Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Jharkhand: ঝাড়খণ্ডের অন্যতম শক্তিপীঠ উগ্রতারা ছিন্নমস্তা মন্দির, দুর্গাপুজো হয় টানা ১৬ দিন ধরে!

    Jharkhand: ঝাড়খণ্ডের অন্যতম শক্তিপীঠ উগ্রতারা ছিন্নমস্তা মন্দির, দুর্গাপুজো হয় টানা ১৬ দিন ধরে!

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের নিকটতম প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) লাতেহার জেলা বিখ্যাত তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। এখানকার গভীর-অগভীর অরণ্য, বন্যপ্রাণী, ঝর্ণা, পাহাড় সহজেই যে কোনও প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকের হৃদয় জয় করে নিতে পারে। কিন্তু লাতেহার মানেই কি শুধু বেতলা অরণ্য অথবা নেতারহাট? এর বাইরেও এই অঞ্চলে রয়েছে এমন কিছু স্থান, যেগুলির আকর্ষণও কিন্তু কোনও অংশে কম নয়।এমনই একটি স্থান হল টোরির উগ্রতারা ছিন্নমস্তা মন্দির বা উগ্রতারা নগর ভগবতী মন্দির। প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন এই মন্দিরটি ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে নির্মাণ করেন টোরির রাজা। স্বয়ং রানী অহল্যা বাই এই মন্দিরে পুজো দিয়ে গিয়েছেন। ঝাড়খণ্ডের অন্যতম শক্তিপীঠ বলে এই মন্দিরকে মান্যতা দেন ভক্তজনেরা। এখানে টানা ১৬ দিন ধরে দুর্গাপুজো হয়, যা সচরাচর অন্য কোথাও দেখা যায় না।

    দূর দূরান্ত থেকে আসেন ভক্তরা (Jharkhand) 

    মন্দির স্থাপনের পর থেকেই এখানকার পরম্পরা অনুযায়ী ‘জিউনিয়া তেওহার’-এর দ্বিতীয় দিন মায়ের পবিত্র কলস স্থাপন করা হয় এবং মা অষ্টাদশভূজার পুজো শুরু হয়। তার পর থেকে ভক্তি সহকারে এবং বিবিধ আচার মেনে ১৬ দিন ধরে মায়ের পুজো হয়। এই সময় দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন এই মন্দিরে। শুধু মাত্র ঝাড়খণ্ড থেকেই নয়, এখানে পুজো দিয়ে মনস্কামনা পূর্ণ করার উদ্দেশ্য নিয়ে ভক্তরা আসেন পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা থেকেও। মূলত মিছরি এবং নারকেল দিয়ে মায়ের পুজো দেওয়া হয়। তবে পশুবলি দেওয়ার প্রথাও আছে এখানে।

    বেতলা থেকে সময় লাগে তিন-চার ঘণ্টা

    লাতেহার শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে এই মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৩৮ কিমি। চটকা-চতরা মূখ্য মার্গে (Jharkhand) অবস্থিত এই মন্দিরে পৌঁছনোর সড়ক পথ আছে। টোরি শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১০ কিমি। আর রাঁচি থেকে টোরির দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিমি। যাওয়া যায় বেতলা অরণ্য থেকেও। বেতলা থেকে যেতে সময় লাগে প্রায় তিন-চার ঘণ্টা। এই সমগ্র পথেই রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি পর্যটন স্থল। ঘুরে নেওয়া যায় সেগুলোও। আর যাতায়াতের পথের দৃশ্যও বেশ মনোরম।

    যাতায়াত এবং থাকা (Jharkhand)

    যাতায়াত-রাঁচি বা বেতলা, দুই জায়গা থেকেই এই মন্দির দর্শন করে আবার ফিরে গিয়ে রাত্রিবাস করা যায় রাঁচি বা বেতলায়। সেক্ষেত্রে ট্রেনে এসে রাঁচি বা বেতলা থেকে গাড়ি নিয়ে আসাই সুবিধার। 
    থাকা খাওয়া-রাঁচিতে রয়েছে প্রচুর হোটেল। এছাড়াও এই পথে রয়েছে বেশ কিছু বন বাংলো। বুকিং করার জন্য যোগাযোগ করতে হবে ডিএফও-র সঙ্গে। প্রয়োজনে ফোন করা যেতে পারে ০৯৯৫৫৫২৭৩৭১ নম্বরে। আর গাড়ি বা জঙ্গল সাফারির জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে ০৬২০৬২২০৩১৪ নম্বরে (Jharkhand)।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  WhatsappFacebookTwitterTelegram এবং Google News পেজ।

  • Jagaddala Mahavihara: প্রাচীন ভারতের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়! কেমন ছিল জগদ্দলা মহাবিহারের রোজকার জীবন?

    Jagaddala Mahavihara: প্রাচীন ভারতের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়! কেমন ছিল জগদ্দলা মহাবিহারের রোজকার জীবন?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জগদ্দলা মহাবিহারের (Jagaddala Mahavihara) ধ্বংসাবশেষ বর্তমান বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত। এই ভৌগোলিক অঞ্চল প্রাচীনকালে বরেন্দ্রভূমি নামেই পরিচিত ছিল। জগদ্দলা মহাবিহার ছিল বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহার ও বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র। ঐতিহাসিকদের মতে, এই মহাবিহারকে স্থাপন করেছিলেন পাল রাজবংশের রাজা রামপাল। ১০৮৪ খ্রিস্টাব্দে এই মহাবিহার প্রতিষ্ঠিত হয় বলে জানা যায়। ঐতিহাসিকদের মতে জগদ্দলা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে গ্রানাইট পাথর দিয়ে। সাধারণভাবে তৎকালীন সময়ে যেকোনও স্থাপত্য নির্মাণ করা হতো কালো ব্যাসল্ট পাথর এবং বেলে পাথর দিয়ে। কিন্তু গ্রানাইট ছিল বিরল এবং তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সেই গ্রানাইট জগদ্দলা মহাবিহারে ব্যবহার করা হয়েছিল। সন্ধ্যাকর নন্দীর রচিত রামচরিতে জগদ্দলা মহাবিহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। আমাদের প্রতিবেদনে জগদ্দলা  বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য দিক নিয়ে আমরা আলোচনা করব। 

    নালন্দা ও বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতনের পরে জগদ্দলাতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আশ্রয় নেন

    জানা যায় নালন্দা এবং বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতনের পরে অনেক বৌদ্ধ পণ্ডিত জগদ্দলা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jagaddala Mahavihara) চলে আসেন এবং এখান থেকেই গবেষণা ও অধ্যাপনা চালাতে থাকেন। ১৯৯৯ সালে জগদ্দলা  বিশ্ববিদ্যালয়কে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রস্তাব করা রাখা হয়েছিল। জানা যায়, বৌদ্ধ ধর্মের তিনটি ভাগ ছিল হীনযান, মহাযান এবং বজ্রযান। এর মধ্যে জগদ্দলা মহাবিহার ছিল বজ্রযান বৌদ্ধ কেন্দ্র।

    বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জগদ্দলা মহাবিহার সম্পর্কে

    – তিব্বতের বেশ কিছু বিখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত যেমন বিভূতি চন্দ্র, দানশীলা, মোক্ষকার গুপ্তা, শুভাকার গুপ্ত এই মঠে অধ্যাপনা করতেন। 

    – জানা যায়, পাঁচটি বিখ্যাত মহাবিহারের মধ্যে জগদ্দলা ছিল অন্যতম। বাকি চারটি মহাবিহার হল বিক্রমশীলা, নালন্দা, সোমপুরা ও ওদন্তপুরী।

    – ঐতিহাসিকদের মতে, জগদ্দলাতে (Jagaddala Mahavihara) বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হতো যার মধ্যে অন্যতম ছিল সংস্কৃত সাহিত্য তথা বৌদ্ধ ধর্ম। জগদ্দলাতে সুভাষিতরত্নকোষ যা সাহিত্যের প্রাচীনতম সংকলনগুলির মধ্যে অন্যতম, তা পাওয়া গিয়েছে।

