Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 473: “ধ্যানে এইরূপ একাগ্রতা হয়, অন্য কিছু দেখা যায় না শোনাও যায় না”

    Ramakrishna 473: “ধ্যানে এইরূপ একাগ্রতা হয়, অন্য কিছু দেখা যায় না শোনাও যায় না”

    ৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
    ঠাকুরের নিজ মুখে কথিত সাধনা বিবরণ

     

    “একজন একলা একটি পুকুরের ধারে মাছ ধরছে। অনেকক্ষণ পরে ফাতনাটা নড়তে লাগল, মাঝে মাঝে কাত হতে লাগল। সে তখন ছিপ হাতে করে টান মারবার উদ্যোগ করছে। এমন সময় একজন পথিক কাছে এসে জিজ্ঞাসা করছে, মহাশয় (Kathamrita), অমুক বাঁড়ুজ্যেদের বাড়ি কোথায় বলতে পারেন? সে ব্যক্তির হুঁশ নাই। তার হাত কাঁপছে, কেবল ফাতনার দিকে দৃষ্টি। তখন পথিক বিরক্ত হয়ে চলে গেল। সে অনেক দূরে চলে গেছে, এমন সময় ফাতনাটা ডুবে গেল, আর ও ব্যক্তি টান মেরে মাছটাকে আড়ায় তুললে। তখন গামছা দিয়ে মুখ পুঁছে, চিৎকার করে পথিককে ডাকছে—ওহে—শোনা—শোনো! পথিক ফিরতে চায় না, অনেক ডাকাডাকির পর ফিরল। এসে বলছে, কেন মহাশয় (Ramakrishna), আবার ডাকছ কেন? তখন সে বললে, তুমি আমায় কি বলছিলে? পথিক বললে, তখন অতবার করে জিজ্ঞাসা করলুম — আর এখন বলছো কি বললে! সে বললে, তখন যে ফাতনা ডুবছিল, তাই আমি কিছুই শুনতে পাই নাই।

    “ধ্যানে এইরূপ একাগ্রতা হয়, অন্য কিছু দেখা যায় না শোনাও যায় না। স্পর্শবোধ পর্যন্ত হয় না। সাপ গায়ের উপর দিয়ে চলে যায়, জানতে পারে না। যে ধ্যান করে সেও বুঝতে পারে না—সাপটাও জানতে পারে না।

    “গভীর ধ্যানে ইন্দ্রিয়ের (Ramakrishna) সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। মন বহির্মুখ থাকে না — যেন বার-বাড়িতে কপাট পড়লো। ইন্দ্রিয়ের পাঁচটি বিষয়! রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ—বাহিরে পড়ে থাকবে।

    “ধ্যানের সময় প্রথম প্রথম ইন্দ্রিয়ের বিষয় সকল সামনে আসে—গভীর ধ্যানে সে সকল আর আসে না—বাহিরে পড়ে থাকে। ধ্যান করতে করতে আমার কত কি দর্শন হত। প্রতক্ষ দেখলাম—সামনে টাকার কাঁড়ি, শাল, একথালা সন্দেশ, দুটো মেয়ে, তাদের ফাঁদী নথ। মনকে জিজ্ঞাসা করলাম আবার—মন তুই কি চাস? মন বললে, ‘না, কিছুই চাই না। ঈশ্বরের পাদপদ্ম ছাড়া আর কিছুই চাই না।’ মেয়েদের ভিতর-বার সমস্ত দেখতে পেলাম (Kathamrita)—যেমন, কাচের ঘরে সমস্ত জিনিস বার থেকে দেখা যায়! তাদের ভিতরে দেখলাম—নাড়ীভুঁড়ি, রক্ত, বিষ্ঠা, কৃমি, কফ, নাল, প্রস্রাব এই সব!”

  • Durga Puja 2025: শুরু হয়ে গিয়েছে নবরাত্রি, এই ৯ দিন কী কী নিয়ম পালন করলে সন্তুষ্ট হন দেবী?

    Durga Puja 2025: শুরু হয়ে গিয়েছে নবরাত্রি, এই ৯ দিন কী কী নিয়ম পালন করলে সন্তুষ্ট হন দেবী?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আশ্বিনের শুক্লপক্ষে মহালয়া অমাবস্যার পর দেবীপক্ষের (Durga Puja 2025) সূচনা হয়। মা উমা কৈলাস থেকে লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী এবং কার্তিককে নিয়ে বাপের বাড়িতে আসেন। বাঙালির কাছে পাঁচদিন ধরে পূজিত হন দেবী উমা। দশমীর দিন আবার স্বামীর গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। এই সময়েই দেবীপক্ষ সূচনার প্রথমা থেকে দশমী পর্যন্ত টানা নয় দিন সারা ভারতের হিন্দু সমাজের মধ্যে পালিত হয় নবরাত্রি উৎসব (Navaratri 2025)। নয় দিনে মা আদ্যাশাক্তি মহামায়াকে নয়টি রূপে পুজো করা হয়ে থাকে। ভক্তরা এই সময় অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করে থাকেন। শক্তির উপাসকরা এই নয় দিন কী কী আহার গ্রহণ করেন এবং সেই সঙ্গে কোন কোন নিয়ম পালন করেন আসুন এক নজরে জেনে নিই।

    নবরাত্রির অঙ্গ প্রার্থনা, ভজন, কীর্তন এবং সাত্ত্বিক খাবার (Navaratri 2025)

    বঙ্গে দুর্গাপুজো (Durga Puja 2025) মূলত ষষ্ঠীর বোধন থেকে বিজয়দশমীর বিসর্জন পর্যন্ত মায়ের আরধনা হয়। এই সময়ে আবার উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম, সমগ্র ভারত জুড়ে পালিত দেবী মায়ের ৯টি অবতারের বিশেষ পুজো। মা দুর্গার নয়টি অবতারকে প্রার্থনা, ভজন, কীর্তন এবং সাত্ত্বিক খাবার পরিবেশন করা হয়। সেই সঙ্গে ভক্তরাও নিজের নিজের জীবন চর্চায় সাত্ত্বিক খাবার খেয়ে থাকেন। ২০২৫ সালের শারদীয়া দুর্গাপুজোর সঙ্গে নবরাত্রি পালিত (Navaratri 2025) হবে ২২ সেপ্টম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত।

    স্বল্পাহার এবং উপবাস পালন

    নবরাত্রি (Durga Puja 2025) বছরে দুবার পালন করা হয়। একবার আশ্বিন মাসে দেবী দুর্গার অকালবোধনের সময়, আরেকবার বসন্তকালের বসন্ত শুক্লপক্ষে। নবরাত্রীতেই দুর্গা পুজোর দেবীপক্ষের সূচনা হয়। ভক্তরা এই সময় মাকে সন্তুষ্ট করতে সাত্ত্বিক আহারের পাশাপাশি উপবাসও পালন করে থাকেন। অনেকেই যেমন ৯ দিন ধরে স্বল্পাহার এবং উপবাস পালন করেন, আবার কেউ কেউ যুগল রূপে স্বামী-স্ত্রীও উপবাস পালন করে থাকেন। পরিবারের মঙ্গল, বিশ্বসংসার, জগতের কল্যাণ এবং মনের অভীষ্ট ভাবনাকে পূরণ করতেই নবরাত্রিতে (Navaratri 2025) কঠিন ব্রতো পালন করে থাকেন ভক্তরা।

