মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভালোবাসার শহর থেকে ভাঙা হৃদয় নিয়েই ফিরতে হল ভারতকে। টোকিও অলিম্পিক্সে ভারতের পদক সংখ্যা ছিল ৭। এবার প্যারিস অলিম্পিক্সে সেই সংখ্যা টপকানো যায়নি। বরং একটি পদক কমে সেটি দাঁড়িয়েছে ৬-এ। মেলেনি সোনার মেডেলও। তবু অলিম্পিক্সের (Paris Olympics 2024) মঞ্চে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন ভারতের অ্যাথলিটরা। সকলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। প্রত্যেক পদকজয়ীকে যিনি ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দিয়েছেন বাহবা।
প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা
রবিবার প্যারিস অলিম্পিক্সের (Paris Olympics) সমাপ্তি ঘোষণার পর রাতের দিকে প্রধানমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘প্যারিস অলিম্পিক্স শেষ হওয়ার দিন আমি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করা প্রত্যেক অ্যাথলিটের প্রশংসা করছি। প্রত্যেক অ্যাথলিট নিজের সেরাটা দিয়েছেন। দেশের প্রত্যেকে তাঁদের নিয়ে গর্বিত। আগামী প্রতিযোগিতার জন্যেও আমাদের ক্রীড়াবিদদের অনেক শুভেচ্ছা জানাই।’ প্রত্যাশা, স্বপ্ন, টার্গেট—সব কিছু এক দিকেই ইঙ্গিত করেছিল। এ বার অলিম্পিক্সে নাকি দশের বেশি পদক জিতবে টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু পারেননি অ্যাথলিটরা। ৬ জন অ্যাথলিট চতুর্থ পজিশনে শেষ করেছেন। সেগুলিতে সাফল্য মিললে হয়তো চওড়া হত হাসি। কিন্তু হয়নি তবে পারব, লস অ্যাঞ্জেলসে ঠিক লক্ষ্যপূরণ হবে, এই আশাতেই বুক বাঁধতে চায় ভারতবাসী।
সরকারের সাহায্য (Paris Olympics 2024)
মোদি সরকারের অধীনে, ভারতীয় ক্রীড়া ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে, বিশেষ করে অলিম্পিক্সের প্রস্তুতির জন্য। সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যাতে ভারতের ক্রীড়াবিদরা বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় নিজেদের সেরা প্রদর্শন করতে পারেন।
অলিম্পিক পডিয়াম স্কিম (TOPS): ২০১৪ সালে শুরু হওয়া লক্ষ্য অলিম্পিক পডিয়াম স্কিম, একটি প্রধান উদ্যোগ যা সম্ভাব্য অলিম্পিক পদকজয়ী ক্রীড়াবিদদের চিহ্নিত করে এবং তাদের প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ এবং উচ্চমানের কোচিংয়ের ব্যবস্থা করে। এই স্কিমের আওতায় ক্রীড়াবিদদের ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা, পুষ্টি এবং মানসিক সুস্থতার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
খেলো ইন্ডিয়া স্কিম: ২০১৮ সালে চালু হওয়া খেলো ইন্ডিয়া স্কিমটি ভারতের ক্রীড়া সংস্কৃতিকে বিকশিত করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে স্কুল ও কলেজ স্তর থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করা হয় এবং তাদের জন্য বৃত্তি, প্রশিক্ষণ সুবিধা, এবং প্রতিযোগিতার সুযোগ প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে গ্রামীণ এবং শহুরে এলাকায় ক্রীড়া অবকাঠামো উন্নত করা হয়েছে, যা নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি: মোদি সরকার ক্রীড়া ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। এর ফলে উন্নত প্রশিক্ষণ, সুবিধা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশেষ করে এলিট ক্রীড়াবিদদের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, যাতে তাঁরা বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
