Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Loknath Baba Puja: ভক্তদের বিশ্বাস তিনি সর্বদাই পাশে রয়েছেন, আজ লোকনাথ বাবার তিরোধান দিবস

    Loknath Baba Puja: ভক্তদের বিশ্বাস তিনি সর্বদাই পাশে রয়েছেন, আজ লোকনাথ বাবার তিরোধান দিবস

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “রণে বনে জলে জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়িবে, আমাকে স্মরণ করিও আমিই রক্ষা করিব”, ভক্তদের উদ্দেশে এমনই বাণী শুনিয়েছিলেন লোকনাথ বাবা (Loknath Baba Puja)। তাঁর শিষ্যদের বিশ্বাস, ডাকলেই সাড়া দেন লোকনাথ বাবা। আজ ১৯ জ্যৈষ্ঠ লোকনাথ বাবার তিরোধান দিবস। লোকনাথ বাবার ভক্তর সংখ্যা ওপার বাংলা-এপার বাংলা মিলিয়ে প্রচুর। তাঁর ওপর আস্থা রেখে চলেন অগণিত মানুষ। বিশ্বাস, তাঁর ওপরে আস্থা রাখলে কঠিন পরীক্ষা পার করা যায় জীবনে। চলার পথে যখনই বাধা আসে তখনই পথ দেখান লোকনাথ বাবা।

    লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ১৬০তম তিরোধান দিবস (Loknath Baba Puja)

    চলতি বছরে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ১৬০তম তিরোধান দিবস। বাংলার ১২৯৭ সালের ১৯ জ্যৈষ্ঠ তিনি তাঁর দেহত্যাগের কথা ঘোষণা করে দেন। ওই দিনই বেলা ১১টা ৪৫মিনিটে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে বারদি আশ্রমে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। লোকনাথ বাবার ভক্তদের বিশ্বাস, তিনি ১৬০ বছর জীবিত ছিলেন। তাই এই দিনটিকে অত্যন্ত নিষ্ঠা, শ্রদ্ধা সহকারে স্মরণ করা হয়। ঘরে ঘরে লোকনাথ ভক্তরা তাঁর পুজো করেন। লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন মেলার আয়োজনও চোখে পড়ে নানা দিকে। ভক্তদের মনে সর্বদাই সাহস যোগাতেন তিনি এবং তাঁর বাণী ছিল, “তুমি কখনও একা নও আমি সর্বদা তোমার সঙ্গে আছি। এই সত্য কখনও ভুলবে না, আমি চিরকাল তোমার মধ্যে উপস্থিত।”

    সংক্ষিপ্ত জীবনী

    লোকনাথ ব্রহ্মচারীর (Loknath Baba Puja) জন্ম বাংলার ১১৩৭ সালের ভাদ্র মাসে। জানা যায় পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটের চৌরাশি চাকলার অন্তর্গত কচুয়া গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। লোকনাথ ব্রহ্মচারীর পিতামাতার চার সন্তান ছিল। তার মধ্যে চতুর্থ সন্তান ছিলেন লোকনাথ ব্রহ্মচারী। জানা যায়, তাঁর পিতার নাম ছিল রামনারায়ণ ঘোষাল। পিতা নিজেই চেয়েছিলেন তাঁর সন্তান একজন ব্রহ্মচারী হোক। ১১ বছর বয়সে পুত্র লোকনাথ ব্রহ্মচারীর সঙ্গে তিনি পৈতে দেন পুত্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বেণীমাধবেরও। তারপরেই তাঁরা আচার্য গঙ্গোপাধ্যায় নামের এক গুরুর শিষ্যত্ব লাভ করেন বলে জানা যায়। বাংলার ১১৪৮ সালে এই আচার্য গঙ্গোপাধ্যায় দুই শিষ্যকে নিয়ে কালীঘাটের উদ্দেশে রওনা দেন এবং কলকাতায় এসে সাধন ভজন সমেত নানা রকমের আধ্যাত্মিকতার কাজ তাঁরা শুরু করেন। দুই শিষ্য দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত সারা দিনে একবারই অন্ন গ্রহণ করতেন বলে জানা যায়। ভক্তদের বিশ্বাস ৫০ বছর ধরে কঠিন তপস্যা করে  লোকনাথ ব্রহ্মচারী সিদ্ধি লাভ করেন ৯০ বছর বয়সে।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 34: “সাপের ভিতরে বিষ আছে, অন্যকে কামড়ালে মরে যায়, সাপের কিন্তু কিছু হয় না।”

    Ramakrishna 34: “সাপের ভিতরে বিষ আছে, অন্যকে কামড়ালে মরে যায়, সাপের কিন্তু কিছু হয় না।”

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ

    ব্রহ্ম নির্লিপ্ত—জীবেরই সমন্ধে দুঃখাদি (Problem of Evail)

    এই জগতে (Ramakrishna) বিদ্যামায়া অবিদ্যামায়া দুই-ই আছে; জ্ঞান-ভক্তি আছে, আবার কামিনী-কাঞ্চনও আছে, সৎও আছে, অসৎও আছে। ভালও আছে আবার মন্দও আছে। কিন্তু ব্রহ্ম নির্লুপ্ত। ভাল-মন্দ জীবের পক্ষে, সৎ-অসৎ জীবের পক্ষে, তাঁর ওতে কিছুই হয় না।

    যেমন প্রদীপের সম্মুখে কেউ বা ভগবত পড়ছে, আর কেউ বা জাল করছে। প্রদীপ নির্লিপ্ত।

    সূর্য শিষ্টের উপর আলো দিচ্ছে, আবার দুষ্টের উপরও দিচ্ছে।

    যদি বল দুঃখ, পাপ, অশান্তি—এ-সকল তবে কি? তার উত্তরে এই যে, ও-সব জীবের পক্ষে। ব্রহ্ম নির্লিপ্ত। সাপের ভিতরে বিষ আছে, অন্যকে কামড়ালে মরে যায়। সাপের কিন্তু কিছু হয় না।

    ব্রহ্ম অনির্বচনী অব্যপদেশ্যম—The Unknown and Unknowable

    ব্রহ্ম যে কি, মুখে বলা যায় না। সব জিনিস উচ্ছিষ্ট হয়ে গেছে। বেদ, পুরাণ, তন্ত্র, ষড় দর্শন—সব এঁটো হয়ে গেছে! মুখে পড়া হয়েছে, মুখে উচ্চারণ হয়েছে—তাই এঁটো হয়েছে। কিন্তু একটি জিনিস কেবল উচ্ছিষ্ট হয় নাই, সে জিনিসটি ব্রহ্ম। ব্রহ্ম যে কি, আজ পর্যন্ত কেহ মুখে বলতে পারে নাই।