    দুরারোগ্য থেকে রক্ষা

    মায়ের আরাধনায় নবরাত্রিতে ভক্তরা দিন শুরু করেন ঘর এবং মন্দির পরিষ্কার করে। এরপর স্নান করে মা দুর্গার জন্য ভোগের প্রস্তুতি করেন। ভোগ নিবেদন করে মন্ত্রজপ করে মায়ের ভজন কীর্তন করেন। এরপর ভোগ প্রসাদ হলে সকলে সেই প্রসাদ গ্রহণ করেন। তবে ঐতিহাসিক এবং জ্যোতিষিরা বলেন, এই সময় বর্ষা শেষ এবং শীতের শুরু হয়। তাই এই সন্ধিক্ষণে বর্ষা-গরমের প্রভাব থেকে ক্রমেই ঋতু শীতের দিকে প্রবেশ করলে শারীরকে সবরকম ভাবে প্রস্তুত করতে হয়। পরিবর্তিত আবহাওয়ায় স্বাস্থ্যকর এবং হালকা খাবারকে প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করলে যে কোনও রকম দুরারোগ্য থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

    কোন কোন খাবারে না, আর কোনটায় হ্যাঁ

    নবরাত্রিতে (Navaratri 2025) যে যে খাবার ভক্তরা গ্রহণ করে থাকেন, তার মধ্যে প্রধান একটি গুণ থাকে খাবারে কোনও রকম আমিষ এবং পেঁয়াজ রসুন যুক্ত করা যাবে না। শরীরের জন্য উত্তেজক এমন খাবার বর্জনীয়। এই সময় খাওয়া যাবে না এমন কিছু খাবার হল- গম, চাল, মসুর ডাল, শিমের মতো শস্য এবং ডাল। মাদক বা অ্যালকোহল এবং তামাক সেবন করা যাবে না। মাংস, ডিম, অথবা যেকোনও ধরণের সামুদ্রিক খাবার খাওয়া যাবে না। তবে যে যে খাবার খাওয়া যাবে যেমন- আলু, মিষ্টি আলু, কুমড়ো, লাউ, কাঁচা কলা ইত্যাদির মতো ফল। একই ভাবে সবজির মতো সাত্ত্বিক খাবারও খাওয়া যাবে। জল, ফলের রস, দুধ, বাটারমিল্ক, লস্যি, পান করা যাবে। তবে সাদা লবণ, চাট মশলা এবং বিট লবণ এড়িয়ে চলা ভালো। কাঁচা লঙ্কা খাওয়া যাবে।

    করণীয় কাজ

    যাঁরা ৯ দিন ধরে টানা উপবাস করবেন, তাঁদের জন্য বেশ কিছু করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলি হল-

    ১. উপবাসের সময়, নিজেকে সম্পূর্ণ অভুক্ত রাখবেন না। প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর বাদাম এবং ফল খেতে থাকুন।

    ২. ৯ দিনের (Navaratri 2025) উপবাসের সময়, নবরাত্রির ডায়েট মেনে চলুন। বাদাম, ফল, দুধ এবং মাখনের মতো দুগ্ধজাত পণ্য খেতে পারবেন।

    ৩. শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সারাদিন জল, দুধ, বাটারমিল্ক এবং তাজা রস পান করুন।

    ৪. নবরাত্রির (Durga Puja 2025) সময় রান্নার রেসিপিতে বিটলবণ ব্যবহার করুন। এছাড়াও, মশলা ব্যবহার করার সময় জিরা, দারুচিনি, সবুজ এলাচ, লবঙ্গ, কালো মরিচ গুঁড়ো, লাল মরিচ গুঁড়ো এবং কালো মরিচের গুঁড়ো ব্যবহার করুন।

    ৫. উপবাসের সময় মাথা ঘোরা এবং দুর্বলতা এড়াতে কিছু খাওয়া বা পান করা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। এছাড়াও, শরীরে চিনি এবং লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে ভুলবেন না।

    কী কী করবেন না

    ১. বিশেষজ্ঞদের মতে, নবরাত্রির সময় খাবার তৈরির সময় পেঁয়াজ, রসুন এবং মশলা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। উত্তেজক উৎপন্ন করে এমন খাবার এবং সরিষার তেল না খাওয়াই ভালো।

    ২. নবরাত্রির সময় মাংস, ডিম, মদ এবং তামাক খাওয়াও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

    ৩. যদি তুমি উপবাস করো তাহলে সন্ধ্যা আরতি বা সূর্যাস্তের আগে ঠিকমতো পেট ভরে খাবার না খেলেই ভালো।

    ৪. প্যাকেটজাত জুস পান করা এড়িয়ে চলুন কারণ এতে স্বাদ বাড়ানোর জন্য লবণ এবং প্রিজারভেটিভ থাকতে পারে।

    আর কী কী পুষ্টিকর খাবার খাবেন?

    সাবুদানা খিচড়ি

    সাবুদানা, জিরা, কাঁচা মরিচ, কারি পাতা মিশিয়ে রান্না করে এবং জিরা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, ভাজা বাদাম, কাচা লঙ্কা, ধনে পাতা, লেবুর রস দিয়ে উপরে মাখিয়ে এই খাবার তৈরি করা হয়। স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ভালো।

    নারকেল লাড্ডু

    এই সহজ মিষ্টিটি তৈরি করা হয় কুঁচি করা নারকেল, দুধের গুঁড়ো, কনডেন্সড মিল্ক, দুধ, চিনি, এলাচ গুঁড়ো দিয়ে। তারপর লাড্ডুর আকারে তৈরি করে বাদাম দিয়ে উপরে মাখানো হয়।

    শসার রায়তা

    এই খাবারটি তৈরি করা হয় কুঁচি করে ভাজা শসা দিয়ে। ফেটানো দইয়ের সাথে মিশিয়ে এবং উপরে চিনি, ঘি, কাঁচা মরিচ এবং জিরা দিয়ে মিশিয়ে। শরীরের জন্য খুব ভালো খাবার। ফল হিসেবে এই সময় অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর খাবার হল- কলা, আপেল, পেঁপে এবং নাশপাতি। ফলগুলিকে টুকরো করে কেটে উপরে সৈন্ধব লবণ, কাঁচা লঙ্কা এবং ফেটানো দই দিয়ে মেশানো হয়।

  • Durga Puja 2025: দেবী দুর্গা ও তাঁর সন্তানদের সঙ্গে থাকা বাহনগুলির পৌরাণিক তাৎপর্য কি জানেন?

    Durga Puja 2025: দেবী দুর্গা ও তাঁর সন্তানদের সঙ্গে থাকা বাহনগুলির পৌরাণিক তাৎপর্য কি জানেন?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শরৎকালে প্রতি বছর মা দুর্গা (Durga Puja 2025) কৈলাস থেকে মর্তে বাপের বাড়িতে আসেন সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে। মা দুর্গা এবং তাঁর সন্তানদের সঙ্গে আসেন বাহনগুলিও। ইঁদুর আসে গণেশের সঙ্গে, রাজহাঁস আসে মা সরস্বতীর সঙ্গে, পেঁচা আসে মা লক্ষ্মীর সঙ্গে, ময়ূর আসে কার্তিকের সঙ্গে এবং স্বয়ং মা দুর্গা আসেন সিংহের পিঠে চড়ে। বাহনগুলির পৌরাণিক কাহিনিতে (Hindu Mythology) যাওয়ার আগে বলা দরকার, ভারতীয় উপমহাদেশে প্রকৃতি পুজোর রীতি বৈদিক যুগ থেকেই ছিল। মাটি, অগ্নি, বায়ু, নদী, গাছ সবকিছুই পুজো করা হত ওই যুগে। একটি মন্ত্রে আছে-

    গঙ্গেচযমুনেচৈব গোদাবরীসরস্বতী।
    নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলস্মিনসন্নিদ্ধিম কুরু।।

