তারক বিবাহ করিয়াছেন। বাপ-মা ঠাকুরের কাছে আসিতে দেন না। কলকাতায় বউবাজারের কাছে বাসা আছে — সেখানেই আজকাল প্রায় থাকেন। তারককে ঠাকুর বড় ভালবাসেন। সঙ্গে ছোকরাটি একটু তমোগুণী; ধর্ম বিষয়ক, ঠাকুরের সম্বন্ধে একটু ব্যঙ্গ ভাব। তারকের বয়স আন্দাজ বিংশতি বৎসর। কারও কাছে ঠাকুরকে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন।
শ্রী রামকৃষ্ণ তারকের বন্ধুর প্রতি —
“একবার দেবালয়ে সব দেখে এসো না।”
বন্ধু:
“ও, সব দেখা আছে।”
শ্রী রামকৃষ্ণ:
“এনিই হেডমাস্টার?”
বন্ধু:
“ও।”
ঠাকুর তারককে কুশল প্রশ্ন করিতেছেন, আর তাহাকে সম্বোধন করিয়া অনেক কথা কইতেছেন। তারক অনেক কথাবার্তার পর বিদায় গ্রহণ করিতে উদ্বুদ্ধ হইলেন। ঠাকুর তাহাকে নানা বিষয়ে সাবধান করিয়ে দিতেছেন।
শ্রী রামকৃষ্ণ তারকের প্রতি: “সাধু — সাবধান! কামিনী কাঞ্চন থেকে সাবধান। মেয়ে-মানুষের মায়াতে একবার ডুবলে আর উঠবার জোর নাই। বিষালক্ষীর দোয়ায় যে একবার পড়েছে, সে আর উঠতে পারে না। আর এখানে এক-একবার আসবি।”
তারক:
“বাড়িতে আসতে দেয় না।”
একজন ভক্ত:
“যদি কারুর মা বলেন, ‘তুই দক্ষিণেশ্বরে যাস না’, যদি দিব্যি দেন, আর বলেন — ‘যদি যাস, তো আমার রক্ত খাবি!”
শ্রী রামকৃষ্ণ বলেন — যে ‘মা’ ও কথা বলে, সে মা নয়; সে অবিদ্যারূপিণী। সেই মায়ের কথা না শুনলে কোনো দোষ নেই, কারণ সে মা ঈশ্বরলাভের পথে বাধা দেয়। ঈশ্বরের জন্য গুরুজনের বাক্য লঙ্ঘনে দোষ নেই। ভরত রামের জন্য কৈকেয়ীর কথা শোনেনি, গোপীরা কৃষ্ণ দর্শনের জন্য স্বামীদের মানা শোনেনি, প্রহ্লাদ ঈশ্বরের জন্য পিতার কথা মানেনি, বলি ভগবানের প্রীতির জন্য গুরু শুক্রাচার্যের কথা মানেনি, বিভীষণ রামকে পাওয়ার জন্য রাবণের কথা শোনেনি।
Leave a Reply