(এই বলিয়া তাহার দিকে একদৃষ্টে সর্বদা তাকাইয়া রহিলেন, যেন তাহার হৃদয়ের অন্তরতম প্রদেশের সমস্ত ভাব দেখিতেছেন। মোহিনী মোহন কী ভাবিতেছিলেন—‘ঈশ্বরের জন্য সব যাওয়াই ভালো।’)
কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর আবার বলিতেছেন—
“ভাগবত পণ্ডিতকে একটি পাশ দিয়ে ঈশ্বর রেখে দেন—তা না হলে ভাগবত কে শুনাবে? রেখে দেন লোক শিক্ষার জন্য। মা সেইজন্য সংসারে রেখেছেন।”
এইবার ব্রাহ্মণ যুবকটিকে সম্মোধন করিয়া বলিতেছেন—
(জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগ, ব্রহ্মজ্ঞানীর অবস্থা ও জীবন্মুক্ত)
শ্রীরামকৃষ্ণ যুবকের প্রতি বলিতেছেন— “তুমি জ্ঞানচর্চা ছেড়ে ভক্তি নাও। ভক্তিই সার। আজ তোমার কি, তিন দিন হলো?”
ব্রাহ্মণ যুবক হাত জোড় করে বলিল— “আজ্ঞে, হ্যাঁ।”
শ্রীরামকৃষ্ণ বলিলেন— “বিশ্বাস করো, নির্ভর করো। তাহলেই নিজের কিছু করতে হবে না—মা কালী সব করবেন।
জ্ঞান সদর মহল পর্যন্ত যেতে পারে, কিন্তু ভক্তি অন্দরমহলে যায়।
শ্রদ্ধাপূর্ণ, নির্লিপ্ত—বিদ্যা ও অবিদ্যা তাঁর ভেতরেই আছে। তিনি নির্লিপ্ত।
যেমন, বায়ুতে কখনও সুগন্ধ, কখনও দুর্গন্ধ থাকে—তবু বায়ু নিজে নির্লিপ্ত।
ব্যাসদেব যমুনা পার হচ্ছিলেন। গোপীরাও সেখানে উপস্থিত—তারাও পার হবেন।
দধি, দুধ, ননী বিক্রি করতে যাচ্ছেন, কিন্তু নৌকা ছিল না।
কেমন করে পার হবেন—সকলেই ভাবিতেছেন।
এমন সময় ব্যাসদেব বলিলেন—
“আমার বড় ক্ষুধা পেয়েছে।”
তখন গোপীরা তাঁকে ক্ষীর, সর, ননী—সব খাওয়াতে লাগলেন।
ব্যাসদেব প্রায় সবই খেয়ে ফেলিলেন।
তখন ব্যাসদেব যমুনাকে সম্মোধন করিয়া বলিলেন—
“যমুনা, আমি যদি কিছু না খেয়ে থাকি, তাহলে তোমার জল দুই ভাগ হয়ে যাক, আর মাঝখানে রাস্তা হোক, আমরা যেন পার হতে পারি।”
ঠিক তেমনি হলো—
যমুনার জল দুই ভাগ হয়ে গেল, মাঝখানে ওপারে যাবার পথ হলো।
সেই পথ দিয়েই ব্যাসদেব ও গোপীরা সকলে পার হয়ে গেলেন।
Leave a Reply