    অর্থাৎ, ভারতীয় সভ্যতায় গাছপালা, নদনদীর সঙ্গে সঙ্গে জীবজন্তুও মানুষের দৈনন্দিন কাজে উপকারী বলেই গণ্য হয়। এই ধারণা থেকেই বাহন হিসেবে হয়তো তারাও পূজিত হয়। এবার আসা যাক পৌরাণিক কাহিনিগুলিতে।

    মা দুর্গার বাহন সিংহ (Durga Puja 2025)

    পুরাণ অনুযায়ী (Mythological Significance)-দেবী পার্বতী হাজার বছর ধরে তপস্যা করেছিলেন শিবকে তাঁর স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য। তপস্যার কারণে দেবী অন্ধকারে মিশে যান। বিয়ের পর পার্বতীকে মহাদেব কালী বলে সম্বোধন করলে দেবী তৎক্ষণাৎ কৈলাস ত্যাগ করে ফের তপস্যায় মগ্ন হয়ে যান। তপস্যা রত দেবীকে শিকার করার ইচ্ছায় এক ক্ষুধার্ত সিংহ তাঁর দিকে আসতে শুরু করে। কিন্তু দেবীকে দেখে সেখানেই চুপ করে বসে যায় সে। সেই সময় বসে বসে সিংহ চিন্তা করতে থাকে, দেবী তপস্যা থেকে যখন উঠবেন, তখন তিনি খাবার হিসেবে গ্রহণ করবেন। এর মধ্যে বহু বছর কেটে যায়, কিন্তু সিংহ তার নিজের জায়গা থেকে নড়ে না। এদিকে দেবী পার্বতীর তপস্যা সম্পন্ন হওয়ার পর মহাদেব আবির্ভূত হলে পার্বতীকে গৌরবর্ণ বলে বর্ণনা করেন (Durga Puja 2025)। যে সিংহটি দেবীকে শিকার করতে এসেছিল, তাকেই বাহন হিসেবে গ্রহণ করেন দেবী। কারণ দেবীর জন্য অনেক বছর অপেক্ষা করেছিল সিংহ। এরপর পার্বতীর বাহনকে সিংহ বলে মনে করা হয়। আবার কালিকাপুরাণ অনুযায়ী, শ্রীহরি দেবীকে বহন করছেন। এই হরি শব্দের এক অর্থ সিংহ। আবার শ্রীশ্রীচণ্ডীতে উল্লেখ আছে গিরিরাজ হিমালয় দেবীকে সিংহ দান করেন। শিবপুরাণ বলে, ব্রহ্মা দুর্গাকে বাহনরূপে সিংহ দান করেছেন। সিংহ হলো শৌর্য, পরাক্রম, শক্তির প্রতীক। অসুরদের বিনাশকারী বাহন সিংহ।

    গণেশের বাহন ইঁদুর

    স্বর্গে দেবলোকের সভায় গান গেয়ে সকলের মনোরঞ্জন করতেন ক্রঞ্চ নামে এক গন্ধর্ব। একদিন বামদেব নামে এক ঋষি এসে উপস্থিত হন সেই সভায়। তিনি গান করতে থাকেন। সেই গান শুনে নিজের হাসি চাপতে পারেননি গন্ধর্ব ক্রঞ্চ। সেই হাসি দেখে ফেলেন বামদেব। সঙ্গে সঙ্গে ক্রোধান্বিত হয়ে পড়ে তিনি ক্রঞ্চকে অভিশাপ দেন। অভিশাপের ফলে ক্রঞ্চ ইঁদুর হয়ে যান। ঋষি অভিশাপ দেন, কোনও দিন আর গান গাইতে পারবেন না ক্রঞ্চ। ক্রঞ্চ নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। কিন্তু তাতে বিশেষ ফল হয়নি। তিনি ইঁদুর হয়ে যান এবং মর্ত্যে নেমে আসেন। তবে মুনি বলেছিলেন কোনও দিন যদি গণেশ তাঁকে বাহন করেন তা হলে মুক্তি মিলবে। মর্তলোকে তিনি যেখানে নেমেছিলেন, কাছেই ছিল পরাশর মুনির কুটির। ইঁদুর ক্রঞ্চ সেখানেই নিজের খাদ্যের সন্ধানে যেতে শুরু করেন। এদিকে ইঁদুরের উৎপাতে অতিষ্ট হয়ে ওঠেন কুটিরবাসীরা। অপর দিকে একদিন গণেশ সেই মুনির কুটিরে পৌঁছন। সেখানে জানতে পারেন ইঁদুরের কুকীর্তির কথা। তখন তাকে ধরতে উদ্যত হন গণেশ। অবশেষে ধরেও ফেলেন। কিন্তু ক্রঞ্চ নিজের পরিচয় দিয়ে সব কথা বলেন গণেশকে। বলেন, বামদেব বলেছিলেন যে স্বয়ং দুর্গা (Durga Puja 2025) পুত্র গণপতি যদি তাকে তাঁর বাহন করেন, তবেই ঘুচবে তাঁর দুঃখ। এ কথা শুনে ইঁদুরকেই তিনি নিজের বাহন হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

    মা লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা

    পৌরাণিক (Hindu Puranas) গল্প অনুযায়ী, যখন দেব-দেবীরা প্রাণীজগতের সৃষ্টি করেছিলেন তখন তাঁরা পৃথিবী ভ্রমণে আসেন। সেই সময় পশু ও পাখিরা দেবতাদের ধন্যবাদ জানায়। পশু ও পাখিরা বলতে থাকে, আপনারা যেহেতু আমাদের তৈরি করেছেন তাই আপনাদের বাহন হয়ে আমরা পৃথিবীতে থাকব। সেই সময় দেবতারা নিজেদের বাহন পছন্দ করে নেন। যখন দুর্গা কন্যা (Durga Puja 2025) লক্ষ্মীর নিজের বাহন বেছে নেওয়ার সময় আসে, তখন তিনি বলেন আমি যেহেতু রাতে পৃথিবীতে আসি তাই রাতে যে প্রাণী দেখতে পায় সেই হবে আমার বাহন। এরপর পেঁচা হয়ে ওঠে দেবী লক্ষ্মীর বাহন।

    কার্তিকের বাহন ময়ূর

    তারকাসুরকে বধ করেছিলেন দেবসেনাপতি কার্তিক। পৌরাণিক কাহিনী মতে, মৃত্যুর আগে তারকাসুর কার্তিকের বাহন হিসেবে থাকতে চেয়েছিল। ময়ূরের ছদ্মবেশে কার্তিককে আক্রমণও করেছিল যুদ্ধ ক্ষেত্রে তারকাসুর। কথিত আছে ওই ময়ূরটিই হল দুর্গা (Durga Puja 2024) পুত্র কার্তিকের বাহন।

    সরস্বতীর বাহন রাজহাঁস

    হাঁস নাকি জল, স্থল, অন্তরীক্ষে থাকতে পারে। জ্ঞান ও বিদ্যার দেবীকেও এই তিনটি জায়গায় থাকতে হয় জ্ঞান ও বিদ্যাদানের জন্য। তাই বাহন হিসেবে হাঁসকেই বেছে নিয়েছেন দেবী দুর্গার (Durga Puja 2025) কন্যা সরস্বতী। একই ভাবে হংস শব্দের ‘হং’ এবং ‘স’ এই দুটি শব্দের মধ্যে জাগতিক শক্তি এবং শাক্তির আধারের মহাজ্ঞান গ্রন্থিত হয়ে রয়েছে। তাই হংস বিদ্যাদেবীর বাহন হয়ে মহাপ্রজ্ঞার প্রতীক।

  • Durga Puja 2025: নবদুর্গার প্রথম রূপ, নবরাত্রির প্রথম দিনেই পূজিত মাতা শৈলপুত্রী, জানুন মাহাত্ম্য