    – এছাড়াও এখানে প্রচুর সংখ্যক তিব্বতীয় গ্রন্থ লেখা হয়েছিল বা সেগুলোকে প্রতিলিপি করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

    – ১২০৭ খ্রিস্টাব্দে অন্যান্য বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মতো এটিও ধ্বংস করে মুসলিম আক্রমণকারীরা। এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করেছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়।

    বাংলাদেশের পাহাড়পুরে মেলে ধ্বংসাবশেষ

    জানা যায়, ১০৫ মিটার দীর্ঘ ও ৮৫ মিটার প্রস্থ মহাবিহারের ধ্বংসাবশেষ  বাংলাদেশের পাহাড়পুরে আবিষ্কৃত হয়েছে। এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে পোড়ামাটির ফলক, ইট, পেরেক ও দেবতাদের তিনটি পাথরের মূর্তি। এছাড়াও সেখানে মিলেছে আরও দেড়শটিরও বেশি বস্তু। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে রয়েছে মাটির পাত্র, বাটি, পোশাক পরা পাথরের মূর্তি। এর পাশাপাশি বিষ্ণু মূর্তিও সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে। এই বিষ্ণু মূর্তিটি জগদ্দলা মহাবিহারের দক্ষিণ অংশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য বিষ্ণু মূর্তির সঙ্গে যেমন দেবী লক্ষ্মীর মূর্তি থাকে, এখানে সেইরকম কিছু মেলেনি।

    উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অংশ থেকে পণ্ডিত এবং ছাত্ররা এখানে আসতেন

    জগদ্দলা মহাবিহার বিভিন্ন কারণেই বৌদ্ধ ধর্ম তথা প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে এক অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে চলেছে। বৌদ্ধ শিক্ষা, বিভিন্ন ধর্মীয় সাহিত্যের ভাণ্ডার এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের অন্যতম আবাসস্থল ছিল এই মহাবিহার। নালন্দা এবং ওদন্তপুরীর মতই জগদ্দলা মহাবিহারেও উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অংশ থেকে পণ্ডিত এবং ছাত্ররা আসতেন। স্বাভাবিকভাবেই বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন তত্ত্ব বহির্বিশ্বের সঙ্গে আদান-প্রদানের এক উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল এই মহাবিহার। বলা যেতে পারে তা বহির্বিশ্বের সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতির এক সেতুবন্ধনের কাজও করত। জগদ্দলা মহাবিহার থেকে পাওয়া শিক্ষা নিয়ে ছাত্ররা তিব্বত সমেত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং তার বাইরেও বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার করতেন।

    জগদ্দলা মহাবিহারের শিক্ষকরা 

    জানা যায়, জগদ্দলা মহাবিহারে (Jagaddala Mahavihara) অনেক প্রথিতযশা পণ্ডিত এবং শিক্ষকদের উপস্থিতিতে এক আদর্শ শিক্ষার পরিবেশ নির্মিত হয়েছিল। জগদ্দলার সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পণ্ডিত রয়েছেন।

    অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান: অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান একজন বিখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত এবং অধ্যাপক ছিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে, জীবনের একটি বড় অংশ তিনি জগদ্দলাতে কাটিয়েছেন। তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। জানা যায় বজ্রযান সম্প্রদায়ের প্রচার করতেন তিনি।

    রত্নাকরসন্তি: রত্নাকরসন্তি একজন বিখ্যাত বৌদ্ধ দার্শনিক ছিলেন এবং তিনি জগদ্দলাতে শিক্ষকতা করতেন বলে জানা যায়। বিভিন্ন বৌদ্ধ গ্রন্থের উপরে তাঁর ভাষ্য ভারত ও তিব্বতে সমাদরে গৃহীত হয়েছে।

    জ্ঞানশ্রীমিত্র: জ্ঞানশ্রীমিত্র একজন বিশিষ্ট শিক্ষক এবং দার্শনিক ছিলেন। তিনিও জগদ্দলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

    জগতলা মহাবিহারের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

    প্রধান ভবন: জগদ্দলা মহাবিহারের কেন্দ্রস্থলে ছিল প্রধান ভবনটি। এটি ছিল অত্যন্ত প্রশস্ত। এখানে একাধিক হল, ধ্যানকক্ষ এবং শ্রেণিকক্ষ ছিল। অসংখ্য বৌদ্ধ ভিক্ষুক এবং ছাত্ররা এখানে গবেষণার কাজ করতেন।

    প্রাঙ্গণ: জগদ্দলা মহাবিহার বাগান দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। একটি সুপ্রশস্ত প্রাজ্ঞণ ছিল এখানে। শান্তির পরিবেশ বিরাজ করত। বৌদ্ধ ভিক্ষুক এবং ছাত্ররা এখানে ধ্যান করতেন।

    গ্রন্থাগার-অধ্যয়ন কক্ষ: প্রাচীন ভারতের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই জগদ্দলা মহাবিহারে একটি বড় গ্রন্থাগার ছিল। সেখানে বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের সংগ্রহ ছিল।

    আবাসন: দেশ বিদেশ থেকে আগত ছাত্রদের এবং সন্ন্যাসীদের থাকার জন্য এখানে একটি আবাসনও গড়ে তোলা হয়েছিল

    জগদ্দলা মহাবিহারের সন্ন্যাস জীবন

    জগদ্দলা মহাবিহারের সন্ন্যাস জীবন, বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে কঠোর অনুশাসন মেনেই চলত। আধ্যাত্মিক বিকাশের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হত। সন্ন্যাসী এবং ছাত্রদের অহিংসা পালন, ব্রহ্মচর্য ব্রত পালন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নৈতিক কর্তব্যবোধ -এ সমস্ত নিয়ম অনুসরণ করতে হতো। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র এবং শিক্ষকরা একসঙ্গে বসে ধ্যান করতেন বলে জানা যায়। এর পাশাপাশি ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেরও সেখানে আয়োজন করা হতো। সন্ন্যাসীরা আশেপাশের গ্রামে ভিক্ষা করতেন।

    প্রতিদিনের রুটিন কেমন ছিল

    জানা যায়, প্রত্যেক সন্ন্যাসী এবং ছাত্রকে ভোরবেলায় উঠতে হতো এবং তারপরেই তাঁরা ধ্যান করতেন। এরপরেই সন্ন্যাসীরা বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ, দর্শন এবং যুক্তিবিদ্যার পাঠ ছাত্রদের দিতেন। মহাবিহারে দর্শন এবং বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ের উপর বক্তৃতা এবং বিতর্কের আয়োজন করা হতো। জগদ্দলা মহাবিহারে পণ্ডিতরা বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থ রচনার কাজেও নিযুক্ত ছিলেন। সারাদিন এভাবেই কাটতো। তারপরে প্রত্যহ সন্ধ্যায় জপ এবং অন্যান্য আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিন শেষ হতো।

    জগদ্দলা মহাবিহারের পতনের কারণ

    মনে করা হয়, জগদ্দলা মহাবিহারের (Jagaddala Mahavihara) পতনের কারণের মধ্যে প্রধান কারণ ছিল মুসলিম আক্রমণ। সে সময়ে মুসলমান শাসকরা অন্য যেকোনও ধর্ম মতের বিরোধী ছিলেন এবং ইসলাম বিপন্ন হতে পারে এই আশঙ্কায় একাধিক বৌদ্ধ বিহারকে ধ্বংস করা হয়, গ্রন্থাগারগুলিকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। জগদ্দলাকেও ধ্বংস করে মুসলিম আক্রমণ। অন্যদিকে ভারতবর্ষে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব ক্রমশ কমতে থাকে। এর ফলে প্রাসঙ্গিকতা হারায় জগদ্দলা।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 22: “গুরুর উপদেশ অনুসারে চলতে হয়, বাঁকাপথে গেলে ফিরে আসতে কষ্ট হবে”

