Pm Modi: ২৫ নভেম্বর অযোধ্যার রামমন্দিরে ১৬১ ফুট উঁচুতে গৈরিক ধ্বজ উত্তোলন করবেন মোদি

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আগামী ২৫ নভেম্বর অযোধ্যার রামমন্দিরে (Ayodhya Ram Temple) গৈরিক ধ্বজ উত্তোলনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি চরম তুঙ্গে। সারা দেশজুড়ে রামভক্তদের মনে এখন ব্যাপক উন্মাদনা। রাম মন্দির নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ হওয়ার পথে। এই আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Pm Modi)। গেরুয়া পতাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে দেশের ভর কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে রামনগরী। ইতিমধ্যে শহর জুড়ে নানা আলোকসজ্জা এবং রঙিন আর্টে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত এবং গণ্যমান্য অতিথিদের আগমন শুরু হয়েছে।

মন্দির পূর্ণতার দিকে (Ayodhya Ram Temple)

আযোধ্যা রামমন্দির (Ayodhya Ram Temple) হিন্দু সংস্কৃতির প্রধান ধারক বাহক। রামায়ণের শ্রীরাম এবং অযোধ্যানগরী অত্যন্ত ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। রামকে অযোধ্যা ছাড়া কল্পনা করা যেমন অসাধ্য ঠিক তেমনি অযোধ্যাকে ছাড়া রামও অসম্পূর্ণ। ৫০০ বছরের ঐতিহাসিক, সামাজিক, ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রতীক রাম। রাম নাম ছাড়া জগত উদ্ধার সম্ভব নয়। হিন্দু ধর্মের পুনঃজাগরণ এবং রামলালার জন্মস্থানে মন্দির স্থাপনা করা ভারতীয় সনাতন সংস্কৃতির গভীর আস্থা এবং বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ভাবনা। ২০২৪ সালে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা থেকে গৈরিক ধ্বজ উত্তোলনের সময় পর্যন্ত মন্দির যে ক্রমশ পূর্ণ থেকে পূর্ণত্তোমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা অনেকেই রামভক্তরা মনে করছেন। তবে এই গেরুয়া বর্ণের পতাকা শ্রী রামের ধর্মীয় মহিমার প্রতীক। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই পতাকা তৈরি করা হয়েছে।

১৬১ ফুট উঁচু শিখরের উপর স্থাপন

সূর্য, ওঁ এবং কোভিদার গাছের প্রতীক বহন করবে ২২ ফুট বাই ১১ ফুট লম্বা এই পতাকাটি। আনুমানিক ১৬১ ফুট উঁচু শিখরের উপর স্থাপন করা হবে। তবে ৪২ ফুট উঁচু কাঠামো থেকে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে উঠবে। এই বিরাট পতাকা বা ধ্বজ উত্তোলন করতে দশ সেকেন্ডের মতো সময় লাগবে। উত্তোলনের সময় ব্যবহার করা হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ধ্বজ উত্তোলনের সময় মন্দিরের ঘণ্টা বাজানো হবে এবং বৈদিক মন্ত্রের প্রতিধ্বনিত দেওয়া হবে। পতাকাটি তিন কিলোমিটার দূর থেকেও আকাশে দেখা যাবে।

পতাক উত্তোলনের সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Pm Modi) তিন ঘন্টার মতো সময় ব্যয় করে ভ্রমণ করবেন। পথে হনুমানগড়ি এবং রাম লালার গর্ভগৃহে পূজা করবেন। তারপরে সপ্ত মন্দির পরিকোটা, শেষাবতার মন্দির এবং রামায়ণের দেয়ালচিত্র পরিদর্শন একে একে পরিদর্শন করবেন। মন্দির নির্মাণের পিছনে বিভিন্ন প্রযুক্তিবিদ, শ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ার, রক্ষীকর্মীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বার্তালাপ করবেন।

