কেউ পরে বাড়িতে পৌঁছাইয়া বলিতেছেন, “দেবেন্দ্র, আমার জন্য খাবার কিছু করো না, অমনি সামান্য শরীর তত ভালো নয়।”
দেবেন্দ্রর বাড়িতে ভক্তদের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ। দেবেন্দ্রর বাড়ির বৈঠকখানায় ভক্তদের মজলিস বসেছে। ঠাকুর ভক্তদের সঙ্গে সেখানে বসে আছেন। বৈঠকখানার ঘরটি একতলায়। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে, ঘরে আলো জ্বলছে।
ঘরে উপস্থিত রয়েছেন — ছোট নরেন, রাম, মাস্টার, গিরিশ, দেবেন্দ্র, অক্ষয়, উপেন্দ্র প্রমুখ বহু ভক্ত।
ঠাকুর একটি তরুণ ভক্তের দিকে চেয়ে আছেন এবং আনন্দে ভাসছেন। সেই ভক্তকে লক্ষ্য করে ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলছেন — “তিনটে জিনিস একেবারেই নেই ওর — জমি, টাকা আর স্ত্রী। এই তিনটে জিনিসের উপর মন রাখলে ঈশ্বর-ভক্তি হয় না।
আমি একবার ওকে দেখেছিলাম।”
তারপর সেই ভক্তটির দিকে ফিরে ঠাকুর বললেন — “তোরে কি দেখেছিলাম, বল?”
কামিনী-কাঞ্চনের ত্যাগ ও ব্রহ্মানন্দ
ভক্ত সহস্রের মধ্যে কতককে দেখেছি—কেউ কাম-ক্রোধ, লোভ-মোহ প্রভৃতির ভারে জর্জরিত; কেউ আবার সেই ভারের উপর বসে আছে, কেউ কেউ কিছুটা দূরে সরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ সংসারী লোকদের অবস্থা দেখেছেন—যারা ঈশ্বরকে ভুলে গেছেন, তাদের সেই করুণ দশা তিনি অনুভব করেছেন। তাই তাঁর মন থেকে নিজেই সব ত্যাগ হয়ে গিয়েছে।
“ও কী আশ্চর্য!” — আমি তো কত জপ-ধ্যান করেছি, তারপর গিয়ে তবে কিছুটা ফল পেয়েছিলাম। কিন্তু উনি (ঠাকুর) তো একেবারে এমন শীঘ্র কেমন করে সব ত্যাগ করলেন? কাম (কামনা) মন থেকে চলে যাওয়া কি এত সহজ ব্যাপার?
আমার নিজের মনে পড়ে, প্রায় ছয় মাস পরে যখন বুক ভারী হয়ে এলো, আমি গাছতলায় পড়ে গিয়ে কাঁদতে লাগলাম। বললাম—
“মা! যদি সত্যিই ত্যাগ হয় না, তাহলে গলায় ছুরি দেব।”
Leave a Reply