    Durga Puja 2025: নবদুর্গার প্রথম রূপ, নবরাত্রির প্রথম দিনেই পূজিত মাতা শৈলপুত্রী, জানুন মাহাত্ম্য

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মহালয়ার অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনা হয়। পরের দিন, অর্থাৎ শুক্ল প্রতিপদ তিথি থেকে শুরু হয় নবরাত্রি (Navaratri 2025)। যা চলে দুর্গা নবমী পর্যন্ত। এই নবরাত্রিতে দেবী দুর্গা নয়টি ভিন্ন রূপে পূজিতা হন। নবদুর্গার (Nabadurga) এই নয়টি রূপ হল— দেবী শৈলপুত্রী (Devi Shailaputri), দেবী ব্রহ্মচারিণী, দেবী চন্দ্রঘণ্টা, দেবী কুষ্মাণ্ডা, দেবী স্কন্দমাতা, দেবী কাত্যায়নী, দেবী কালরাত্রি, দেবী মহাগৌরী এবং দেবী সিদ্ধিদাত্রী।

    নবরাত্রির প্রথম দিনেই আরাধনা করা হয় মাতা শৈলপুত্রীর (Devi Shailaputri)। নবদুর্গার (Durga Puja 2025) প্রথম রূপ মানা হয় তাঁকে। শৈলপুত্রী নামকরণের কারণ? শাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলেন, পর্বতরাজ হিমালয়ের ঘরে কন্যা রূপে জন্ম নেওয়ার কারণে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল শৈলপুত্রী। শৈলপুত্রী একটি সংস্কৃত শব্দ, যার আক্ষরিক অর্থ পর্বত কন্যা। শৈল মানে পর্বত আর পুত্রী মানে কন্যা।

    দেবী সতী ও দক্ষযজ্ঞের কাহিনি

    পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, একবার রাজা দক্ষ যজ্ঞ করছিলেন। সমস্ত দেবতাদের যজ্ঞ গ্রহণ করার জন্য ডাকা হলেও শিবকে সেই যজ্ঞে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অন্যদিকে, দক্ষকন্যা সতী শুনলেন, তাঁর বাবা একটি বিশাল যজ্ঞের অনুষ্ঠান করছেন। একথা শোনা মাত্রই তিনি ওই অনুষ্ঠানে যেতে চাইলেন (Durga Puja 2025)। এরপর দেবাদিদেব মহাদেবকে নিজের ইচ্ছার কথা বললেন সতী। প্রত্যুত্তরে শিব যজ্ঞের অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ না জানানোর কথা বলেন। সতীকে সেখানে যেতেও নিষেধ করেন শিব। তবে দেবাদিদেব মহাদেবের কথা মানতে চাননি সতী। বাবার কাছে যাওয়ার তীব্র আগ্রহ দেখে ভগবান মহাদেব তাঁকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেন।

    পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা রূপে জন্ম নেন সতী

    সতী তাঁর বাবার বাড়িতে পৌঁছে দেখলেন যে কেউ তাঁর সঙ্গে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে কথা বলছেন না। সব মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। শুধু তাঁর মা তাঁকে স্নেহের সঙ্গে জড়িয়ে ধরেছিলেন। বোনের কথায় ছিল কটাক্ষ ও উপহাস। প্রতি মুহূর্তে শিবকে নিয়ে উপহাসও করা হতে থাকে (Durga Puja 2025)। এই সব দেখে সতী খুবই শোকাহত হয়ে পড়েন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেই যজ্ঞের মধ্যে নিজেকে সমর্পণ করেন এবং পুড়ে ছাই হয়ে যান। সেই দুঃসংবাদ মহাদেব শোনামাত্রই দক্ষের যজ্ঞ পুরোপুরি ধ্বংস করে দেন। ভক্তদের বিশ্বাস, পরবর্তী জীবনে শৈলরাজ হিমালয়ের কন্যা হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সতী। তাই তিনি শৈলপুত্রী নামে পরিচিত। পার্বতী, হেমাবতীও তাঁর নাম।

    মাতা শৈলপুত্রীর পুজোর পদ্ধতি (Durga Puja 2025)

    শৈলপুত্রী রূপকে অত্যন্ত কোমল হৃদয় এবং দয়ালু প্রকৃতির বলে মনে করেন ভক্তরা। তাঁর পুজো করার জন্য নবরাত্রির প্রথম দিনে ব্রাহ্মমুহূর্তে উঠে স্নানকার্য সেরে, পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করুন। তারপর প্রথম পুজো করে গণপতিকে আবাহন করুন। শৈলপুত্রীকে (Devi Shailaputri) ষোড়শপচার পদ্ধতিতে পুজো করা হয়। পরে মায়ের পবিত্র চরণে কুমকুম নিবেদন করুন।

  • Ramakrishna 472: “জয় কালী! কি, তুই দেখা দিবিনি! এই গলায় ছুরি দেব যদি দেখা না দিস”

    Ramakrishna 472: “জয় কালী! কি, তুই দেখা দিবিনি! এই গলায় ছুরি দেব যদি দেখা না দিস”

    ৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল

    ঠাকুরের নিজ মুখে কথিত সাধনা বিবরণ

    “যখন লীলায় মন নেমে আসত কখনও সীতারামকে রাতদিন চিন্তা করতাম। আর সীতারামের রূপ সর্বদা দর্শন হত—রামলালকে (রামের অষ্টধাতু নির্মিত ছোট বিগ্রহ) নিয়ে সর্বদা বেড়াতাম, কখনও খাওয়াতাম। আবার কখনও রাধাকৃষ্ণের ভাবে থাকতাম। ওই রূপ সর্বদা দর্শন (Kathamrita) হত। আবার কখনও গৌরাঙ্গের ভাবে থাকতাম, দুই ভাবের মিলন—পুরুষ ও প্রকৃতি ভাবের মিলন। এ অবস্থায় সর্বদাই গৌরাঙ্গের রূপ দর্শন হত। আবার অবস্থা বদলে গেল! সজনে তুলসী সব এক বোধ হতে লাগল। ঈশ্বরীয় (Ramakrishna) রূপ আর ভাল লাগল না। বললাম, ‘কিন্তু তোমাদের বিচ্ছেদ আছে।’ তখন তাদের তলায় রাখলাম। ঘরে যত ঈশ্বরীয় পট বা ছবি ছিল সব খুলে ফেললাম। কেবল সেই অখণ্ড সচ্চিদানন্দ সেই আদি পুরুষকে চিন্তা করতে লাগলাম। নিজে দাসীভাবে রইলুম—পুরুষের দাসী।

    “আমি সবরকম সাধন করেছি। সাধনা তিন প্রকার—সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক। সাত্ত্বিক সাধনায় তাঁকে ব্যাকুল হয়ে ডাকে বা তাঁর নামটি শুদ্ধ নিয়ে থাকে। আর কোন ফলাকাঙ্খা নাই। রাজসিক সাধনে নানারকম প্রক্রিয়া—এতবার পুরশ্চরণ করতে হবে, এত তীর্থ করতে হবে, পঞ্চতপা করতে হবে; ষোড়শোপচারে পূজা করতে হবে ইত্যাদি। তামসিক সাধন — তমোগুণ আশ্রয় করে সাধন। জয় কালী (Kathamrita)! কি, তুই দেখা দিবিনি! এই গলায় ছুরি দেব যদি দেখা না দিস। এ সাধনায় শুদ্ধাচার নাই—যেমন তন্ত্রের সাধন।