অবকাঠামো উন্নয়ন: সরকার সারা দেশে ক্রীড়া অবকাঠামো উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। এতে উচ্চ কর্মক্ষমতা কেন্দ্র, প্রশিক্ষণ সুবিধা, এবং স্টেডিয়াম নির্মাণ এবং আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হয়েছে, যা ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
ভারতের পদক
নীরজ চোপড়া, মনু ভাকেরদের হাত ধরে প্যারিস অলিম্পিক্স থেকে মোট ৬টি পদক এসেছে ভারতের ঝুলিতে। তার মধ্যে ৫টি ব্রোঞ্জ এবং একটি রুপো। মনু ভাকের প্যারিস অলিম্পিক থেকে দেশকে প্রথম পদক এনে দিয়েছিলেন। মহিলাদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন তিনি। ব্যাক্তিগত বিভাগে ব্রোঞ্জেই থেমে থাকেননি মনু ভাকের। তিনি সরবজোৎ সিংয়ের সঙ্গে ১০ মিটার এয়ার পিস্তল মিক্সড টিম ইভেন্টেও ব্রোঞ্জ পেয়েছেন। প্যারিস অলিম্পিক্সে (Paris Olympics 2024) শুটিং থেকে ব্যাক টু ব্যাক তিনটি পদক পায় ভারত। পুরুষদের ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পজিশনে ব্রোঞ্জ পান স্বপ্নিল কুশালে। টোকিও অলিম্পিকের পর প্যারিস গেমস থেকেও ভারতীয় পুরুষ হকি টিম দেশকে পদক দিয়েছে। এ বার পিআর শ্রীজেশরা প্যারিসে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন। নীরজ চোপড়া জ্যাভলিন থ্রো-তে টোকিও অলিম্পিকে সোনা জিতেছিলেন। প্যারিস গেমসে তিনি পুরুষদের জ্যাভলিন থ্রো-তে রুপো পেয়েছেন। এ বারের গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থে এটিই ভারতের একমাত্র রুপো। প্যারিস গেমসে শেষ বেলায় কুস্তি থেকে ব্রোঞ্জ এনে দেন আমন শেরাওয়াত। তিনি প্যারিস অলিম্পিকে পুরুষদের ৫৭ কেজি ফ্রিস্টাইল ইভেন্ট থেকে দেশকে ব্রোঞ্জ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: অলিম্পিক্স পদকের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন! ব্রোঞ্জজয়ী অ্যাথলিটের পোস্ট নিয়ে জল্পনা
মানসিকতার ফারাক (Paris Olympics 2024)
এখন ভারতীয় অ্যাথলিটদের জন্য অর্থ বা পরিকাঠামোর অভাব খুব একটা নেই। দেশে পরিকাঠামোর অভাব থাকলেও প্রথম সারির অ্যাথলিটরা বিদেশে গিয়ে ট্রেনিংয়ের সুযোগ পান। তবে কোথাও একটা মানসিকতার উন্নতি প্রয়োজন। এমনটাই মনে করছেন অভিজ্ঞরা। লক্ষ্য সেন যে ভাবে এগিয়ে গিয়েও হেরে যান ব্রোঞ্জ পদকের ম্যাচে, যে ভাবে অঙ্কিতা-ধীরাজরা মোক্ষম সময়ে তির মারেন সাতে, ট্প থ্রি-র মধ্যে থেকেও কয়েকটা গড়পড়তা শট মেরে চার নম্বরে পিছিয়ে পড়েন, তা আসল সময়ে টেনশনে ভোগার জন্যই। তাই যাঁরা চতুর্থ হয়েছেন, তাঁরা সবাই একটুর জন্য পদক খোয়াননি। বেশিরভাগই হারিয়েছেন মানসিক ক্ষমতায় অনেকটা পিছিয়ে থেকে। ঠিক চার বছর পর, ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক্সের আগে ভারতীয় অ্যাথলিটদের সেই দূরত্ব অতিক্রম করতেই হবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।