    বিদ্যাসাগর (বন্ধুদের প্রতি)—বা! এটি তো বেশ কথা! আজ একটি নতুন কথা শিখলাম।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—এক বাপের দুটি ছেলে। ব্রহ্মবিদ্যা শিখবার জন্য ছেলে দুটিকে, বাপ আচার্যের হাতে দিলেন। কয়েক বৎসর পরে তারা গুরুগৃহ ফিরে এল, এসে বাপকে প্রণাম করলে। বাপের ইচ্ছা দেখেন, এদের ব্রহ্মজ্ঞান কিরূপ হয়েছে। বড় ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাপ! তুমি তো সব পড়েছ, ব্রহ্ম কিরূপ বল দেখি? বড় ছেলেটি বেদ থেকে নানা শ্লোক বলে বলে ব্রহ্মের স্বরূপ বুঝাতে লাগল! বাপ চুপ করে রইলেন। যখন ছোট ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন, সে হেঁটমুখে চুপ করে রইল। মুখে কোন কথা নাই। বাপ তখন প্রসন্ন হয়ে ছোট ছেলেকে বললেন, বাপু! তুমি একটু বুঝেছ। ব্রহ্ম যে কি। মুখে বলা যায় না।

    আরও পড়ুনঃ “বিদ্যাসাগরের অনেক গুণ…দয়া সর্বজীবে, বিদ্যাসাগর দয়ার সাগর”

    আরও পড়ুনঃ “দক্ষিণেশ্বরের পরমহংস সামান্য নহেন, এক্ষণে পৃথিবীর মধ্যে এত বড় লোক কেহ নাই”

    আরও পড়ুনঃ “দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 33: “এই জগতে বিদ্যামায়া অবিদ্যামায়া দুই-ই আছে, জ্ঞান-ভক্তি আছে, আবার কামিনী-কাঞ্চনও আছে”

    Ramakrishna 33: “এই জগতে বিদ্যামায়া অবিদ্যামায়া দুই-ই আছে, জ্ঞান-ভক্তি আছে, আবার কামিনী-কাঞ্চনও আছে”

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna)—জ্ঞানযোগ বা বেদান্ত বিচার

    বিদ্যাসাগর মহাপণ্ডিত। যখন সংস্কৃত কলেজে পড়িতেন, তখন নিজের শ্রেণীর সর্বোৎকৃষ্ট ছাত্র ছিলেন। প্রতি পরীক্ষায় প্রথম হইতেন এবং স্বর্ণপদকাদি (Medal) বা ছাত্রবৃত্তি পাইতেন। ক্রমে সংস্কৃত কলেজের প্রধান অধ্যাপক হইয়াছিলেন। তিনি সংস্কৃত ব্যাকরণ ও সংস্কৃত কাব্যে বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করিয়াছিলেন। অধ্যবস্যায় গুণে চেষ্টা করিয়া ইংরেজি শিখিয়াছিলেন।

    ধর্ম-বিষয়ে বিদ্যাসাগর কাহাকেও শিক্ষা দিতেন না। তিনি দর্শনাদি গ্রন্থ পড়িয়াছিলেন। মাস্টার একদিন জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, আপনার হিন্দুদর্শন কিরূপ লাগে? তিনি বলিয়াছিলেন, আমার তো বোধ হয়, ওরা যা বুঝাতে গেছে বুঝাতে পারে নাই। হিন্দুদের ন্যায় শ্রাদ্ধাদি ধর্মকর্ম সমস্ত করিতেন, গলায় উপবীত ধারণ করিতেন, বাঙলায় যে-সকল পত্র লিখিতেন, তাহাতে শ্রীশ্রীহরিশরনম ভগবানের এই বন্দনা আগে করিতেন।

    মাস্টার আর একদিন তাঁহার মুখে শুনিয়াছিলেন, তিনি ঈশ্বর সমন্ধে কিরূপ ভাবেন। বিদ্যাসাগর বলিয়াছেন, তাঁকে তো জানবার জো নাই! এখন কর্তব্য কি? আমার মতে কর্তব্য, আমাদের নিজের এরূপ হওয়া উচিত যে, সকলে যদি হয়, পৃথিবী স্বর্গ হয়ে পড়বে। প্রত্যেকের চেষ্টা করা উচিত যাতে জগতের মঙ্গল হয়।

    বিদ্যা ও অবিদ্যার কথা কহিতে কহিতে ঠাকুর ব্রহ্মজ্ঞানের কথা কহিতেছেন। বিদ্যাসাগর মহাপণ্ডিত। ষড় দর্শন পাঠ করিয়া দেখিয়াছেন, বুঝি ঈশ্বরের বিষয় কিছুই জানা যায় না।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ব্রহ্ম—বিদ্যা ও অবিদ্যার পার। তিনি মায়াতীত।

    এই জগতে (Ramakrishna) বিদ্যামায়া অবিদ্যামায়া দুই-ই আছে; জ্ঞান-ভক্তি আছে আবার কামিনী-কাঞ্চনও আছে, সৎও আছে, অসৎও আছে। ভালও আছে আবার মন্দও আছে। কিন্তু ব্রহ্ম নির্লুপ্ত।

    আরও পড়ুনঃ “বিদ্যাসাগরের অনেক গুণ…দয়া সর্বজীবে, বিদ্যাসাগর দয়ার সাগর”

    আরও পড়ুনঃ “দক্ষিণেশ্বরের পরমহংস সামান্য নহেন, এক্ষণে পৃথিবীর মধ্যে এত বড় লোক কেহ নাই”

    আরও পড়ুনঃ “দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 32: “আলু পটল সিদ্ধ হলে তো নরম হয়, তা তুমি তো খুব নরম, তোমার অত দয়া!”

    Ramakrishna 32: “আলু পটল সিদ্ধ হলে তো নরম হয়, তা তুমি তো খুব নরম, তোমার অত দয়া!”