    “সে অবস্থায় (সাধনার অবস্থায়) অদ্ভুত সব দর্শন হত, আত্মার রমণ প্রত্যক্ষ দেখলাম। আমার মতো রূপ একজন আমার শরীরের ভিতর প্রবেশ করলে! আর ষট্‌পদ্মের প্রত্যেক পদ্মের সঙ্গে রমণ করতে লাগল। ষট্‌পদ্ম মুদিত হয়েছিল—টক টক করে রমণ করে আর একটি পদ্ম প্রস্ফুটিত হয়—আর ঊর্ধ্বমুখ হয়ে যায়! এইরূপে মূলাধার, স্বাধিষ্ঠান, অনাহত, বিশুদ্ধ, আজ্ঞাপদ্ম (Ramakrishna), সহস্রার সকল পদ্মগুলি ফুটে উঠল। আর নিচে মুখ ছিল ঊর্ধ্বমুখ হল, প্রত্যক্ষ দেখলাম।”

    ধ্যানযোগ সাধনা—‘নিবাত নিষ্কম্পমিবপ্রদীপম্‌’ 

    “সাধনার সময় আমি ধ্যান করতে করতে আরোপ করতাম প্রদীপের শিখা—যখন হাওয়া নাই, একটুও নড়ে না—তার আরোপ করতাম।

    “গভীর ধ্যানে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়। একজন ব্যাধ পাখি মারবার জন্য তাগ করছে। কাছ দিয়ে বর চলে যাচ্ছে, সঙ্গে বরযাত্রীরা, কত রোশনাই, বাজনা, গাড়ি, ঘোড়া—কতক্ষণ ধরে কাছ দিয়ে চলে গেল। ব্যাধের কিন্তু হুঁশ নাই। সে জানতে পারলো না যে কাছ দিয়ে বর চলে গেল।

  • RSS: সঙ্ঘের পাঁচ পরিবর্তনে কুটুম্ব প্রবোধন ঠিক কেমন? পরিবারবোধে কী প্রয়োজন?

    RSS: সঙ্ঘের পাঁচ পরিবর্তনে কুটুম্ব প্রবোধন ঠিক কেমন? পরিবারবোধে কী প্রয়োজন?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের (RSS) পঞ্চ পরিবর্তনের মধ্যে প্রধান একটি দিক হল রাষ্ট্রের উন্নয়নে পারিবারিক জ্ঞান বা কুটুম্ব প্রবোধন। পরিবারিক মূল্যবোধ ছাড়া অর্থনৈতিক অগ্রগতির কোনও অর্থ হয় না। সুপ্রাচীনকাল থেকেই ভারত পারিবার এবং সমাজের মধ্যে বিশেষ সমন্বয়ের মধ্যে দিয়ে চলে আসছে। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের ভাবনায় কুটুম্ব প্রবোধন (Enlightenmentkutumb) একান্ত প্রয়োজন।

    কেন পরিবারবোধ (RSS)?

    যৌথ পরিবার (Enlightenmentkutumb), সংগঠিত পরিবার, নিরাপদ পরিবার এবং সমৃদ্ধ পরিবার হল সুখি পরিবার সুস্থ পরিবারের ভিত্তি। পশ্চিমবিশ্বের প্রভাবে ভারতীয় দেশীয় সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের উপর চরম প্রভাব পড়েছে। সামাজিক মাধ্যমের নানা ভারতীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য, পরম্পরা, সংস্কৃতির মূলে বিদেশি শক্তি বারবার আঘাত করছে। দেশীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধকে বাঁচিয়ে রাখতে সঙ্ঘ পারিবারিক মূল্যবোধের কথা বলেছে। উত্তর প্রজন্মের কাছে পরিবারবোধ, আত্মিকতাবোধকে ভালো করে বোঝানো একান্ত প্রয়োজন। এটাই সঙ্ঘের (RSS) মন্ত্র।

    পরিবার কীভাবে ভাঙে?

    যৌথ পরিবারের ভাবনার গুণে ভারত মহৎ। কিন্তু নগরায়ন, লর্ড মেকলের শিক্ষানীতি, সামাজিক মাধ্যম আমাদের সমাজকে ভিতর থেকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পরিবার থেকে মানুষকে ক্রমে ক্রমে বিছিন্ন করেছে। দাম্পত্য জীবনের অশান্তি, বিচ্ছেদ, নিউক্লিয়ার জীবন, সিঙ্গেল মা, সিঙ্গেল বাবাদের সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। মানুষের পারিবারিকবোধে যে একাত্ম ভাবনা ছিল তা ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ছে। আর তাই সঙ্ঘ (RSS) পারিবারিকবোধের উপর জোর দিয়েছে। পরিবার (Enlightenmentkutumb) ত্যাগ করলে নানা সমস্যার উদ্ভব হয়।

    পরিবার কেন প্রয়োজন?

    ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের এনএফএইচএস-৫-তে বলা হয়েছে একক পরিবারের অনুপাত ভারতে ৫৮.২ শতাংশ। দম্পতির মধ্যে জটিল উদ্বেগ, মানসিক চাপ, দ্বন্দ্ব, সন্তান পরিচালনা, শিশুদের নৈতিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফলেছে। লিভ ইন সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভাবে ব্যক্তি এবং পরিবারের জন্য ভয়াবহ। ভারতীয় সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণ ভাবে নস্যাৎ করে। অনেক সময়েই এলজিবিটিকিউ পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রকৃতি সুলভ আচরণের সম্পূর্ণ বিপরীত সম্পর্ক। আমাদের জন্য যারা চিন্তা করে তাদের প্রতি চিন্তার অবসরকে ধ্বংস করে দেয়।

    আবার পরিবার না থাকলে একাকীত্ব, বিষণ্ণতা, উদ্বেগের প্রভাবও বেশি বেশি হয়। শিশু এবং বয়স্কদের মনে এবং শরীরে খুব প্রভাব পড়ে। নীতি-নৈতিকতার অভাব হয় পরিবারবোধ না থাকলে। তাই সঙ্ঘ (RSS) মনে করে সমাজকে নির্মাণ করতে গেলে ব্যক্তি, পরিবার, দেশ এবং রাষ্ট্রে পারিবারিকবোধ (Enlightenmentkutumb) একান্ত জরুরি।

  • Durga Puja 2025: নামকরণ করেছিলেন প্রজাপতি ব্রহ্মা, নবরাত্রিতে দেবী দুর্গা পুজিত হন নয়টি ভিন্ন রূপে

    Durga Puja 2025: নামকরণ করেছিলেন প্রজাপতি ব্রহ্মা, নবরাত্রিতে দেবী দুর্গা পুজিত হন নয়টি ভিন্ন রূপে

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রামায়ণে আছে, ভগবান শ্রীরামচন্দ্র রাবণকে বধ করার জন্য দেবী দুর্গার (Durga Puja 2025) অকাল বোধন করেছিলেন। এই নিয়ম মেনে আশ্বিন মাসে শারদীয়া দুর্গাপুজো করে থাকে গোটা বাঙালি সমাজ। কিন্তু দুর্গাপুজোর আসল সময় হল বসন্ত ঋতুতেই, যা দেবী বাসন্তীর পুজো হিসেবে পরিচিত। বাংলায় দুই পুজোই হয়ে থাকে, কিন্তু শরৎকালের পুজো হল প্রধান এবং বড় পুজো। নবরাত্রির সঙ্গে দেবী দশভূজার একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। তিথি-নক্ষত্র মিলিয়ে একই রীতিনীতির মধ্যেই পুজো করা হয়ে থাকে।

    কবে পালিত হয় (Durga Puja 2025)?

