Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 487: “চাতক তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে,—সাত সমুদ্র যত নদী পুষ্করিণী সব ভরপুর! তবু সে জল খাবে না!”

    Ramakrishna 487: “চাতক তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে,—সাত সমুদ্র যত নদী পুষ্করিণী সব ভরপুর! তবু সে জল খাবে না!”

    ৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল

    শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিদ্যার সংসার—ঈশ্বরলাভের পর সংসার

    সন্ধ্যা হইল। বলরামের বৈঠকখানায় ও বারান্দায় আলো জ্বালা হইল। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) জগতের মাতাকে প্রণাম করিয়া, করে মূলমন্ত্র জপ করিয়া মধুর নাম করিতেছেন। ভক্তেরা চারিপার্শ্বে বসিয়া আছেন ও সেই মধুর নাম শুনিতেছেন। গিরিশ, মাস্টার, বলরাম, ত্রৈলোক্য ও অন্যান্য অনেক ভক্তরা এখনও আছেন। কেশবচরিত গ্রন্থে ঠাকুরের সংসার সম্বন্ধে মত পরিবর্তনের কথা যাহা লেখা আছে, ত্রৈলোক্যের সামনে সেই কথা উত্থাপন করিবেন, ভক্তেরা ঠিক করিয়াছেন। গিরিশ কথা (Kathamrita) আরম্ভ করিলেন।

    তিনি ত্রৈলোক্যকে বলিতেছেন, “আপনি যা লিখেছেন—যে সংসার সম্বন্ধে এঁর মত পরিবর্তন হয়েছে, তা বস্তুতঃ হয় নাই।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ত্রৈলোক্য ও অন্যান্য ভক্তদের প্রতি)—এ-দিকের আনন্দ পেলে ওটা ভাল লাগে না, ভগবানের আনন্দলাভ করলে সংসার আলুনী বোধ হয়। শাল পেলে আর বনাত ভাল লাগে না!

    ত্রৈলোক্য—সংসার যারা করবে তাদের কথা আমি বলছি,—যারা ত্যাগী তাদের কথা বলছি না।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ও-সব তোমাদের কি কথা!—যারা ‘সংসারে ধর্ম’ ‘সংসারে ধর্ম’ করছে, তারা একবার যদি ভগবানের আনন্দ পায় তাদের আর কিছু ভাল লাগে না, কাজের সব আঁট কমে যায়, ক্রমে যত আনন্দ বাড়ে কাজ আর করতে পারে না,— কেবল সেই আনন্দ খুঁজে খুঁজে বেড়ায়! ভগবানের আনন্দের কাছে বিষয়ানন্দ আর রমণানন্দ! একবার ভগবানের আনন্দের আস্বাদ পেলে সেই আনন্দের (Kathamrita) জন্য ছুটোছুটি করে বেড়ায়, তখন সংসার থাকে আর যায়।

    “চাতক তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে,—সাত সমুদ্র যত নদী পুষ্করিণী সব ভরপুর! তবু সে জল খাবে না! ছাতি ফেটে যাচ্ছে তবু খাবে না! স্বাতী নক্ষত্রের বৃষ্টির জলের জন্য হাঁ করে আছে! ‘বিনা স্বাতীকি জল সব ধূর!”

    দুআনা মদ ও দুদিক রাখা 

    “বলে দুদিক রাখব। দুআনা মদ খেলে মানুষ দুদিক রাখতে চায়, আর খুব মদ খেলে কি আর দুদিক রাখা যায়!

    “ঈশ্বরের আনন্দ পেলে আর কিছু ভাল লাগে না। তখন কামিনী-কাঞ্চনের কথা যেন বুকে বাজে। (ঠাকুর কীর্তনের সুরে বলিতেছেন) ‘আন্‌ লোকের আন্‌ কথা, কিছু ভাল তো লাগে না!’ তখন ঈশ্বরের জন্য পাগল হয়, টাকা-ফাকা কিছুই ভাল লাগে না!”

  • Bhai Phonta 2025: ‘যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা…’, জেনে নিন ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়ার শুভ সময়

    Bhai Phonta 2025: ‘যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা…’, জেনে নিন ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়ার শুভ সময়

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কার্তিকের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয় ভাইফোঁটা (Bhai Phonta 2025) উৎসব। ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/ যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা/ যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা/ আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।’-এই মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে ভাই-এর দীর্ঘাষু কামনা করে বোন। আর ভাই বোনকে রক্ষা করার অঙ্গীকার করে বছর বছর। এর পর ভাইকে মিষ্টিমুখ করানো এবং প্রীতি উপহার বিনিময়, হাসি-ঠাট্টা, মজা করে কাটানোর উৎসব হল ভাইফোঁটা।

    ভাতৃদ্বিতীয়ার (Bhatri Dwitiya) গল্প

    ভাইবোনের ভালবাসার সম্পর্ক দৃঢ় করার উৎসব হল ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া । কথিত রয়েছে, এই বিশেষ তিথিতে যমরাজ তাঁর বোন যমুনার থেকে ফোঁটা নিয়েছিলেন। এই উৎসব তাই যমন দ্বিতীয়া নামে পরিচিত। হিন্দুশাস্ত্রের আরেকটি মতে নরকাসুরকে বধ করে ফেরার পর শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে ফোঁটা নেন এই দ্বিতীয়া তিথিতে। শ্রীকৃষ্ণের কপালে জয়টিকা পরিয়ে মিষ্টি খেতে দিয়েছিলেন সুভদ্রা। সেই থেকেই সম্ভবত ভাইফোঁটার (Bhai Phonta 2025) প্রচলন। ভারতের উত্তর ও পশ্চিমে একই উৎসবকে, ‘ভাই দুজ’ (Bhai Dooj) নামে চেনে। মহারাষ্ট্র, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি—সব জায়গায় এই দিনটি ভাই-বোনের স্নেহবন্ধনের উৎসব হিসেবে পালিত হয়। বাংলায় ‘ভাইফোঁটা’, ওড়িশায় ‘ভাইজুন্তিয়া’, দক্ষিণ ভারতে ‘যম দ্বিতীয়া’—নামে ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য একই—ভাই-বোনের স্নেহের বন্ধন।

    দ্বিতীয়া শুরু কখন? থাকবে ক’টা পর্যন্ত? শুভ তিলক মুহূর্ত থাকবে কতক্ষণ?

    বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী:

    দ্বিতীয়া (Bhai Phonta 2025)  তিথি শুরু: ২২ অক্টোবর (বাংলা ৫ কার্তিক, বুধবার) রাত ৮টা ১৮ মিনিটে।

    দ্বিতীয়া তিথি শেষ: ২৩ অক্টোবর (বাংলা ৬ কার্তিক, বৃহস্পতিবার) রাত ১০টা ৪৭ মিনিটে।

    অর্থাৎ, বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে ভাইফোঁটার মূল পালন ২৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার।

    গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুযায়ী:

    দ্বিতীয়া (Bhai Phonta 2025) তিথি শুরু: ২২ অক্টোবর (বাংলা ৫ কার্তিক, বুধবার) সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট ৩ সেকেন্ডে।

    দ্বিতীয়া তিথি শেষ: ২৩ অক্টোবর (বাংলা ৬ কার্তিক, বৃহস্পতিবার) রাত ৮টা ১৯ মিনিট ৪ সেকেন্ডে।

    অর্থাৎ, ভাইফোঁটা পালন করা হবে ২২ অক্টোবর, বুধবার সন্ধ্যার পর বা ২৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সকালে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ২৩ অক্টোবরকেই শুভ দিন হিসেবে ধরা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সারাদিনই দ্বিতীয়া (Bhatri Dwitiya)। সুর্যোদয় হিসেবে তিথি ধরলেও অসুবিধা নেই, কেন না, সে ক্ষেত্রেও সকাল থেকেই চলবে ফোঁটা।

    ভাইফোঁটার তিলক মুহূর্ত

    সাধারণ ভাইফোঁটার (Bhai Phonta 2025) একটি তিলক মুহূর্ত থাকে। আর সেটা সচরাচর পড়ে অপরাহ্নে। ভাইফোঁটার অপরাহ্ন মুহূর্ত এবার পড়ছে– ২৩ অক্টোবর বেলা ১২টা ৪০ থেকে দুপুর ২টো ৫৯ মিনিট। আর তিলক মুহূর্ত– বেলা ১টা ১৩ মিনিট থেকে ৩টে ২৮ মিনিট।

  • Ramakrishna 486: “জয় শচীনন্দন, গৌর গুণাকার, প্রেম-পরশমণি, ভাব-রস-সাগর”

    Ramakrishna 486: “জয় শচীনন্দন, গৌর গুণাকার, প্রেম-পরশমণি, ভাব-রস-সাগর”

    ৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
    সংকীর্তনানন্দে ভক্তসঙ্গে

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তুই বাপ-মাকে খুব ভক্তি করবি।—কিন্তু ঈশ্বরের পথে বাধা দিলে মানবিনি। খুব রোখ আনবি—শালার বাপ!

    ছোট নরেন—কে জানে, আমার কিছু ভয় হয় না।

    গিরিশ বাড়ি হইতে আবার আসিয়া উপস্থিত। ঠাকুর ত্রৈলোক্যের সহিত আলাপ করিয়া দিতেছেন; আর বলিতেছেন, ‘একটু আলাপ তোমরা কর।’ একটু আলাপের পর ত্রৈলোক্যকে বলিতেছেন, ‘সেই গানটি আর একবার,’—ত্রৈলোক্য গাইতেছেন (Kathamrita):

    ঝিঁঝিট খাম্বাজ—ঠুংরী

    জয় শচীনন্দন, গৌর গুণাকার, প্রেম-পরশমণি, ভাব-রস-সাগর।
    কিবা সুন্দর মুরতিমোহন আঁখিরঞ্জন কনকবরণ

    ঝিঁঝিট খাম্বাজ—ঠুংরী 

    জয় শচীনন্দন, গৌর গুণাকার, প্রেম-পরশমণি, ভাব-রস-সাগর।
    কিবা সুন্দর মুরতিমোহন আঁখিরঞ্জন কনকবরণ,
    কিবা মৃণালনিন্দিত, আজানুলম্বিত, প্রেম প্রসারিত, কোমল যুগল কর
    কিবা রুচির বদন-কমল, প্রেমরসে ঢল ঢল,
    চিকুর কুন্তল, চারু গণ্ডস্থল, হরিপ্রেমে বিহ্বল, অপরূপ মনোহর।
    মহাভাবে মণ্ডিত হরি রসে রঞ্জিত, আনন্দে পুলকিত অঙ্গ,
    প্রমত্ত মাতঙ্গ, সোনার গৌরাঙ্গ,
    আবেশে বিভোর অঙ্গ, অনুরাগে গরগর।
    হরিগুণগায়ক, প্রেমরস নায়ক,
    সাধু-হৃদিরঞ্জক, আলোকসামান্য, ভক্তিসিন্ধু শ্রীচৈতন্য,
    আহা! ‘ভাই’ বলি চণ্ডালে, প্রেমভরে লন কোলে,
    নাচেন দুবাহু তুলে, হরি বোল হরি বলে,
    অবিরল ঝরে জলে নয়নে নিরন্তর!
    ‘কোথা হরি প্রাণধন’ — বলে করে রোদন,
    মহাস্বেদ কম্পন, হুঙ্কার গর্জন,
    পুলকে রোমাঞ্চিত, শরীর কদম্বিত,
    ধুলায় বিলুণ্ঠিত সুন্দর কলেবর।
    হরি-লীলা-রস-নিকেতন, ভক্তিরস-প্রস্রবণ;
    দীনজনবান্ধব, বঙ্গের গৌরব, ধন্য ধন্য শ্রীচৈতন্য প্রেম শশধর।

    ‘গৌর হাসে কাঁদে নাচে গায়’—এই কথা শুনিয়া ঠাকুর ভাবাবিষ্ট হইয়া দাঁড়াইয়া পড়িলেন,-একেবারে বাহ্যশূন্য!