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    শ্রীরামকৃষ্ণকে বিদ্যাসাগরের পূজা সম্ভাষণ

    মিষ্টিমুখের পর ঠাকুর সহাস্যে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে কথা কহিতেছেন। দেখিতে দেখিতে একঘর লোক হইয়াছে, কেহ উপবিষ্ট কেহ দাঁড়াইয়া।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—আজ সাগরে এসে মিললাম। এতদিন খাল বিল হদ্দ নদী দেখেছি, এইবার সাগর দেখছি। (সকলের হাস্য)

    বিদ্যাসাগর (সহাস্যে)—তবে নোনা জল খানিকটা নিয়ে যান!(হাস্য)

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—না গো! নোনা জল কেন? তুমি তো অবিদ্যার সাগর নও, তুমি যে বিদ্যার সাগর! (সকলের হাস্য) তুমি ক্ষীরসমুদ্র (সকালের হাস্য)

    বিদ্যাসাগর–তা বলতে পারেন বটে।

    বিদ্যাসাগর চুপ করিয়া রহিলেন। ঠাকুর কথা কহিতেছেন—

    বিদ্যাসাগরের সাত্ত্বিক কর্ম—“তুমিও সিদ্ধপুরুষ”

    তোমার কর্ম সাত্ত্বিক কর্ম। সত্ত্বের রজঃ। সত্ত্বরগুণ থেকে দয়া হয়। দয়ায় জন্য যে কর্ম করা যায়, সে রাজসিক কর্ম বটে—কিন্তু এ রজোগুণ—সত্ত্বের রজোগুণ, এতে দোষ নাই। শুকদেবাদি লোকশিক্ষার জন্য দয়া রেখেছিলেন ঈশ্বর-বিষয় শিক্ষা দিবার জন্য। তুমি বিদ্যাদান অন্নদান করছ, এও ভাল। নিষ্কাম করতে পারলেই এতে ভগবান লাভ হয়। কেউ করে নামের জন্য, পুণ্যের জন্য, তাদের কর্ম নিস্কাম নয়। আর সিদ্ধ তো তুমি আছই।

    বিদ্যাসাগর—মহাশয় কেমন করে?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) (সহাস্য)—আলু পটল সিদ্ধ হলে তো নরম হয়, তা তুমি তো খুব নরম। তোমার অত দয়া!(হাস্য)

    বিদ্যাসগার (সহাস্য)—কলাই বাটা সিদ্ধ তো শক্তই হয়!(সকলের হাস্য)

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তুমি তা নও গো; শুধু পণ্ডিতগুলো দরকচা পড়া! না এদিক, না ওদিক। শুকুনি খুব উঁচুতে উঠে, তার নজর ভাগাড়। যারা পশু পণ্ডিত শুনতেই পণ্ডিত, কিন্তু তাদের কামিনী-কাঞ্চনে আসক্তি—শকুনি মতো পচা মড়া খুঁজছে। আসক্তি অবিদ্যার সংসারে। দয়া, ভক্তি, বৈরাগ্য বিদ্যার ঐশ্বর্য।

    বিদ্যাসাগর চুপ করিয়া শুনিতেছেন। সকলেই একদৃষ্টে এই আনন্দময় পুরুষকে দর্শন ও তাঁহার কথামৃত পান করিতেছেন।  

    আরও পড়ুনঃ “বিদ্যাসাগরের অনেক গুণ…দয়া সর্বজীবে, বিদ্যাসাগর দয়ার সাগর”

    আরও পড়ুনঃ “দক্ষিণেশ্বরের পরমহংস সামান্য নহেন, এক্ষণে পৃথিবীর মধ্যে এত বড় লোক কেহ নাই”

    আরও পড়ুনঃ “দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 31: “না গো! নোনা জল কেন? তুমি অবিদ্যার সাগর নও, তুমি যে বিদ্যার সাগর, তুমি ক্ষীরসমুদ্র!”

    Ramakrishna 31: “না গো! নোনা জল কেন? তুমি অবিদ্যার সাগর নও, তুমি যে বিদ্যার সাগর, তুমি ক্ষীরসমুদ্র!”

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    শ্রীরামকৃষ্ণকে বিদ্যাসাগরের পূজা ও সম্ভাষণ

    ঠাকুর (Ramakrishna) ভাবাবিষ্ট হইতেছেন ও কিয়ৎক্ষণ ভাবে দাঁড়াইয়া আছেন। ভাব সংবরণ করিবার জন্য মধ্যে মধ্যে বলিতেছেন, জল খাব। দেখিতে দেখিতে বাড়ির ছেলেরা ও বন্ধুরা আসিয়া দাঁড়ালেন।

    ঠাকুর ভাবাবিষ্ট হইয়া বেঞ্চের উপর বসিতেছেন। একটি ১৭/১৮ বছরের ছেলে সেই বেঞ্চে বসিয়া আছে—বিদ্যাসাগরের কাছে পড়াশুনার সাহায্য প্রার্থনা করিতে আসিয়াছে। ঠাকুর ভাবাবিষ্ট, ঋষির অন্তর্দৃষ্টি, ছেলের অন্তরের ভাব সব বুঝিয়াছেন। একটু সরিয়া বসিলেন ও ভাবে বলিতেছেন, মা! এ-ছেলের বড় সাংসারসক্তি! তোমার অবিদ্যার সংসার! এ অবিদ্যার ছেলে!

    যে-ব্যক্তি ব্রহ্মবিদ্যার জন্য ব্যাকুল নয়, শুধু অর্থকারী বিদ্যা উপার্জন তাহার পক্ষে বিড়ম্বনা মাত্র, এই কথা কি ঠাকুর (Ramakrishna) বলিতেছেন?

    বিদ্যাসাগর ব্যস্ত হইয়া একজনকে জল আনিতে বলিলেন ও মাস্টারকে জিজ্ঞাসা করিতেছেন, কিছু খাবার আনিলেন ইনি খাবেন কি? তিনি বলিলেন, আজ্ঞা, আনুন না। বিদ্যাসাগর ব্যস্ত হইয়া ভিতরে গিয়া কতকগুলি মিঠাই আনিলেন ও বলিলেন, এগুলি বর্ধমান থেকে এসেছে। ঠাকুরকে কিছু খাইতে দেওয়া হইল, হাজরা ও ভবনাথ কিছু পাইলেন। মাস্টারকে দিতে আসিলে পর বিদ্যাসাগর বলিলেন, ও ঘরের ছেলে, ওর জন্য ছেলে, ওর জন্য আটকাচ্ছে না। ঠাকুর একটি ভক্তছেলের কথা বিদ্যাসাগরকে বলিতেছেন। সে ছোকরাটি এখানে ঠাকুরের সম্মুখে বসে ছিল। ঠাকুর (Ramakrishna) বলিলেন, এ-ছেলেটি বেশ সৎ আর অন্তঃসার যেমন ফল্গু নদী, উপরে বালি, একটু খুঁড়লেই ভিতরে জল বইছে দেখা যায়!