    বসন্ত ঋতুতে চৈত্র মাসে যে নবরাত্রি (Navratri) পালন করা হয়, তাতে দেবী দুর্গাকে (Goddess Durga) নয়টি অবতারে পুজো করা হয়। শরৎকালের পুজোও হয় একই ভাবে। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের প্রতিপদ থেকে নবমী তিথি পর্যন্ত ন’দিন ধরে দেবী দুর্গার ন’টি রূপের পুজো করা হয়। শরতের এই নবরাত্রিকে শারদীয় নবরাত্রিও বলা হয়। দুর্গার এই ন’টি রূপের নামকরণ করেছিলেন প্রজাপতি ব্রহ্মা। নবরাত্রির এক একটি তিথিতে, অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত, দেবী দুর্গা এক এক রূপে পূজিতা হন।

    দেবীর নয় রূপ

    দেবী দুর্গার ন’টি অবতার হল, দেবী শৈলপুত্রী, দেবী ব্রহ্মচারিণী, দেবী চন্দ্রঘণ্টা, দেবী কুষ্মাণ্ডা, দেবী স্কন্দমাতা, দেবী কাত্যায়নী, দেবী কালরাত্রি, দেবী মহাগৌরী, দেবী সিদ্ধিদাত্রী। তিথি মেনে টানা নয় দিন ধরে পুজো করে মায়ের কাছে বর চেয়ে অশুভ শক্তির পরাজয় এবং শুভ শক্তির জাগরণের জন্য কামনা করা হয়। সংসারের শ্রীবৃদ্ধি, অর্থধন লাভ, সন্তানদের সাফল্য, পারবারিক সুখ সমৃদ্ধি এবং নারী শক্তির জাগরণের আশায় ভক্তরা এই নবরূপে দেবী দুর্গা মায়ের পুজো করা হয়ে থাকে। এ বছর, দেবী দুর্গা (Durga Puja 2025) মা গজে চড়ে পরিবারের সঙ্গে মর্ত্যে বাপের বাড়িতে আসছেন। নবরাত্রির পর আবার দোলায় করে কৈলাসে পাড়ি দেন মা দুর্গা।

    দেবী শৈলপুত্রী

    দেবী শৈলপুত্রী হলেন হিমালয়ের কন্যা। তাঁর স্বামী হলেন ভগবান শিব। তাঁর দুই সন্তান কার্তিক এবং গণেশ। দক্ষরাজের কন্যা হলেন সতী। সতীর অপর নাম শৈলপুত্রী। এই দেবীর (Durga Puja 2025) পুজো করা হয় নবরাত্রির প্রথম দিনে।

    দেবী ব্রহ্মচারিণী

    দেবী ব্রহ্মচারিণী হলেন মা দুর্গার (Goddess Durga) দ্বিতীয় অবতার। তাঁর পুজো করা হয় নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে। দেবী দুর্গার তপস্যার প্রতীক হলেন দেবী ব্রহ্মচারিণী। তিনি ভগবান ব্রহ্মার মার্গের পথে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করে ছিলেন। এই দেবীর সাধানায় পরিবারে মঙ্গলকামনা এবং বিদ্যা-বুদ্ধির প্রাপ্তি হয়।

    দেবী চন্দ্রঘণ্টা

    দেবী চন্দ্রঘণ্টা হলেন দেবী দুর্গার (Goddess Durga) তৃতীয় রূপ। বাঘের উপর উপবিষ্ট থাকেন স্বয়ং দেবী। অসুর বিনাশিনী দেবী। তাঁর দশ হাতে পদ্ম, গদা, ত্রিশূল, তলোয়ার, তীরধনুক ইত্যাদি দশ অস্ত্রে সুসজ্জিত থাকে। দেবীর মস্তকে অর্ধচন্দ্র অবস্থান করে। তাই দেবীকে চন্দ্রঘণ্টা নামে ডাকা হয়। এই দেবী অভয়ার প্রতীক।

    দেবী কুষ্মাণ্ডা

    দেবী কুষ্মাণ্ডা হলেন চতুর্থ অবতার। এই দেবী (Durga Puja 2025) স্বয়ং ব্রহ্মাণ্ডকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর অনাহত চক্রে মানুষকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করেন। এই দেবীর আরাধনায় পারিবার সুস্থ এবং রোগমুক্ত থাকে।

    দেবী স্কন্দমাতা

    দেবী স্কন্ধ হলেন পঞ্চম অবতার। তিনি ভক্তের কাছে মুক্তি এবং শক্তির প্রতীক। তিনি এই রূপে সিংহবাহনা। ত্রিনয়নী এবং চারটি মস্তকে সজ্জিত। স্কন্দের জননী হওয়ায় তাঁকে স্কন্দমাতা বলা হয়। এই দেবীর পুজোতে অশুভ শক্তির বিনাশ হয়।

    দেবী কাত্যায়নী

    দেবী কাত্যায়নী হলেন মহিষাসুরমর্দিনী (Durga Puja 2025)। তিনি হলেন মায়ের ষষ্ঠ অবতার। সকল অশুভ শক্তিকে পরাজয় করে অসুরদের বিনাশ করে থাকেন। বৈদিক যুগে কাত্যায়ন নামে এক ঋষি ছিলেন। সেই সূত্রেই এই নামকরণ হয়েছে কাত্যায়নী।

    দেবী কালরাত্রি

    দেবী কালরাত্রি হলেন দুর্গার (Goddess Durga) সপ্তম অবতার। সব রকম রাক্ষস এবং ভূতেদের বিনাশ করে থাকেন এই দেবী। অসুর বিনাশিনী উগ্ররূপিণী রূপ অশুভ শক্তিকে স্বমূলে উৎখাত করেন।

    দেবী মহাগৌরী

    মহাগৌরী হলেন দেবীর অষ্টম অবতার। তিনি হলেন ভক্তের সমৃদ্ধি এবং সুখ প্রদানের দেবী। অর্থ সমৃদ্ধি এবং কল্যাণময় বার্তা আসে।

    দেবী সিদ্ধিদাত্রী

    সিদ্ধিদাত্রী (Durga Puja 2025) দেবী হলেন মহাসিদ্ধি প্রদানের দেবী। নবরাত্রিতে (Navratri) দেবী দুর্গার নবম অবতার এবং ভগবান শিবের পত্নী। তাঁকে সিদ্ধিদাত্রীকে বলা হয় শিবের অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে।

  • Mahalaya 2025: মহালয়া শুভ নাকি অশুভ? জানুন এই বিশেষ অমাবস্যা তিথির তাৎপর্য

    Mahalaya 2025: মহালয়া শুভ নাকি অশুভ? জানুন এই বিশেষ অমাবস্যা তিথির তাৎপর্য

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মহালয়া (Mahalaya 2025) মানেই বাঙালির কাছে নস্টালজিয়া। রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী দিয়ে শুরু হয় সকাল। মহালয়ায় পিতৃপক্ষের (Pitru Paksha) অবসান হয় এবং দেবীপক্ষের (Devi Paksha) সূচনা হয়। পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে শুরু হয় নবরাত্রি উদযাপন। আক্ষরিক অর্থে দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে।

    মহালয়া শব্দের উৎপত্তি

    কথিত আছে, মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। তাই দিনটি হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে মহালয়া শুভ না অশুভ, এনিয়ে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। একাংশের মতে, মহান কিংবা মহত্বের আলয় থেকেই এই শব্দের উৎপত্তি। সনাতন ধর্মে বলা হয়, এই দিনে পরলোক থেকে মর্ত্যে আত্মাদের যে সমাবেশ হয়, তাকেই মহালয়া বলা হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক এর আসল ব্যাখ্যা।

    পুরাণ (Hindu Puranas) মতে, ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর অমর হয়ে উঠেছিলেন। শুধুমাত্র কোনও নারীশক্তির কাছে তার পরাজয় নিশ্চিত। অসুরদের অত্যাচারে যখন দেবতারা অতিষ্ঠ, তখন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর নারীশক্তির সৃষ্টি করেন। তিনিই মহামায়ারূপী দেবী দুর্গা। দেবতাদের দেওয়া অস্ত্র দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করেন দুর্গা। এজন্যেই বিশ্বাস করা হয় যে, এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয়।

    মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করার রীতি রয়েছে। এদিনই দেবী দুর্গার চক্ষুদান হয়। মহালয়া শব্দটির অর্থ, মহান আলয় বা আশ্রম। এক্ষেত্রে দেবী দুর্গাই হলেন সেই মহান আলয়। মহালয়ার শুভ, অশুভ দুই হওয়ার পিছনেই ব্যাখ্যা রয়েছে।

    মহালয়া (Mahalaya 2025) শুভ কেন?

