Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 161: “মুখের দিকে তাকিয়ে দেখ…অন্তরে ঈশ্বরের নাম জপ করে কিনা, তাই ঠোঁট নড়ে”

    Ramakrishna 161: “মুখের দিকে তাকিয়ে দেখ…অন্তরে ঈশ্বরের নাম জপ করে কিনা, তাই ঠোঁট নড়ে”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ও বলরাম-মন্দিরে

    অষ্টম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ১১ই মার্চ

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ, নিত্যসিদ্ধ ও কৌমার বৈরাগ্য

    রাখালের বাপ বসিয়া আছেন (Kathamrita)। রাখাল আজকাল ঠাকুরের (Ramakrishna) কাছে রহিয়াছেন। রাখালের মাতাঠাকুরানীর পরলোকপ্রাপ্তির পর পিতা দ্বিতীয় সংসার করিয়াছেন। রাখাল এখানে আছেন, তাই পিতা মাঝে মাঝে আসেন। তিনি ওখানে থাকাতে বিশেষ আপত্তি করেন না। ইনি সম্পন্ন ও বিষয়ী লোক, মামলা মোকদ্দমা সর্বদা করিতে হয়। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে উকিল, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ইত্যাদি আসেন। রাখালের পিতা তাঁহাদের সঙ্গে আলাপ করিতে মাঝে মাঝে আসেন। তাঁহাদের নিকট বিষয়কর্ম সম্বন্ধে অনেক পরামর্শ পাইবেন।

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) মাঝে মাঝে রাখালের বাপকে দেখিতেছেন। ঠাকুরের ইচ্ছা—রাখাল তাঁর কাছে দক্ষিণেশ্বরে থাকিয়া যান।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (রাখালের বাপ ও ভক্তদের প্রতি)—আহা, আজকাল রাখালের স্বভাবটি কেমন হয়েছে! ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখ—দেখতে পাবে, মাঝে মাঝে ঠোঁট নড়ছে। অন্তরে ঈশ্বরের নাম জপ করে কিনা, তাই ঠোঁট নড়ে।

    এ-সব ছোকরারা নিত্যসিদ্ধের থাক। ঈশ্বরের (Ramakrishna) জ্ঞান নিয়ে জন্মেছে। একটু বয়স হলেই বুঝতে পারে, সংসার গায়ে লাগলে আর রক্ষা নাই। বেদেতে হোমাপাখির কথা আছে, সে পাখি আকাশেই থাকে, মাটির উপর কখন আসে না। আকাশেই ডিম পাড়ে। ডিম পড়তে থাকে; কিন্তু এত উঁচুতে পাখি থাকে যে, পড়তে পড়তে ডিম ফুটে যায়। তখন পাখির ছানা বেরিয়ে পড়ে, সেও পড়তে থাকে। তখনও এত উঁচু যে পড়তে পড়তে ওর পাখা উঠে ও চোখ ফোটে। তখন সে দেখতে পায় যে, আমি মাটির উপর পড়ে যাব! মাটিতে পড়লেই মৃত্যু! মাটি দেখাও যা, অমনি মার দিকে চোঁচা দৌড়। একবারে উড়তে আরম্ভ করে দিল। যাতে মার কাছে পৌঁছতে পারে। এক লক্ষ্য মার কাছে যাওয়া।

    এ-সব ছোকরারা ঠিক সেইরকম। ছেলেবেলাই সংসার দেখে ভয় (Kathamrita)। এক চিন্তা—কিসে মার কাছে যাব, কিসে ঈশ্বরলাভ হয়।

    আরও পড়ুনঃ “একটা ঢোঁড়ায় ব্যাঙটাকে ধরেছে, ছাড়তেও পাচ্ছে না—গিলতেও পাচ্ছে না…”

    আরও পড়ুনঃ “বিবেক, বৈরাগ্যরূপ হলুদ মাখলে তারা আর তোমাকে ছোঁবে না”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 160: “ঠাণ্ডার গুণে যেমন সাগরের জল বরফ হয়ে ভাসে…বরফের চাঁই সাগরের জলে ভাসে”

    Ramakrishna 160: “ঠাণ্ডার গুণে যেমন সাগরের জল বরফ হয়ে ভাসে…বরফের চাঁই সাগরের জলে ভাসে”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ও বলরাম-মন্দিরে

    সপ্তম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ১১ই মার্চ

    গোস্বামী সঙ্গে সর্বধর্ম-সমন্বয়প্রসঙ্গে

    সাকার না নিরাকার 

    (গোস্বামীর প্রতি)—তা ঈশ্বর শুধু সাকার বললে কি হবে। তিনি শ্রীকৃষ্ণের (Ramakrishna) ন্যায় মানুষের মতো দেহধারণ করে আসেন, এও সত্য, নানারূপ ধরে ভক্তকে দেখা দেন, এও সত্য। আবার তিনি নিরাকার, অখণ্ড সচ্চিদানন্দ, এও সত্য। বেদে তাঁকে সাকার নিরাকার দুই বলেছে, সগুণও বলেছে, নির্গুণও বলেছে (Kathamrita)।

    কিরকম জান? সচ্চিদানন্দ যেন অনন্ত সাগর। ঠাণ্ডার গুণে যেমন সাগরের জল বরফ হয়ে ভাসে, নানা রূপ ধরে বরফের চাঁই সাগরের জলে ভাসে; তেমনি ভক্তিহিম লেগে সচ্চিদানন্দ-সাগরে সাকারমূর্তি দর্শন হয়। ভক্তের জন্য সাকার। আবার জ্ঞানসূর্য উঠলে বরফ গলে আগেকার যেমন জল, তেমনি জল। অধঃ ঊর্ধ্ব পরিপূর্ণ। জলে জল। তাই শ্রীমদ্ভাগবতে সব স্তব করেছে—ঠাকুর, তুমিই সাকার তুমিই নিরাকার; আমাদের সামনে তুমি মানুষ হয়ে বেড়াচ্ছ, কিন্তু বেদে তোমাকেই বাক্য-মনের অতীত বলেছে।

