১৮৮৫, ১১ই মার্চ — ভক্ত সংঘে ভজনানন্দে ঠাকুর গান শুনিবেন, এই ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন। বলরামের বৈঠকখানার এক ঘর লোক; সকলেই তাঁহার পানে চাহিয়া আছেন—কি বলেন, শুনিবেন? কি করেন, দেখিবেন।
শ্রীযুক্ত তারাপদ গাইতেছেন: “কেশব গুরু করুণাধীনে কুঞ্জকাননচারি মাধব, মনমোহন, মুরলীধারী। হরিবল, হরিবল, হরিবল মন আমার। ব্রজকিশোর, কালীয়-হর, কাতর-ভয়-ভঞ্জন, নয়ন বাঁকা বাঁকা, শিখী পাখা, রাধিকা হৃদয়রঞ্জন। গোবর্ধন-ধারণ, বন-কুসুম-ভূষণ, দামোদর, কংস-দর্প-হারী— শ্যামরসো রসবিহারী। হরিবোল, হরিবোল…”
শ্রীরামকৃষ্ণ গিরিশের প্রতি: এই গানটি খুব উতরেছে। গায়কের প্রতি— “নিতাই-এর গান গাইতে পারো।”
আবার গান হইল, নিতাই গাইতেছেন: “কিশোরীর প্রেম নিবি আয়, প্রেমের জোয়ার বয়ে যায়। বই ছেড়ে প্রেম শতধারে, যে যত চায়, তত পায়। প্রেমের কিশোরী প্রেম বিলায়, সাধ করি রাধার প্রেমে বল রে হরি। প্রেমে প্রাণ মত্ত করে, প্রেম তরঙ্গে প্রাণ না চায়— রাধার প্রেমে হরি বলি, আয়, আয়, আয়।”
সকলেই মাস্টারকে অনুরোধ করিতেছেন, “তুমি একটি গান গাও।”
মাস্টার একটু লাজুক, ফিসফিস করে মাফ চাহিতেছেন।
গিরিশ (ঠাকুরের প্রতি সহাস্য): “মহাশয়, মাস্টার কোন মতে গান গাইছে না।”
শ্রীরামকৃষ্ণ বিরক্ত হইয়া, “ও! স্কুলে দাঁত বার করবে, গান গাইতে যত লজ্জা!”
মাস্টার মুখ চুন করে খানিকক্ষণ বসিয়া রহিলেন।
শ্রীযুক্ত সুরেশ মিত্র একটু দূরে বসে ছিলেন।
ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ তাহার দিকে সস্নেহ দৃষ্টিপাত করিয়া শ্রীযুক্ত গিরিশ ঘোষকে দেখাইয়া সহস্র বদনে কথা কহিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ:
“সুরেশ তুমি তো! কে ইনি?”
সুরেশ (হাসিতে হাসিতে):
“আজ্ঞে, হ্যাঁ, আমার বরদা।”
(সকলের হাস্য।)
গিরিশ (ঠাকুরের প্রতি):
“আচ্ছা মহাশয়, আমি ছেলেবেলায় কিছু লেখাপড়া করিনি, তবু লোকে বলে বিদ্বান।”
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি): “মহিমা চক্রবর্তী অনেক শাস্ত্র-অস্ত্র দেখেছে, শুনেছে। খুব আধার।” “কেমন গা?”
মাস্টার: “আজ্ঞে, হ্যাঁ।”
গিরিশ: “কি বিদ্যা! ও অনেক দেখেছে—ওতে আর ভুলি না।”
Leave a Reply