    মিষ্টিমুখের পর ঠাকুর সহাস্যে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে কথা কহিতেছেন। দেখিতে দেখিতে একঘর লোক হইয়াছে, কেহ উপবিষ্ট কেহ দাঁড়াইয়া।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—আজ সাগরে এসে মিললাম। এতদিন খাল বিল হদ্দ নদী দেখেছি, এইবার সাগর দেখছি। (সকলের হাস্য)

    বিদ্যাসাগর (সহাস্যে)—তবে নোনা জল খানিকটা নিয়ে যান! (হাস্য)

    শ্রীরামকৃষ্ণ—না গো! নোনা জল কেন? তুমি অবিদ্যার সাগর নও, তুমি যে বিদ্যার সাগর! (সকলের হাস্য) তুমি ক্ষীরসমুদ্র (সকালের হাস্য)

    বিদ্যাসাগর–তা বলতে পারেন বটে।

    বিদ্যাসাগর চুপ করিয়া রহিলেন। ঠাকুর কথা কহিতেছেন—

    আরও পড়ুনঃ “বিদ্যাসাগরের অনেক গুণ…দয়া সর্বজীবে, বিদ্যাসাগর দয়ার সাগর”

    আরও পড়ুনঃ “দক্ষিণেশ্বরের পরমহংস সামান্য নহেন, এক্ষণে পৃথিবীর মধ্যে এত বড় লোক কেহ নাই”

    আরও পড়ুনঃ “দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 30: “বালককে বুঝাইলে যেমন নিশ্চিত হয়, ঠাকুরও তেমনি নিশ্চিত হইলেন”

    Ramakrishna 30: “বালককে বুঝাইলে যেমন নিশ্চিত হয়, ঠাকুরও তেমনি নিশ্চিত হইলেন”

    কলিকাতায় শ্রীঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের মিলন

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    গাড়ি রামমোহন রায়ের বাগানবাটির কাছ দিয়া আসিতেছে। মাস্টার ঠাকুরের ভাবান্তর দেখেন নাই, তাড়াতাড়ি বলিতেছেন, এইটি রামমোহন রায়ের বাটী। ঠাকুর বিরক্ত হইলেন; বলিলেন, এখন ও-সব কথা ভাল লাগছে না। ঠাকুর ভাবাবিষ্ট হইতেছেন।

    বিদ্যাসাগরের বাটির সম্মুখে গাড়ি দাঁড়াল। গৃহটি দ্বিতল, ইংরেজ পছন্দ। জায়গায় মাঝখানে বাটী ও জায়গায় চতুর্দিকে প্রাচীর। বাড়ির পশ্চিমধারে সদর দরজা ও ফটক। ফটকটি দ্বারের দক্ষিণদিকে। পশ্চিমের প্রাচির ও দ্বিতল গৃহের মধ্যবর্তী স্থানে মাঝে মাঝে পুষ্পবৃক্ষ। পশ্চিমদিকের নিচের ঘর হইয়া সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিতে হয়। উপরে বিদ্যাসগার থাকেন। সিঁড়ি দিয়া উঠিয়াই উত্তরে একটি কামরা, তাহার পূর্বদিকে হলঘর। হলের দক্ষিণ-পূর্ব ঘরে বিদ্যাসাগর শয়ন করেন। ঠিক দক্ষিণে আর একটি কামরা আছে—এই কয়টি কামরা বহুমূল্য পুস্তক পরিপূর্ণ। দেওয়ালের কাছে সারি সারি অনেকগুলি পুস্তকাধারে অতি সুন্দররূপে বাঁধানো বইগুলি সাজানো আছে। এই হলঘরের পূর্ব সীমান্তে টেবিল ও চেয়ার আছে। বিদ্যাসাগর যখন বসিয়া কাজ করেন, তখন সেইখানে তিনি পশ্চিমাস্য হইয়া বসেন। যাঁহারা দেখাশুনা করিতে আসেন, তাঁহারাও টেবিলে চর্তুদিকে চেয়ারে উপবিষ্ট হন। টেবিলের উপর লিখবার সামগ্রী—কাগজ কলম। দোয়াত, ব্লটিং অনেকগুলি চিঠিপত্র বাঁধানো হিসাব-পত্রের খাতা দু-চারখানি বিদ্যাসাগরের পাঠ্যপুস্তক রহিয়াছে—দেখিতে পাওয়া যায়। ওই কাষ্ঠাসনের ঠিক দক্ষিণের কামরাতে খাট-বিছানা আছে—সেইখানেই ইনি শয়ন করেন।

    টেবিলের উপর যে—পত্রগুলি চাপা রহিয়াছে—তাহাতে কি লেখা রহিয়াছে? কোন বিধবা হয়তো লিখিয়াছে, আমরা অপোগণ্ডু শিশু অনাথ, দেখিবার কেহ নাই, আপনাকে দেখিতে হইবে। কেহ লিখিয়াছেন, আপনি খরমাতার চলিয়া গিয়াছিলেন, তাই আমরা মাসোহারা ঠিক সময় পাই নাই, বড় কষ্ট হইয়াছে। কোন গরিব লিখিয়াছে, আপনার স্কুলে ফ্রি ভর্তি হইয়াছি, কিন্তু আমার বই কিনিবার ক্ষমতা নাই। কেহ লিখিয়াছেন, আমরা পরিবারবর্গ খেতে পাচ্ছে না—আমাকে একটি চাকরি করিয়া দিতে হইবে। তাঁর স্কুলের কোন শিক্ষক লিখিয়াছেন, আমরা ভগিনী বিধবা হইয়াছে, তাহার সমস্ত ভার আমাকে লইতে হইয়াছে। এ বেতনে আমরা চলে না। হয়তো কেহ বিলাত হইতে লিখিয়াছেন, আমি এখানে বিপদগ্রস্থ, আপনি দীনের বন্ধু, টাকা পাঠাইয়া আসন্ন বিপদ হইতে আমাকে রক্ষা করুন। কেহ বা লিখিয়াছেন, অমুক তারিখে সালিসির দিন নির্ধারিত, আপনি সেদিন আসিয়া আমাদের বিবাদ মিটাইয়া দিবেন।

    ঠাকুর গাড়ি হইতে অবতরণ করিলেন। মাস্টার পথ দেখাইয়া বাটির মধ্যে লইয়া যাইতেছেন। উঠানে ফুলগাছ, তাহার মধ্য দিয়া আসিতে আসিতে ঠাকুর বালকের ন্যায় বোতাম হাত দিয়া মাস্টারকে জিজ্ঞাসা করিতেছেন, জামার বোতাম খোলা র‍য়েছে,–এতে কিছু দোষ হবে না? গায়ে একটি লংক্লথের জামা, পরনে লালপেরে কাপড়, তাহার আঁচলটি কাঁধে ফেলা। পায়ে বার্নিশ করা চটি জুতা। মাস্টার বলিলেন, আপনিও ওর জন্য ভাবেন না, আপনার কিছুতে দোষ হবে না; আপনার বোতাম দেবার দরকার নাই। বালককে বুঝাইলে যেমন নিশ্চিত হয়, ঠাকুরও তেমনি নিশ্চিত হইলেন। 

    আরও পড়ুনঃ “বিদ্যাসাগরের অনেক গুণ…দয়া সর্বজীবে, বিদ্যাসাগর দয়ার সাগর”

    আরও পড়ুনঃ “দক্ষিণেশ্বরের পরমহংস সামান্য নহেন, এক্ষণে পৃথিবীর মধ্যে এত বড় লোক কেহ নাই”