    Ramakrishna 22: “গুরুর উপদেশ অনুসারে চলতে হয়, বাঁকাপথে গেলে ফিরে আসতে কষ্ট হবে”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    সংসারেও ঈশ্বরলাভ হয়–সকলেরই মুক্তি হবে

    প্রতিবেশী—মহাশয়, সংসারে থেকে কি ভগবানকে পাওয়া যায়?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—অবশ্য পাওয়া যায়। তবে যা বললুম, সাধুসঙ্গ আর সর্বদা প্রার্থনা করতে হয়। তাঁর কাছে কাঁদতে হয়। মনের ময়লাগুলো ধুয়ে গেলে তাঁর দর্শন হয়। মনটি যেন মাটি-মাখানো লোহার ছুঁচ—ঈশ্বর চুম্বক পাথর, মাটি না গেলে চুম্বক পাথরের সঙ্গে যোগ হয় না। কাঁদতে কাঁদতে ছুঁচের মাটি ধুয়ে যায়, ছুঁচের মাটি অর্থাৎ কাম, ক্রোধ, লোভ, পাপবুদ্ধি, বিষয়বুদ্ধি। মাটি ধুয়ে গেলেই ছুঁচকে চুম্বক পাথরে টেনে লবে—অর্থাৎ ঈশ্বরদর্শন হবে। চিত্তশুদ্ধি হলে তবে তাঁকে লাভ হয়। জ্বর হয়েছে, দেহেতে রস অনেক রয়েছে তাতে কুইনাইনে কি কাজ হবে। সংসারে হবে না কেন? ওই সাধুসঙ্গ, কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা, মাঝে মাঝে নির্জনে বাস, একটু বেড়া না দিলে ফুটপাথের চারাগাছ, ছাগল গরুতে খেয়ে ফেলে।

    প্রতিবেশী—যারা সংসারে আছে, তাহলে তাদেরও হবে?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—সকলেরই মুক্তি হবে। তবে গুরুর উপদেশ অনুসারে চলতে হয়। বাঁকাপথে গেলে ফিরে আসতে কষ্ট হবে। মুক্তি অনেক দেরিতে হয়। হয়তো এ-জন্মেও হল না, আবার হয়তো অনেক জন্মের পর হল। জনকাদি সংসারেও কর্ম করেছিলেন। ঈশ্বরকে মাথায় রেখে কাজ করতেন। নৃত্যকী যেমন মাথায় বাসন করে নাচে। আর পশ্চিমের মেয়েদের দেখ নাই? মাথায় জলের ঘড়া, হাসতে হাসতে কথা কইতে কইতে যাচ্ছে।

    প্রতিবেশী—গুরুর উপদেশ বললেন। গুরু কেমন করে পাব?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—যে-সে লোক গুরু হতে পারে না। বাহাদুরী কাঠ নিজেও ভেসে চলে যায়, অনেক জীবজন্তুও চড়ে যেতে পারে। হাবাতে কাঠের উপর চড়লে, কাঠও ডুবে যায়, যে চড়ে সেও ডুবে যায়। তাই ঈশ্বর যুগে যুগে লোকশিক্ষার জন্য নিজে গুরুরূপে অবতীর্ণ হন। সচ্চিদানন্দই গুরু।

    জ্ঞান কাকে বলে; আর আমি কে? ঈশ্বরই কর্তা আর সব অকর্তা—এর নাম জ্ঞান। আমি অকর্তা। তাঁর হাতের যন্ত্র। তাই আমি বলি, মা, তুমি যন্ত্রী, আমি যন্ত্র, তুমি ঘরণী, আমি ঘর, আমি ইঞ্জিনিয়র, যেমন চালাও তেমনি চলি; যেমন করাও তেমনি করি; যেমন বলাও তেমনি বলি; নাহং নাহং তুঁহু তুঁহু।

    আরও পড়ুনঃ “পাপ করলে তার ফল পেতে হবে! লঙ্কা খেলে তার ঝাল লাগবে না?”

    আরও পড়ুনঃ “ব্যাকুলতা না এলে কিছুই হয় না, সাধুসঙ্গ করতে করতে ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হয়”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 21: “পাপ করলে তার ফল পেতে হবে! লঙ্কা খেলে তার ঝাল লাগবে না?”

    Ramakrishna 21: “পাপ করলে তার ফল পেতে হবে! লঙ্কা খেলে তার ঝাল লাগবে না?”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    পাপীর দায়িত্ব কর্মফল

    পরিবেশী—তবে পাপ করলে আমাদের কোন দায়িত্ব নেই?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ঈশ্বরের নিয়ম যে পাপ করলে তার ফল পেতে হবে। লঙ্কা খেলে তার ঝাল লাগবে না? সেজোবাবুর বয়সকালে অনেকরকম করেছিল, তাই মৃত্যুর সময় নানারকম অসুখ হল। কম বয়সে এত টের পাওয়া যায় না। কালীবাড়িতে ভোগ রাঁধবার অনেক সিঁদুরী কাঠ থাকে। ভিজে কাঠ প্রথমটা বেশ জ্বলে যায়, তখন ভিতরে যে জল আছে টের পাওয়া যায় না। কাঠটা পোড়া শেষ হলে যত জল পেছনে ঠেলে আসে ও ফ্যাঁচফোচ করে উনুন নিভিয়ে দেয়। তাই কাম, ক্রোধ, লোভ—এ-সব সাবধান হতে হয়। দেখ না, হনুমান ক্রোধ করে লঙ্কা দগ্ধ করেছিল, শেষে মনে পড়ল, অশোকবনে সীতা আছেন, তখন ছটফট করতে লাগল, পাছে সীতার কিছু হয়।

    প্রতিবেশী—তবে ঈশ্বর দুষ্টু লোক করলেন কেন?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তাঁর ইচ্ছা তাঁর লীলা। তাঁর মায়াতে বিদ্যাও আছে। অন্ধকারেরও প্রয়োজন আছে, অন্ধকার থাকলে আলোর আরও মহিমা প্রকাশ হয়। কাম, ক্রোধ, লোভ, খারাপ জিনিস বটে, তবে তিনি দিয়েছেন কেন? মহৎ লোক তয়ের করবেন বলে। ইন্দ্রিয় জয় করলে মহৎ হয়। জিতিন্দ্রিয় কি না করতে পারে? ঈশ্বরলাভ পর্যন্ত তাঁর কৃপায় করতে পারে। আবার অন্যদিকে দেখ, কাম থেকে তাঁর সৃষ্টি-লীলা চলছে।

    দুষ্টু লোকেরও দরকার আছে। একটি তালুকের প্রজারা বড়ই দুর্দান্ত হয়েছিল। তখন গোলক চৌধুরীকে পাঠিয়ে দেওয়া হল। তার নামে প্রজারা কাঁপতে লাগল—এত কঠোর শাসন। সবই দরকার, সীতা বললেন, রাম! অযোধ্যায় সব অট্টালিকা হত তো বেশ হত, অনেক বাড়ি দেখছি ভাঙা, পুরানো। রাম বললেন, সীতা! সব বাড়ি সুন্দর থাকলে মিস্ত্রীরা কি করবে? (সকলের হাস্য) ঈশ্বর (Ramakrishna) সবরকম করেছেন—ভাল গাছ, বিষ গাছ, আবার আগাছাও করেছেন। জানোয়ারদের ভিতর ভাল-মন্দ সব আছে—বাঘ, সিংহ, সাপ সব আছে।

    আরও পড়ুনঃ “ব্যাকুলতা না এলে কিছুই হয় না, সাধুসঙ্গ করতে করতে ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হয়”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Odantapuri University: নালন্দার পর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়, জানুন ওদন্তপুরী মহাবিহারের ইতিহাস

    Odantapuri University: নালন্দার পর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়, জানুন ওদন্তপুরী মহাবিহারের ইতিহাস