    তবে বলতে (Kathamrita) পার, কোন কোন ভক্তের পক্ষে তিনি নিত্য সাকার। এমন জায়গা আছে, যেখানে বরফ গলে না, স্ফটইকের আকার ধারণ করে।

    কেদার—আজ্ঞে, শ্রীমদ্ভাগবতে ব্যাস তিনটি দোষের জন্য ভগবানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এক জায়গায় বলেছেন, হে ভগবন্‌ (Ramakrishna) তুমি বাক্য মনের অতীত, কিন্তু আমি কেবল তোমার লীলা—তোমার সাকাররূপ—বর্ণনা করেছি, অতএব অপরাধ মার্জনা করবেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna)—হাঁ, ঈশ্বর সাকার আবার নিরাকার, আবার সাকার-নিরাকারেরও পার। তাঁর ইতি করা যায় না।

    আরও পড়ুনঃ “ভক্তেরা দাঁড়াইয়া খোল-করতাল লইয়া কীর্তন করিতেছেন, ঠাকুরের দৃষ্টি স্থির”

    আরও পড়ুনঃ “একটা ঢোঁড়ায় ব্যাঙটাকে ধরেছে, ছাড়তেও পাচ্ছে না—গিলতেও পাচ্ছে না…”

    আরও পড়ুনঃ “বিবেক, বৈরাগ্যরূপ হলুদ মাখলে তারা আর তোমাকে ছোঁবে না”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

     

  • Ramakrishna 159: “বৈষ্ণবেরাও ঈশ্বরকে পাবে, শাক্তরাও পাবে, বেদান্তবাদীরাও পাবে, ব্রহ্মজ্ঞানীরাও পাবে”

    Ramakrishna 159: “বৈষ্ণবেরাও ঈশ্বরকে পাবে, শাক্তরাও পাবে, বেদান্তবাদীরাও পাবে, ব্রহ্মজ্ঞানীরাও পাবে”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ও বলরাম-মন্দিরে

    সপ্তম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ১১ই মার্চ

    গোস্বামী সঙ্গে সর্বধর্ম-সমন্বয়প্রসঙ্গে

    তাই নাম কর, সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থনা কর, যাতে ঈশ্বরেতে (Ramakrishna) অনুরাগ হয়, আর যে-সব জিনিস দুদিনের জন্য, যেমন টাকা, মান, দেহের সুখ; তাদের উপর যাতে ভালবাসা কমে যায়, প্রার্থনা কর।

    বৈষ্ণবধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা—সর্বধর্ম-সমন্বয় 

    শ্রীরামকৃষ্ণ (গোস্বামীর প্রতি)—আন্তরিক হলে সব ধর্মের ভিতর দিয়াই ঈশ্বরকে পাওয়া যায়। বৈষ্ণবেরাও ঈশ্বরকে পাবে, শাক্তরাও পাবে, বেদান্তবাদীরাও পাবে, ব্রহ্মজ্ঞানীরাও পাবে; আবার মুসলমান, খ্রীষ্টান, এরাও পাবে। আন্তরিক হলে সবাই পাবে। কেউ কেউ ঝগড়া করে বসে। তারা বলে (Kathamrita), “আমাদের শ্রীকৃষ্ণকে না ভজলে কিছুই হবে না”; কি, “আমাদের মা-কালীকে না ভজলে কিছুই হবে না।”

    এ-সব বুদ্ধির নাম মাতুয়ার বুদ্ধি; অর্থাৎ আমার ধর্মই ঠিক, আর সকলের মিথ্যা। এ-বুদ্ধি খারাপ। ঈশ্বরের (Ramakrishna) কাছে নানা পথ দিয়ে পৌঁছানো যায়।

    আবার কেউ কেউ বলে, ঈশ্বর সাকার, তিনি নিরাকার নন। এই বলে আবার ঝগড়া। যে বৈষ্ণব, সে বেদান্তবাদীর সঙ্গে ঝগড়া করে।

    যদি ঈশ্বর সাক্ষাৎ দর্শন হয়, তাহলে ঠিক বলা যায়। যে দর্শন করেছে, সে ঠিক জানে ঈশ্বর সাকার, আবার নিরাকার। আরও তিনি কত কি আছেন তা বলা যায় না।

    কতকগুলো কানা একটা হাতির কাছে এসে পড়েছিল। একজন লোক বলে দিলে, এ-জানোয়ারটির নাম হাতি। তখন কানাদের জিজ্ঞাসা করা হল হাতিটা কিরকম? তারা হাতির গা স্পর্শ করতে লাগল। একজন বললে, ‘হাতি একটা থামের মতো!’ সে কানাটি কেবল হাতির পা স্পর্শ করেছিল। আর-একজন বললে, ‘হাতিটা একটা কুলোর মতো!’ সে কেবল একটা কানে হাত দিয়ে দেখেছিল। এইরকম যারা শুঁড়ে কি পেটে হাত দিয়ে দেখেছিল তারা নানা প্রকার বলতে লাগল। তেমনি ঈশ্বর (Ramakrishna) সম্বন্ধে যে যতটুকু দেখেছে সে মনে করেছে, ইশ্বর এমনি, আর কিছু নয়।

    একজন লোক বাহ্যে থেকে ফিরে এসে বললে (Kathamrita) গাছতলায় একটি সুন্দর লাল গিরগিটি দেখে এলুম। আর-একজন বললে, আমি তোমার আগে সেই গাছতলায় গিছলুম—লাল কেন হবে? সে সবুজ, আমি স্বচক্ষে দেখেছি। আর-একজন বললে, ও আমি বেশ জানি, তোমাদের আগে গিছলাম, সে গিরগিটি আমিও দেখেছি। সে লালও নয়, সবুজও নয়, স্বচক্ষে দেখেছি নীল। আর দুইজন ছিল তারা বললে, হলদে, পাঁশটে—নানা রঙ। শেষে সব ঝগড়া বেধে গেল। সকলে জানে, আমি যা দেখেছি, তাই ঠিক। তাদের ঝগড়া দেখে একজন লোক জিজ্ঞাসা করলে, ব্যাপার কি? যখন সব বিবরণ শুনলে, তখন বললে, আমি ওই গাছতলাতেই থাকি; আর ওই জানোয়ার কি আমি চিনি। তোমরা প্রত্যেকে যা বলছ, তা সব সত্য; ও গিরগিটি,— কখন সবুজ, কখন নীল, এইরূপ নানা রঙ হয়। আবার কখন দেখি, একেবারে কোন রঙ নাই। নির্গুণ।”

