Pakistan: “পাকিস্তান ডুবন্ত টাইটানিক, এই জাহাজে উঠতে রাজি নন  কেউ,” বললেন জামিল মাকসুদ

Pakistan is sinking titanic says ukpnp leader on pojk violent protests

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “পাকিস্তান (Pakistan) এখন ডুবন্ত টাইটানিক। পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ আর এই ডুবন্ত জাহাজে উঠতে রাজি নন।” কথাগুলি বললেন ইউনাইটেড কাশ্মীর পিপলস ন্যাশনাল পার্টির (UKPNP) বিদেশ বিষয়ক কমিটির সভাপতি জামিল মাকসুদ। তিনি বলেন, “দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও মৌলিক পরিষেবা থেকে বঞ্চনা মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। এই সব কারণেই পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরে হিংসাত্মক বিক্ষোভ হচ্ছে।”

কী বললেন জামিল মাকসুদ (Pakistan)

রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৬০তম অধিবেশনের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এখানে সীমাহীন দুর্নীতি চলছে। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, স্বজনপ্রীতি ও যে ধরনের শাসন ব্যবস্থা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটাই আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী। সাংবিধানিক বিধিনিষেধ স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে। পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর এখন পাকিস্তানে উৎপাদিত ভেজাল ও নকল খাদ্যপণ্যের অন্যতম বড় বাজারে পরিণত হয়েছে।” মাকসুদ বলেন, “এখানকার মানুষ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তরুণ প্রজন্ম এখন রাস্তায় নেমে বলছে আমরা একটি ঐক্যবদ্ধ জম্মু ও কাশ্মীর চাই। আমরা আমাদের স্থানীয় পরিচয়কে পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত, ধ্বংস বা বিলীন হতে দেব না। পাকিস্তান ডুবন্ত টাইটানিক, আর আমরা তাতে চড়তে রাজি নই।”

সংঘর্ষ অব্যাহত

প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরে পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। পাক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত ১০ জন নিহত এবং অনেকেই গুরুতর জখম হয়েছেন। এই অস্থিরতার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ একটি আট সদস্যের মন্ত্রিসভা কমিটি মুজাফফরাবাদে পাঠিয়েছেন। এই কমিটিতে রানা সানাউল্লাহ, আহসান ইকবাল এবং পিপিপি নেতা রাজা পারভেজ আশরাফ-সহ অন্যরা রয়েছেন। তাঁরা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া সিভিল সোসাইটি অ্যালায়েন্সের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।

ক্রম বর্ধমান দুর্নীতি

ক্রম বর্ধমান দুর্নীতি, দুর্বল শাসনব্যবস্থা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে শুরু হওয়া (Pakistan) এই সব বিক্ষোভ সোমবার থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণ হয়েছে। মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত থাকায় বিদেশে থাকা প্রবাসী আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে জামিল মাকসুদ পাকিস্তানকে একটি দুষ্কৃতিকারী রাষ্ট্র বলে অভিহিত করেন। তাঁর দাবি, পাকিস্তান এমন একটি রাষ্ট্র যে বারবার স্বদেশের জনগণের ওপর বলপ্রয়োগ করেছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, তারা নিজেদের জনগণ, বিশেষ করে বালুচিস্তান, সিন্ধু এবং আরও অনেক অঞ্চলের মানুষের মৌলিক মানবাধিকার অস্বীকার করছে। তিনি বলেন, “পাকিস্তান একটি দুষ্কৃতিকারী রাষ্ট্র। এর জনগণকে দমন করার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বালুচিস্তান, সিন্ধু, খাইবার পাখতুনখোয়া, গিলগিট-বালটিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে মানুষ ক্রমাগত দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছে।”

হিংসাত্মক বিক্ষোভ

তিনি বলেন, “এখন হিংসাত্মক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আর পাকিস্তান (Pakistan) এসব শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে জোরপূর্বক দমন করার চেষ্টা করছে।” তিনি জানান, পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ আর পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চায় না। তিনি বলেন, “মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে যে তারা আর পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে রাজি নয়। এই সমস্ত অঞ্চলের মানুষের প্রধান দাবি এবং লক্ষ্যই হল ভেঙে যাওয়ার জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের সঙ্গে পুনর্মিলিত হওয়া। এই ধারণার কারণেই পাকিস্তান বলপ্রয়োগ করে জনগণের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মানুষ আর চুপ করে থাকতে রাজি নয়।” মকসুদের অভিযোগ, পাকিস্তান পিওজেকের পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টা করছে, সেটিকে পাকিস্তানের সংলগ্ন আবোটাবাদ ও মুরির মতো জেলাগুলির সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনার মাধ্যমে। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “পিওজেকে এখন জঙ্গি সংগঠনগুলির ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে।” তিনি মনে করিয়ে দেন, চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি লস্কর-ই-তৈবা রাওয়ালাকোটে হামাসের সদস্যদের প্রকাশ্যে অস্ত্র-সহ শোভাযাত্রা করেছিল। তিনি বলেন, “মানুষকে জোর করে প্রক্সি সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আমরা পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের বলির পাঁঠা হতে রাজি নই।”

প্রতিবাদ পঞ্চম দিনে

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের (Pakistan) দখলদারির বিরুদ্ধে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে প্রতিবাদ পঞ্চম দিনে পা দিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক অবহেলার বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে, ভর্তুকিযুক্ত আটা, বিদ্যুৎ এবং শরণার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পরিষদ আসন বাতিল-সহ মৌলিক চাহিদা পূরণের দাবিও জানাচ্ছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই অস্থিরতা ১৯৪৭ সাল থেকে পাকিস্তানের কঠোর নিয়ন্ত্রণে থাকা পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জনগণের মধ্যে জমে থাকা হতাশা ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share