    আরও পড়ুনঃ “দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 29: “বিদ্যাসাগরের অনেক গুণ…দয়া সর্বজীবে, বিদ্যাসাগর দয়ার সাগর”

    Ramakrishna 29: “বিদ্যাসাগরের অনেক গুণ…দয়া সর্বজীবে, বিদ্যাসাগর দয়ার সাগর”

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    বিদ্যাসাগর

    সিঁড়ি দিয়া উঠিয়া একেবারে প্রথম কামারাটিতে (উঠিবার পর ঠিক উত্তরের কামরাটিতে) ঠাকুর ভক্তগণসঙ্গে প্রবেশ করিতেছেন। বিদ্যাসাগর কামরার উত্তরপার্শ্বে দক্ষিণাস্য হইয়া বসিয়া আছেন; সম্মুখে একটি চারকোণা লম্বা পালিশ করা টেবিল। টেবিলের পূর্বধারে একখানি পেছন দিকে হেলান-দেওয়া বেঞ্চ। টেবিলের দক্ষিণপার্শ্বে ও পশ্চিমপার্শ্বে কয়েকখানি চেয়ার। বিদ্যাসাগর দু-একটি বন্ধুর সহিত কথা কহিতেছিলেন।

    ঠাকুর (Ramakrishna) প্রবেশ করিলেন পর বিদ্যাসাগর দণ্ডায়মান হইয়া অভ্যর্থনা করিলেন। ঠাকুর পশ্চিমাস্য, টেবিলের পূর্বপার্শ্বে দাঁড়াইয়া আছেন। বামহস্ত টেবিলের উপর। পশ্চাতে বেঞ্চখানি। বিদ্যাসাগরকে পূর্বপরিচিতের ন্যায় একদৃষ্টে দেখিতেছেন ও ভাবে হাসিতেছেন।

    বিদ্যাসাগরের বয়স আন্দাজ ৬২/৬৩, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) অপেক্ষা ১৬/১৭ বৎসর বড় হইবেন। পরনে থান কাপড়, পায়ে চটি জুতা, গায়ে একটি হাত-কাটা ফ্লানেলের জামা। মাথার চতুপার্শ্বে উড়িষ্যাবাসীদের মতো কামানো। কথা কহিবার সময় দাঁতগুলি উজ্জ্বল দেখিতে পাওয়া যায়,–দাঁতগুলি সমস্ত বাঁধানো। মাথাটি খুব বড়। উন্নত ললাট ও একটু খর্বাকৃতি। ব্রাহ্মণ—তাই গলায় উপবীত।

    বিদ্যাসাগরের অনেক গুণ। প্রথম—বিদ্যানুরাগ। একদিন মাস্টার কাছে এই বলতে বলতে সত্য সত্য কেঁদেছিলেন, আমার তো খুব ইচ্ছা ছিল যে, পড়াশুনা করি, কিন্তু কই তা হল! সংসারে পড়ে কিছুই পেলাম না। দ্বিতীয়—দয়া সর্বজীবে, বিদ্যাসাগর দয়ার সাগর। বাছুরেরা মায়ের দুধ পায় না দেখিয়া নিজেকে কয়েক বৎসরের ধরিয়া দুধ খাওয়া বন্ধ করিয়াছিলেন, শেষে শরীর অতিশয় অসুস্থ হওয়াতে অনেকদিন পর আবার ধরিয়াছিলেন। গাড়িতে চড়িতেন না– ঘোড়া নিজের কষ্ট বলিতে পারে না। একদিন দেখলেন, একটি মুটে কলেরা রোগে আক্রান্ত হইয়া রাস্তায় পড়িয়া আছে। দেখিয়া নিজের কোলে করিয়া তাহাকে বাড়িতে আনিলেন ও সেবা করিতে লাগিলেন। তৃতীয়–স্বাধীনতাপ্রিয়তা। কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে একমত না হওয়াতে, সংস্কৃত কলেজের প্রধান অধ্যক্ষের (প্রিন্সিপ্যাল) কাজ ছাড়িয়া দিলেন। চতুর্থ—লোকাপেক্ষা করিতেন না। একটি শিক্ষককে ভালবাসিতেন; তাঁহার কন্যার বিবাহের সময়ে নিজে আইবুড়ো ভাতের কাপড় বগলে করে এসে উপস্থিত। পঞ্চম—মাতৃভক্তি ও মনের বল। মা বলিয়াছেন, ঈশ্বর তুমি যদি এই বিবাহে (ভ্রাতার বিবাহে) না আস তাহলে আমরা ভারী মন খারাপ হবে, তাই কলিকাতা হইতে হাঁটিয়া গেলেন। পথে দামোদর নদী, নৌকা নাই, সাঁতার দিয়া পার হইয়া গেলেন। সেই ভিজা কাপড়ে বিবাহ রাত্রেই বীরসিংহায় মার কাছে গিয়া উপস্থিত! বলিলেন মা এসেছি!

    আরও পড়ুন: “আমাকে বিদ্যাসাগরের কাছে কি লইয়া যাইবে? আমার দেখিবার বড় সাধ হয়”

    আরও পড়ুনঃ “সব ত্যাগ করে ভগবানকে ডাক–তিনিই সত্য আর সব অনিত্য”

    আরও পড়ুনঃ“এই স্থানে নরেন্দ্রের গান ঠাকুর প্রথমে শুনেন ও তাঁহাকে দক্ষিণেশ্বরে যাইতে বলেন”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 28: “আমাকে বিদ্যাসাগরের কাছে কি লইয়া যাইবে? আমার দেখিবার বড় সাধ হয়”

    Ramakrishna 28: “আমাকে বিদ্যাসাগরের কাছে কি লইয়া যাইবে? আমার দেখিবার বড় সাধ হয়”

    কলিকাতায় শ্রীঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের মিলন

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    বিদ্যাসাগরের বাটি

    আজ শনিবার, (২১ শে) শ্রাবণের কৃষ্ণা ষষ্ঠী তিথি, ৫ই অগষ্ট ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দ। বেলা ৪ টা বাজিবে।

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলিকাতার রাজপথ দিয়া ঠিকা গাড়ি করিয়া বাদুড়াবাগানের দিকে আসিতেছেন। সঙ্গে ভবনবাথ, হাজার ও মাস্টার। বিদ্যাসাগরের বাড়ি যাইবেন।

