Mohan Bhagwat: “গীতা কেবল পড়ার জন্য নয়, বরং জীবনে ধারণ করার জন্য”, বললেন ভাগবত

Gita is not just a book to study a way of life rss mohan bhagwat

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “গীতা কেবল পড়ার জন্য নয়, বরং জীবনে ধারণ করার জন্য।” উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে আয়োজিত গীতা কার্যক্রমে যোগ দিতে গিয়ে কথাগুলি বললেন সরসংঘচালক মোহন ভাগবত (Mohan Bhagwat)। এই অনুষ্ঠানে তিনি (RSS) বলেন, “আজ এই অনুষ্ঠান শেষ হলেও আমাদের কর্তব্য এখানেই শেষ হয়ে যায় না। আমরা সবাই এখানে উপস্থিত হয়েছি। কারণ গীতার বার্তা আমাদের আচরণে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। গীতায় মোট ৭০০ শ্লোক রয়েছে। যদি আমরা প্রতিদিন মাত্র দু’টি শ্লোকও পড়ি এবং সেগুলি উপলব্ধি করি এবং তার সারকথা জীবনে প্রয়োগ করি, তাহলে এক বছরের মধ্যেই আমাদের জীবন সত্যিকার অর্থেই ‘গীতাময়’ হয়ে উঠতে পারে।”

জীবনে অন্তরের শান্তি নেই (Mohan Bhagwat)

সরসংঘচালক বলেন, “যেমন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুন মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন, আজ জীবনসংগ্রামের ভেতর দিয়ে গোটা বিশ্ব একই ধরনের ভয়, আসক্তি এবং বিভ্রান্তির অভিজ্ঞতা লাভ করছে। অতিরিক্ত পরিশ্রম ও অবিরাম ছুটে চলার পরেও মানুষ শান্তি, শৃঙ্খলা, তৃপ্তি এবং বিশ্রাম করতে পারছেন না। হাজার বছর আগে যে সংঘাত, রাগ, ও সামাজিক বিকৃতি বর্ণিত হয়েছে, সেগুলি আজও ভিন্ন ভিন্ন রূপে বিদ্যমান।” ভাগবত বলেন, “বস্তুগত ঐশ্বর্য বৃদ্ধি পেলেও জীবনে অন্তরের শান্তি ও ভারসাম্য অনুপস্থিত। অসংখ্য মানুষ এখন উপলব্ধি করছেন যে এতদিন ধরে তাঁরা যে পথ অনুসরণ করেছেন তা সঠিক ছিল না, তাঁদের প্রকৃত পথের প্রয়োজন। আর সেই পথ নিহিত আছে ভারতের নিত্যজীবন-প্রবাহে এবং শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতার জ্ঞানে, যা যুগ যুগ ধরে বিশ্বকে আনন্দ, শান্তি ও সমন্বয়ের পথ দেখিয়ে এসেছে।”

গীতা প্রতিবারই নতুন প্রেরণা দেয়

তিনি বলেন, “গীতা অসংখ্য উপনিষদ ও দর্শনের সার। অর্জুনের মতো দৃঢ়, সাহসী এবং কর্তব্যপরায়ণ মানুষও যখন মোহে পড়ে গেলেন, তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে মূল সত্য, ধর্ম এবং কর্তব্য স্মরণ করিয়ে আবার স্থিতপ্রজ্ঞ করে তুলেছিলেন। গীতার মর্ম সহজ ভাষায় বোঝা প্রয়োজন, যাতে তা জীবনে আত্মস্থ করা যায়। গীতাকে যতবার পড়া বা ভাবা হয়, ততবারই তা নতুন প্রেরণা দেয় এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী পথ দেখায়।” সরসংঘচালক বলেন, “ভগবান কৃষ্ণের প্রথম উপদেশ হল, সমস্যা থেকে পালিয়ে যেও না, মুখোমুখি হও। “আমি কর্তা”- এই অহংকার লালন কোরো না, কারণ প্রকৃত কর্তা হলেন পরমাত্মা। মৃত্যু অনিবার্য, দেহ সর্বদাই পরিবর্তনশীল।” এর পরেই সংঘপ্রধান বলেন, “গীতা শুধু পড়ার গ্রন্থ নয়, এটি জীবনযাপনের শাস্ত্র। আমরা যদি গীতাকে আচরণের অংশ করি, তবে ভয়, মোহ ও দুর্বলতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারি এবং জীবনকে (RSS) উৎসর্গীকৃত, অর্থপূর্ণ ও সফল করতে পারি। অতি সামান্য কাজও যদি সেবার মনোভাব নিয়ে করা হয়, তাহলে তা-ও মহান বলে গণ্য হয়।” ভাগবত বলেন, “বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব কেবল গীতার মাধ্যমেই। দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করে দেশসেবায় এগিয়ে চলাই আমাদের পরম কর্তব্য, এবং এই পথেই ভারত আবার বিশ্বগুরুর আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে (Mohan Bhagwat)।”

আদিত্যনাথের বক্তব্য

এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। তিনি বলেন, “ভরতবর্ষে সনাতন ধর্মের প্রতিটি অনুসারীর উচিত গভীর ভক্তিভরে গীতা-র ১৮টি অধ্যায় এবং ৭০০টি শ্লোক পাঠ করা। আমরা কখনও ধর্মকে শুধু উপাসনার পদ্ধতি হিসেবে দেখিনি। আমাদের কাছে ধর্ম হল জীবনযাপনের এক শিল্প। আমরা প্রত্যেক দায়িত্বই ধর্মবোধ নিয়ে পালন করি। আমরা কখনও আমাদের মহত্ত্ব নিয়ে অহংকার করিনি। কোথাও যেন কোনও অন্যায় না ঘটে। আমাদের ভাবনা হওয়া উচিত,  নিজে বাঁচো এবং অন্যকে বাঁচতে দাও। কর্তব্যের জন্যই যুদ্ধ লড়া হয় (RSS)। যেখানে ধর্ম আছে, সেখানে জয় আছে। প্রত্যেকের নিজের ধর্ম অনুযায়ী আচরণ করা উচিত। অধর্মের পথে করা যে কোনও কাজই আমাদের ধ্বংসের দিকেই নিয়ে যায় (Mohan Bhagwat)।”

আরএসএসের অবদান

আদিত্যনাথ বলেন, “যেভাবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ তার শতবর্ষ উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে নিজেকে জনমানসে যুক্ত করছে, তা আজ বিশ্বের কাছে কৌতূহল ও বিস্ময়ের বিষয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা এখানে এসে জানতে চান, এখানকার মানুষ কি সংঘের সঙ্গে যুক্ত? আমরা বলি, হ্যাঁ, আমরা স্বয়ংসেবক হিসেবে কাজ করেছি। এই সংগঠন সমাজের প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করেছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করে। যে কোনও বিপর্যস্ত মানুষ সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলে, প্রতিটি স্বয়ংসেবক তাঁকে নিজের কর্তব্য মনে করে সেবা করেন—জাতি, ধর্ম, বর্ণ, অঞ্চল বা ভাষার কোনও পার্থক্য না করেই, তাঁদের সেবা করা হয়। সেবা কখনও কোনও লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত হয় না। এটাই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের শিক্ষা (Mohan Bhagwat)।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share