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ওদন্তপুরী ছিল প্রাচীন ভারতের অন্যতম এক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, অষ্টম শতাব্দীতে পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল এই বিশ্ববিদ্যালয়কে (Odantapuri University) স্থাপন করেছিলেন। তবে পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন, এই নিয়েও দ্বিমত রয়েছে। বেশ কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, ওদন্তপুরে বিশ্ববিদ্যালয় গোপালের পুত্র ধর্মপাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আবার অন্য অনেক গবেষকের মতে, ওদন্তপুরীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন দেবপাল। জানা যায়, সে সময়ে পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠেছিল ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়। পাল যুগে বিক্রমশিলা ছিল প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়। বিক্রমশিলা এবং ওদন্তপুরী- এই দুই বিশ্ববিদ্যালয় বিপুল পরিমাণে আর্থিক সাহায্য লাভ করত পাল রাজাদের কাছ থেকে। এই সাহায্য নালন্দার চেয়ে অনেক বেশি ছিল।

    আরও পড়ুন: বিদ্যাচর্চার উৎকর্ষ কেন্দ্র ছিল প্রাচীন ভারতের বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়

    মহাপাল নামে একজন রাজার কথা জানা যায়

    মহাপাল নামে একজন রাজার কথা ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Odantapuri University) সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, তিনি ছিলেন মহিপালের পুত্র এবং তিনি ওদন্তপুরীর অত্যন্ত পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সেখানকার ৫১ জন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং ৫০ জন শিক্ষককে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপরে। ধর্মের অগ্রগতির সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্ম মহাযান, হীনযান, বজ্রজান প্রভৃতি সম্প্রদায় বিভক্ত হয়ে যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, পাল রাজা রামপালের রাজত্বকালে ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ জন শিক্ষকের সঙ্গে হীনযান এবং মহাযান উভয় সম্প্রদায়ের এক হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুক স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন।

    নালন্দার মতো বড় গ্রন্থাগার 

    নালন্দাতে বেশ বড় একটি গ্রন্থাগারের কথা জানা যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Odantapuri University) গ্রন্থাগারও নালন্দার চেয়ে কোনও অংশে কম ছিল না এবং এতে হিন্দু এবং বৌদ্ধ রচনার বিশাল সংগ্রহ ছিল। নালন্দার মতোই বখতিয়ার খিলজির বাহিনী ওদন্তপুরীর গ্রন্থাগারকে পুড়িয়ে দেয়। খিলজীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে বৌদ্ধ ভিক্ষুকরা নেপাল এবং তিব্বতে চলে যায় বলে জানা যায়। তিব্বতের বেশ কিছু নথি থেকে জানা যায় ওদন্তপুরীতে প্রায় বারো হাজার ছাত্র ছিলেন এবং সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র এবং পণ্ডিতরা এখানে গবেষণা তথা শিক্ষা লাভ করতে আসতেন। মনে করা হয়, নালন্দার মতোই বখতিয়ার খিলজির আক্রমণে ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এটি ছিল আধুনিক ভারতের একটি বৌদ্ধ মহাবিহার। ওদন্তপুরীর অবস্থান ছিল মগধে এবং নালন্দার পরে ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম মহাবিহার হিসেবে এটিকে গণ্য করা হয়।

    আরও পড়ুন: অক্সফোর্ড প্রতিষ্ঠার পাঁচশো বছরেরও আগে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি ছিল বিশ্বজুড়ে

    ওদন্তপুরী ছিল পূর্ব ভারতে থাকা পাঁচটি মহাবিহারের মধ্যে একটি

    ঐতিহাসিকদের মতে, ওদন্তপুরী (Odantapuri University) ছিল পূর্ব ভারতে থাকা পাঁচটি মহাবিহারের মধ্যে একটি। অন্যান্য মহাবিহারগুলি হল- নালন্দা, বিক্রমশীলা, সোমপুরা, এবং জগদ্দলা। প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়েছে, একাদশ শতকের শেষের দিকে ইখতিয়ারউদ্দিন বখতিয়ার খিলজি এই মহাবিহারটিকে ধ্বংস করেন। তিব্বতের পণ্ডিত এবং ছাত্রদের কাছে ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আলাদা গুরুত্ব ছিল। তাঁরা এটিকে প্রেরণার স্রোত হিসেবে দেখতেন। বিভিন্ন তিব্বতীয় নথি অনুসারে জানা যায়, ওদন্তপুরীর ধাঁচে তিব্বতে তৈরি করা হয়েছিল স্যাম ইয়ে মঠ। যা স্থাপিত হয়েছিল ৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে। ওদন্তপুরী মহাবিহার নালন্দা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বলে জানা যায়। ভারতবর্ষের এই প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন শ্রী গঙ্গা, যিনি পরবর্তীকালে বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হয়েছিলেন বলে জানা যায়।

    বৌদ্ধ ধর্মের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতা নতুন মাত্রা পায়

    ঐতিহাসিকদের মতে, বৌদ্ধ ধর্মের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতা নতুন মাত্রা পায়। বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে ভারতীয় সভ্যতার সকল ক্ষেত্রেই ব্যাপক অগ্রগতি লক্ষ্য করা যেতে থাকে। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা তখন ধর্মীয় আচরণ-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি শিক্ষার বিষয়েও ভাবতে থাকেন। এরই ফলস্বরূপ বেশ কতগুলি বিশ্ববিদ্যালয় ভারতবর্ষের সেসময় গড়ে ওঠে। যার মধ্যে অন্যতম ছিল ওদন্তপুরী (Odantapuri University)। মনে করা হয়, ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজির ধ্বংস করার আগে পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশ-বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছিল।

    তাইওয়ান থেকে আসা প্রতিনিধি দল

    চার বছর আগে ২০২০ সালে বৌদ্ধ ধর্মের একটি প্রতিনিধিদল তাইওয়ান থেকে আসেন ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতে। কিন্তু সেই স্থানে এসে তাঁরা একপ্রকার হতাশ হন যখন তাঁরা ওদন্তপুরীর সে অর্থে কোনও ধ্বংসাবশেষ খুঁজে না পান। লি ওয়েন নামের ওই বৌদ্ধ প্রতিনিধি দলের নেতা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, প্রাচীনকালের বেশ কিছু নথি থেকে জানা যায়, পাল বংশের রাজা গোপাল এই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থাপন করেছিলেন। সে সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষাদানের কেন্দ্রগুলিকে বিহার নামে অভিহিত করা হতো। ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল সপ্তম শতাব্দীতে। বিহারে দাঁড়িয়েই তাইওয়ানের ওই বৌদ্ধ সন্ন্যাসী দলের নেতা জানান যে ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের যা কিছু ধ্বংসাবশেষ রয়েছে এখানে, তার সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কে ‘বিহার হেরিটেজ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’র এক আধিকারিক সে সময় জানিয়েছিলেন যে বিহার শরীফের অংশটি জনঘনত্ব পূর্ণ। এর ফলে সেখানে খননকার্যে অনেক রকমের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

    আরও পড়ুন: রামায়ণেও উল্লেখ মেলে! জানুন প্রাচীন ভারতের তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ethiopia: ১২ নয়, ১৩ মাসে হয় এক বছর! জানুন সেই বিচিত্র দেশের কথা

    Ethiopia: ১২ নয়, ১৩ মাসে হয় এক বছর! জানুন সেই বিচিত্র দেশের কথা

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কথায় বলে, আঠারো মাসে এক বছর! কিন্তু এই দেশে ১৩ মাসে এক বছর। যদিও সারা বিশ্বে ১২ মাসেই হয় এক বছর। কিন্তু এ এক বিচিত্র দেশ! সারা পৃথিবীর ক্যালেন্ডারে যখন তারিখ ১৮ মে, ২০২৪ তখন এই দেশের ক্যালেন্ডার বলছে, ১০ অগাস্ট, ২০১৬। আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া ক্যালেন্ডার থেকে ৭ বছর ৩ মাস পিছনে চলছে ৷ এই দেশে এমন আজব কিছু ঘটনা ঘটে যা অন্যদের থেকে সম্পূ্র্ণ আলাদা ৷ এখানে ১২ মাসের বদলে ১৩ মাসে বছর ৷ 

