৪৮ শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেন, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
১৮৮৫, ১৩ই জুন
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) ভাবে বিভোর হইতেছেন। ‘গোবিন্দ!’ ‘গোবিন্দ!’ ‘গোবিন্দ!’ এই কথা বলিতে বলিতে আবিষ্ট হইতেছেন! প্রায় বাহ্যশূন্য। কাপ্তেন সবিসময়ে বলিতেছেন, ‘ধন্য!’ ‘ধন্য!’
কাপ্তেন ও সমবেত ভক্তগণ ঠাকুরের এই অদ্ভুত প্রেমাবস্থা দেখিতেছেন। যতক্ষণ না তিনি প্রকৃতিস্থ হন, ততক্ষণ তাঁহারা চুপ করিয়া একদৃষ্টে দেখিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ—তারপর?
কাপ্তেন—তিনি যোগীদিগের অগম্য—‘যোগিভিরগম্যম্’—আপনার ন্যায় যোগীদের অগম্য; কিন্তু গোপীদিগের গম্য। যোগীরা কত বৎসর যোগ করে যাঁকে পায় নাই; কিন্তু গোপীরা অনায়াসে তাঁকে পেয়েছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—গোপীদের কাছে খাওয়া, খেলা, কাঁদা, আব্দার করা, এ-সব হয়েছে।
শ্রীযুক্ত বঙ্কিম ও শ্রীকৃষ্ণ-চরিত্র—অবতারবাদ
একজন ভক্ত বলিলেন, ‘শ্রীযুক্ত বঙ্কিম কৃষ্ণ-চরিত্র লিখেছেন।’
শ্রীরামকৃষ্ণ—বঙ্কিম শ্রীকৃষ্ণ মানে, শ্রীমতী মানে না।
কাপ্তেন—বুঝি লীলা মানেন না?
শ্রীরামকৃষ্ণ—আবার বলে নাকি কামাদি—এ-সব দরকার।
দমদম মাস্টার—নবজীবনে বঙ্কিম লিখেছেন ধর্মের প্রয়োজন এই যে, শারীরিক, মনাসিক, আধ্যাত্মিক প্রভৃতি সব বৃত্তির স্ফূর্তি হয়।
কাপ্তেন—‘কামাদি দরকার’, তবে লীলা মানেন না। ঈশ্বর মানুষ হয়ে বৃন্দাবনে এসেছিলেন, রাধাকৃষ্ণলীলা (Ramakrishna), তা মানেন না?
পূর্ণব্রহ্মের অবতার—শুধু পাণ্ডিত্য ও প্রত্যক্ষের প্রভেদ—
Mere booklearning and Realisation
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—ও-সব কথা যে খবরের কাগজে নাই (Kathamrita), কেমন করে মানা যায়!
“একজন তার বন্ধুকে এসে বললে, ‘ওহে! কাল ও-পাড়া দিয়ে যাচ্ছি, এমন সময় দেখলাম, সে-বাড়িটা হুড়মুড় করে পড়ে গেল।’ বন্ধু বললে, দাঁড়াও হে, একবার খবরের কাগজখানা দেখি। এখন বাড়ি হুড়মুড় করে পড়ার কথা খবরের কাগজে কিছুই নাই। তখন সে ব্যক্তি বললে, ‘কই খবরের কাগজে তো কিছুই নাই।— ও-সব কাজের কথা নয়।’ সে লোকটা বললে, ‘আমি যে দেখে এলাম।’ ও বললে, ‘তা হোক্ যেকালে খবরের কাগজে নাই, সেকালে ও-কথা বিশ্বাস করলুম না।’ ঈশ্বর মানুষ হয়ে লীলা করেন, এ-কথা কেমন করে বিশ্বাস করবে? এ-কথা যে ওদের ইংরাজী লেখাপড়ার ভিতর নাই! পূর্ণ অবতার বোঝানো বড় শক্ত, কি বল? চৌদ্দ পোয়ার ভিতর অনন্ত আসা!”
কাপ্তেন—‘কৃষ্ণ ভগবান্ স্বয়ম্।’ বলবার সময় পূর্ণ ও অংশ বলতে হয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ—পূর্ণ ও অংশ,—যেমন অগ্নি ও তার স্ফুলিঙ্গ। অবতার ভক্তের জন্য,—জ্ঞানীর জন্য নয়। অধ্যাত্মরামায়ণে আছে — হে রাম! তুমিই ব্যাপ্য, তুমিই ব্যাপক, ‘বাচ্যবাচকভেদেন ত্বমেব পরমেশ্বর।’
কাপ্তেন—‘বাচ্যবাচক’ অর্থাৎ ব্যাপ্য-ব্যাপক (Kathamrita)।
শ্রীরামকৃষ্ণ—‘ব্যাপক’ অর্থাৎ যেমন ছোট একটি রূপ, যেমন অবতার মানুষরূপ হয়েছেন।

Leave a Reply