    অনেকেই মনে করেন, এদিন থেকেই দেবীপক্ষের সূচনা, অশুভ শক্তির বিনাশ হয়, তাই মহালয়া শুভ। দুর্গাপুজোর সূচনা হয় এই দিন। এছাড়াও হিন্দু ধর্মের যে কোনও শুভ কাজেই পিতৃপুরুষদের স্মরণ করা হয়। এছাড়াও তর্পণের বৃহত্তর অর্থ মিলন। তাই এই দিন কোনওভাবেই অশুভ হতে পারে না।

    মহালয়া অশুভ কেন?

    আবার অনেকে মনে করেন, মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে জলদান করার রীতি রয়েছে। পিতৃপুরুষদের স্মরণ করার দিনকে অনেকেই শোক পালনের দিন হিসেবে পালন করে থাকেন। তাই মহালয়াকে তারা শুভ মানতে নারাজ। মহালয়া শুভ না অশুভ এই দ্বন্দ্ব চলতেই থাকবে। তব এই দিনটি দিয়েই শুরু হয় দুর্গা পুজো, বাঙালির মিলন উৎসব।

    পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষ (Pitru Paksha and Devi Paksha)

    বছরের ১২ মাসে মোট ২৪টি পক্ষ রয়েছে, তার মধ্যে ২টি পক্ষ বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এই পক্ষ দুটি হচ্ছে পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষ। ভাদ্র পূর্ণিমার পরের কৃষ্ণ পক্ষকে বলা হয় পিতৃপক্ষ। এই পক্ষের অমাবস্যাকে বলা হয় মহালয়া। মহালয়ার পরের পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ। অর্থাৎ মহালয়া (Mahalaya 2025) হচ্ছে পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষ (Pitru Paksha and Devi Paksha) নামক পক্ষ দুটির মিলনক্ষণ। পিতৃপক্ষ হল স্বর্গত পিতৃপুরুষের উদ্দেশে পার্বণ শ্রাদ্ধ ও তর্পণাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ। সনাতন শাস্ত্র মতে, সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষ সূচিত হয়।

    পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষের মিলনক্ষণ মহালয়া!

    মহালয়ায় তর্পণের (Pitru Amavasya) সঙ্গে পুরাণেরও যোগ রয়েছে। মহাভারতে কর্ণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, সূর্য-পুত্র দানধ্যান করলেও তা ছিল স্বর্ণ, রত্ন, মণিমাণিক্য। তিনি পিতৃপুরুষের পরিচয় না জানায় পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে কখনও জল বা খাদ্য দান করেননি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মৃত্যুর পর স্বর্গে গেলে খাদ্য হিসেবে তাই তাঁকে দেওয়া হয় শুধুই সোনা-রত্ন। জীবিত অবস্থায় যা দান করেছেন তারই অংশ। তখনই কর্ণকে দেবরাজ ইন্দ্র জানান, পিতৃপুরুষকে কখনও তিনি জল দেননি বলেই মৃত্যুর পরে তিনি জল পাবেন না। এই ভুল সংশোধনের জন্য এক পক্ষকাল মর্ত্যে ফিরে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিয়ে পাপস্খলন করেন কর্ণ। সেই এক পক্ষ কালই পিতৃপক্ষ। যার শেষ মহালয়ায় (Mahalaya 2025)।

    রামায়ণে দেবীপক্ষ

    রামায়ণ অনুসারে ত্রেতা যুগে শ্রীরামচন্দ্র অসময়ে অর্থাৎ সূর্যের দক্ষিণায়ন চলার সময় দেবী দুর্গার আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য। শাস্ত্র মতে দুর্গাপুজো বসন্তকালে হওয়াই নিয়ম। শ্রীরামচন্দ্র অকালে দুর্গাপুজো করেছিলেন বলে একে অকাল বোধন (Akal Bodhan) বলা হয়। সনাতন ধর্মে কোনও শুভ কাজের আগে প্রয়াত পূর্বপুরুষের উদ্দেশে অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। লঙ্কা বিজয়ের আগে এমনটাই করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। সেই থেকে দুর্গাপুজোর আগে মহালয়ায় তর্পণ অনুষ্ঠানের প্রথা প্রচলিত বলে মনে করা হয়। আর দেবী পুজোর এই পক্ষই হল দেবীপক্ষ (Devi Paksha)।

    দেবী দুর্গার মর্ত্যে আবির্ভাব

    শ্রীশ্রী চণ্ডীতে রাজা সুরথের কাহিনি রয়েছে। সুরথ যবনদের কাছে পরাজিত হয়ে মনের দুঃখে বনে চলে যান। সেখানেই দেখা হয় মেধা ঋষির সঙ্গে। সেখানে তিনি শোনেন মহাময়ার কাহিনি। বলা হয়, মহালয়ার দিনে তর্পণ করে সমাধি নদীর তীরে তিন বছর তপস্যার পরে দুর্গাপুজো শুরু করেন রাজা সুরথ। পিতৃপক্ষে আত্মসংযম করে দেবী পক্ষে শক্তি সাধনায় প্রবেশ করতে হয়। দেবী শক্তির আদিশক্তি, তিনি সর্বভূতে বিরাজিত। তিনি মঙ্গল দায়িনী করুণাময়ী। সাধক সাধনা করে দেবীর বর লাভের জন্য, দেবীর মহান আলয়ে প্রবেশ করার সুযোগ পান বলেই এ দিনটিকে বলা হয় মহালয়া (Mahalaya 2025)। পুরাণ মতে এই দিনেই দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে আবির্ভূতা হন।

  • Mahalaya: শুধুই কি পূর্বপুরুষদের জন্য? মহালয়া অমাবস্যায় তর্পণের মাহাত্ম্য অনেক বেশি

    Mahalaya: শুধুই কি পূর্বপুরুষদের জন্য? মহালয়া অমাবস্যায় তর্পণের মাহাত্ম্য অনেক বেশি

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আজ মহালয়ার (Mahalaya) তর্পণ। পূর্বপুরুষের উদ্দেশে জলদান করার দিন। শাস্ত্র মতে, এদিন পিতৃপুরুষের উদ্দেশে জলদান করলে অক্ষয় স্বর্গলাভ হয়। শাস্ত্রের এই বিধান মেনে মহালয়ার দিন পূর্বপুরুষের উদ্দেশে জলদান করা হয়।

    কেন এই দিনে তর্পণ?