    কিঞ্চিৎ প্রকৃতিস্থ হইয়া—ত্রৈলোক্যকে অনুনয় বিনয় করিয়া বলিতেছেন, “একবার সেই গানটি!—কি দেখিলাম রে।”

    ত্রৈলোক্য গাইতেছেন:

    কি দেখিলাম রে, কেশব ভারতীর কুটিরে,
    অপরূপ জ্যোতি; গৌরাঙ্গ মূরতি, দুনয়নে প্রেম বহে শত ধারে।

    গান সমাপ্ত হইল। সন্ধ্যা হয়। ঠাকুর এখনও ভক্তসঙ্গে বসিয়া আছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (রামের প্রতি)—বাজনা নাই! ভাল বাজনা থাকলে গান খুব জমে। (সহাস্যে) বলরামের আয়োজন কি জান,—বামুনের গোড্ডি (গরুটি) খাবে কম, দুধ দেবে হুড়হুড় করে! (সকলের হাস্য) বলরামের ভাব,—আপনারা গাও আপনারা বাজাও! (সকলের হাস্য)

  • Ramakrishna 485: “নদে টলমল টলমল করে গৌরপ্রেমের হিল্লোলে রে”

    Ramakrishna 485: “নদে টলমল টলমল করে গৌরপ্রেমের হিল্লোলে রে”

    ৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
    সংকীর্তনানন্দে ভক্তসঙ্গে

    ঠাকুর ঘরের মধ্যে ফিরিয়া আসিয়া ত্রৈলোক্যকে বলিতেছেন,—একটু আনন্দময়ীর গান,—ত্রৈলোক্য গাইতেছেন:

       কত ভালবাস গো মা মানব সন্তানে,
    মনে হলে প্রেমধারা বহে দুনয়নে (গো মা)।
    তব পদে অপরাধী, আছি আমি জন্মাবধি,
    তবু চেয়ে মুখপানে প্রেমনয়নে, ডাকিছ মধুর বচনে,
    মনে হলে প্রেমধারা বহে দুনয়নে।
    তোমার প্রেমের ভার, বহিতে পারি না গো আর,
    প্রাণ উঠিছে কাঁদিয়া, হৃদয় ভেদিয়া, তব স্নেহ দরশনে,
    লইনু শরণ মা গো তব শ্রীচরণে (গো মা) ॥

    গান শুনিতে শুনিতে ছোট নরেন গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হইয়াছেন, যেন কাষ্ঠবৎ! ঠাকুর মাস্টারকে বলিতেছেন, “দেখ, দেখ, কি গভীর ধ্যান! একেবারে বাহ্যশূন্য! (Kathamrita)”

    গান সমাপ্ত হইল। ঠাকুর (Ramakrishna) ত্রৈলোক্যকে এই গানটি গাইতে বলিলেন—‘দে মা পাগল করে, আর কাজ নাই জ্ঞান বিচারে।’

    রাম বলিতেছেন, কিছু হরিনাম হোক! ত্রৈলোক্য গাইতেছেন:

    মন একবার হরি বল হরি বল হরি বল।
    হরি হরি হরি বলে, ভবসিন্ধু পারে চল।

    মাস্টার আস্তে আস্তে বলিতেছেন, ‘গৌর-নিতাই তোমরা দুভাই।’

    ঠাকুরও (Ramakrishna) ওই গানটি গাইতে বলিতেছেন। ত্রৈলোক্য ও ভক্তেরা সকলে মিলিয়া গাইতেছেন:

    গৌর নিতাই তোমরা দুভাই পরম দয়াল হে প্রভু!

    ঠাকুরও যোগদান করিলেন। সমাপ্ত হইলে আর একটি ধরিলেন:

    যাদের হরি বলতে নয়ন ঝরে তারা দুভাই এসেছে রে।
    যারা মার খেয়ে প্রেম যাচে তারা তারা দুভাই এসেছে রে।
    যারা ব্রজের কানাই বলাই তারা তারা দুভাই এসেছে রে।
    যারা আচণ্ডালে কোল দেয় তারা তারা দুভাই এসেছে রে।

    ওই গানের সঙ্গে ঠাকুর আর একটা গান গাহিতেছেন:

    নদে টলমল টলমল করে গৌরপ্রেমের হিল্লোলে রে।

    ঠাকুর আবার ধরিলেন (Kathamrita):

    কে হরিবোল হরিবোল বলিয়ে যায়?
    যা রে মাধাই জেনে আয়।
    বুঝি গৌর যায় আর নিতাই যায় রে।
    যাদের সোনার নূপুর রাঙা পায়।
    যাদের নেড়া মাথা ছেঁড়া কাঁথা রে।
    যেন দেখি পাগলেরই প্রায়।

    ছোট নরেন বিদায় লইতেছেন —

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তুই বাপ-মাকে খুব ভক্তি করবি।—কিন্তু ঈশ্বরের পথে বাধা দিলে মানবিনি। খুব রোখ আনবি—শালার বাপ!

    ছোট নরেন—কে জানে, আমার কিছু ভয় হয় না।

    গিরিশ বাড়ি হইতে আবার আসিয়া উপস্থিত। ঠাকুর ত্রৈলোক্যের সহিত আলাপ করিয়া দিতেছেন; আর বলিতেছেন, ‘একটু আলাপ তোমরা কর।’ একটু আলাপের পর ত্রৈলোক্যকে বলিতেছেন, ‘সেই গানটি আর একবার,’—ত্রৈলোক্য গাইতেছেন (Kathamrita):

    ঝিঁঝিট খাম্বাজ—ঠুংরী

       জয় শচীনন্দন, গৌর গুণাকার, প্রেম-পরশমণি, ভাব-রস-সাগর।
    কিবা সুন্দর মুরতিমোহন আঁখিরঞ্জন কনকবরণ

  • Kali Puja 2025: কালীঘাট থেকে দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠের কালী মন্দিরে কী কী ভোগ নিবেদন করা হয়?

    Kali Puja 2025: কালীঘাট থেকে দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠের কালী মন্দিরে কী কী ভোগ নিবেদন করা হয়?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপুজো (Kali Puja 2025) বিশেষ জাঁকজমক সহকারে পালিত হয়। আজ কালীপুজো। দুর্গাপুজার পাশাপাশি কালীপুজোতেও বিভিন্ন আচার-নিয়ম (Rituals) থাকে। আর কালীপুজোর বিশেষ আকর্ষণই হল মায়ের ভোগ। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শ্যামামায়ের মন্দির। আর সেই এক এক মন্দিরের এক এক রকমের ভোগ মাকে (Maa Kali) নিবেদন করা হয়। কলকাতার সবচেয়ে বিখ্যাত কালীমন্দিরটি হল কালীঘাট মন্দির। এটি একটি সতীপীঠ। এছাড়া দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি, আদ্যাপীঠ, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি ইত্যাদি কলকাতার বিখ্যাত কয়েকটি কালীমন্দির। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের সেভকেশ্বরী কালীমন্দিরও বেশ বিখ্যাত।

    কোন মন্দিরে মাকে (Maa Kali) কী কী ভোগ দেওয়া হয়?