    ইথিওপিয়ার ক্যালেন্ডারের বৈশিষ্ট্য

    ৮৫ লক্ষের বেশি জনসংখ্যা বিশিষ্ট ইথিয়োপিয়ায় আফ্রিকার দ্বিতীয় জনবসতি বহুল দেশ বলেই পরিচিত ৷ কিন্তু এ দেশের ক্যালেন্ডার গ্রেগরিয়নের থেকে প্রায় ৮ বছর পিছিয়ে আছে ৷ এখানে ১ জানুয়ারি নতুন বছরের বদলে ১৩ মাস পরে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বছর শুরু হয়ে থাকে ৷ ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ন ক্যালেন্ডার শুরু হয়েছিল ৷ এর আগে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহৃত হত ৷  পরে যিশু খ্রিস্টের জন্ম সাল অনুযায়ী বর্ষ গণনা শুরু হয়। কিছু দেশ এই গণনার বিরোধিতা করেছিল। ইথিওপিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। আর তাই বর্তমানে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে তাদের ফারাক থেকেই গিয়েছে। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে অবশ্য পুরোটা মেলে না। বরং নিজেদের নিয়মেই চলে ইথিওপিয়ার ক্যালেন্ডার।ক্যালেন্ডার চলে বিশেষ নিয়মে। আমাদের যেখানে ১২ মাসে বছর হয়, ওদের বছর ঘোরে ১৩ মাসে। ১১ সেপ্টেম্বর পালন হয় নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে। বছরটি লিপ ইয়ার হলে ১২ সেপ্টেম্বর হয় বর্ষবরণ। 

    ‘ফরগটেন ডেজ’ নিয়ে তৈরি এক মাস

    বিশ্বের নিরিখে যখন ২০০৭ সাল তখন আফ্রিকার এই দেশটিতে নতুন শতাব্দীর সূচনা হয়েছিল। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতিটি মাস-ই হয় ৩০ দিনে। শুধুমাত্র শেষ মাসটা বাদ। এই মাসটিতেও রয়েছে এক বিশেষ ব্যাপার।গ্রিক ভাষায় ‘প্যাগিউম’ বা ইংরেজিতে ‘ফরগটেন ডেজ’ নিয়ে ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডারে তৈরি হয় একটি আস্ত মাস! এই মাসে থাকে মোটে ৫-৬ দিন। ইথিওপিয়ার চার্চকে অর্থডক্স বা গোঁড়া বলেই মানা হয় ৷ ইথিওপিয়ার অর্থোডক্স টিওয়াহেদো চার্চের দিনপঞ্জির সঙ্গেই এদের সরকারি ক্যালেন্ডারের কিছু কিছু মিল পাওয়া যায়। 

    পর্যটকদের সমস্যা

    একটা গোটা দেশে পিছিয়ে রয়েছে সমগ্র বিশ্ব থেকে। না, অর্থনৈতিক দিক কিংবা শিক্ষাগত দিক থেকে নয়। বরং পিছিয়ে রয়েছে সময়ের দিক থেকে। এদেশের ক্যালেন্ডারের পাতা বদলায় দেরিতে। এই ধরনের ক্যালেন্ডারে ইথিওপিয়ানদের কোন সমস্যাই হয় না। কিন্তু সমস্যা হয় অন্যান্য দেশের বাসিন্দাদের। এই ধরুন বাইরে থেকে কেউ যদি ইথিওপিয়ায় বেড়াতে যেতে চান তাহলে তাকে হোটেল বুকিং করতে বা ফ্লাইট বুকিং করতে গিয়ে নাজেহাল হতে হবে। কারণ সব তারিখের হিসেব তো করতে হবে সাড়ে সাত বছর আগে গিয়ে। কিন্তু এটা একেবারেই অন্যান্য দেশের বাসিন্দা এবং পর্যটকদের ব্যক্তিগত সমস্যা। 

    আরও পড়ুন: টি-২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে মুখোমুখি ভারত-বাংলাদেশ, ম্যাচ কবে, কোথায়?

    বৈচিত্র্যে ভরা ইথিওপিয়া

    এই দেশের অন্য অনেক বিশেষত্ব রয়েছে ৷ কফি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে প্রসিদ্ধ ইথিওপিয়া। প্রথমে এই দেশেই কফির উৎপাদন হয়। পুরাতাত্ত্বিকদের মতে এখানেই প্রথম মানবজাতির উৎপত্তি। ইথিওপিয়া একমাত্র আফ্রিকান দেশ যা কখনও ঔপনিবেশিকদের হাতে দমেনি। ১৯৩৫ সালে ইটালি এখানে কলোনি স্থাপন করার চেষ্টা করে। কিন্তু মাত্র ছয় বছরের মধ্যেই এই দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। এখানকার অধিবাসীরা নিজেদের মতো করেই থাকতে ভালবাসেন। অনেকেই ভেগান। যাঁরা পুরোপুরি উদ্ভিজ খাবারের উপর জীবনধারণ করেন। প্রতি বুধ ও শুক্রবার এখানকার লোকেরা উপবাস রাখেন। 

    ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মর্যাদা

    ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মর্যাদা পেয়েছে ইথিওপিয়া ৷ আফ্রিকা মহাদেশের খরা-দুর্ভিক্ষ-সন্ত্রাস পীড়িত এই দেশটিতেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। পৃথিবীর সব থেকে বড় ও গভীর গুহা, সব থেকে বেশি গরম এ ছাড়াও অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঠিকানা রয়েছে এখানে৷ এই কারণের সারা পৃথিবীর পর্যটকেরা ঘুরতে আসেন এখানে ৷ বিশ্বের গভীরতম এবং দীর্ঘতম গুহাও রয়েছে এই ‘পোড়া’ দেশে। আবার বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম স্থানও এই অঞ্চলে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পূর্ণ এই দেশটি পাশ্চাত্যের প্রচলিত ক্যালেন্ডার থেকে কয়েক বছর পিছিয়ে রয়েছে।  ১১ সেপ্টেম্বর ধুমধাম করে নতুন বছর পালন করা হয়ে থাকে ৷ এই নতুন বছরের এক বিশেষ আকর্ষণও রয়েছে ৷ এই হিসাবের ভিত্তিতে ইথিওপিয়ায় ঘুরতে গেলে বুকিং বা অন্য কোনও পরিষেবায় বিশেষ বেগ পেতে হয় ৷ তাই প্রাকৃতিক আশ্চর্যে ভরা আফ্রিকার এই দেশে বেড়াতে যেতে চাইলে খুব সাবধান। ভাল করে ক্যালেন্ডার দেখে অঙ্ক কষে তবেই হোটেল বুক করবেন কিন্তু!

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Takshila University: রামায়ণেও উল্লেখ মেলে! জানুন প্রাচীন ভারতের তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে

    Takshila University: রামায়ণেও উল্লেখ মেলে! জানুন প্রাচীন ভারতের তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রাচীন ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তক্ষশীলা। অনেক ঐতিহাসিক একে পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ও বলে থাকেন। সিন্ধু নদীর পূর্ব দিকে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ পাওয়া যায় বিভিন্ন বৌদ্ধশাস্ত্রে, জাতকের কাহিনীতে। রামায়ণ-মহাভারতেও উল্লেখ মেলে তক্ষশীলার। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিখ্যাত প্রত্নতাত্বিক স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম তক্ষশীলার ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেন। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়টি সিন্ধু নদীর পূর্ব তীরে তক্ষশীলা শহরে অবস্থিত ছিল জানা যায়। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তক্ষশীলা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে জাতকের কাহিনীতে অর্থাৎ খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে এর বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। জানা যায়, তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে (Takshila University) ১০,৫০০ জনেরও বেশি ছাত্র পড়াশোনা করতেন।

    আরও পড়ুন: বিদ্যাচর্চার উৎকর্ষ কেন্দ্র ছিল প্রাচীন ভারতের বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়

    সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও ভাব বিনিময়ের কেন্দ্র

    তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতবর্ষের সঙ্গে বহির্বিশ্বের যে বাণিজ্যিক পথ সেখানেই অবস্থিত ছিল। অর্থাৎ তৎকালীন পারস্য এবং মধ্যপ্রাচ্যকে যুক্ত করে যে বাণিজ্য পথ সেখানেই এর অবস্থান ছিল। এমন অবস্থানের কারণে দূর-দূরান্ত থেকে বহু ছাত্র এবং পণ্ডিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেন। যার ফলে তক্ষশীলা একটি সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও ভাব বিনিময়ের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

    কোন কোন বিষয় পড়ানো হতো?

    বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মত অনুসারে, তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, চিকিৎসা, দর্শন, সাহিত্য, ভাষাবিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, স্থাপত্য, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং যুদ্ধবিদ্যার মতো বিষয়গুলিতে পঠন পাঠন চলত। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষণ পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং সেখানকার অধ্যাপকরা ছাত্রদের বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করাতেন। পড়ুয়ারা বিতর্কে অংশগ্রহণ করতেন। এর পাশাপাশি শিক্ষার ব্যবহারিক দিকেও ছাত্ররা পারদর্শী হয়ে উঠতেন। ছাত্রদের মধ্যে বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা এই সমস্ত কিছুই বাড়ানো হতো পঠন-পাঠনের মাধ্যমে।

    ভারতবর্ষ তথা পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় 

    তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ভারতবর্ষ তথা পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় যা নালন্দা এবং বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও অনেকটাই প্রাচীন ছিল। সেখানে ছিল একটি বিশাল আকারের গ্রন্থাগার। এখানে বিভিন্ন সাহিত্যের পান্ডুলিপি সংরক্ষণ করা ছিল। ছাত্র এবং অধ্যাপকরা এই লাইব্রেরীতে আসতেন। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুকুল পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা হতো। যেখানে শিক্ষার্থীরা অধ্যাপকদের সঙ্গেই থাকতেন। তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে উঠত। এইভাবে ছাত্রদের শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশ সম্পূর্ণ হতো। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাতি তৎকালীন দিনে দূরদূরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।

    প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে উল্লেখ

    তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া যায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- 

    অর্থশাস্ত্র: প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিত কৌটিল্য বা চাণক্য বা বিষ্ণুগুপ্ত অর্থশাস্ত্র রচনা করেছিলেন এখানে বসেই। তাঁর গ্রন্থে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার এক খ্যাতনামা কেন্দ্র হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন।

    মহাভারত: বহু শতাব্দী আগে রচিত মহাকাব্য মহাভারত। সেখানেও তক্ষশীলা নগর সমেত তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়।

    রামায়ণ: জ্ঞান চর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পীঠস্থান হিসেবে রামায়ণে তক্ষশীলার উল্লেখ পাওয়া যায়। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় (Takshila University) প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব রামায়ণ অনুসারে কৈকেয়ীর পুত্র তথা ভগবান রামের ভাই ভরতকে দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। জানা যায়, ভরত তাঁর পুত্র তক্ষকে ওই নগর শাসনের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। সেখান থেকেই তাঁর নামানুসারে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় নামটি এসেছে বলে মনে করা হয়।

    জাতকের কাহিনী: বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য হল জাতকের কাহিনী। এই জাতকের কাহিনীতে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ পাওয়া যায়।

    বিভিন্ন গ্রিক ও চিনা সাহিত্য: মেগাস্থিনিস সমেত অন্যান্য পরিব্রাজকদের বিভিন্ন লেখায় উঠে এসেছে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়। এ থেকেই বোঝা যায় তক্ষশীলা কতটা খ্যাতিসম্পন্ন ছিল। সে সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ পাওয়া যায় চীনা পরিব্রাজকদের লেখাতেও।

    মনুস্মৃতি: মনুস্মৃতি, কথাসরিত সাগর প্রভৃতি প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ পাওয়া যায়। 

    তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দিক

    কঠিন প্রতিযোগিতা: জানা যায় সে সময় ছাত্ররা সহজেই তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেতেন না। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য তাঁদেরকে একটি কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষার দিতে হতো এবং তার মাধ্যমেই সুযোগ মিলতো সেখানে পড়াশোনা করার।

    আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়: ভারতীয় বিভিন্ন সাহিত্য, চিনা এবং গ্রিক পরিব্রাজকদের লেখা থেকে জানতে পারা যায় যে এটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠেছিল। কারণ এখানে পারস্য, গ্রিস, মধ্য এশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে ছাত্ররা পড়তে আসতেন।

    বৃত্তি: বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের গবেষণা থেকে জানতে পারা যায় তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় যোগ্য ছাত্রদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা ছিল।

    ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর জোর: তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকরা ছাত্রদের ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর জোর দিতেন বলে জানা যায়। তাঁদেরকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও চলত।

    কারা পড়াতেন?

    তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন পাণিনির খ্যাতনামা সংস্কৃত পণ্ডিত। পাণিনির অষ্ট্যাধ্যায়ী তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় বসেই রচিত হয় বলে জানা যায়। এটি সংস্কৃতের জটিল এবং নিয়মভিত্তিক ব্যাকরণ ছিল। অন্যদিকে মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধানমন্ত্রী চাণক্যও তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপনা করতেন বলে জানা যায়। ভারতীয় চিকিৎসার জনক বলে পরিচিত চরক তক্ষশীলায় অধ্যাপনা করতেন। অন্যদিকে গৌতম বুদ্ধের ব্যক্তিগত ডাক্তার বলে পরিচিত ছিলেন জিবক, তিনিও তক্ষশীলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য পাটনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু কিছু বৌদ্ধ সাহিত্য দাবি করে যে চাণক্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে অধ্যয়ন ও শিক্ষার জন্য তক্ষশীলায় নিয়ে গেছিলেন।

    আরও পড়ুন: অক্সফোর্ড প্রতিষ্ঠার পাঁচশো বছরেরও আগে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি ছিল বিশ্বজুড়ে

    পতনের কারণ 

    তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় (Takshila University) শেষ পর্যন্ত ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। এর পতনের অনেক কারণ রয়েছে। রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক কারণও বেশ কতকগুলি রয়েছে।

    বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণ: মনে করা হয় খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে হুণ শাসক তোরমান এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করেন। যার ফলে তক্ষশীলার শিক্ষাগত এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন: মনে করা হয় উত্তর ভারতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনও তক্ষশীলা (Takshila University) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 20: “ব্যাকুলতা না এলে কিছুই হয় না, সাধুসঙ্গ করতে করতে ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হয়”

    Ramakrishna 20: “ব্যাকুলতা না এলে কিছুই হয় না, সাধুসঙ্গ করতে করতে ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হয়”

     

    ভক্ত—সাধুসঙ্গে কি উপকার হয়?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ঈশ্বরে আনুরাগ হয়। তাঁর উপর ভালবাসা হয়। ব্যাকুলতা না এলে কিছুই হয় না। সাধুসঙ্গ করতে করতে ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হয়। যেমন বাড়িতে কারুর অসুখ হলে সর্বদাই মন ব্যাকুল হইয়ে থাকে, কিসে রোগী ভাল হয়। আবার কারুর যদি কর্ম যায়, সে ব্যক্তি যেমন অফিসে অফিসে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়, ব্যাকুল হতে হয়, সেইরূপ। যদি কোন অফিসে বলে কর্ম খালি নেই, আবার তার পরদিন এসে জিজ্ঞেস করে, আজ কি কোন কর্ম খালি হয়েছে?

