জন্মোৎসব রাত্রে গিরিশ প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে প্রেমানন্দে
সন্ধ্যা হইল। ক্রমে ঠাকুরদের আরতি শব্দ শোনা যাইতেছে। আজ ফাল্গুনের শুক্ল অষ্টমী। ৬-৭ দিন পরে পূর্ণিমায় দোল মহোৎসব হইবে।
সন্ধ্যা হইলেও ঠাকুরবাড়ির মন্দির প্রাঙ্গণ, উদ্যানভূমি, বৃক্ষ, চন্দ্রালোকে মনোহর রূপ ধারণ করিয়াছে। গঙ্গা এখনে উত্তর বাহিনী। জোৎস্নাময়ী মন্দিরের গা দিয়ে যেন আনন্দে উত্তরমুখ হইতে প্রবাহিত হইতেছেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ নিজের ঘরে ছোট খাটটিতে বসিয়া নিঃশব্দে জগৎ মাতার চিন্তা করিতেছেন।
উৎসবান্তে এখনও দুই একটি ভক্ত রহিয়া আছেন। নরেন্দ্র আগেই চলিয়া গিয়েছেন। আরতি হইয়া গেল ঠাকুর আবিষ্ট হইয়া দক্ষিণ পূর্বের লম্বা বারান্দায় পদচারণ করিতেছেন। মাস্টার সেইখানে দন্ডায়মান আছেন। ও ঠাকুর কে দর্শন করিতেছেন।
ঠাকুর হঠাৎ মাস্টারকে সম্মোধন করিয়া বলিতেছেন, আহা নরেন্দ্রর কি গান!
মাস্টার- আজ্ঞা, নিবিড় আঁধারে ওই গানটি।
শ্রীরামকৃষ্ণ- হ্যা ও গানের খুব গভীর মানে। আমার মনটা এখনও যেন টেনে রেখেছে।
মাস্টার- আগে হ্যাঁ।
শ্রী রামকৃষ্ণ- আঁধারে ধ্যান এইটি তন্ত্রের মত। তখন সূর্যের আলো কোথায়।
শ্রীযুত গিরিশ ঘোষ আসিয়া দাঁড়াইলেন। ঠাকুর গান গাইতেছেন।
মা কি আমার কালো রে
কালো রূপে দিগম্বরী হৃদি পদ্ম করে আলো রে
ঠাকুর মাতোয়ারা হইয়া দাঁড়াইয়া গিরিশের হাতে হাত দিয়া গান গাহিতেছেন
গয়া গঙ্গা প্রভাসাদি কাশি কাঞ্চি কেবা চায়
কালি কালি বলে আমার অজপা যদি ফুরায়
ত্রিসন্ধ্যা যে বলে কালী, পূজা সন্ধ্যা সে কি চায়
সন্ধ্যা তার সন্ধানে ফিরে কভুসন্ধি নাহি পায়
দয়া ব্রত দানা আদি আর কিছু না মনে লয়
মদনেরই যাগযজ্ঞ ব্রহ্মময়ীর রাঙ্গা পায়
Leave a Reply