    আরও পড়ুনঃ “একটা ঢোঁড়ায় ব্যাঙটাকে ধরেছে, ছাড়তেও পাচ্ছে না—গিলতেও পাচ্ছে না…”

    আরও পড়ুনঃ “বিবেক, বৈরাগ্যরূপ হলুদ মাখলে তারা আর তোমাকে ছোঁবে না”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “ওরে সাধু সাবধান! এক-আধবার যাবি। বেশি যাসনে—পড়ে যাবি! কামিনী-কাঞ্চনই মায়া”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 158: “বিছে বা ডাকুর কামড় অমনি মন্ত্রে সারে না—ঘুঁটের ভাবরা দিতে হয়”

    Ramakrishna 158: “বিছে বা ডাকুর কামড় অমনি মন্ত্রে সারে না—ঘুঁটের ভাবরা দিতে হয়”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ও বলরাম-মন্দিরে

    সপ্তম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ১১ই মার্চ

    গোস্বামী সঙ্গে সর্বধর্ম-সমন্বয়প্রসঙ্গে

    আহারের পর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) ছোট খাটটিতে বিশ্রাম করিতেছেন। ঘরে লোকের ভিড় বাড়িতেছে। বাহিরের বারান্দাগুলিও লোকে পরিপূর্ণ। ঘরের মধ্যে ভক্তেরা মেঝেতে বসিয়া আছেন ও ঠাকুরের দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া আছেন। কেদার, সুরেশ, রাম, মনোমোহন, গিরীন্দ্র, রাখাল ভবনাথ, মাস্টার ইত্যাদি অনেকে ঘরে উপস্থিত। রাখালের বাপ আসিয়াছেন; তিনিও ওই ঘরে বসিয়া আছেন।

    একটি বৈষ্ণব গোস্বামীও এই ঘরে উপবিষ্ট। ঠাকুর তাহাকে সম্বোধন করিয়া কথা কহিতেছেন (Kathamrita)। গোস্বামীদের দেখিলেই ঠাকুর মস্তক অবনত করিয়া প্রণাম করিতেন—কখন কখন সম্মুখে সাষ্টাঙ্গ হইতেন।

    নাম-মাহাত্ম্য না অনুরাগ—অজামিল 

    শ্রীরামকৃষ্ণ—আচ্ছা, তুমি কি বল? উপায় কি?

    গোস্বামী—আজ্ঞা, নামেতেই হবে। কলিতে নাম-মাহাত্ম্য।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—হাঁ, নামের খুব মাহাত্ম্য আছে বটে। তবে অনুরাগ না থাকলে কি হয়? ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হওয়া দরকার। শুধু নাম করে যাচ্ছি কিন্তু কামিনী-কাঞ্চনে মন রয়েছে, তাতে কি হয়?

    বিছে বা ডাকুর কামড় অমনি মন্ত্রে সারে না—ঘুঁটের ভাবরা দিতে হয়।

    গোস্বামী—তাহলে অজামিল? অজামিল মহাপাতকী, এমন পাপ নাই যা সে করে নাই। কিন্তু মরবার সময় ‘নারায়ণ’ বলে ছেলেকে ডাকাতে (Kathamrita) উদ্ধার হয়ে গেল।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—হয়তো অজামিলের পূর্বজন্মে অনেক কর্ম করা ছিল। আর আছে যে, সে পরে তপস্যা করেছিল।

    এরকমও বলা যায় যে, তার তখন অন্তিমকাল। হাতিকে নাইয়ে দিলে কি হবে, আবার ধূলা-কাদা মেখে যে কে সেই! তবে হাতিশালায় ঢোকবার আগে যদি কেউ ঝুল ঝেড়ে দেয় ও স্নান করিয়ে দেয়, তাহলে গা পরিস্কার থাকে।

    নামেতে একবার শুদ্ধ হল, কিন্তু তারপরেই হয়তো নানা পাপে লিপ্ত হয়। মনে বল নাই; প্রতিজ্ঞা করে না যে, আর পাপ করব না। গঙ্গাস্নানে পাপ সব যায়। গেলে কি হবে? লোকে বলে থাকে, পাপগুলো গাছের উপর থাকে। গঙ্গা নেয়ে যখন মানুষটা ফেরে, তখন ওই পুরানো পাপগুলো গাছ থেকে ঝাঁপ দিয়ে ওর ঘাড়ের উপর পড়ে। (সকলের হাস্য) সেই পুরানো পাপগুলো আবার ঘাড়ে চড়েছে। স্নান করে দু-পা না আসতে আসতে আবার ঘাড়ে চড়েছে!

    আরও পড়ুনঃ “একটা ঢোঁড়ায় ব্যাঙটাকে ধরেছে, ছাড়তেও পাচ্ছে না—গিলতেও পাচ্ছে না…”

    আরও পড়ুনঃ “বিবেক, বৈরাগ্যরূপ হলুদ মাখলে তারা আর তোমাকে ছোঁবে না”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “ওরে সাধু সাবধান! এক-আধবার যাবি। বেশি যাসনে—পড়ে যাবি! কামিনী-কাঞ্চনই মায়া”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Maa Lakshmi: এই পাঁচটি কাজ করুন প্রতিদিন, মা লক্ষ্মী হবেন প্রসন্না, আসবে সুখ-সমৃদ্ধি

    Maa Lakshmi: এই পাঁচটি কাজ করুন প্রতিদিন, মা লক্ষ্মী হবেন প্রসন্না, আসবে সুখ-সমৃদ্ধি