    আর একটি উপায় আছে—ব্যাকুল হয়েছে প্রার্থনা। তিনি যে আপনার লোক, তাঁকে বলতে হয়, তুমি কেমন দেখা দাও—দেখা দিতেই হবে—তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ কেন?  শিখরা বলেছিল, ঈশ্বর (Ramakrishna) দয়াময়, আমি তাঁদের বলেছিলাম, দয়াময় কেন বলব? তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে আমাদের মঙ্গল হয়, তা যদি করেন সে কি আর আশ্চর্য! মা-বাপ ছেলেকে পালন করবে, সে আবার দয়া কি? সে তো করতেই হবে, তাই তাঁকে জোর করে প্রার্থনা করতে হয়। তিনি যে আপনার বাপ! ছেলে যদি খাওয়া ত্যাগ করে, বাপ-মা তিন বৎসর আগেই হিস্যা ফেলে দেয়। আবার যখন ছেলে পয়সা চায়, আর চায়, আর পুনঃপুনঃ বলে, ‘মা তোর দুটি পায়ে পড়ি, আমাকে দুটি পয়সা দে, তখন মা ব্যাজার হয়ে তার ব্যাকুলতা দেখে পয়সা ফেলে দেয়।

    সাধুসঙ্গ করলে আর একটি উপকার হয়। সদসৎ বিচার। সত—নিত্য পদার্থ অর্থাৎ ঈশ্বর। অসৎ অর্থাৎ অনিত্য। অসৎপথে মন গেলেই বিচার করতে হয়। হাতি পরের কলাগাছ খেতে শুঁড় বাড়ালে সেই সময় মাহুত ডাঙস মারে।

    প্রতিবেশী—মহাশয়, পাপবুদ্ধি কেন হয়?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তাঁর জগতে সকলরকম আছে। সাধু লোকও তিনি করেছেন, দুষ্ট লোকও তিনি করেছেন, সদ্‌বুদ্ধি তিনিই দেন, অসদ্‌বুদ্ধিও তিনিই দেন।

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির..”

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “দুরন্ত ছেলে বাবার কাছে যখন বসে, যেমন জুজুটি, আবার চাঁদনিতে যখন খেলে, আর এক মূর্তি”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 19: “ঐশ্বর্য দেখেই সকলে ভুলে যায়, যাঁর ঐশ্বর্য তাঁকে খোঁজে না”

    Ramakrishna 19: “ঐশ্বর্য দেখেই সকলে ভুলে যায়, যাঁর ঐশ্বর্য তাঁকে খোঁজে না”

     শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    শ্রীরামকৃষ্ণ শ্যামপুকুরে—প্রাণকৃষ্ণের বাটিতে

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) কলিকাতায় আজ শুভাগমন করিয়াছেন। শ্রীযুক্ত প্রাণকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের শ্যামপুকুর বাটির দ্বিতলায় বৈঠকখানা ঘরে ভক্তসঙ্গে বসিয়া আছেন। এইমাত্র ভক্তসঙ্গে বসিয়া প্রসাদ পাইয়াছেন। আজ ২ রা এপ্রিল, রবিবার, ১৮৮২ খ্রীঃ, ২১ শে চৈত্র, ১২৮৮, শুক্লা, চতুর্দশী; এখন বেলা ১/২ টা হইবে। কাপ্তেন ওই পাড়াতেই থাকেন; ঠাকুরের ইচ্ছা এ-বাড়িতে বিশ্রামের পর কাপ্তেনের বাড়ি হইয়া, তাহাকে দর্শন করিয়া কমলকুটির নামক বাড়িতে শ্রীযুক্ত কেশব সেনকে দর্শন করিতে যাইবেন। প্রাণকৃষ্ণের বৈঠকখানায় বসিয়া আছেন; রাম, মনোহর, কেদার, সুরেন্দ্র, গিরীন্দ্র (সুরেন্দ্রর ভাতা), রাখাল, বলরাম, মাস্টার প্রভৃতি ভক্তেরা উপস্থিত।

    পাড়ার বাবুরা ও অন্যান্য নিমন্ত্রিত ব্যক্তিরাও আছেন, ঠাকুর কি বলেন—শুনিবার জন্য সকলেই উৎসুক হইয়া আছেন।

    ঠাকুর (Ramakrishna) বলিতেছেন, ঈশ্বর ও তাঁহার ঐশ্বর্য। এই জগৎ তাঁর ঐশ্বর্য।

    কিন্তু ঐশ্বর্য দেখেই সকলে ভুলে যায়, যাঁর ঐশ্বর্য তাঁকে খোঁজে না। কামিনী-কাঞ্চন ভোগ করতে সকলে যায়, কিন্তু দুঃখ, অশান্তিই বেশি। সংসার যেন বিশালাক্ষীর দ, নৌকা দহে একবার পড়লে আর রক্ষা নাই। সেকুল কাঁটার মতো এক ছাড়ে তো আর একটি জড়ায়। গোলোকধান্দায় একবার ঢুকলে বেরুনো মুশকিল। মানুষ যেন ঝলসা পোড়া হয়ে যায়।

    একজন ভক্ত—এখন উপায়?

    উপায়—সাধুসঙ্গ আর প্রার্থনা

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—উপায়ঃ সাধুসঙ্গ আর প্রার্থনা।

    বৈদ্যের কাছে না গেলে রোগ ভাল হয় না। সাধুসঙ্গ একদিন করলে হয় না, সর্বদাই দরকার, রোগ লেগেই আছে। আবার বৈদ্যের কাছে না থাকলে নাড়ীজ্ঞান হয় না, সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে হয়। তবে কোনটি কফের নাড়ী, কোনটি পিত্তের নাড়ী বোঝা যায়।

    আরও পড়ুনঃ “ভজানন্দ ব্রহ্মানন্দ, এই আনন্দই সুরা! মানবজীবনের উদ্দেশ্য ঈশ্বরে প্রেম”

    আরও পড়ুনঃ “খ্রিষ্টান, ব্রহ্মজ্ঞানী, হিন্দু, মুসলমান—সকলেই বলে, আমার ধর্ম ঠিক, কিন্তু মা, কারুর ঘড়ি তো ঠিক চলছে না”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির..”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Vikramshila University: বিদ্যাচর্চার উৎকর্ষ কেন্দ্র ছিল প্রাচীন ভারতের বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়

    Vikramshila University: বিদ্যাচর্চার উৎকর্ষ কেন্দ্র ছিল প্রাচীন ভারতের বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পাল যুগের ভারতীয় উপমহাদেশে বৌদ্ধ শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র ছিল বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় (Vikramshila University)। ঐতিহাসিকদের মতে, রাজা ধর্মপাল যিনি ৭৮৩ থেকে ৮২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেছিলেন, তাঁর আমলেই অষ্টম শতাব্দীর শেষে তৈরি হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম অধ্যাপক ছিলেন প্রখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান। বর্তমানে বিহারের ভাগলপুর শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের এই প্রতিবেদনে আমরা বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাসকে তুলে ধরার চেষ্টা করব। তৎকালীন ভারতবর্ষের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রভাব তাও খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে এই প্রতিবেদনে। বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয় বরং জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার যে অনুশীলন তার একটি জীবন্ত উদাহরণ।

    বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম কেন্দ্র

    বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় (Vikramshila University) শুধুমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠেনি বরং তা বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ের অধ্যয়ন, বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও বৌদ্ধ দর্শনের প্রচার কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন ভারতে অন্যতম শক্তিশালী জনপদ ছিল মগধ। সেই মগধ ছিল বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। অনেক বিখ্যাত পণ্ডিতই বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গঙ্গা নদীর ধারে অবস্থান হওয়ার জেরে, এই বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক এবং গবেষকদের নির্মল ও শান্ত পরিবেশ দিয়েছিল। যা গবেষণার কাজে অনুকূল। গঙ্গার তীরবর্তী হওয়ায় বাণিজ্য সমেত অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে সাহায্য  করেছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। গঙ্গা অববাহিকার এক অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ গড়ে উঠেছিল এবং সেখানে বাইরে থেকে ছাত্র ও পণ্ডিত এসে থাকতেন। নালন্দা এবং ওদন্তপুরীর মতোই বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল প্রাচীন ভারতের অন্যতম বিখ্যাত মহাবিহার। সে সময়কার রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় জ্ঞান শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়। বৌদ্ধ শিক্ষার ঐতিহ্যকে বহন করত এই প্রতিষ্ঠান। এখানে বৌদ্ধ দর্শন, তন্ত্র, যুক্তিবিদ্যা, ব্যাকরণ এবং অন্যান্য বেশ কিছু বিষয় পড়ানো হতো বলে জানা যায়। পৃথিবীব্যাপী বিখ্যাত অধ্যাপকদেরও আকৃষ্ট করেছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়।

