মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন শোলে-র বীরু। সোমবার, ৮৯ বছর বয়সে মুম্বইতে নিজের বাড়িতে প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্র (Dharmendra)। প্রয়াত অভিনেতা (Bollywood) এই মাসের শুরুতেই ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বলিউডের হি-ম্যান হিসেবে খ্যাত ধর্মেন্দ্র ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে এক অসাধারণ সিনেমার সম্ভার রেখে গিয়েছেন দর্শক মহলে। পর্দায় তাঁর শেষ অভিনীত সিনেমা হল ‘ইক্কিস’। আগামী ২৫ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে এই চলচ্চিত্র। ধর্মেন্দ্রর দুই স্ত্রী প্রকাশ কৌর এবং হেমা মালিনী। সব মিলিয়ে ছয় সন্তান তাঁর। ছেলে মেয়েদের মধ্যে হলেন, অভিনেতা সানি দেওল, ববি দেওল, অভিনেত্রী এষা দেওল, অহনা দেওল, অজিতা এবং বিজেতা। আগামী মাসের ৮ তারিখ হবে তাঁর ৯০ তম জন্মদিন। কিন্তু তাঁর আগেই চলে যাওয়ায় ভক্ত মহলে তীব্র শোকের ছায়া।
সিনেমায় ছয় দশক কাজ করেছেন (Dharmendra)
ধর্মেন্দ্র কৃষ্ণ দেওলের (Dharmendra) জন্ম ৮ ডিসেম্বর পঞ্জাবের লুধিয়ানার একটি গ্রামে। বলিউড চলচ্চিত্র (Bollywood) জগতে প্রবেশের আগেই তিনি ১৯৫৪ সালে ১৯ বছর বয়সে প্রকাশ কৌরকে বিবাহ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে অভিনেত্রী হেমা মালিনীকেও আবার বিয়ে করেন। চলচ্চিত্র জগতে তিনি ১৯৬০ সালে ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। অ্যাকশেন, রোমান্টিক এবং হাস্যকর চরিত্রের ভূমিকায় সমানভাবে প্রতিভার প্রমাণ রেখে গিয়েছেন এই অভিনেতা। ২০১২ সালে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্মান পদ্মভূষণে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
ছয় দশকে তাঁর কর্মজীবনে ‘শোলে’, ‘ইয়াদোঁ কি বরাত’, ‘মেঘেরা’-সহ অসংখ্য হিট সিনেমায় কাজ করেছেন। এছাড়াও ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘নৌকার বিবি কা’, ‘ফুল অর পাথর’, ‘সত্যকাম’, ‘অ্যায় মিলান কি বেলা’, ‘দিল নে ফির ইয়াদ কিয়া’, ‘আয়ে দিন বাহার কে’, ‘আঁখেঁ’, ‘আয়া সাওয়ান ঘুম কেউজু’, ‘মিস্টার জুম’, ‘ধরম বীর’, ‘আজাদ’, ‘গজব’, ‘লোহা’, ‘হুকুমত’ এবং ‘আপনে’-র মতো সিনামায় কাজ করেছেন। পুত্র সানি দেওল অভিনীত এবং তাঁর প্রযোজনায় নির্মিত ‘ঘায়েল’ সিনেমা জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছে। সেই সঙ্গে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছে ধর্মেন্দ্রর ‘ফুল অর পাথর’, ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’, ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’ এবং ‘রেশম কি ডোরি’ সিনেমা।
সামাজিক মধ্যেম বেশ সক্রিয় ছিলেন
গত ১৫ দিন ধরেই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ছিলেন ধর্মেন্দ্র (Dharmendra)। মাঝে ছাড়া পেয়ে বাড়িতেও পৌঁছে ছিলেন। কিন্তু শ্বাসকষ্ঠের কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ৮৯ বছর বয়সেও, ধর্মেন্দ্র সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সক্রিয় ছিলেন। প্রায়শই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং জৈব জীবনযাত্রার প্রচারমূলক ভিডিও শেয়ার করতেন। তাঁর অনেক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ট্র্যাক্টর চালানো, কৃষি খামারের যত্ন নেওয়া এবং তাঁর ভক্তদের সহজ জীবনযাপনের নানা কথা বিনিময় করতেন। একই ভাবে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত নানাবিধ টিপস দেওয়ার ছবিও বিনিময় করতে দেখা গিয়েছে। তিনি শেষবার ২০২৪ সালে শাহিদ কাপুর এবং কৃতি শ্যানন অভিনীত রোম্যান্টিক কমেডি ‘তেরি বাতোঁ মে অ্যাইসা উলঝা জিয়া’ সিনেমায় কাজ করেছেন। তাঁর চলে যাওয়া চলচ্চিত্র জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি।
ধর্মেন্দ্রর শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন বলিউডের বিশিষ্ট অভিনেতা এবং অভিনেত্রীরা। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন স্ত্রী হেমা মালিনী, মেয়ে ঈষা দেওল, অমিতাভ বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, আমির খান সহ আরও অনেকে। চিত্র পারিচালক করণ জোহর সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “একটা যুগের অবসান হল।
শোক প্রকাশ মোদির
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছেন, “ধর্মেন্দ্রজির (Dharmendra) মৃত্যু ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটি যুগের সমাপ্তি ঘটিয়েছে। তিনি ছিলেন একজন আইকনিক চলচ্চিত্র জগতের ব্যক্তিত্ব। একজন অসাধারণ অভিনেতা, তাঁর অভিনীত প্রতিটি চরিত্রে মনোমুগ্ধকর মনোভাব এবং গভীরতাকে তুলে ধরেছিলেন। তিনি যেভাবে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তা অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে দাগ রেখেগিয়েছেন। তাঁর সরলতা, নম্রতা এবং উষ্ণতার জন্য সমানভাবে প্রশংসিত হয়েছিলেন। এই দুঃখের মুহূর্তে পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং অসংখ্য ভক্তদের পাশে দাঁড়িয়ে শোক প্রকাশ করছি। ওম শান্তি।”

Leave a Reply