    ঠাকুরের জন্মভূমি, হুগলী জেলার অন্তঃপাতী কামারপুকুর গ্রাম। এই গ্রামটি বিদ্যাসাগরের জন্মভূমি বীরসিংহ নামক গ্রামের নিকটবর্তী। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বাল্যকাল হইতে বিদ্যাসাগরের দয়ার কথা শুনিয়া আসিতেছেন। দক্ষিণেশ্বরে কালীবাড়িতে থাকিতে থাকিতে তাঁহার পাণ্ডিত্য ও দয়ার কথা প্রায় শুনিয়া থাকেন। মাস্টার বিদ্যাসাগররের স্কুলে অধ্যাপনা করেন শুনিয়া তাঁহাকে বলিয়াছিলেন, আমাকে বিদ্যাসাগরের কাছে কি লাইয়া যাইবে? আমার দেখিবার বড় সাধ হয়। মাস্টার বিদ্যাসাগরকে সেই কথা বলিলেন। বিদ্যাসাগর আনন্দিত হইয়া তাঁহাকে একদিন শনিবার ৪ টার সময় সঙ্গে করিয়া আনিতে বলিলেন। একবার মাত্র জিজ্ঞাসা করিলেন, কিরকম পরমহংস? তিনি কি গেরুয়া কাপড় পরে থাকেন? মাস্টার বলিয়েছিলেন, আজ্ঞা না, তিনি এক অদ্ভুত পুরুষ, লাল পেড়ে কাপড় পড়েন, জামা পরেন, বার্নিশ করা জুতা পরেন, রাসমণির কালীবাড়িতে একটি ঘরের ভিতর বাস করেন, সেই ঘরে তক্তপোশ পাতা আছে—তাহার উপর বিছানা, মশারি আছে, সেই বিছানায় শয়ন করেন। কোন বাহ্যিক চিহ্ন নাই-তবে ঈশ্বর বই আর কিছু জানেন না। অহর্নিশ তাঁহার চিন্তা করেন।

    গাড়ি দক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়ি হইতে ছাড়িয়াছে। পোল পার হইয়া শ্যামবাজার হইয়া ক্রমে আমহার্ষ্ট ষ্ট্রীটে আসিয়াছে। ভক্তেরা বলিতেছেন, এইবার বাদুড়বাগানের কাছে আসিয়াছে। ঠাকুর বালকের ন্যায় আনন্দ গল্প করিতে করিতে আসিতেছেন। আমহার্ষ্ট ষ্ট্রীটে আসিয়া তাঁহার ভাবান্তর হইল, যেন ঈশ্বরাবেশ হইবার উপক্রম।

    আরও পড়ুনঃ “সব ত্যাগ করে ভগবানকে ডাক–তিনিই সত্য আর সব অনিত্য”

    আরও পড়ুনঃ“এই স্থানে নরেন্দ্রের গান ঠাকুর প্রথমে শুনেন ও তাঁহাকে দক্ষিণেশ্বরে যাইতে বলেন”

    আরও পড়ুনঃ “দক্ষিণেশ্বরের পরমহংস সামান্য নহেন, এক্ষণে পৃথিবীর মধ্যে এত বড় লোক কেহ নাই”

    আরও পড়ুনঃ “দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 27: “সব ত্যাগ করে ভগবানকে ডাক–তিনিই সত্য আর সব অনিত্য”

    Ramakrishna 27: “সব ত্যাগ করে ভগবানকে ডাক–তিনিই সত্য আর সব অনিত্য”

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ

    শ্রীরামকৃষ্ণের (Ramakrishna) কেশবের প্রতি স্নেহজগন্মাতার কাছে ডাবচিনি মানা

    আজ কমলকুটিরে সেই বৈঠকখানাঘরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে উপবিষ্ট। ২রা এপ্রিল ১৮৮২, বেলা ৫টা। কেশব ভিতরের ঘরে ছিলেন, তাঁহাকে সংবাদ দেওয়া হইল। তিনি জামা-চাদর পরিয়া আসিয়া প্রণাম করিলেন। তাঁহার ভক্তবন্ধু কালীনাথ বসু পীড়িত, তাঁহাকে দেখিতে যাইতেছেন। ঠাকুর আসিয়াছেন, কেশবের আর যাওয়া হইল না। ঠাকুর বলিতেছেন, তোমার অনেক কাজ, আবার খপরের কাগজ লিখতে হয়; সেখানে (দক্ষিণেশ্বরে) যাবার অবসর নাই; তাই আমিই তোমায় দেখতে এসেছি। তোমার অসুখ শুনে ডাব-চিনি মেনেছিলুম; মাকে বললুম, মা! কেশবের যদি কিছু হয়, তাহলে কলিকাতায় গেলে কার সঙ্গে কথা কইব।

    শ্রীযুক্ত প্রতাপাদি ব্রাহ্মভক্তদের সহিত শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) অনেক কথা কহিয়াছেন। কাছে মাস্টার বসিয়া আছেন দেখিয়া তিনি কেশবকে বলিতেছেন, ইনি কেন ওখানে (দক্ষিণেশ্বরে) যান না; জিজ্ঞাসা করত গা; এত ইনি বলেন, মাগছেলেদের উপর মন নাই। মাস্টার সবে এক মাস ঠাকুরের কাছে যাতায়াত করিতেছেন। শেষে যাইতে কয়দিন বিলম্ব হইয়াছে তাই ঠাকুর এরূপ কথা বলিতেছেন। ঠাকুর বলিয়া দিয়াছিলেন, আসতে দেরি হলে আমায় পত্র দেবে।

    ব্রাহ্মভক্তেরা শ্রীযুক্ত সমাধ্যায়ীকে দেখাইয়া ঠাকুরকে বলিতেছেন, ইনি পণ্ডিত, বেদাদি শাস্ত্র বেশ পড়িয়াছেন। ঠাকুর বলিতেছেন, হাঁ এঁর চক্ষু দিয়া ভিতরটি দেখা যাচ্ছে, যেমন সার্সীর দরজার ভিতর দিয়া ঘরের ভিতরকার জিনিস দেখা যায়।

    শ্রীযুক্ত ত্রৈলোক্য গান গাইতেছেন। গান গাইতে গাইতে সন্ধ্যার বাতি জ্বালা হইল, গান চলিতে লাগিলেন। গান শুনিতে শুনিতে ঠাকুর হঠাৎ দণ্ডায়মান—আর মার নাম করিতে করিতে সমাধিস্থ। কিঞ্চিৎ প্রকৃতিস্থ হইয়া নিজেই নৃত্য করিতে করিতে গান ধরিলেনঃ

    সুরা পান করি না আমি সুধা খাই জয় কালী বলে,

    মন-মাতালে মাতাল করে মদ-মাতালে মাতাল বলে।

    গুরুদত্ত গুড় লয়ে, প্রবৃত্তি তায় মশলা দিয়ে;

    জ্ঞান শুঁড়িতে চোঁয়ায় ভাঁটি পান করে মোর মন মাতালে।

    মূল মন্ত্র যন্ত্রভরা, শোধন করি বলে তারা;