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিন্দু ধর্মে মা লক্ষ্মীকে (Maa Lakshmi) ধন, সম্পদ, গৌরব, সুখ প্রদানকারী দেবী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জীবনে ধন-সম্পদ ও সুখ-সমৃদ্ধি লাভের জন্য দেবী লক্ষ্মীর পুজোর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে বলেই ভক্তদের বিশ্বাস। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, দেবী লক্ষ্মীর (Maa Lakshmi) আশীর্বাদপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কখনও সম্পদ এবং সুখ ও খ্যাতির অভাব হয় না। দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পেতে এবং তাঁকে খুশি করার জন্য শাস্ত্রে অনেক কিছু বলা হয়েছে। মা লক্ষ্মীকে প্রসন্ন করার জন্য অনেক রকম পদ্ধতি রয়েছে। কীভাবে প্রতিনিয়ত কাজের মাধ্যমে দেবী লক্ষ্মীকে খুশি করা যায়-এরকমই ৫টি কাজ আমরা জানব।

    সকালে বাড়ির প্রবেশদ্বার ধুতে হবে: ভক্তদের  বিশ্বাস রয়েছে, যে বাড়িতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকে, সেখানেই দেবী লক্ষ্মী বাস করেন। বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী জানা যায়, বাড়ির মূল প্রবেশদ্বারটি খুবই পরিষ্কার রাখা উচিত। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ভগবানকে স্মরণ করে বাড়ির মূল দরজা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন বাস্তুশাস্ত্রবিদরা। এতে দেবী লক্ষ্মী (Maa Lakshmi) দ্রুত প্রসন্না হন এবং বাড়িতে সুখ-সমৃদ্ধি প্রবেশ করে। 

    দরজায় প্রদীপ জ্বালাতে হবে: বাড়ির প্রধান প্রবেশদ্বারটিকে বাস্তুশাস্ত্রে খুবই বিশেষ বলে বিবেচনা করা হয়। প্রত্যহ সন্ধ্যায় বাড়ির প্রধান দরজায় একটি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বাস্তুশাস্ত্রবিদরা। ভক্তদের বিশ্বাস, এইভাবে দেবী লক্ষ্মী (Maa Lakshmi) খুব দ্রুত প্রসন্না হন এবং সুখ ও সৌভাগ্য দিয়ে ঘর পূর্ণ করেন।

    তুলসী পূজন করতে হবে: মা লক্ষ্মী ও ভগবান বিষ্ণুর কাছে তুলসী খুবই প্রিয় বলে মনে করা হয়। এমনটা বিশ্বাস রয়েছে, যে বাড়িতে তুলসী গাছের নিয়মিত পুজো হয়, সেখানে দেবী লক্ষ্মী অবশ্যই বাস করেন। প্রতিদিন সকালে তুলসীতলায় জল নিবেদন এবং সন্ধ্যায় ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালালে ঘরে সুখ, সমৃদ্ধি আসে বলেই বিশ্বাস।

    সূর্যদেবকে জল নিবেদন করতে হবে: শাস্ত্র অনুযায়ী (Hindu Custom), যে ব্যক্তি সূর্যদেবকে জল নিবেদন করেন এবং তাঁর ঘর সুখ, সমৃদ্ধি এবং গৌরবে পরিপূর্ণ থাকে। প্রতিদিন সূর্যদেবকে জল নিবেদন করলে রাশিতে সূর্যের অবস্থান মজবুত হয় বলেও জানাচ্ছেন জ্যোতিষীরা।

    তিলক লাগাতে হবে: শাস্ত্রবিদরা নিয়মিত কপালে চন্দনের তিলক লাগানোরও পরামর্শ দিচ্ছেন। ধর্মীয় বিশ্বাস (Hindu Custom) অনুসারে, সকালে পুজোর পর কপালে তিলক লাগালে দেবী লক্ষ্মী প্রসন্ন হন।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Parthiv Shivalinga: মাটির শিবলিঙ্গ পূজনে পূরণ হয় ভক্তদের সকল মনোবাঞ্ছা! কীভাবে তৈরি করবেন?

    Parthiv Shivalinga: মাটির শিবলিঙ্গ পূজনে পূরণ হয় ভক্তদের সকল মনোবাঞ্ছা! কীভাবে তৈরি করবেন?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শিবপুরাণে ভগবান শিব ও শিবলিঙ্গের (Parthiv Shivalinga) পুজোর পদ্ধতি বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মাটির বা পার্থিব শিবলিঙ্গ পুজোর গুরুত্বও ব্যাখ্যা করা হয়েছে এখানে। মাটির শিবলিঙ্গের পুজো করলে দুঃখ-কষ্ট নাশ হয় এবং ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরণ হয় বলে ধর্মীয় বিশ্বাস। শাস্ত্রবিদরা জানাচ্ছেন, শিবলিঙ্গের পুজো করার সংকল্প নিয়ে একটি পবিত্র স্থান বেছে নিন। আর নিয়ে আসুন পবিত্র নদী বা হ্রদের মাটি। মাটি শুদ্ধ করতে ফুল ও চন্দন ব্যবহার করুন। মাটি শোধনের সময় শিবমন্ত্র জপ করতে করতে মাটিতে গরুর দুধ, গুড়, মাখন ও ভস্ম মিশিয়ে শিবলিঙ্গ (Shivalinga) তৈরি করুন। শাস্ত্রবিদরা আরও জানাচ্ছেন, মাটির শিবলিঙ্গ তৈরির সময় শিবভক্তদের (Parthiv Shivalinga) মুখ পূর্ব বা উত্তর দিকে রাখতে হবে। শিবলিঙ্গের উচ্চতা ৮ ইঞ্চির বেশি রাখবেন না। শিবপুরাণ মতে, যে ব্যক্তি মাটির শিবলিঙ্গ তৈরি করে প্রতিদিন পুজো করেন, তিনি শিবপদ ও শিবলোক লাভ করেন। আবার যে ব্যক্তি ব্রাহ্মণ কুলে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও পুজো করে না, সে ঘোর নরকলাভ করে। 

