শ্রীরামকৃষ্ণ: ওদের বইয়ে অনেক কথা আছে বটে, কিন্তু যারা বই লিখেছে তারা ধারণা করতে পারে না। সাধু সংঘ হলে তবে ধারণা হয়। ঠিক ত্যাগী যদি, সাধু যদি উপদেশ দেয়, তবেই লোকে সে কথা শোনে। শুধু পণ্ডিত যদি বই লিখে বা মুখে উপদেশ দেয়, সে কথা তত ধারণা হয় না। যার কাছে গুড়ের নাগরী আছে, সে যদি রোগীকে বলে গুড় খেও না, রোগী তার কথা তত শোনে না।
শ্রীরামকৃষ্ণ: আচ্ছা, পূর্ণের অবস্থা কীরকম দেখেছো? ভাব-ধাব কি হয়?
মাস্টার: ওই ভাবের অবস্থা বাইরে সেরকম দেখি, দেখতে পাই না। আপনার সেই কথাটি তাকে বলেছিলাম।
শ্রীরামকৃষ্ণ: কোন কথাটি?
মাস্টার: সেই যে আপনি বলেছিলেন, সামান্য আধার হলে ভাব সংবরণ করতে পারে না; বড় আধার হলে ভিতরে খুব ভাব হয়, কিন্তু বাইরে প্রকাশ থাকে না। যেমন বলেছিলেন—সাইয়ের দিঘিতে হাতি নামলে টের পাওয়া যায় না, কিন্তু ডোবাতে নামলে তোলপাড় হয়ে যায় আর পাড়ের উপর জল উপচে পড়ে।
শ্রীরামকৃষ্ণ:
– “বাহিরে ভাব হলেই তো হবে না। তার আকর আলাদা চাই। আর সব লক্ষণ ভালো, তা ঠিক, কিন্তু…”
মাস্টার:
– “চোখদুটো বেশ উজ্জ্বল — যেন ঠেলে বেরিয়ে আসছে।”
শ্রীরামকৃষ্ণ:
– “চোখ উজ্জ্বল হলেই হয় না। তবে ঈশ্বরীয় চোখ আলাদা। আচ্ছা, তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছিলে?”
মাস্টার:
– “আজ্ঞে হ্যাঁ, কথা হয়েছিল। সে ৪–৫ দিন ধরে বলছে, ‘ঈশ্বরচিন্তা করতে গেলেই আর তাঁর নাম জপ করতে গেলেই চোখ দিয়ে জল পড়ে, রোমাঞ্চ হয়’ — এইসব লক্ষণ দেখা যায়।”
শ্রীরামকৃষ্ণ:
– “তবে আর কী?”
ঠাকুর চুপ করে থাকেন।
মাস্টার কিছুক্ষণ পরে আবার বলতে শুরু করেন —
মাস্টার:
– “সে দাঁড়িয়ে আছে।”
শ্রীরামকৃষ্ণ:
– “কে?”
মাস্টার:
– “পূর্ণ — তার বাড়ির দরজার কাছেই বোধহয় দাঁড়িয়ে আছে। আমরা কেউ গেলে দৌড়ে আসবে, এসে আমাদের নমস্কার করবে — তারপর চলে যাবে।”
Leave a Reply