    কালীপুজোর সময় মায়ের যে ভোগ হয়, তা অন্যান্য পুজোর থেকে বেশ কিছুটা আলাদা। এক নজরে দেখে নিন, কোন মন্দিরে মাকে কী কী ভোগ দেওয়া হয়?

    কালীঘাট মন্দির: সতীর একান্নপীঠের অন্যতম এই কালীঘাট (Kalighat)। সকালে মা-কে আমিষ পদ ভোগে দেওয়া হয়। সেই ভোগের মধ্যে রয়েছে বেগুনভাজা, পটলভাজা, কপি, আলু ও কাঁচকলা ভাজা, ঘিয়ের পোলাও, ঘি ডাল, শুক্তো, শাকভাজা, মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস ও চালের পায়েস। তবে রাতে মা-কে নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। লুচি, বেগুনভাজা, আলু ভাজা, দুধ, ছানার সন্দেশ আর রাজভোগ থাকে কালীঘাটের ভোগে।

    সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির: আনুমানিক ১৭০৩ সালে উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারী নামে এক তান্ত্রিক সন্ন্যাসী সেই সময় জঙ্গলের মধ্যে পঞ্চমুণ্ডির আসনে ও ঘটে পুজো (Kali Puja 2025) শুরু করেন। কালীপুজোর রাতে ভোগ দেওয়া হয় লুচি, পটলভাজা, ধোঁকা বা আলুভাজা, আলুর দম ও মিষ্টি।

    দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির: ভোরে দেবী ভবতারিণীর বিশেষ আরতি দক্ষিণেশ্বরের পুজোর (Kali Puja 2025) বিশেষ আকর্ষণ। আর ভোগে নিবেদন করা হয় সাদাভাত, ঘি, পাঁচরকমের ভাজা, শুক্তো, তরকারি, পাঁচরকমের মাছের পদ, চাটনি, পায়েস ও মিষ্টি।

    তারাপীঠ মন্দির: কালীপুজোর (Kali Puja 2025) দিন খুব সকালে ডাবের জল দিয়ে শুরু হয় মায়ের ভোগ। সকালের ভোগে থাকে পাঁচ রকম বা ন’রকমের ভাজা, সাদা অন্ন, পায়েস ও মিষ্টি। আমিষ ভোগের মূল উপাদান হল শোল মাছ। ভোগের পাতে এই মাছ না থাকলে ভোগ গ্রহণ করেন না মা তাঁরা। কালীপুজোর দিন তারা মা-এর ভোগ হিসেবে থাকে পোলাও, খিচুড়ি, সাদা ভাত, পাঁচরকম ভাজা, পাঁচ মিশালি তরকারি, মাছ, চাটনি, পায়েস এবং মিষ্টি। এখানকার অন্নভোগের বিশেষত্বই হল পোড়া শোলমাছ মাখা।

    সেভকেশ্বরী কালী মন্দির: শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যাওয়ার পথে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে এই কালীমন্দির। কালীপুজোর (Kali Puja 2025) দিনগুলিতে এই সেভকেশ্বরী কালীমন্দিরে ভক্তদের ঢল নামে। সেবক পাহাড়ের নির্জনতায় হয় কালী মায়ের আরাধনা। অনেকেরই বিশ্বাস, দেবী অত্যন্ত জাগ্রতা। এখানে মায়ের (Maa Kali) ভোগে থাকে সাদা ভাত, পাঁচরকম ভাজা, তরকারি, পায়েস, লুচি, দই, মিষ্টি। আর এখানে ভোগের আকর্ষণ হল বোয়াল মাছ। এদিন এই মাছ দেবীর ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়।

  • Kali Puja 2025: কখনও তিনি শ্যামবর্ণা, কোথাও তাঁর গায়ের রং নীল! জানুন মা কালীর বিভিন্ন রূপ

    Kali Puja 2025: কখনও তিনি শ্যামবর্ণা, কোথাও তাঁর গায়ের রং নীল! জানুন মা কালীর বিভিন্ন রূপ

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রামপ্রসাদের কন্যা, রামকৃষ্ণের মা ভবতারিণী, সাধক কমলাকান্তের সাধনার ধন। তিনি দশমহাবিদ্যার প্রথম দেবী। দেবী কালিকা। বাংলা জুড়ে কালীপুজোর (Kali Puja 2025) মাহাত্ম্য অনেক। শ্মশানবাসিনী থেকে ঘরে ঘরে পূজিত হওয়ার রয়েছে নানা আখ্যান। কড়া নিয়ম মেনে আরাধনা করা হয় দেবী কালিকার। কোথাও তিনি পূজিত হন চামুণ্ডা মতে, তো কোথাও আবার তন্ত্র মতে। কোথাও কোথাও দেবীকে কেন্দ্র করেই চলে তন্ত্র সাধনা। কোথাও তিনি শ্যামবর্ণা, কোথাও তাঁর গায়ের রং নীল। মাকে ১১ রূপে বিনাশকারী শক্তি হিসেবে আরাধনা করে থাকেন ভক্তরা।

    মায়ের (Maa Kali) নানা রূপের কথা 

    দক্ষিণা কালী: বাংলায় সবচেয়ে বেশি আরাধনা হয় দক্ষিণা কালীর। কালীর এই রূপ জায়গা ভেদে শ্যামাকালী নামেও পরিচিত। সারা শরীর নীল বর্ণের, তাঁর মূর্তি ক্রুদ্ধ, ত্রিনয়নী, মুক্তকেশ, চারটি হাত এবং গলায় মুণ্ডমালা। বাম দিকের দুই হাতে নরমুণ্ড এবং খড়গ। ডান হাতে থাকে আশীর্বাদ এবং অভয় মুদ্রা। দেবী মহাদেবের উপরে দণ্ডায়মানা।

