৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে
অষ্টম পরিচ্ছেদ
১৮৮৫, ১৫ই জুলাই
ভক্তিযোগের গূঢ় রহস্য—জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয়
মুখুজ্জে, হরিবাবু, পূর্ণ, নিরঞ্জন, মাস্টার, বলরাম
মুখুজ্জে—হরি (বাগবাজারের হরিবাবু) আপনার কালকের কথা শুনে অবাক্! বলে, ‘সাংখ্যদর্শনে, পাতঞ্জলে, বেদান্তে—ও-সব কথা আছে। ইনি সামান্য নন।’
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—কই, আমি সাংখ্য, বেদান্ত পড়ি নাই।
“পূর্ণজ্ঞান আর পূর্ণভক্তি একই। ‘নেতি’ ‘নেতি’ করে বিচারের শেষ হলে, ব্রহ্মজ্ঞান।—তারপর যা ত্যাগ করে গিছিল, তাই আবার গ্রহণ। ছাদে উঠবার সময় সাবধানে উঠতে হয়। তারপর দেখে যে, ছাদও যে জিনিসে—ইট-চুন-সুরকি—সিঁড়িও সেই জিনিসে তৈয়ারী!
“যার উচ্চ বোধ আছে, তার নিচু বোধ আছে। জ্ঞানের পর, উপর নিচে এক বোধ হয়।
“প্রহ্লাদের যখন তত্ত্বজ্ঞান হত, ‘সোঽহম্’ হয়ে থাকতেন। যখন দেহবুদ্ধি আসত ‘দাসোঽহম্’, ‘আমি তোমার দাস’, এই ভাব আসত।
“হনুমানের (Kathamrita) কখনও ‘সোঽহম্’, কখন ‘দাস আমি’, কখন ‘আমি তোমার অংশ’, এই ভাব আসত।
“কেন ভক্তি নিয়ে থাকো?—তা না হলে মানুষ কি নিয়ে থাকে! কি নিয়ে দিন কাটায়।
“‘আমি’ তো যাবার নয়, ‘আমি’ ঘট থাকতে সোঽহম্ হয় না। সমাধিস্থ হলে ‘আমি’ পুছে যায়, —তখন যা আছে তাই। রামপ্রসাদ বলে (Kathamrita), তারপর আমি ভাল কি তুমি ভাল, তা তুমিই জানবে।
“যতক্ষণ ‘আমি’ রয়েছে ততক্ষণ ভক্তের মতো থাকাই ভাল! ‘আমি ভগবান’ এটি ভাল না। হে জীব, ভক্তবৎ এটি ভাল না। হে জীব, ভক্তবৎ ন চ কৃষ্ণবৎ!—তবে যদি নিজে টেনে লন, তবে আলাদা কথা। যেমন মনিব চাকরকে ভালবেসে বলছে, আয় আয় কাছে বোস আমিও যা তুইও তা। গঙ্গারই ঢেউ, ঢেউয়ের গঙ্গা হয় না!
“শিবের (Ramakrishna) দুই অবস্থা। যখন আত্মারাম তখন সোঽহম্ অবস্থা, — যোগেতে সব স্থির। যখন ‘আমি’ একটি আলাদা বোধ থাকে তখন ‘রাম! রাম!’ করে নৃত্য।
“যাঁর অটল আছে, তাঁর টলও আছে।
“এই তুমি স্থির। আবার তুমিই কিছুক্ষণ পরে কাজ করবে।
“জ্ঞান আর ভক্তি একই জিনিস। — তবে একজন বলছে ‘জল’, আর-একজন ‘জলের খানিকটা চাপ’।”

Leave a Reply