মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল। সংসদে বোমা ছুড়লেন বিপ্লবী ভগৎ সিং এবং তাঁর সঙ্গী বটুকেশ্বর দত্ত। বোমা নিক্ষেপের সময় তাঁরা স্লোগানও দেন ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ! এবং সাম্রাজ্যের ধ্বংস!’ এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছিল তামাম বিশ্ব। ব্রিটিশ সরকারের হাতে ধরা পড়েন এই দুই স্বাধীনতা সংগ্রামী। বিচারে উভয়েই দোষী সাব্যস্ত হন। ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি হয়। সাজা দেওয়া হয়েছিল বটুকেশ্বর দত্তকেও। তা সত্ত্বেও বটুকেশ্বর দত্ত ক্রমেই চলে গেলেন বিস্মৃতির আড়ালে।
বটুকেশ্বরের পরিচিতি (Batukeshwar Dutt)
এই বটুকেশ্বর পরিচিত ছিলেন বিকে দত্ত, বট্টু এবং মোহন নামেও। বাবার নাম গোষ্ঠ বিহারী দত্ত। ১৯১০ সালের ১৮ নভেম্বর অধুনা পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ গ্রামের ওনারিতে এক বাঙালি কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বটুকেশ্বর। কানপুরের পণ্ডিত পৃথিবীনাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। চন্দ্রশেখর আজাদ ও ভগৎ সিংয়ের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন বটুকেশ্বর। ১৯২৪ সালে এঁদের সঙ্গে তিনি দেখা করেছিলেন কানপুরে। বটুকেশ্বর হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের কাজ করার সময় বোমা বাঁধতে শিখেছিলেন।
দেশপ্রেমের শেকড়
কানপুরের স্কুলে পড়ার সময়ই দেশপ্রেমের শেকড় গেড়ে বসেছিল বটুকেশ্বরের হৃদয় মন্দিরে। তিনি গোপনে রামকৃষ্ণ মিশনের কর্মীদের দ্বারা বিতরিত ব্রিটিশ-বিরোধী লিফলেটগুলি ছাত্রদের ব্যাগে ভরে দিতেন। তিনি যখন কৈশোরে পা দেন, তখন দেশে জ্বলছে প্রতিরোধের আগুন। লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল ভগত সিং, সুখদেব এবং রাজগুরুকে। তাঁদের সঙ্গে ফাঁসিকাঠ শেয়ার করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন বটুকেশ্বর। ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি হলেও, বটুকেশ্বরকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জেলে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে তাঁর। ১৯৩৮ সালে তাঁকে এই শর্তে মুক্তি দেওয়া হয় যে তিনি আর হিংসাত্মক কার্যকলাপে জড়াবেন না।
যদিও রক্তে তখনও তাঁর ফুটছে স্বাধীনতা সংগ্রামের আগুন। ১৯৪২ সালে বটুকেশ্বর যোগ দেন ভারত ছাড়ো আন্দোলনে। আবারও ঠাঁই হয় জেলে। আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন বটুকেশ্বর। ভর্তি করা হয় এইমসে। তাঁকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন পাঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী রাম কিষান। জানতে চান, তাঁর শেষ ইচ্ছে কী। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বটুকেশ্বর বলেছিলেন, “আমি কেবল আমার বন্ধু ভগত সিংয়ের পাশে সমাহিত হতে চাই।” তাঁর শেষ ইচ্ছে মতো, তাঁকে সমাহিত করা হয় ভগত সিংয়ের সমাধির পাশেই।

Leave a Reply