    কোন কোন বিষয়ে চলত পাঠদান

    বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে (Vikramshila University) নানা বৈচিত্রধর্মী এবং বিভিন্ন কঠিন বিষয় পড়ানো হতো। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চর্চার পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রদেরকে এখানে সুশৃংখল জীবন যাপন করতে হতো। এমনই তথ্য জানা যায় বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের গবেষণায়। এখানে যে সমস্ত বিষয়গুলি পড়ানো হতো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-

    বৌদ্ধ দর্শন: বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে (Vikramshila University) বৌদ্ধ দর্শন পড়ানো হতো। এখানকার বৌদ্ধ দর্শনের ওপর নামকরা পণ্ডিতরা, ছাত্রদের ক্লাস নিতেন। দর্শনের বিভিন্ন স্কুল যেমন মধ্যমাকা, যোগাকারা প্রভৃতি বিষয় পড়ানো হতো  বলে জানা যায়। এর পাশাপাশি বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা বিভিন্ন বিতর্কেও অংশগ্রহণ করতেন। তাঁদের ভেতরের জ্ঞান এবং উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পেত এর মাধ্যমে।

    তন্ত্র: বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় (Vikramshila University) অন্যতম পাঠ্য বিষয় হিসেবে পড়ানো হতো তন্ত্র। বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন গুপ্ত এবং আধ্যাত্মিক দিকগুলির উপরে জোর দেওয়া হতো।

    যুক্তিবিদ্যা: বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে (Vikramshila University) অন্যতম বিষয় হিসেবে পড়ানো হতো যুক্তিবিদ্যা। এই বিষয়টি পড়ুয়াদের মধ্যে চিন্তা ভাবনা করার দক্ষতাকে অনেকটাই বাড়াত।

    ব্যাকরণ: জানা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বিষয় হিসেবে ব্যাকরণও পড়ানো হতো। ছাত্রদের সংস্কৃত এবং পালি ভাষার ব্যাকরণের জটিল অধ্যায়গুলি এখানে শেখানো হতো বলে জানা যায়। প্রসঙ্গত, বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন দর্শন ও সাহিত্যের ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যাকরণ পাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল

    বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন অধ্যাপকগণ

    বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচীন ভারতে একাধিক বিশিষ্ট পণ্ডিতদের গবেষণা ও পাঠদানের কেন্দ্র ছিল। এ সমস্ত শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎকর্ষতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। আজকে আমাদের এই প্রতিবেদনে বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন উল্লেখযোগ্য পণ্ডিতকে নিয়ে আলোচনা করব।

    অতীশ দীপঙ্কর: বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vikramshila University) সঙ্গে যুক্ত খ্যাতনামা পণ্ডিত ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান। জানা যায়, তিনি ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষক এবং বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রও বটেন। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান নিজের জ্ঞান এবং চিন্তাভাবনা পরবর্তীকালে তিব্বতে ছড়িয়ে দেন এবং সেখানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।

    বসুবন্ধু: বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম অধ্যাপক হিসেবে নাম উঠে আসে বসুবন্ধুর। তিনি ছিলেন একজন বৌদ্ধ দার্শনিক। বৌদ্ধ চিন্তার বিকাশে উল্লেখযোগ্য অবদান তিনি রেখেছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর নানা রকমের গবেষণা, বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের পড়ানো হতো।

    বিদ্যা কোকিলা: বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম খ্যাতনামা দার্শনিক ছিলেন বিদ্যা কোকিলা। ঐতিহাসিকদের মতে, তিনি যুক্তিবিদ্যা এবং দর্শন এই দুই বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। তাঁর চিন্তা-ভাবনা এবং পাঠদান তৎকালীন বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। বৌদ্ধ যুক্তিবিদ্যায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী।

    জ্ঞানশ্রীমিত্র: জ্ঞানশ্রীমিত্র নামে অপর একজন উল্লেখযোগ্য শিক্ষকের কথা জানা যায়। ইনিও বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করতেন। তাঁর পাঠদানের পদ্ধতিতে ছাত্ররা মুগ্ধ হতেন বলে জানা যায়। তিনিও ছিলেন একজন বৌদ্ধ দার্শনিক।

    বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vikramshila University) কিছু বিখ্যাত ছাত্র

    শুধুমাত্র শিক্ষকদের অবদানের জন্যই বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিমা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, এমনটা নয়। এখানকার পড়ুয়ারাও ছিলেন অসামান্য কৃতি এমনটাই জানা যায়, বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের গবেষণায়। বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ যোগ্য ছাত্ররা হলেন-

    অতীশা: আগেই বলা হয়েছে অতীশা বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন পরবর্তীকালে। বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার করেন।

    নালন্দার ধর্মপাল: নালন্দার ধর্মপাল ছিলেন একজন বিশিষ্ট পণ্ডিত এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারকও বটেন। জানা যায়, তিনিও বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করতেন। পরবর্তীকালে বৌদ্ধ ধর্মের ঐতিহ্যকে বিভিন্ন জায়গায় তুলে ধরেন এই ছাত্র। 

    মৈত্রিপা: জানা যায় মৈত্রীপা নামের এই ছাত্র তন্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করতেন এবং তান্ত্রিক বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তিনিও ছিলেন একজন বৌদ্ধ পণ্ডিত।

    এই সমস্ত অসামান্য পণ্ডিত এবং ছাত্রদের উপস্থিতিতে বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় উৎকর্ষতার এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়, এর ফলে তৎকালীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বৌদ্ধ শিক্ষা দর্শনের একটি সমৃদ্ধশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়।

    শুধুমাত্র জ্ঞান সাধনার অন্যতম পীঠস্থান ছিলনা, বরং স্থাপত্যের জন্য়ও তা বিখ্যাত ছিল

    বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় (Vikramshila University) শুধুমাত্র জ্ঞান সাধনার অন্যতম পীঠস্থান ছিলনা, বরং স্থাপত্যের জন্য়ও তা বিখ্যাত ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছিল বিভিন্ন লাইব্রেরী, যা অধ্যয়নের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছিল। বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম বই জাতকের কাহিনী, বিভিন্ন দেবতাদের জীবনের দৃশ্যগুলিও বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালে চিত্রিত করা হয়েছিল। যা এক নিপুণ শিল্পকর্মকে প্রতিফলিত করে। জানা যায়, বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৌদ্ধধর্ম ছাড়াও অন্যান্য ধর্মেরও গ্রন্থ সংরক্ষণ করা হতো। সেখানকার বিভিন্ন বইগুলিকে যত্ন সহকারে প্রতিলিপি করা হতো। অনেক বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থকে সংস্কৃত থেকে অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল বলে জানা যায়।

    আরও পড়ুন: অক্সফোর্ড প্রতিষ্ঠার পাঁচশো বছরেরও আগে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি ছিল বিশ্বজুড়ে

    পতনের কারণ

    বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতনের জন্য অনেক কারণকে সামনে আনা হয়। যার মধ্যে অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার মুসলিম বাহিনীর আক্রমণ চলতে থাকে। যার ফলে পড়াশোনা ব্যাহত হয় এবং এর কাঠামো ধ্বংস হয়। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, পাল রাজবংশের পতনের পরে বিক্রমশিলার বিশ্ববিদ্যালয় আর কোনওরকম সেভাবে আর্থিক সহায়তা পায়নি, যার ফলে ক্রমশ তা পৃষ্ঠপোষকতা হারাতে থাকে। অনেক ঐতিহাসিক এও মনে করেন যে ভারতবর্ষে বৌদ্ধ ধর্ম প্রাধান্য হারাতে শুরু করলে বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

LinkedIn
Share