    কীভাবে মাটির শিবলিঙ্গের (Parthiv Shivalinga) পুজো করবেন

    ওম নমঃ শিবায় মন্ত্রোচ্চারণ করে পুজোর সামগ্রী একত্রিত করে জল ছিটিয়ে শুদ্ধ করে নিতে হবে। পার্থিব শিবলিঙ্গের (Shivalinga) পুজো করার আগে শ্রী গণেশ, ভগবান বিষ্ণু, নবগ্রহ এবং দেবী পার্বতীর পুজো করতে বলছেন শাস্ত্রবিদরা। শিবলিঙ্গে অর্পণ করতে হবে বেলপত্র, ফুল ইত্যাদি। এরসঙ্গে কাঁচা দুধ দিয়ে শিবলিঙ্গের অভিষেক করতে হবে। পঞ্চমেব, পঞ্চামৃত, মিষ্টি, ফল, ধাতুরা, ভাং ইত্যাদিও নিবেদন করতে হবে। সবশেষে মহাদেবের আরতি করতে হবে। এরপর কোনও ব্রাহ্মণের সাহায্যে পুজো করে থাকলে, তাঁকে দক্ষিণা দিন। শিবের সামনে নিজের মনস্কামনা পূরণের প্রার্থনা করুন। তার পর বিসর্জন করবেন। শিবপুরাণ অনুযায়ী এ ভাবে শিবের পুজো করলে মোক্ষ লাভ করা যায়।

    হিন্দু ধর্মে মাটির শিবলিঙ্গের (Parthiv Shivalinga) গুরুত্ব কী?

    শিবপুরাণ অনুযায়ী, মাটির শিবলিঙ্গের পুজো জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। এছাড়া যে কোনও মানসিক ও শারীরিক কষ্ট থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় সহজেই। পুরাণ অনুযায়ী, কুষ্মাণ্ড ঋষির পুত্র মণ্ডপ সর্বপ্রথম মাটির শিবলিঙ্গের পুজো শুরু করেন। মাটির শিবলিঙ্গের পুজোর সময় শিবমন্ত্র জপ করা উচিত।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

     

  • Ramakrishna 157: “ভক্তেরা দাঁড়াইয়া খোল-করতাল লইয়া কীর্তন করিতেছেন, ঠাকুরের দৃষ্টি স্থির”

    Ramakrishna 157: “ভক্তেরা দাঁড়াইয়া খোল-করতাল লইয়া কীর্তন করিতেছেন, ঠাকুরের দৃষ্টি স্থির”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ও বলরাম-মন্দিরে

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ১১ই মার্চ
    কীর্তনানন্দে ও সমাধিমন্দিরে

    ভক্তেরা এই আবতারতত্ত্ব অবাক্‌ হইয়া শুনিতেছেন। কেহ কেহ ভাবিতেছেন, কি আশ্চর্য! বেদোক্ত অখণ্ড সচ্চিদানন্দ—যাহাকে বেদে বাক্য-মনের অতীত বলিয়াছে—সেই পুরুষ আমাদের সামনে চোদ্দ পোয়া মানুষ হইয়া আসেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) যেকালে বলিতেছেন, সেকালে অবশ্য হইবে। যদি তাহা না হইত, তাহা হইলে “রাম রামন” করিয়া এই মহাপুরুষের কেন সমাধি হইবে? নিশ্চয় ইনি হৃৎপদ্মে রামরূপ দর্শন করিতেছিলেন।

    দেখিতে দেখিতে কোন্নগর হইতে ভক্তেরা খোল-করতাল লইয়া সংকীর্তন করিতে করিতে বাগানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। মনোমোহন, নবাই ও অন্যান্য অনেকে নামসংকীর্তন করিতে করিতে ঠাকুরের কাছে সেই উত্তর-পূর্ব বারান্দায় উপস্থিত। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ প্রেমোন্মত্ত হইয়া তাঁহাদের সহিত সংকীর্তন (Kathamrita) করিতেছেন।

    নৃত্য করিতে করিতে মাঝে মাঝে সমাধি। তখন আবার সংকীর্তনের মধ্যে চিত্রার্পিতের ন্যায় দাঁড়াইয়া আছেন। সেই অবস্থায় ভক্তেরা তাঁহাকে পুষ্পমালা দিয়া সাজাইলেন। বড় বড় গোড়েমালা। ভক্তেরা দেখিতেছেন, যেন শ্রীগৌরাঙ্গ সম্মুখে দাঁড়াইয়া। গভীর ভাবসমাধিনিমগ্ন! প্রভুর কখন অন্তর্দশা—তখন জড়বৎ চিত্রার্পিতের ন্যায় বাহ্যশূন্য হইয়া পড়েন। কখন বা অর্ধবাহ্যদশা—তখন প্রেমাবিষ্ট হইয়া নৃত্য করিতে থাকেন। আবার কখন বা শ্রীগৌরাঙ্গের ন্যায় বাহ্যদশা—তখন ভক্তসঙ্গে সংকীর্তন করেন।

    ঠাকুর সমাধিস্থ, দাঁড়াইয়া। গলায় মালা। পাছে পড়িয়া যান ভাবিয়া একজন ভক্ত তাঁহাকে ধরিয়া আছেন; চর্তুদিকের ভক্তেরা দাঁড়াইয়া খোল-করতাল লইয়া কীর্তন করিতেছেন। ঠাকুরের দৃষ্টি স্থির (Kathamrita) । চন্দ্রবদন প্রেমানুরঞ্জিত। ঠাকুর পশ্চিমাস্য।

    এই আনন্দমূর্তি ভক্তেরা অনেকক্ষণ ধরিয়া দেখিতে লাগিলেন। সমাধি ভঙ্গ হইল। বেলা হইয়াছে। কিয়ৎক্ষণ পরে কীর্তনও থামিল। ভক্তেরা ঠাকুরকে আহার করাইবার জন্য ব্যস্ত হইলেন।

