Maa Jayanti Mandir: মেঘালয়ের মা জয়ন্তী মন্দির, একান্ন শক্তিপীঠের অন্যতম, জানুন ইতিহাস

Meghalaya details history of Maa Jayanti Mandir

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মেঘালয়ের (Meghalaya) পশ্চিম জয়ন্তিয়া পাহাড় জেলায় রয়েছে বিখ্যাত একটি পুরোনো মন্দির (Maa Jayanti Mandir)। এর নাম নার্তিয়াং দুর্গা মন্দির। এই মন্দিরের বয়স ৬০০ বছরেরও বেশি বলে মনে করা হয়। ৫১ শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম এই মন্দিরটি হিন্দু শাক্ত ভক্তদের কাছে অন্যতম পবিত্র স্থান। মেঘালয়ের জয়ন্তিয়া পাহাড়ের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই মন্দিরটিই দেবী দুর্গার স্থায়ী আবাসস্থল। দুর্গাপুজো উপলক্ষে সারা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক তীর্থযাত্রী এই মন্দিরে এসে ভিড় জমান। এছাড়া সারাবছর ধরেই প্রচুর ভক্ত আসেন এই মন্দিরে। প্রসঙ্গত, নার্তিয়াং দেবী মন্দিরের আরাধ্যা দেবী শক্তি জয়ন্তী এবং ভৈরব কামাদিশ্বর।

মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পৌরাণিক আখ্যান (Maa Jayanti Mandir)

পৌরাণিক আখ্যান অনুসারে, রাজা দক্ষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মহাদেবকে বিয়ে করেছিলেন তাঁর কন্যা সতী। মহাদেবের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দক্ষ রাজা বৃহস্পতি নামে এক যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। যজ্ঞে সতী কিংবা মহাদেব কাউকেই আমন্ত্রণ জানাননি দক্ষ। মহাদেবের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সতী বাবার আয়োজিত যজ্ঞানুষ্ঠানে যান। সেখানে দক্ষ মহাদেবকে অপমান করেন। স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সতী দেহত্যাগ করেন। শোকাহত মহাদেব দক্ষর যজ্ঞ পণ্ড করেন এবং দেবী সতীর শবদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। তাঁর তাণ্ডব বন্ধ করতে অন্যান্য দেবতাদের অনুরোধে বিষ্ণুদেব তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহচ্ছেদ করেন। সতীর দেহের ৫১ খণ্ড ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে এবং পবিত্র পীঠস্থান শক্তিপীঠ বা সতীপীঠ (Maa Jayanti Mandir) নামে পরিচিতি। নার্তিয়াং সেই শক্তিপীঠের অন্যতম।

কোচবিহারে বিয়ে করেন জয়ন্তিয়া রাজা জাসো মানিক

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, জয়ন্তিয়া পাহাড়ের নর্তিয়াংয়ে দেবীর বাম উরু পড়েছিল (Maa Jayanti Mandir)। তাই এখানে দেবী জয়ন্তেশ্বরী নামে খ্যাত। জয়ন্তিয়া রাজা জাসো মানিক (রাজত্বকাল ১৬০৬-১৬৪১) কোচবিহারের হিন্দু রাজা নর নারায়ণের কন্যাকে বিয়ে করেন। এর পরেই রাজ্যে হিন্দুধর্মের প্রভাব বিস্তার লাভ করে বলে জানা যায়। আজ থেকে প্রায় ৬০০ বছর আগে রাজা ধন মানিক জয়ন্তিয়া রাজ্যের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে নর্তিয়াংকে ঘোষণা করেছিলেন। জানা যায়, একদিন রাত্রে দেবী তাঁকে স্বপ্নে দেখা দেন এবং তাঁকে স্থানটির তাৎপর্য জানান এবং তাঁর সম্মানে একটি মন্দির তৈরি করতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় নর্তিয়াংয়ে জয়ন্তেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।

আলাদা রীতিতে পুজো করা হয় (Maa Jayanti Mandir)

এই পাহাড়ি মন্দিরের আচার অনুষ্ঠান অন্যান্য জায়গার পুজোর থেকে বেশ খানিকটা আলাদা। এখানে অন্য রীতিতে দেবীর পুজো হয়। হিন্দু এবং প্রাচীন খাসি ঐতিহ্যের মিশ্রণে দেবীর পুজো হয়। স্থানীয় যিনি সর্দার থাকেন তাঁকে মন্দিরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মন্দিরে রয়েছে বলি প্রথা। আজও দুর্গাপুজোর সময় সাইয়েম ছাগল বলি দেন। দুর্গাপুজো এই মন্দিরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব বলে মনে করা হয়। দুর্গাপুজোর সময়, একটি কলা গাছকে দেবী (Maa Jayanti Mandir) হিসেবে পুজো করা হয়। ধুমধাম করে দুর্গাপুজোর শেষে গাছটিকে স্থানীয় মিন্টডু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিদায়কালে শূন্যে বন্দুকের গুলি ছুড়ে দেবীকে সম্মান জানানো হয়।

বাংলার সংস্কৃতি এবং খাসি-জয়ন্তিয়া পাহাড়ের সংমিশ্রণে এখানে দুর্গাপুজো করা হয়

বর্তমানে মেঘালয়ের হিন্দু সমাজের তরফ থেকে সরকারি এক প্রতিনিধি থাকেন। তিনিই কেন্দ্রীয় পুজো কমিটি মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক। মন্দিরের অর্থনৈতিক হিসাব নিকাশ, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদির দায়িত্বে রয়েছে এই কমিটি। প্রাচীন এই মন্দিরে দুর্গা পুজো অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলার সংস্কৃতি এবং খাসি-জয়ন্তিয়া পাহাড়ের সংমিশ্রণে এখানে দুর্গাপুজো করা হয়। তবে দেবীর মূর্তি এখানে থাকে না। দেবী মূর্তির (Maa Jayanti Mandir) পরিবর্তে খাসি প্রথা মেনে গাঁদা ফুল দিয়ে সজ্জিত একটি কলার কাণ্ডে মা দুর্গার চিত্র তৈরি হয়। সেটিই আরাধ্যা দেবী। এই মন্দিরের একেবারে কাছেই রয়েছে একটি শিব মন্দির। সেখানে রয়েছে একটি প্রাচীন কামানের ভগ্নাবশেষ। বর্তমানে এই মন্দিরের পাশে একটি হিন্দু মন্দির রয়েছে। সেখানে জয়ন্তিয়াপুর থেকে আগত আদি পুরোহিতদের সরাসরি বংশধররা পুজোর অনুষ্ঠান করেন।

কীভাবে যাবেন এই মন্দিরে

বিমানপথে যদি কোনও তীর্থযাত্রী যেতে চান তাহলে তাঁকে প্রথমে যেতে হবে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে উমরোই বিমানবন্দরে। নার্তিয়াং দুর্গা মন্দির থেকে উমরোই বিমানবন্দরের দূরত্ব প্রায় ৬৭ কিলোমিটার। সড়কপথে এই শক্তিপীঠে যেতে গেলে নার্তিয়াং যেতে হবে। সেখান থেকে মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। শিলং বাসস্ট্যান্ড থেকে মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৬১ কিলোমিটার। গুয়াহাটি রেলস্টেশন থেকে এই মন্দির থেকে এই মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ১৫৩ কিলোমিটার।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share