শ্রী রামকৃষ্ণ- এই মনের গোচর নন বটে, কিন্তু শুদ্ধ মনের গোচর। এটা বুদ্ধির দ্বারা ধরা যায় না, কিন্তু শুদ্ধ বুদ্ধির দ্বারা ধরা যায়। কামিনী-কাঞ্চনে আসক্তি গেলেই মন ও বুদ্ধি শুদ্ধ হয়। তখন শুদ্ধ মন ও শুদ্ধ বুদ্ধি একত্রে—সেই শুদ্ধ মনের গোচরে তিনি ধরা দেন।”
ঋষি-মুনিরা কি তাঁকে দেখেননি? তাঁর চৈতন্যের দ্বারা তাঁকে চৈতন্যরূপেই সাক্ষাৎ করেছেন।
গিরিশ (সহাস্যে) “নরেন্দ্র তর্কে আমার কাছে হেরেছে!”
শ্রী রামকৃষ্ণ- না আমায় বলেছে, গিরিশ ঘোষ মানুষের অবতার, এটা তুমি বিশ্বাস করো।” এখন আমি আর কী বলব! আমার বিশ্বাসের উপর কিছু বলার নেই।
গিরিশ (সহাস্যে), “সে মহাশয়! আমরা সব হল-ঘরে কথা বলছি, কিন্তু মাস্টার ঠোঁট চেপে বসে আছেন। কেমন বলেন, মহাশয়?”
গিরিশ — মহাশয়, শ্লোকটি কী বললেন?
শ্রীরামকৃষ্ণ — এই ক’টি লোকের থেকে সাবধান হবে।
প্রথম — মুখে হোলসা, হল হল করে কথা বলে।
দ্বিতীয় — ভেতর বোঁদে, মানে যার মন অতল, ডুবুরি নামালেও তল পাওয়া যাবে না।
তৃতীয় — কান তুলসে, মানে কানে তুলসী দেয় ভক্তি দেখাবার জন্য।
এরপর দীঘল ঘোমটা — লম্বা ঘোমটা দেখলেই লোকে ভাবে ভারী সতি, আসলে তা নয়। আর “পানা পুকুরে জল না থাকলে সান্নিপাতিক হয়” —
অর্থাৎ বাইরে থেকে পবিত্রতা দেখালেও ভেতরে যদি কিছু না থাকে, তাহলে শুধু ভণ্ডামি।
চুনিলাল — এঁর (মাস্টার) ছোট নরেন, বাবুরাম, ও পরে নারায়ণ, পল্টু, তেজো, চন্দ্র — এরা সব ওঁর কাছে পড়তে আসে। কথা উঠেছে যে উনি (চুনিলাল) তাদের এখানে এনেছেন, আর তাদের পড়াশোনা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মাস্টারের নামে দোষ দিচ্ছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ — তাদের কথা কে বিশ্বাস করবে?
এই সকল কথাবার্তা হচ্ছিল, এমন সময় নারায়ণ এসে ঠাকুরকে প্রণাম করল।
নারায়ণ গৌরবর্ণ, বয়স ১৭-১৮ বছর, স্কুলে পড়ে।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাকে খুব ভালোবাসেন — তাকে দেখার জন্য, তাকে খাওয়ানোর জন্য ব্যাকুল থাকেন।
তার জন্য দক্ষিণেশ্বরে বসে বসে কাঁদেন।
নারায়ণকে তিনি সাক্ষাৎ নারায়ণ (ভগবান) বলে মনে করেন।
Leave a Reply