    শ্মশান কালী: মূলত প্রাচীন কালে ডাকাতেরা দেবীর এই রূপের আরাধনা করত। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাসে এই দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। গৃহস্থের বাড়িতে কালীর এই রূপের পুজো হয় না একেবারেই। মূলত শ্মশানেই তাঁর আরাধনা।

    সিদ্ধ কালী: কালীপুজোর দিনে বহু জায়গায় সিদ্ধ কালীর আরাধনা করা হয়। কালীর (Kali Puja 2025) এই রূপ ভুবনেশ্বরী নামেও পরিচিত। গৃহস্থের বাড়িতে কালীর এই রূপ পুজো হয় না। কালী মায়ের সাধকেরা এই পুজো করে থাকেন। সিদ্ধকালীর দু’টি হাত, শরীর গয়নায় আবৃত। দেবীর ডান পা শিবের বুকে এবং বাঁ পা থাকে তাঁর দু’পায়ের মাঝখানে। এই দেবী রক্ত নয়, বরং অমৃত পানে সন্তুষ্ট থাকেন।

    ফলহারিণী কালী: এটি বাৎসরিক পুজো। মূলত, গৃহস্থ বাড়িতে শান্তি বজায় রাখতে কালীর এই রূপকে আরাধনা করা হয়।

    মহা কালী: এই দেবীর (Kali Puja 2025) দশটি মাথার মতো দশটি হাত এবং দশটি পা থাকে। প্রতিমার সঙ্গে শিবের কোনও অস্তিত্ব নেই। দশ হাতেই রয়েছে অস্ত্র। দেবীর পায়ের তলায় অসুরের কাটা মুণ্ড থাকে। ভূত চতুর্দশীর দুপুরে এমনই দশমাথা মহা কালীর সাধনা করা হয়। তবে, গৃহস্থ বাড়িতে এই পুজো করা হয় না।

    কাম্যা কালী: বিশেষ প্রার্থনায় কালীর এই রূপ আরাধনা করা হয়। পুজোর নিয়মবিধি দক্ষিণা কালীর মতোই। সাধারণত, অষ্টমী, চতুর্দশী অমাবস্যা পূর্ণিমা ও সংক্রান্তির মতো তিথিতেই কাম্যা কালীর আরাধনা করা হয়।

    গুহ্যকালী: এই দেবীর গায়ের রং গাঢ় কালো। গলায় ৫০টি নরমুন্ডের হার এবং কানে শবদেহের আকারের অলঙ্কার থাকে। শাস্ত্রে কালীর এই রূপকে ভয়ঙ্করী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

    ভদ্রকালী: কালীর এই রূপ সাধারণত বারোয়ারি বিভিন্ন মন্দিরে পুজো করা হয়। ভদ্রকালী নামে ভদ্র শব্দটি ব্যবহার হয়েছে কল্যাণ অর্থে এবং কালী শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে জীবনের শেষ সময় বোঝাতে।

    চামুণ্ডা কালী: চামুণ্ডা হলেন আদিশক্তি। আবার তিনিই ভগবতী দুর্গা। চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে হত্যা করে তিনি ‘চামুণ্ডা’ নামে পরিচিত হন। পার্বতী, চণ্ডী, দুর্গা, চামুণ্ডা ও কালী এক ও অভিন্ন রূপ।

    শ্রী কালী: দেবী দুর্গা বা পার্বতীর একটি রূপ শ্রী কালী (Kali Puja 2025)। অনেকে মনে করেন এই রূপে দেবী দারুক নামে অসুরকে বধ করেছিলেন। পুরাণ অনুয়ায়ী, কালীর এই রূপ মহাদেবের কণ্ঠে প্রবেশ করে তাঁর কণ্ঠের বিষে কৃষ্ণবর্ণা হন এবং পরবর্তীকালে মহাদেব শিশু রূপে স্তন্যপান করে দেবীর শরীর থেকে বিষ গ্রহণ করেন।

    রক্ষাকালী: দক্ষিণা কালীর (Maa Kali) একটি রূপ হল রক্ষাকালী। কথিত, প্রাচীন কালে লোকালয়ের রক্ষার জন্য এই দেবীর পুজো করা হত। এই দেবীর বাহন সিংহ।

  • Ramakrishna 484: “তবু চেয়ে মুখপানে প্রেমনয়নে, ডাকিছ মধুর বচনে, মনে হলে প্রেমধারা বহে দুনয়নে”

    Ramakrishna 484: “তবু চেয়ে মুখপানে প্রেমনয়নে, ডাকিছ মধুর বচনে, মনে হলে প্রেমধারা বহে দুনয়নে”

    ৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
    সংকীর্তনানন্দে ভক্তসঙ্গে

    গিরিশ বাড়ি চলিয়া গেলেন। আবার আসিবেন।

    শ্রীযুক্ত জয়গোপাল সেনের সহিত ত্রৈলোক্য আসিয়া উপস্থিত। তাঁহারা ঠাকুরকে প্রনাম করিলেন ও আসন গ্রহণ করিলেন। ঠাকুর তাঁহাদের কুশল প্রশ্ন করিতেছেন। ছোট নরেন আসিয়া ঠাকুরকে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন। ঠাকুর (Ramakrishna) বলিলেন, — কই তুই শনিবারে এলিনি? এইবার ত্রৈলোক্য গান গাইবেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—আহা, তুমি আনন্দময়ীর গান সেদিন করলে,—কি গান! আর সব লোকের গান আলুনী লাগে! সেদিন নরেন্দ্রের গানও ভাল লাগল না। সেইটে অমনি অমনি হোক না।

    ত্রৈলোক্য গাইতেছেন—‘জয় শচীনন্দন’ (Kathamrita)।

    ঠাকুর মুখ ধুইতে যাইতেছেন। মেয়ে ভক্তেরা চিকের পার্শ্বে ব্যাকুল হইয়া বসিয়া আছেন। তাঁহাদের কাছে গিয়া একবার দর্শন দিবেন। ত্রৈলোক্যের গান চলিতেছে।

    ঠাকুর ঘরের মধ্যে ফিরিয়া আসিয়া ত্রৈলোক্যকে বলিতেছেন,—একটু আনন্দময়ীর গান,—ত্রৈলোক্য গাইতেছেন:

    কত ভালবাস গো মা মানব সন্তানে,
    মনে হলে প্রেমধারা বহে দুনয়নে (গো মা)।
    তব পদে অপরাধী, আছি আমি জন্মাবধি,
    তবু চেয়ে মুখপানে প্রেমনয়নে, ডাকিছ মধুর বচনে,
    মনে হলে প্রেমধারা বহে দুনয়নে।
    তোমার প্রেমের ভার, বহিতে পারি না গো আর,
    প্রাণ উঠিছে কাঁদিয়া, হৃদয় ভেদিয়া, তব স্নেহ দরশনে,
    লইনু শরণ মা গো তব শ্রীচরণে (গো মা) ॥

    গান শুনিতে শুনিতে ছোট নরেন গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হইয়াছেন, যেন কাষ্ঠবৎ! ঠাকুর মাস্টারকে বলিতেছেন, “দেখ, দেখ, কি গভীর ধ্যান! একেবারে বাহ্যশূন্য! (Kathamrita)”

    গান সমাপ্ত হইল। ঠাকুর (Ramakrishna) ত্রৈলোক্যকে এই গানটি গাইতে বলিলেন—‘দে মা পাগল করে, আর কাজ নাই জ্ঞান বিচারে।’

    রাম বলিতেছেন, কিছু হরিনাম হোক! ত্রৈলোক্য গাইতেছেন:

    মন একবার হরি বল হরি বল হরি বল।
    হরি হরি হরি বলে, ভবসিন্ধু পারে চল।

  • Kali Puja 2025: ভূত চতুর্দশীতে খাওয়া ১৪ শাকে আটকে যায় বহু রোগ! কী কী জানেন?

    Kali Puja 2025: ভূত চতুর্দশীতে খাওয়া ১৪ শাকে আটকে যায় বহু রোগ! কী কী জানেন?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কালী পুজোর (Kali Puja 2025) এক রাত আগে পালিত হয় ভূত চতুর্দশী (Bhoot Chaturdashi 2025) বা নরক চতুর্দশী। ভূত চতুর্দশী ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি নিয়মকানুন। বাংলার ঘরে ঘরে ভূত চতুর্দশীর দুপুরে চোদ্দ রকমের শাক খেতে হয় এবং সন্ধ্যাবেলা জ্বালানো হয় চোদ্দটি প্রদীপ। মনে করা হয়, ঘোর অমাবস্যার রাতে বিদেহী আত্মারা নেমে আসেন মর্ত্যলোকে। এর ঠিক পরের দিনই চন্দ্রের তিথি নিয়ম মেনে হয় দীপান্বিতা কালীপুজো।

    কেন চোদ্দ শাক খাওয়ার রীতি? (Kali Puja 2025)

    বাঙালীদের ঘরে ঘরে ভূত চতুর্দশীতে (Bhoot Chaturdashi 2025) দুটি নিয়ম মূলত পালন করা হয়। অনেকে মনে করেন, চোদ্দ ভুবনের অধীশ্বরী দেবীর উদ্দেশে চোদ্দ শাক খাওয়া এবং চোদ্দটি প্রদীপ জ্বালানো হয়। এর সঙ্গে যুগ যুগ ধরে জড়িয়ে রয়েছে অনেক আচার-বিচার। যেমন, ধরুন খাওয়া-দাওয়ার আচার। সরস্বতী পুজোর পরদিন গোটা সেদ্ধ খাওয়ার প্রথা রয়েছে অধিকাংশ বাড়িতে। আবার কিছু ব্রত রয়েছে যেগুলিতে গৃহস্থ কত্রীরা শুধুমাত্র ময়দার তৈরি খাবার খান। প্রতিটি খাওয়া-দাওয়া আচার, পরিবার এবং স্বজনদের মঙ্গল কামনার উদ্দেশ্যেই পালিত হয়। জানেন কি আশ্বিন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে অর্থাৎ কালীপুজোর (Kali Puja 2025) আগের দিন অনেক বাড়িতেই চোদ্দ শাক (Bhoot Chaturdashi 14 Saag) খাওয়ার রীতি রয়েছে? এখন প্রশ্ন হল, চোদ্দ শাক খাওয়ার এই আচারের পিছনে কোন ধর্মীয় বিশ্বাস কাজ করছে?

    পূর্ব পুরুষদের আগমন ঘটে মর্ত্যলোকে!

    কথিত আছে, মৃত্যুর পরে মানুষ পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায়। এরপর এই বিশেষ দিনেই নাকি পূর্ব পুরুষদের আগমন ঘটে মর্ত্যলোকে। হিন্দুশাস্ত্র মতে, আকাশ, জল, বায়ু, অগ্নি, মাটি-প্রকৃতির এই পাঁচ উপাদানের মধ্যেই ছড়িয়ে রয়েছেন আমাদের পিতৃপুরুষেরা। বিশ্বাস মতে, চোদ্দ শাক খাওয়ার রীতি পালনের মধ্যে দিয়েই তাঁদের ছুঁয়ে থাকা যায়। অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটাতে প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করা চোদ্দ রকম শাক জলে ধুয়ে, সেই জল বাড়ির চারিদিকে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। পূর্বের সাত পুরুষকে উৎসর্গ করে পরবর্তী সাতপুরুষের জন্য খাওয়া হয় শাক। তাই মোট চোদ্দ রকমের শাক খাওয়ার রীতি প্রচলিত রয়েছে।

    কী কী শাক খাওয়া হয়?

    চোদ্দ রকমের শাকগুলি (14 Saag) হল— জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, ওল, পুঁই, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, পলতা, শুলকা, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা ও শুষণী। এই প্রচলিত রীতিগুলির পিছনে বিজ্ঞানসম্মত কারণ রয়েছে বলে অনেকের ধারণা (Kali Puja 2025)। এদেশের সমস্ত আচার এবং অনুষ্ঠান বিজ্ঞানসম্মত এবং প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়। শরৎকালের শেষ এবং হেমন্তকালের শুরুতে অনেক রকমের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ শাক দেয় বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা।

    কোন কোন শাকে কী কী রোগ সারে?

    এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, এই চোদ্দ রকমের শাকগুলির (14 Saag) কী কী গুণ রয়েছে। জয়ন্তী-উদরাময়, জ্বর, বহুমূত্র নিয়ন্ত্রণ করে। শাঞ্চে-রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। হিংচে- পিত্তনাশক। ওল-অর্শ, রক্ত আমাশা, বাত, চর্মরোগ কমায়। পুঁই-হজমে সহায়ক। বেতো-কৃমিনাশক। সর্ষে-যকৃৎ, চোখ যত্নে রাখে। কালকাসুন্দে-অর্শ, কাশি দূর করে। নিম-যে কোনও চর্মরোগ নাশ করে। পলতা-শ্বাসযন্ত্র ভালো রাখে। শুলকা-হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। গুলঞ্চ-উচ্চ রক্তচাপ, যকৃৎ যত্নে রাখে। ভাঁটপাতা-ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। শুষণী-স্মৃতিবর্ধক (Kali Puja 2025)।

  • Kali Puja 2025: ভূত চতুর্দশীর সন্ধ্যায় জ্বালানো হয় ১৪ প্রদীপ, কোথায় রাখতে হয়?

    Kali Puja 2025: ভূত চতুর্দশীর সন্ধ্যায় জ্বালানো হয় ১৪ প্রদীপ, কোথায় রাখতে হয়?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কালী পুজোর (Kali Puja 2025) এক রাত আগে পালিত হয় ভূত চতুর্দশী (Bhoot Chaturdashi 2025) বা নরক চতুর্দশী (Naraka Chaturdashi)। বাংলার ঘরে ঘরে ভূত চতুর্দশীর দিনে ১৪ শাক খাওয়ার ও ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর রীতি রয়েছে।

    দুপুরে ১৪ শাক, সাঁঝে ১৪ বাতি

    ভূত চতুর্দশীর দিনে যে ১৪টি শাক (14 Saag) খাওয়া হয়, সেগুলি হল— জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, ওল, পুঁই, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, পলতা, শুলকা, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা ও শুষণী। এই শাক খেয়ে এবং সন্ধেবেলা ১৪ প্রদীপ (14 Diya) জ্বালিয়ে দুরাত্মা ও অন্ধকার দূর করার রীতি প্রচলিত আছে। শাস্ত্রমতে, মৃত্যুর পর মানুষের শরীর পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায়। অর্থাৎ মাটি, জল, হাওয়া, অগ্নি ও আকাশ। তাই মাটি থেকে তুলে আনা শাক খেলে অতৃপ্ত আত্মারা শান্তি পায়। যে জল দিয়ে ১৪ শাক (Bhoot Chaturdashi 14 Saag) ধোয়া হয়, সেই জল আবার অনেকে বাড়িতেও ছেটান। মনে করা হয়, এর ফলে অশুভ শক্তি দূর হয় ও বাধা-বিঘ্ন কেটে যায়।

    ১৪ ভুবনের জন্য ১৪ প্রদীপ! (Kali Puja 2025)

    দুপুরে ১৪ শাক খাওয়ার পর সন্ধেবেলা জ্বালানো হয় ১৪ প্রদীপ । পুরাণে ১৪টি ভুবনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যার সাতটি স্বর্গ ও সাতটি পাতাল। ভূঃ, ভুবঃ, স্বঃ, জনঃ, মহঃ, তপঃ ও সত্য হল স্বর্গ। অন্যদিকে মাটির নীচে রয়েছে অতল, বিতল, সুতল, তলাতল, মহাতল, রসাতল এবং পাতাল এই ১৪ লোকের বাসিন্দাদের সম্মান জানাতে এদিন ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, ভূত চতুর্দশীর দিনে কিছু সময়ের জন্য স্বর্গ ও নরকের দরজা খুলে যায়, তখন আত্মারা মর্ত্যে নেমে আসে। ভূত-প্রেত নিয়ে এদিন রাজা বলিও মর্ত্যে আসেন বলে মনে করা হয়। এই দিনে অশুভ শক্তির প্রকোপ বৃদ্ধি পায় বলে একটা বিশ্বাস প্রচলিত আছে। এই অশুভ শক্তিকে নিজের বাড়ি থেকে দূরে রাখতেই ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে।

    ১৪ পুরুষের উদ্দেশ্যে…

    আবার অন্য বিশ্বাস অনুযায়ী, ১৪ পুরুষের (Kali Puja 2025) উদ্দেশ্যে এই ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়। এই ১৪ পুরুষ হলেন, পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী, মাতামহ, প্রমাতামহ, বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতামহী, প্রমাতামহী ও বৃদ্ধপ্রমাতামহী। এ ছাড়াও শ্বশুর-শাশুড়ি। অশুভ আত্মাদের হাত থেকে বাঁচতে ভূত চতুর্দশীর দিনে যে মন্ত্র জপ করা হয়, তা হল ‘শীতলঞ্চ সমাযুক্ত সকণ্টক দলান্বিত। হরপাপ সপামার্গে ভ্রাম্যমাণঃ পুনঃ পুনঃ’। এই মন্ত্র পাঠের ফলে অশুভ আত্মার ভয় কেটে যায়।

    হিন্দুমতে মনে করা হয়, ভূত চতুর্দশীর (Bhoot Chaturdashi 2025) রাতে শিবভক্ত রাজা বলি ও তাঁর অনুচরেরা মর্ত্যে পুজো নিতে আসেন। চতুর্দশী তিথির ভরা অমাবস্যার অন্ধকারে রাজা বলির অনুচরেরা যাতে পথ ভুলে বাড়িতে ঢুকে না-পড়েন, তাই এই প্রদীপ জ্বালানোর রীতি প্রচলিত আছে। আবার অন্য একটি প্রথা অনুযায়ী, পিতৃপক্ষের সময় পিতৃপুরুষদের মর্ত্যে আগমন হয়। এই চতুর্দশী তিথিতেই তাঁরা ফিরে যান। সে সময় অন্ধকারে পথ দেখানোর জন্য ১৪ প্রদীপ (Bhoot Chaturdashi 14 Diya) জ্বালানো হয়।

    কোথায় কোথায় জ্বালবেন ১৪ প্রদীপ?