    ঠাকুর (Ramakrishna) কিয়ৎকাল বিশ্রাম করিয়া, নববস্ত্র পীতাম্বর পরিধান করিয়া ছোট খাটটিতে বসিলেন। পীতাম্বরধারী সেই আনন্দময় মহাপুরুষের জ্যোতির্ময় ভক্তচিত্তবিনোদন, অপরূপ রূপ ভক্তেরা দর্শন করিতেছিলেন। সেই দেবদুর্লভ, পবিত্র, মোহনমূর্তি দর্শন করিয়া নয়নের তৃপ্তি হইল না। ইচ্ছা, আরও দেখি, আরও দেখি; সেই রূপসাগরে মগ্ন হই।

    ঠাকুর আহারে বসিলেন। ভক্তেরাও আনন্দে প্রসাদ পাইলেন।

    আরও পড়ুনঃ “একটা ঢোঁড়ায় ব্যাঙটাকে ধরেছে, ছাড়তেও পাচ্ছে না—গিলতেও পাচ্ছে না…”

    আরও পড়ুনঃ “বিবেক, বৈরাগ্যরূপ হলুদ মাখলে তারা আর তোমাকে ছোঁবে না”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ“ওরে সাধু সাবধান! এক-আধবার যাবি। বেশি যাসনে—পড়ে যাবি! কামিনী-কাঞ্চনই মায়া”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 156: “রাম পূর্ণব্রহ্ম, পূর্ণ অবতার—একথা বারজন ঋষি কেবল জানত”

    Ramakrishna 156: “রাম পূর্ণব্রহ্ম, পূর্ণ অবতার—একথা বারজন ঋষি কেবল জানত”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ও বলরাম-মন্দিরে

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ১১ই মার্চ

    সাকার-নিরাকার—ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের রামনামে সমাধি

    ঋষিরা জ্ঞানী ছিলেন, তাই তাঁরা অখণ্ড সচ্চিদানন্দকে চাইতেন (Kathamrita)। আবার ভক্তেরা অবতারকে

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Kathamrita) দাঁড়াইয়া ভক্তদের কাছে এই কথা বলিতেছেন। বলিতে বলিতেই একেবারে বাহ্যরাজ্য ছাড়িয়া মন অন্তর্মুখ হইল! “হৃৎপদ্ম প্রস্ফুটিত হইল।—এই কথাটি উচ্চারণ করিতে না করিতে ঠাকুর একেবারে সমাধিস্থ।

    ঠাকুর সমাধিমন্দিরে। ভগবানদর্শন করিয়া শ্রীরামকৃষ্ণের হৃৎপদ্ম কি প্রস্ফুটিত হইল! সেই একভাবে দণ্ডায়মান। কিন্তু বাহ্যশূন্য। চিত্রার্পিতের ন্যায়। শ্রীমুখ উজ্জ্বল ও সহাস্য। ভক্তেরা কেহ দাঁড়াইয়া, কেহ বসিয়া; অবাক্‌; একদৃষ্টে এই অদ্ভুত প্রেম রাজ্যের ছবি। এই অদৃষ্টপূর্ব সমাধি-চিত্র সন্দর্শন করিতেছেন।

    অনেকক্ষণ পরে সমাধি ভঙ্গ হইল।

    ঠাকুর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া ‘রাম’ এই নাম বারবার উচ্চারণ করিতেছেন। নামের বর্ণে বর্ণে যেন অমৃত ঝরিতেছে। ঠাকুর উপবিষ্ট হইলেন। ভক্তেরা চর্তুদিকে বসিয়া একদৃষ্টে দেখিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদিগের প্রতি)—অবতার যখন আসে, সাধারণ লোকে জানতে পারে না—গোপনে আসে। দুই-চারিজন অন্তরঙ্গ ভক্ত জানতে পারে। রাম পূর্ণব্রহ্ম, পূর্ণ অবতার—এ-কথা বারজন ঋষি কেবল জানত। অন্যান্য ঋষিরা বলেছিল, “হে রাম, আমরা তোমাকে দশরথের ব্যাটা বলে জানি।

    অখণ্ড সচ্চিদানন্দকে কি সকলে ধরতে পারে? কিন্তু নিত্যে উঠে যে বিলাসের জন্য লীলায় থাকে, তারই পাকা ভক্তি। বিলাতে কুইন (রানী)-কে দেখে এলে পর, তখন কুইন-এর কথা, কুইন-এর কার্য—এ সকল বর্ণনা করা চলতে পারে। কুইন-এর কথা তখন বলা ঠিক ঠিক হয়। ভরদ্বাজাদি ঋষি রামকে স্তব করেছিলেন, আর বলেছিলেন, ‘হে রাম (Ramakrishna), তুমিই সেই অখণ্ড সচ্চিদানন্দ। তুমি আমাদের কাছে মানুষরূপে অবতীর্ণ হয়েছ। বস্তুত তুমি তোমার মায়া আশ্রয় করেছ বলে, তোমাকে মানুষের মতো দেখাচ্ছে!’ ভরদ্বাজাদি ঋষি রামের পরম ভক্ত। তাঁদের ভক্তি পাকাভক্তি (Kathamrita)।”

    আরও পড়ুনঃ “একটা ঢোঁড়ায় ব্যাঙটাকে ধরেছে, ছাড়তেও পাচ্ছে না—গিলতেও পাচ্ছে না…”

    আরও পড়ুনঃ “বিবেক, বৈরাগ্যরূপ হলুদ মাখলে তারা আর তোমাকে ছোঁবে না”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “ওরে সাধু সাবধান! এক-আধবার যাবি। বেশি যাসনে—পড়ে যাবি! কামিনী-কাঞ্চনই মায়া”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 155: “ভক্তি আস্বাদন করবার জন্য, তাঁকে দর্শন করলে মনের অন্ধকার দূরে যায়”

    Ramakrishna 155: “ভক্তি আস্বাদন করবার জন্য, তাঁকে দর্শন করলে মনের অন্ধকার দূরে যায়”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ও বলরাম-মন্দিরে

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ১১ই মার্চ

    সাকার-নিরাকার—ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের রামনামে সমাধি