    প্রসাদ বলে এমন সুরা খেলে চতুর্বর্গ মেলে।

    শ্রীযুক্ত কেশবকে ঠাকুর স্নেহপূর্ণ নয়নে দেখিতেছেন। যেন কত আপনার লোক; আর যেন ভয় করিতেছেন, কেশব পাছে অন্য কারু, অর্থাৎ সংসারে হয়েন! তাঁহার দিকে তাকাইয়া আবার গান ধরিলেন;

    কথা বলতে ডরাই; না বললেও ডরাই

    মনের সন্দ হয়; পাছে তোমা ধনে হারাই হারাই।।

    আমরা জানি যে মন-তোর; দিলাম তোরে সেই মন্তোর।

    এমন মন তোর, যে মন্ত্রে বিপদেতে তরী তারই।।

    আমরা জানি যে মন-তোর সেই মন্তোর; এখন মনতোর। অর্থাৎ সব ত্যাগ করে ভগবানকে ডাক,–তিনিই সত্য আর সব অনিত্য; তাঁকে না লাভ করলে কিছুই হল না! এই মহামন্ত্র।

    আবার উপবেশন করিয়া ভক্তদের সঙ্গে কথা কহিয়াছেন।

    তাঁহাকে জল খাওয়াইবার উদযোগ হইতেছে। হলঘরের একপাশে একটি ব্রাহ্মভক্ত পিয়ানো বাজাইতেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) হাস্যবদন, বালকের ন্যায় পিয়ানোর কাছে গিয়া দাঁড়াই দেখিতেছেন। একটু পরেই অন্তঃপুরে তাঁহাকে লইয়া যাওয়া হইল। জল খাইবেন। আর মেয়েরাও প্রণাম করিবেন।

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জলসেবা হইল। এইবারেই তিনি গাড়িতে উঠিলেন। ব্রাহ্মভক্তেরা সকলেই গাড়ির কাছে দাঁড়াইয়া আছেন। কমলকুটির হইতে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরাভিমুখে যাত্রা করিল।

    আরও পড়ুনঃ“এই স্থানে নরেন্দ্রের গান ঠাকুর প্রথমে শুনেন ও তাঁহাকে দক্ষিণেশ্বরে যাইতে বলেন”

    আরও পড়ুনঃ “দক্ষিণেশ্বরের পরমহংস সামান্য নহেন, এক্ষণে পৃথিবীর মধ্যে এত বড় লোক কেহ নাই”

    আরও পড়ুনঃ “দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Rash Behari Bose: আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন তাঁর হাতেই, আজ বিপ্লবী রাসবিহারী বোসের জন্মদিন

    Rash Behari Bose: আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন তাঁর হাতেই, আজ বিপ্লবী রাসবিহারী বোসের জন্মদিন

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মহান বিপ্লবী রাসবিহারী বোসের জন্মদিন আজ। ১৮৮৬ সালের ২৫ মে বর্ধমান জেলার (বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান) সুবলদহ গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। বিপ্লবী রাসবিহারী বোসের (Rash Behari Bose) রোমহর্ষক কর্মকাণ্ড, স্বদেশপ্রম, দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম তাঁকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। রাসবিহারী বোস স্থান পেয়েছেন সাহিত্যেও। অনেকের মতে, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের সব্যসাচী চরিত্র যেন রাসবিহারী বোসের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।

    আমি রাসবিহারীকে দেখেছি 

    আরও বিভিন্ন সাহিত্যে তুলে ধরা হয়েছে বিপ্লবীর (Rash Behari Bose) বীরত্ব গাধা। এমনই একটি বই হল – ‘আমি রাসবিহারীকে দেখেছি’, লেখক নারায়ণ সান্যাল। এই বইতে নারায়ণ সান্যাল লিখছেন, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে লোকটা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে, সঙ্গী আছেন নদীয়ার বসন্ত বিশ্বাস। হঠাৎই তিনি অল্পবয়সী সঙ্গীকে বললেন, ‘‘ভাল দেখে দুটো পাটনার টিকিট নিয়ে আয়।’’ লোকটাকে এর আগে দেখেনি বসন্ত বিশ্বাস! তারপর এই ধরনের কথাবার্তার জন্য ঠিকঠাক বনিবনাও হচ্ছিল না। সে বলল, ‘‘টিকিট আবার ভাল দেখে খারাপ দেখে হয় নাকি!!” আহ! কথা বাড়াস নি, টিকিট নিয়ে আয়। টিকিট এল পাটনার। লোকটি বসন্ত বিশ্বাসকে নিয়ে ছুটে গিয়ে উঠল দেরাদুন এক্সপ্রেসে। বসন্ত বিশ্বাস এবার নিশ্চিত হল লোকটা পাগল। ট্রেনে উঠেই বাথরুমে। বহুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে বললেন, ‘‘দেখিস নি একটা টিকটিকি আমাকে ফলো করছিল, বেচারা কাল সকালে পাটনায় নেমে আমাকে খুঁজবে, ভেরি প্যাথেটিক।’’ লেখকের আরও সংযোজন, ‘‘দিল্লির বুকে বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জের ওপর বোমা পড়ল। ওদিকে দেরাদুনে সন্ত্রাস বিরোধী সভা শুরু হল। সভাপতি রাসবিহারী বোস (Rash Behari Bose)। সেকি ভাষণ!! বন্ধু পুলিশ কী করছিল! গোয়েন্দারা এখন কোথায়!! এ যে ভারত আত্মার ওপর হামলা! সারা পৃথিবী আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। এমন ঘৃণ্য ঘটনা যারা ঘটায় তাদের দিল্লির চাঁদনি চকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া উচিত! পিছনের সারিতে বসে এই ভাষণ শুনছিল বসন্ত বিশ্বাস। সদ্য সে হার্ডিঞ্জকে বোমা মেরে এসেছে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না সে। এসব কথা কে বলছেন? যিনি নিজের হাতে  আমাকে বোমা বানাতে শিখিয়েছিলেন! যিনি নিজে বোমা নিক্ষেপের সময় আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শ্রদ্ধায় ভক্তিতে মাথা নত হয় তার।’’

    ব্রিটিশ পুলিশ অতি সক্রিয় হয়েও ধরতে পারেনি তাঁকে  

    রাসবিহারী বোস (Rash Behari Bose) সম্পর্কে ওই বইতে আরও লেখা রয়েছে, সুনীল ঘোষ, দুঁদে গোয়েন্দা! স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন ‘‘ঘড়িয়ালটাকে আমি প্রচুর টাকা দিয়েছি, রাজভক্ত কর্মচারী হিসেবে বিপ্লবীদের ধরিয়ে দেওয়া নাকি তার কর্তব্য!! তাকে আমি এজেন্ট রেখেছিলাম ! আমার কাছে টাকা নিয়ে সে বিপ্লবীদের জন্য বোমা বানাতো।’’ সমগ্র ব্রিটিশ প্রশাসনকে চোখের জলে, নাকের জলে করে ছেড়েছিলেন। তিনিই ছিলেন একমাত্র বিপ্লবী যাঁকে শেষ দিন পর্যন্ত অতিসক্রিয় হয়েও ব্রিটিশ পুলিশ ধরতে পারেনি।