    এই সময়ে বাড়ির ঠাকুরঘরে প্রদীপ দেওয়াটা সর্বাধিক প্রয়োজন। বাড়িতে তুলসীমঞ্চ থাকলে, সেখানেও একটি প্রদীপ দিতে হবে। বাড়ির সদর দরজায় দুপাশে দুটি প্রদীপ দিতে হবে। তাতে একটি করে লবঙ্গ রাখতে পারেন। বাড়ির যেখানে জলের ব্যবস্থা রয়েছে বা কলতলায় একটি প্রদীপ দিতে হবে। বাড়ির দক্ষিণ দিকে একটি প্রদীপ জ্বালাতে হবে (Kali Puja 2025)। বাড়িতে মাটির উনুন থাকলে, সেই উনুনে একটি প্রদীপ দিন। প্রতিটি প্রদীপই ১৪ পুরুষের প্রতীক।

  • Kali Puja 2025: ভূত চতুর্দশীতে সত্যিই কি মর্ত্যলোকে নেমে আসেন বিদেহী আত্মারা!

    Kali Puja 2025: ভূত চতুর্দশীতে সত্যিই কি মর্ত্যলোকে নেমে আসেন বিদেহী আত্মারা!

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয় ভূত চতুর্দশী (Bhoot Chaturdashi 2025)। এই তিথিকে আবার অনেকে নরক চতুর্দশী (Naraka Chaturdashi) বলেও জানেন। কালী পুজোর (Kali Puja 2025) একদিন আগে ও ধনতেরসের একদিন পর ভূত চতুর্দশী পালিত হয়। এই তিথিটি ছোট দীপাবলি (Deepawali 2025), রূপ চতুর্দশী বা নরকা পুজো নামেও পরিচিত। এদিন মৃত্যুর দেবতা যম ও কৃষ্ণের পুজো করা হয়। অকাল মৃত্যু থেকে বাঁচতে নরক চতুর্দশীতে পুজো করা হয়। অনেকে এই দিনটিকে পশ্চিমী হ্যালোউইনের ভারতীয় সংস্করণ (Indian Halloween) হিসেবেও দেখেন। পুরাণ মতে, ভূত চতুর্দশীর রাতে শিবভক্ত বলি মর্ত্যে আসেন পুজো নিতে, সঙ্গে আসেন তাঁর অনুচর ভূতেরা। চতুর্দশী তিথির ভরা অমাবস্যায় (Kali Puja 2025) চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকে। সেই ঘন অন্ধকারে যাতে বলি রাজার অনুচরেরা বাড়িতে ঢুকে না পড়েন, তার ব্যবস্থাই করা হত প্রাচীন কালে। ভূত চতুর্দশীর সঙ্গে জড়িত পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, ঘোর অমাবস্যার রাতে বিদেহী আত্মারা নেমে আসেন মর্ত্যলোকে। এর ঠিক পরের দিনই চন্দ্রের তিথির নিয়ম মেনে হয় দীপান্বিতা কালীপুজো।

    কৃষ্ণ-সত্যভামার হাতে নরকাসুর-বধ কাহিনী

    ভূত চতুর্দশী বা নরক চতুর্দশীতে মুক্তিলাভের আশায় পুজো (Kali Puja 2025) করা হয়। এদিন সূর্যোদয়ের আগে উঠে স্নান করার প্রথা রয়েছে। মনে করা হয় এর প্রভাবে যমলোকের দর্শন করতে হয় না। বিষ্ণু পুরাণ ও শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী, নরকাসুর নামক এক অসুর নিজের শক্তির দ্বারা দেবতা ও মনুষ্যদের অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। ১৬ হাজার স্ত্রী এবং সাধুকে বন্দি বানিয়ে রেখেছিল নরকাসুর (Narakasura)। এরপর মুনি-ঋষিরা কৃষ্ণের দ্বারস্থ হন। নরকাসুরের হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব নেন কৃষ্ণ। কিন্তু শুধু স্ত্রীর হাতে মৃত্যুর অভিশাপ পেয়েছিল নরকাসুর। এই কারণে কৃষ্ণ নিজের স্ত্রী সত্যভামাকে সারথী করেন এবং তাঁর সাহায্যে নরকাসুরকে বধ করেন। যেদিন নরকাসুর বধ হয়েছিল, সেই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি (Kali Puja 2025)। তাই তিথিকে নরক চতুর্দশী বলা হয়।

    এদিন বেরিয়ে আসে অশরীরী প্রেতাত্মারা!

    আবার এই তিথিটিকে ভূত চতুর্দশী (Bhoot Chaturdashi 2025) বলার পিছনের আরেক ব্যখ্যা হল, মনে করা হয়, এই তিথিতে সন্ধ্যা নামলেই অশরীরী প্রেতাত্মারা বেরিয়ে আসে। তাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে এই তিথিতে গৃহস্থ বাড়িতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। আবার আর একটি প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এই তিথিতে চোদ্দ পুরুষের আত্মার আসা-যাওয়া থাকে। মনে করা হয় তাঁদের যাতায়াতের পথ আলোকিত রাখার জন্যই প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করার প্রথা রয়েছে।

    হ্যালোউইন শব্দের অর্থ কী?

    আমাদের দেশে যেমন কালীপুজোর (Kali Puja 2025) আগের রাতে পালিত হয় ভূত চতুর্দশী, পশ্চিমী দুনিয়ায় তেমনই সবাই মেতে ওঠেন হ্যালোউইন ঘিরে। প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর মৃত আত্মাদের স্মরণ করতে হ্যালোউইন পালিত হয়। আমাদের দেশেও গত কয়েক বছর ধরে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে হ্যালোউইন। স্কটিশ শব্দ ‘অল হ্যালোজ ইভ’ থেকে হ্যালোইন বা হ্যালোউইন শব্দটি এসেছে। এই শব্দের উৎপত্তি মোটামুটি ১৭৪৫ সালে। হ্যালোউইন শব্দের অর্থ পবিত্র সন্ধ্যা। হ্যালোউইনের কথা বলতেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে কুমড়ো এবং ভুতুড়ে সাজগোজ। হ্যালোউইনে কুমড়ো কেটে সেখানে নাক, চোখ, মুখ বানিয়ে ভৌতিক চেহারা তৈরি করার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। তার পরে এর ভিতরে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। অন্ধকার রাতে কুমড়োর ভেতরে মোমবাতি জ্বলায় তা আরও ভৌতিক দেখতে লাগে। ভৌতিক কস্টিউম পরে অনেকেই এদিন অন্যকে ভয় দেখিয়ে মজা করে।

LinkedIn
Share