    এইবার ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) ভক্তসঙ্গে ঘরের উত্তর-পূর্ব বারান্দায় আসিয়াছেন। ভক্তদের মধ্যে দক্ষিণেশ্বরবাসী একজন গৃহস্থও বসিয়া আছেন। তিনি গৃহে বেদান্ত-চর্চা করেন। ঠাকুরের সম্মুখে শ্রীযুক্ত কেদার চাটুজ্যের সঙ্গে তিনি শব্দব্রহ্ম সম্বন্ধে কথা কহিতেছেন।

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও অবতারবাদ—ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও সর্বধর্ম-সমন্বয় 

    দক্ষিণেশ্বরবাসী—এই অনাহত শব্দ সর্বদা অন্তরে-বাহিরে হচ্ছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—শুধু শব্দ হলে তো হবে না, শব্দের প্রতিপাত্য একটি আছে। তোমার নামে কি শুধু আমার আনন্দ হয়? তোমায় না দেখলে ষোল আনা আনন্দ হয় না।

    দ: নিবাসী—ওই শব্দই ব্রহ্ম। ওই অনাহত শব্দ।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (কেদারের প্রতি)—ওঃ বুঝেছ? এঁর ঋষিদের মত। ঋষিরা রামচন্দ্রকে বললেন, হে রাম, আমরা জানি তুমি দশরথের ব্যাটা। ভরদ্বাজাদি ঋষিরা তোমায় অবতার জেনে পূজা করুন। আমরা অখণ্ড সচ্চিদানন্দকে চাই! রাম এই কথা শুনে হেসে চলে গেলেন।

    কেদার—ঋষিরা রামকে অবতার জানেন নাই। ঋষিরা বোকা ছিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (গম্ভীরভাবে)—আপনি এমন কথা বলো না। যার যেমন রুচি। আবার যার যা পেটে সয়। একটা মাছ এনে মা ছেলেদের নানারকম করে খাওয়ান। কারুকে পোলাও করে দেন; কিন্তু সকলের পেটে পোলাও সয় না। তাই তাদের মাছের ঝোল করে দেন। যার যা পেটে সয়। আবার কেউ মাছ ভাজা, মাছের অম্বল ভালবাসে। (সকলের হাস্য) যার যেমন রুচি।

    চান—ভক্তি আস্বাদন করবার জন্য। তাঁকে দর্শন করলে মনের অন্ধকার দূরে যায়। পুরাণে আছে, রামচন্দ্র (Ramakrishna) যখন সভাতে এলেন, তখন সভায় শত সূর্য যেন উদয় হল। তবে সভাসদ্‌ লোকেরা পুড়ে গেল না কেন? তার উত্তর—তাঁর জ্যোতিঃ জড় জ্যোতিঃ নয়। সভাস্থ সকলের হৃৎপদ্ম প্রস্ফুটিত হল। সূর্য উঠলে পদ্ম প্রস্ফুটিত হয়।

    আরও পড়ুনঃ “একটা ঢোঁড়ায় ব্যাঙটাকে ধরেছে, ছাড়তেও পাচ্ছে না—গিলতেও পাচ্ছে না…”

    আরও পড়ুনঃ “বিবেক, বৈরাগ্যরূপ হলুদ মাখলে তারা আর তোমাকে ছোঁবে না”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ“ওরে সাধু সাবধান! এক-আধবার যাবি। বেশি যাসনে—পড়ে যাবি! কামিনী-কাঞ্চনই মায়া”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Turkish invasion: বঙ্গের ‘অন্ধকার যুগ’ তুর্কি আক্রমণ! হিন্দু-বৌদ্ধের ধর্ম ও সংস্কৃতি কতটা বিপন্ন হয়েছিল?       

    Turkish invasion: বঙ্গের ‘অন্ধকার যুগ’ তুর্কি আক্রমণ! হিন্দু-বৌদ্ধের ধর্ম ও সংস্কৃতি কতটা বিপন্ন হয়েছিল?       

    ড. সুমন চন্দ্র দাস

    দ্বাদশ শতকে বঙ্গদেশে ইতিহাসের কালা অধ্যায় হল তুর্কি আক্রমণ (Turkish invasion)। এই আক্রমণ ছিল সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় আক্রমণ। বঙ্গের হিন্দু-বৌদ্ধদের উপর নির্মম আঘাত। মধ্যদেশ বিনির্গত যবনদের এক হাতে ছিল তলোয়ার, আরেক হাতে ছিল কোরান। হয় ইসলামকে স্বীকার করো, না হয় প্রাণে মারা পড়ো-এই ছিল মূলমন্ত্র। দারুল হারবকে দারুল ইসলাম করার ষড়যন্ত্র আজ থেকে প্রায় এগারোশ বছর আগেই তুর্কি মুসলমানরা শুরু করে দিয়েছিল। বিহার হয়ে বঙ্গের নবদ্বীপে আক্রমণ করেছিলেন ‘মুসলমান কসাই’ ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি। সনাতনী স্থাপত্য, ভাস্কর্য, শিক্ষা কেন্দ্র, মঠ, মন্দিরগুলিকে অকাতরে ধ্বংস করা হয়। হিন্দু-বৌদ্ধদের অকাতরে কচুকাটা করেন তিনি। হিন্দু পণ্ডিত এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের উপর চরম আঘাত নেমে এসেছিল অস্তিত্ব রক্ষায়। সেই সঙ্গে চলে নির্বিচারে লুট, খুন, ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড। ধর্মকে রক্ষা করতে হিন্দু ব্রাহ্মণরা নেপালে গিয়ে আশ্রয় লাভ করেছিলেন। সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, দর্শন, ন্যায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চায় নেমে আসে কালা অধ্যায়। ঐতিহাসিকরা এই সময়কে ‘অন্ধকার যুগ’ (Dark Age) বলেছেন।

    বিহারে নালন্দা ধ্বংস (Turkish invasion)