    প্রাথমিক জীবন

    মাত্র তিন বছর বয়সেই রাসবিহারী বোসের মাতৃদেবী পরলোক গমন করেন এরপরে তিনি তাঁর মামার কাছে মানুষ হন। জানা যায় রাসবিহারী বসু প্রাথমিকভাবে তাঁর দাদু কালীচরণ বোসের তত্ত্বাবধানে সুবলদহে এবং পরবর্তীকালে চন্দননগরের ডুপ্লে কলেজে শিক্ষা লাভ করেন। তৎকালীন সময়ে সারা দেশে ব্রিটিশ শাসন থাকলেও চন্দননগর ফরাসি শাসনের অধীনে ছিল। বাল্যকালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা আনন্দমঠ উপন্যাস পড়ে তিনি অনুপ্রাণিত হন। তাঁর জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষণ ঘটে স্বামী বিবেকানন্দের বিভিন্ন লেখা এবং বক্তৃতা পড়ে। জানা যায়, বিপ্লবী তাঁর বাবার ইচ্ছায় সিমলা চলে যান এবং সেখানে সরকারী প্রেসে কাজ করতে থাকেন। এরপর সেখান থেকে এক সহকর্মীর পরামর্শে বিপ্লবী মহানায়ক প্রমথনাথ ঠাকুরের বাড়িতে দেহরাদুনে থাকতে শুরু করেন। সেখানে ‘দেরাদুন ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউশন’-এ কেরানির চাকরি করতে থাকেন তিনি।

    ১৯১২ সালে বড়লাটের ওপর বোমা নিক্ষেপ

    ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পরে বিভিন্ন বিপ্লবী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়তে থাকেন রাসবিহারী বসু (Rash Behari Bose)। তিনি ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের (বাঘা যতীন)। ১৯১২ সালে ২৩ ডিসেম্বর দিল্লিতে তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের ওপর বোমা নিক্ষেপ করা হয়। যার মূল কারিগর ছিলেন রাসবিহারী বসু নিজে। সঙ্গী ছিলেন দুজন, বসন্ত বিশ্বাস ও অবোধ বিহারী বোস। দিল্লির শোভাযাত্রায় মহিলার বেশে বোমা ছোঁড়ার আগে বসন্ত বিশ্বাস প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন দেরাদুনে। প্রশিক্ষক ছিলেন রাসবিহারী বসু। টিনের সিগারেটের কৌটোতে পাথর ভরে, তা ছুড়তেন বসন্ত বিশ্বাস। ১৯১২ সালে ২৩ ডিসেম্বর বড়লাট হাতির পিঠে সওয়ার ছিলেন। সেসময় বোমা ছোড়া হয় তাঁর ওপরে। বোমার আঘাতে জখম বড়লাটকে ডাক্তার এসি সেনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। অবোধ বিহারী ও বসন্ত বিশ্বাস দুজনেরই ফাঁসি হয়। কিন্তু রাসবিহারী বোসকে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ পুলিশ ধরতে পারেনি।

    সেনা বিদ্রোহের প্রচেষ্টা 

    বড়লাট মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলেও রাসবিহারী বসুর বিপ্লবী প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। ১৯১৪ সাল নাগাদ, ভারতের বিপ্লবী কাজকর্মের জন্য আমেরিকা, কানাডা থেকে প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক পদার্থ ভারতে আনা হয়েছিল। এই কাজগুলি করত মূলত আমেরিকার গদর পার্টি। এই সময়ে সামনে আসেন বিষ্ণু গনেশ পিংলার নাম। যিনি আমেরিকারতে একজন প্রশিক্ষিত গদর পার্টির নেতা। তিনি বারাণসীতে রাসবিহারী বোসের সঙ্গে দেখা করেন এবং এক বড় বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। সেই মতো ১৯১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীতে বিপ্লব করার দিনক্ষণ স্থির করা হয়। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, সমস্ত পুলিশ ফাঁড়িগুলিকে দখল করে নেওয়া হবে, এমন পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু মাত্র ছয় দিন আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি কৃপাল সিং এর বিশ্বাসঘাতকতায় এই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

    ছদ্মবেশে দেশ ত্যাগ ও জাপানে গিয়ে বিবাহ 

    এরপরেই ওই বছরেই অর্থাৎ ১৯১৫ সালের ১২ মে রাজ রাসবিহারী বসু ছদ্মবেশে কলকাতা ত্যাগ করেন। তিনি রাজা পিএন ঠাকুর হিসেবে জাপানে যান এবং নিজেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দূর সম্পর্কের আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দেন। সে মতো পাসপোর্টও তিনি বানিয়েছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক বলেন যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি অবগত ছিলেন রাসবিহারী বসুর এই ছদ্মবেশ সম্পর্কে। ১৯১৫ সালের ২২ মে সিঙ্গাপুরে এবং ওই বছরের জুন মাসে তিনি টোকিওতে পৌঁছান। ১৯১৫ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত রাসবিহারী বসু সতেরোবার তাঁর আবাসস্থল পরিবর্তন করেন বলে জানা যায়। পরবর্তীকালে তিনি বিয়ে করেন জাপানেই এবং সেখানকার নাগরিকত্ব নেন। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল তোসিকো। তাঁদের দুই সন্তান ছিল। একটি ছেলে এবং অপরটি মেয়ে। ছেলের নাম ছিল মাসাহিদ আর মেয়ের নাম ছিল তেতাকু।

    আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন 

    ১৯৪২ সালের ২৮ মার্চ টোকিও-তে একটি সম্মেলনের পরে তিনি ‘ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগ’ কে প্রতিষ্ঠা করেন। এরপরেই সেই লীগের সভাপতি করার কথা ঘোষণা করেন সুভাষচন্দ্র বসুকে। জাপানিদের হাতে বন্দি ভারতীয় সেনাদের ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগ এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগদান করানো হয়, যা আজাদ হিন্দ ফৌজ নামে পরিচিত। ১৯৪৫ সালের ২১ জানুয়ারি রাসবিহারী বসু (Rash Behari Bose), দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই টোকিওতে প্রয়াত হন। জাপান সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করে। ‘দ্য সেকেন্ড অর্ডার অফ মেরিট অফ দ্য রাইসিং সান’ সম্মান লাভ করেন তিনি।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

LinkedIn
Share