিদির আতিথেয়তা ও স্নেহে মুগ্ধ হয়ে ফেরত যাওয়ার সময় যম একটি বর চাইতে বলেন যমুনাকে। তখন যমুনা বলেছিলেন, এই দিনটি ভাইদের মঙ্গল কামনা চেয়ে প্রত্যেক বোন যেন ভ্রাতৃদ্বিতীয়া (Bhai Phonta 2025) হিসেবে পালন করে। সেই বর দান করে যম পিতৃগৃহে চলে যান। যমের মঙ্গল কামনায় এ দিনটি পালন করায় যমরাজ অমরত্ব লাভ করেন।

    কৃষ্ণ-সুভদ্রার কাহিনী (Lord Krishna-Subhadra)

    আরও এক পৌরাণিক কাহিনিতে (Mythological Stories) বলা হয়েছে, একসময় বালির হাতে পাতালে বন্দি ছিলেন বিষ্ণু। সেইকারণে চরম বিপদের মুখে পড়লেন স্বর্গের সব দেবতারা। কোনও ভাবেই যখন বিষ্ণুকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না, ঠিক সেই সময় লক্ষ্মীর উপর সকলে ভরসা করতে শুরু করেন। নারায়ণকে উদ্ধার করার জন্য় লক্ষ্মী বালিকে ভাই পাতিয়ে ফেলেন। তাকে ফোঁটাও দেন লক্ষ্মী। সেই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয় তিথি। ফোঁটা পেয়ে লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চাইলে লক্ষ্মী তখন বিষ্ণুর মুক্তি চেয়ে উপহার চেয়ে নেন। ভাইফোঁটা নিয়ে কৃষ্ণ ও সুভদ্রার উপাখ্যানও শোনা যায়। কথিত রয়েছে, ধনত্রয়োদশীর পরের দিন চতুর্দশী তিথিতে নরকাসুরকে বধ করেন কৃষ্ণ। তারপর দ্বারকায় ফিরে আসলে বোন সুভদ্রার আনন্দের সীমা থাকে না। কৃষ্ণের আদরের বোন হল সুভদ্রা। কৃষ্ণকে অনেকদিন পর দেখতে পেয়ে তার কপালে বিজয়তিলক পরিয়ে দেন। কপালে ফোঁটা দিয়ে দাদাকে মিষ্টিও খেতে দেন। সেই থেকে নাকি ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে ভাইফোঁটা (Bhai Phonta 2025) উত্‍সব পালন করা হয়।

    জৈন ধর্মের কাহিনী

    চতুর্দশ শতাব্দীর পুঁথি অনুসারে, জৈন ধর্মের অন্যতম প্রচারক মহাবীর বর্ধমানের মহাপ্রয়াণের পরে তাঁর অন্যতম সঙ্গী রাজা নন্দীবর্ধন মানসিক এবং শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন। সেই সময়ে তাঁর বোন অনসূয়া নন্দীবর্ধনকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে। সেখানে অনেক প্রার্থনার পরে নন্দীবর্ধন বোনের কাছে অনশন ভঙ্গ করেন। এই কাহিনি সত্যি হলে ভাইফোঁটা উৎসবের বয়স আড়াই হাজার বছরের বেশি। কারণ, মহাবীরের প্রয়াণে হয়েছিলেন ৫২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ছোট-বড় এরকম নানা গল্প কহিনিকে মনে রেখে কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে, কালীপুজোর পরের পরের দিন ভাইফোঁটা (Bhai Phonta 2025) উৎসবটি পালিত হয়। এদিন বোনেরা ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় উপবাস রেখে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে।

LinkedIn
Share