    ভাদ্র পূর্ণিমার পরবর্তী প্রতিপদ থেকে অমাবস্যা তিথি পর্যন্ত এই ১৬ দিন পিতৃপক্ষ। সেই পিতৃপক্ষের সমাপ্তি ঘটে আশ্বিনী অমাবস্যায়। যার পর শুরু হয় দেবীপক্ষ। এই অমাবস্যার দিন তর্পণ (Pitru Tarpan) করাই বিধেয়। পুরাণ অনুযায়ী, পিতৃপক্ষের সময় আমাদের প্রয়াত পূর্বপুরুষরা মর্তে আসেন তাঁদের প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। এই সময় তাঁরা উত্তর পুরুষের হাতে জল-পিণ্ড আশা করেন। এই পক্ষে তাঁদের উদ্দেশে জল ও পিণ্ড দান করলে, তাঁরা শক্তি লাভ করেন। এটাই তাঁদের চলার পাথেয়। মহালয়া পিতৃপক্ষের শেষ দিন হওয়ায় এর বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। দেশের অনেক জায়গাতেই এই দিনটি পিতৃ অমাবস্যা, মহালয়া অমাবস্যা বা পিতৃ মোক্ষ অমাবস্যা (Pitru Tarpan) নামে পরিচিত। এদিন প্রয়াত সমস্ত পূর্বপুরুষের উদ্দেশেই শ্রাদ্ধ তর্পণ করা যায়।

    পৃথিবীর সামগ্রিক সুখের কামনায় তর্পণ (Mahalaya)

    অনেকেই মনে করেন, তর্পণ শুধুই পূর্বপুরুষদের জন্য। কিন্তু শাস্ত্র মতে তা নয়। পৃথিবীর সামগ্রিক সুখের কামনা মিশে থাকে তর্পণে। তাই তর্পণ মন্ত্রে বলা হয়, ‘তৃপ্যন্তু সর্বমানবা’। অর্থাৎ মানব সভ্যতাকে তৃপ্ত করার দিন মহালয়া। তৃপ্তি সাধনের জন্যই তর্পণ। সিংহভাগ বাঙালি তর্পণ করেন কেবল মহালয়ার দিন (Mahalaya)। এদিন নদ্যাদি জলাশয়ে গিয়ে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে জলদান করেন তাঁরা। যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে, তাঁরা এদিন পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধও করেন।

    পূর্বপুরুষের স্মরণে তর্পণ

    আসলে তর্পণ হল স্মৃতি তর্পণ। বছরের একটি দিন (Mahalaya) শাস্ত্রজ্ঞরা উৎসর্গ করেছেন পিতৃপুরুষকে স্মরণ করার জন্য। আমরা নির্দিষ্ট দিনে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করি। এঁদের থেকে আমাদের পূর্বপুরুষ আমাদের কাছে কোনও অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই দৈনন্দিন কাজের চাপে ভুলে যাওয়া পিতৃপুরুষকে স্মরণ করতেই শ্রাদ্ধের আয়োজন। মহালয়ার দিন এই শ্রাদ্ধ করতে পারলে পরিবারের মঙ্গল হয় বলে লোকবিশ্বাস।

    তর্পণের (Pitru Tarpan) নিয়ম

    অনেকে পিতৃপক্ষের সময় প্রতিদিন পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করেন। আবার অনেকে যে তিথিতে নিজের আত্মীয়স্বজনদের হারিয়েছেন, সেই তিথিতে ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে শ্রাদ্ধ করান। পিতৃপক্ষের শেষ দিনে (Mahalaya) কোনও পবিত্র নদীতে স্নান করে তিল-জল দিয়ে তর্পণ ও পিণ্ডদান করা উচিত। ব্রাহ্মণ ভোজনের ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণদের বাড়িতে ডেকে ভোজন করাতে পারেন ও সাধ্যমতো দান করতে পারেন। পিতৃপক্ষের শেষ দিনে ব্রহ্মচর্য পালন করা হয়। এ সময় তেল লাগানো যাবে না বা পেঁয়াজ-রসুন খাওয়া যাবে না।

  • Ramakrishna ৪৭১: “ঈশ্বরের পাদপদ্মে মন না রাখি শূলের বাড়ি আমায় মারবে”

    Ramakrishna ৪৭১: “ঈশ্বরের পাদপদ্মে মন না রাখি শূলের বাড়ি আমায় মারবে”

    ৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল

    ঠাকুরের নিজ মুখে কথিত সাধনা বিবরণ

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) কলিকাতায় শ্রীযুক্ত বলরামের বৈঠকখানায় ভক্তসঙ্গে বসিয়া আছেন। গিরিশ, মাস্টার, বলরাম—ক্রমে ছোট নরেন, পল্টু, দ্বিজ, পূর্ণ, মহেন্দ্র মুখুজ্জে ইত্যাদি—অনেক ভক্ত উপস্থিত আছেন। ক্রমে ব্রাহ্মসমাজের শ্রীযুক্ত ত্রৈলোক্য সান্যাল, জয়গোপাল সেন প্রভৃতি অনেক ভক্ত আসিলেন। মেয়ে ভক্তেরা অনেকেই আসিয়াছেন। তাঁহারা চিকের আড়ালে বসিয়া ঠাকুরের (Kathamrita) দর্শন করিতেছেন। মোহিনীর পরিবারও আসিয়াছেন— পুত্রশোকে উন্মাদের ন্যায়—তিনি ও তাঁহার ন্যায় সন্তপ্ত অনেকেই আসিয়াছেন, এই বিশ্বাস যে ঠাকুরের কাছে নিশ্চই শান্তিলাভ হইবে।

    আজ ১লা বৈশাখ, চৈত্র কৃষ্ণা ত্রয়োদশী, ১২ই এপ্রিল, ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দ, বেলা ৩টা হইবে।

    মাস্টার আসিয়া দেখিলেন, ঠাকুর (Ramakrishna) ভক্তের মজলিস করিয়া বসিয়া আছেন ও নিজের সাধনা বিবরণ ও নানাবিধ আধ্যাত্মিক অবস্থা বর্ণনা করিতেছেন। মাস্টার আসিয়া ঠাকুরকে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন ও তাঁহার কাছে আসিয়া বসিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি)—সে সময় (সাধনার সময়ে) ধ্যানে দেখতে পেতাম, সত্য সত্য একজন কাছে শূল হাতে করে বসে আছে। ভয় দেখাচ্ছে—যদি ঈশ্বরের পাদপদ্মে মন না রাখি শূলের বাড়ি আমায় মারবে। ঠিক মন না হলে বুক যাবে।

    নিত্য-লীলাযোগ—পুরুষ-প্রকৃতি-বিবেকযোগ 

    “কখনও মা এমন অবস্থা করে দিতেন যে, নিত্য থেকে মন লীলায় নেমে আসত। আবার কখনও লীলা থেকে নিত্যে মন উঠে যেত।

    যখন লীলায় মন নেমে আসত কখনও সীতারামকে রাতদিন চিন্তা করতাম। আর সীতারামের রূপ সর্বদা দর্শন হত—রামলালকে (রামের অষ্টধাতু নির্মিত ছোট বিগ্রহ) নিয়ে সর্বদা বেড়াতাম, কখনও খাওয়াতাম। আবার কখনও রাধাকৃষ্ণের ভাবে থাকতাম। ওই রূপ সর্বদা দর্শন হত। আবার কখনও গৌরাঙ্গের ভাবে থাকতাম, দুই ভাবের মিলন—পুরুষ ও প্রকৃতি ভাবের মিলন। এ অবস্থায় সর্বদাই গৌরাঙ্গের রূপ দর্শন হত। আবার অবস্থা বদলে গেল! সজনে তুলসী সব এক বোধ হতে লাগল। ঈশ্বরীয় রূপ আর ভাল লাগল না। বললাম, ‘কিন্তু তোমাদের বিচ্ছেদ আছে।’ তখন তাদের তলায় রাখলাম। ঘরে যত ঈশ্বরীয় পট বা ছবি ছিল সব খুলে ফেললাম। কেবল সেই অখণ্ড সচ্চিদানন্দ সেই আদি পুরুষকে চিন্তা করতে লাগলাম। নিজে দাসীভাবে রইলুম—পুরুষের দাসী।

LinkedIn
Share