    ১২০১ খ্রিষ্টাব্দে বখতিয়ার খিলজি (Turkish invasion) বিহারে আক্রমণ করেন। বিহারের নালন্দা বৌদ্ধ মহাবিহারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। একই ভাবে ধ্বংস করা হয় ওদন্তপুরীকে। কথিত আছে, তুর্কিরা প্রজ্ঞাপারমিতা বা মণিমুক্তা সংগ্রহের জন্য এই জঘন্য তাণ্ডব চালিয়েছিল। ঘটনার প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বছরের মাথায় মিনহাজ, কথিত বিবরণ শুনে ‘তবাকত-ই-নাসরি, রিয়া-উজ-সালাতিন নামক গ্রন্থের মধ্যে বিবরণ লিখে গিয়েছেন। এক জায়গায় বলা হয়, একটি পুঁথির লিপি পাঠ করতে গেলে পাঠ করার কোনও ব্যক্তিকে ওই স্থানে পাওয়া যায়নি। পরে দূরবর্তী কোনও অবশিষ্ট ভিক্ষুককে দিয়ে লিপি পড়ে যানা যায়, এই ধ্বংসের স্তূপটি একটি শিক্ষালয় ছিল। হিন্দু মন্দির এবং বৌদ্ধ বিহার ভেঙে মসজিদ এবং মাদ্রাসা নির্মাণও করা হয়েছে। বিধর্মী কাফেরদের কচু কাটা করে এলাকা শূন্য করে ইসলাম প্রচার করা ছিল সভ্যতার অত্যন্ত নৃশংস ঘটনা। এরপর থেকে বিহারের ওই জায়গার নাম করা হয় বখতিয়ারপুর। আজও ওই স্থানের রেল স্টেশনের নাম এই ‘নরখাদকের’ নামে নামাঙ্কিত রয়েছে। বিহারের পরবর্তী লক্ষ্য হয় বঙ্গ।

    নদিয়ায় আক্রমণ

    বিহার আক্রমণের পর বখতিয়ার খিলজি (Turkish invasion) অনেক ধনরত্ন নিয়ে দিল্লির বাদশাহ কুতুবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এরপরই তিনি বাংলা জয়ের জন্য মনস্থির করেন। বঙ্গে তখন শাসক রাজা লক্ষ্মণ সেন। দুপুর বেলায় মাত্র অল্প কিছু অশ্বারোহীকে (মাত্র ১৭ জন) নিয়ে নদিয়ায় আক্রমণ করেন খিলজি। ঘটনায় অত্যন্ত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অল্প সময়ের মধ্যেই কাটা হয় রক্ষীদের। বলা হয়, লক্ষ্মণ সেন পিছনের দরজা দিয়ে খালি পায়ে নৌকায় করে বিক্রমপুরে চলে যান। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র নিজের প্রবন্ধে মাত্র ১৭ জনের তত্ত্ব দিয়ে বাংলা দখলের বিষয়কে মানেননি। নদিয়া বা নবদ্বীপ আক্রমণ করার পর মুসলমানরা বাংলা জয় করেছেন, এই তত্ত্বও মানতে নারাজ তিনি। কারণ তাঁর মতে, তুর্কিরা নবদ্বীপ দখলের পরেও অনন্ত ৫০ বছর গৌড়, বর্ধমান, বিষ্ণুপুর সহ একাধিক জায়গায় হিন্দু জমিদারদের আধিপত্য ছিল। তাই বিনা বাধায় বঙ্গে মুসলমানরা আধিপত্য বিস্তার করেছে, এই তথ্য সম্পূর্ণ ভাবে ঠিক নয়। হিন্দু রাজাদের বল ছিল না-একই কথা অসত্য। ইতিহাসকারেরা তুর্কিদের বিজয়কে মহিমান্বিত করেছেন, আক্রমণকে উপেক্ষা করেছেন। 

    কেন অন্ধকার যুগ?

    মুসলমান আক্রমণের (Turkish invasion) এই পর্বকে বঙ্গে ‘অন্ধকার যুগ’ (Dark Age) বলা হয়। কারণ এই সময় বাংলায় সাহিত্য নির্মাণ হয়নি বললেই চলে। একদিকে ইসলামি শরিয়া শাসন, অপর দিকে সৃজনশীল সাহিত্যকলার বিকাশে ব্যাপক খারাপ প্রভাব পড়েছিল। প্রাণ এবং ধর্ম বাঁচাতে বাংলার হিন্দু পণ্ডিত এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নেপালে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। যার বাস্তব উদাহরণ হল বাংলা ভাষায় লেখা পুঁথি নেপাল থেকে উদ্ধার হয়েছে। ধর্মকে বাঁচাতে পর্বত গাত্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন পণ্ডিতরা। চর্যাপদ বাংলা, বিহার, মিথিলা এবং ওড়িশার সম্পদ হলেও পাওয়া গিয়েছে নেপাল থেকে। তুর্কি মুসলমানরা পর্বতে উঠতে অক্ষম ছিল বলেই হয়তো হিন্দু-বৌদ্ধরা পালিয়ে নিজেদের সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার, মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, প্রাচ্যবিদার্নব নগেন্দ্রনাথ বসু, আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ডক্টর নীহাররঞ্জন রায়, আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন, আচার্য সুকুমার সেন, শ্রীভুদেব চৌধুরী, শ্রীগোপাল হালদার, ডক্টর অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ডক্টর শহিদুল্লাহ, ডক্টর আহমেদ শরীফ, ডক্টর এনামূল হক-সহ অনেক তাত্ত্বিক একবাক্যে বঙ্গে তুর্কি আক্রমণের প্রভাব সম্পর্কে অত্যন্ত নেতিবাচক মন্তব্য করে গিয়েছেন। এই সময়ে কার্যত কোনও সাহিত্য, শিল্প ভাবনার প্রকাশ দেখা যায়নি। কারণ রাজ শাসনে মুসলমান রাজাদের ধর্মীয় বিদ্বেষ ব্যাপক ভাবে সমাজে ছিল। পরবর্তী মুসলমান শাসকদের বিরুদ্ধে সামজিক দৃষ্টিকোণে ধর্মীয় নবজাগরণ ঘটান শ্রী চৈতন্যদেব। ইতিহাসের পাতায় যতটা মুসলমান শাসকদের বাংলা জয় সহজ করে দেখানো হয়েছে, ঠিক ততটাই কঠিন ছিল।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

LinkedIn
Share