৮,০০০ অতিথি আসার সম্ভাবনা

সামগ্রিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি, নিরাপত্তা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের কারণে ২৫ নভেম্বর জনসাধারণের দর্শনকে স্থগিত করা হয়েছে। ২৬ নভেম্বর থেকে ভক্তদের আবার প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। পতাকা (Ayodhya Ram Temple) উত্তোলনে দিনব্যাপী উৎসবে প্রায় ৮,০০০ অতিথি আসার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে মন্দিরে প্রথম রাম-সীতা বিবাহ অনুষ্ঠান দেখানো হবে। এই তীর্থ পুরমে ২,৫০০ দর্শনার্থীর জন্য তাবুতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে অযোধ্যা জুড়ে ৫,০০০ এরও বেশি কক্ষ বুক করা হয়েছে। রাম মন্দির ট্রাস্ট এই কক্ষগুলির মধ্যে ১,৬০০টি কক্ষকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সামগ্রিক ভাবে ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য।

রামমন্দিরের এই গৈরিক পতাকা আমেদাবাদে তৈরি করা হয়েছে। পতাকাটি নাইলন প্যারাসুট ফ্যাব্রিক দিয়ে তৈরি, যা তাপ, বৃষ্টি এবং তীব্র বাতাস সহ্য করার জন্য তৈরি। এর ডাবল-কোটেড সিন্থেটিক স্তর আর্দ্রতা শোষণ এবং তাপমাত্রার প্রভাব কমাবে। অন্যদিকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার ফলে পুরোহিতদের উচ্চ শিখরে উঠতে হবে না। তবে শ্রী রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট এখনও ধ্বজ উত্তোলনের সময়সূচী নির্ধারণ করেনি।

অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু ২১ নভেম্বর থেকেই

মন্দির নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্র বলেন, “শুভ মুহুর্তটি বেছে নেওয়া হয়েছে কারণ এটি ভগবান রামের (Ayodhya Ram Temple) জন্মের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত আচার-অনুষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে শুভ সময়গুলির মধ্যে একটি। প্রস্তুতিমূলক অনুষ্ঠানগুলি ২১ নভেম্বর শুরু হবে, মূল অনুষ্ঠান পর্যন্ত যজমানরা কমপ্লেক্সের ভিতরে থাকবেন।

থাকবেন মোহন ভাগবত এবং যোগী আদিত্য নাথ 

রাম-সীতা বিবাহ অনুষ্ঠানে নেপালের জনকপুর থেকে অংশগ্রহণ করবেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মতো নেতারা উপস্থিত থাকবেন। তীর্থক্ষেত্র পুরমে ১,৬০০ অতিথির জন্য একটি তাবুর শহর প্রায় প্রস্তুত, যেখানে খাবারের কাউন্টার, প্রসাদের স্টল এবং সরাসরি দেখার জন্য এলইডি স্ক্রিনও থাকবে।”

মন্দিরের প্রসাদ প্রসঙ্গে নৃপেন্দ্র মিশ্র  আরও বলেন, “রাম লালার উদ্দেশ্যে নিবেদন এবং উপস্থিতদের মধ্যে বিতরণের জন্য ঘি, বেসন এবং শুকনো ফল দিয়ে তৈরি পাঁচশো কেজি লাড্ডু প্রস্তুত করা হচ্ছে। দর্শনার্থীদের জিনিসপত্রের জন্য ১০,০০০ এরও বেশি লকার স্থাপন করা হয়েছে। মন্দিরে প্রবেশ এবং প্রস্থান পথের পাশে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ছাউনি ছায়া এবং আশ্রয় প্রদানের জন্য একটি শেড প্রস্তুত করা হয়েছে। অযোধ্যা এখন চূড়ান্ত প্রস্তুতির মুহূর্তে সেজে উঠছে। সনাতনী ধর্মীয় বিশ্বাস এবং রাষ্ট্রীয় নৈপুণ্যের একটি ঐতিহাসিক চিত্র প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুত।

Please follow and like us:
LinkedIn
Share